গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ২৩

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

পর্ব_২৩

সারিকা_হোসাইন


~~~~~~

পূর্ণিমার ঝকঝকে থালার মতো রুপালি চাঁদ শেষ হয়ে গেছে আরো কয়েক দিন আগে ।ঘন কালো অমাবস্যার  নিশুতি গ্রাস করেছে পুরো ধরণী।আকাশে চাঁদ এখনো দৃশ্যমান হয়নি।বাইরের পরিবেশ উত্তপ্ত,গুমোট।হঠাৎ ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো।

চাঁদহীন আকাশ আর আলো হীন ধরণী সব মিলিয়ে ঘুটঘুটে চারপাশ।মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার কর্কশ ডাক শোনা যাচ্ছে।


 এই অন্ধকার নিশুতিতে সাগরিকা নিবাসের পাঁচিল টপকে উঠে গেলো দুজন তাগড়া যুবক।পাঁচিল টপকানোর কৌশলে মনে হচ্ছে তারা এই কাজ আরো আগেও বহু বার খুব সুনিপুণ ভাবে করেছে।


কোমরে গুঁজে রাখা রিভলবার টাকে দুই হাতে পজিশন করে ধরে ধীরে ধীরে সামনে আগাতে থাকলো।

আশেপাশে ভালো ভাবে যুবক দুটো খেয়াল করে দেখলো কেউ আছে কি না।

নাহ কেউ দেখছেনা।ভেতরে প্রবেশের এটাই উপযুক্ত সময়।

দূতলা বাসাটির নিচ তলায় কিচেন।সেই কিচেনের জানালার একটা পাল্লা খোলা দেখা যাচ্ছে।

যুবক দুটির চোখ চকচক করে উঠলো।

পরিবেশ আর সুযোগ সব মিলিয়ে যেনো সোনায় সোহাগা।


*****

ইজি চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছেন নাসের হায়দার।জীবনের সব সুখ যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে চাইছে তার।হঠাৎই আশরাফ চৌধুরী গিরগিটির ন্যায় রং বদল করে  ফেলছে।মেজর মুহিত ও ফিরে এসে সব প্ল্যানিং প্রোগ্রাম পন্ড করে দিচ্ছে।

এদিকে মেয়েটাও অনেক তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে।

মায়ের মতো তাকেও চিরতরে শেষ করে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে মনে হচ্ছে।


নাহ আর ভালো লাগছে না।সব কিছু পানসে লাগছে ।পানসে সময় কে একটু স্বাদ যুক্ত করতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।

পছন্দের হুইস্কির বোতল থেকে ঢেলে নিলেন এক প্যাগ হুইস্কি সাথে দিলেন কয়েক টুকরো বরফ।


চোখ বন্ধ করে প্রথম চুমুক দিতেই গলায় তিতকুটে ঝাঁঝালো স্বাদ অনুভূত হলো।

হুইস্কি গ্লাস হাতে ধীরে ধীরে বারান্দায় পাতা সোফা টাতে বসলেন ।

এখান থেকে বকুল ফুলের গাছটা ভালো দেখা যায়।

কিন্তু ইলেক্ট্রিসিটি হীন পরিবেশ অন্ধকার কবরের মতো মনে হয়।

বকুল গাছ সম্পূর্ণ না দেখা গেলেও হালকা বাতাসে দোল খাওয়া পাতার খচ খচ শব্দ শোনা যাচ্ছে।

বিশ টি বছর ধরে এই বকুল গাছ দেখেই জীবন পার হয়ে গেলো।


নাহ হুইস্কি তে ভালো নেশা হচ্ছে না আজ।


পুরোনো অতীতের  ক্ষত গুলো তাজা হয়ে উঠে নেশা কাটিয়ে দিচ্ছে।

★★★


সালটি ১৯৯৫।

ঘর আলো করে চাঁদের মতো একটি পুত্র সন্তান এসেছিলো নাসের আর সাগরিকার ঘরে।নাসের তখন সাধারণ একজন লেফটেন্যান্ট।

খুবই সামান্য বেতন ছিলো তার।

সেই অল্প বেতনে নাসের আর সাগরিকার চললেও সন্তান আসার পর হিমশিম খেতে হতো তাদের।

সাগরিকার বুকের দুধ খুবই কম ছিলো, শিশুটি সারাদিন কাঁদতে থাকতো করুন সুরে।

সামান্য বেতনে বাসা ভাড়া,বাজার খরচ ,সব চালাতে হতো।এর পর যুক্ত হলো  বাচ্চার দুধ।

এতো অভাব অনটনের মধ্যেও সাগরিকা ছিলো হাসি খুশি।ছেলেটার বয়স যখন দুই তখন কঠিন এক ব্যধিতে আক্রান্ত হলো সে।

চিকিৎসা করেও কোনো ভালো হবার লক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো না।এক দিকে  অনাহারে জীবন যাপন,তার মধ্যে বাচ্চা নিয়ে যুদ্ধ,নির্ঘুম রাত্রি যাপন,হঠাৎই সম্পর্কে বিতৃষ্ণা এসে গেলো দুজনের।

ছেলেটা একদিন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লো।এদিকে মাসের শেষ প্রায়।হাতে কোনো টাকাই নেই।

ছেলেটা এক নাগাড়ে কেঁদেই যাচ্ছে।।

কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎই খিঁচুনি উঠে ছেলেটা  কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু কোলে ঢলে পড়লো।

সাগরিকা একটুও কাঁদলো না সেদিন।

শুধু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,


―টাকা হীন পুরুষের একটা নেড়ি কুত্তার সমান দাম ও নেই।

এক দিকে পুত্র শোক অন্যদিকে সাগরিকার এহেন অপবাদ।

সব মিলিয়ে মাথা ঘুরে উঠলো।পৃথিবীর সমচেয়ে অসহায় মনে হলো নিজেকে।


ধীরে ধীরে পুত্র শোক কাটিয়ে উঠলাম ঠিকই কিন্তু দুজন দুই মেরুর মানুষ হয়ে একই ছাদের নিচে বসবাস করতে লাগলাম।


হঠাৎই একদিন দিনাজপুর বর্ডার এলাকায় ট্রান্সফার হলো আমার।

চুরাই পথে বিভিন্ন জিনিস আসে,ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম এসব দেখেও না দেখার ভান করলে শুধু টাকা আর  টাকাই আসে।

এমন কথায় চোখ চক চক করে উঠলো আমার।।


এমন পরিস্থিতিতে পরিচয় হলো আহমেদ কসাই এর সাথে।

বিশাল ব্যাবসা তার।মানুষ পাচারের ব্যাবসা।

লোকটি আমাকে আশার আলো দেখালো,বিনিময়ে আমার সাহায্য প্রার্থনা করলো।

আমিও রাজি হয়ে গেলাম,টাকার লোভ কে হাতছাড়া করবে?


আমি নিজেই গাড়ি করে মানুষ বর্ডার পার করে দিলাম।

এক বছরের ব্যাবধানে  লাখপতি হয়ে গেলাম।

ঢাকায় জমিও কিনে ফেললাম।

খুশি হয়ে সাগরিকা কে গড়ে দিলাম দূতলা একটি বাড়ি।


আহমদ কসাই নিমিষেই নাম ধাম বদলে বিশিষ্ট সমাজ সেবী আশরাফ চৌধুরী হয়ে গেলো।আর আমি হলাম তার বিষ্যভাজন ব্যাক্তি।

এমন কোনো কাজ নেই যেখানে আমি তাকে সাহায্য করিনি।


পিউ পেটে এলো।সাগরিকা খুশিতে পাগল হয়ে গেলো।

টাকা সন্তান দুটোই এক সাথে।সুখ যেনো সত্যি ই ধরা দিলো এবার।


আমি ঢাকায় শিফট হলাম আবার।পিউ এর বয়স তখন চার।

একদিন আমার আর আশরাফ চৌধুরীর সকল কথা শুনে ফেললো সাগরিকা।

শুনেই আমাকে ঘৃণা করতে লাগলো,সংসারে অশান্তি শুরু করে দিলো।।


আমার নামে ক্যান্টনমেন্ট এ বিচার দেবে সেই ভয় দেখাতে লাগলো।


আমার  এতদিনের গড়া সুখ,টাকা এই নির্বোধ মহিলা এক নিমিষেই শেষ করে দিতে চাইলো।

যখন টাকা ছিলোনা তখনো  কথা শুনাতো,যখন টাকা দিয়ে ভরিয়ে দিলাম তখন আবার টাকা প্রাপ্তির উৎস খুঁজতে লাগলো।


মেয়েদের মন কে বুঝতে পারবে যে,তাদের কখন কি চাই?


টাকার নেশা ততোদিতনে  আমাকে বদ্ধ উন্মাদ করে দিয়েছিলো।

সাগরিকা বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে চুপ করিয়ে নজরদারি তে রাখলাম।


সাগরিকা এক রাতে পিউকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো।

আমার সন্তান নিয়ে আমার বাসা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে আমার নামে আর্মি হেড কোয়ার্টার এ বিচার দিতে।

রক্ত গরম হলো মুহূর্তেই।

পিউকে ছো মেরে নিয়ে বন্দি করে দিলাম স্টোর রুমে।কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা কখন ঘুমিয়ে গেছে কে জানে?


রাগ সংবরন করতে না পেরে প্যান্টের বেল্ট খুলে সাগরিকার  গলায় চেপে ধরলাম,

―হারামজাদী বিচার দিবি আমার নামে?

―তোর কথার জন্যই তো হারাম পথে টাকা কামাতে গেলাম।

―তুই ই তো আমাকে রাস্তার কুকুরের সাথে তুলনা করেছিলি।

তোকে রাজপ্রাসাদ গড়ে দিলাম তবুও এখন মনে ধরছে না তোর?


জিভ বেরিয়ে এলো সাগরিকার, অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে।অনেক কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু পারলো না।


সেসবে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।

ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নিস্তেজ হলো সাগরিকা।

নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়লো।

নিমিষেই রাগ পানি হলো আমার কিন্তু সাগরিকা  আর নেই।

কোথায় লুকাবো এই লাশ?

সাগরিকার তিন কুলে কেউ নেই যে খুজ করতে আসবে।

কিন্তু মেয়েটি তো মাকে খুঁজবে।

কোদাল নিয়ে চলে গেলাম বাড়ির পাশের খালি জায়গা টায়।গভীর গর্ত করে পুতে দিলাম ভালোবাসার সাগরিকা কে।লাগিয়ে দিলাম বকুল ফুলের চারা।


স্মৃতি চারণ করতে করতে পুরো বোতল সাবাড় করে ফেললো নাসের হায়দার।এবার তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।

ইজি চেয়ারে বসেই মুহূর্তেই তলিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে।


******

বহু কসরতের পর জানালার গ্রিল খুলতে সক্ষম হলো যুবক দুটো।

রান্না ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে গেলো বাসার ভেতর।

অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজতে লাগলো পিউ এর কক্ষ।

দূতলা বাড়ি টিতে মোট বারোটি রুম রয়েছে।

কোনটাতে আছে পিউ?

অন্ধকারে ছোট টর্চ জ্বালিয়ে খুঁজেও সারা বাড়িতে পিউ এর কোনো খুজ পাওয়া গেলো না।

নিস্তব্ধ পরিবেশে হঠাৎই ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলো।

চকিত হলো যুবকদ্বয়ের কান।

কান খাড়া করে শব্দ অনুসন্ধান করে এগুতে এগুতে  একটি তালাবদ্ধ দরজার সামনে এসে হাজির হলো তারা।

আরেকটু সজাগ হতেই বুঝতে পারলো এই রুম থেকেই কান্নার আওয়াজ আসছে।

দ্রুত ব্যাকপ্যাক থেকে লক কাটার টুলস বের করে শক্ত পেশির শক্তিতে কেটে ফেললো লক।

সহকারী কে পাহাড়ায় রেখে ঢিপঢিপ করা বুক নিয়ে ঢুকে পড়লো কক্ষের ভেতর।

টর্চের আলো ফেলতেই ভয়ে কেঁপে উঠলো পিউ।

নিজের অতিপরিচিত প্রানপ্রিয় পুরুষকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো ।

দৌড়ে এসে গলা জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো।

ভালোবাসার মানুষের এমন করুন পরিস্থিতি সহ্য হলো না প্রেমিক পুরুষের।

গড়িয়ে পড়লো দু ফোটা জল।

পিউ কান্না থামিয়ে শার্টের কলার ধরে বলে উঠলো

―আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো সৌম্য।বাবা আমাকেও আমার মায়ের মতো মেরে ফেলবে।


উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো সৌম্য।

অবশ্যই সে আজ সাথে করে  নিয়ে যাবে তার ভালোবাসাকে।


হাত ধরে প্রস্থান করতে নিলেই দাঁড়িয়ে গেলো পিউ।

""এক মিনিট সৌম্য।

দৌড়ে চলে গেলো নিজের কক্ষে।লুকিয়ে রাখা  ফোন আর রেকর্ডার ডিভাইস নিয়ে কীয়তক্ষন বাদেই ফিরে এলো।


ধীরে ধীরে পা ফেলে তারা  চলে এলো রান্না ঘরে।

মেজর আদ্রিয়ান লাফিয়ে নেমে গেলো বাইরে।

সৌম্য পিউ কে কোলে তুলে বাইরে বের করে দিলো।

মেজর আদ্রিয়ান ধরে ফেললো পিউ কে।

সৌম্য ঝাঁপিয়ে পড়লো এরপর।

খুব সাবধানে গেট ক্রস করে গাড়িতে এসে বসলো।

মেজর আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলতে লাগলো।


――――――

সকাল হতেই দরজায় ধুপধাপ বাড়ির আওয়াজে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো নাসের হায়দার এর।

আবারো ঘুমের চেষ্টা চালালো সে।কিন্তু চিৎকার চেঁচামেচি তে ব্যার্থ হলো।

রাগে মুখে খারাপ গালি উচ্চারণ করে দরজা খুলতেই আর্মি স্পেশাল ফোর্সের পুলিশ দেখে অবাক হয়ে জানতে চাইলো

আপনারা?

""কি চাই আমার কাছে??

দুটো সোলজার গাড়ির ভেতর থেকে শাবল ,করাত আর কোদাল নিয়ে এলো।

এসব যন্ত্রপাতি দেখে চোখ কপালে উঠলো নাসের হায়দার এর।

বিশ বছর ধরে যত্ন করা বকুল ফুলের গাছটি নিমিষেই কেটে ফেললো নবাগত দুজন সোলজার।

কোদাল দিয়ে কুপিয়ে শাবলের সাহচর্যে উপরে ফেললো গাছের মূল।

আরো কিছুখন খনন করতেই বেরিয়ে এলো একটি এলোমেলো কঙ্কাল।

সকলের চক্ষু চড়ক গাছে পরিণত হলো।

পুলিশ অফিসার নির্দেশ দিলেন

""এরেস্ট হিম।

দুজন সিপাহী হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দিলো নাসের হায়দার এর হাতে।

টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হলো তাকে গাড়ির কাছে।


–-----/-----

কোর্ট -মার্শাল বসানো   হয়েছে নাসের হায়দার এর জন্য।

বিচারক হিসেবে রয়েছেন আর্মি জেনারেল,এবং বিচার বিভাগ এর একজন বিচারক,সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দুজন উকিল  ।


নাসের হায়দার কে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে টেবিলে বসানো হলো।সামনে তার কোর্ট রুমের জন্য বরাদ্দকৃত মাইক্রোফোন।


পিউকে ডাকা হলো।


শুরু হলো বিচার কার্য।


একের পর এক পাল্টাপাল্টি প্রশ্ন চলছে।


পিউ তার হাতে থাকা সমস্ত প্রমান আর্মি জেনারেল এর কাছে পেশ করলো।

সকল প্রমানাদির ভিত্তিতে এবং নিজের স্ত্রীকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো নাসের হায়দার কে আর আশরাফ চৌধুরী কে দ্রুত গ্রেফতার এর নির্দেশ দেয়া হলো।


মেয়ের দিকে তাকিয়ে স্মিত প্রাণহীন হাসলেন নাসের হায়দার।ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো পিউ।

পুলিশ নাসের হায়দার কে নিয়ে যেতে উদ্দত হতেই আসামি পক্ষের উকিল পিউকে জিজ্ঞেস করলেন 

―আপনি কি আপনার বাবার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?

উকিলের কথা শুনে পিউ ধীর পায়ে নাসের হায়দার এর সামনে এলো।

সে অনেক কিছুই বলতে চায় বাবা নামের এই অমানুষ টাকে।

কিন্তু বলতে ইচ্ছে করছে না এই মুহূর্তে।


কিছুক্ষন মৌন রইলো পিউ,এর পর মাথা উঁচু করে নাসের হায়দার এর চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো

―পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা তুমি,তোমাকে আমি ঘৃণা করি।দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।


নাসের হায়দার এর চোখে নীল বেদনার জল দেখা গেলো।

নিজের মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে কলিজা মোচড়ে উঠলো তার ।

কিছুই বলতে পারলেন  না পিউ কে।

কেউ বুঝি গলা টিপে ধরে আছে।

বহু কষ্টে গলার স্বর স্বাভাবিক করে শুধু বলে উঠলো

―কোনো বাবাই  পৃথিবীতে খারাপ হয়ে জন্ম নেয়না রে মা।

পরিস্থিতি বাবাদেরকে খারাপ করে দেয়।

শুধু খারাপ নয়,জঘন্য থেকে জঘন্যতম।


কথাটি বলে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলেন না নাসের হায়দার।

পুলিশের আগে আগে চলে গেলেন কারাগারের দিকে।


হাটু মুড়ে মেঝেতে বসে পড়লো পিউ।সৃষ্টিকর্তা তার জন্য কি একটুও বাবা মায়ের আদর রাখতে পারলো না?

দুজন কেই দুই ভাবে কেড়ে নিতে হলো?

পিউএর কান্নায় সৌম্যের চোখেও জল এসে গেলো।

আর্মি জেনারেল  পিউকে উদ্দেশ্য করে শান্তনার বাণী দিয়ে প্রস্থান করলেন।

স্বর্গ এসে জড়িয়ে ধরলো পিউ কে।

কোনোমতে শান্ত করে স্বর্গ পিউকে তার সাথে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলো।


*******

সকল পরিস্থিতি যেনো আশরাফ চৌধুরীর প্রতিকূলে।শালা নাসের হায়দার তাকে চূড়ান্ত ফাঁসানো ফাঁসিয়েছে।

এদিকে মন্ত্রী মোশতাক আহমেদ ফোন তুলছে না।

ব্যাটা নির্ঘাত মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে।

এদিকে আমি শুলে চড়ে আছি আর ঐদিকে উনি মস্তি করে ঘুরছে।

আরো বার চারেক মোস্তাক আহমেদ এর নম্বর ডায়াল করে রাগে ফোন ছুড়ে মারলেন আশরাফ চৌধুরী।


মেজর মুহিত কে টুকরো টুকরো করে কুত্তা দিয়ে খাওয়াতে পারলে মনে একটু শান্তি পাওয়া যেতো।রাগে মাথার  চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে আশরাফ চৌধুরীর।


আশরাফ চৌধুরীর বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলেছে জনগণ।ক্রমাগত ঢিল ছুড়ে জানালার কাচ ভাঙছেন ক্রুদ্ধ জনতা।

আইনের বিচারের আগে তারাই বিচার করবেন এই জানোয়ারের।

তাদের বোকা বানিয়ে তাদের নাকের ডগায় বসে এসব কুৎসিত অপকর্মের শোধ আজকেই তুলবেন তারা।কিছু মানুষ গেট টপকে ভেতরে ঢুকে গেলো।

সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে কোথাও পাওয়া গেলোনা আশরাফ চৌধুরী কে।


আরো কিছু ভাঙচুর করে চলে গেলেন তারা।কিছু মানুষ সুযোগ পেতেই ঘর থেকে দামি জিনিস নিতেও ভুললেন না।


আশরাফ চৌধুরী তার গোপন কামরায় ঘাপটি মেরে বসে আছেন।মানুষের সকল কথাই তিনি শুনতে পাচ্ছেন।

কেউ কেউ নাখাস ভাষায় গালিগালাজ ও করে যাচ্ছেন।

আশরাফ চৌধুরী মনে মনে ভাবলেন

পরিস্থিতি খালি একবার স্বাভাবিক হোক।সবকটা কে চামড়া তুলে লবন মরিচ লাগাবো।


চলবে।

0 Comments:

Post a Comment