#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ১৭
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
সেন্ড করে সাথে কয়েকটা চুমুর ইমোজি দিলো হুরকে মেহমেদ । তারপর কক্ষে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল মেহমেদ। ওদিকে হুরিজিয়ান মেসেজটা পড়েই, রিপ্লাই করল, আশায় থাকো বইসা, পাকলে দেব টেউয়া। গুড নাইট । অতঃপর অপর পক্ষ থেকে মেহমেদের রিপ্লাই আসলো, ডোন্ট ডিস্টাব মি। আমি এখন আমার বউয়ের সাথে রোমান্টিক মুডে আছি। তাই জ্বালাতন করো না । নাহলে এর হিসাব এখন এসে চুকিয়ে নিবো। তুমি ভালো করেই জানো আমি কি করতে পারি। তারপর হুরিজিয়ানের পক্ষ থেকে লাস্ট মেসেজ আসলো, ছ্যাচড়া ব্যাটার শখ কত!
মেহমেদ মেসেজটা পড়ে হাসল কিন্তু আর রিপ্লাই দিলো না।
অতঃপর সেও ঘুমানোর চেষ্টা করলো চোখ আলতো বুঝিয়ে দিয়ে।
_______
সকাল বেলা থেকেই হুব নিজ জামা কাপড় গোছাচ্ছে। এইতো সে বাড়ি চলে যাবে। মুনিবা বেগম হুরকে জামা কাপড় গোছাতে দেখেই শুধালো, কই যাচ্ছো হুর?
হুর ব্যাগে কাপড় রাখতে রাখতেই জবাব দিলো, বাড়িতে যাবো আন্টি। মুনিবা হুরের বাড়ি যাওয়ার কথা শুনেই হুরের কাছে এসে বসল । তারপর আবার শুধালো একেবারে থেকে ঈদ, বিয়ে কমপ্লিট করে গেলেই পারতে? সবাই থাকলে অনেক মজা হতো।
হুর হেসেই জবাব দিলো, আমিতো আন্টি বিয়েতে আসবো। কিন্তু ঈদের দিন তো আমি মা-বাবার সাথেই কাটাই। বিয়ে হলে তো সে পরের কথা। মুনিবা বেগম বুঝতে পারল, মেয়েটার রেওয়াজ শিক্ষা খুব দারুন। তবে দুষ্টুমি একটু বেশিই করে।
মুনিবা বেগম জবাব দিলো, আচ্ছা সাবধানে যাবে, আমি এখন আসছি। তারপর মুনিবা বেগম বেরিয়ে গেলো কক্ষ থেকে। তারপর হঠাৎই ঝড়ের বেগে কোথা থেকে যেনো মেহমেদ এসে হাজির হলো।
তারছিড়া ছ্যাচড়া পুরুষকে দেখে নিজের অজান্তেই হেসে ফেলল হুর। হিজাবের পিন লাগিয়ে হুর জিজ্ঞাসা করল, কি চাই এখানে। মেহমেদ এগিয়ে আসতেই হুরিজিয়ান পেছনে বুঝি পিছালো, হালকা চেচিয়ে বলল, কি সমস্যা ? মেহমেদ হুরের অবয়বে ফুক দিয়ে হালকা এলোমেলো করলো হিজাব তারপর
বলল, থেকে গেলেই পারতে হুর ৷ মেহমেদের কাঁধে বসা রিও যেন বলে উঠল, থেকে যাও না বোকা মেয়ে, বস রাগ করবে। বস রাগ করবে। হুরিজিয়ান ব্যঙ্গ কণ্ঠেই জবাব দিলো,
থেকে যেতেই পারতে!
আমি আজ যাবো, বিয়ের দিনে আব্বু আম্মুর সাথে এসে আবার তাদের সাথেই চলে যাবো।একদম এখানে থাকা যাবে না তুমি বহুত জ্বালাতন করো।
মেহমেদ হাসল এবং বলল,আমি জানি, তুমি গায়ে হলুদের দিনেই এই বাড়িতে আসবে। আর না আসলে তো গত মাসের কথা তো মনে আছে, কি করছিলাম? হুম বলো তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই। সেবার তো বাসার নিচ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। এবার তোমার বেডরুম থেকেই তুলে নিয়ে আসবো। আশা করি, আমার ব্যাপারে আরোও জানতে পারবে, আমি একচুয়ালি কী করতে পারি। হুরিজিয়ান, থমকালো, তার মনে পড়ে গেলো গত
মাসে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা।
হুরিজিয়ান শুকনো ঢোক গিলে জবাব দিলো, ঠিক আছে আসবো, তুমি এখন চলে যাও। কেউ দেখলে খারাপ কিছু মনে করতে পারে।
মেহমেদ আর দাড়ালো না, সে পা বাড়িয়ে বের হলো হুরের কক্ষ থেকে।
হুরিজিয়ান বিছানায় বসে পড়লো, কিভাবে সে পথ বের করবে, গায়ে হলুদের দিন আসার জন্যে।
গত মাসের কথা আবারো যেনো মনে পড়তেই কেপে উঠল হুর। এই পাগলা মেহমেদকে বড্ড চিনেছে হুর। যা খুশি করতে পারে। এর পাগলামি ভয়ংকর।
সেদিন রাতে মেহমেদ প্রচুর বকেছিল হুরকে।তাদের মাঝে ঝগড়া হয়েছিল তাই হুরকে কিছু না বলতে দিয়েই তাকে ব্লক করে দিয়েছিল। অতঃপর হুরও মন খারাপ করে রাগে দুঃখে মেহমেদকে সোসাল মিডিয়ার সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিলো। মাঝে তখন একদিন কেটে গিয়েছে। বিকেলে বাসা থেকে বের হতেই আনমনেই হুরিজিয়ান হাটতে রইল সামনে ,
কিন্তু হঠাৎ থেমে গেলো হুরিজিয়ান। বাইক থামিয়ে জোর করেই তাকে তুলে নিয়ে গেল
মেহমেদ তাকে। আচমকা মেহমেদের আগমন আশা করে নি সে। তার চেহারায় রাগ স্পষ্ট।ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে বুঝি তার শিরা উপশিরা। বাইক চলতে লাগত হাওয়ার গতিতে। মেহমেদের আচরণে ভয়ে কেপে উঠল হুর।
বাইক গিয়ে থামলো রূপনগর। টেনে হিচড়ে নামালো বাইক থেকে হুরকে। সিমেন্টের ব্রিজে ধাক্কা দিয়ে হুরের গলা চেপে ধরে বলে উঠল, এতো বড় সাহস হলো কি করে তোমার। আমায় ব্লক করেছ কোন সাহসে। তুমি জানো আমি পাগল হয়ে যাই কথা বলতে না পারলে।
হুর টাল সামলাতে না পেরে কাশি দিয়ে উঠল, কাশির শব্দ পেয়ে মেহমেদ ছেড়ে দিলো গলা। হুরের হাতের বৃদ্ধ আঙুলটা চেপে ধরতেই আর্তনাদ করে উঠল হুর, ব্যাথা পাচ্ছি মেহমেদ।
মেহমেদ জবাব দিলো, ব্যথাই দিচ্ছি, এই আঙুল দিয়েই তো ব্লক লিস্টে আমায় ফেলেছ।
ব্যথা সহ্য না করতে পেরেই কেদে দিলো, হুর। আমি কখনও করবো না, ছেড়ে দাও মেহমেদ।
অতঃপর মেহমেদ হুরিজিয়ানকে নিয়ে সামনের কিছু দূরের সেই রেস্টুরেন্টে ঢুকল,চাউনি ঘেরা কেভিনটায় বসালো হুরকে।
সেখানের জানালা থেকে দেখা যাচ্ছে পানির মধ্যে ছুটে যাওয়া নৌকাগুলো । কি দারুন দৃশ্য। পাখিদের ওড়াওড়ি। খাবার অর্ডার করে এসে বসল মেহমেদ হুরিজিয়ানের পাশে। তখন ও চোখ বেয়ে পানি নামছে হুরের।
মেহমেদ টিস্যু বের করে আলতো করে মুছলো পানি। তারপর গালে হাত স্লাইড করতে করতে নরম গলায় শুধালো মেহমেদ, বেশি ব্যথা পেয়েছ?
হুরিজিয়ান যেন অভিমান করল, সে টু শব্দটা ও করলো না। হুরের নিরবতা মেনে নিয়ে মেহমেদ আবারো বলল, আমি এই দু রাত ঘুমাতে পারি নি হুর। আমি অনেক ক্লান্ত। আমি ট্রেন থেকে নেমে তন্ময়ের বাইক নিয়ে এখানে তোমায় দেখতে এসেছি। মানলাম অনেক বকেছি, সব আমার দোষ, আমি তোমায় প্রথম ব্লক দিয়েছি তাই তুমিও আমায় এমন শাস্তি দিলে। লং ডিস্টান্স রিলেশন মেইনটেইন করা আমার মতো পাগলের জন্য খুবই কষ্ট কর। আমি কাল সকালে চলে যাবো এই ভেবেই এসেছি ।এখন তুমি যদি আমার সাথে না কথা বল আমি, সত্যি এই বংশি নদীতে ঝাপ দেবো।
অতঃপর হুর মেহমেদের হাত আকড়ে ধরলো, তারপর বলল, তাহলে আমার বাচ্চার বাপ কে হবে, পাশের বাসার টুক্কা মিয়া।
হঠাৎ হায়াতের কণ্ঠে কল্পনা থেকে বের হয়ে আসলো হুর। তারপর তারাতারি রেডি হয়ে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো বাসার উদ্দেশ্যে। অতঃপর....
~চলবে।
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও। মেহমেদ আর হুরিজিয়ানকে সবার কেমন লাগছে একটু কমেন্ট করো। হুরকে কি তোমার ন্যাকা লাগে নাকি, বাস্তব বাদি লাগে একটু বলে যাও। হ্যাপি রিডিং)
0 Comments:
Post a Comment