গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ১০

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

পর্ব_১০

সারিকা_হোসাইন


একজন দেশদ্রোহীর শাস্তি কী হয় জানেন তো পিউ?


―আমাকে এই কথা কেনো বলছেন ক্যাপ্টেন সৌম্য?

বিচলিত কন্ঠে জানতে চাইলো পিউ।


–আপনাকে বলার পিছনে অবশ্যই কারন আছে পিউ।কন্ঠে গাম্ভীর্য এনে জবাব দিলো ক্যাপ্টেন সৌম্য শাহরিয়ার।

এরপর বলতে শুরু করলো

―――――


মেজর মুহিতের কথা অনুযায়ী আমি দীর্ঘদিন ধরে আপনার বাবা লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাসের হায়দার কে ফলো করে আসছি।


 শুধু তাই নয় উনার সকল বিষয়ে খোঁজ খবর ও নিয়েছি।


ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরের সকল গোপন খবর উনি এবং আরেকজন অফিসার বাইরে প্রকাশ করেন টাকার বিনিময়ে।


অবশ্যই যার তার কাছে নয়।এমন কারো কাছে যে দেশের কোনো কল্যাণ চায় না।যিনি নিজের আখের গোছাতে ব্যাস্ত।


একজন সেনা সদস্য হিসেবে আমাদের শপথ বাক্য কি হয় জানেন?


―শান্তিতে আমরা,সমরে আমরা।আমার উপর ন্যাস্ত সকল দায়িত্ব আমি সততা ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করবো।আমার জীবন বিপন্ন করে হলেও জল ,স্থল,আকাশ যেখানেই যাবার আদেশ দেয়া হবে আমি সেখানেই যেতে প্রস্তুত।কারন আমরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি।


সেখানে একজন সেনা সদস্যের বড় অফিসার এমন শপথ বাক্য পাঠ করেও কিভাবে তার খেলাপ করতে পারে পিউ?


―পিউ জানে ক্যাপ্টেন সৌম্য আজেবাজে কথা বলার মানুষ নয়।

এ পর্যন্ত সৌম্যের কোনো কথার হেরফের হয়নি।এক কথার মানুষ সৌম্য।

নিজের বাবা সম্পর্কে কথা গুলো যেমন অবিশ্বাসের,তেমনি ক্যাপ্টেন সৌম্যের কথাও ফেলে দেবার নয়।


সৌম্য ভরাট কন্ঠে আবার বলে উঠলো―


―পিউ আপনার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আমার অবর্তমানে আপনার বাবার গতিবিধি লক্ষ রাখবেন।


―আমি রাশিয়া যাচ্ছি ,কবে ফিরবো জানিনা।আদৌ বেঁচে ফিরবো কিনা সেটাও জানিনা।

―আমি চাই আমার অনুপস্থিতিতে আপনি আমার দায়িত্ব টা পালন করবেন পিউ।

বলেই সৌম্য পিউএর হাত চেপে ধরলো।


পিউ নির্বাক হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে সৌম্যের পানে নীরব দৃষ্টি দিলো।মুখে কিছুই উচ্চারণ করতে পারলো না।


***


মেজর জেনারেল নাফিজের সামনে বসে আছে মুহিত।


নীরবতা ভেঙে মুহিত গাম্ভীর্য পূর্ন কন্ঠে বলে উঠলো


―স্যার তিন দিনের টানা প্রচেষ্টায়  সকল বিবরণের ভিত্তিতে আমি জানতে পেরেছি ঐটা আহিয়ান চৌধুরীর ই জাহাজ ছিলো।সে ঐ জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়াতে নারী,শিশু পাচারের কাজ করে থাকে।


শুধু তাই নয় , অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ সহ যতো ধরনের ইললীগেল কাজ আছে সব সে  ঐ জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্র পথে হাসিল করে 


বলেই তার ট্যাব থেকে এক এক করে কিছু ছবি নাফিজ মাহমুদ কে দেখালো।

―ধীর স্বরে মুহিত আবার বলে উঠলো,

ছবি গুলো আমি বিভিন্ন দেশের স্পাই এর মাধ্যমে পেয়েছি।


ছবি গুলো দেখে নাফিজ মাহমুদ অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।


কন্ঠ খাদে ফেলে উত্তেজিত হয়ে নাফিজ মাহমুদ জানতে চাইলেন


―তুমি এতো কিছু জেনেও চুপ করে কেনো আছো মুহিত?ডিপার্টমেন্ট কে কেনো কিছু জানতে দিচ্ছ না?


―স্যার ডিপার্টমেন্ট জানলে বিভিন্ন তামাশা করে ওকে ধরে আনবে, বিচার হবে,রায় হবে জেল ।


কিন্তু সে ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে আবার  বেরিয়ে যাবে।


―এমনটি আমি হতে দিবো না এবার।আমি ওকে সরাসরি ক্রসফায়ার করবো।সে আমার বহুত পুরোনো শিকার।পূর্বের অনেক হিসেব নিকেশ আছে তার সাথে আমার।


কাতর কন্ঠে নাফিজ মাহমুদ বলে উঠলেন―


―জাহাজে রাশিয়া পৌঁছুতে কমপক্ষে এক মাস সময় তো লাগবেই, এই সময়ের মধ্যে ও যদি আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি করে দেয়,?


―কিছুই করবে না স্যার।খুজ নিয়ে জেনেছি সে স্বর্গকে এক বছর ধরে ফলো করে যাচ্ছে।স্বর্গ কে  টাকা দাবি বা পাচারের স্বার্থে সে অপহরণ করেনি এটা আমি নিশ্চিত।

কিন্তু কোন উদ্দেশ্য নিয়ে করেছে সেটাও  ধোঁয়াশাতে  রয়ে গিয়েছে।


মুহিত আবার ও গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো―


―চাইলে সে  বিমানে করে স্বর্গ কে বিদেশ নিতে পারতো।কিন্তু পাসপোর্ট এর ঝামেলা,এয়ারপোর্ট পুলিশের হয়রানি এসব  এড়াতে সমুদ্র পথ বেছে নিয়েছে।আর যেহেতু জাহাজ টি তার নিজের এখানেও ঝামেলা কম।পোর্ট অথরিটি ওর সাথে অবৈধ কাজে জড়িত আছে।।।


মুহিত বুকের উপর দুই হাত ভাঁজ করে অভিজ্ঞের ন্যায় বলে উঠলো―


―আপনি চিন্তা করবেন না স্যার।স্বর্গ মিলিটারি ট্রেনিং ভালো মার্কস নিয়ে কমপ্লিট করেছে।এটা শুধু আমি নই আপনিও ভালো করে জানেন।


চাইলেই যে কেউ যখন তখন ওর ক্ষতি করতে পারবে না।ও নিজেকে সেফ রাখতে পারবে।


আমি জেনারেল কে বলেছি দ্রুত আমাকে রাশিয়া পাঠাতে।আহিয়ান পৌঁছানোর আগে আমাদের গিয়ে সব পজিশন  ক্লিয়ার করতে হবে সেখানে


―গত বছর মঙ্গোলিয়াতে যেই মিশনে গিয়ে ছিলাম সেই মিশনে রাশিয়ার কিছু আর্মড ফোর্স ছিলো।সেখানকার মেজর নিকোলাস আর ক্যাপ্টেন ভলতেয়ার এর সাথে আমাদের টিমের খুব ভালো সখ্যতা গড়ে উঠেছে।

ওই মিশনে আমরা ওদের অনেক হেল্প করেছিলাম।তারা বলেছিলো কোনো দিন কোনো কিছুর প্রয়োজনে রাশিয়া এলে সেই  সাহায্যের বিনিময় দেবে।


সেই হেল্প নেয়ার এটাই মোক্ষম সময়!


আমি মেইল করে সব জানিয়েছি তাদের।আমাকে যে কোনো হেল্প করতে তারা প্রস্তুত।


মুহিত নরম সুরে নাফিজ মাহমুদ কে বললো–


―আমার মাকে শুধু সামলে রাখবেন স্যার।আমি যদি আর না  ফিরি,আমার মাকে আপনি সময় সুযোগ বুঝে নামিরার কাছে পাঠিয়ে দেবেন।


আপনার কাছে আমার শেষ অনুরোধ থাকলো স্যার।


একদিকে প্রাণ প্রিয় মেয়ের চিন্তা অন্যদিকে মুহিতের চিন্তায় মুখের ভাষা হারালেন মেজর জেনারেল নাফিজ মাহমুদ।মুহিত কে শান্তনা দেবার কোনো ভাষা খুঁজে পেলেন না তিনি।


শুধু পিঠে চাপড় দিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন।


■■

বন্দি রুমে সময় কতো হয়েছে কিছুই ঠাহর করতে পারছে না স্বর্গ।আদৌ এখান থেকে মুক্তি মিলবে নাকি এখানেই পঁচে মরতে হবে?

কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে?কি প্রয়োজনে ?

কিছুই সে জানেনা।


দমে যাবার পাত্রী নয় স্বর্গ।যেকোনো প্রকারে তাকে শক্ত থাকতে হবে।নিজেকে এতো দ্রুত ধরাশায়ী করা যাবে না


নিজেকে শক্ত সামর্থ্য রাখতে হলে প্রথমে প্রয়োজন খাবার।

যেই ভাবনা সেই কাজ।


নিজেকে বন্দী দেখতে পেয়ে স্বর্গ স্বাভাবিক থাকতে পারেনি।তার মধ্যে সাজানো ফল দেখে মাথা আরো গরম হয়ে গিয়েছিলো।এজন্য সব কিছু ছুড়ে ফেলেছে।


রুমের কোনায় উকি ঝুঁকি করে বেডের নিচ থেকে থেতলে যাওয়া একটা আপেল বের করে আনলো স্বর্গ।


যেই কামড় বসাতে যাবে অমনি দরজা খোলার শব্দ পাওয়া যায়।ব্ল্যাঙকেট এর তলায় আপেল লুকিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে  পরে রইলো স্বর্গ।


―ম্যাম প্লিজ টেইক ইউর ফুড

মেয়েলি স্বর শুনে অবাক হয়ে দ্রুত চোখ খুলে স্বর্গ।

খাবার ট্রলি সমেত একজন বিদেশি মেয়েকে দেখতে পায়।শারীরিক গড়ন,পোশাক,আর প্রসাধনীর জন্য সঠিক বয়স অনুমান করা যাচ্ছে না।

তবুও স্বর্গের মনে হলো মেয়েটি আঠাশ কি ত্রিশ বছরের মহিলা।

স্বর্গ চোখ টিপে পরে রইলো।


মেয়েটি আবারো নরম সুরে বলে উঠলো―

― ম্যাম প্লিজ টেইক ইউর ফুড।

―ইফ ইউ ডোন্ট টেইক ইউর ফুড,স্যার উইল কিল মি।


এবার নড়েচড়ে উঠলো স্বর্গ।

বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো এবং মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো


―আই উইল টেইক ইট,বাট ইউ হ্যাভ টু টেস্ট ডিজ ফুড ফার্স্ট।


কথাটি বলে স্বর্গ মেয়েটির দিকে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে রইলো।


মেয়েটি একটু ইতস্তত করে একটা  কাটা চামচ আর নাইফ  হাতে নিলো।স্টেক এর এক কোণা থেকে একটু কেটে মুখে পুড়লো।এর পর সেগুলো ওয়াশ করে নতুন চামচ আর নাইফ আনতে চলে গেলো।


স্বর্গ মনে মনে স্থির করলো এই মেয়েটির সাথে সখ্যতা গড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য হাসিল করবে।


■■মাঝে পেরিয়ে গেছে আরো চার দিন।মুহিত আর ক্যাপ্টেন সৌম্য দুবাই এয়ার পোর্ট এ বসে পরবর্তী বিমান ছাড়ার অপেক্ষা করছে।


খুব ছোট ছোট পোশাক পরিহিত আমেরিকান এক মেয়ে পায়ের উপর পা তুলে মুহিতের সামনে বসে পড়লো।মুহিত সেটা দেখেও না দেখার ভান করলো।

মেয়েটি মুহিতের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বারবার বিভিন্ন ইঙ্গিত করেই যাচ্ছে।

মুহিত ব্ল্যাক কালার এর জ্যাকেট,ব্ল্যাক জিন্স,সাথে ম্যাচিং বুটস পড়েছে।

মুহিতের সৌন্দর্যে মেয়েটি চোখ সরাতে পারছে না।

হঠাৎই মেয়েটি রিনরিনে কন্ঠে বলে উঠলো―


―হেই আম ভেরোনিকা,ভেরোনিকা স্টুয়ার্ট।

,―ইউ আর ঠু মাচ হট।

―উইল ইউ স্পেন্ড এ নাইট উইথ মি?


 বলে মুহিতের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।


মুহিত অন্যদিকে ঘুরে উত্তর দিলো

―সরি আম নট ইন্টারেস্টেড।

মেয়েটি তবুও নির্লজ্জের মতো এটা সেটা হেসে হেসে বলে মুহিতের উপর ঢলে পড়তে চাইছে।


সৌম্য দাঁত চেপে কোনো মতে বসে রইলো।তাদের মাথায় এখন কিভাবে স্বর্গ কে রেসকিউ করে মিশন টা সাকসেস করা যাবে সেই চিন্তা।


সৌম্যের কাছে এই মেয়েটাকে এখন উটকো ঝামেলা মনে হচ্ছে।

মুহিত খেয়াল করলো হঠাৎই মেয়েটি ব্যাগের চেইন খুলে কিছু বের করার চেষ্টা করছে আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে।


সচেতন হলো মুহিত।আশেপাশের কাউকে বিশ্বাস নেই।যখন তখন দাবার চাল উল্টে যেতে পারে।


মেয়েটি ব্যাগ থেকে কিছু বের করার আগেই মুহিত তার কোমরে থাকা  সেলফ ডিফেন্সের লাইসেন্স করা রিভলবার মেয়েটির মাথা বরাবর পয়েন্ট করে।


মেয়েটি ভয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে।


ব্যাগ থেকে মেয়েটিকে হাত বের করতে বলে মুহিত।

মেয়েটি বিচলিত হয়ে  ভয়ে ভয়ে একটি ভিজিটিং কার্ড বের করে আনে।


মুহিতের এমন কাণ্ডে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি পুলিশ দৌড়ে এসে মুহিত কে হ্যান্ডস আপ করতে বলে।


সৌম্য গোপনে তাদের আইডেন্টি কার্ড দেখিয়ে দিলে পুলিশ তাদের সরি বলে এবং সমস্ত ঘটনা জানার পর মেয়েটিকে ধমকে তাড়িয়ে দেয়।


প্লেন ছাড়ার সময় হয়েছে।মুহিত আর সৌম্য বিজনেস ক্লাস এ তাদের সিটে বসে রয়েছে।

ব্যাগ থেকে ট্যাব বের করে সৌম্য আর মুহিত নিজেদের কাজের ছক একে ফেললো।

এবার পালা রাশিয়া পৌঁছানোর।


সময় রাত এগারোটা বেজে পনেরো মিনিট।

আশরাফ চৌধুরী নিজের পছন্দের পুরোনো দিনের গান ইজি চেয়ারে বসে বসে শুনছেন আর ঝিমুচ্ছেন।

এমন সময় বিকট শব্দে ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।বিরক্তি তে মুখে খারাপ গালি এনে বললেন―

―কোন চুতিয়া এতো রাতে কল করে বিরক্ত করছে তাকে দেখে নেবে।

নাসের হায়দার হারামজাদা এতো রাতে কেনো ফোন করেছে কৌতূহলী হয়ে ফোন কানে তুলে বললেন

―কি বে শালা নিজের ঘুম নেই বলে অন্যকে ও ঘুমুতে দিবি না।


নাসের হায়দার ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো 


―আরে রাখো তোমার ঘুম।তোমার ছেলে যে মেজর জেনারেল এর মেয়েকে অপহরণ করে ডুব দিয়েছে সেই খবর রাখো?


পুরো ডিপার্টমেন্ট হাত ধুয়ে পরেছে তোমার ছেলেকে ক্রসফায়ার করতে।


কোথায় আছে তোমার ছেলে?


তাকে সাবধান হয়ে যেতে বলো।না হলে কিন্তু এবার আর রক্ষে নেই।

আর এই খবরের জন্য আমার একাউন্ট এ দুলাখ পাঠিয়ে দিও বলেই খেঁক খেঁক করে হেসে লাইন কেটে দিলো নাসের হায়দার।


―এতো রাতে এভাবে হাসছো কেনো বাবা?


হঠাৎ মেয়ের ডাকে চমকে উঠলেন নাসের হায়দার।তোতলাতে তোতলাতে বললেন

―ক ক কই হেসেছি?

―আর এতো রাতে না ঘুমিয়ে বাবার রুমে জাসুসি করতে এসেছো?


জাসুসি নয় দেখতে এলাম এতো রাতে কাকে ফোন করে এতো খুশি হচ্ছ?

 আমি কি তোমার খুব লস করে ফেললাম বাবা?


এতো রাতে বাবার সাথে মশকরা করতে এসেছো বেয়াদব মেয়ে?যাও নিজের রুমে যাও বলে ধমকে পিউ কে ঘর থেকে বের করে দিলেন নাসের হায়দার।


নিজের বুকে নিজেই থুথু লাগিয়ে বলে উঠলেন

―হুহ আরেকটু হলে এখনই ধরা পরে যেতাম।মেয়েটা হয়েছে মায়ের মতো বজ্জাত।মা কে তো বিদেয় করতে পেরেছি।কিন্তু নিজের মেয়েকে কোথায় জলাঞ্জলি দেবো??


―নিজের রুমে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কাঁদছে পিউ।

সৌম্য ঠিকই বলেছে।তার বাবাই খবর আদান প্রদান করে।তার বাবা সত্যি ই একজন দেশদ্রোহি।একথা ডিপার্টমেন্ট জানলে কি হবে??


সহসাই উঠে বসে পিউ।যা হয় হউক।

চোখের জল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে আপন মনে বলে ওঠে―


―ক্যাপ্টেন সৌম্য ,আপনার দেয়া সকল দায়িত্ব আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো 

প্রমিস।


মস্কো এয়ারপোর্ট এ মুহিত আর সৌম্য অপেক্ষা করছে কাঙ্খিত গন্তব্যে যাবার জন্য।এখানে তাদের অনেক কাজ।অপরিচিত জায়গায় পরিচিত শত্রু।বিষয় টা খুব ইন্টারেস্টিং হলেও প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে তাদের।


আর্মি ক্যাম্প থেকে তাদের জেটি ঘাটে যেতে হবে এবং কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হবে।

স্যাম নামের যে স্পাই আছে তার কাছ থেকে ঐ জাহাজ সম্পর্কিত আরো অনেক তথ্য জানতে হবে।

ছেলেটি সুইজারল্যান্ডের নাগরিক কিন্তু  টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দেশে স্পাই এর কাজ করে।টাকার কাছে জীবন বাজি রাখতে হাসি মুখে রাজি স্যাম স্মিথ।


যেসব মানুষ যেদিকে টাকা দেখে সেই দিকেই ঢলে পড়ে মুহিত তাদের দু চোখে দেখতে পারে না।কিন্তু কাজের সূত্রে এদের ভীড়েই হাটতে হয় মুহিত কে।


সকল ভাবনার অবসান ঘটলো যখন আর্মি জিপটি ক্যাম্পে এসে ব্রেক কষলো।

নিকোলাস আর ভলতেয়ার দৌড়ে এলো মুহিত আর সৌম্যের সাথে কুশল বিনিময় করতে।


দিনের আলো ফুরিয়ে রাতের আধার চারপাশ গ্রাস করেছে।

ঘুমিয়ে পড়েছে ঝিঁঝিঁ পোকারাও।

দুচোখের পাতায় ঘুম নেই নাফিজ দম্পতির।


দিনে তারা সকলের সামনে ভালো থাকার অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে,কিন্তু রাত হলে সকল ভয় এসে মনের মাঝে হানা দিচ্ছে।

আদৌ বেঁচে আছে তো মেয়েটা?


বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন তনুজা।নাফিজ বুকে জড়িয়ে তাকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা চালালেন।


■■সিডনি,অস্ট্রেলিয়া

নামিরা অনেকটাই সুস্থ এখন।যেদিন থেকে নিজের মা কে একটু সুস্থ হতে দেখেছে সেদিন থেকেই সে স্বাভাবিক আচরণ করছে।এখন আর অযথা কাঁদে না।

কিন্তু মনের মাঝে ছোট নিষ্পাপ ভাইটার মৃত্যু শোক তোলপাড় করে।

মুকিতের কথা আর বাবার কথা চিন্তা করে নামিরা মাঝে মাঝে ই অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে।


কিন্তু যেদিন আল্ট্রাসাউন্ড করে নিজের বেবির মুখের আদল মুকিতের মতো দেখেছে সেদিন থেকে সে ধরে নিয়েছে মুকিত আসবে তার ঘরে।

এভাবে কান্না করে দুর্বল হওয়া যাবে না।


কিন্তু নামিরা প্রায় ই সোহাগের কাছে বায়না ধরে দেশে যাবার জন্য।

সোহাগ নামিরা কে কথা দিয়েছে আর কিছুদিন গেলে মিসেস তারিন একটু স্বাভাবিক হলে সোহাগই তাকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে আসবে।


তখন মা মেয়ে যতো খুশি এক সাথে থেকো।এখন আপাতত বাচ্চার দিকে মন দাও।


ছোট বাচ্চাটা যখন পেটের ভেতর নড়ে উঠে নামিরা তখন খুশিতে সোহাগ কে জড়িয়ে ধরে কতো অভিযোগ জানায়।


―জানো তোমার ছেলে আমাকে এখানে লাথি দিয়েছে,

ওখানে ঘুষি মেরেছে আরো কতো কী।


সোহাগ জানে ঘরে ছোট ছোট হাত পা নিয়ে যখন  বাচ্চা ঘরময় ঘুরে বেড়াবে তখন নামিরা সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যাবে।


কিন্তু সোহাগ?


সে কি পারবে তার পিতৃতুল্য লোকের শোক কাটাতে?


যেই লোক তার বিপদে আশ্রয় দিলো,মানুষের মতো মানুষ করলো তারই বিপদের খবর  সোহাগ জানতেও পারলো না সাহায্য তো দূর কি বাত।


আর মুকিত?


মুকিতের মর্মান্তিক মৃত্যু বর্ননা মনে পড়তেই চোখের কোনে জল জমা হলো সোহাগের।


◆◆

রাশিয়া,মুরমানস্ক ,টোরগোভী পোর্ট


সবচেয়ে শীতল তম দেশ হবার কারনে মুহিত আর সৌম্যের একটু কষ্ট হচ্ছে।তবুও নিজেদের যথাসম্ভব লং কোর্টের সাহায্যে উষ্ণ রেখে তারা এই পোর্টে এসে অপেক্ষা করছে।

সমুদ্র থেকে আসা ভারী হাওয়া বুকে কাঁপন তুলছে।


সন্ধ্যার সূর্য আকাশে হেলে পরে আধারে বিলীন হচ্ছে।এমন সময় রাশিয়ান ভাষায় হ্যালো বলে উঠলেন পোর্ট মাস্টার।

লোকটির বয়স পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন।লম্বা ছয় ফিটের কাছাকাছি।

মুখে মায়াবী হাসি ঝুলিয়ে জানতে চাইলেন তারা কি চায়?


 জাহাজটির ছবি দেখানো মাত্র বৃদ্ধ মাস্টার জাহাজ টি চিনে ফেলে এবং অবাকের সাথে জিজ্ঞেস করে 

ডেড সৌল??


চলবে।

0 Comments:

Post a Comment