জোড় করে বিয়ে
পর্ব:৭
#আবির হাসান নিলয়
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই কণ্ঠটা কেমন যেনো
গম্ভীর লাগছে।মনটা খারাপ করে বসে আছি।
এমন সময় জান্নাত রুমে এলো।
জান্নাতঃকি হলো বসে আছেন কেনো।যান ফ্রেস
হয়ে নিচে আসুন।সবাই অপেক্ষা করছে।
জান্নাতকে কোনো কথা না বলে বাথরুমে ফ্রেস
হতে চলে গেলাম।অন্যদিকে জান্নাতের কথা...
কি ব্যাপার নিলয় আমাকে কিছু বলল না কেনো।
আমি কি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করছি।কিন্তু
এখন তো কিছুই করিনি।তাহলে কিছু বলল না কেন।
পরক্ষণেই জান্নাতের মনে পড়লো।গত দুদিন যাবত
নিলয়ের সাথে কেমন ব্যাবহার করছে।কিন্তু নিলয়
তো আমাকে কিছুই বলে না।বরং সে নিজেই আমাকে
রাগানোর জন্য কথা বলে। যেনো আমি খুশী থাকি।
কিন্তু আমি ওর সাথে যা করছি সেটা কি ঠিক করছি।
না না এটা কখনো ঠিক হতে পারেনা।আমি কিছুদিন
পরেই নিলয়ের থেকে মাফ চেয়ে কাছে টেনে নিবো।
কিন্তু এতো সহজে আমাকে হার মানা চলবে না।
রুমের মধ্যে জান্নাত আনমনে একা একা কথা বলছে।
জান্নাতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করলাম।
আমিঃতুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
জান্নাতঃআপনার কণ্ঠটা এমন লাগছে কেনো?
আমিঃনা তেমন কিছু না।
জান্নাতঃআপনি বলবেন নাকি থাপ্পড় দিবো।
আমিঃএতো মারতে চাও কেনো।শুধু শুধু মারে।
এবার মারলে আমি কিন্তু কান্না করবো হুম!!!
জান্নাতঃযেটা বলছি সেটা বলেন।এতো কথা বলেন কেনো?
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে বললাম।
আমিঃআসলে গতরাতে ফ্লোরে ঘুমানোর জন্য মনে
হচ্ছে একটু ঠাণ্ডা লাগছে।তবে সেরে যাবে।
জান্নাতঃসেরে যাবে মানে?আর আমাকে বলতে
পারেননি। ফ্লোরে ঘুমালে আপনার সমস্যা হবে?
আমিঃবাসরঘরেই বলেছিলাম।হয়তো শোনো নি?
জান্নাতঃঠিক আছে আপনি বসে থাকেন।আমি
খাবার নিচে আসছি।
আমিঃবাব্বাহ এতো কেয়ার। স্বামী হিসাবে মেনে
নিলে নাকি এখোনি।
জান্নাতঃজ্বি না।আপনি এখন আমাদের বাসায় তাই
আপনার কিছু হলে আপনার আব্বু আম্মু আমাকে
ছেড়ে কথা বলবেন না।তাই কথাটা বললাম।
জান্নাত আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলো।
আমি ড্রেস পরে বিছানায় বসে আছি তখন আম্মু কল করলো।
আমিঃহ্যা আম্মু বলো।কেমন আছো?
আম্মুঃআমি ভালো আছি।কিন্তু তোর গলা কেমন
যেনো শোনাচ্ছে।
এই হলো মা জাতি।ছেলের কিছু হলেই জেনে যাবে।
সৃষ্টিকর্তা মনে হয় সকল মা-কে সন্তানদের মনের
কথা আর অবস্থা বোঝবার ক্ষমতা দিয়ে দিছেন।
এমন মা জাতিকে জানাই হাজার হাজার সালাম।
আম্মুঃকি হলো কথা বলছিস না কেনো?
আমিঃহ্যা আম্মু বলো।
আম্মুঃতোর কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেনো?
আমিঃআসলে আম্মু নতুন বাসাতো তাই হয়তো
ঠাণ্ডা লাগছে।তুমি চিন্তা করোনা। ঠিম হয়ে যাবে।
আম্মুঃঠিক আছে।ঔষধ খেয়ে নিস
আমিঃহুম আম্মু।
আম্মুঃএখন রাখছি পরে কথা হবে।
আমিঃঠিক আছে আম্মু।
আম্মুর সাথে কথা বলে ফোনটা বিছানাতে রাখতে
না রাখতেই জান্নাত প্রশ্ন করলো...
জান্নাতঃকে ফোন করেছিলো
আমিঃআরে তুমি।কখন এলে?
জান্নাতঃআমি যেটা প্রশ্ন করছি সেটা আগে বলেন?
আমিঃগার্লফ্রেন্ড ফোন করেছিলো।
জান্নাতঃতাহলে আম্মু বলছিলেন কাকে।হনুমান 😡
আমিঃজানার পরেও জিজ্ঞাস করো কেনো।
জান্নাতঃহয়েছে আর বলতে হবে না।এখন খাবারটা
খেয়ে এই ঔষধ টা খেয়ে নিন।আর হ্যা বিকেলে
আমরা ঘুরতে বেরোবো।
আমিঃঠিক আছে।
তারপর খাবার খাওয়ার পরে ঔষধটা খেয়ে নিলাম।
ভালো না লাগার জন্য আবার ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম
থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে। ঘুরতে বের হলাম।আমি জান্নাত
আর আমার একমাত্র শালিকা জিতু।জান্নাতের থেকে
জিতু হাজার গুনে ভালো।সালার বউটা কথায় কথায়
ঝারি আর বকা দেয়।আর শালিকা কতো সুন্দর
করে কথা বলে।যদি জান্নাতের যাইগায় জিতু থাকতো।কতো ভালোই না লাগতো।
জান্নাতঃমনে মনে বকা দিচ্ছেন?
আমিঃমা..মানে কাকে বকা দিবো?
জান্নাতঃতাহলে চুপচাপ আছেন কেনো?
জিতুঃকোথায় চুপচাপ আছে।দুলাভাই তো আমার
সাথে কথা বলছে।বরং তুমি নিজেই তো আমাদের
সাথে কথা বলছো না।
জান্নাতঃজিতু তুই থাপ্পড় চিনোস?
আমিঃজিতু তো ঠিকি বলছে।আর এসব বাদ দাও।
তারপর আরো কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরির পরে বাসায় মানে
শ্বশুর বাসায় চলে এলাম।রাতের খাওয়া দাওয়া
শেষ করে ঘুমানোর জন্য ফ্লোরে বিছানা পারছি।
এমন সময় জান্নাত রুমে এলো...
জান্নাতঃকি করছেন?
আমিঃএইতো বিছানা পারছি।আমার তো বিছানায়
ঘুমানোর কপাল নেই।
জান্নাতঃহুহ ঢং দেখলে আর বাচিনা।বিছানা পারতে
হবে না।আপনি এখন থেকে বিছানাতেই ঘুমাবেন।
আমিঃআর তুমি কোথায় ঘুমাবে?
জান্নাতঃআপনার সাথেই।
জান্নাতের কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি কিছুক্ষণের জন্য
মঙ্গল গ্রহে চলে এসেছি।মনডা চাইতাছে এখনি
লুঙি ড্যান্স দেয়।
জান্নাতঃএতো খুশী হওয়ার প্রয়োজন নেই।মাঝখানে
কোলবালিশ থাকবে।আর ভুলেও যদি আমার কাছে
আসেন।তাহলে আপনার খবর আছে।মনে থাকে জেনো।
আমিঃআরে কি যে বলো।আমি কি তোমাকে বিরক্তি
করতে পারি।দেখো তুমি নিজেই আমাকে ডিস্টার্ব করবে।
জান্নাতঃহয়েছে আর কথা না বলে ঘুমান।
জান্নাতের সাথে আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে যখন ঘুম ভাঙলো।অনুভব করলাম।আমার
বুকের উপর কিছু একটা আছে।চোখ খুলতেই
আমার চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা।জান্নাতের
মাথা সেটাও আবার আমার বুকের উপর।এ যেনো
রবার্ট ব্রুসের মতো আনন্দ লাগছে।মনে হচ্ছে আমি
অনেক বড় কিছু জয় করে নিয়েছি।যখন আমি
জান্নাতকে দেখতে ব্যস্ত ঠিক তখনি বার বার জান্নাতের
কিছু চুল এসে তার মুখে আছড়ে পড়ছে।যা আমার
কাছে অনেক বিরক্তিকর লাগছিলো।তাই চুলগুলো
সরিয়ে জান্নাতকে দেখতে লাগলাম।
এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর জান্নাতের ঘুম ভেঙে
যায়।বিষয়টা লক্ষ্য করে বললাম।
আমিঃগুড মর্নিং সোনা বউ।
জান্নাতঃগুড মর্নিং।
জান্নাতের এখনো হয়তো পুরোপুরি ঘুম ভাঙেনি।
ঘুম ভাঙলে হয়তো আমার চোদ্দ গুষ্টি উদ্দার করে
ফেলতো।কথাগুলো মনে মনে ভাবছি ওমনি শুরু
হলো...
জান্নাতঃআপনি? আপনার বুকের উপর আমার মাথা কেনো?
আমিঃসেটা তো তুমিই ভালো জানো। আমি তো
আমার লিমিটের মধ্যেই আছি।
জান্নাতঃবুঝতে পারছি আপনি ইচ্ছা করেই আমার
মাথাকে আপনার বুকের উপর রেখেছেন।
আমিঃদেখো জান্নাত তুমি যেটা ভাবছো সেটা কিন্তু না।
জান্নাতঃকি ভাবছি আমি হ্যা।যা বোঝার তা আমি বুঝে গেছি।
আমিঃচুপ একদকম চুপ।অনেক হয়েছে আর না।
কি ভাবো নিজেকে।তোমাকে আমি ভালোবাসি
সেটা আর কিভাবে বোঝবো হ্যা।মানছি আমি
তোমাকে বাধ্য করছি আমাকে বিয়ে করতে।কিন্তু
আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।ঠিক আছে।আজকের
পর থেকে তোমাকে আর কোনো প্রকার ডিস্টার্ব
করবো না।তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসও করবো না।হ্যাপি..
কথাগুলো অনেক কষ্ট করে বললাম।কিন্তু আমারই
কি বা করার আছে।কিছু না যেনেই খারাপ বলার
কোনো মানে আছে।জান্নাতের দিকে লক্ষ্য করলাম
দেখলাম মেয়েটা কান্না করছে।ওর চোখের জল
কেনো জানিনা আমার খারাপ লাগার মধ্যে একটা।
আর কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠতে যাবো তখন।
জান্নাতঃআমি আসলে ওমন ভাবে কিছু বলতে চাইনি।
কান্না করতে করতে কথাটি বলল।আমি আর কোনো
উত্তর না দিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।ফ্রেস হয়ে এসে
দেখি জান্নাত এখনো কান্না করছে।
আমিঃফ্রেস হয়ে নাও।
আমার কথটা শুনে কান্না থামিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
চলবে.........
বিঃদ্রঃভালো না লাগলে ইগনোর করুন।
0 Comments:
Post a Comment