গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান পর্ব ৪

 গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান 


পর্বঃ ৪ 


লেখকঃ নামহীন লেখক 

..

..

..

..


---- ভাই ফেল পড়েছে মিতু আর তুই মন খারাপ করলি যে?? 

--- এমনি আপু। ওহ তাহলে ভাই আজকে সবাইকে ছুটি দিয়ে চল বাসায় যাই। আচ্ছা,, আপনাদের ছুটি আজকে,, সবাই অনেক খুশী হয়ে গেলো। আর শুনুন কালকে একটু সকালে আসবেন,, আমার ভাইয়ের পাশ করা উপলক্ষে মিষ্টি খাওয়াবো আপনাদের।

--- বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে বসে আছি,,হঠাৎই আপু এসে হাসতে লাগলো,, ভাই ও ভাই 

কি হয়েছে এত খুশী কেনও?? ও নাহ আমায় বিয়ে করতে চাইছে,,, মানে ওটা কে?? আরে উনি,, উনি মানে?? উফপ মিতুর ভাই। আপুর কথা শুনে আমিও হতবাক হয়ে গেলাম। মাসুদ ভাই আমার আপুকে বিয়ে করবে,,,!!

---- আপু মজা করচিস নাতো,,?? নাই ভাই সত্যি আর উনি আজকে আমার সাথে বিকালে দেখাও করবে বলেছে।

ভাই তোর কি হলো,, মন খারাপ করলি যে?? 

---- আপু আমায় ছেড়ে চলে যাবি তুই,, আমার তো কেউ নেই আমি অনেক একা হয়ে যাব তাই খারাপ লাগছে

---- আচ্ছা ভাই তাহলে উনাকে আমি না করে দেই?? নাহ আপু এমন মানুষ তুই কখনো পাবি নাহ,,মাসুদ ভাই এত বড়লোক তবুও কোনও অহংকার নেই মনে। তুই হয়তো জানিস নাহ আপু,,উনি যে এত ব্যস্ত থাকতেন তবুও প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা হাসপাতালে গিয়ে তোর পাশে বসে থাকতেন

---- উনি একদম মাটির মানুষ,উনাকে না করা ঠীক হবে নাহ। সত্যি আপু আমরা লাকি। আচ্ছা চল খাবি,,। 

খাওয়া-দাওয়া সেরে ফেললাম। ভাই যাহ তাড়াতাড়ি বার হয়ে নে। উনি মেসেজ দিয়ে ঐ হোটেলটাও যেতে বলেছে।

আমি কিছু না বলে আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। 

-- ভাবছি এই যুগেও এমন মেয়ে থাকে যে কিনা তার ভালবাসার মানুষ ডেকেছে আর ভাইকে সাথে নিয়ে যাবে বলছে।

--- আপু তুই একটা,,, কি বল?

না থাক,, আর যাহ বার হো,,। হ আমি তো পাগল যে তোর সাথে যাবো। তুই যাহ মাসুদ ভাইয়া তোকে একা ডেকেছেন।

---- ভাই একটা কথা বলি?? আমার নাহ একা একা যেতে সরম পাচ্ছে। ওহ মেসেজে সারাক্ষণ কথা বলো আর এখন সরম পাচ্ছে তাই নাহ। তুই অনেক পেঁকে গিয়েচিস। দাঁড়া উনাকে তোর জন্য একটা দেখতো বলবো আজ।

---- যাহ যাহ বলিস,,আমি চলে আসলাম। এসে মনে মনে বলছি,,দেখতে বলার কি আছে উনার বোনই তো আছেন। তুই বিয়ে কর তারপর তোর ননদ টাকে আমাকে দিস তাই হবে। 

--- আপু বের হয়ে আমাকে বলে চলে গেলো,,, আমি শুয়ে থাকলাম। সন্ধ্যার পর পর দরজায় আপু এসে ঠকঠক করলো। আমি দরজা খুলেই অবাক। এ আমি কাকে দেখছি। 

--- কে আপনি কাকে চাই,,,?? কুত্তা আমি তোর আপু,, ওহ আপু তুই,, এগুলো কি পড়েচিস,,, আর চুলগুলো এমন স্টাইল,,,ওরে বাবা পুরাই হিরোইন দেখছি। 

---মজা করিস নাতো,, এগুলো নিয়ে চল ভিতরে। কি এগুলো,,?? শপিং 

--- এসে সব বার করে দেখছি আপুকে মাসুদ ভাই অনেক কিছু কিনে দিয়েছে। ভাই কালকে তোকে উনার বাসায় ডেকেছেন।

---- কেনও,,,?? আর আমিতো উনার বাসা চিনি নাহ। আপু আমাকে ঠীকানা দিয়ে বললো আমাকে কারণ বলে নাই। 

---- আচ্ছা আপু,,,। তাহলে কালকে সকালে আমি মাসুদ ভাইয়ার বাসায় যাবো,,, আচ্ছা। 

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি,, অনেক দিনপর কাল মিতুকে দেখতে পাবো

--- সকালে ঘুম থেকে উঠে উনার বাসায় চলে গেলাম। বাসায় ঢুকতে এক কাজের মানুষ আমাকে বসতে বললেন। মাসুদ ভাইয়া কোথায় গেছে বললে বলেন উনি একটু বাহিরে গিয়েছেন একটু পরই আসবে। 

--- আমি মনে মনে শুধু মিতুকে খুঁজছি,, বাড়ির এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও দেখছি নাহ,, একটুপর একটা গান শুনতে পেলাম 

--- পাশে তাকাতেই দেখছি পিছন দিয়ে মিতু বাহিরে কোথায় যাচ্ছে। 

কাক যতই চিল্লাই না কেন তার সুর কখনো কোকিলের মত হয় নাহ। 

---- ও আমার কথা শুনে বুজতে পারলো আমি ওরই বাড়ি এসে ওকে কিছু বলেছি,,আমার কাছাকাছি এসে...

কি বললি আবার বল,,,, মুখ সামলে কথা বলবি,,, 

আর তুই আমার বাসায় কেন?? তোকে বাসায় কে ঢুকতে দিয়েছে?? 

---- এখনি বের হয়ে যাবি নাকি,, তোর গাল দুটো চড় মেরে গরম করে দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিবো। 

আমি নিজের ইচ্ছায় আসিনাই ঠীক আছে,,,!!

--- আমি মিতুর কথায় পাত্তা নিয়ে দিয়ে বরং সোফায় নড়ে চড়ে ভালো করে বসলাম। 

ওর আর সজ্জ হলো না আমায়। আমাকে চড় মারতে যাবে কী,, অমনি মাসুদ ভাইয়া এসে হাজির হয়ে গেলো

--- এগুলো কি হচ্ছে মিতু,,?? বাসায় আসা মেহমানের সাথে এমন ব্যবহার করা কে শিখিয়েছে তোমায়,,, ক্ষমা চাও ওর কাছে,, কখনো না

---- মিতু রাগ দেখিয়ে কোথাও যাবে বলে ঠীক করেছিলে তা না যেয়ে ওর রুমে চলে গেলো। 

--- আবির ওর ব্যবহারে কিছু মনে করো নাহ তুমি। নাহ কিছু মনে করি নাই। 

মাসুদ ভাইয়া কাজের মানুষকে কফি নিয়ে আসতে বললেন,,

আমি বললাম ভাইয়া আমাকে ডেকেছেন যে?? হুমম

আসলে তোমার আপুর আর আমার বিষয়টা হয়তো তুমি জানো,, আমি তোমার আপুকে আমার বাসায় বউ করে আনতে চাই। তুমি কী বলো রাজি আছো??

--- ভাইয়া আপনি কী আর আমরা কী,,,?? মানুষজন কী বলবে?? 

যে যাই বলুক আমার তাতে কিছু যাই আসে নাহ,,, তুমি রাজি কী??

--- ভাইয়া আপনি তো জানেন ই আমি আর আপু সবে একমাস হলে একটা ওয়ার্কসপ খুলেছি,, আপুকে বিয়ে দেওয়ার মত সামর্থ্য তো এখন আমার নেই,, 

তোমাদের কোন খরচ করতে হবে নাহ,,তোমার আপুর সাথে আমার বিয়েটা একটা হোটেল বুক দিয়ে হবে৷ 

--- আর যা খরচ সব আমার,,,তুমি রাজি কিনা?? 

আমি রাজি হয়ে গেলাম। উনি বললেন তাহলে আগামী সপ্তাহে এই দিনে সব ব্যবস্থাটি করে ফেলি কি বলো?? 

---- আপুকে বলে ডেট টা করা উচিৎ,,তোমার আপুকে বলেছি ও বলেছে তুমি যা বলবা তাই হবে ,,, আচ্ছা তাহলে ডেট ফিক্সড করে ফেলুন।

--- সবকিছু ঠীকঠাক হয়ে গেলো,, চলো তোমায় বাসা অবদি এগিয়ে দিয়ে আসি। আমি না করলেও উনি আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে আসলেন। 

--- আমি গাড়ি হতে বাহির হলাম,,একটুখানি দুরে দেখলাম আপু দাঁড়িয়ে আছেন,, মাসুদ ভাইয়াও গাড়ি হতে নেমে দাঁড়িয়ে থাকলেন।

আমি আপুর কাছে আসছি আর ভাবছি আমাকে এগিয়ে দেওয়ার আসল কারণ তাহলে এটা

---- আপুর কাছাকাছি এসে পাশ দিয়ে চলে যেতে লেগে বললাম,,নে হয়েছে এবার চলে আয়,, সব ঠীক হয়ে গিয়েছে। 

আপু একটু লজ্জা পেয়ে গেলো। এবং আমার সাথে চলে আসলো।

--- আপুর সাথে বসে আপুকে সব বললাম। 

রাতে শুয়েশুয়ে ভাবছি মিতু আমার উপরে এতটা রাগ পুষে রেখেছে। মাসুদ ভাই ঠীক সময়ে না আসলে আজ ও হয়তো আমার গাল সত্যিই চড় মেরে লাল করে দিতো

--- তবে একটা জিনিস ভেবে অবাক হচ্ছি,, অপু তো জেলে অপুর সাথে ওর বিয়ে ঠীক হয়েও তা ভগে গেলো,, ও কোথায় একটু মন খারাপ করবে তা নয়,, উল্টো মনের সুখেে গান গাইছে ব্যাপার কী,,,!! 

---- কয়েকদিন পর

বিয়ের সব আয়োজন শেষ,,কাল বিয়ে 

মাসুদ ভাই বললেন,, তুমি আর তোমার আপু আজকেই হোটেলে চলে যাও,, ওখানে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন গিয়েছে 

----- আমি বেশকিছু টাকা সাথে করে নিয়ে আপুকে নিয়ে চলে গেলাম। মাসুদ ভাই জানালো,, ওখানে আমার গাড়ির ড্রাইভার আছেন উনাকে সব বলা আছে তুমি উনার সাথে আজ শহরে চলে যাও,, কেনাকাটা করে আসতে আসতে হয়তো সকাল হয়ে যাবে ।

---- আমি গেলাম,, সব কিছু কিনে নিয়ে সকালে ফিরলাম। আপুকে সাজানো কিছু জিনিসপত্র দিতে ও যে রুমে রয়েছে ওখানে গেলাম। 

রুমে ঢুকতেই মিতু আমাকে দেখে কিছুটা চমকিয়ে গেলো।

---- তুই এখানে কেনও,,,?? যা বের হও,,আর আমার ভাইয়ের বিয়েতে তোকে কে দাওয়াত দিয়েছে,,তুই কেনও এসেচিস?? 

আমাকে কেউ আসতেও বলেনি আর কেউ দাওয়াত ও দেয়নি,, আমি এসেছি আমার বোনের বিয়েতে। 

---- আমার কথা শুনে মিতু যেনো আকাশ থেকে পড়লো ,, তোর বোন মানে তোর বোন কে?? 

একটু সাইডে যাহ,,,ঐযে ওটা আমার বোন।( লাবণ্যকে দেখিয়ে)

---- মানে তুই নাহ এতিম এগুলো কি বলিস?? মিতু এই দিকে এসো ও ঠীকই বলছে আমি ওর বোন,,আর তোমার ভাই কি তোমায় বলে নাই,, আমি ওর বোন?? 

--- নাহ গত এক সপ্তাহ ভাইয়ার সাথে রাগ করে কথা বলি নাই আমি। আমি সব দিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। 

--- কাজি সাহেব এসে বিয়ে পড়াতে লাগলেন,, ( মৃত অমকের একমাত্র মেয়ের সাথে) নাম বলতেই এক ভদ্রলোক বললেন কাজি সাহেব দাঁড়ান 

তোমার নাম লাবণ্য?? 

আপু মাথা নাড়লেন,,,তোমার নাম কি?? 

আমি আমার মায়ের নাম বলতে উনি কিছুটা চমকিয়ে উঠে বললেন,,,তাহলে পাত্রীর বাবার নামের আগে কাজি সাহেব কেনো মৃত নামটি বললেন??

--- আমি ভাবলম লোকটি কি আমার আব্বু বেঁচে আছে জানে নাকি,,আর আমার আম্মুর নামটা কেন জানতে চাইলো?? 

--- আসলে আমি যখন আমার মায়ের পেটে ছিলাম আর আপুর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমাদের বাবা আমাদের মাকে তালাক দিয়ে অন্য একজন কে বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে চলে যাই। 

--- সেই থেকে আমার আর আপুর চোখে আমাদের আব্বু মৃত,,আমার সার্টিফিকেটেও মৃত লেখা আছেন,, তাই কাজি সাহেব মৃত বলেছেন।

---- কিন্তু আপনি কে?? আপনার নাম কী?? 

লোকটা মাথা নিচু করে থাকলে আমি আবারো জানতে চাইলাম আপনি কে কি হলে বলুন??

আরে উনাকে চিনহো না,,উনি হলেন এই শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী,, শফিক সাহেব। 

---- আমার আর বুজতে বাকি থাকলো নাহ উনিই হলো আমার সেই মৃত বাবা,,,আমি চরম ক্ষোভে বলতে শুরু করলাম 

আপনারা সবাই শুনুন,,,

টাকা-পয়সা ওয়ালা কোটিপতির মেয়েকে বিয়ের লোভে নিজের স্ত্রীর 

পেটে ৮ মাসের সন্তান ও পাঁচ বছরের একটা মেয়েকে রেখে তালাক দিয়ে চলে যাওয়া আমার ও আপুর মৃত বাবাটি আর কেউ নই উনি হলেন , ওমনি আপু পিছন থেকে এসে আমার মুখটি চেপে ধরে বললেন চুপ কর ভাই,,

আপুর হাতটি সরিয়ে নাহ আপু বলতে দে আমায়,,,,

..

..

..

চলবে??

..


..

( ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন)

0 Comments:

Post a Comment