গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান
পর্বঃ ১৩
লেখকঃ নামহীন লেখক
~
~
~
--- আব্বু এসে বললো উনার শশুর মশাই
মানে আমার নানা নাকি মারা গিয়েছেন। আব্বুর সাথে আমি যাব বলে বের হতে আপু এসে বললো আপু ও যাবে।
নাহ আপু তোর এই অবস্থায় ওখানে যাওয়াটা ঠীক হবে নাহ। তুই বাসায় থাক।
---- না ভাই আমি যাব। উনি আমাদের নানা একবার তো শেষ বেলায় বিদায় দিয়ে আসি।
--- আচ্ছা আপু চল তাহলে। আব্বু গাড়ি স্টার্ট দিলে আপু ও আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। ফোনটা বেজে উঠলে কল রিসিভ করতে অনু বললো কাল থেকে তো কলেজ খুলবে। কলেজে আসবে নাহ...?? আর প্রথম বর্ষের রেজাল্টও খুব তাড়াতাড়ি ই স্যারেরা দিয়ে দিবেন মনে হয়৷
---- নাহ অনু আমি কয়েকটা দিন কলেজে যাবো নাহ। পরে কথা হবে গাড়িতে আছি বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
--- আমার সাথে এগুলো কি হতে শুরু করে দিলো বুজছি নাহ। মনে হচ্ছে একদিক গড়ছে অন্যদিক ভাঙ্গছে। ভাগ্যটা যেন আমাদের সাথে খেলা শুরু করে দিয়েছে।
---- তবে হয়তো এই খেলাটা আমার সাথে নয় আমার চারপাশের মানুষ দের ওপর হচ্ছে।
----- এক বাসার গেইটের দিকে আব্বু গাড়ীর স্টেয়ারিং টা ঘুড়ালো। গেটের দারোয়ান নেই। মনে হয় মালিক মারা যাওয়াই উনি ভিতরে গিয়েছেন।
---- গাড়ী হতে আব্বু নামতে গেলে আমি আব্বুকে বলে উঠলাম। আব্বু তুমি বসো আমি গিয়ে গেইট টা খুলছি।
---- আমি গাড়ি থেকে নেমে গেইট খুলে সামনের দিকে ঠেলা দিতেই দেখি আমার নানার বাসা নাহ যেন রাজপ্রাসাদ।
আমি তাক লাগিয়ে চেয়ে থাকলাম।
---- আব্বু সামনে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে আমার মনে হয় হুস টা ফিরলো । আমি গাড়ির পিছন পিছন যেতে থাকলাম। আর চারপাশটা দেখতে লাগলাম।
---- বাসার ভিতরে ঢুকে দেখি
একটা মরা বাড়িতে যতটা মানুষ থাকে তার তুলনায় অনেকটা কম।
---- দুই-একজন কান্না করছেন। আপু গিয়ে আমার সৎ মার পাশে বসলো এবং কান্না জুড়ে দিলো।
--- কান্নার কি আছে। উনি তো আমাদের মানে আপু ও আমাকে এতিম করে দেওয়ার মূল কারিগর। উনার মৃত্যুকে কান্নার কিছু নেই। আপু যেনো একটু বেশীই আবেগ প্রবন।
--- বাসার দুইজন দারোয়ান ও একজন কাজের মানুষ আমাকে এসে সব ব্যবস্থা মানে কাফনের কাপর,, কবর,, জানাযা এগুলোর ব্যবস্থা করতে বললো।
---- যাই হোক উনি তো (নানা) মারাই গেছেন উনার উপর রাগ- ক্ষোভ পুষে রেখে লাভ কি তারচেয়ে উনাকে মাফ করে দেওয়ায় ভালো হবে যাই সব ব্যবস্থাটা করি।
--- সব আয়োজনই শেষের দিকে। এখন নানাকে বাসা থেকে খাঁটিয়াই করে বার করার পালা। আমরা যখন খাটিয়া নিয়ে বাসার ভিতরে গেলাম তখন যেনো কান্নার ঢোল পড়ে গেলো চারদিকে৷
---- বুজলাম আসলে একটা মানুষ মারা গেলেও বাসার ভিতরে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ যেনো মনে হয় উনি বাসার আশপাশেই হয়তো আছে কিন্তু এই খাঁটিয়া যেনো মানুষটাকে চিরজীবনের মত বাসা হতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়।
--- এর জন্যই সবাই হয়তো এখন কান্নায় ফেটে পড়ছে। খাঁটিয়া নিয়ে জানাযা শেষ এবং সব কিছুই শেষ করে আবার নানার বাসায় ঢুকলাম।
আমার সৎ মায়ের পাশেই আপুসহ বেশ কিছু মহিলা বসে আছেন৷
---- অনেকেই কান্না করছেন কেউ বা তাদেরকে শান্তনা দিচ্ছেন।
আমি গিয়ে একটু দুরে একপাশে বসলাম । খেয়াল করে দেখছি আমার সৎ মা আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে বার বার তাকাচ্ছে।
--- হয়তো উনার চোখের ভাষা আমায় কিছু বলতে চাচ্ছে। এই ভাষা সবটা বা আসলে কি বুজাতে চাচ্ছে তা না বুজলেও কিছুটা বুজলাম উনি হয়তো আপুর মতই আমাকেও উনার পাশে চাইছেন।
---- ভাবছেন হয়তো আজ যদি আবির আমার নিজের ছেলে হলে আমার পাশে বসে একটু হলেও কান্না করতো। আমায় বলতো মা কেঁদো না তো নানার কি হয়েছে উনি আমাদের মাথার উপরেই ছায়ার মত থাকবেন।
---- আমি এবার উঠে গেলাম
আপু চল বাসায় যাবো..
এ কথা শুনে উনি কিছুটা অবাক ও করুনার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।
--- উনি হয়তো এটা আশা করেন নি।
আপু কিছু বলতে যাবে কি আব্বু চলে আসলেন। উনি এসে জানালেন আবির আমরা এখনে ৩-৪ দিনের মত থাকবো বেশ কিছু কাজ আছে আমরা তা করে চলে যাবো।
--- কি কাজ আমি না বুজে না শুনে মাথাটি নাড়িয়ে আব্বুকে জানালাম আচ্ছা ঠীক আছে।
রাতে একটু খেয়ে যে যার মত করে ঘুমাতে চলে গেলো। আপু সৎ মায়ের সাথে বসে রইলো আমিও চলে গেলাম ঘুমাতে।
---- রাতে ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখছি এক অদ্ভুত ধরনের সাদা কাপড়ে সারা শরীরটা জড়ানো কেউ এসে বলছে... আমার মেয়েটা এতিম। ওকে তোমরা মাফ করে দিও। সব দোষ আমার। আমার মেয়েটার কোন দোষ নেই। দোয়া করে ওকে তোমরা দেখে রেখো।
---- কে সে ব্যক্তি যে স্বপ্নের মধ্য এসে এসব বলছে তার মুখটি স্পষ্ট না দেখতে পেলে ও বুজলাম এটা হয়তো আমার নানা।
---- একটুপর আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। বিছানায় উঠে বসলাম।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সময় ভোর ৫ টা বাজে ।
এখন আর ঘুম আসবে নাহ যাই ফ্রেশ হয়ে আসি বলে এক জানালার পাশ দিয়ে যেতেই আমি কারো গোলার শব্দ পেলাম।
---- এত ভোরে কে কথা বলছে,, রাতে ঘুমায় নি নাকি... !!
কৌতূহলবশত জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে জানালার পাশে গেলাম।
---- জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি আপু ঘুমাচ্ছে পাশেই আমার সৎ মা ও আব্বু বসে আছেন আব্বুর হাতে একটা কাগজ টাইপের কিছু,,,
--- আব্বুঃ- আমার যা কিছু আছে সব তো আবির ও লাবণ্যর ই। আর এই দলিল দিয়ে কী হবে,,?? তোমার আব্বু তো এই দলিলে সব কিছু ওদের দুজনের নামেই লিখে দিয়ে গিয়েছেন আবার তুমি লিখে দিয়েছো।
আমি এগুলো দিয়ে কী করবো,,,?? বরং আমার সবকিছুও ওদের কে লিখে দিবো৷ এটা রাখো তুমি ওরা ঘুম থেকে উঠলে সকালে ওদের কে বুজিয়ে দিও।
--- সৎ মাঃ- আমার আব্বুর বুকে মাথা রেখে একটু কান্না করতে আব্বু বললো ভেবো নাহ।
ওরা অনেক ভালো। দেখো একসময় দুজনেই তোমায় মা বলে ডাকবে।
ওদের মায়ের আসনে তোমাকে বাসাবে।
--- আমি এবার চলে আসছি আর মনে মনে বলছি জানি নাহ আমাদের মায়ের আসনে বসাতে পারবো কিনা তবে আমার সৎ নিসন্দেহে ভালো মানুষ তা বুজতে আর বাকি রইলো নাহ। এতদিন উনার প্রতি আমার যে ধারণা ছিলো তা আজ ভুলে পরিণত হলো।
---- হয়তোবা আমার নানাই আব্বুকে ফাঁসিয়েছিলো ওনার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু আসলেই কি এমন বিষয়টা তা আমার সত্য জানা নেই।
হয়তো কোনদিন জানতেও পারবো নাহ কেননা এই জানার জন্য এমন প্রশ্ন আমি ছেলে হয়ে বাবাকে করতে পারি নাহ।
---- তবে নানা ও সৎ মা যে...
আপু ও আমাকে এই বিশাল সহায়-সম্পত্তি সব কিছু লিখে দিয়ে গেছেন ভাবতেই আমার যেন অবাক লাগছে।
-- ফ্রেশ হয়ে আবার রুমে গিয়ে একটু শুয়ে পড়ে ভাবছি আমার নানা সব কিছু আমাদেরকে লিখে দিয়েছেন কেনও??
তাহলে কী উনার আর কোন ছেলে মেয়ে নাই??
উনি আর শুধু উনার একটা মেয়েই৷
--- একটুপর আপু এসে আমায় ডেকে বললো ভাই আব্বু ডাকছে তোকে।
আপু তোর এই অবস্থায় একটু চলাফেরা কম কর । বলে আব্বুর রুমে গেলাম।
--- আমার সাথে আপুও গেলো।
---- আমার সাথে আপুও গেলো...
আব্বুঃ- বসো এখানে।
আমিঃ বসে পড়লাম । বসে দেখি আমার সৎ মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ চোখের পাতায় যেনো ফেলছে নাহ। উনার ফেচ টা বলছে উনি যেনো এই পৃথিবীর সব থেকে মিষ্টি ডাক "মা" ডাকটি আমার মুখ থেকে একটিবার শুনতে চাচ্ছেন।
--- আব্বুঃ শুনো আবির তোমার নানার মৃত্যুর জন্য আমরা চারদিনের দিন খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করবো। তাই তোমার সাথে আলোচনা করতে ডেকে পাঠিয়েছি।
---- আচ্ছা আব্বু। এবার বুজলাম আব্বু কেন কাল বাড়িতে না যেয়ে বললো আমাদের কিছু কাজ আছে৷
---- আমার সৎ মা ঐ রাতের কাগজটি আমায় বের করে দিলো। আমি যদিও জানতাম এটা কিসের কাগজ আর কেনই বা দিলেন তবুও জানতে চাইলাম এটা কী আর কিসের কাগজ??
----
চলবে??
0 Comments:
Post a Comment