গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ২০

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

পর্ব_২০

সারিকা_হোসাইন


◆◆◆

ধরনীতে সূর্যের তেজ দেখে মনে হচ্ছে যেনো হাশরের মাঠে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।এতো সূর্যের তেজ?রোদের তাপে মাটি শুকিয়ে সাদা রং ধারণ করেছে।পাড়া দিলেই মনে হয় গরম তাওয়া।


ক্রিমিনাল ভিজিটিং রুমে বসে আছেন আশরাফ চৌধুরী,মাথার উপর ক্যাচক্যাচ শব্দ তুলে বৈদ্যুতিক পাখা আস্তে আস্তে ঘুরে যাচ্ছে।শরীর ঠান্ডা হবার বদলে মনে হচ্ছে আরো উত্তপ্ত ছাদের গরম হাওয়া গায়ে মাখিয়ে দিচ্ছে।গায়ের সাদা পাঞ্জাবি ভিজে জবজবে হয়ে গেলো নিমিষেই।

বহু কষ্টে রাগ সংবরন করে বসে আছেন,আহিয়ান কে পুলিশ আনতে গেছে।

হঠাতই ঝনঝন শব্দে সম্বিৎ ফিরে এলো আশরাফ চৌধুরীর।

এ কাকে নিয়ে এসেছে পুলিশ?


যেই ছেলে দামি ব্র্যান্ডেড পোশাক বাদে অন্য কোনো পোশাক গায়ে জড়ায় নি  তার গায়ে কয়েদির ময়লা পোশাক?চুল দাঁড়ির একি হাল?এসির পাওয়ার কমিয়ে কম্বল মুড়িয়ে ঘুমানো ছেলে এমন গরমে ঘুমায় কিভাবে?

গলায় শিকল হাতে পায়ে বেড়ি?

হঠাতই পিতৃ হৃদয় বেদনায় মুষড়ে উঠলো।যতোই পাষান হৃদয়ের মানুষ হোক,বাবা তো হয়।

ছেলে আজ উন্মাদ হয়ে  কয়েদি জীবন গুজরান করছে।সুস্থ হওয়া মাত্রই ফাঁসির হুকুম হবে।কি থেকে কি করে দিলো শালা মেজর মুহিত।


আশরাফ চৌধুরী কে দেখা মাত্রই এক দলা থু থু ছুড়ে দিলো আহিয়ান।

এর পর হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে গেলো।তেড়ে মারতে আসলো আশরাফ চৌধুরী কে। দুজন কনস্টেবল কোনো রকমে কব্জা করে ফেললো আহিয়ান কে।

এর পর খিক খিক করে হেসে উঠলো আহিয়ান।

আশরাফ চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো


―পাপা মেজর মুহিত ওয়াসিফ তুমাকে পিষে ফেলবে।পালিয়ে যাও পাপা।আমি তাকে দেখে ফেলেছি ,সে আসছে।তোমাকে পিস পিস করে কেটে লবন ভরে দেবে ।

বাঁচতে চাইলে পালাও।


যেই ছেলের জন্য কিছুক্ষণ আগে মন জমিনে দুঃখ হানা দিয়েছিলো সেই ছেলের এহেন কথায় রাগে বিতৃষ্ণা এসে গেলো আশরাফ চৌধুরীর।

কেমন নিমকহারাম জন্ম দিয়েছে ভাবতেই নিজের প্রতি রাগ হলো।


একদিকে অসহনীয় গরম তার মধ্যে ছেলের বাতুলতা মাথায় রক্ত  ছলকে উঠলো তার।

মনে মনে শয়তানি হাসলো আশরাফ চৌধুরী।

তোর মেজর এর কঙ্কাল এর খুজ ও কেউ পাবেনা হারামজাদা ছেলে।

গহীন অরণ্যে সমাধি দিয়ে এসেছি ওই দুই টাকার লাফাঙ্গা মেজর কে।

মনের ভাবনা মনে রেখে বুকের ব্যাথার ভান ধরে বাইরে বেরিয়ে আসলেন আশরাফ চৌধুরী।


――――――

দীর্ঘ সাত ঘন্টা জার্নি করে তাহির পুর উপজেলায় এসে পৌঁছেছে সৌম্য।মেজর মুহিত এখানেই স্থানীয় হেলথ ক্লিনিকে আছেন।

মুহিত যখন কল করে সৌম্য কে এখানে আসার কথা বলেছে,সৌম্যের মনে হয়েছে তার দুটো পাখা থাকলে ভালো হতো,উড়ে উড়ে দ্রুত চলে যাওয়া যেতো।

লোকাল মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌঁছে গেলো সৌম্য।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঢুকে মুহিতকে পাগলের মতো খুঁজতে লাগলো সে।অবশেষে পেয়ে গেলো তার মেজর কে।মনে যেনো প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।


দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো সৌম্য।ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো মুহিত।ভয়ে ছেড়ে দিয়ে সৌম্য বলে উঠলো

―সরি স্যার সরি।আবেগ সামলাতে পারিনি।

ভাঙা কন্ঠে মুহিত ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বলে উঠলো

―সুস্থ হয়ে পানিশমেন্ট দেবো তোমাকে ক্যাপ্টেন।


সৌম্যের চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।

―জি স্যার,আমি সকল পানিশমেন্ট এর জন্য প্রস্তুত।

একটু পর ডিউটি ডক্টর এলো।

মুহিত কে উদ্দেশ্য করে মাধুর্যহীন কন্ঠে বলে উঠলো এই রোগীর গার্ডিয়ান কে আছে?


সৌম্য তড়িঘড়ি করে ডিউটি ডক্টর এর কাছে গিয়ে জানালো 

―আমি।

এমন জীর্ণ রোগীর গার্ডিয়ান একজন আর্মি অফিসার?

কন্ঠ নরম হয়ে এলো ডিউটি অফিসার এর।

সৌম্য তার ভাবাবেগ বুঝতে পেরে আগ বাড়িয়ে বলে উঠলো

―নো কুয়েশ্চেন প্লিজ!ইটজ আওয়ার সিক্রেট ম্যাটার।


ডক্টর ঢোক গিলে মুহিতের দিকে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি দিয়ে সৌম্যের দিকে তাকিয়ে বললো

দেখুন উনার পা,হাত দুটোই মারাত্মক ভাবে ভেঙে গেছে,আমি জানিনা উনি কিভাবে এতোদিন এগুলো নিয়ে বসে ছিলো?

 দ্রুত বড় হসপিটাল এ উনাকে এডমিট করতে হবে,আর বুকে একটা ক্ষত দেখা যাচ্ছে।বুকের ক্ষত টা গভীর।আমাদের এখানে এসবের চিকিৎসা নেই।বুঝতেই পারছেন!বলে হাত কচলালো ডিউটি ডক্টর।


যা বুঝার সৌম্য বুঝে গেলো।ডিউটি ডক্টর কে থামিয়ে দিয়ে মুহিতের কাছে আসলো।স্যার আমাদের যেতে হবে।আপনি কি যেতে পারবেন আমার সাথে?


―না পারলেও আমাকে যেতে হবে সৌম্য।একজনের কাছে আমি খুব অপরাধী হয়ে গেছি।সে অপরাধ মার্জনা না করলে আমি শান্তি পাবো না।যতো দ্রুত  তার কাছে যাবো ততো দ্রুত ক্ষমা পাবো।


–তোমাকে যেটা আনতে বলেছিলাম এনেছো?

―জি স্যার,বলেই গাড়ির বক্স থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে আসলো সৌম্য।

মুহিতের হাতে দিয়ে বললো

― নিন স্যার।


মুহিত মারুং আর সৌম্যকে নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে জিপের কাছে আসলো।

মুহিত মারুং কে উদ্দেশ্য করে বললো

―আপনারা আমার জন্য যা করেছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা নেই আমার।আমি মন উজাড় করে কিছু দিতে চাই আপনাকে।

মারুং এর হাত টেনে হাতে থাকা ব্যাগটি মারুং এর হাতে দিলো মুহিত।

মারুং প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে চাইলো মুহিতের পানে।মারুং এর চোখের ভাষা মুহূর্তেই বুঝে গেলো মুহিত।


মৃদু হাসলো মুহিত।

এখানে পাঁচ লাখ টাকা আছে।আপনি জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু করে টাকাটা ব্যায় করলে মনে শান্তি পাবো আমি।

আজকে আমি চলে যাচ্ছি।

কিন্তু অতিশীঘ্রই আমি আবার ফিরে আসবো।ডিকো কে আমার তরফ থেকে ভালোবাসা জানাবেন।

ডিকোর প্রতি আমার কিছু কর্তব্য আছে।সুস্থ হয়ে এসে আমি অবশ্যই সেগুলো পালন করবো।

আপনি নিজেও জানেন না আপনি কাকে বাঁচিয়েছেন।

এর প্রতিদান না দিয়ে কিভাবে যাবো বলুন?


মারুং এর চোখে জল এসে গেলো।সে এটা বুঝে গেছে লোকটি বড় কোনো সাহেব।মারুং সেভাবে কিছুই  করতে পারেনি তার জন্য।


যতটুকু করেছে তার বিনিময়ে  দেবতা তার জন্য এতোবড় পুরস্কার  রেখেছে সে ভাবতেই পারেনি।

কাঁদতে কাঁদতে মারুং মুহিত কে হাত জোড় করে ধন্যবাদ জানালো।

সৌম্যের কাছ থেকে আরো কিছু খুচরো টাকা নিয়ে মারুং এর হাতে দিয়ে বললো

―আপনার মেয়ে ফল খেতে আর নতুন জামা পড়তে ভালোবাসে।

মারুং এর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।মারুং কে আবারো কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সৌম্যের সহযোগিতায় জিপে উঠে বসলো মুহিত।

সহসাই জিপ স্টার্ট দিয়ে বাতাসের গতিতে চালাতে লাগলো সৌম্য।

যতদূর তাদের দেখা গেলো মারুং ততক্ষণ তাকিয়ে তাদের দেখলো।


গাড়ি চলছে আপন মনে।সৌম্য কোনোভাবেই নিজের ভেতরের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারছে না।মেজর চোখ বন্ধ করে আছে বলে কিছু জিজ্ঞেস করতে ও পারছে না।

মুহিত এর কন্ঠে নীরবতা ভাঙলো।

চোখ বুঝেই মুহিত সৌম্যকে বলে উঠলো

―তুমি যে এখানে এসেছো কেউ জানে?


সৌম্য গলা খাকরি দিয়ে বললো 

―না স্যার,আপনার কথা মতো শুধু নাফিজ স্যার কে বলে জিপ নিয়ে এসেছি।


""তোমাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে এখন থেকে ক্যাপ্টেন।""


―জী স্যার আমি যেকোনো দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত।আপনি আমাকে আলাদিনের জীন ভাবতে পারেন।


সৌম্যের এমন ডেডিকেশনের জন্যই মুহিত তাকে এতো পছন্দ করে।


আমার বউকে তোমার নম্বর থেকে কল করো। 

নিমিষেই কড়া ব্রেক কষলো সৌম্য।

 ঝাঁকি খেয়ে ব্যাথায় আউচ্  করে উঠলো মুহিত।

বউ মানে?


 না বলে ব্রেক কষার জন্য পানিশমেন্ট পাবে ক্যাপ্টেন।


স্যার যা খুশি দিয়েন আগে সব খুলে বলুন।


আমি তোমার ম্যাডাম কে বিয়ে করে ফেলেছি গোপনে।

অবাক নয়নে প্রশ্ন করলো সৌম্য

কেনো স্যার?

―আমি যতদূর জানি আপনাদের দুই পরিবার ই রাজি ছিলো।


সৌম্যকে এতোটা অবাক হতে দেখে স্মিত প্রাণহীন হাসলো মুহিত।

এর পর বলতে শুরু করলো―


ছিলো সৌম্য,কিন্তু  একই ছাদের নিচে একই বাড়িতে আগুন আর মোম এক সাথে থাকতে পারে?

তোমার ম্যাডাম ভালোবাসার দাবি নিয়ে যখন তখন আমার কাছে ছুটে আসতো।

তাকে বারবার ফিরিয়ে দিতে আমার অনেক কষ্ট হতো,আবার পাপ বোধ ও হতো।।

আর তোমার ম্যাডামের অভিমানের পাল্লা ভারী হতো।

মেয়েটা বড্ড অবুজ সৌম্য।


মা অস্ট্রেলিয়া গিয়েছে তুমি জানো।

যাবার আগে মা আমাকে কি বলে গিয়েছে জানো?


না স্যার জানিনা,সৌম্যের  সাবলীল উত্তর।

গাড়ি স্টার্ট দাও বলছি।

সৌম্য গাড়ি স্টার্ট দিলো,গাড়ি রানিং হতেই মুহিত বলতে লাগলো―


মা আমাকে অনুরোধ করে বলেছে উনাকে যেনো একা ফিরিয়ে না আনা হয়।উনি তার মেয়ে নাতি,জামাই সবাইকে নিয়ে ফিরতে চায়।


পাপা কেনো ওদের দূরে পাঠিয়ে ছিলো আমার নতিজা দেখেই বুঝতে পারছো।


―জী স্যার।


―আমি চেয়েছিলাম আশরাফ চৌধুরীর সকল প্রমান জোগাড় করে আইনের আশ্রয় নিতে।

কিন্তু এর পরের ঘটনা তুমি জানো।বিষয়টা অতোটা সহজ নয়।আরো কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে তাও জানিনা।


ঘরে আগুন সুন্দরী প্রেমিকা রেখে কোনো পুরুষ সাধু থাকতে পারবে ক্যাপ্টেন?


―না স্যার পারবে না!


এজন্যই  বিয়ে করেছি আমরা।যাতে কোনো পাপবোধ না হয়,আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে না হয়।


কিন্তু বিয়ে করেও কোনো ফায়দা হলো না।তোমার ম্যাডাম মারাত্মক কষ্ট টাই পেলো আমার থেকে।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ির  সিটে হেলান দিলো মুহিত।


কিছুক্ষন মৌন থেকে আবার বলতে শুরু করলো


আমার সিলেট আসার খবর কে উনাকে দিয়েছে জানো?


―কে স্যার?


গেট কিপার খলিল।


খলিলের নাম শুনে কপালের চামড়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়লো সৌম্যের।


সৌম্যকে কোনো প্রশ্ন  করার সুযোগ না দিয়ে মুহিত আবার বলে উঠলো


পাপাকে আর মুকিত কে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন ও খলিল সাথে ছিলো।

খলিল ই মুকিতের শ্বাস রোধ করেছিলো।


চোখের কোনে জমা জল আঙ্গুল দিয়ে মুছে মুহিত আফসোস এর সুরে বললো


সবচেয়ে কষ্টের বিষয় কি জানো সৌম্য?


এই খলিল কে চিহ্নিত করতে আমার ছয় বছর লেগে গেলো।

যেদিন আমি সিলেট আসি,কোয়ার্টার এর গেট ক্রস করতেই লুকিং গ্লাসে আমি ওর ক্রুরতা মিশ্রিত হাসি দেখেই সব বুঝে গেছিলাম।


এখন করতে চাচ্ছেন স্যার?


সব গুলোকে কেটে লবন মরিচ লাগাবো।আইন আমার দেখা শেষ।এবার তুমি আমার আইন দেখবে সৌম্য।


মুহিতের আগ্নেয়গিরির মতো লালচে চোখ দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলো সৌম্য।


এখন কোথায় যাবো স্যার?

গলার সমস্ত আওয়াজ দিয়ে মুহিত বলে উঠলো


ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সৌম্য।


মুহিতের তেজে লোমকূপ পর্যন্ত ফুলে উঠলো সৌম্যের।দ্রুত গাড়ি হাকালো ক্যান্টনমেন্ট এর উদ্দেশ্যে।


******

বিছানায় মৃতের ন্যায় পড়ে আছে স্বর্গ।এই দুনিয়া সম্পর্কে তার কোনো ধ্যান জ্ঞান নেই।নিজের জীবনের হিসেব কিছুই মিলছে না যেনো তার।কি থেকে কি হয়ে গেলো নিমিষেই।

মুহিতের সকল স্মৃতি তাকে প্রতিনিয়ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।মাঝে মাঝে সিলিং এর ফ্যান স্বর্গ কে খুব টানছে।

কিন্তু তার মতো একজন ডাক্তার এর এসব শোভা পায়না।যার দায়িত্ব একজন মানুসের জীবন বাঁচানো সে কিভাবে নিজের জীবন ই নিয়ে নেবে?


হঠাৎই রুমে তনুজা আর সুখ প্রবেশ করলো।তারাও নেতিয়ে পড়েছে এই কদিনে।সুখ যে ভাবে ছুটি কাটাচ্ছে,মেজর জেনারেল এর ছেলে না হলে তাকে এতদিন মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কার করা হতো।

পরিবারের মানুষ এর পাশে আগে থাকতে হবে পরে পড়াশোনা ।এটা ভেবেই সুখ যায়নি আর।


বোনকে শান্তনা দিতে সুখ  অনেক কিছু  বোঝালো।

কদিনেই স্বর্গের চোখের নিচে কালি পরে গেছে।চেহারার জৌলুষ মলিনতায় চাপা পড়ে আছে।

মেয়ের এহেন অবস্থা কি কোনো মা সহ্য করতে পারে?


তনুজা করে যাচ্ছে।পরীর বাচ্চার মতো মেয়ে তার,কেমন জীর্ণ শীর্ন হয়ে আছে।

মেয়েকে খাবার খাওয়ার জন্য অনেক ক্ষণ চাপাচাপি করলেন ।লাভের ফল শূন্যে।

মা হয়ে তিনিও মুখে খাবার তুলতে পারছেন না।

স্বর্গকে আরো কিছু কথা বলে কান্না মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন তনুজা।


মায়ের পিছে পিছে সুখ বেরিয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে স্বর্গকে একা থাকতে দিয়ে চলে গেলো।


হঠাৎই স্বর্গের ফোন ভাইব্রেশন হলো।কে ফোন করেছে দেখার প্রয়োজন মনে করলো না সে।

যেখানেই নিজের প্রাণেশ্বর ই তাকে আর কোনো দিন ফোন করবে না।সেখানে অন্যের ফোন ধরে শান্তনা বাণী শোনার কোনো ইচ্ছে নেই স্বর্গের।

দ্বিতীয় বার ও ফোন আসলো।তাকিয়েও দেখলো না স্বর্গ।

তৃতীয় বারের কলে রাগে বিবেক বোধ হারিয়ে ফেললো।

ভাবলো ফোন ধরেই জন্মের গালি দিবে।

ফোনে ক্যাপ্টেন সৌম্যের নম্বর দেখে রাগ পানি করে ফেললো স্বর্গ।

ভ্রু কুঁচকে ফোন রিসিভ করে 

নরম  ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো 

―হ্যালো?

ওপাশ থেকে কোনো সাড়া আসলো না।

আবার হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো

―আমার হাতের স্লিং টা তুমি ই লাগিয়ে দাওনা বউ।


কেঁপে উঠলো স্বর্গ।বেহায়া নেত্র চাপিয়ে বর্ষণ শুরু হলো।স্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছে।শরীর থরথর করে কাঁপছে।


ফোন কেটে চোখের জল মুছে তড়িঘড়ি করে  নিজের এপ্রোন খুঁজে বের করে গায়ে জড়ালো স্বর্গ।

 তনুজা কে চিল্লিয়ে ডেকে উঠলো।

মাম্মা,মাম্মা


মেয়ের ডাকে অন্তর শুকিয়ে এলো তনুজার,আবার নতুন কোন তান্ডব আসতে চলেছে?


,সুখ কে নিয়ে দৌড়ে ড্রয়িং রুমে এলেন তনুজা।

মেয়ের কান্না দেখে আরো ভয় পেয়ে গেলেন তিনি।


স্বর্গ কান্নার চোটে কথাই বলতে পারছে না।

তবুও ভাঙা ভাঙা শব্দে বলে উঠলো

―মুহিতের পছন্দের ইলিশ পোলাও করে সুখকে দিয়ে সিএমএইচ এ পাঠিয়ে দিও।

আমি যাচ্ছি ওখানে,মুহিত আমার কাছে চিকিৎসার আবদার করেছে।


চলবে

0 Comments:

Post a Comment