#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ২২
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
আকাশে অর্ধচন্দ্র বিরাজমান, দক্ষিণা হাওয়া বইছে। দূরের ঝোপে দেখা মিলছে জোনাকির জ্বলানেভার কুচকাওয়াজ। বারান্দায় হাসনা হেনার ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। সেখানে দোলনায় বসে হুরিজিয়ান ফিসফিস করে কথা বলছে মেহমেদের সঙ্গে। ঘড়িতে রাত দুইটা ছুই ছুই। হুরিজিয়ানের কণ্ঠে অভিমানের ঝড় বইছে। মেহমেদ তার শ্রেয়সীর অভিমান ভাঙাতে
ব্যস্ত।
"এখনো রেগে আছো "
"হ্যা"
"এই বউ,আপনি বলে আর ডেকো না
খুব কষ্ট পাচ্ছি"
"তুমি বলা আর সম্ভব হচ্ছে না"
"তাই"
"হুম"
"গিফটটা দেখেছিলে।"
"নাহ"
"খুলে দেখো"
"ঠিক আছে"
অতঃপর হুর গিয়ে গিফট খুলে দেখল,অতঃপর পুলকিত মনে অনায়সে বলে উঠল মেহমেদকে, খুব সুন্দর হয়েছে মেহমেদ, এটাতো রূপার। ওয়েট এমন একটানূপুর তো আমি অনলাইনে দেখেছিলাম!
"হুম তোমার আইডিতে লগইন করেছিলাম তখন দেখেছি। তারপর গিয়ে অর্ডার
দিয়ে বানিয়েছি। ভাবলাম তুমি যখন আমায় এতো ভালোবাসো, তার কাছে এই সামান্য গিফিট কিছুই না। হুরিজিয়ান স্বশব্দে হেসে উঠল। তারপর মেহমেদ এক সেকেন্ডও ওয়েট করলে না, ভিডিও কলের আইকনে চাপ দিলো।হুর কল একসেপ্ট করতেই লজ্জায় নিচু তাকালো হুরিজিয়ান। এই লজ্জাটাই তো মেহমেদ খুব মিস করে। মেহমেদ মুচকি হেসে বলে ওঠে নেশাক্ত কন্ঠে, বউ একটু তাকাও, আমার নুপুরটা পড়ে দেখাবে না? হুরের
ধমনী কেপে ওঠে।সে বলে ওঠে,
আমি একদম তাকাবো না, এই মূহুর্তে এমন বায়না মেটাতে পারবো না।
মেহমেদ হাসে, প্রতিউত্তরে বলে, কাছে থাকলে হয়তো নিজ দায়িত্বেই মেটাতাম।
কথাটা শুনে লজ্জায় শিরশিরিয়ে উঠল হুরের তনু।
মেহমেদের বুঝতে বাকি রইল না,হুর ভীষণ লজ্জা পেয়েছে। সে মোবাইলে হুরিজিয়ানের উদ্দেশ্যে আরো দুটো চুমু খেলো তার পর বলে উঠল," আশাকরি বউয়ের অভিমান কমেছে, তাই চাইবো সকালে যেন নুপুর পড়ে ছবি তুলে সেন্ড করা হয়। এখন রাখছি। গুড নাইট।"
লাইন কেটে গেল।তবে হুরিজিয়ান এখনও স্বাভাবিক হলো না, একটা কথাই হুর ভেবে পায় না । এই লোকের মাঝে কি এমন আছে
যে, সে রাগ-অভিমান করে দূরে সরে থাকতে পারে না।
লজ্জায় এখনও শির ধারা কেঁপে উঠছে হুরের। মেহমেদের সাথে ভবিষ্যৎ যাপনের কথা,
ভাবতেই হুর নিজেকেই নিজে বলে ওঠে, ছিঃ হুর তুই কত ডার্টি মাইন্ডের।
অতঃপর হুব ঘুমিয়ে গেল, নিশিরাতের আধারের সাথে, যে আধার মিশে আছে মেহমেদের সর্ব অঙ্গ জুড়ে। সে আধারে মেহমেদের ঘ্রাণ খুজে পায় হুর।
______
মাঝে দুদিন কেটে গিয়েছে। মেহমেদ কদিনের জন্য এসেে হুর ঠিক জানে না। মাঝে ভার্সিটিতে একদিনের জন্য দেখা পেয়েছিল মেহমেদের। তাও তন্ময় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। সেদিনই হুর জানতে পেরেছে তন্ময় ভাই মেহমেদের ফ্রেন্ড। আর তন্ময়ের বাবা তার চাচা হয়। তাই তো হুরিজিয়ান আজ অংক মেলাতে পেরেছে। তার এতো খোজখবর
মেহমেদ তন্ময়ের কাজ থেকেই নিতো। তবে বেশি সময় থাকে নি।
আজ সকালে মেহমেদের সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু তাও সাময়িক সময়ের জন্য। এইতো কিছুক্ষণ আগে হুরিজিয়ান বাসা থেকে বের হলো। ধীরে ধীরে হাটতে রইল রাস্তায়। সোসাইটির রাস্তার মোড় ঘুড়তেই কোথা থেকে যেনো এসে উদয় হলো মেহমেদ, মুখের
হ্যালমেট'টা খুলে ইশারা করল হুরকে। হুর চারপাশ অবলোকন করে দেখলো পরিচিত লোক জন আছে কিনা। না নেই। তারপর মেহমেদের পিছু উঠে বসল। বাইক সোসাইটি গেট থেকে বের হয়েই জালেশ্বরের
রাস্তা ধরে মেইন রাস্তার রেডিও কলোনির ইউ টার্ন ঘুরলো। মেহমেদের ইউটার্ন ঘুরতেই ভয় পেয়ে গেল হুরিজিয়ান । বাইক ঢাকার পথে ছুটছে। তাহলে তারা যাচ্ছে কই। অতঃপর ভয়ার্ত কন্ঠে মেহমেদ কে শুধায় হরিজিয়ান,
মেহমেদ আমরা কোথায় যাচ্ছি?
হুরের ভয়ার্ত কণ্ঠ শুনে মেহমেদ হাসে এবং বলে ওঠে, বিয়ে করতে যাচ্ছি। কথাটা যেন
মাথার উপর দিয়ে গেল হুরের। মেহমেদের কখন কি হয় হুরিজিয়ান কিছু বুঝতে পারে না, হুটহাট তুলে নিয়ে নিয়ে হুরকে ভয় দেখায়।
"আজ আমার পরিক্ষা হুর, খুব ভয় করছে,খুব অস্থির লাগছে, অস্থিরতা কাটাতে পারছি না, তাই তোমায় নিয়ে যাচ্ছি। তোমায় দেখলেও অস্থিরতা কাটে আমার। আমি যতক্ষণ না বের হই,তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে।"
হুর শান্ত গলায় জবাব দেয়, বাইকের চলনশীল গতিতে কথাটা যেন থেমে থেকেই শোনা গেল, আগে বললে তোমার জন্য আমি কিছু বানিয়ে নিয়ে আসতাম। বাসা থেকে খেয়ে বের হয়েছ ?
"হুম "
কথা বলতে বলতে হুর আর মেহমেদ পৌঁছালো পরীক্ষার ভেন্যুতে। এখনো গেট খুলে
নি। রাস্তার পাশের যাত্রী চাউনিতে বসে আছে মেহমেদ হুর। মেহমেদ পলকহীনভাবে তাকিয়েই আছে হুরের পানে । হুরের কেন জানি লজ্জা কাজ করছে। হুর বিরক্ত হয়েই মেহমেদের কপালে আলতো ধাক্কা দিয়ে শুধায়, কি সমস্যা ? তাকিয়ে আছো কেন ?
" দেখছি তোমায়, মন ভরে দেখছি, আমার বউটা দিন দিন অনেক সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। আর পারছিনা নিজেকে সামলাতে। ভাবছি আজই তোমার বিয়ে করে ফেলবো। তারপর তোমার বাপ আবার, আমাদের বিয়ে দিবে। তার
পর আ......আর কথা শেষ করতে পারল না মেহমেদ।
হুরিজিয়ান মেহমেদের ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলল, চুপ একদম, উম্মাদ কোথাকার।
হুরের বক্তব্য শেষ হতেই এরমধ্যে দেখা মিলল, তন্ময়ের সাথে। তার মানে তন্ময় ভাই
ও পরীক্ষা দিবে। কিচ্ছুক্ষণ বাদেই মেহমেদ হুরকে বিদায় জানিয়ে ঢুকল পরীক্ষা দিতে। অতঃপর হুরিজিয়ান বসে বসে সময়
গুনতে লাগলো। তারও কেমন যেনো ভয় করছে। এ যেন জীবনের মোড় ঘুড়ানো পরীক্ষা। আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কোনো পথ দেখছে না হুর। এর মাঝেই হুরের ফোন কল বেজে উঠল, স্ক্রিনে ভাসমান তানজিলার ফোন কল। হুর কল রিসিভ করতেই শোনা গেল তানজিলার মুখে এক অকথ্য ভাষার গালির ছড়া, গালি শুনে হুরিজিয়ান হাসে,
" হ্যাঁরে তানজিলা।
তুই তো ভালো ছিলি। তোর মতো ভালো মেয়েটারে গালি শিখিয়ে খারাপ বানালাম আমি, এখন দেখছি তুই আমার চেয়েও বেশি খারাপ বেরোলি "।
তানজিলা বিরক্ত নিয়ে আবারো বলল, মাঘি! তুই যে আজ ভার্সিটিতে যাবি না বলবি না? হুরিজিয়ান জবাব দিলো, মেহমেদ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসেছে তার সাথে পরীক্ষা দেওয়া জন্য । তুই আসলেও তো পারতি । তন্ময়ভাই ও তো আসছে।
"বলেছিলো আমি যাই নি। আচ্ছা, তাহলে
তুই থাক আমি রাখছি। অতঃপর দুই বান্ধবির
মাঝে কথার ইতি টানলো । আর হুর রইল
পরীক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষায়।
~চলবে।
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও। গল্পটা শেষ হলে তোমাদের কেমন লাগবে তাও জানাও)
0 Comments:
Post a Comment