#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ২৩
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
কিছুক্ষন আগেই পরীক্ষা শেষ হয়েছে। গেট থেকে বের হচ্ছে সকলে, হুর গেটের পানে তাকিয়ে আছে । তার চোখের দৃষ্টিতে মেহমেদের ছিটে ফোটাও দেখতে পাচ্ছে না। এর মাঝেই অপেক্ষা প্রহর ভেঙেই মেহমেদ তন্ময়কে বিদায় দিয়ে হুরের নিকট এসে বসল। তারপর হুরের হাতের উল্টোপাশে চুমু খেয়ে বলল, বউ শুনছ! এবার ম্যাজিস্ট্রট হতে কেউ আটাকাতে পারবে না।পরিক্ষাটা আমি বেশ দিয়েছি। চলো, চলো এবার একটু তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাই।
মেহমেদের আবদার শুনেই ঘড়ির পানে হুর চেয়ে বলল, সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা। আমায় বাসায় গিয়ে টিউশনে যেতে হবে।
মেহমেদ শয়তানি হাসি হাসল," নাগো মেয়ে তোমায় আজ বাসায় যেতে দিচ্ছি না। তোমায় আজ কিডন্যাপ করে তোমার বাপের কাছ থেকে মোটা অংকের একটা
ব্যবসা করব ভাবছি।"
হুর ভেংচি কাটল।
"আজাইরা! রওনাক হুরিজিয়ানকে কিডন্যাপ করা ওতো সহজ না।"
মেহমেদ হুরিজিয়ানের হাত টেনেই বাইকের চাবি ঘুরালো তারপর বলে উঠল, সে কিডন্যাপ করতে পারি নাকি পারি না, সেটা ভবিষ্যতে দেখতে পারবে। এখন ওঠো। অতঃপর দুই কপোত-কপোতীর একটু অগোছালো প্রেম, একটু অগোছালো
সময় কাটতে রইল নদীর স্রোতের মত।
_____
মেহমেদের হুট করে আসা যাওয়া,
হূরিজিয়ানের সাথে দেখা করা কারণ ছাড়া, এ যেন এখন নির্দিষ্ট রুটিন। হুরের জন্য পাগলামি, হুরের প্রতি আসক্তি যেন চরম ভাবে প্রভাব ফেলেছে মেহমেদের। সব কিছু যেন হারাম হয়ে
গেছে। দিন দিন মেহমেদকে কেমন ভয়ংকর লাগছে হুরের। তবে পরিক্ষার পর যে চট্টগ্রাম গিয়েছে মেহমেদ, তার মাঝে এই দুই মাসের, ১ম মাসে বেশ কয়েকবার মেহমেদ ঢাকায় এসেছে। তবে শেষ মাসে একবারো আসে নি।
ইদানীং কেমন ছন্নছাড়া লাগছে হুরের। কি থেকে কি করবে সে বুঝতে পারেনা। এইতো সে যে আজ ভার্সিটিতে রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিতে এসেছে। তা মেহমেদকে জানাবে, তা তার মনেই ছিল না। ওদিকে হুরকে অনলাইনে না পেয়ে মেহমেদ বার বার হুরের ফোনে ফোনে কল দিয়েই যাচ্ছে, তারপর কল রিসিভ করেই সাময়িক কথা হলো মেহমেদের সাথে,
"আমি ভার্সিটিতে আছি, বাসায় গিয়ে কথা বলছি।"
কথাটা শুনতেই মাথায় যেনো রাগে টগবগ করে উঠল মেহমেদের। কিন্তু হুর তা বুঝতে পারলো না, অতঃপর মেহমেদের তরফ থেকে শাস্তি পেতেই এক যন্ত্রণার সৃষ্টি হলো বুঝি হুরের।
এইযে রাত ৪টা বাঝতে চলল, হুরিজিয়ান এখনও ভিডিও কলে মেহমেদের পানে তাকিয়ে আছে। ঘুমের টাল সামলাতে না পেরে, অঝোর ধারায় চোখের পানি বইছে। তবুও যেনো ঘুমতে পারছে না।
"মেহমেদ বিশ্বাস করো, আমার একদম মনে ছিল না তোমায় বলতে, আমি কল ধরতে পারিনি, অনেক ভীড় ছিল। আর কখনও হবে না, তুমি যখনই কল দিবে আমি রিসিভ করবো। একটু ঘুমতে দাও আমায়, অনেক কষ্ট হচ্ছে, সকালে না উঠতে পারলে মা বকবে। আমায় চেহারা খারাপ হয়ে যাবে। একটু বোঝার চেষ্টা করো। এভাবে সারাদিন তুমি কল করলে, মা আমার উপর সন্দেহ করে। আমি সত্যিই বলছি, আমি নিজে সময় বের করে তোমার সাথে কথা বলবো। "
অপর প্রান্ত থেকে শোনা গেলো গম্ভির গলা, "আমার ঘুম হারাম করে, তুমি ঘুমবে। আজ যে কষ্ট তুমি দিয়েছ, শাস্তি হিসেবে এটা কিছুই না। আমার যতক্ষণ ঘুম না আসবে তুমি ঠিক ততক্ষণ ওইভাবেই থাকবে। "
হুরিজিয়ানের কান্না চলে আসলো, শরীর অনেক খারাপ লাগছে তার। চোখ থেকে পানি ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছে না সে।
তারপর কিছু সময় যেতেই দেখা মিলল, মেহমেদ ঘুমিয়ে পড়েছে। হুরিজিয়ান
যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, সে কল কাটলো। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখে পানি দিয়ে দরজার ছিটকানি খুলে দরজা চাপালো । লাইট অফ করে সেও ঘুমাতে গেল।
____
হুরিজিয়ানকে বার কয়েক ডেকে গেলো তার মা। হুরিজিয়ান আজ সত্যিই দুষ্টমি করছে না। আকুতির সুরেই যেন তার মাকে বলছে, আম্মু আমাকে একটু ঘুমতে দাও, রাতে ঘুম হয়নি। আমি এখন উঠবোনা। মেয়ের চোখ মুখের হাল দেখেই বুঝতে বাকি রইল না। সত্যিই চোখে ফুটে উঠেছে হুরিজিয়ানের রাতে ঘুম
হয়নি। তার মা চলে গেল। আর ডিস্টার্ব
করলো না মেয়েকে।
ওদিকে মুনিবা বেগম এসে মেহমেদকে ঘুমতে দেখে আর ডাকলেন না। পরীক্ষা শেষ হয়েছে
দুইমাস হলো, এখন সে অবসর সময় কাটাচ্ছে। নিজের রুটিন মাফিক চলে মেহমেদ। কিন্তু ঘড়িতে ১০টা বাজতে দেখেই মাথা নাড়া দিয়ে উঠল মুনিবা বেগমের। মেহমেদ তো এমন দিনে ঘুমায় না! ছেলেটার কিছু হল নাকি।
মুনিবা এগিয়ে গিয়ে মেহমেদকে ডাকলো
অতঃপর চোখ মেলে তাকালো মেহমেদ। মুনিবা বেগমের উড়ুতে মাথা দিয়ে আবার মুখ গুজলো মেহমেদ। ঘুমু ঘুমু কণ্ঠেই বলল, কয়টা বাজে আম্মু?
"১০ টা বেজেছে, এবার ওঠো। তোমার বাবা তোমায় খুজেছে। তোমায় ঢাকা যেতে হবে। মুরাদকে পাঠাতাম, ও যেতে পারবে না, ওর সামনের সপ্তাহে পরিক্ষা । তাই তোমাকে যেতে হবে। বাসার আসবাবপত্র বানানো হয়ে গেছে, আজ বাসায় তোমার তাহমিদ আংকেল ডুকিয়ে রেখে গেছে। তুমি গিয়ে লোক নিয়ে সব গোছাবে,চলো এবার উঠো, ফ্রেশ হয়ে রওয়ানা দেও "।
মেহমেদ আর বাক্যব্যয় করল না। ফ্রেশ হয়ে
খাবার খেয়ে সব গোছগাছ করে বের হলো সে।
.
.
২ টা নাগাদ হুর ঘুম থেকে উঠতেই দেখতে পেল তার মেসেঞ্জারে গুটিকয়েক মেসেজ এসেছে। সব কয়টিই প্রীতি করেছে। প্রীতির আচমকা এমন মেসেজ দেখে ভাবান্তর হয়েই সিন করল হুর। মেসেজে, লেখা আছে,
"শুনলাম, তুমি নাকি মেহমেদের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে, আবার এও শুনলাম দুজনে বিয়ের চিন্তা ভাবনাও করছ। তা মেহমেদের বিষয়ে তুমি কত টুকুই বা জেনেছ?"
মেসেজটা পড়েই হুরিজিয়ানের কেমন যেনো বোধ হলো, ধুকপুক করে কাপছে তার হৃদপিন্ড। হুর কাপা কাপা হাতেই মেসেজ টাইপ করল, মানে কি বলতে চাইছ তুমি প্রীতি?
তড়িৎ অন্যপ্রান্ত হতে প্রীতির কল আসলো,
হুরিজিয়ান হাইপার হয়ে গেল, তার শ্বাস ঘন
হতে লাগল । এমন লাগছে কেন তার । কি এমন বলবে প্রীতি! ভাবতে ভাবতে কাপা হাতেই মোবাইল রিসিভ করে কর্নে টেনে নিলো হুর, অতঃপর অপর প্রান্ত হতে শোনা গেল
প্রীতির কণ্ঠ,
" হুম কতটুকুই চেনো তুমি মেহমেদকে? তোমাদের তো মনে হয় ৭/৮ মাসের মতো সম্পর্ক। আমার সাথে তো ওর সাড়ে তিন বছরের মত সম্পর্ক ছিল। মেহমেদ তো আমায় ইউস করে ছেড়ে দিয়েছে। তোমার কি মনে হয় ও তোমায় ভালো বাসে?"কথাটা বলেই তাচ্ছিল্য হাসির অভিনয় করে প্রীতি। তারপর ১সেকেন্ড সময় নিয়ে আবার বলে ওঠে,
"মোটেও তোমায় ভালোবাসে না। কি
করেনি আমার সাথে, আমার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে, দিনের পর দিন আমার.... । "বলতে গিয়েও থেমে যায় প্রীতি।
হুর কথাগুলো শুনতেই কেমন অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হলো, জবার দিতে গিয়েও যেনো ধোলা পাকিয়ে যাচ্ছে তার কথা, মুখ থেকে যেনো কোনো কথাই বের হচ্ছে না। তবুও
শতকষ্টে জবাব দিলো, কি করেছে তোমার সাথে প্রীতি মেহমেদ ?
প্রীতি কান্না করার ভান করেই আবার জবাব দিলো, তুমিও তো মেয়ে, বুঝে নেও, আমি পারবো না বলতে, তুমি বুঝে নেও। আমি তোমার জীবন নষ্ট হতে দেখতে পারি না। তাই তোমায় জানালাম।"
প্রীতির কথা শুনেই যেনো হুরের পৃথিবীতে
অন্ধকার নেমে আসলো। চোখ থেকে নিমিষেই বের হতে লাগলো নোনা জল কি ঠিক কি ভুল সব যেন গুলিয়ে ফেলল। বুকের মধ্যে কেমন এক অজানা ব্যথার সৃষ্টি হলো। কি করবে হুর। প্রচুর কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। মেহমেদ তাকে ঠকিয়েছে। না কিভাবে সম্ভব। হুর পারছে না কিছুতে মানতে মোবাইলটা ফিক্কা
মেরে ফেলল বিছানায়। দৌড়ে ওয়াশরুমের ছিটকানী বন্ধ করে কান্নায় ভেঙে পড়ল হুর। সেই কান্না শাওয়ারের পানির সাথে মিশে যাচ্ছে। প্রীতির ওই একটা কথাই যেন বারবার কানে ভেসে আসছে হুরের "তুমিও তো মেয়ে তুমি তো সবই বুঝো, তাহলে তুমি বুঝে নেও মেহমেদ আমার সাথে কি করেছে " কথাটা মনে পড়তেই আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হুর। অতঃপর ১ ঘণ্টা পর নিজেকে স্বাভাবিক করে
ফ্রেশ হয় হুর। মেহমেদের সাথে তার আজ একটা হেস্ত ন্যস্ত হয়েই যাবে। বিকেল হয়ে এসেছে প্রায়। মোবাইলের পানে দেখলো অনলাইনে মেহমেদ নেই। ফোনও সুইচ অফ। মাথাটা যেন আরো বিগ্রে গেলো হুরের।
ওদিকে বিকেল নাগাত নিজ বাড়িতে মেহমেদ ফিরেই কাজে তৎপর হলো । ফার্ণিচার রেখে গিয়েছে। প্রত্যেক রুমেই তবে কিছু গোছানো হয়নি। কাল লোক দিয়ে সব গোছাবে,তাই ভাবলো মেহমেদ। তবে আজ নিজ রুমের কিছু অংশ গুছাবে ভেবেই সব বাদ দিয়ে কাজে লেগে পড়ল।
অতঃপর....
~চলবে।
(আজ মেহমেদ আর হুরিজিয়ানকে নিয়ে সিরিয়াস কমেন্ট চাই। পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবে। হ্যাপি রিডিং)
0 Comments:
Post a Comment