#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ১৬
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
সুজন ভাইতো বাড়ি গেছে আসতে সন্ধ্যা হবে। তড়িৎ মুনিবা বেগম চোখ গরম করতেই কক্ষ থেকে বের হলো মেহমেদ আর মুরাদ । অতঃপর যেন হায়াত ও কোনো
ছুঁতোয় পালালো। হুরিজিয়ানের কেমন যেন লাগছে। হুট হাট কেমন পরিস্থিতি হয় সে নিজেও জানে না। মুনিবা বেগমের সাথে সালাম বিনিময় হলেও হুর আবার সালাম দিলো। মুনিবা বেগম হুরিজিয়ানকে কয়েক সেকেন্ড অবলোকন করে জবাব দিলো ওয়ালাইকুম আসসালাম। হুরকে তার বেশ লেগেছে। মেয়েটাকে ছবির থেকেও বাস্তবে বেশি সুন্দর লাগে। মুনিবা বেগম আবার বলে উঠল হরিজিয়ানকে, মাশাল্লাহ হুরিজিয়ান তুমি দেখতে!
তোমার কথা আমার ছেলেরা সব সময় বলে তাই তোমায় দেখতে চলে আসলাম। হুরিজিয়ান তার মুখে হাসি বজায় রেখেই জবাব দিল,আপনারা কবে এসেছেন ?
~ এই তো কাল বিকেলে।
অতঃপর হরিজিয়ানের চুল দেখার লোভ সামলাতে পারলো না মুনিবা বেগম। মুনিবা বেগম আদুরে কন্ঠেই যেন হুরিজিয়ানের নিকট আবদার করল চুল দেখার জন্য। মুনিবা বেগমের এমন আচরণে আর বুঝতে বাকি রইল না হুরের,যে মেহমেদ তার মাকে তার কথা সব খুলে বলেছে। অতঃপর আদুরে আবদার মেটাতে হুরিজিয়ান তার চুলের কাটা খুলে দিতেই রেশম চুলে হাত বুলিয়ে আবারো ও মুনিবা বেগম বলে ফেলল, মাশাল্লাহ। মুনিবা বেগম আর বসলেন না। দুপুরের আযান পড়েছে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়বেন। হুরও চলে গেলো নামাজ পড়তে। নামাজের পর পরই রান্নার কাজ কর্ম চলবে। হায়াত এক হাতে এতো কিছু সামলাতে পারবেনা। নতুন বিয়ে হয়েছে । দ্বায়িত্ব পালনে সে একটু হিমশিম খাচ্ছে। তাই তো হুরিজিয়ানকে এতো জোর করে আনা। মুনিবা বেগম ও ইমতিয়াজের আম্মাও সাথে সাথে সাহায্য করছে। তবে মুনিবা বেগমের খেয়াল পড়ে আছে হুরের পানে । মেয়েটা কত সুন্দর
কাজ করছে। আদব দেখে মুনিবা বেগম মনে মনেই বলল, তার ছেলের চোখ না যেন জহুরীর চোখ। পছন্দ না হয়ে কোনো উপায়ই নেই । ইফতারি তৈরি করতে করতে
আসন্ন হলো সময় রোযা খোলার। অতঃপর দোয়া দুরূতের সাথে সাথেই আযান দিতেই ইফতার খাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো।
____
বেশ কিছুক্ষন সময় অতিবাহিত হয়েছে। চারপাশ অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছে। প্রতিবেশীরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ বাসায় চলে গিয়েছে। বাসায় মধ্যে কেবল গুটি কয়েক লোকজন আছে। হায়াতের সাথে সাথে হুরিজিয়ান ও চা কফি এগিয়ে দিচ্ছে। রান্নাঘরে ট্রে রাখতেই আরেকটা ট্রে ধরিয়ে দিলো হায়াত হুরিজিয়ানের হাতে। হাতে ট্রে তুলে দিতেই হুরিজিয়ান কিছুটা বিরক্তি দেখালো, মুখ থেকে বলে উঠল, পারব না!
তুই দিয়া আয়। আমার কি ঠেকা পড়ছে তোর
দেবরদের কফি গিলাতে যাবো।
হায়াত এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়েই বলল আছা দে। বোনের ক্লান্ত
মুখটা দেখে আর কোনো জবাব দিলো না হুর,
হুরিজিয়ানই ট্রে নিয়ে পা বাড়ালো বসার ঘরে। বৈঠক ঘরের নিকট হুর আসতেই থেমে গেলো হুরের পা। ততক্ষণে মেহমেদের কণ্ঠেই শোনা গেলা, এক নির্লজ্জ বাক্য। "বিশ্বাস কর মামা, তুই এভাবে আমার আন্ডার ওয়ার গুলারে অপমান করতে পারস না। আমি ইনফিনিটি থেকে কালই
কিনা নিয়া আসছি। গার্লফ্রেন্ডকে কাল রাতেই পইড়া দেখাইছি। ওর খুব পছন্দ হইছে।"
মেহমেদের কথা শুনে সুজন জবাব দিলো, "ভাইরে ভাই তোর আন্ডার ওয়ার যদি এতোই দামী হয়, তুই আমারে গিফট কর আমিও একটু পড়ি । "
পর পর মুরাদ ও বলে উঠল, আমিও বাদ যাবো কেন আমারেও গিফট করো আমিও একটু পরোক্ষ করে দেখি ভাবীর রিভিউয়ের স্বার্থকতা।
হুরিজিয়ান ভিষম খেলো এদের আন্ডারওয়ার সমাচরে শুনে। হুরিজিয়ানে ভিষম খাওয়া শুনে ছুটে এসে হুরের হাত থেকে ট্রেটা রাখলো টি টেবিলে। অতঃপর হুরকে বসিয়ে, একগ্লাস পানি খেতে দিলো মুরাদ, বেয়াইন ঠিক আছে।
হুর মাথা দুলালো যার মানে হুর ঠিক আছে।
ততক্ষণে সুজন হুরকে জিজ্ঞাসা করল, এই বেয়াইন তোমারে পাইছি । তুমিই একমাত্র সব সত্য বলতে পারো। তো বলা, বলো । তুমি নাকি মেহমেদের গার্লফ্রেন্ডরে চিনো, তোমার সাথে নাকি মিট করাইয়া দিছে। কথাটা শুনে যেন হুরিজিয়ান আবার ভিষম খেলো। এবার মেহমেদ এসে
হুরের চুল টেনে জবাব দিলো, এই তোরা
এই ঘুঘুর ছানার পিছনে পড়লি ক্যান?
তোরা কি আমায় বিশ্বাস করস না। মেহমেদের কথা শেষ হতেই সুজন হেসেই বলে উঠল, না তোরে কোনো কালেই বিশ্বাস করি নাই। তুই তোলে তোলে ট্যাম্পু চালাস, আমরা কইলেই হরতাল।
অতঃপর হুরিজিয়ানকে সুজন আবার শুধালো বলো
বেয়াইন, তুমিই একমাত্র সত্য উদ্ঘাটনের দিশা।হুরিজিয়ান সোফা হতে উঠে দাড়ালো, মেহমেদের পানে মুচকি হেসে বলল, হ্যা আমি চিনি তো। তার সাথে তো আমার কথাও হয়েছে। আপনারা যদি চান তাহলে আমি আপনাদের সাথে তাকে দেখাও করিয়ে দিতে পারি। এর জন্য সে আপনাদের আমাবস্যার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বাড়ির পাশের যে
শেওড়া গাছটা দেখতে পাচ্ছেন, এখানে তার বাস। আই মিন মেহমেদ বেয়াইয়ের অনলি সুয়েটেষ্ট,লেটেস্ট এন্ড ফিটেষ্ট গার্লফেন্ড আর কেউ নয় ওই গাছের পেত্নি।
আচ্ছা এবার এই কফির মগ নিয়ে আমায় উদ্ধার করুন। সবাই কে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে হরিজিয়ান চলে গেল
বৈঠক ঘর থেকে। হুরিজিয়ান রান্নাঘর থেকে বের হতেই মুনিবা বেগম তাকে ইশারা করল, তারপর গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসলো হুর । মুনিবা বেগমের কাছে আসতেই হাত
বাড়িয়ে টেনে বসালো হুরকে । হুরিজিয়ানও বসল এবং
বলল, আন্টি কিছু কি বলবেন ? মুনিবা বেগম জবাব
দিলো, পান বানাতে পারো তুমি! হুরিজিয়ান হাসল
এবং বলল, দাদি মারা যাওয়ার পর আর বানানো
হয়নি, আমিই তাকে পান সাজিয়ে দিতাম। কেনো
আন্টি আপনি খাবেন, ওয়েট আমি বানিয়ে
দিচ্ছি। অতঃপর হুরিজিয়ানের পান সাজানো দেখতে লাগলো মুনিবা বেগম । দেখতে দেখতেই
পান সাজানো হয়ে গেলো হুরের, অতঃপর পানের খিলিটা এগিয়ে দিলো মুনিবা বেগমের নিকট। হাত বাড়িয়ে পানটা মুনিবা বেগম নিতেই হুরিজিয়ান আবারও শুধালো
আর কিছু লাগবে আন্টি । পানটা মুখে তুলেই মুনিবা বেগম বলল, না লাগবেনা, যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। হুরিজিয়ান পা বাড়ালো রুমের পথে বিশ্রাম নেওয়ার
জন্য।
___
রাত ১.২০। চারপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজমান। নিশি
পোকারা ডাকছে। বাইরে পূর্ণিমার আলোয় সব
যেন নাইছে। জানালা ফাকা দিয়ে আলোরা ছুঁয়ে যাচ্ছে হুরিজিয়ানের অগোছালো অবয়ব। মেয়েটার কিছুটা অভ্যাস বদলে গেছে গত দেড় মাসে। রাতের যেকোনো সময়ই তার ঘুম ভেঙে যায় মেহমেদের কল আসাতে।
বাধ্য হয়েই যেনো সেই কল রিসিভ করতে হয় তাকে। এই তো কিছুক্ষন আগে মেহমেদের কল আসাতেই চোখ মেলতেই দেখতে পেল কল এসেছে। হালকা দেখতে পেলো তার নামটা। আলগোছে রিসিভ করল আলতো হাতে। ঘুমু ঘুমু কন্ঠেই হুর মেহমেদকে বলल,"মেহমেদ একটু ঘুমতে দাও
আবার তো রাতে উঠতে হবে"
ওপাশ থেকে মেহমেদের জবাব আসলো, ১০ মিনিটের জন্য বসার ঘরে একটু আসো। হুরিজিয়ান একটু বেশিই
বিরক্ত হলো, বিরক্ত মাখা কন্ঠেই বলল, পারব না।
অতঃপর মেহমেদ বলল, তুমি যদি না আসো তাহলে কিন্তু তোমার কাছে আসছি। আবারও হুরিজিয়ান বিরক্ত কণ্ঠে বজায় রেখো বলল, যা ইচ্ছে করুন।
কল কেটে গেল। হুরিজিয়ান আবারো ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন হলো। কিন্তু হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনায় টাল সামলাতে পারলোনা হুর। নিজেকে দেখতে পেলো আবদ্ধ হয়ে আছে সে বারান্দায় মেহমেদের সামনে। কিছুক্ষণ আগেই মেহমেদ তাকে বিছানা থেকে কোলে তুলে দাড় করিয়েছে। হুর চোখে ডলতে ডলতেই মেহমেদর বুকে ধাক্কা
দিয়ে বলল, মেহমেদ, কেন এতো জ্বালাচ্ছো । এতো রাতে আবার কি হয়েছে। এভাবে তোমার রুমে আসা
উচিত হয় নি। কেউ দেখলে ব্যাপারটা খারাপ হবে।
মেহমেদ ও নিজ হাত দুটো দেয়ালে, রেখে
ভর দিয়ে নিচু হলো হুরিজিয়ানের নিকটে। হুরের
কর্নে মুখ ঘেঁষে ফিসফিস করে বলল,
তোমাকে পেতেও যদি কলঙ্ক মাখতে হয় তাতে
আমি রাজি। হঠাৎ মেহমেদের নিঃশ্বাস ঘাড়ে
পড়তেই শীতল স্রোত বয়ে গেল যেনো হুরের
তনুতে। শ্বাস তার ভারী হয়ে আসলো। হুরিজিয়ান
নিজ হাত দ্বারা মেহমেদকে দূরে সরালো, সেও ফিস
ফিস করে মেহমেদকে বলল, বলেছি না একদম কাছে
আসবে না। পরের বার সত্যিই সত্যিই জান নিয়ে নিবো। বহুত জ্বালাতন করছ । দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছ। এবার চলে যাও। সবাই উঠে পড়বে। হুর যেতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। মেহমেদ তাকে আবারো আটকে দিলো। হুর কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় মেহমেদের কারণে। মেহমেদ তার ট্রাওজার থেকে একটা লকেট চেন বের করে পরিয়ে দিলো হরিজিয়ানের গলায়। হুর হাত দিয়ে বুলিয়ে বুঝতে পারলো
লকেটে এম লেটার। চেইনটা পড়ানো শেষেই মেহমেদ বলল, তোমার জন্য গিফট নিয়ে এসেছি। এখন আমার রিটার্ন গিফট দাও। হুর মুখ বাকালো, কচু পড়া! আমি এতো রাতে গিফট পাবো কই। নিজে তো পাগল
হয়েছেন এখন কি আমাকেও পাগল বানাতে
চাচ্ছেন।
মেহমেদ হাসল তা স্পষ্ট পূর্ণিমার আলোয়, হুরিজিয়ান ফিসফিস করেই যেনো চেঁচালো,
একদম হাসবে না। যাও বলছি। আমার ঘুম
পন্ড করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই
তোমার। মেহমেদ, হুরের ঠোঁট ইশারা করেই
বলল, আমার রির্টান গিফট হিসেবে যে ওই
ভেজা ঠোঁটের একটা চুমুই চাই। হুরিজিয়ান ব্যঙ্গ
কন্ঠে জবাব দিলো, আমি কি বলেছিলাম, আমার জন্য
গিফই নিয়ে এসো বেইব। যান ঘুমিয়ে
ঘুমিয়ে স্বপ্নে চুমু খান। তারপর একপ্রকার ঠেলেই
হুরিজিয়ান মেহমেদকে কক্ষের বাইরে বের করল।
বেচারা মেহমেদ। আর কিছু বলল না। তবে
মেসেজ অপশনে গিয়ে মেসেজ টাইপ করল
হুরকে। রিটার্ন গিফট তো দিলা না, যেদিন
সুযোগ পারো সুদে আসলে নিয়ে, নিব।
সেদিন তুমি কিছু করতে পারবে না, ওই ঠোঁট দখল আমি করবই দেখো হুর।
অতঃপর....
~চলবে
( আজকের পর্ব কেমন লেগেছে, অবশ্যই কমেন্ট কর। মেহমেদের আন্ডারওয়ার সমাচার কেমন লেগেছে তোমাদের কাছে কমেন্ট কর। বেশি কমেন্ট কর। তোমরা যত সাপোর্ট করবে তত লেখার আগ্রহ পাবো। হ্যাপি রিডিং)
0 Comments:
Post a Comment