জোড় করে বিয়ে
পর্ব:১০
#আবির হাসান নিলয়
জান্নাতকে জরুরী বিভাগ থেকে ট্রিটমেন্ট করে নিয়ে
বাসায় এলাম।এরই মাঝে দুদিন আর স্কুলে যায় নি।
আজ সকালে রাহুল ফোন দিয়ে ভার্সিটি আসতে
বলল।আর আমারো বাসায় থাকতে ভালো লাগছিলো
না।তাই ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। এমন
সময় জান্নাত এলো।
আমিঃকিছু বলবে?
জান্নাতঃ.....(মাথা নেড়ে হ্যা বলল)
আমিঃবলো কি বলবে?
জান্নাতঃআবার মারবেন নাতো?
আমিঃআরে তোমাকে মারতে যাবো কেনো।বলো।
জান্নাতঃআমিও ভার্সিটি যাবো।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জান্নাতকে রেডি হতে
বললাম।নিচে বসে আম্মুর সাথে কথা বলছি তখন
জান্নাত রেডি হয়ে নিচে এলো।তারপর আম্মুকে
বলে আমি আর জান্নাত বের হলাম।
জান্নাতঃএকটা কথা বলি?
আমিঃহুম বলো।
জান্নাতঃচলেন আজ রিক্সা করে যায়।
আমিঃতোমার দরকার হলে যাও।আমি যেতে পারবোনা।
জান্নাতঃকেনো পারবেন না?
আমিঃযেতে পারবোনা ব্যস এতো কথা বলো কেনো
জান্নাত আর কিছু বলল না।তারপর গাড়ি নিয়ে
ভার্সিটি এলাম।ভার্সিটি আসতেই বন্ধুরা এলো।
জয়ঃনিলয় তোকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছে।
আমিঃকেনো?
রাহুলঃসেটা বলেনি।
আমিঃঠিক আছে। তোরা থাক আমি আসছি।
সাকিবঃআরে না।সাথে ভাবিকেও নিয়ে যেতে বলছে
আমিঃঠিক আছে তাহলে তোরাও চল।
তারপর প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে ডুকতে দেখতে
পেলাম ঐ ছেলেটা।ছেলেটাকে দেখেই মাথাই
আগুল জ্বলে উঠলো।মন চাইছে কুপিয়ে হত্যা করি।
স্যারঃনিলয় এদিকে আসো।
আমিঃজ্বি স্যার।বলুন কি বলবেন।
তারপর স্যার সেদিনের ঘটনা বলল।সবকিছু শুনে
আমি জান্নাতের দিকে তাকালাম।ওকে দেখে মনে
হচ্ছে ঐ ছেলেটাকে এখনি মেরে ফেলবে।জান্নাতের
কানের কাছে গিয়ে বললাম।
আমিঃছেলেটার কি করবো।ভার্সিটি থেকে কি বের করে দিবো?
জান্নাতঃহ্যা।যেনো কোনো মেয়ে আর এরকম
জানোয়ারদের মুখ থেকে বাজে মন্তব্য না শুনতে হয়।
আমিঃহুম।
আমাদের দুজনের কথা বলা দেখে সাকিব চুপ করতে
বলল।তাই আর কোনো কথা বললাম না।
স্যারঃনিলয় এখন তুমি কি চাও।
আমিঃস্যার ছেলেটা আমার স্ত্রী-কে বাজে মন্তব্য
করেছে।এর জন্য সে উপযুক্ত শাস্তিও পেয়েছে।
কিন্তু সেদিন আমি ছিলাম বলেই আর কিছু করতে
পারেনি।কিন্তু যদি অন্য কোনো দিন অন্য কোনো
মেয়েকে বাজে মন্তব্য করে।তাহলে তাদের কি হবে।
তাই আমি আর জান্নাত চাই এরকম ছেলেদের
আমাদের ভার্সিটি থেকে বের করে দেন।
স্যারঃঠিক আছে।তাই হবে।এখন তোমরা যাও।
প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বেরুতেই রিয়ার সাথে দেখা।
রিয়াঃআরে নিলয়।কেমন আছিস।
আমিঃভালো তুই কেমন আছিস?
রিয়াঃভালো।চল সবাই মিলে মাঠে গিয়ে আড্ডা দেয়
আমিঃঠিক আছে তোরা যা।আমি জান্নাতকে রুমে
দিয়ে আসছি।আর শোন ঐ জামরুল গাছটার
কাছে গিয়ে বস।তাহলে সুবিধা হবে।
জয়ঃসুবিধা মানে?
আমিঃএসে বলছি।
তারপর ওদের সাথে কথা না বারিয়ে।জান্নাতকে
ওর রুমে দিয়ে আড্ডা দেয়ার জন্য চলে গেলাম।
এসে দেখলাম সবাই বসে আছে।সাথে কিছু পেত্নিও
রুষাঃকিরে সালা কোথায় থেকে উদয় হলি।
আমিঃচুপ সালি।তোর লজ্জা করে না।এসব বলতে
রিয়াঃএএ আইছে সাধু।যখন তুই আমাদের বলিস
তখন সেগুলা কি হয় শুনি?
জয়ঃঐ তোরা চুপ করবি।আর নিলয় তুই আগে
বল।এখানে বসে আমাদের কি সুবিধা?
আমিঃআরে তোদের না।শুধু আমার।
জয়ঃমানে..
আমিঃমানে হলো।ঐ যে দেখছি(জান্নাতের রুমটা
দেখিয়ে)রুমটা।ঐটা হচ্ছে জান্নাতদের।আর এখানে
বসেছি এ জন্যই যেনো জান্নাতের রুমটা দেখতে পারি।
জয়ঃতাই বল।
তারপর সবাই মিলে অনেক আনন্দ করে।রুমে চলে
এলাম।তারপর সবগুলো ক্লাস করার পর বাইরে
জান্নাতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর জান্নাত এলো।কিন্তু জান্নাতকে দেখে
মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছে।মনে মনে ভাবলাম
হয়তো স্যার বকা দিয়েছে।ভালোই হয়েছে ভার্সিটি
আসার শখ মিটে গেছে।কাল থেকে তো আর ভার্সিটি
আসিবে না। ভালোই হয়েছে।এসব ভাবছি আর
মুচকি হাসছি।
গাড়ির সামনে এসে জান্নাতকে বললাম.....
আমিঃগাড়িতে উঠো।
জান্নাতঃ........(নিশ্চুপ)
আমিঃকি হলো উঠো।
জান্নাতঃরিক্সা ছাড়া যাবোনা।
জান্নাতের কথা শুনে মনডা চাইতাছে।ধরে একটা
আছাড় মারি।নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম।
আমিঃরিক্সায় না গেলে হয়না।
জান্নাতঃথাক তুই তোর গাড়ি নিয়ে।আমি চললাম।
বলেই সামনের দিকে হাটা ধরলো।কি আর করা
ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে বললাম ভার্সিটি থেকে
যেনো গাড়িটা নিয়ে যায়।
কথা বলতে বলতে দেখলাম জান্নাত একটা রিক্সায়
উঠে পরেছে।দৌড়ে রিক্সার কাছে গেলাম।যখনি
উঠতে যাবো তখনি জান্নাত ধক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
যাহ বাবা এখন আবার কি করলাম।
আমিঃআরে এখন আবার এমন করছো কেনো?
জান্নাতঃতুই তোর গাড়ি নিয়ে বাসায় যা।এখানে
কি করতে আসছোস।যা ভাগ এখান থেকে।
আমিঃএই তুমি আমাকে তুই করে বলছো কেনো?
জান্নাতঃআমার মুখ আমি বলতে পারি।
জান্নাতের কথা শেষ হতেই আমি রিক্সায় উঠে বসলাম।
তারপর রিক্সাওয়ালা মামাকে বললাম চালাতে।
আমিঃএখন বলো তুমি রাগ করছো কেনো?
জান্নাতঃ...(কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো)
আমিঃকি হলো বলো(মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে)
জান্নাতঃখবরদার আমাকে স্পর্শ করবি না(কলার ধরে)
আমিঃঠিক আছে।আমি তাহলে নেমে যাচ্ছি।
জান্নাতঃএকদম না।চুপচাপ বসে থাক।
আমিঃতাহলে বলো কি হয়েছে।
আমার দিকে জান্নাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার
পর কান্না করে দিলো।আর বলতে লাগলো...
জান্নাতঃতুই এমন কেনো হ্যা।কি কথা থাকে ঐ
মেয়েদের প্রতি।কই আমার সাথে তো কখনো
অনেক্ষণ বসে থাকিস না।আমার সাথে তো কখনো
হেসে কথা বলিস না।তাহলে ঐ মেয়েদের প্রতি
তোর কি এমন কথা থাকে যে এতো হাসাহাসি করিস।
আমি;ওহ এই কথা।আর আমিতো অন্য কিছু ভেবেছিলাম।
জান্নাতঃকি ভেবেছিলেন?
আমিঃকিছুনা।তার আগে তুমি বলো আমি অন্য
মেয়ের সাথে কথা বললে তোমার খারাপ লাগে কেনো?
জান্নাতঃআমার মানে?আমার না লাগলে কার লাগবে
আমিঃতারমানে তুমি.....
জান্নাতঃহ্যা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সেই
বিয়ের পর থেকেই।কিন্তু বলিনি।যখন আপনি
আমাকে মজা করার সময় গলা টিপে ধরেন তখন
আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো।তাই ঐসব বাজে
কথা বলছিলাম।কিন্তু আপনি যখন বাসায় আসছিলেন
না তখন অনেক কান্না করেছিলাম।রাতে যখন আপনি
বললেন আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন।তখন
জানো আমার অনেক কান্না করতে ইচ্ছা করছিলো
কিন্তু করিনি।সেদিন রাতের এক মূহুর্তের জন্যও
দুচোখ এক করতে পারিনি।পরেরদিন যখন আপনাকে
ডাকার জন্য ঐ রুমে যায় তখন দেখি আপনি শুয়ে
আছেন।অনেক ডাকার পরেও যখন উঠছিলে না
তখন আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।সেজন্য
আম্মু আব্বুকে ডেকে আনি।আর আপনার সাথে
কথা বলতে চাইনি কারণ আপনি যদি আমাকে
মারেন।কারণ আপনার অনেক রাগ।আর যখন
ঐ ছেলেটাকে মারলেন তখন আপনাকে সব সত্যি
বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি উল্টো আমাকে
থাপ্পড় দিয়ে হাসপিতালে পাঠানো ব্যবস্থা করেন।
আর শোনেন আমি এসব ডিভোর্স টিভোর্স নিতে
পারবো না।কিন্তু আপনি যদি আমাকে মারেন তাহলে
আমি একদম আমার আব্বুর বাসায় চলে যাবো।
জান্নাতের কথা শুনে আমি তো রীতিমতো অবাক।
কি বলে মেয়েটা।আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য এসব
করেছে।জান্নাতের কথা শুনে চোখ দিয়ে জল
গড়িয়ে পরলেও মুচকি হেসে জান্নাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমিঃঠিক আছে পাগলি আর কখনো তোমাকে
কষ্ট বা মারবো না।শুধু আদর করবো।
জান্নাতঃমনে থাকে যেনো।আর যদি আপনি কখনো
কষ্ট দেন তাহলে তোমার খবর আছে।
আমিঃহুম।কিন্তু তুমি।আমাকে আপনি না তুমি বললে
জান্নাতঃদুটোই বলছি।এখন থেকে তুমি বলবো।
তারপর জান্নাতের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায়
চলে এলাম।রিক্সায় থেকে নেমে বললাম।
আমিঃজান্নাত আমার কাছে তো টাকা নাই(মিথ্যা কথা)
জান্নাতঃতো আমি কি করবো।আমি কি তোমাকে
বলেছিলাম রিক্সায় উঠতে বলেছিলাম আমার টাকা
আমি দিবো।আর তোমার টাকা তুমি দিবা।
আমিঃএই না প্লিজ।তুমি দিয়ে দাও পরে শোধ করে দিবো।
জান্নাতঃপ্রমিজ??
আমিঃহ্যা গো বউ।
তারপর জান্নাত টাকা দিয়ে বাসার ভিতরে চলে এলাম।
রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাবো এমন সময়
জান্নাত এলো।আমাকে।দেখে বলল....
জান্নাতঃএকটা কথা বলি?
আমিঃহ্যা বলো...
জান্নাতঃকাল কোথাও ঘুরতে বের হলে কেমন হয়
আমিঃহুম ভালো।তবে এখন আমার কিছু কথা
তোমাকে রাখতে হবে।যদি রাখো তাবলে যাবো।
জান্নাতঃঠিক আছে বলো।
জান্নাতকে কাছে আসতে বলে কিস করতে লাগলাম।
প্রথমে জান্নাত ছাড়াতে চাইলেও পরে আর বারণ
করার চেষ্টা করেনি।দুজনেই চলে গেলাম ভালো
বাসার এক অচিন সুমদ্রে।তারপর জান্নাতের কপালে
একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি জান্নাত এখনো শুয়ে
আছে।এই ফাঁকে জান্নাতের মলিন গালটাতে একটা কিস করলাম।
জান্নাতঃঠাসসস
আমিঃ.....(আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি)
জান্নাত কিছু না বলে আমার কোলে বসে লিপ কিস
করতে লাগলো।কিন্তু হঠাৎ করে আমাকে ধাক্কা
দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর।জান্নাত ফ্রেস হয়ে রুমে এলো।
জান্নাতঃযাও ফ্রেস হয়ে নাও।
আমিঃহ্যা।কিন্তু তুমি চলে গেলে কেনো।
জান্নাতঃএতো রোমান্স ভালো না বাবু।এখন যাও।
তারপর আমিও ফ্রেস হয়ে রুমে আসলাম।বিছানায়
রাখা ড্রেসটা পরে নিলাম।।।
চলবে............
0 Comments:
Post a Comment