জোড় করে বিয়ে
পর্বঃ৮
#আবির হাসান নিলয়
আজ সারাদিন জান্নাতের সাথে একবারো কথা
হয়নি।বলতে গেলে আমি ইচ্ছা করেই কথা বলিনি।
আর কিবা কথা বলবো।প্রতিটা কথাতেই অপমান
ছাড়া আর কিই বা পায়।জান্নাত কেনো যে বুঝতে
চাই না আমি ওকে কতোটুকু ভালোবাসি। মন খারাপ
তাই জয়কে ফোন দিয়ে বললাম দোস্ত মন খারাপ।
কিন্তু কপাল খারাপ হলে আর যা হয়।যা জীবনে
খায়নি সেটা খাইতে বলে।মানে সিগারেট মদ
নেশা জাতীয় কু-খাদ্য।
রাতে খাবার টেবিলে বসে আছি এমন সময় শশুর
আব্বা(জান্নাতের বাবা)বলল....
শশুরঃতা বাবা নিলয় তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে
তোমার কিছু একটা হয়েছে।
কথাটা শুনেই হতভম্ভ হয়ে গেলাম।কারণ সকাল থেকেই
মনটা খারাপ। জান্নাতের দিকে তাকিয়েও কিছুটা
অবাক হলাম।আমাকে যে এধরনের প্রশ্ন করা
হয়েছে আর অন্য দিকে সে কিছু বলা রেখে খেয়ে
যাচ্ছে।মন চাইছে না খাইয়ে মেরে ফেলি।
শশুরঃনিলয়!!কিছু হলে আমাদের বলতে পারো।
আমিঃজ্বি মানে...
জান্নাতঃআব্বু ওনার আজ পেট খারাপ তাই খেতে
পারবে না।তাই হয়তো এরকম করছে।
আল্লাহ গো এই মেয়ে কি বলে এসব।এখন মনে
হচ্ছে খাওয়াটাও হবে না।তুই আগে বাসায় চল
তারপরে তোকে দেখাচ্ছি।
শশুরঃআরে তাই বললে হয় নাকি।কিছুটা তো খাও
আমিঃজ্বি আমি খাচ্ছি।
(প্রচুর ক্ষুধা লাগছে।দুপুরেও সেরকম কিছু খায়নি।
তাই কিছু বলার আগে খেয়ে নেয়াই ভালো।অন্ততপক্ষে
ক্ষুধা তো কমবে।)
জান্নাতঃনা থাক।আপনার আর খেতে হবে না।পরে
আবার যদি পেট খারাপ হয়।
আমিঃঠিক আছে।
কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।যদি আবার অপমান
করে।আর আজকের রাতটা পার করতে পাড়লে
হয়।এ বাসায় আর থাকবো না।কেনো যে আসতে
চেয়েছিলাম।সব কয়েকটা মাথা মোটার দল।নতুন
জামাইকে না খাইয়ে রাখে।রুমের ভিতরে জান্নাত
আর ওর পরিবারকে একা একা বকা দিতে লাগলাম।
জান্নাতঃখবর দার। আমার পরিবারকে আর একটাও
বাজে কথা বলতে পারবেন না।
আমিঃবললে কি করবে শুনি।(ওর কাছে গিয়ে)
জান্নাতঃঅনেক কিছু করবো।
আমিঃ.....(জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর জান্নাত
আস্তে আস্তে পিছু হাটছে।এক সময় জান্নাত দেয়ালের
সাথে আটকা পরে যায়।তখন জান্নাতের দু'হাত
দেয়ালের সাথে লাগিয়ে বললাম)
আমিঃবলো কি করবে?
জান্নাতঃপ্লিজ হাত ছাড়ুন ব্যথা লাগছে।
আমিঃযদি না ছাড়ি। আমারই ভুল হয়েছে।
জান্নাতঃকি ভুল হয়েছে(কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে)
আমিঃস্বামীর অধিকার না খাটিয়ে।তবে এখন
আমি আমার ন্যায্য পাওনা বুঝে নিতে চাই।
জান্নাতঃআপনার পায়ে ধরি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে
দিন হাতে ব্যথা পাচ্ছি।
জান্নাতের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম।ওর
চোখে বৃষ্টি জমে আছে যা যখন তখন নামতে
পারে।আর জান্নাতের ওমন চেহারা আমার দেখতে
ভালো লাগে না।তাই ছেড়ে দিলাম।
জান্নাত আমাকে কোনো কিছু না বলেই বাইরে চলে
গেলো।কিছুক্ষণ পর রুমে আসলো।তবে এবার
জান্নাতের ব্যবহার দেখে অনেক বেশি মুগ্ধ হলাম।
কারণটা হলো আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।
জান্নাতঃখাবারটা খেয়ে নিন।
আমিঃজ্বি না।
জান্নাতঃকেনো আবার কি হলো।দেখুন আমি কিন্তু
এবার কিছু বলেনি।যে সকালের মতো বকা দিবেন।
আমিঃতারপরেও আমি খাবো না।তবে....!!
জান্নাতঃতবে কি?
আমিঃতুমি নিজের হাতে খাইয়ে দিলে খাইতে পারি।
জান্নাতঃহুহ ঢং দেখলে আর বাচিনা।আপনি
কি বাচ্চা যে খাইয়ে দিতে হবে।
আমিঃঠিক আছে আমি তাহলে খাবোই না।
জান্নাতঃআরে খাইয়ে দিচ্ছি তো।
আমিঃতাহলে বসে আছো কেনো?
তারপর জান্নাত আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
জীবনের আরেকটা চমৎকার জিনিস উপভোগ
করলাম।সেটা হলো বউয়ের হাতে খাবার খাওয়া।
স্ত্রী-র হাতে খাবার খেতে মজাই অন্যরকম। এ যেনো
আলাদা এক সুখ।এ নিয়ে আর কিছু বলতে পারবো
না।যদি একান্ত জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিয়ে নেন।
খাবার খাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে গেলাম।পরেরদিন
বিকেলে আমাকে আর জান্নাতকে বাসায় নিয়ে
গেলো।এতোক্ষণে হাফ ছেড়ে বাচলাম।না জানি
আবার কি বলে সবার সামনে অপমান করতো।
বাসায় এসে জান্নাত আব্বু আম্মুকে সালাম করলো।
জান্নাতঃআম্মু-আব্বু আপনাদের কিছু বলার ছিলো
আম্মুঃহ্যা মা বলো...
জান্নাতঃআসলে আম্মু নিলয় মানে আপনাদের ছেলে
আমাকে ভালোই বাসে না।
আমিঃঐ কি বলো এগুলা।
আব্বুঃতুমি চুপ কর। বউমা তুমি বলো।
জান্নাতঃগত দুদিন ইনি আমাকে একবারো নিজ
ইচ্ছা কোনো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায় নি।
আম্মুঃঠিক আছে মা। এখন আমি ওকে বলে দিবো
যেনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়।
আরো কিছু কথা বলে রুমে চলে এলাম।এভাবে
দেখতে দেখতে ২মাস কেটে গেলো।কিন্তু এর মাঝে
আমার আর জান্নাতের মাঝে কোনো কিছুই হয়ে
ওঠেনি। সবকিছুতেই শুধু ঝগড়া আর বকা।আজ
জান্নাতের রেজাল্ট দিবে।মনে মনে দোয়া করছি
যেনো জান্নাত ফেল করে।
জান্নাতঃআপনাকে আম্মু ডাকতেছে।
আমিঃঠিক আছে চলো।
তারপর আমি আর জান্নাত আম্মুর কাছে গেলাম।
আমিঃআম্মু, আব্বু কোথায়?
আম্মুঃতুই জানিস না। তোর আব্বু এ সময় কোথায় থাকে।
আমিঃওহ আব্বু তো এ সময় অফিসে থাকেন।কিন্তু
তোমাকে দেখে কিছুটা বিচলিত লাগছে।
আম্মুঃজান্নাতের রেজাল্ট দিছে।
আমিঃওহ এই ব্যাপার। নিশ্চয় ফেল করছে।তুমি
চিন্তা করো না আম্মু।ওকে দিয়ে কোনো কিছু হবে না।
(জান্নাতের মাথা একটু ধাক্কা দিয়ে)
আম্মুঃগাধা জান্নাত ৪.৯৫ পেয়েছে।
আল্লাহ আমি এসব কি শুনতেছি।আম্মু গো তুমি
আমারে কি বললা।এই মেয়ে তো এখন আমারে
পাগল করে ফেলবে।এমনিতেই মাথার ২তার কাটা।
এখন না জানি আমার কি খাবে।আল্লাহ আমাকে বাচাও।
জান্নাতঃকি হলো কথা বলছেন না কেনো?
আমিঃআমি রুমে যাবো।
আম্মুঃতুই অপেক্ষা কর।তোর জন্য পুরষ্কার আছে।
আমিঃকি পুরষ্কার আম্মু?
আম্মুঃঐ আগের মতো ১০বার!!
আমিঃনা আম্মু এটা হয় না।প্লিজ আমাকে মাফ করে
দাও।প্রমিজ আর কখনো এমন দোয়া বা কথা বলবো না।
আম্মুঃযেটা করতে বলছি সেটা কর।
আমিঃকিন্তু???
আম্মুঃকোনো কিন্তু না।তাড়াতাড়ি...
কি আর করা বউয়ের সামনে আমার ইজ্জত খেয়ে
দিচ্ছে।আর ১০বার মানে হলো কান ধরে ১০ বার
উঠবস করা।এটা আসলে ছোট বেলার থেকেই শাস্তি
পেয়ে আসছি।কিন্তু আজ বউয়ের সামনে।আল্লাহ
এই দুজনের বিচার করো।তোমার নাদান বান্দাটারে
একা পেয়ে অত্যাচার করছে।
শাস্তি শেষ হওয়ার পরে দেখলাম জান্নাত আর আম্মু
হাসাহাসি করছে।তাই জান্নাকে উদ্দেশ্য করে বললাম
তুমি আগে রুমে আসো তারপর তোমার হাসি বের করছি।
বলে রুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পর জান্নাত রুমে
আসলো।তবে অনেক খুশী হয়ে।জান্নাতকে এমন
হাসি খুশি দেখে মন চাইছে ওর নাক ফাটিয়ে দেয়।
বিছানায় বসে থাকা অবস্থায় জান্নাতকে বললাম।
আমিঃজান্নাত এদিকে আসো।
জান্নাত কোনো কিছু না বলেই আমার সামনে আসলো।
আমিঃএবার কান ধরো।
জান্নাতঃকিহহহহ
আমিঃকি নয় জ্বি।
জান্নাতঃআমি কান ধরতে পারবো না
আমিঃকি বললে?
জান্নাতঃআমি কান ধরতে পারবো না
এবার ইচ্ছা করেই জান্নাতের গলা টিপে ধরলাম।
দেখলাম জান্নাত কান্না করছে।পরক্ষণের জান্নাতের
গলার।দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছুটা লাল হয়ে
গেছে।কিন্তু আমি তো ওকে কষ্ট দিতে চাইনি।আমি
তো ওর সাথে শুধু মজা করছিলাম।জান্নাত সোফার
উপরে বসে কান্না করছে।এবার নিজেই নিজেকে
ধিক্কার দিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে।কি করছি।আমি
মজা করতে গিয়েও মেয়েটাকে কষ্ট দিলাম।
আমিঃজান্নাত আমি।আসলে তোমাকে কষ্ট দিতে
চাই নি।আমি শুধু মজা করতে চাইছিলাম।
(জান্নাতের সামনে বসে বললাম।)
জান্নাতঃ......নিশ্চুপ......
আমিঃজান্নাত প্লিজ কান্না করো না।
জান্নাতঃকি চান আপনি?(চিৎকার করে)
আমিঃজান্নাত তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো
জান্নাত........??
চলবে.......
0 Comments:
Post a Comment