#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ২৭
#অনামিকা_রহমান(লিখনিতে)
অপেক্ষার প্রহর বুঝি শেষ হয় না। অপেক্ষা যেন এক বিরক্তির কারন। সেই বিরক্ত ভাবটাই যেন হুরিজিয়ানকে গ্রাস করেছে। মেহমেদের কথা চিন্তা করে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। বসা থেকে উঠে দাঁড়ানো, দাঁড়িয়ে থেকে এপাশ ও পাশ পাইচারি করেই চলেছে হুরিজিয়ান। ফের হাত ঘড়িতে চোখ বোলাতেই তড়িৎ যেন শূন্যে ভাসলো হুর। তাকে মেহমেদ কোলে তুলেই কপালে চুমু খেয়ে আনন্দে আত্নহারা হয়ে বলে উঠল, "বউ! ম্যাজিস্ট্রেট তো হয়েই গেলাম। চলো না আজই বিয়ে করে ফেলি ? "
হুরিজিয়ান মেহমেদের কপালে আলতো ধাক্কা দিয়ে জবাব দেয়, "উম্মাদ কোথাকার! নিচে নামাও। পড়ে যাবো তো। বিয়ে কি হাতের মোয়া নাকি, কিনতে গেলাম দিয়ে দিবে। "
"হ্যাঁ হ্যাঁ, বিয়ে হাতের মোয়াই, দেখোনা কি করি। এবার চলো, বড্ড খিদে পেয়েছে "
মেহমেদের কথায় হুরিজিয়ান সম্মতি দিতেই, হুরকে কোলে থেকে নামিয়ে এগোলো বাইকের দিকে। অতঃপর তারা চলে গেলো লাঞ্চ সারতে।
_______
ঢাকা থেকে দুপুরের পর পরেই ফিরেছে মেহমেদ আর হুরিজিয়ান। হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে শুকনো ঢোক গিলল হুরিজিয়ান। সে আয়শা বেগমের কাছে মিথ্যা বলে গিয়েছে। বাসায় ডুকলে কি প্রতিক্রিয়া হবে, সেইটা ভেবেই কুল পায় না হুর। তবুও পা টিপে টিপে যেনো ঘরে ডুকল হুরিজিয়ান। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না, আয়শা বেগমের মুখোমুখি হতেই হলো,সে হাতে ফুল ঝাড়ু নিয়ে আছে। কিন্তু হুরকে কয়েকবার অবলোকন করে শুধালেন, "ফ্রেশ হয়ে আয়, তোরে খেতে দেই। তারপর তোর সাথে আমার কথা আছে, আর হ্যা শোন ওয়াশরুমে যদি টাইম নেস না, তোরে এই ঝাড়ু দিয়ে আমি মাইর দেবো, কথাটা কান খুলে শুনে রাখ। "
হুরিজিয়ান টু শব্দটা যেনো করলো না, গিয়ে ফ্রেশ হলো তড়িৎ। তারপর আয়শা বেগমের নিকট গিয়েই নিষ্পাপ শিশুদের মতো বসল, খাওয়া দাওয়া শেষ করে, আয়শা বেগম হুরের নিকট একখানা শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিলো, আয়শা বেগমের কন্ঠস্বার ভারি। মনে হয় যেনো কোনো কষ্টকে দামাচাপা দিচ্ছে।শাড়িটা উলটে পালটে অবলোকন করে হুর তার মাকে বলল, এই শাড়িটা কেনো দিয়েছ আম্মু।
আয়শা বেগম নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলো, "সন্ধ্যায় বাসায় মেহমান আসবে। আমি চাই তুই আজ শাড়ি টা পড়। আর একটা কথাও আমার সাথে বলবি না তুই। এখন এখান থেকে যা। সন্ধ্যার হওয়ার পড়েই যেনো তোর শরীরে আমি এই শাড়ি দেখতে পাই। "
কথা গুলো যেন মাথার উপর দিয়ে গেলো। কারা আসবে, কোন মেহমান আসবে। কেনও বা তাকে শাড়ি পড়তে হবে, সেইটা ভেবেই বুঝে উঠতে পারে না।
অতঃপর ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা হেলাতেই যেনো ঘুমিয়ে পড়লো হুর।
ঘন্টা যেতেই ঘুম থেকে উঠেই তাজ্জব বনে গেলো হুর। তার বোন দুলাভাই, দুলাভাইয়ের আম্মা এসেছে। ঘরে নাস্তা বানানোর যেনো প্রতিযোগিতা চলছে মনে হয়। বিছানা থেকে উঠে দাড়াতেই হায়াত ঠেলেই ওয়াশরুমে ডুকালো হুরকে। কিসব কান্ড কারখানা চলছে। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই হায়াত হুরকে শাড়ি পড়াতে শুরু করলো।
এক রকম বিরক্ত হয়েই হুরিজিয়ান চেচালো হায়াতের সঙ্গে।
"কি সমস্যা, কেউ কি বলবে আমাকে। শাড়ি মেহমান, কি হচ্ছে টা কি এই বাড়ি তে "
"তোকে দেখতে আসবে পাত্র পক্ষ তাই এতো আয়োজন "
হুরিজিয়ান ফিক্কা মেরে ফেলে শাড়ি বিছানায়, "আমি বিয়ে করবো না। আমাকে একবারো বলেছিস, আমার জন্য ছেলে দেখছে। আমি কেনো বিয়ে করবো না । "
এর মাঝেই আয়শা বেগম এসে হুরকে চোখ গরম করলো, হুরিজিয়ানের দিশেহারা লাগছে। বাধ্য হয়েই শাড়ি পড়লো হুর।
হায়াত বেরিয়ে গেছে। হায়াত যাওয়ার সাথে সাথে হুর কল করলো মেহমেদকে। কল রিসিভ হতেই শোনা গেলো মেহমেদের কন্ঠ,
"হ্যা বলো কি হয়েছে "
হুর ভার কন্ঠেই শুধায়," মেহমেদ পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে, কিছুক্ষন পর। কিছু একটা করো। "
"পাত্র পছন্দ হলে বিয়ে করে ফেলো "
"কি সব বলছ তুমি মেহমেদ...... "কথা শেষ হওয়ার আগেই কল কেটে গেলো, রাগে দুঃখে হুরিজিয়ান ফোনটাকে ছুড়ে মারলো মেঝেতে। শব্দ শুনে হায়াত কক্ষে ডুকতেই হুরিজিয়ান আবারো চেচিয়ে বলল, একদম রুমে আসবি না।।
হায়াত মেঝেতে থাকা ফোনটা স্টাডি টেবিলে তুলে রেখে চলে গেলো। অতঃপর নিস্তব্ধতা বিরাজ হলো যেনো পুরো ঘর জুড়ে।
______
বসার ঘরে বসে আছে মেহমেদের ফ্যামিলির সকলে। এখন হুরকে সামনে এনে আংটি ও গহনা পড়ানো কার্য সম্পন্ন হলে একটা পর্যায়ে যেতে পারবে। তাই হুরকে আনার কথা বললেন কবির চৌধুরী আয়শা বেগমকে। অতঃপর কয়েক মিনিটের ব্যবধানে হুরকে হাজির করা হলো সবার সামনে। সে তার অবয়বকে নিচু করে বসে আছে। পরিচিতি কন্ঠ শুনতে পেয়েই আকুল চোখে চাইলো হুর সামনের দিকে। সে যা দেখছে সব কি সত্যি। হ্যা সত্যি এটা মেহমেদ, মুরাদ ভাই। তার মা- বাবা।
হুর আর কিছু বলল না,মুনিবা বেগম তাকে গহনা পড়িয়ে দেওয়ার পর পরই মেহমেদ হুরের আঙ্গুলে আংটি পড়িয়ে দিলো। তবুও হুর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। মেহমেদকে একটা উচিত শিক্ষা দিবে এবার হুর।
ফরমালিটিস পালন শেষেই হুর আর মেহমেদকে কথা বলতে দেওয়া হলো। অতঃপর মেহমেদ দরজার ছিটকানি লাগাতেই, হুরিজিয়ান তেতে এসে চেপে ধরলো মেহমেদের গলা। মেহমেদ তখন ও হাসছে।
" বউ তুমি কি ভীষণ রাগ করেছ?"
হুরিজিয়ান মৃদু চেচায়,
"তোমায় আমি খুন করে ফেলব মেহমেদ, না না, আমি তোমাকে বিয়েই করবো না,।এখনই গিয়ে আমি গয়না, আংটি খুলে দেবো। তুমি একটা পাগল, এমন কেউ করে। দেখো তোমার জন্য আমার ফোনটা আমি ভেঙে ফেলছি, ইচ্ছে করছে..... উফফফ। মেহমেদ তুমি একটা অসহ্য "
মেহমেদ আলগোছে কাছে টানে হুরকে এবং বলে ওঠে,
"তোমাকে ছোয়ার আশা আমি পুষেছি বহুদিন ধরে, তাই তো তোমায় বিয়ে করে সারপ্রাইজ দিতে আসলাম হুর।"
হুর মেহেদের নিকট থেকে দূরে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু বেশি দূরে যেতে সে ব্যর্থ হয়। মেহমেদ তার আচল টানে। অতঃপর হুরিজিয়ান রাগন্বিত গলায় শুধায়,
"তোমার মতো পাগল প্রেমিক আমি এই ধরনীতে, দুটো দেখি নি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব।দয়া করে আচলটা ছাড়ো। তুমি পাগল হয়ে গেছ, আমার ভালো ভাবে তোমাকে চেনা হয়ে গেছে।"
কথা খানা মেহমেদকে বলে হুরিজিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
মেহমেদ আচল ছাড়লো না,হাতের সাথে আচল পেচাতে পেচাতে হুরের আরও কাছে আসলো, কানের লতিতে চুমু খেয়ে শান্ত গলায় বলল,
"তুমি যে আমার নেশা হুর। আমি তো সেদিনই তোমার নেশার মত্ত হয়েছি, ভিডিও কলের ওপাশে তোমার অগোছালো মুখ, নেশা মাখা কন্ঠ শুনে। আমি তো এই নেশা ত্যাগ করতে পারবো না।একমাত্র মৃত্যু ছাড়া এই নেশা ত্যাগ করা অসম্ভব। "
~চলবে।
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও। সুন্দর মন্তব্য আশা করছি। হ্যাপি রিডিং)
0 Comments:
Post a Comment