তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
পর্ব_১৩+১৪
সারিকা_হোসাইন
সমস্ত সাক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত আহিয়ান কে ফা*সি*র আদেশ ধার্য করলো।
আশরাফ চৌধুরীর কাছে পুলিশ মারফত খবর পাঠানো হলো
সে যেনো একবার হলেও তার পুত্রকে দেখতে আসেন।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে নাকি সুরে কেঁদে খবর পাঠালেন―
–যেই ছেলে তার দেশ ও দেশের মানুষের ক্ষতি পৌঁছায় সে আর যাই হোক আশরাফ চৌধুরীর ছেলে হতে পারে না।
আমার এই জীবব্দশায় জেনে বুঝে কোনো দিন কোনো একটা পিঁপড়ে পর্যন্ত মারিনি,আর আমার ছেলে কি না ---!
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন আশরাফ চৌধুরী।
যেসব মেয়ে গুলোকে আহিয়ান পাচার করেছে এবং নির্মম ভাবে হ*ত্যা করেছে তাদের পরিবারের কাছে সংবাদ মাধ্যমে মিডিয়ার সামনে ক্ষমা চাইলেন।
আদালত যাতে দ্রুত তার ফাঁসি দিয়ে দেয় এটা নিয়েও তিনি কঠোর মতবাদ জানালেন।
যেই ছেলে বাবার আদর্শে মানুষ হতে পারেনি,যেই ছেলে অপকর্মে লিপ্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি করে বেড়াচ্ছে ,সেই ছেলের বেঁচে থাকার হক নেই।
আশরাফ চৌধুরীর কান্নায় সারা দেশের সাধারণ জনগণের চোখেও জল এসে গেলো।
এই না হলো আদর্শ বাবা।
এমন বাবা ঘরে ঘরে হওয়া উচিত।সবাই আশরাফ চৌধুরী কে তালি সমেত বাহবা জানালো।
*******
জেলে বসে বসে আহিয়ান জীবনের হিসেব কষছে।
তার বয়স যখন ছয় বছর তখন সে তার মাকে তার বাবার হাতে খু*ন হতে নিজ চোখে দেখেছে।
শুধু তাই নয় ,এই বিষয়ে আহিয়ান যদি কাউকে কিছু জানিয়ে দেয় তাহলে তাকেও মায়ের মতো গলা টিপে চিরজীবনের মতো চুপ করিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে।
মাতৃ ভালোবাসা হীন আহিয়ান বড় হয়েছে হেল্পিং হ্যান্ডের হাতে।বাবা আশরাফ চৌধুরী প্রতিদিন নিত্য নতুন মেয়ে নিয়ে এসে বাসায় ফুর্তি করে বেড়াতো।
বাবার শয়ন কক্ষে অন্য একটি মেয়ের যৌন শীৎকার আহিয়ান কে প্রচুর কষ্ট দিতো।প্রথম প্রথম সে দুই কান চেপে ধরে কান্না করতো।মাঝে মাঝে আলমারির ভেতরে লুকিয়ে পড়তো।
আশরাফ চৌধুরী প্রায় ই নেশায় বুদ হয়ে আহিয়ান কে প্যান্টের বেল্ট দিয়ে পেটাতো।
বাবার হাত থেকে রক্ষা পেতে আহিয়ান তার বাবাকে প্রতিশ্রুতি দেয় উনি যেভাবে চাইবেন আহিয়ান সেই ভাবেই নিজেকে প্রকাশমান করবে।
তবে আজ কেনো তার বাবার তার প্রতি এতো ঘৃণা?
এটা কি ঘৃণা নাকি নিজেকে বাঁচানোর নতুন নাটক?
আহিয়ানের এই একত্রিশ বছরের জীবনে সে কখনো দেখেনি আশরাফ চৌধুরী কে সামান্যতম বুকে ব্যাথা অনুভব করতে।
তবে এক রাতের ব্যাবধানেই হার্ট এট্যাক এসে গেলো?
আশরাফ চৌধুরীর সাজানো নাটক বুঝতে পেরে কষ্টে বুক ফেটে কান্না এলো আহিয়ানের।
সে তো বলেনি টাকার বড়াই দেখিয়ে তাকে এখান থেকে মুক্ত করতে!
সে শুধু চেয়েছে তার বাবা তার শেষ সময়ে এসে তাকে একবার হলেও দেখে যাক।
মমতা মাখা হাতটা মাথায় রেখে দুটো ভালো ভালো কথা বলে শান্তনা দিয়ে যাক।
গড়িয়ে পড়া জ্বল আঙুলের সাহায্যে মুছে টুকা দিয়ে দূরে ছুড়ে ফেললো আহিয়ান।
এর পর উঠে দাঁড়ালো,পাশে থাকা কারা রক্ষীকে কাছে ডাকলো।
কেটকেটে কন্ঠে কারা রক্ষী বলে উঠলো―
""কী চাই""
আহিয়ান বাঁকা হেসে বললো―
"মেজর মুহিত ওয়াসিফ"
******
পুষ্টিকর খাবার,ইনজেকশন, ভিটামিন স্যালাইন আর বেড রেস্টের প্রভাবে কয়েক দিনেই অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে স্বর্গ।
ঘরে বসে থাকতে তার একদম ভালো লাগছে না।
বাইরে যাবার জন্য মন হাঁসফাঁস করছে।
সুখ চলে গেছে গত কাল,নাফিজ মাহমুদ দুপুরে খেয়ে ভাত ঘুম দিয়েছেন।উঠবেন সেই সন্ধ্যায়।
কোয়ার্টার এর মাঠ টাতে হেটে বেড়াতে পারলে ভালো লাগতো।
বিকেলে ছোট ছোট বাচ্চারা কেউ সাইকেল চালায়,কেউ দৌড়াদৌড়ি করে,কেউ ব্যাট মিন্টন খেলে কেউবা আবার বসে বসে আড্ডা দেয়।
প্রত্যেকটা অফিসারের বাংলোর সামনে সুসজ্জিত ফুলের বাগান।দেখলেই মন ভরে যায়।সাথে কচি নরম ঘাস।
মাঝে মাঝে স্বর্গের মনে হয় সে যদি গরু হতো তাহলে মাঠের সব ঘাস এক দিনেই সাবাড় করে ফেলতো।বিশেষ করে জেনারেল এর বাংলোর সামনের ঘাস গুলো।
মনের সকল ভাবনাকে একপাশে সরিয়ে স্বর্গ তার কক্ষ পরিত্যাগ করে ড্রয়িং রুমে নেমে আসলো।
সেখানে কাউকে পরিলক্ষিত হলো না।
সোফায় ধপ করে বসে পড়লো স্বর্গ।আজকের বিকাল টা তার কাছে সাংঘাতিক অলস মনে হচ্ছে।
সোফায় হেলান দিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে হঠাৎ মুহিতের কথা মনে পড়লো তার।
মুহিতের আজ অফ ডে।
ওকেই তো নিয়ে যাওয়া যাবে।
ভাবনা টা মাথায় আসতেই ইয়েস বলে তুড়ি মারলো স্বর্গ।
যেই ভাবনা সেই কাজ।পা টিপে টিপে স্বর্গ মুহিতের কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো।
মুহিতের দরজার সামনে এসে দুরু দুরু বুকে ঠকঠক শব্দ করলো স্বর্গ।
বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু ব্যাক্তিগত কাজ সারছিলো মুহিত।
হঠাৎ দরজায় নকের শব্দে কাজে ব্যাঘাত ঘটলো।
এই টাইম টাতে মামা মামী দুজনেই ঘুমায়।আর মা তো কখনো ই আসেনা।মুহিত ই কাজের ফাঁকে গিয়ে মায়ের সাথে সময় কাটায়।তাহলে কে আসলো?
কাজ বাদ দিয়ে ল্যাপটপ অফ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো মুহিত।
খুট করে দরজা খুলে স্বর্গ কে নিজের রুমের দরজার সামনে দেখে ঠান্ডা সমীরণ বয়ে গেলো মুহিতের প্রাণে।
না চাইতেও ঠোঁটে ফোটে উঠলো প্রশস্ত হাসি।
স্বর্গ আজ মেরুন রঙের একটি কুর্তি পড়েছে সাথে ম্যাচিং করা প্লাজও,গলায় ঝুলানো স্কার্ফ।ঘাড় সমান বাদামি চুল গুলো দুই পাশে ছাড়া।মুখে কোনো প্রসাধনীর ছোয়া নেই তবুও তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মোহনীয় মনে হয় মুহিতের।
স্যালাইনের প্রভাবে মুখটা গুলুমুলু লাগছে।
মুহিতের মনে হলো মেয়েটাকে একটা টুপ করে চুমু খেয়ে ফেললে মন্দ হয় না ।
কিন্তু চাইলেই কি মেজর জেনারেল এর মেয়েকে যখন তখন চুমু খাওয়া যাবে নাকি?
মন কে বহুত হুমকি ধামকি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো মুহিত।
মুখে হাসি বজায় রেখে বলে উঠলো―
―আরে স্বর্গ আপনি?
"ভেতরে আসুন।""
মুহিতের মুখে আপনি সম্বোধন শুনে রাগের মিটার ছয়শত ফারেনহাইট হলো সামনে দাঁড়ানো মানবীর ।
তৎক্ষণাৎ পিছন ফিরে হাঁটা দিলো সে।
সাথে সাথে ই মুহিত বেক্কল বনে গেলো।
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো ―
""কী হলো মেয়েটার হঠাৎ""
মুহিত আবার বলে উঠলো―
""কি প্রবলেম হয়েছে স্বর্গ আমাকে খুলে বলুন।ভেতরে আসবেন না?
স্বর্গ মুখে কাঠিন্য বজায় রেখে বলে উঠলো―
""না যাবোনা""!
""তখন মুড ভালো ছিলো এজন্য এসেছিলাম,এখন মুড খারাপ হয়ে গেছে তাই চলে যাচ্ছি।
""দরজায় নক করে আপনার বিশেষ সময় নষ্ট করার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, মাফ করবেন।
বলেই দুই হাত জোড় করে চলে যেতে উদ্দত হলো।
মুহিত জানে মেয়েদের মুড সুইং হয়।নিজের বোন কে দিয়েই জলজ্যান্ত প্রমান মুহিত।
তাই বলে সেকেন্ডের ব্যাবধানেই??
স্বর্গকে মুহিত অনেক দিন ধরেই দেখে আসছে।সেকেন্ডের মাঝেই এমন আমূল পরিবর্তন কখনোই চোখে পড়েনি।মেয়েটি যথেষ্ট ম্যাচিউর।
―তাহলে??
""মুহিত কি কোনো অন্যায় করে ফেলেছে?
""নিজের অজান্তেই কি স্বর্গের কোমল মনে আঘাত দিয়ে ফেলেছে?
ভাবনা থেকে বের হতেই মুহিত দেখতে পেলো স্বর্গ তার রুমের ত্রিসীমানায় নেই।
মুহিত মাথায় হাত দিয়ে চার পাশে উঁকিঝুঁকি মেরে চিল্লিয়ে উঠলো
―আরেহ পাখী গেলো কোথায়?
★★★
সৌম্য মিশন থেকে ফেরার পর থেকেই পিউ আর সৌম্যের ভ্যালেন্টাইন চলছে প্রতিদিন।লাভ বার্ড এর মতো সুযোগ পেলেই দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারছে না।
ডিউটি টাইম শেষ হতেই সৌম্য পিউকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়,নিজেদের মতো করে সময় কাটায়।
দুজনের বন্ডিং ও খুব ভালো।তারা দুজন দুজনের প্রতি যথেষ্ট লয়াল।
তাদের সম্পর্ক এখন মধুপুর্ন।
""আপনি"" নামক সম্বন্ধ কে টাটা বাই বাই জানিয়ে ""তুমি""তে চলে এসেছে।
ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরে নির্ঝর আবাসিক এর লেকের পাড় দিয়ে হাত ধরে হেটে বেড়াচ্ছে সৌম্য আর পিউ।
হঠাতই পিউয়ের ফোনের কর্কশ রিংটোন এ প্রেমে ব্যঘাত ঘটলো তাদের।
ঝটপট ফোন বের করে স্বর্গের মায়ের নম্বর দেখতেই ভ্রু কুঁচকে এলো পিউ এর।
স্বর্গ তার ক্লোজ ফ্রেন্ড হলেও স্বর্গের মায়ের সাথে খুব কম কথাই হয়েছে তার।
চিন্তিত হয়ে ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে স্বর্গের আওয়াজ পাওয়া গেলো।
পিউ কুশল বিনিময়ের জন্য প্রশ্ন করার আগেই স্বর্গ ঝনঝনানি কন্ঠে বলে উঠলো―
ওই হাব্লু মেজরের বডিগার্ড তোকে কি বলে সম্বোধন করে রে?
পিউ বুঝলো কোনো ঝামেলা নির্ঘাত হয়েছে।না হলে সৌম্য তাকে কি বলে সম্বোধন করে এসব সে কেনো জানতে চাইবে?
তাই স্বর্গ কে না ঘাঁটিয়ে সিধে ভাবে বলে দিলো–
তুমি বলে ডাকে।
তোকে আদর করে কি বলে ডাকে?
উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলো স্বর্গ।
মাঝে মাঝে বাবু,জান, পাখি,টুকটুকি কখন কি বলে সেটা কথার মোডের উপর ডিপেন্ড করে ""
কেনো?
হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?
স্বর্গ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো তোর ওই মেজরের বডিগার্ড কে বলবি―
প্রতিদিন যেনো ওই রসকস হীন করল্লা মেজরের এক ঘন্টা করে লাভ ক্লাস নেয়।
না হলে এতদিন মেজর একা পানিশমেন্ট দিয়েছে,এবার থেকে বাপিকে বলে বাপীকে দিয়েও ওর হালুয়া টাইট করাবো।
বলেই খট করে কল কেটে দিলো স্বর্গ
স্বর্গের এহেন রণমূর্তি দেখে ভড়কে গেলো পিউ।
পিউএর মুখের দিকে তাকিয়ে সৌম্য বলে উঠলো ―
কি হয়েছে বাবু?
ঠোঁট উল্টে পিউ বললো –
স্বর্গ তোমাকে পানিশমেন্ট দিবে।
সৌম্য বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করে―
""সে কী?আমি কি করলাম আবার?
―তুমি কিছুই করোনি,করেছে মেজর।
সৌম্য অবাকের সহিত প্রশ্ন করলো
""কী করেছে মেজর??
সেটা তো আমিও জানতে চাই,বলেই বিজ্ঞের ন্যায় ভান ধরলো পিউ।
◆◆◆
নামিরা এখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।পেট টা অনেকটাই ফুলে উঠেছে।রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয় তার,সোহাগ খেয়াল করেছে রাতের বেশির ভাগ সময় ই ওয়াশ রুমে কাটায় মেয়েটা।
খাবার দাবার এও চরম অনীহা এসেছে।
ডক্টর বলেছে এই টাইমটাতে প্রচুর সেইফলি চলাফেরা করতে হবে।
সোহাগ ভার্সিটি থেকে ছুটি নিয়েছে সে জন্য।
দিন যতো যাচ্ছে সোহাগ ততো ভয়ে সিটিয়ে যাচ্ছে,একা এই অচেনা দেশে সে কিভাবে সামলাবে নামিরা আর ছোট বাচ্চাকে?
সোহাগ মনে মনে ভাবলো নামিরার মাকে যদি এখানে আনা যায় তাহলে নামিরাও ভালো থাকবে,মা ও ভালো থাকবে।
অনেক ভেবে চিন্তে সোহাগ মুহিতের নম্বর ডায়াল করলো।
চারিদিকে ভ্যাপসা গরমে দম ফেলতেও যেনো কষ্ট হচ্ছে
সূর্যের উত্তাপ যেনো আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে ধরনীতে।এসির ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর যেমন দ্রুত হীম হয় তেমনি বাইরে বের হলে যেনো গায়ে আগুন ধরে যায়।একটু বৃষ্টির শীতলতা উপভোগ করতে পারলে মন্দ হতো না।
মুহিত আজ অনেক ব্যাস্ত।অফিসিয়াল কাজে এক দন্ড রেস্ট নেবার ফুসরত মিলছে না।রোদের মধ্যে দৌড়াদৌড়ির কারনে ঘেমে নিয়ে একাকার অবস্থা।
এর মধ্যে জেল সুপার জরুরি তলব করেছে।
মুহিতের সাথে জেল সুপার এর কি কাজ?
সেটাই ভেবে চলেছে মুহিত।
ভাবনার সুতো ছিড়লো রিংটোন এর শব্দে।স্ক্রিনে সোহাগের নম্বর দেখে বুক কেঁপে উঠলো মুহিতের।
জরুরি দরকার ছাড়া সোহাগ কখনোই মুহিত কে কল করে না।
ফোন কানে তুলে হ্যালো বলতেই সোহাগের উচ্ছসিত কন্ঠ শোনা গেলো।
মুহিত কিছুটা শান্ত হয়ে কুশল বিনিময় পর্ব শেষ করলে।
সোহাগ ইতস্তত করে বলে উঠলো
―মুহিত নামিরার যেকোনো সময় লেবার পেইন উঠতে পারে,আমি একা এখানে সাহসে কুলাতে পারছি না।
""তুমি জানো নামিরার মুখ থেকে একটু "আহ" মূলক শব্দ আমার হৃদয়ে কতোটা ব্যাথার সৃষ্টি করে।
লেবার পেইনে নামিরা এই বিদেশ বিভুঁইয়ে কাতরাবে এটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
আর তা ছাড়া নামিরার একটা সাহস দেবার মানুষ প্রয়োজন।
জানি একটা অন্যায় আবদার করতে যাচ্ছি।তবুও নামিরার ব্যাপারে আমাকে একটু নয় অনেকটাই স্বার্থপর বলতে পারো।
সোহাগ অপরাধীর ন্যায় কন্ঠ খাদে ফেলে বললো
―""যদি কিছু মনে না করো মা কে একটু পাঠাবে?
মা তো অনেকটাই সুস্থ এখন।
,বলেই নীরব শ্রোতা হয়ে মুহিতের উত্তরের প্রতীক্ষায় রইলো সোহাগ।
স্মিত হেসে মুহিত উত্তর করলো
এতো ইতঃস্ততার কি আছে সোহাগ ভাই?
আমি মা কে বলে আপনাকে সব কিছু জানাবো।আপনি চিন্তা করবেন না ।
আরো বিভিন্ন কথা বলে সোহাগ কে ভরসা দিয়ে লাইন কেটে দিলো মুহিত।
――――――――――
মুহিত চিন্তিত মনে বসে অপেক্ষা করছে ক্রিমিনাল ভিজিটিং রুমে।
তার বোধগম্য ই হচ্ছে না আহিয়ান কেনো তার সাথে কথা বলতে চাইছে?
মুহিত তো সব কিছু সাবমিট করে দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলেছে।
তবে আজ কেনো আহিয়ান তাকে জরুরি তলব করেছে?
ঝনঝন শব্দে ধ্যান ভাঙলো মুহিতের।
হাতে হ্যান্ডকাফ, পায়ে বেড়ি দিয়ে মুহিতের সামনে বসানো হলো আহিয়ান কে।
দুদিন আগেই যেই ছেলেটার চেহারা জৌলুসে পরিপূর্ণ ছিলো আজ সেটা অনেকটাই মলিন।
কেমন যেনো কয়েক দিনের ব্যাবধানেই অনেকটা শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে ছেলেটা।
ক্লিন শেইভের চকচকে গাল গুলো খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ভরে গেছে।
চোখের নিচে জমেছে কালি।
মুহিতের মনে হঠাৎ মায়ার উদ্রেক হলো।তবুও মুখে গাম্ভীর্য ভাব বজায় রেখে তাকে ডাকার হেতু জানতে চাইলো।
আহিয়ান বিষাদ পূর্ণ হাসি দিয়ে মুহিতের উদ্দেশ্যে বললো―
""মেজর মুহিত আমাদের চোখের সামনে যা দেখি,যা ঘটে আমরা তাকেই সত্যি ভেবে নেই।
'''কিন্তু সত্যের পিছনেও সত্য থাকে।
আমরা সেটাকে যাচাই করিনা।
মুহিতের কপালে সূক্ষ্ণ ভাঁজ দৃশ্যায়মান হলো।
গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো―
―হেঁয়ালি না করে যা বলতে চান তাই বলুন,সময় খুব কম আমার হাতে।
তাচ্ছিল্য পূর্ণ হেসে আহিয়ান বললো―
―""বাপ ভাইয়ের খুনি কে?
তা জানতে ইচ্ছে করে না মেজর মুহিত ওয়াসিফ??
চলবে
তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
পর্ব_১৪
সারিকা_হোসাইন
সকাল সাতটা বেজে পনেরো মিনিট।
আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা পরিলক্ষিত হচ্ছে।যেকোনো মুহূর্তে ধরনীতে বরষার জল আছড়ে পড়বে ঝুমঝুম শব্দে।থেকে থেকেই শো শো শব্দে বাতাস বইছে।বাতাসের প্রকোপে গাছপালা গুলো হেলে দুলে ঢলে পড়ছে।সাথে আকাশে সোনালী আলোর ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে বৃষ্টির সাথে সাথে বজ্রপাতও হবে।
সাদা টি শার্ট আর সাদা ট্রাউজার সাথে স্পোর্টস শো পরে কোয়ার্টার এর মাঠে দৌড়াচ্ছে মেজর মুহিত ওয়াসিফ।দৌড়ের গতিতে তার হাতের পায়ের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।এই ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যেও তার শরীর ঘামে ভিজে একাকার।কপাল,চিপ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে মোটা মোটা ঘাম।
মুহিত থামতে ভুলে গেছে,আনমনে দৌড়ে চক্কর কেটে যাচ্ছে পুরো মাঠ।
এতদিন মুহিত মরীচিকার পিছে দৌড়ে বেড়িয়েছে।এতোগুলো বছর অযথা নষ্ট হয়েছে।
আহিয়ানের মুখ থেকে তার বাবা ভাইয়ের খুনির নাম শোনার পর থেকে বুকের ভেতরে যেনো পাথর চেপে বসেছে।
এতদিন ধরে সেই খুনি তার আশেপাশে ঘুরে বেড়িয়েছে অথচ সে কতো দেশ বিদেশে তাকে খুঁজে চলেছে।
যার কথা আহিয়ান বলেছে তাকে সাক্ষী, প্রমান ,ব্যাতিত কিভাবে আটক করবে মুহিত?
ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে কেউ অন্ততঃ নিজের বাবা সম্পর্কে এমন মিথ্যে বলবেনা।
যখন আহিয়ান মুহিতকে বলেছিলো মুহিতের বাবা আর ভাইয়ের খুনি তার বাবা স্বয়ং আশরাফ চৌধুরী যিনিই কিনা ছদ্দবেশে আহমেদ খান!
তখনই মুহিতের পুরো দুনিয়া দুলে উঠছে,
মানুষটি চমৎকার অমায়িক,।
সমাজ,মানুষ ,দেশ নিয়েই যেনো তার সকল চিন্তা।
মুহিত নিজেও বিভিন্ন কাজে তার সান্নিধ্যে এসেছে।
কখনো মুহিতের মনে হয়নি লোকটি একজন নরঘাতক।
আহিয়ান যখন তার বাবার অপকর্মের কথা গুলো মুহিতকে বলছিলো, তখন মুহিত তার চোখে চিকচিক করা মুক্তোর ন্যায় জ্বল দেখতে পেয়েছে।
আহিয়ান কথা গুলো মুহিতকে বলার পর অনুরোধ করে মুহিতের হাত চেপে ধরে বলেছে
―মেজর আমাকে আজই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন।কয়েদের প্রত্যেকটা মিনিট আমার কাছে সর্প দংশনের মতো মনে হচ্ছে,
―আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মেজর।
―প্লিজ আমাকে আজকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন।প্লিজ
একই কথা বার বার বলতে বলতে হাসতে হাসতে লাফানো শুরু করে আহিয়ান।
দ্রুত দুজন পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়,এর পর মুহিত কাউকে কিছু না বলে সিক্ত নয়নে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে আসে জেল থেকে।
আশরাফ চৌধুরী সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করার পথ এতোটাও সুগম হবে না।
আশরাফ চৌধুরীর দিকে আঙ্গুল তোলার আগে মুহিতকেই সমাজের মানুষ আঙ্গুল তুলে বসে থাকবে।
―কিভাবে হবে বাবা ভাইয়ের হত্যার খুনির শাস্তি?
নাহ মুহিত আর ভাবতে পারছে না।এক ঘন্টা ধরে দৌড়ানোর ফলে তার বুকে প্রচুর ব্যাথা অনুভূত হয়।
দৌড়ের গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
মাঠের নরম ঘাসে শরীর এলিয়ে দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে।
এই পৃথিবী,এই সময়,এই জীবন সবকিছুই তার কাছে বিষাক্ত লাগছে।
হাতে থাকা স্মার্ট ওয়াচ এর স্ক্রিনে টাচ করে সময় টা দেখে নিলো মুহিত।আজ আর অন্য কোনো এক্সারসাইজ করার প্রয়োজন নেই।
অলরেডি সে আটশত আশি ক্যালোরি লস করেছে শুধু দৌড়ে।
একটু আগে যেই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছিলো তা এখন সূর্যের তেজে পরিপূর্ণ।
কথায় আছে
যতো গর্জে ততো বর্ষে না।
আসলেই তাই।
নিজের বরাদ্দকৃত রুমে এসে টাওয়েল নিয়ে মুহিত ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
লম্বা একটা শাওয়ার নেবার পর বেরিয়ে এলো মুহিত।
এখন ভালো লাগছে।
ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাইনিং টেবিলে গিয়ে সবাইকে গুড মর্নিং জানালো।
টেবিলে সবাইকে দেখলেও স্বর্গকে না দেখে মনে চিন্তার উদ্রেক হলো।তবুও কিছু প্রকাশ করলো না।
মুহিত প্লেটে একটি পরোটা আর ভাজি নিয়ে নিলো।
পরোটা ছিড়ে মুখে পুড়তে পুড়তে মিসেস তারিন কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
―মা ,সোহাগ ভাই ফোন করেছিলো।
নামিরার যখন তখন লেবার পেইন উঠতে পারে।ভাইয়া একা ভয় পাচ্ছে।তোমাকে নামিরার পাশে থাকতে বলছে।
তুমি কি যাবে??
মিসেস তারিন কিছু ক্ষণ মৌন রইলেন।এর মধ্যেই নাফিজ মাহমুদ বলে উঠলেন
―আপা যাও না!
মেয়েটা একা একা আছে,তোমার ও শরীর টা এখন অনেক ভালো।ঘুরে এসো ভালো লাগবে।
তনুজা চুপচাপ সবার কথা শুনে বলে উঠলো
―আহা এভাবে কেনো বলছো তোমরা?
আপার সিদ্বান্ত আপাকেই নিতে দাও।
মিসেস তারিন লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন।
মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন―
এখানে আছি মনে হচ্ছে তোমার বাবার কাছাকাছি আছি,তার গন্ধ আমার নাকে লাগে।মনে হয় সে আমার সাথে আছে।
নামিরা আমার মেয়ে তার প্রতি আমার কর্তব্য অবশ্য পালনীয়।
আমি অবশ্যই যাবো।
তবে মুহিত তোমার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ থাকবে তোমার সকল সমস্যার সমাধান করে ঘরে একটা বউ আনো।
সোহাগ নামিরাকে দেশে আনার ব্যাবস্থা করো।
তোমার বাবা কেনো তাদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলো তা আমার কাছে সেদিন ই স্পষ্টমান ছিলো।তবুও সব জেনে বুঝে আমি চুপ ছিলাম।
কারন কোনোদিন তোমার বাবার কথার উপর আমার গলার আওয়াজ তুলিনি আমি।কখনো আমি তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করিনি ,যার উত্তর দিতে গিয়ে তিনি মাথা অবনত করবেন।
মানুষটা নেই,তার স্মৃতি নিয়ে আমি কোনোরকম বেঁচে আছি।আমি তোমাদের এক সাথে সুখে দেখে হাসি মুখে মরতে চাই।
যে কটা দিন বাঁচবো তুমি,নামিরা,তোমার বউ,সোহাগ কে নিয়ে বাঁচতে চাই।
মাম্মা তো বেশি কিছু আবদার করিনি রে বাবা!
মিসেস তারিন আবার বলে উঠলেন―
আমি যেতে চাই আমার মেয়ের কাছে।
―কিন্তু ফেরার সময় আমাকে একা ফিরিয়ে এনো না।আমি ওদের সাথে নিয়ে ফিরতে চাই।
বলেই মুহিতের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলেন মিসেস তারিন।
সবার চোখের কোনেই জমা হলো জল।কারোর ই আর পেট ভরে খাওয়া হলো না।
মুহিত মিসেস তারিনের হাতের উপর হাত রেখে আশ্বস্ত করলো।
★★★★
স্বর্গ ঘরে দরজা আটকে বসে আছে।আজ কয়েকদিন ধরেই সে মুহিতের সাথে কথা বলে না।মুহিত অনেক বার সুযোগ পেতে ই কথা বলার চেষ্টা করেছে।কিন্তু স্বর্গ পাত্তা দেয়নি।
কেনো দেবে,??
প্রেমিকা হিসেবে সে কি বেশি কিছু আবদার করেছে,?
একটু আদর করে কথা বললে কি এমন ক্ষতি হয়?একটু বেশি ভালোবাসলে কি খুব লস হয়ে যায়?
স্বর্গ যথেষ্ট ম্যাচিউর একটা মেয়ে।সে জানে তার মতো মেডিকেল অফিসার এর এসব মানায় না।
তবুও ভালোবাসার ব্যাপারে সে ইমম্যাচিউর হয়েই থাকতে চায়।মুহিত কে এসব ব্যাপারে এক বিন্দু ছাড় ও দেবেনা।
মুহিত তাকে আদর কেনো করবে না?
নানী দাদির মতো সারাক্ষন আপনি আপনি করে বেড়ায়।
ব্যাটা খাটাশ।
নাহ আর ভাত ও খাবোনা,কথাও বলবো না।
এরই মাঝে তনুজা এসে দরজায় নক করে স্বর্গ বলে ডাকে উঠলো।
অনেক ক্ষণ ডাকার পর দরজা খুললো স্বর্গ।
ঝাঁঝালো কন্ঠে তনুজার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
―কি চাই?
ব্রেকফাস্ট করবি না?
না করবো না,খিদে নেই,চলে যাও।
বলেই তনুজাকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে আবার দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।
--------------
ক্যাপ্টেন সৌম্য চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছে মুহিতের সামনে।কিভাবে কথা শুরু করবে সেটাই গুছিয়ে উঠতে পারছে না।
একজন মেজরের ব্যাক্তিগত বিষয়ে একজন ক্যাপ্টেন হয়ে কিভাবে কথা বলবে সেটা ভেবেই কুলকিনারা পাচ্ছে না সৌম্য।
তবুও বলতে হচ্ছে,!
এক দিকে প্রেমিকার চাপ,অন্য দিকে ডাক্তার সাহেবা।
সৌম্যের কাচুমাচু দেখে মুহিত কপাল কুঁচকে ভরাট কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলো কি ব্যাপার ক্যাপ্টেন?
এমন চোরের মতো ভান ধরে আছো কেনো?
পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটনা খুলে না বললে বিদেয় হও।
কাজ আছে আমার বলেই ঘস ঘস করে কলম দিয়ে লিখতে শুরু করলো মুহিত।
জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলো সৌম্য।এর পর মিনমিন করে বলে উঠলো―
স্যার বিষয় টা খুব সেনসেটিভ,বললেও শাস্তি পাবো না বললেও শাস্তি পাবো।
অনেকটা শাঁখের করাতের মতো।
মুহিত এবার সোজা হয়ে বসে বলে উঠলো
―নাটকবাজি করা ছাড়া আর কিছু জানোনা ক্যাপ্টেন?
জী স্যার জানি !
সেটাই এখন বলবো।
বলেই সৌম্য মুহিতের সামনের চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লো।
টেবিলের উপর থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলো।
স্যার আমার হালুয়া টাইট করার চিন্তা বাদ দেন,আপনার চিন্তা করেন।আপনার তো সামনে ভীষন বিপদ!
মেজর জেনারেল এর মেয়ে,মানে ডাক্তারনী বলেই মুহিতের চোখের পানে চাইলো সৌম্য।
মুহিতের প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি দেখে সৌম্য বুঝে নিলো মেজর পুরো ঘটনা শুনতে চাচ্ছে।
সৌম্য এবার নিজেকে মেলে ধরে আয়েশ করে বলতে শুরু করলো
―স্যার মেয়েটা বোধ হয় আপনাকে ভালোবাসে।
সে একটু কেয়ার চাচ্ছে আপনার থেকে।বিষয় টা ঠিক কেয়ার না!উম কিভাবে যে বলি?
অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে মিনমিন করে বলে ফেললো―
""আদর বলতে পারেন!""
কথাটা শোনা মাত্র খুকখুক করে কেশে উঠলো মুহিত।
সৌম্য পানি এগিয়ে দিয়ে বললো লজ্জার কিছুই নেই স্যার,পানিটা খেয়ে নিন।
সৌম্য লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে মুহিত কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো―
বয়সে আপনার থেকে ছোট হলেও প্রেমের অভিজ্ঞতায় বড়।
আমার কথা মাথায় রাখবেন।
আজ আমি গেলাম।
ম্যাডাম কে একটু কেয়ার মানে ঐটা আরকি দিয়েন।
বলেই রাজাদের যেমন সৈন্যরা কুর্নিশ করে ঐভাবে সৌম্য প্রস্থান নিলো।
সৌম্য যাওয়া মাত্র মুহিতের ফর্সা গালে লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়লো।
লাজুকতায় আপনা আপনি ই হাসি চলে আসছে তার।
এমন সময় মুহিতের ক্যাবিনে প্রবেশ করলেন নাফিজ মাহমুদ।
নাফিজ মাহমুদ কে হঠাৎ তার কক্ষে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো মুহিত।
স্যালুট দিতেও ভুলে গেলো।
নাফিজ মাহমুদ সেসব গায়ে মাখলেন না।গদগদ হয়ে মুহিতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন―
তোমার মা অস্ট্রেলিয়া যাবার আগেই তোমার হবু বউকে যদি তাকে দেখিয়ে দেই কেমন হবে মুহিত?
মামার এমন ভিত্তিহীন কথায় চিন্তিত হয়ে মুহিত জিজ্ঞেস করলো ―কিসের বউ স্যার?
নাফিজ মাহমুদ খুশিতে গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করলো
―ক্যাপ্টেন তুলিকা ফার্নাজ কে তোমার কেমন লাগে?
মুহিত ভাষা হারিয়ে ফেললো মুখের।
এরা বাপ মেয়ে তাকে পেয়েছে কি?
যখন যার যেভাবে খুশি অত্যাচার চালাচ্ছে।
এ আবার কোনো নতুন মুসিবত হাজির করতে চাইছে?
স্বর্গ জানলে তো মুহিতকে সরাসরি ক্রসফায়ার দিবে।
নাফিজ হাসি মাখা কন্ঠে বলে উঠলো কি ভাবছো মুহিত?
স্যার আমি ক্যাপ্টেন তুলিকা কে সেই ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখিনি।মিনমিন করে জবাব দিলো মুহিত।
দেখোনি কি হয়েছে ?একটু পরেই দেখার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি,।
বলেই ফোন টিপে হ্যালো বলে মুহিতের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
মুহিত অসহায় এর মতো বসে রইলো ।মাথায় কিছুই ঢুকছে না তার।
**********
পিউ কে নিয়ে একটা কফিশপে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে স্বর্গ।
কফিশপ টা নতুন খোলেছে।ফেসবুকে বেশ হাইপ উঠেছে ।
এখানে ছবি তোলার কর্নার রয়েছে।আর তাদের রুফটপ টা নাকি অনেক সুন্দর।
স্বর্গ আর পিউ ঠিক করেছে আজ তারা শাড়ি পরবে আর সুন্দর সুন্দর ছবি তুলবে।
পিউ পড়বে গোল্ডেন কালার এর জর্জেট শাড়ি আর স্বর্গ পরবে ব্ল্যাক।
আয়নার সামনে বসে আছে স্বর্গ,শাড়ি পরেছে সে,ম্যাচিং অর্নামেন্টস পরেছে তার সাথে।বাদামি চুল গুলো কাঁধের দুই পাশে ছেড়ে দিলো এক পাশে সিঁথি করে।ঠোঁটে লাগালো টকটকে লাল লিপস্টিক।
চোখে ভালো ভাবে মাসকারা লাগিয়ে নিলো।
মুখে ব্লাশনের টাচ আপ দিলেই সাজ কমপ্লিট।
হাতে চুরি পড়তে পড়তে পিউ কে কল দিলো স্বর্গ।
পিউ উত্তর দিলো রাস্তায় গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।
তনুজার কাছে বলে বেরিয়ে গেলো স্বর্গ।
কাঙ্খিত রেস্টুরেন্টের দুতলায় এসে উপস্থিত হলো পিউ আর স্বর্গ।
খাবার ওর্ডার করে বসে গল্প করছে তারা দুজন।
হঠাৎই স্বর্গের চোখ যায় কর্নারে থাকা টেবিলে।
সেখানে দেখতে পায় মুহিত একটি মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
আর মেয়েটি ঠাট্রার ছলে বারবার মুহিতের গায়ে হালকা করে ছুঁয়ে দিচ্ছে।
এসব দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারলো না স্বর্গ।মাথা ঘুরে উঠলো তার।
চোখের কোনে জমা হলো জ্বল।এক সময় তা বর্ষনের রূপ নিলো।
দম বন্ধ হয়ে হাঁসফাঁস লাগছে।এখানে থাকলে মরে যাবে সে।মুহিতের পাশে অন্য মেয়েকে দেখে কষ্টে বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে তার।
চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে বের হতে চাইলো।
শরীর সায় দিলো না।
লুটিয়ে পড়লো রেস্টুরেন্ট এর মেঝেতে।
চলবে।
0 Comments:
Post a Comment