গল্প Crazy_for_you পর্ব ৪

 #Crazy_for_you🦋

#পর্বঃ৪

#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)


হুরিজিয়ান কলটা কাটতেই শ্বাস টানলো পরাপর কয়েকবার। এখনও যেনো মেহমেদের কণ্ঠ কানে ভারি খাচ্ছে তার। এতো সুন্দর কণ্ঠ মানুষের কিভাবে হয়। গালির কথা মনে পড়তেই আবারও অনায়াসে চোখ বুঝে আসে লজ্জায় হুরের। ছিঃ কি বাজে গালি দিয়েছে সে।ঘড়িতে  চোখ বুলিয়ে হুরিজিয়ান ওয়াশরুমে পা বাড়াল।ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে বের হতেই দেখা মিলল আয়শা বেগমের সাথে। এতো তাড়াতাড়ি হুরিজিয়ানকে রান্নাঘরে দেখে চোখ-নাক কুচকালেন আয়শা বেগম। হুরিজিয়ান গিয়ে তার আম্মাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে বলে উঠল, আম্মু, অনেক খুদা লেখেছে। আয়শা বেগম রুটি বানাতে বানাতে বললেন, তা আগে শুনি! তোমায় তো পারমানবিক বোমা ফেলেও বিছানা থেকে আলাদা করা যায় না। অনেক কষ্টে নামায পড়ে আবার ঘুমাও। তা এখন পিরিয়ড চলছে এখন উঠলে কেনো? 

হুরিজিয়ান আত্নবিশ্বাসের ভান ধরে জবাব দিলো, আমার সামনে পরিক্ষা তাই পড়তে উঠেছি। হুরিজিয়ানের কথা শুনে আয়শা বেগম তাকালেন তার পানে, হুরিজিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আবার শুধালো, নো মম, নো। তোমার ওই চোখের চাওয়া আমার আত্নবিশ্বাস ভাঙ্গতে পারবে না। 

আয়শা বেগম ভেংচি কাটলেন, কচু পড়া। একটু পড়েই গিয়ে দেখবো, টেবিলে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছ। দিন দিন বজ্জাত হচ্ছিস। জীবনে তো দেখি নাই পরিক্ষার আগের দিন ছাড়া পড়তে। সর চোখের সামনে দিয়ে, নাশতা হলে পাঠিয়ে দিবো। হুরিজিয়ান বুঝলো তার আম্মু হালকা রেগে গিয়েছে, তাই তার মধ্যে আরেকটু ঘি ঢেলে সে তার মায়ের গাল টেনে জবাব দিলো, ওকে খালাম্মা!

ওকে খালাম্মা শুনতেই, রুটি বানানোর বেলুন নিয়ে তেতে উঠল, আয়শা বেগম। এর মাঝেই হুরিজিয়ানের বাবা কবির চৌধুরী বাহির থেকে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন, মা আর মেয়ের কান্ড দেখে সে বলে উঠল, আহ আয়শা। কি হয়েছে মেয়েটার সাথে এমন করছ কেনো? 

আয়শা খিটখিটে হয়ে বলল, আমার সাথে এখন কথা বলতে আসলে আমি এই বেলুন দিয়ে তোমার মাথা ফাটাবো, বুঝি না সব বুঝি। তুমি আর তোমার আদরের ছোট মেয়ে একসাথে একটা দল বানিয়েছ!আমায় জ্বালানোর জন্য। 

অতঃপর হুরিজিয়ান মুখ টিপে হাসলো, বাবার পানে চেয়ে। তারপর নিজ রুমে পা বাড়ালো। 

______

সকালের নাশতা সেরে হুর রেডি হলো ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। রেডিও কলোনির ওভার ব্রিজের নিচে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে তানজিলার জন্য। তানজিলা আসতেই বাসে উঠে পড়লো দুজন। অতঃপর লোকাল বাসের প্যারা সামনে ধামরাই থানা স্টান্ডে গিয়ে নামলো তারা। একটানা ক্লাস হওয়ার ১২ টার নিস্তার মিলল। ক্লাস থেকে বের হতেই জয় বাংলা চত্বরের বেঞ্চিতে গিয়ে বসল দুজন। জয় বাংলা চত্বরের চারপাশ ঘিরে রয়েছে বড় বড় জাম গাছ। অনেক জাম ধরেছে।খুব রসালো , সিনিয়র রা হাসি ঠাট্টার মাঝেই জাম পারছে। তানজিলা আর হুরিজিয়ানের কথা বলার মাঝে হাজির হলো সিনিয়র তন্ময়। তার হাতে একগোছা জাম। এগিয়ে দিয়েই শুধালো, তানজু জানেমান নেও তোমার জাম। তানজিলা নাক কুচকালো, সালা উগান্ডা আমার সাথে কথাই বলবে না। কাল রাতে কতবার কল দিয়েছি, দেখেছ তুমি, এখন আসছে, সর কুত্তা, তোর জাম তুই খা। তন্ময় চোখের ইশারায় হুরিজিয়ানকে একটু জায়গা ছাড়তে বলল। ইশারা বুঝতে পেরে হুরিজিয়ান জায়গা ছেড়ে অন্য একটা বেঞ্চিতে বসল। এতোক্ষন হুরিজিয়ান কি করবে ভেবে, সে ফ্রিমুডে ফেসবুকে ডুকল অতঃপর চার পাঁচটা কলের নোটিফিকেশন ভেসে আসলো, হুরিজিয়ান তাতেই কেপে উঠল, সে বুঝতে পারলো সকালে ওমন হুট করে কল কেটে দেওয়ার কারনেই বোধ হয় মেহমেদ কল করে ছিল, হুরিজিয়ান ভাবল, বাসায় গিয়ে মেহমেদের প্রোফাইলটা ঘুরে দেখবে। এরই মধ্যে তানজিলা এসে হুরের নিকট তাকিয়ে শুধালো, চল বাসায় যাবো। হুরিজিয়ানও মাথা দুলালো, যার মানে ঠিক আছে। তারপর তারা ভার্সিটির গেট থেকে বের হলো। 

🦋

মুনিবা খান মেহমেদের কক্ষে প্রবেশ করলেন, মুরাদ চলে গিয়েছে ভার্সিটিতে। মেহমেদের পড়ালেখার ধরন অন্য রকম। আজ সে ভার্সিটিতে যায় নি। কোচিং এও যায় নি। মেহমেদ ঘুমিয়েছে কয়টায় তার কোনো ধারণাও তার মাথায় ঢুকছে না। মুনিবা খান আলগোছে মশারি খুলতে লাগলেন। খুলে ছেলের নিকটে গিয়ে মেহমেদের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলো, মুনিবার ডাকে ঘুমু ঘুমু কন্ঠেই মেহমেদ জবাব দিলো, হুম আম্মু। মুনিবা আবার জবাব দিলো, ১টা বাঝতে চলল,ওঠ। 

মেহমেদ চোখ মেলে চাইলো, মুচকি হেসে মুনিবাকে আবদার করলো, আম্মু আমি কয়েকটা দিনের জন্য নানুবাড়ি বেরাতে যেতে চাই। মুনিবা খান আশ্চর্য হলো, যে ছেলেকে ঢাকা থেকে আসার পর এখনো অব্দি জোর করে ছাড়া কখনও নিতে পারতো না, সেই ছেলেই আজ আবদার করছে নানুবাড়ি যাবে। মুনিবা খান মেহমেদের শরীর চেক করে দেখলো, ছেলে তো অসুস্থ নয়। মেহমেদ বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের পানে যেতে যেতেই আবার বলে উঠল, আমি কিন্তু কালই যাচ্ছি। মুনিবা খান হাসলো, অতঃপর বলে উঠল, আচ্ছা ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।। 

______

বিকেল ৫টা বেজেছে ইতোমধ্যে। হুরিজিয়ান মাত্রই টিউশন করে বেরিয়েছে। হঠাৎ ফোনে রিং বাজতেই, মোবাইলের স্ক্রিনে দেখতে পেলো সুজনের নাম্বারটা জ্বল জ্বল করছে। হুরিজিয়ান কলটা রিসিভ করেই হাটা লাগালো। ওপাশ থেকে মেহমেদের কণ্ঠ শুনে দাড়িয়ে পড়লো হুরিজিয়ান, মোবাইলের স্ক্রিনে আবার চেয়ে দেখলো, সুজনের নাম্বারই, তাহলে মেহমেদ কথা বলছে কিভাবে, এই ভেবে আবারো টনক নড়লো ওপাশ থেকে ভেসে আসা কথায়। 

"শুনলাম, আপনার নাকি বিবাহ হয়েছে, ইতোমধ্যে নকি আপনি প্রেগন্যান্ট। এটাতো বারি অন্যায় কাজ করেছেন!"

হুরিজিয়ান তাজ্জব বনে গেল, ছি ঃ কি ঠোঁট কাটারে বাবা। হুরিজিয়ান জবাব দিলো হ্যা আপনি ঠিকই শুনেছেন, দেখা গেলো আপনি এসে বাচ্চা পয়দা হয়েছে তাই দেখতে পারেন। 

কথাটা শেষ করতেই সুজন বলে উঠল, আরে মেহমেদ তুই তো ভুল বললি, ছবিতে তো বেয়াইন বর ছিল, আর তোর ভাই বউ।

সুজনের কথা শেষ হতেই মেহমেদ সুজনকে চাটি মেরে বলল, যা সালা আগে বলবি না আমার তো মনে নাই। 

হুরিজিয়ান বুঝতে পারলো মেহমেদ সুজনের নাম্বার থেকে কল করেছে, এখন দুজনই এক সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষন কথা বলার পর সুজন কোথায় যেনো চলে গেলো কিন্তু মেহমেদ রইল লাইনে, অতঃপর মেহমেদ হুরকে জিজ্ঞাসা করে বসল, কোন ভার্সিটিতে আছে হুর আর এখন সে কি করছে?

হুরিজিয়ান পা চালাতে চালাতেই জবাব দিলো, ধামরাই ইউনিভার্সিটিতে আছি, এইতো মাত্র টিউশন করে বের হলাম। 

তারপর আবার চলল, দুজনের মাঝে কিছুক্ষন নিরবতা, যা মানে কেউ কোনো কথা খুজে পাচ্ছে না। হুরিজিয়ান তো কথা বলতে অব্যস্থ না, তাও ছেলে মানুষ। হুরিজিয়ান ভাবলো বিদায় জানাবে এর মাঝেই অপাশ থেকে মেহমেদ আবার বলে উঠল, হঠাৎ  যদি আমার সাথে তোমার দেখা হয়, তোমার তখন মনোভাব কেমন হবে? 

হুরিজিয়ান তো এ কথা কখনো ভেবেও দেখে নি, এখন সে কি উত্তর দিবে। বাসার কলিং বেল সুইচে চাপ দিয়েই বলে উঠল, যখন দেখা হবে তখন দেখা হবে, আমি এখন রাখছি। 

কথাটা বলেই হুরিজিয়ান কলটা কেটে দিলো। ওপাশ থেকে মেহমেদ একটা মুচকি হেসে নিজ মনেই বলে উঠল, মেয়েটা তার সাথেই কথা বললে এতো পালাতে চায় কেন?

এদিকে হুরিজিয়ান কক্ষে এসে দরজায় নক করে দিলো, তার ধমনি কাপছে, বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে, কি নেশাক্ত গলা। এই ছেলে কথা বললে হুরিজিয়ানের মধ্যে ঝড় সৃষ্টি হয়, এই ছেলে যদি কখনও সামনে এসে দাঁড়ায় তখন হুড়িজিয়ান কি করবে। 


~চলবে।


(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও।সুন্দর মন্তব্য আশা করছি)

0 Comments:

Post a Comment