#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ২৬
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
ডান্স স্টেপ করতে করতেই কখন যেন গান শেষ হলো, হুর মেহমেদ খেয়াল করলো না। সব কিছু যেনো নিঃস্তব্ধ হলো। শুধু শোনা গেলো দুই প্রেমিক-প্রেমিকার শ্বাস ফেলার শব্দ। হুর মেহমেদের বাহু ছেড়ে লজ্জায় মুখ লুকালো ওপাশ ফিরে। মেহমেদ মুচকি হাসলো।
অতঃপর হুর কয়েক সেকেন্ড বাদেই হাত ঘড়ির পানে চেয়েই মেহমেদকে শুধালো, " ২টা বেজেছে মেহমেদ আমার বাসায় যাওয়া দরকার, আম্মুকে বলেছি দুইটার মধ্যেই বাসায় ফিরবো” কথাটা কর্ণে পৌঁছাতেই যেন মেহমেদের চোখ অশান্ত হলো।
তারপর হুরিজিয়ানের নিকট এসে দাড়ায় মেহমেদ। তখন হুর নিজের সবকিছু গোছাচ্ছে বাড়িতে ফেরার জন্য। হুরের যথেষ্ট মনোযোগ পাওয়ার জন্য মেহমেদ তার বাহু আকড়ে তার দিকে ফিরায় এবং শুধায়,
" আর সহ্য হয় না হুর। চলো না আজই পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি, তারপর তোমার বাপ তোমার সাথে আবার আমার বিয়ে দিবে , তারপর..... "
মেহমেদ কথা শেষ করতে পারলো না। হুরিজিয়ান খিল খিল করে হেসেই বলে উঠল,
"ডায়লগটা চেঞ্জ কর বেইব, পুরনো হয়ে গেছে, ট্রাই নিউ সামথিং, বেইব।"
মেহমেদ একহাত দিয়ে চুল ব্রাশ করলো এবং বলল,
" আম সো সিরিয়াস, বেইব।"
হুরও হেসে বলে ওঠে, "আমিও খুব সিরিয়াস ম্যাজিস্ট্রেটের বউ হওয়ার জন্য। "
মেহমেদ চুলে হাত বুলিয়ে চুল ব্রাশ করে, হুরের উদ্দেশ্যে চোখ টিপুনি কেটে শুধায়, "আমি সত্যিই বলছি এবার আমি সত্যিই সিরিয়াস। যাও ১ মাসের মধ্যে তোমায় বিয়ে করে এই রুমে তোমায় নিয়ে বাসর করব। "
হুরিজিয়ান ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে জবাব দেয়, ছ্যাচড়া ব্যাটার শখ কত!
হুরিজিয়ান বেংচি কেটে মেহমেদের নিকট এসে মেহমেদের হাত টেনে বের হয় বাসা থেকে, অত:পর মেহমেদ অনিচ্ছা সত্যেও হুরকে রিকশায় উঠিয়ে দেয়। হুরের রিকশা চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত মেহমেদ চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে থাকে মেহমেদ। হুর যতক্ষন থাকে সবটা যেনো রঙিন মনে হয়, হুর চলে গেলেই সবটা এলোমেলো হয়ে যায়, এ কেমন অনূভুতি। মেহমেদের যেনো সর্বহারা পাগলের মতো লাগে।
_____
মাঝে সময় যেন খুব দ্রুতই যাচ্ছে। এক সপ্তাহ যেনো চোখের পলকে চলে গিয়েছে। মেহমেদের বাবা-মা আজই এসে পৌঁচেছে নিজ ঢাকার বাসায়। মুরাদকেও নিয়ে এসেছে । তবে মুরাদ আবার ১৫ দিনের জন্য চলে যাবে। তার পরিক্ষা চলছে। মেহমেদ এই সাতদিনে বাড়ির লুকই একদম চেঞ্জ করে ফেলেছে। বড় ছেলের দায়িত্ব সে ঠিক ঠাক পালন করতে সফল হয়েছে। মুনিবা বেগমের স্বপ্নের বাড়ি যেনো বাস্তবায়ন হয়েছে। সন্ধ্যার ফ্যামিলির আড্ডা
তেই যেন এক নতুন সুখবর বয়ে আনলো চৌধুরী
প্যালেসের। মেহমেদের ভাইবা দেওয়ার ডেটের মেসেজ
এসেছে। মুনিবা বেগমের কেমন যেন সব স্বপ্ন স্বপ্ন
লাগছে। মেহমেদ ও মুরাদ নিজ কক্ষে যেতেই মুনিবা বেগম ওয়াসীম চৌধুরীকে বললেন, ছেলের কাজটা সম্পন্ন হলেই আমরা হুর মায়ের বাসায় গিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিক একটা ডেট ফিক্স করে আসবো কি বলেন। ওয়াসীম চৌধুরী চায়ে চুমুক দিয়ে জবাব দিলেন, খারাপ সিদ্ধান্ত নেওনি। আমিও সেটাই ভেবেছিলাম। তারপর তাদের মাঝে মেহমেদের বিয়ের বিষয় বহু কথা চলতে থাকে। ওদিকে মেহমেদের
দুঃশ্চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। হুরকে কল করা মাত্রই রিসিভ করল হুর। মেহমেদের কন্ঠ শুনে হুর বুঝতে পারলো মেহমেদের খুব দুঃচিন্তা হচ্ছে।
"কি হয়েছে মেহমেদ”
" হুর কালকে ভাইবা, যাবে আমার সাথে?"
" ঠিক আছে যাবো দুঃশ্চিন্তা করো না, ইনশাল্লাহ ভালো কিছু হবে"
হুরের কথায় যেনো মেহমেদ মনে সাহস যোগায়,হুর আবার বলে ওঠে " তারাতারি ঘুমিয়ে যাও, আর একটুও টেনশন কর না,"
অতঃপর মেহমেদ কল কাটে। কালকের
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ঘুমানোর এক চেষ্টা করে মেহমেদ। কালকের দিনটাকে ঘিরেই তার ভবিষ্যতের
হাতছানি। কত চাওয়া, কত ইচ্ছে, কত স্বপ্ন সব
যেনো কালকের দিনকেই ঘিরে। মেহমেদ সকল চিন্তাকে
পাশে রেখে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে গেল।
_____
সকাল সকাল ফর্মাল ড্রেসেই হাজির হলো মেহমেদ
হুরের বাসার কিছু দূরে । সে হুরের জন্যই অপেক্ষা
করছে। কিছুক্ষন বাদেই দেখা মিলল হুরের। সে আজ
অন্য লুকে বের হয়েছে । তার পড়নে হালকা সুতির চেক
শাড়ি, চুল খোপা করা। হাতে ঘড়ি, কর্ণে টপ কানের
দুল। যেনো অন্য রকম হুর। মেহমেদ এই সামান্য সাজে
হুরের দিক থেকে চোখ ফিরাতে পারছে না। হুরিজিয়ান
কাছে আসতেই মেহমেদ বলল উঠল,
"দিলে তো মাথাটা নষ্ট করে এখন বাইক চালাবো নাকি তোমায় দেখবো।”
হুরিজিয়ান বেংচি কেটেই বলে, যওসব ডং। চলো চলো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর মেহমেদ বাইকে উঠে চাবি ঘুড়ায়। বাইক চলে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ঘণ্টা ২ বাদেই তারা পৌছায় লোক প্রসাশন গেইটে। হুরিজিয়ানের চোখে মেহমেদের চোখ নিবদ্ধ, চিন্তারা খেলা করছে। হুরিজিয়ান মেহমেদের গালে হাত বুলায়, একদম চিন্তা করবেন না আমার ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। আপনি ঠিকই ম্যাজিস্ট্রেট হবেন,আমি এখানেই দাড়িয়ে আছি। মেহমেদ হুরের হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়, তুমিই আমার মোটিভেশন, তোমায় দেখলে কেমন যেনো একটা পাওয়ার চলে আসে।হুর মেহমেদের পিঠে চাটি মারে, সিরিয়াস টাইমেও এই লোক ঠোঁটকাটা, বেহেলাজের মতো কথা বলছে। ছ্যাচড়া কোথাকার।
হুরিজিয়ান মুখের আলগোছে বলা গালি গুলো শুনে, মেহমেদ বলে ওঠে,আই লাইক ইট।
অতঃপর উড়ু চুমু খেয়েই সে প্রবেশ করে ভাইবা দিতে।
~চলবে।
0 Comments:
Post a Comment