গল্প জোড়_করে_বিয়ে পর্ব ১১ সমাপ্ত

 জোড় করে বিয়ে

পর্বঃ১১(অন্তিম বা শেষ)

#আবির হাসান নিলয়


ড্রেস পরে নিচে আসলাম।দেখলাম আব্বু আম্মু

আর জান্নাত বসে আছে।জান্নাত আব্বু আম্মুর

সাথে অনেক হাসে কথা বলছিলো।এটা দেখে অনেক

রাগ হলো।আমকে ড্রেস পরতে সাহায্য করলে কি

এমন হতো।মনে মনে ঠিক করলাম। জান্নাতকে

কিভাবে জ্বালানো যায়।

জান্নাতঃকি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

আমিঃনা এমনি।জান্নাত একটু রুমে আসো।


তারপর আমি রুমে চলে গেলাম।কিছুক্ষণ পর

জান্নাত রুমে আসলো।

জান্নাতঃকি হলো ডাকলে কেনো?

জান্নাতের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে কোমরে

হাত দিয়ে কাছে টেনে আনলাম।জান্নাত কিছু

বলবে তার আগেই জান্নাতকে আমার শরীরের

আরো কাছে নিলাম।বলা যায় দুজনের শরীর এখন

এক শরীরে রুপান্তরিত হয়েছে।আমার এমন কাজ

দেখে জান্নাত খুব দ্রুত আর জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস

ফেলতে শুরু করলো।জান্নাতের এমন ভিতু চেহারে

দেখতে অনেক মলিন লাগছিলো।ঠিক তখন মনে

পড়লো জান্নাতকে জ্বালানোর কথা।


আমিঃজান্নাত তুমি আমাকে কতো টুকু ভালোবাসো

জান্নাতঃঅনেক বেশী ভালোবাসি।

আমিঃআমার জন্য কি করতে পারবে?

জান্নাতঃতুমি যা বলবা তাই করবো।

আমিঃ সত্যি তো(জান্নাতকে ছেড়ে দিয়ে)

জান্নাতঃছেরে দিলা কেনো?

আমিঃআগে বলো সব করতে পারবে?

জান্নাতঃহুম গো বাবা। তুমি যা বলবা তাই করবো

আমিঃঠিক আছে সোনা বউ।এখন ১০বার কান

ধরে উঠবস করবে আমার সামনে।😂

জান্নাতঃকিহহহ😡(রেগে গিয়ে)

আমিঃতুমি কিন্তু বলেছো।আমি যা বলবো তাই করবে

জান্নাতঃএই না। প্লিজ বাবু আমি এটা করতে পারবো না

আমিঃস্বামীর কথা না শুনলে যে স্বামীর ক্ষতি হয়😎

জান্নাতঃকিন্তু তুমি তো 😩😩

আমিঃআমি কি সোনা বোলো

জান্নাতঃআমি কিন্তু কান্না করবো।

আমিঃওহ বুঝতে পারছি তুমি তো আমাকে ভালোই

বাসো না।আমার কথা কেনো শুনবে(অভিমানী সুরে)

জান্নাতঃকে বলল ভালোবাসি না

আমিঃভালোবাসলে তুমি আমার কথা রাখতে। থাক

তোমার কিছু করা লাগবে না। আমি গেলাম।

জান্নাতঃএই না না।তুমি বসো আমি কান ধরে উঠবস করছি

আমিঃওকে সোনা।


আমি সোফার উপরে বসতেই জান্নাত কান ধরে

উঠবস করতে লাগলো।প্রথম ৫বার ভালো করে

করলেও তারপর থেকে ওর উঠাবসায় সমস্যা দেখতে

পেলাম।আর তাছাড়াও শাড়ি পরে এধরনের কাজ

করা অনেকটাই দুর্লভ। মোট আটবারের মতো

হয়েছে তখন জান্নাতকে থামতে বললাম।তারপর

আমার কাছে টেনে বসালাম।প্রথমে বসতে চাইছিলো

না।পরে জোড় করে কোলে বসালাম।

আমিঃবাবু রাগ করছো?

জান্নাতঃনা...(মুখ ঘুরিয়ে অভিমানী কণ্ঠে)

আমিঃঠিক আছে আর কখনো এসব করতে বলবো

না।এখন তো একটু হাসো।

জান্নাতঃ.....(মন ভুলানো একটা হাসি দিয়ে আমার

বুকে মুখ লুকালো)

আমিঃজানো আমি তোমাকে এটা করাতাম না।

কিন্তু তুমি আব্বু আম্মুর সাথে হেসে হেসে কথা

বলছিলা।যা দেখে হিংসা হচ্ছিলো।তাই এটা.....

জান্নাতঃতারমানে তুমি.....


বলেই আমার বুকে মারতে লাগলো।মেয়েটার হাতে

শক্তিও আছে বটে।প্রতিটা মারেই ব্যথা লাগে।

জান্নাতকে বুকের সাথে আরো চেপে ধরলাম যেনো

মারতে না পারে।😍😍


দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের ৬মাস চলে গেলো।

এখন আমিই আব্বুর বিজনেস দেখাশুনা করি।

আর জান্নাত বাসায় আম্মুর কাজে সাহায্য করে

আর আম্মুর সাথে বসে আড্ডা দেয়।অফিসের

কাজ শেষ করার পর ড্রয়ার থেকে একটা কন্টাক্ট

পেপার নিয়ে বাসায় এলাম।কলিং বেল বাজাতেই

জান্নাত এসে দরজা খুলে দিলো।কিন্তু আমি কোনো

কথা না বলে রুমে চলে এলাম।জান্নাত আমার 

এমন ব্যবহার দেখে অনেকটা হতভম্ভ।আর অবাক

হওয়ার কথাটাই স্বাভাবিক। কারণ প্রতিদিন বাসায়

এসে জান্নাতের সাথে কথা বলি সেটাও তার প্রশংসা।


রুমে এসে গম্ভীর মুখ নিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম।

জান্নাতও আমার পিছু পিছু এলো।

জান্নাতঃঅফিসে কি কিছু হয়েছে?

আমিঃনা

জান্নাতঃতাহলে এভাবে বসে আছো কেনো?

আমিঃ..(হাতে থাকা কাগজটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম)

জান্নাতঃকি এটা?

আমিঃআমাদের ডিভোর্স পেপার।

কথাটা শোনার সাথে সাথে জান্নাতের মাথায় যেনো

আকাশ ভেঙে পড়লো।হাতে থাকা কাগজটা ফ্লোরে

পরে গেলো।জান্নাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম

আমার দিকে করুন চাহনিতে তাকিয়ে আছে।

আমিঃআমি সাইন করে দিছি এখন তুমি করলেই হবে

জান্নাত এবার কেঁদে দিলো।আর এতো জোড়ে জোড়ে

কান্না শুরু করলো।যে নিচ থেকে আম্মু আমাদের

রুমে এসে পড়লো।

আম্মুঃকি হলো মা কান্না করছিস কেনো?

জান্নাতঃআম্মুর তোমার ছেলে আমাকে ডিভোর্স দিবে

আম্মুঃমানে... কি বলছিস এসব?

জান্নাতঃবিশ্বাস না হলে নিলয়ের থেকেই।শোনো

আম্মুঃনিলয় জান্নাত কি বলছে এসব

আমিঃআম্মু জান্নাত একদম মিথ্যা কথা বলছে?

জান্নাতঃআমি মিথ্যা বলছি তাই না।তাহলে এই

কাগজটা কিসের(ফ্লোর থেকে কাগজটা তুলে)

আম্মুঃদেখি আমাকে দেখতে দে।


আম্মুর কাগজটা পরে হেসে দিলো।সাথে আমাকে

বলল গাধা তোর বুদ্ধি আছে দেখছি।এটা শুনে

জান্নাতের চোখ তো লাল বর্ণ ধারণ করলো।

জান্নাতঃকিহহ তারমানে আম্মু তুমিও তোমার

ছেলে পক্ষ নিয়ে কথা বলছো?

আম্মুঃনা রে মা নিলয় তো...(থামিয়ে দিয়ে)

আমিঃআম্মু তুমি এখন যাও।

আম্মু চলে গেলো।

আমিঃএখন তুমি কাগজটা পড়ো।

কাগজটা পরে হেসে দিলো।কারণ কাগজটাই

লিখা ছিলো,“যদি আমাদের মধ্যে কখনো ঝগড়া

হয় তাহলে সেটা রাতের মধ্যেই ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

আর যদি কখনো ভিচ্ছেদের কথা ওঠে তাহলে

আমাদের মধ্যে যতদিন না অবধি ৫০টা সন্তান

না হয় ততোদিন আমাদের ভিচ্ছেদ হবে না।”


তারপর জান্নাত কন্টাক্ট পেপারে সাইন করে।দিয়ে

আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে লাগলো।

আমিঃআরে পাগলি কান্না করছো কেনো?

জান্নাতঃআমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।তুমি

এখন প্রমিজ করো এমন ভয় আর কখনো দেখাবা না

আমিঃঠিক আছে এই কান ধরে বলছি এমন কাজ

আর দ্বিতীয়বার আর কখনো করবো না।

জান্নাতঃহনুমান বর আমার

আমিঃ😂😂পাগলি।


তারপর রাতের খাবার শেষ করে রুমে চলে এলাম।

কিছুক্ষণ পর মহারানীর আগমন হলো।মানে জান্নাত এলো।

জান্নাতঃআচ্ছা শোনো না।

আমিঃকি বলো

জান্নাতঃচলো আজ ছাদে গিয়ে রাতের আকাশটাকে 

উপভোগ করি।অনেক ভালো লাগবে।

আমিঃঠিক আছে চলো।

জান্নাতঃজ্বি না।তুমি আমাকে কোলে করে নিয়ে যাবা

আমিঃকিহহ? তোমার মতো আটার বস্তাকে কোলে

নিয়ে উপরে গেলে আমি একদম উপরে চলে যাবো

জান্নাতঃচুপ গাধা।যেটা বলছি সেটা করো


কি আর করা বউকে কোলে নিয়া ছাদে উঠতে হলো।

ছাদে দোলনা থাকায় দোলনার কাছে গেলাম।আগে

জান্নাত দোলনার উপরে বসলো।

জান্নাতঃতুমি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ো

আমিঃনা থাক এতো ভালোবাসা দেখাতে হবে না।

পুরো মাজাটাই ব্যথা হয়ে গেছে।

জান্নাতঃঠিক আছে।তাহলে আমি রুমে চলে গেলাম।

আমিঃআরে আরে সোনা বউ কই যাও।আমি তো

শুধু।মজা করছিলাম।তুমি বসো আর আমায়

আদেশ করো।আর সেগুলো আমি পালন করি।ঠিক আছে?

জান্নাতঃহুম পাগল(হাসি দিয়ে)

আমিঃআর তুমি আমার পাগলি।

জান্নাতঃহনুমান একটা

আমিঃতুমি যে এসব বলো তোমার লজ্জা করে না

জান্নাতঃলজ্জা কিসের। আমার বরকে আমি বলবো

তাতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?দরকার পরলে

আরো কিছু বলবো তোমার কোনো সমস্যা

আমিঃনা আমার কি সমস্যা হবে।

জান্নাতঃঠিক আছে তাহলে আরো বলছি..ডাইনোসর,

কালো বিড়াল,হারামি,গুন্ডা,লুচ্চা, বদমাইশ......


আরো কিছু বলবে তার আগেই জান্নাতের মুখ

বন্ধ করে নিলাম।আপনারা আবার ভাইবেন না কিস

করছি।হাত দিয়েই মুখ চেপে ধরছি।যেনো আর

বলতে না পারে।জান্নাত কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পরেও

যখন পেরে উঠছিলো না।ঠিক সেই সময় হাতে কামড় দেয়...

আমিঃআউচ...কামড় দিলে কেনো?(হাত সরিয়ে নিয়ে)

জান্নাতঃএকশত বার দিবো।তুমি আমার মুখ চেপে

ধরে রাখবে আর তোমাকে কিছু বলবো না।এটা কি হয় সোনা।

আমিঃদেখতো হাত কি হয়ে গেলো(কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে)

জান্নাতঃওলে আমার বাবুটা লে।আচ্ছা কাছে আসো

এখন তোমায় একটু আদর করি।

আমিঃনা থাক আমার আদর লাগবে না।

জান্নাতঃআরে আসো তো আগে(আমায় টেনে কাছে নিলো)


থাক আপনাদের আর জানতে হবে না।আর তাছাড়া

আমার লজ্জা লাগছে।🙈🙈🙈

............সমাপ্ত.........

(সামনে পরিক্ষা তাই তাড়াতাড়ি শেষ করতে হলো।ভালো লাগলে জানাবেন।ধন্যবাদ।)

0 Comments:

Post a Comment