গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ২৭

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

পর্ব_২৭

সারিকা_হোসাইন


~~~~~~


তাহলে ধরেই ফেললে আমাকে মেজর মুহিত ওয়াসিফ?


কথাটা বলে আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো আহিয়ান।

এর পর চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ মৌন রইলো।

এরপর দুই হাত ভাঁজ করে টেবিলের উপর রেখে তাতে থুতনির ভর দিয়ে মুহিত কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো―


আমি যে পাগল নই এটা কিভাবে তুমি প্রমান করবে মেজর মুহির ওয়াসিফ?


―আমি তোমাকে প্রমান করতে আসিনি।

এসেছি বাম্পার এক অফার নিয়ে। সাবলীল উত্তর মুহিতের।


ভ্রু কুঁচকে মুহিতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো আহিয়ান।

কি এমন অফার নিয়ে হাজির হয়েছে সে?


গলা খাকরি দিয়ে  স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো মুহিত

তোমাকে জেল থেকে বের হবার সকল ব্যাবস্থা আমি নিজে করে দেবো আহিয়ান।বিনিময়ে আশরাফ চৌধুরী কে আমার হাতে তুলে দেবে তুমি!তার সাথে বহু হিসেব নিকেশ বাকী পরে আছে আমার।


তুমি আমাকে কেনো পালাতে সাহায্য করবে?আমিও তো তোমার ক্ষতি করতে চেয়েছি।

―তোমার সাথে আমার  সেরকম কোনো শত্রুতা নেই প্লাস তোমাকে ভালো হবার একটা চান্স দিলাম।আর তুমি যেই ভুলটা করেছিলে সেটা ভালোবেসে পাগলামি করেছিলে।

আর কোথাও না কোথাও তোমার জন্য আমার মনে একটা সফট কর্ণার রয়েছে।

কারন পিতৃহীন থেকে মাতৃহীন হয়ে দুনিয়াতে বেঁচে থাকা সবচাইতে কষ্টের।হয়তো তোমার মা বেঁচে থাকলে  আজকে তোমার লাইফের মোড় অন্য কোথাও ঘুরে যেতো।


মায়ের কথা শুনতেই আহিয়ান এর চোখে জ্বালা করতে শুরু করলো।

দেখতে কতো মিষ্টি ছিলো তার মা।মায়ের পুরাতন স্মৃতি তে নিমিষেই ডুবে গেলো আহিয়ান।


আহিয়ান এর সকল দুস্টুমি মেনে আহিয়ানের পিছে পিছে সারা বাড়িময় ঘুরে বেড়াতো মিসেস অহনা।আহিয়ান ছিলো চঞ্চল প্রকৃতির দুষ্ট ছেলে।বহুবার ঘরের দামি জিনিস ভেঙে ফেলেছে,মা কে ইচ্ছে করে ব্যাথা দিয়েছে,খাবার নিয়ে ঝামেলা করেছে।কোনো দিনও মিসেস অহনা আহিয়ান কে একটা মার তো দূরে থাক ধমক পর্যন্ত দেন নি।সারা রাত মাথায় বিলি কেটে গল্প শোনাতো।মায়ের বুকের ওম বহুদিন ধরে পায়না আহিয়ান।


বাবার সকল কুকীর্তি থেকে সবসময় বুকের মাঝে আগলে দূরে দূরে রেখেছেন।

কিন্তু আহিয়ান?

সে তো  পারেনি তার মা কে আগলে রাখতে।রাক্ষস টা ঠিক তার মাকে কব্জা করে খেয়ে ফেলেছে।আহিয়ান লুকিয়ে লুকিয়ে শুধু  দেখেছে,কিন্তু কারো কাছে আজ পর্যন্ত প্রকাশ টুকু করতে পারেনি।


আচ্ছা আহিয়ানের এই কুকর্মের জন্য তার মা কি ওপারে অনেক কষ্ট পাচ্ছে?


মুহিতের গমগমে কন্ঠে আহিয়ানের ধ্যান ছুটলো।


―তোমাকে আমার প্রয়োজন আহিয়ান!

আমার কথায় রাজি হয়ে যাও আহিয়ান।

ধরে নিতে পারো

―এ গোল্ডেন অপুরচুনিটি ফর ইয়ু।

কিছুক্ষন ভেবে আহিয়ান বলে উঠলো―


 আমি তো দাগী আসামিতে পরিণত হয়েছি, যতো সহজে তুমি আমাকে পালাতে হেল্প করবে  ভাবছো  বিষয় টা আসলে অতোটা সহজ নয়।


মুহিত ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলো সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।

তুমি কি জেল থেকে বের হতে চাও নাকি আজীবন এখানেই পঁচে মরতে চাও সেটা তোমার ব্যাপার।

মনে হচ্ছে তুমি এখানেই কমফোর্ট ফিল করছো।থাকো তাহলে আমি উঠি।আমার শিকার আমি নিজেই ঠিক খুঁজে নেবো বলেই কলার ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো মুহিত।


আহিয়ান তোষামোদ এর সুরে বললো 

আরে মেজর এতো অল্পতেই রেগে গেলে কিভাবে হবে?

ভাবার সময় টাতো দিবে!

তুমি পাপার সাথে ঐরকম কিছুই করছে চাচ্ছ যা মোশতাকের সাথে করেছো তাইনা?

বলেই চোখ টিপলো আহিয়ান।


মুহিতের ভাবের কোনো পরিবর্তন ঘটলো না।

আহিয়ান আবার বলে উঠলো

তোমার দম আছে বলতে হবে মেজর।

আম প্রাউড অফ ইউ।

―আম রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ বলেই হাত তালি দিলো আহিয়ান।


আমি অবশ্যই তোমাকে হেল্প করবো,সে শুধু তোমার বাপ ভাইয়ের খুনি নয়,আমার সহজ সরল অবলা মায়ের খুনিও ওই কসাই টা বলেই রক্তচক্ষু নিয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে হাত পাঞ্চ করে মুহিতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

ডিল?

মুহিত আহিয়ানের পাঞ্চে হিট করে বললো

ডিল!


――――

নিস্তব্ধ কক্ষের মাঝে হঠাৎই ঘড়ির  টিকটিক শব্দে লাফিয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসলেন তন্দ্রাচ্ছন্ন আশরাফ চৌধুরী।বসে থাকতে থাকতে কখন যে দুই চোখ লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেন নি তিনি।

কতো দিন ধরে এভাবে বসে বসে সময় পার করছেন তার হিসেব অক্ষরে অক্ষরে  করে রেখেছেন তিনি।ওই মেজর কে এর থেকেও জাহান্নাম আজাব ভোগ করাবেন তিনি।


পরিবেশ শুনশান,কোনো মানুষের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।মাঝে মাঝে দূর রাস্তা থেকে বড় বড় ট্রাকের শব্দ ভেসে আসছে।আর দুই একটা নেড়ি কুকুরের মৃদু শব্দে ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে।

হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আশরাফ চৌধুরী।পা টিপে টিপে বের হলেন তার গোপন কুঠুরি থেকে।

তিন তলায় নিজের  শয়ন কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারলেই অর্ধেক কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে।শুধু অপেক্ষা আলমারি থেকে গোপন ফোনটা বের করার।


অন্ধকার হাতড়ে সিঁড়ির রেলিং বেয়ে বেয়ে দূতলা পর্যন্ত উঠলেন।হঠাৎই সিঁড়ি ঘরের  কর্নারে থাকা শোপিস রেকের সাথে বেঁধে রেক সমেত  পড়ে গেলেন।

নিমিষেই  ঝনঝন শব্দে আলোড়িত হয়ে গেলো নির্জন বাসটা।


ভয়ে সিঁড়ির চিপায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন আশরাফ চৌধুরী।মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি এখন হার্ট এট্যাক এসে যাবে।

বুকের ব্যাথায় দম বের হবার উপক্রম হলো তার।

কিছুক্ষন ওভাবেই শুয়ে থেকে  নিজেকে স্বাভাবিক করে মেজর মুহিতের গুষ্টির পিন্ডি চটকে উঠে দাঁড়ালেন।

আবার রেলিং ধরে ধরে ধীর পায়ে হাঁটা ধরলেন।

এবার সুযোগ পেলে চামড়া তুলে নেবেন তিনি ওই মেজরের।


হাতড়ে হাতড়ে নিজের কক্ষের সামনে এসে দেখলেন দরজা খোলা।

খোলা দরজা দেখে অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকালেন।পরে মুহূর্তেই মনে পড়লো মানুষ সুযোগ বুঝে তার বাড়িতে চুরির অভিযান ও চালায় মানুষ।আমাকে তো খুঁজতে আসে না,আসে কোথা থেকে কি চুরি করা যাবে সেটা দেখতে।

দামি দামি সব নিয়ে যাচ্ছে এক এক করে।যেনো দান বাক্স খুলে বসেছি।

তাচ্ছিল্য হাসলেন আশরাফ চৌধুরী।

সালা সবাই চোর দোষ খালি আমার একার।

সকল ভাবনা ফেলে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন।যতো যাই হোকনা কেনো অতো সহজে তিনি ওই হাঁটুর বয়সী মেজরের হাতে ধরা দিবেন না।


বিনা শব্দে রুমে প্রবেশ করে আলমারি খুলে বের করলেন নিজের গোপন ফোন।

সুইচ অন করে ডায়াল করলেন কাঙ্খিত নম্বর।

একবার রিং হয়ে কেটে গেলো।

রাগে ঠোঁট কামড়ে চোখ উল্টালেন আশরাফ চৌধুরী।

বিশ্রী গালাগাল দিয়ে আবার ফোন কানে তুললেন।

রিং হতে হতে কেটে যাবে এমন মুহূর্তে ফোনটি রিসিভ করলো ওপাশের ব্যাক্তি।

খুশিতে ঠোঁট গলিয়ে বেরিয়ে এলো দুপাটি চকচকে দাঁত।

―সোয়াদদী (হ্যালো)

―নি আহমেদ (আমি আহমেদ)

―ছুঁওয়াই ডুওয়াই (আমাকে সাহায্য করো)


ওপাশের ব্যাক্তির কথায় প্রশস্ত হলো আশরাফ চৌধুরীর হাসি।আরো কিছু কথা বলে ফোন কেটে দিয়ে আবার গুপ্ত কুঠুরির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।


রাত টা কোনো ভাবে কাটলেই হলো।মেজর মুহিত তুই আমার ছায়ার ও কোনো খুঁজ পাবি না।বলেই হো হো করে হেসে উঠলো।


*******

―তুমি কি বলছো মুহিত এসব?

তোমার মাথা ঠিক আছে?

এই কাজ আমি কিভাবে করবো?


―স্যার আমি আজ পর্যন্ত আপনার কাছে কোনো দিন সাহায্য চাইনি।প্লিজ স্যার আমাকে এই হেল্প টুকু করুন।


ছেলেটা দাগী আসামি মুহিত তোমাকে এটা বুঝতে হবে!


কেউ যদি তার ভুল বুঝতে পেরে ভালো পথে ফিরে আসতে চায় তাহলে তাকে সেই সুযোগ দেয়া উচিত স্যার।


যেখানে সৃষ্টিকর্তা আমাদের এতো এতো ভুল ক্ষমা করে তওবা করে তার কাছে ফিরে আসার সুযোগ দেয়,সেখানে আমরা তো নগন্য মানুষ স্যার।


মুহিত সবই বুঝতে পারছি তোমার কথা।কিন্তু কেউ যদি জানতে পারে আর্মি জেনারেল স্বয়ং এর সাথে জড়িত আছে আমার উপর কেমন ঝড় ঝাপটা আসবে তুমি বুঝতে পারছো?


স্যার আপনি সেসব কিছুই ভাববেন না।আমার টিম নিয়ে ঠিক আমি সব হ্যান্ডেল করবো।আপনি শুধু  পুলিশ সুপার কে ম্যানেজ করবেন।

প্লিজ স্যার।


আর্মি জেনারেল মুহিতের পিঠ চাপড়ে মাথা নিচু করে প্রস্থান নিলেন।

মুহিত প্রশস্ত হেসে বলে উঠলো 

থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।


―――――

আজকে আহিয়ানের শুনানি।তার মেন্টাল হেলথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আদালতে নেয়া হবে।তারিখের পর তারিখ বেড়েই যাচ্ছে কিন্তু আহিয়ানের সুস্থ হবার কোনো নাম নেই।

ডাক্তাররাও সমস্যাটা কোথায় সেটা ধরতে পারছেন না।


ক্রিমিনাল ভ্যানে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আহিয়ান কে তোলা হলো।সাথে দুটো কনস্টেবল।

গাড়ি ছুটে চলেছে হসপিটাল এর দিকে।

সামনে পুলিশের ডিউটিরত এস আই এর গাড়ি মাঝখানে আহিয়ানের গাড়ি,পিছনে মটর সাইকেল এ দুজন কালো পোশাকে আবৃত কারী ব্যাক্তি।


গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎ ই নির্জন একটি রাস্তায় এসে ব্রেক কষলো।

সামনে কেউ তুমুল মারামারি লাগিয়েছে রাস্তা বন্ধ করে।

দুই পাশ থেকেই রাস্তা বন্ধ করেছে ছেলে গুলো।

কি নিয়ে তাদের মারামারি এটাই কেউ বুঝতে পারছে না।

এস আই কনস্টেবল দুটোকে নির্দেশ দিলেন গাড়ি থেকে নামতে।


ছেলে গুলো নিজেদের গাড়ি গুলো রাস্তায় এমন ভাবে পার্কিং করেছে কোনো পাশ থেকেই অন্য গাড়ি গুলো ঢুকতে পারছে না।।


কনস্টেবল নামতেই কালো পোশাকের লোক গুলো পুলিশ ভ্যান এর সাটার এর হ্যাজবল খুলে সুনিপুণ কৌশলে  আহিয়ান কে বের করে তাদের বাইকে বসালো।

উল্টো দিকের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে বাইক জোরে টান দিয়ে ধুলো উড়িয়ে নিমিষেই হারিয়ে গেল অজানা গন্তব্যে।


কিছুক্ষণ বাদে মারামারি থামিয়ে কনস্টেবল দুটো পুলিশ ভ্যানে এসেই চোখ বড় বড় করে ফেললো।

এটা কিভাবে সম্ভব।

তারা তো আহিয়ান কে হ্যান্ডকাফ সমেত গাড়ির সিটের সাথে শিকল দিয়ে তালা দিয়ে গেছিলো।

নিমিষেই খবর পৌঁছে গেলো উপর মহল পর্যন্ত।

এস আই দৌড়ে এসে পড়ে থাকা হ্যান্ডকাফ দেখে  বলে উঠলেন

―ওহ শীট।


শো কজ কি করবেন সেটা ভেবেই ঘাম ছুটে গেলো প্রত্যেকের।


মানুষ তো অবশ্যই প্রশাসনের অক্ষমতার দিকে আঙ্গুল তুলবে।

বিষয়টা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো হয়ে গেলো।

দ্রুত মর্গ থেকে এক্সিডেন্ট এ মারা যাওয়া চেহারা বিকৃত বেনামি একটি লাশ নিয়ে মিডিয়া ডেকে  পুলিশ সুপার জানিয়ে দিলেন


আদালতে নেবার পথে গাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে আহিয়ান।

একদিকে পুলিশের ধাওয়া অন্যদিকে ব্যাস্ত রাস্তা ।

হঠাৎই সিলিন্ডার ভর্তি একটা ট্রাক এসে আহিয়ান কে পিষে দেয়।

সাথে সাথেই স্পট ডেট হয়ে যায় আহিয়ানের।


কু কথা বাতাসে ছড়ায় বেশি।

ঠিক তেমন ভাবেই নিমিষের মধ্যেই আহিয়ানের এক্সিডেন্ট করে মৃত্যুর খবর পুরো শহর ছড়িয়ে গেলো।

কেউ কেউ খুব খুশি হলো আবার কেউ কেউ দুঃখ পেলো।


――――

পেরিয়ে গেছে দুটো দিন।আহিয়ানের সেই জাহাজে আহিয়ান কে তুলে দিতে এসেছে মুহিত আর মেজর আদ্রিয়ান।

মুহিত কে জড়িয়ে ধরে আহিয়ান বলে উঠলো

―যেই উপহার তুমি আমাকে দিয়েছো মেজর এর এহসান একদিন ঠিক চুকাবো ব্রো।

বলেই চোখ মুছে দ্রুত জাহাজে উঠে গেলো।

মুহূর্তেই ভো ভো শব্দ করে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে পতেঙ্গা বন্দরের ছোট ছোট  ঢেউ চিড়ে ধীরে ধীরে চলতে লাগলো ডেড সৌল।

এর পর স্পিড বাড়তে থাকলো।ধীরে তা মিলিয়ে গেলো সমুদ্রের ঘোর অন্ধকারে।


আহিয়ান যাবার আগে মুহিত কে অনেক ক্লু দিয়ে গেছে।সেই হিসেবেই মুহিত তার পরবর্তী কাজ শুরু করবে।


রাতটা কোনো ভাবে কাটাবে তারা এখানে।সকালে নোভোএয়ারে তাদের ডমেস্টিক ফ্লাইট আছে।


★★★

চট্রগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দর এ এসে পৌঁছালো মুহিত আর আদ্রিয়ান।

ইমারজেন্সি টিকিট কাটা আছে তাদের।

বিমানবন্দরে ঢুকতেই এক বিদেশি পর্যটক এর সাথে ধাক্কা খায় আহিয়ান।পর্যটক তার আপন ভাষায় কিছু কথা বলে উঠে।

আহিয়ান ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে দৌড়ে আসে পর্যটকের গাইড।

সরি স্যার,সে থাইল্যান্ডের নাগরিক।এখানে ঘুরতে এসেছে।তারা ইংরেজি বলতে পারেনা।

মুহিত আর আদ্রিয়ান ভদ্রতাসূচক আরো কিছু আলাপ করে ডমেস্টিটিক এরিয়াতে এসে নিজেদের টিকিটের সব কিছু ঠিক করে বিমানে উঠে বসে।


মুহিতের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কেনো ওই বিল্ডিং এ বার বার  গিয়েও টাইলস গুলো চেক করে দেখলো না।কেনো তার মাথায় এই বুদ্ধি আগে এলো না।

বিমান ছাড়বে সেই অনাউন্স বেজে উঠলো।

সিট বেল্ট বেঁধে একটা ম্যাগাজিন হাতে নিলো মুহিত।

অল্প সময়ের জার্নি।

একটু পরেই প্লেন ল্যান্ড করবে।

এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই সে আদ্রিয়ান কে নিয়ে চৌধুরী ম্যানশন এ যাবে।


*****

সকল ঝামেলা পেরিয়ে এক ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগলো মুহিত আর আদ্রিয়ান এর এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে।

ঢাকা বিমানবন্দরের পার্কিং এরিয়াতে আসতেই সৌম্যের দেখা পাওয়া গেলো।গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।

তাদেরকে দেখেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।

গাড়িতে উঠে বসতেই মুহিত বলে উঠলো আশরাফ চৌধুরীর বাড়িতে চলো ক্যাপ্টেন।


রাস্তায় জ্যাম ঠেলে আসতে আসতে চল্লিশ মিনিট সময় লাগলো চৌধুরী ম্যানশনে পৌঁছাতে।

গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করলো তিনজনে।

গ্রাউন্ড ফ্লোরে দক্ষিণ পাশের প্রত্যেকটি টাইলসে হাত দিয়ে বাড়ি দিতে দিতে এক জায়গায় গিয়ে ফাঁপা মনে হলো।

পাশেই একটা টাইলস এ ছোট হ্যান্ডেল এর মতো দেখা গেলো।

সেটা ধরে টান দিতেই কূপের মুখের মতো গর্ত দেখা গেলো সাথে স্টিলের মই যা নিচের ওয়ালের সাথে ফিটিং করা।

মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে নেমে পড়লো তিন জনই।


ভেতরে ঢুকতেই তাদের চোখ ছানাবড়া।

ঝকঝকে পরিপাটি গুছানো  কক্ষ।দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে কেউ অবস্থান করছে নিয়মিত।

প্যাকেট জাত খাবারের খোসা ছড়িয়ে আছে সর্বত্র।

তন্ন তন্ন করে সারা কক্ষ খুঁজেও আশরাফ চৌধুরী কে পাওয়া গেলো না।

দৌড়ে উপরে উঠলো তিন জনেই।

চার তলা থেকে চারটি মিনি রেকর্ডার ডিভাইস বের করে আনলো মুহিত।

সেগুলোর মেমরি খুলে প্রত্যেকেই নিজেদের ফোনে লাগালো।


প্রথম টা থেকে কোনো সাউন্ড পাওয়া গেলো না।দ্বিতীয় টা থেকে ঝনঝন শব্দে তারা সজাগ হলো।

আর কোনো শব্দ নেই সেটাতে।


তৃতীয় টা থেকে অনেকক্ষন বাদে অদ্ভুত কিছু ভাষা শুনতে পাওয়া গেলো।

ভ্রু কুঁচকে এলো প্রত্যেকের।

আদ্রিয়ান বলে উঠলো

কমরেড ভাষা গুলো খুব পরিচিত লাগছে।

মাথায় জোর দিতেই  মনে পড়লো কোথায় শুনেছে সেই ভাষা।


সেই থাইল্যান্ডের পর্যটকের কাছে।


রেকর্ডেড কথা গুলো গুগল ট্রান্সলেট করে অর্থ বুঝতেই মুহিতের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো।

সজোরে দেয়ালে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো।


মুহূর্তেই বাঁকা হাসলো মুহিত।

চলুন মেজর আদ্রিয়ান থাইল্যান্ড যাওয়া যাক।


চলবে।

0 Comments:

Post a Comment