গল্প জোড়_করে_বিয়ে পর্ব ৯

 জোড় করে বিয়ে

পর্বঃ৯

#আবির হাসান নিলয়


জান্নাতঃআমি আর আপনার সাথে থাকতে পারবো না

আমিঃথাকতে পারবে না মানে?

জান্নাতঃআপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন

আমিঃকি বলছো তুমি এসব।

জান্নাতঃআমি ঠিকি বলছি।

বলেই চোখ মুছতে মুছতে রুমের বাইরে চলে গেলো।


কি হচ্ছে এসব আমার সাথে।এইটুকুতেই জান্নাত

রেখে গেলো।কিন্তু আমি তো শুধুই মজা করতে

চাইছিলাম।না মাথা কাজ করছে না।বাজারে চলে

আসলাম।ঘুরাঘুরি করে রাত ১২টার সময় বাসায়

গেলাম।কলিং বেল বাজাতেই আম্মু দরজা খুলে

দিলো।সাথে শুরু করে দিলো।

আম্মুঃএতো রাত অবধি কোথায় ছিলি।আর তোর

ফোন বন্ধ কেনো।কি হয়েছে?

আমিঃনা কিছুনা।(গম্ভীর কণ্ঠবেশে)

আম্মুঃকি হয়েছে নিলয় বল আমাকে?

আমিঃআম্মু কিছু হয়নি।এমনি ভালো লাগছেনা।


আম্মুকে আর কিছু বলার।সুযোগ না দিয়েই রুমে

চলে আসলাম।এসে দেখি জান্নাত ঘুমিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন

যে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে বুঝতেই পারিনি।

কেমন যেনো মাথাটা ধরে আসছে।মনের ভিতরে

বিষণ্ণতা ভরপুর করছে।


সোফার উপরে বসে পড়লাম।জান্নাতের কথাগুলো

এখনো কানে শুনতে পারছিলাম।ডিভোর্স!!জান্নাত

আমাকে এতোটাই।ঘৃনা করে যার কারণে আমাকে

ডিভোর্স দিয়ে দিবে।হয়তো আমি ওর জন্য নয়।

আমি ওর যোগ্যই না।ঠিকি তো আমিতো ওকে

বাধ্য করেছি আমাকে বিয়ে করতে।এটা তো জোড়

করেই বিয়া করা বোঝায়।ঠিক আছে আমি তোমার

জীবন থেকে চলে যাবো।শুধু তোমার একার জীবন

থেকে নই।সবাইকে ছেড়ে চলে যাবো অচিন দেশে।

যেখান থেকে চাইলেও কেউ ফিরে আসতে পারবে না।


আজকে চোখটাও বাধ মানছে না।সেই কখন থেকে

জল পরেই চলেছে।উঠে দাঁড়িয়ে জান্নাতের মাথার

কাছে বসলাম।কেমন নিষ্পাপ চেহারাটা আর

তাকেই কিনা আমি কষ্ট দেই।জান্নাতের মাথায়

হাত দিয়ে বললাম,,, জানো জান্নাত আমি অনেক

খারাপ অনেক পচা।শুধু শুধু তোমাকে কষ্ট দেই।

তোমাকে কতো কিছু বলতাম।তোমার মাথার তার

নাকি কাটা।কথাটা বলেই হেসে দিলাম।


আবার বলতে শুরু করলাম,,,জানো জান্নাত আমি

তোমাকে ছাড়া কখনো থাকতে পারবো না আর

তোমার কথাও ফেলতে পারবো না।জানো তুমি

যখন আমাকে অপমান করতে খুব খারাপ লাগতো

কিন্তু পরক্ষণেই যখন মজা করতে তখন সব

খারাপ লাগা হারিয়ে গিয়ে ভালোবাসা খুঁজে পেতাম

তোমার কোনো দোষ নেই।সব দোষ আমার। আমি

হয়তো তোমার যোগ্য ছিলাম না।হয়তো এখনো না।

আর আমার মনে হয় পরবর্তীতেও আমি তোমার

যোগ্য হতে পারবো না।


এটুকু বলেই থেমে গেলাম।ভিতর থেমে কথা বের

হচ্ছে না।অনেক কষ্ট লাগছে কথা বলতে।আর

পারছি না।জান্নাতের কপালে একটা চুমু খেয়ে

পাশের রুমে চলে আসলাম।কারণ আমি জানি

জান্নাতকে আমি যতো দেখবো ততই আমি দূর্বল

হয়ে পড়বো। মনে মনে ঠিক করলাম।৬মাস পড়ে

আমি জান্নাতকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।বিছানায়

শরীরটা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।


ঘুম ভেঙতেই গেলো।চোখ খুলে দেখলাম আম্মু 

আব্বু আর জান্নাত পাশে দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাতের

দিকে তাকিয়েই দেখতে পেলাম জান্নাত কান্না করছে।

হয়তো গতকালের ঘটনাটা এখনো মনে করে কান্না

করছে।আমি কিছু বলতে যাবো।তার আগেই আব্বু বলল...

আব্বুঃনিলয় তোমার এমন অবস্থা কি করে হলো।

আমিঃমানে কি হয়েছে আমার।

আম্মুঃকি হয়েছে মানে। তোর হাতে যে স্যালাইনের

সুচ লাগানো সেটার প্রতি খেয়াল আছে।কি হয়েছে

বাবা তোর প্লিজ আমাদের বল।


এতক্ষণ খেয়ালি করিনি।আমার হাতে সুচ লাগানো।

কিন্তু আমার হঠাৎ এই অবস্থায় আমি নিজেই

অবাক হচ্ছি।কি হয়েছে আমার।

আমিঃআম্মু আমার কি হয়েছে।

আম্মুঃসেটা তো আমরা তোর থেকেই শুনতেই চাইছি।

আমিঃমানে কি বলতে চাইছো তুমি?

আম্মুঃতোর কিসের এতো চিন্তা।যার জন্য তোর এই অবস্থা

আমিঃমানে....(অবাক হয়ে)

আম্মুঃআজ সকালে যখন জান্নাত আমাদের ডেকে

এই রুমে নিয়ে আসলো।তখন তোকে ডাকার পরেও

তুই কোনো রেসপন্স দিচ্ছিলি না।তাই ডক্টরকে

ফোন দিয়ে আসতে বলে তোর বাবা।ডক্টর এসে 

বলল তুই নাকি অতিরিক্ত চিন্তা করছিস।তাই তুই

নাকি মানসিক ভাবে অসুস্থ।এখন বল তোর কি হয়েছে?

আমিঃআম্মু আমার কিছু হয়নি।তুমি একদম চিন্তা

করো না।আর এখন তোমরা যাও আমি একটু

বিশ্রাম করবো।।


আমার কথা শুনে আব্বু আম্মু চলে গেলেও।জান্নাত

আমার দিকে করুণ আর্তনাদে তাকিয়ে আছে।

আমিঃজান্নাত আমি আসলে সরি তোমার সাথে

জোড় করে বিয়ে করার জন্য কিন্তু আমি তোমাকে

সত্যি অনেক বেশি ভালোবাসি।


জান্নাত কিছু না বলেই দৌড়ে রুম ত্যাগ করলো।

দুদিন বাসায় থেকে রেস্ট নিলাম এখন অনেকটা

সুস্থ মনে হচ্ছে।নিচে এসে দেখি আব্বু আর জান্নাত

বসে আছে।আমাকে দেখেই আব্বু বলল...

আব্বুঃনিলয় আমি চাই এখন থেকে তুমি আর

জান্নাত একই সাথে ভার্সিটি যাবে।

আমিঃমা..মানে আব্বু?

আব্বুঃমানে জান্নাতকেও তোমাদের ভার্সিটিতেই

ভর্তি করানো হয়েছে।

আমিঃকিন্তু আব্বু। বিয়ের পরেও... (থামিয়ে দিয়ে)

আম্মুঃবিয়ে হয়েছে তো কি।তোকে যেটা বলা

হয়েছে সেটা করবি ব্যস।।


আমি আর কিছু বললাম না।জান্নাত হয়তো নিজেই

পড়াশোনা করতে চাই।যেখানে জান্নাতের পুরো

ভবিষ্যৎ পড়ে আছে।মনে বলার সাহস পেলেও

মুখে বলার সাহস নেই।কেনো বলবো আমি।জান্নাত

তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না।আর সেখানে

আমার কিনা কথা তার ভালো লাগবে বলে মনে

হয় না।আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে রুমে চলে

আসলাম।


পরেরদিন.....

ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় জান্নাত

হাতে একটা চিরকুট নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।

আমিঃকিছু বলবে....??

জান্নাত কিছু না বলে হাতে থাকা চিরকুটটা দিয়ে

বাথরুমে চলে গেলো।জান্নাতের ব্যাবহার দেখে

অনেক অবাক হলাম।কিছু না ভেবেই চিরকুটটি

পড়ার জন্য খুলে ফেললাম।লেখা ছিলো“একটু

অপেক্ষা করুন আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।তারপর

একসাথে যাবো”


কথাগুলো পড়ে হতাশ হয়ে পড়লাম।আমাকে তুমি

এতোটাই ঘৃনা করো।যার জন্য সামান্য কথাটা

অবধি বলতে পারলে না।চিরকুটটা হাতে নিয়ে

এসব ভাবছি এমন সময় জান্নাত এলো।ওকে সাথে

করে নিচে এলাম। আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে

ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা হলাম।


বাসা থেকে ভার্সিটির দূরত্ব কম হওয়ায় তাড়াতাড়ি

চলে এলাম।তারপর জান্নাতকে তার রুমটা দেখিয়ে

বন্ধুদের কাছে এলাম।সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি

এমন সময় দেখলাম জান্নাত আমাদের দিকে আসছে।

জান্নাতঃএকটু শুনবেন?

আমিঃহ্যা বলো।

জান্নাতঃঐ যে দেখছেন কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে?

আমিঃহুম কেনো কি হয়েছে?

জান্নাতঃআমাকে দেখে অনেক বাজে বাজে মন্তব্য করছে।


জান্নাতের কথাশুনে মাথায় আগুন জ্বলে গেলো।

সাকিবের হাতে থাকা স্ট্যাম্প নিয়ে দৌড়ে ছেলে

গুলোর কাছে এলাম।ওদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম...

আমিঃঐ মেয়েটাকে কে কি বলছে।

সব ছেলে চুপ হয়ে গেলো।কারণ তারা সবাই আমাকে

চেনে।আমাকে বললে ভুল হবে।আমার রাগকে চেনে।কিন্তু পাশে থাকা একটা ছেলে বলল...

ছেলেঃআমি বলেছি।আর মেয়েটা যে হট দেখতে..


আর কিছু বলার আগেই স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাথাড়ি

মার শুরু করলাম।মারতে মারতে কখন মাথা ফেটে

গেছে বুঝতেই পারিনি।জয়, সাকিব সহ আমাকে

থামাতে পারছে না।আমার উদ্দেশ্য একটাই একেবারে

মেরে ফেলবো।এমন সময় কে যেনো আমার হাতের

স্ট্যাম্প ধরে ফেললো।চেহারা না দেখেই দিলাম

একটা কষে থাপ্পড়। থাপ্পড়টা দেয়ার পর এ যেনো

আমার শরীর থেকে জান বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা।

কারণ সেখানে আর কেউ না জান্নাত ছিলো।


থাপ্পড়টা এতোটাই জোড়ে দিছি যার জন্য জান্নাত

সেন্স লেস হয়ে গেছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম

ভির জমে গেছে।জয়, সাকিব,রাহুলকে বললাম

তোরা এই জানোয়ারটাকে দেখ আমি জান্নাতকে

নিয়ে হাসপিতালে যাচ্ছি।

চলবে.........

0 Comments:

Post a Comment