জোড় করে বিয়ে
পর্বঃ৬
#আবির হাসান নিলয়
শুনেছি বাসররাত সবার জন্য স্বপ্নের আর রোমান্টিক
হয়।কিন্তু আমার জন্য মটেও তা হচ্ছে না।প্রায় ৩০
মিনিট ধরে বাসরঘরে দাঁড়িয়ে আছি।আর ওদিকে
বউ আমার বিছানার উপরে বসে কান্না করছে।
কান্না করছে তো করছে যা থামার নাম গন্ধ কিচ্ছু
নাই।কতো শখ ছিলো সিনেমার হিরোদের মতো
করে বাসঘরে ডুকবো।বউ আমাকে দেখে সালাম
করবে।তারপর আমরা গল্প করবো।কিন্তু তা আর
হলো না।কেনো যে কান্না করছে কিছু বুঝতেই পারছিনা।
আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে জান্নাতের কাছে গেলাম।
আমিঃকান্না করছো কেনো...?
জান্নাতঃ😭😭....(কান্না করতেই আছে)
আমিঃকি হলো বলো।(জান্নাতের পাশে বসে)
জান্নাতঃখবর দার আমার পাশে বসবি না।
অনেকটা রাগ দেখিয়ে কথাটি বলল।জান্নাতের
এখন চেহারা দেখে ভয় পাবার মতো।জান্নাত আমার
দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে।তা দেখে আমার ১
নাম্বার পেয়ে যাওয়ার অবস্থা।তারপরেও বললাম।
আমিঃতুমি এভাবে রাগ করছো কেন?
জান্নাতঃতোকে কি বললাম একটাও কথা বলবি না
আমিঃআরে আমি কি করেছি বলবে তো।
জান্নাতঃকি করেছিস মানে...তুই আমাকে #জোড়
করে বিয়ে করলি কেনো
আমিঃজোড় করেছি মানে?
জান্নাতঃতুই যদি ওভাবে প্ল্যান না করে আমাকে
বিয়ে করতি তাহলে আমি কিছু বলতাম না।কিন্তু
তুই আমার সাথে গেম খেলে বিয়ে করছিস।এটাকে
আমি জোড় বলবো না তো কি করবো।
একদমে কথাগুলো বলল।মেয়েটা কথাও বলতে
পারে। আমি যে এখন তার স্বামী সেটা হয়তো ও
মনে করছে না।তুই তুকারে করে কথা বলছে।
আমিঃতুমি জানোনা স্বামীকে তুই করে কথা বলতে
নাই।বললে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
জান্নাতঃকে স্বামী
আমিঃকেনো আমি...
জান্নাতঃআমি তোকে স্বামী হিসাবে মানি না।
আমিঃকিন্তু আমাদের যে বিয়ে হলো সেটা।
জান্নাতঃআমি বিয়েও মানিনা।দরকার হলে আমি
তোকে ডিভোর্স দিবো।তবুও তোকে স্বামী মানা ইম্পসিবল।
আমিঃঠিক আছে তোমার আমাকে স্বামী মানতে হবে
না।এখন ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
জান্নাতঃতাহলে তুই বিছানাতে কি করিস??
জান্নাতের কথাশুনে আমি তো অবাক।কারণ আমি
বিছানা ছাড়া কোথায় থাকবো।তারপরেও জিজ্ঞাস
করলাম।
আমিঃকেনো বিছানায় না থেকে কোথায় থাকবো
জান্নাতঃবিছানায় থাকবি মানে।তোর সাথে আমি
এক বিছানায় ঘুমোতে পারবো না।
এবার অনেকটা রাগ হয়ে গেলো।কারণ আমি বিছানা
ছাড়া ঘুমোতে পারিনা।মনডা চাইছে ধরে ইচ্ছামতো
থাপ্পড়ায়ে মুখের দাত ফেলে দেয়।কিন্তু বউ বলে
কিছু করতে পারলাম না।পরে যদি আবার কেউ
জিজ্ঞাস করে আমার বউয়ের এ অবস্থা কেমন
করে হলো।তাহলে আমি নিজেই অপমানিত হতে হবে।
নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে জান্নাতের মুখটা
আমার দিকে ঘুরিয়ে বললাম.....
আমিঃজান্নাত আমি বিছানা ছাড়া ঘুমোতে পারিনা
জান্নাতঃঠাসসস ঠাসসসস
জান্নাতের থেকে থাপ্পড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে ওর
দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।থাপ্পড় দেয়ার
পরে জান্নাত আবার বলতে শুরু করলো।
জান্নাতঃবিয়ে হয়েছে বলে আমার কাছে স্বামীর
অধিকার খাটাতে আসবি না।না হলে ভালো হবে না।
জান্নাতকে আর কিছু বললাম না।কারণ মেয়েটা যে
ধানিলঙ্কা। কিছু না বলেই শুধু থাপ্পড় খেতে হয়।
অধিকার খাটাতে গেলে না জানি আমাকে কি করবে
সৃষ্টকার্তা ভালো জানেন।বন্ধুরা কতো করে বলেছিলো
বিড়ালটা যেনো সাবধানে মারি।এখন ওদের কেমন
করে যে মুখ দেখাবো। আমায় ক্ষমা করে দিস রে।
জান্নাতঃকি হলো দাঁড়িয়ে রইলি কেনো?
আমিঃসেটা তোমার ভাবতে হবে না।
জান্নাতঃচুপচাপ শোফার উপরে ঘুমা।হনুমান, কালো
বিড়াল,লুচু,সালা বদমাশ।
আমিঃআল্লাহ গো আমারে তুইলা লও।
জান্নাতঃঐ চুপ।যা ঘুমা তাড়াতাড়ি।
আর কিছু বললাম না।ইয়ে মানে বলার সাহস নাই।
যদি আমার মতো নাদান পোলারে আবার মারে।
আম্মাগো আমি কাকে বিয়া করলাম।কথায় কথায়
শুধু মারে।এক বালতি দুঃখ নিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে অবশ্য আমাকে কেউ ডাকে ঘুম থেকে
উঠাতে লাগে না।আমি নিজে নিজেই ঘুম থেকে
উঠি। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম জান্নাত এখনো শুয়ে
আছে।দেখতে একদম বাচ্চাদের মতো লাগবে।
জান্নাতকে দেখে কেউ মনেই করবে না।গতরাতে
কি কি করতে পারে।ওকে এখন অনেক নিষ্পাপ
লাগছিলো।ঘুম থেকে উঠার জন্য ডাক দিবো ভাবছি
কিন্তু গতরাতের থাপ্পড় আর বকার জন্য ডাকার
সাহসিকতা খুঁজে পাচ্ছি না।যদি আবার মারে।তার
থেকে বরং এই নিষ্পাপ মুখখানা উপভোগ করি।
জান্নাতকে দেখতে দেখতে খেয়ালি করিনি জান্নাত
ঘুম থেকে উঠে পরেছে।
জান্নাতঃঐ হনুমান কখন থেকে ডাকছি কানে যায় না
আমিঃএ্যাঁ...কিছু বললে
জান্নাতঃতুই আমার রুমে কি করিস
আমিঃতোমার রুম মানে।কাল যে আমাদের বিয়ে
হলো।এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?
জান্নাত আর কিছু না বলে ফ্রেস হওয়ার জন্য বাথরুমে
চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর ফ্রেস হয়ে রুমের ভিতরে
এলো।নীল রংয়ের শাড়ি তে জান্নাতকে অপরূপ
লাগছিলো তার সাথে খোলা চুল। চুলগুলো এখনো ভেজাই রয়েছে।
যা দেখতে জান্নাতকে নীলপরিদের মতো লাগছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি আর চুল ঠিক করতে
যখন জান্নাত ব্যস্ত তখন আমার মনে অন্য চিন্তা
ভাবনা ঘুরপাক শুরু করে দিছে।মন চাইছে পেছন
থেকে জড়িয়ে ধরি।যখনি জান্নাতের কাছে যাওয়ার
জন্য পা বাড়ালাম ঠিক তখনি গতরাতের থাপ্পডের
কথা মনে করে গালে হাত দিয়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য
চলে গেলাম।
ফ্রেস হয়ে রুমে আসতেই অবাক।
কারণ বিছানার ওপর আমার ড্রেস রাখা হয়েছে তার
পাশে জান্নাত বসে আছে।মনে মনে ভাবছি হয়তো
জান্নাত আমাকে ভালোবেসে ড্রেস গুলো আলমারি
থেকে বের করে রেখেছে।যেনো এগুলো আমি পড়ি।
আমিঃধন্যবাদ সোনা বউ ড্রেস গুলো বের করে রাখার জন্য।
জান্নাতঃবয়েই গেছে আপনার ড্রেস বের করা।
আমিঃতাহলে.....
জান্নাতঃআপনার মা এসে আমাকে বলল এগুলো
বিছানার উপর রেখে দিতে।তাই রাখছি।এখন চলুন
নিচে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
জান্নাতের কথা শুনে এখন কেনো জানিনা অনেক
খারাপ লাগে।কি করেছি আমি।শুধু ভালোই তো
ভেসেছি। আর সেই ভালোবাসাটা নিজের করে
পাওয়ার জন্য একধরনেএ জোড় করে বিয়ে করেছি।
কিন্তু আমি তো ওকে অনেক বেশী ভালোবাসি।কেনো
বুঝতে চাই না।নিজের মনকে।শান্ত করে উত্তর দিলাম।
আমিঃতুমি যাও আমি আসছি।
জান্নাতঃদু’জনকে একসাথে যেতে বলেছে।
আমিঃঠিক আছে তুমি একটু।অপেক্ষা করো আমি
রেডি হয়ে নিচ্ছি।
তারপর ড্রেসটা পরে নিচে চলে এলাম।সবার সাথে
কিছুক্ষণ কথাপোকথন করে নাস্তা করে রুমে চলে
এলাম।কিছুক্ষণ পরে জান্নাত এসে বলল....
জান্নাতঃবিকেলে আমাদের নিতে আসবে।
আমিঃহুম তো..??
জান্নাতঃআপনি কি যাবেন?
আমিঃহ্যা যাবো।
জান্নাতঃহনুমান কোথাকার কোনোকিছুতেই না বলে না।
আমিঃকি বললে
জান্নাতঃকিছুনা।
বউটাও হয়েছে।কখনো তুই আবার কখনো আপনি।
না জানি মাথার কোন তার কাটা।শান্ত শিষ্ট থাকাতে
অনেক কিউট লাগলেও একদমই কিউট না।পেত্নী
একটা। সর্বদা শুধু বকা আর মার খেতে হয়।
বিকেলে জান্নাতদের বাসা থেকে কিছু মানুষ এসে
আমাদের মানে আমাকে আর জান্নাতকে সাথে
করে নিয়ে গেলো।জান্নাতদের বাসার সবাই।মিশুক
হলেও আমি তাদের মতো না।কেমন যেনো সবার
সাথে কথা বলতে আমার লজ্জা লাগে।এরই মাঝে
জিতু(জান্নাতের ছোট বোন।বয়স আনুমানিক ৭বা
৮হবে)আমার কাছে এসে বলল....
জিতুঃদুলাভাই আপনার কি মন খারাপ?
আমিঃকই না তো।
জিতুঃআপনি কারো সাথে কথা বলছেন না।তাই
জিজ্ঞাস করলাম।
আমিঃনা জিতু। আমি আসলে তোমাদের সবার
মতো মিশুক না।তাই এখানে বসে আছি।
জিতুঃওহ।এখন চলেন রাতের খাবার খাওয়ার জন্য
আপনাকে ডাকছেন।সবাই অপেক্ষা করছে।
আমিঃঠিক আছে চলো।
তারপর জিতুর সাথে নিচে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে
রুমে চলে আসলাম।আর এখানেই শুরু হলো আরেক
সমস্যা।কারণ জান্নাতের রুমে কোনো সোফা নেই।
কি আর করা ফ্লোরেই ঘুমোতে হবে।কারণ থাপ্পড়
খাওয়ার থেকে ফ্লোরে ঘুমানো শতগুণ ভালো।
ফ্লোরে বিছানা পাড়ছি এমন সময় জান্নাত এলো।
জান্নাতঃকি হলো? কি করছেন?
আমিঃবিছানা পারছি।
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃঘুমাবো তাই।তোমার রুমে তো আর সোফা
নেই যে সোফাতে ঘুমাবো।আর থাপ্পড় খাওয়ারও
ইচ্ছা নাই।তাই এখানেই বিছানা পারছি।
জান্নাতঃগুড বয়।
তারপর আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে গেলাম।
কিন্তু সকাল হতেই হলো একটা সমস্যা....!!
চলবে........
0 Comments:
Post a Comment