জোড় করে বিয়ে
পর্ব:৫
#আবির হাসান নিলয়
জান্নাতের কথা শুনে যতোটা খারাপ লাগছিলো
তার থেকেও দ্বিগুণ রাগ হচ্ছিলো আব্বু আম্মুর
প্রতি।বাসায় এসে ইচ্ছা মতো সব কিছু ভাঙতে
শুরু করে দিলাম।এটা অবশ্য নতুন না।এর আগেও
অনেকবার ভেঙেছি। আজ একটু বেশি রাগ হচ্ছিলো।
কারণ তারা আমার সব কথা রাখে কিন্তু আজ কেন
তারা আমার একটা চাওয়া পূরণ করতে পারলো
না।এসব ভাবতে ভাবতে যখনি দেয়ালে থাকা
আমার একটা ছবিতে বারি দিছি অমনি ছবিতে
থাকা কাচ এসে হাত কেটে দিলো।যার জন্য আর
কিছু ভাঙতে পারা বয়ে উঠলো না।নিজেকে
অনেক দুর্বল লাগছিলো।
কাটা হাত নিয়ে কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানিনা।
যখন ঘুম ভাঙলো।দেখলাম আব্বু আম্মু আমার
পাশে বসে আছে।আর হাতে ব্যান্ডেজ করা।
যখনি উঠতে যাবো তখন আব্বু বলল...
আব্বুঃকি হয়েছে তোমার।এমন পাগলামো করছো কেন
আমিঃ........(নিশ্চুপ)
আম্মুঃকি হলো বল।কেনো করছিস এমন।
আমিঃআব্বু আমি তোমাদের কাছে কি চেয়েছিলাম।
আব্বুঃকি চেয়েছো।আর তুমি চেয়েছো আমরা
দেয়নি। এমন কি জিনিশ আছে??
আমিঃজান্নাত.....!!!
আম্মুঃহুম জান্নাতের কি হয়েছে।
আমিঃজান্নাতের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
আম্মুঃকিহহ।তারমানে তুই জান্নাতের বিয়ের
কথা শুনে এসব ভাংচুর শুরু করেছিস??
আমিঃহ্যা।তাছাড়া কি করবো।
আব্বুঃনিলয়ের মা আমি শিওর তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে।
আমিঃমানে।কি বলতে চাইছো তুমি??😡😡
আম্মুঃঠিকি তো বলছে।তুই একটা পাগল।
আমিঃআম্মুউউউ...!!
আম্মুঃচুপ।তুই জানিস জান্নাতের কার সাথে বিয়ে
ঠিক হয়েছে..???
আমিঃনা।
আম্মুঃআরে গাধা।তোর সাথেই জান্নাতের বিয়ে
ঠিক হয়েছে।সেটাও সামনের মাসের ৩তারিখে।
আমিঃকিন্তু জান্নাত যে বলল..
আব্বুঃতুমি নিজেই তো বারণ করছিলা।যেনো
আমরা কেউ জান্নাতকে না জানাই।
আব্বু-আম্মুর কথা শুনে মন চাইছে এখনি লুঙী
পরে ড্যান্স শুরু করি।কিন্তু আব্বু আম্মু পাশে থাকায়
কিছু করতে পাড়লাম না।আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে
ধরে হাজার বার চুমু খেলাম।সাথে কিছু পাম মারলাম।😂😂
আম্মু আমাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো।আমিও
ভাবতে লাগলাম।বিয়ের পর জান্নাতকে কিভাবে
জ্বালাতন করা যায়।আমাকে কষ্ট দেয়া।তুমি
হারে হারে টের পাইবা সোনা বউ।দেখতে দেখতে
আমাদের বিয়ের দিনটাও কাছে চলে এলো।
কাল আমাদের বিয়ে।সাথে জান্নাতকে জ্বালাতন
করার প্রথম দিন শুরু হবে।আমাকে কি বলেছিলে
আমাকে এ জীবনেও বিয়া করবেনা।এবার
বুঝবা সোনা আমি কি করতে পারি।রুমেই
ভিতরে আনমনে এসব ভাবে চলেছি।।
পুড়ো বাসা হৈচৈ তে মেতে আছে।রাফিও এখন
অনেক সুস্থ।আর সবার আনন্দ করাটাও স্বাভাবিক
দেশের নামকরা বিজনেস ম্যান AR কোম্পানির
এমডি স্যারের ছেলের বিয়ে বলে কথা।
রাফি এসে ডাকাতে ওর সাথে ছাদে গেলাম।দেখলাম
সব হারামি বন্ধুরা বসে আছে।
মেহেদিঃকিরে সালা ভাবিকে তো পেয়েই গেলি।
আমিঃকেনো??আমার কি পাওয়ার কথা ছিলো না।
জয়ঃতুই চাওয়ার পরেও পাবিনা।এমন জিনিশ
আমার মনে হয় পৃথিবীতে তৈরি হয়নি।
সবাইঃ😀😀😀
তারপর ওদের সাথে অনেক্ষণ আড্ডা দেয়ার পরে
রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম।পরেরদিন আম্মুর ডাকে
ঘুম ভেঙে গেলো।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম।
নিলাঃআরে নিলয় বাবু যে।কি খবর।
আমিঃআমার তো বিন্দাস। তোর কি খবর।
নিলাঃএইতো চলছে।
আমিঃদেশে আসলি কবে
নিলাঃরাতের ফ্লাইটে।তা তোর বউয়ের নাম কিরে?
আমিঃজান্নাতুল মাওয়া।
নিলাঃখুব সুন্দর নাম।
নিলার সাথে কথা বলে রুমে চলে আসলাম।আর
হ্যা আপনাদের তো বলায় হয়নি নিলা কে??
নিলা হলো আমার আম্মুর বোনের বড় মেয়ে।
মানে আমার খালতো বোন।নিলা আর ওর পরিবার
কানাডা থাকে।ওর ছোট বোনের নাম রোজি।
থাক আর জানতে হবে না।
গোসল করার পর সবাই মিলে আমাকে সাহায্য
করছে।কোনটা পড়বো কোনটা পড়বো না।সবাই
মিলে আমাকে রেডি করার পরে রোজি বলল..
রোজিঃভাইয়া তোমাকে কিন্তু হেব্বি লাগছে।
আমিঃতাই নাকি।তোর ভাবি কি আমাকে দেখে
ক্রাশ খাইবো...???
নিলাঃকি বলিস।আমার এতো সুন্দর হ্যান্ডসাম
ভাইকে দেখে ক্রাশ খাবেনা সেটা কি হয়।
আমিঃথাক আর পাম দিতে হবে না।
রাফিঃনা সত্যি ভাইয়া।তোমাকে একদম নায়কদের
মতো লাগছে।মন চাইছে একটা সেলফি তুলি।
সবাইঃ😂😂😂
সব নিয়ম কানুন মেনে কনের অর্থাৎ আমার শ্বশুর
বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।যথাসময়ে জান্নাতদের
বাসায় এসে পৌছালাম।আমাদের গাড়ি আসা দেখে
বাচ্চা ছেলে মেয়েরা হৈ চৈ করতে লাগলো।
তারপর কিছু মানুষ আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে
বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো।কেনো জানিনা আমার
মনটা অনেক ক্লান্ত হয়ে গেলো।সবাই হয়তো
বিয়ের দিনে অনেক হ্যাপি থাকে।আমিও ছিলাম
কিন্তু কেনো জানি এখন ভালো লাগছে না।
আমিঃজয় দোস্ত আমার কেমন জানি লাগছে?
জয়ঃমানে।কেমন লাগছে?
আমিঃভালো লাগছে না।
জয়ঃসালা বুঝতে পাড়ছি এখন ভাবির সাথে কথা
বলবি।তাই তো...
আমিঃআরে তেমন কিছু না।
জয়ঃথাক আর বলা লাগবে না।আমি দেখছি কি
করা যায়।
তারপর জয় আর মেহদি চলে গেলো।৫মিনিট পরে
আমাকে ওরা দু'জন মিলে একটা রুমের ভিতরে
দিয়ে গেলো আর বললঃআমরা বাইরে অপেক্ষা
করছি।কথা বলে আয়।
আমি আর কিছু না বলেই রুমের ভিতরে গেলাম।
দেখলাম জান্নাত বসে আছে।এখন আর কেন
জানিনা খারাপ লাগছেনা।হয়তো জান্নাতকে
দেখার জন্য এই মনটা ব্যাকুল হয়ে ছিলো।
কত সুন্দর চুপচাপ বসে আছে।হয়তো আমাকে
এখনো দেখেনি।দেখলে এতোক্ষন মনে হয়
থাপ্পড় খেতে হতো।
আমিঃসো মিসেস নিলয় কেমন আছেন।
কথাটি বলার সাথে সাথে জান্নাত আমার দিকে
তাকালো।ওর তাকানোর মাঝে অনেকটা ক্ষোভ
বিদ্যমান ছিলো।হয়তো ভাবছে আমি এখানে কেন।
জান্নাতঃআপনি এখানে???
আমিঃতাহলে কে থাকবে...
জান্নাতঃমানে...(অবাক হয়ে)
আমিঃমানে তোমার আর আমার বিয়েই তো হচ্ছে
জান্নাতঃকি আজে বাজে কথা বলছেন।বেরিয়ে যান রুম থেকে
আমিঃকেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।বিশ্বাস না হলে তুমি
তোমার আম্মুকে এখন জিজ্ঞাস করো।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জান্নাত কান্না করতে
লাগলো।এক পর্যায় রুম থেকে কান্না করতে
করতে বেড়িয়ে আসতে চাইলো।কিন্তু সেটাতে
আর সফল হয়ে ওঠা হলো না।
আমিঃকোথায় যাচ্ছো...??
জান্নাতঃআমি এই বিয়ে করবো না।তোর মতো
ছিটার লম্পটকে আমি জীবনেও বিয়ে করবো না।
আমিঃতাহলে এখন কি করবে শুনি?/
জান্নাতঃআব্বুকে গিয়ে বলবো আমি এই বিয়ে
করতে পারবো না।।
আমিঃসব চাইলেই কি হয়।তোমার আব্বুর সম্মানের
কথা একবারো ভাববে না।।
(আমি জানি তুমি এমন টাই করতে তাই তো
এরকম গেম খেলতে হলো।কারণ তোমার যে জেদ
যার কাছে সবাই কুপোকাত। কিন্তু সোনা বউ এখন
যে তোমার আর কোনো জেদকে সফল করতে
পারবে না।😎😎)
নিজের মনে মনেই কথাগুলো ভাবছি। এমন সময়
জান্নাত আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।
যা আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছিলো।তাই
বন্ধুদের সাথে করে সেখান থেকে চলে আসলাম।
কিছুক্ষণ পর কিছু ছেলে ও মেয়েরা জান্নাতকে
নিয়ে আসলো।কিন্তু এখন জান্নাতকে একদম
বাজে দেখাচ্ছে।চোখের কাজল লেপ্টে গেছে।আর
চোখ দুটো লালা হয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে আমাকে
দেখার পর থেকে শুধু কান্নাই করেছে।কিন্তু পাগলিটাকে
কি করে যে বোঝাবো খুব ভালোবাসি তোমাকে।জান্নাতকে এভাবে দেখে নিজের মধ্যেই খারাপ
লাগা বিরাজ করতে লাগলো।কোনো ভুল করছি নাতো।
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি।কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছিনা।
যথাসময় আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো।
বাসরঘর.....???
চলবে.........
0 Comments:
Post a Comment