গল্প Crazy_for_you পর্ব ১৯

 #Crazy_for_you🦋

#পর্বঃ১৯

#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)


মেসেজটা সিন করছে মেহমেদ। হুর সেটা দেখা মাত্রই দেখতে পেল আশেপাশে মেহমেদ

কোথাও নেই, আশ্চর্য পাগলটা গেল কোথায়। লাইনেও তো নেই। আবার কিছু করে বসবে না তো, কি এক জ্বালা!

হুরিজিয়ান আশেপাশে খুজে পেল না মেহমেদকে। ছাদের কোনে অন্ধকার আচ্ছন্ন চিলেকোঠায় পাশ থেকে হুরিজিয়ান যেতেই

এক টান অনুভব করল। অতঃপর হুরিজিয়ানের কর্নে বারি খেলো একটি কথা, "আই লাইক ইট, বলেছিলা না, ১০ মিনিট। দেখলে তুমি চলে আসলে। "

হুরিজিয়ান বিরক্ত কন্ঠে শুধালো, ছ্যাচড়া কোথাকার, ঢং এর অন্ত নেই। এখন বলো কি সমস্যা?

মেহমেদের হাসির শব্দ শোনা গেলো অন্ধকারের মাঝে।সে জবাব দিলো,  ব্যথা কমানোর ডিল করবো যে!

হুরিজিয়ান ঠায় দাঁড়িয়ে বলে ওঠে, হুম বলো কিভাবে ব্যথা কমাবো। 

"রাতে আমার সাথে তোমার উনো খেলতে হবে।"

 হুরিজিয়ান  নাক কুচকালো," আজাইরা ! আমার ঘুম পন্ড করে তোমার সাথে আমি উনো কেনো খেলতে যাবো।তোমাকে আমার চেনা, আছে, একবার খেলতে বসলে রাত কভার

করে দিবা। উনো টুনো বাদ, অন্য কিছু বলো।" মেহমেদ আবছা আলোয় হুরিজিয়ানের ঝুমকায় টোকা মেরে জবাব দিলো, বড্ড সেয়ানা তুমি, তোমায় আটকে রাখা বহু

মুশকিলের কাজ। আচ্ছা মাথা মাসাজ করে দিবে কিছুক্ষনের জন্য তাতেই হবে। হুরিজিয়ান অবাকের চরম সীমায় পৌছালো, পাগল নাকি, তোমায় আমি মাসাস করে দিবো, কেউ যদি দেখে কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটবে যে। এই রাখো তো তোমার ব্যথা  কমানোর ডিল,আমি গেলাম।

মেহমেদকে রেখেই হুরিজিয়ান চলে গেলো। মেহমেদ মোবাইলটা বের করে হুরকে মেসেজ করল।" রাত ঠিক ১ টায় আমি বসার ঘরে থাকবো,না আসলে তো কি হবে তাতো জানোই

কি করবো। "

হুরিজিয়ান যেতে যেতেই দেখতে পেল মেসেজ।

সে মেসেজের জবাব দিলো, কচু পোড়া হবে।

_______


মাত্রই হুরিজিয়ান বিছানায় শুয়েছে। কিন্তু মেহমেদ বুঝি আজ তাকে ঘুমাতে দিবে না। ভয়ে তনু কাপছে হুরিজিয়ানের।হুর কি করবে, মানুষের খারাপ কথা উঠাতে সময় লাগে

না, মেহমেদের আব্বু আম্মু যদি কখনও এভাবে তাদের মেলামেশা দেখে, তাহলে কোথায় গিয়ে ব্যাপার তা ঠেকবে কেউ জানে না। 

মেহমেদ আবারো হুরকে কল দিচ্ছে। হুরিজিয়ান বিরক্ত হয়েই গলায় ওড়না জড়ালো। টিপে টিপে এগোলো বসার কক্ষে । সেখানে ছোট বাচ্চাদের মতো বসে আসে মেহমেদ। হুরিজিয়ান এগোতেই হুরিজিয়ানকে

বসালো সোফায় মেহমেদ। তারপর হুরের উড়ুতেই মাথা গুজলো মেহমেদ। পুরুষালি ছোয়ায় কেঁপে উঠল হুরের কায়া, হুরিজিয়ানের হাত টেনে মাথায় বসিয়ে মেহমেদ বলল, মাথায় অনেক যন্ত্রণা করছে বউ। একটু টিপে দাও।

বলছি তো জ্বালাব না আজকে আর। কি সুন্দর আবদার।


হুরিজিয়ান  টু শব্দও করল না। হাত বোলাতে লাগলো মেহমেদের মাথায়। তারপর কখন যে দুজনে ঘুমিয়ে গেলো কেউই টের পেলনা।

 কিছুক্ষন বাদে মুনিবা বেগম পানি খেতে উঠল । ডাইনিং এ  আসতেই দেখতে পেল, বসার ঘরের লাইট জ্বলছে। লাইট অফ করতে এসেই হুর মেহমেদকে দেখে এক অমায়িক হাসি হাসলো মুনিবা বেগম। তার বোঝা হয়ে গেছে। ছেলে বেশ পাগল, হয়েছে। 

 বাচ্চাদের মতো ঘুমিছে আছে হুরিজিয়ানের উড়ুতে। মেয়েটার ঘুমন্ত চেহারা দেখে মুনিবা বেগম মনে মনেই বল উঠল, ছেলেও মেয়েটাকে পাগল বানিয়ে ছেড়েছে।


মুনিবা বেগম লাইট অফ করে দিয়ে বসার ঘরের দরজা চাপিয়ে দিলো। মুনিবা বেগম জানে তার ছেলে সবটা হ্যান্ডেল করবে। ছেলের পাগলামি দেখে দিন দিন মুনিবা বেগম মেহমেদ অনায়সে বলে ওঠে, বউ পাগল মিনি বিড়া়ল। মুনিবা বেগম জায়গা ত্যাগ করলেন। ঘন্টা দুই-যেতে না যেতেই মেহমেদের ঘুম ভাঙলো, চারপাশ অন্ধকার দেখে কেমন

যেনো বোধ হলো।  বাইরে পূর্নিমার আলো জ্বলসাছে। কাপছে মৃদু হওয়ায় পর্দাগুলো। বাতাস অনুভব করা যাচ্ছে দেহে।আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে হুরিজিয়ানের অগোছালো এলোমেলো চুল

গুলো। তার পরী ঘুমোচ্ছে,তারই সাথে। কি সুন্দর  হুরের দেহের ঘ্রাণ। এ যেন এক নেশা  মেহমেদ উঠে বসল, নিজেকে কন্ট্রোল করে ভেতরের দানবটাকে শান্ত করল। দানবটা শান্ত না হলে, কিনা কি করে বসে। সে তার

হুরকে সর্বদা হালাল ভাবেই চায়। মেহমেদ গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দিলো। হুরের ঘুমন্ত চোহারা দেখে একটু হাসল, হুরকে কোলে তুলে

হুরের গালে চুমু খেয়ে বলল, আমার ভবিষ্যৎ বউটা। 

মেহমেদ হুরিজিয়ানকে নিয়ে পৌঁছোলো হুরিজিয়ানের বিছানায়, সেখানে হুরিজিয়ানকে শুইয়ে দিয়ে, ফের চলে আসলো নিজের শোবার ঘরে। তারপর সেও ঘুমিয়ে পড়লো।


_____


বিয়ের ভেন্যু সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে।

বরপক্ষ, কনে পক্ষ সব মিলিয়ে বেশ ভীড়

হয়েছে । নতুন নতুন অনেক অতিথিরা

এসেছে বিয়েতে। এতো এতো অতিথির

মাঝে হুরিজিয়ানকে কেমন একলা একলা

লাগছে। মাঝে কিছুসময় ভালোই কেটেছে তার।

মেহমেদ, মুরাদ, সুজন তিনজনই ছিল।

অনেক ছবি তোলা ও আড্ডাও দিয়েছে।

কিন্তু আবার যেন কই সবাই চলে গেলো। 

ওদিকে কিছুক্ষন আগে মেহমেদের ফুফুর পরিবাররা চলে এসেছে।সকলকেই দাওয়াত দিয়েছে সায়েমা। তাই সেই দাওয়াত রক্ষা করতে ফ্যামিলির সবাই এসে হাজির। সাইকার

সাথে একটি মেয়েকেও দেখা যাচ্ছে, কেমন ডং লাগানো কণ্ঠেই সাইকাকে

জিজ্ঞাসা করল এই তোর মেহমেদ ভাই এসেছে?

 সাইকা সামনে আগাতে আগাতেই বলল, হুম এসেছে।

সেন্টারে ঢুকতেই কর্নারে দেখা গেলো,

মেহমেদ, মুরাদ আর সুজন কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে। সেটা দেখেই

যেন সাইকা ও তার চাচাতো বোনকে নিয়ে এগিয়ে গেলো সেখানে। সাইকা কিছু বলার আগেই মেয়েটা মেহমেদের হাত আকড়ে ধরে বলে উঠল, মেহমদ ভাই কেমন আছেন?

মেহমেদ প্রথমে না চিনতে পারলেও কন্ঠস্বর বুঝতে পেরে বলল, তুমি প্রীতি নাকি!

 প্রীতি হাসল এবং বলল, হ্যাঁ ভাইয়া। আপনি

আমাকে ভুলে গেলেন কিভাবে!


তারপর  মেহমেদ নিজ বাহু থেকে প্রীতির হাতটা ছাড়ালো। তার পর কিছুটা ইগনোর করেই সুজনের সাথে কথা

বলতে রইল।

ওদিকে কিছুক্ষণ আগেই কবির চৌধুরী ও আয়শা বেগম এসেছেন। তাদের সাথে হুরিজিয়ান কুশল বিনিময় করে আবার সোফার এক কোনে বসে রইল, কিন্তু হঠাৎ

চোখ আটকে গেলো একটা দিকে হুরের। মেহমেদ, মুরাদ, সুজনের সাথে দুইটা মেয়ে কথা বলছে।অন্য দিকে ফিরে আছে তাই অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সাময়িক সময় যেতে না যেতে হুর দেখতে পেল দুইটা মেয়ের একটা হচ্ছে সাইকা, কিন্তু অন্য মেয়েটাকে চিনতে পারলো না হুর। আজই প্রথম দেখল। তাহলে

অন্য মেয়েটা কে?

বেশ ঘেঁষেই মেহমেদের সাথে চিপকে আছে। মাথার রগ ফুলে উঠল যেন চরম বিরক্তিতে হুরের। তড়িৎ মোবাইল বের করে হুরিজিয়ান মেহমদকে মেসেজ করল, পান সাজানোর টেবিলের কাছে আসতে। 

অতঃপর হূর ও গিয়ে উপস্থিত হলো সেখানে।

কিছুসময় বাদেই মেহমেদ সেখানে এসে

উপস্থিত হলো।হুরকে দেখা মাত্রই দুষ্টু হেসে বলল, 

"বউ ডাকলে কেন! চুমু দিবে নাকি! "

হুর এসেই মেহমেদের পাঞ্জাবির কলার টেনে

নিচে ঝোকালো নিজ বরাবর, দাতে দাত চেপেই বলে উঠল, "কতবড় সাহস তোমার, মেয়েরা তোমার কাছে আসে কিভাবে? 

মেহমেদ দাত কেলিয়ে বেশ হাসল, জবাব দিলো। 

"আরে প্রীতি তো দেখতে তেমন খারাপ না তোমার সতীন হিসেবে মানাকে

ভালো। কি বলো! বিয়ে করব নাকি ওকে।"

হুরিজিয়ান রাগে যেনো রুদ্রাণী হলো, 

 যদি এমন কিছুই হয় তাহলে, আমি তোমাকে খুন করবো, যাও যাও চোখের সামনে থেকে সোরো, আর যদি দেখি প্রীতি নাকি কোন কচু,

তোমার কোলের মধ্যে ঢুকেছে। একদম

জান নিয়ে নেবো তোমার। 

অতঃপর.... 

 ~চলবে।

 (আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও। গল্পটা হুট করে শেষ হলে তোমাদের কেমন লাগবে জানাও। মেহমেদকে কারা কারা মিস করবে। আমি তো মেহমেদ জানেমানকে ভুলতেই পারবো না।)

0 Comments:

Post a Comment