গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান পর্ব ৮

 গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান


পর্বঃ৮


লেখকঃ নামহীন লেখক 

~

~

~

---- বাসায় চলে আসলাম। এসে একটু ফ্রেস হয়ে নিয়ে বসে বসে ভাবছি মিতু কিভাবে আমার সাথে পড়তে পারে বা কলেজে একই ক্লাসে ভর্তি হলো সেটা তো আমি আপুর কাছে জানতে চাইলেই সব জানতে পারবো।

---- একটুপর দেখলাম,,, আপু একটা বাজারভর্তি ব্যাগ হাতে নিয়ে বাসায় ফিরলেন। 

আপু আমাকে দেখে জানতে চাইলো,, ভাই কলেজ হতে কখন ফিরলি ?? 

এইতো আপু একটু আগে । ওহ আচ্ছা তাহলে তুই একটু বস আমি রান্নার কাজটা সেরে ফেলি। রান্না করে খেয়ে আবার আব্বুর জন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে।

----- আপু রান্না করছে আর আমি গিয়ে ওর আশপাশে ঘুড়ঘুড় করছি। যার জন্য মাসুদ ভাই আপু ও আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো আমি তার কথাই আপুর কাছে কিভাবে জানতে চাইবো?? 

---- বুজছিনা আপু যদি আবার বিষয়টা অন্যভাবে নিয়ে বসে। 

ভাই কিছু বলবি,,,,?? 

নাহ আপু তোর রান্না করা দেখবো তাই আরকি। আপুর কাছে জানতে চাইলাম নাহ। ভাবলাম অনুর কাছেই সব জেনে নিবো।

---- আপুকে রান্নার কাজে সাহায্য করলাম। রান্নার কাজ শেষ। হাত-মুখ ধুয়ে এসে আপু ও আমি খেতে বসেছি।

---- খাবারের থালা হাতে নিয়ে আপুর দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, আপু এই ১০ টা দিন কতই না সুখে ছিলো। আজ আমার জন্য আবার এসব খাবার খেতে বসেছে। ওকে নিজের স্বামীর ঘর ছাঁড়তে হয়েছে। 

---- কি হয়েছে ভাই ?? তখন থেকে তোকে দেখছি কেমন যেনো দেখাচ্ছে। 

আপু আমার জন্যই আজকে তোর এই অবস্থাটা হলো। আমার জন্যই আজকে তোকে বাসায় এসে এসব খাবার খেতে হচ্ছে ।

---- তোর জন্য কেন হবে ভাই। আমার ভাগ্য এসব লিখা ছিলো । তাই হয়েছে আর এই বাসায় যখন আমি এমনি বেড়াতে আসতাম তখন কি আমি এসব খাবার খেতাম নাহ বল,,?? উনার রাগ হয়েছে রাগটা কমলেই দেখবি আমাকে নিতে আসবেন।

---- ভাই তুই এসব ভাবিস নাহ খেয়ে নেতো। 

কোথায় আমি আপুকে শান্তনা দিবো তা নয় আপুই আমাকে উল্টো শান্তনা দিয়ে বসলো। 

---- খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আপু আব্বুর জন্য খাবার নিয়ে যাবে কি,, আমি বললাম আপু তুই সকাল থেকে কাজ করে বাজার করে বাসায় ফিরলি। রান্না করে আবার এখন আব্বুর কাছে খাবার নিয়ে যাবি,, বরং আমি আব্বুর কাছে খাবার নিয়ে যাচ্ছি তুই এখন ক্লান্ত একটু বিশ্রাম কর।

----- খাবার গুলো একটা ব্যাগে করে নিয়ে আমি রাস্তা দিয়ে আসছি। পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে বারবার হর্ণ বাজাচ্ছে আমি রাস্তার এক পাশে গিয়ে চলে যাওয়ার জায়গা করে দিচ্ছি না যেয়ে তবুও হর্ণ বাজিয়েই যাচ্ছে 

----- পিছনে ফিরে বলতে লাগলাম,, গাড়ি জাওয়ার মত তো যথেষ্ট জায়গা আছে তবুও পিছন পিছন এসে এমন হর্ণ বাজাচ্ছেন কেনও?? সমস্যা কী আপনার?? 

---- একটু খেয়াল করে দেখলাম আরে এটা তো অনু।

কি ব্যাপার আবির মাথা এত গরম যে,,,?? এমনিই একটু দুষ্টামি করছিলাম আর কী। 

--- ওহ বুজলাম। 

কোথায় যাচ্ছো আর ব্যাগে কী?? 

আব্বুর কাছে খাবার নিয়ে যাচ্ছি। ওহ এসো আমি এগিয়ে দিয়ে আসি (গাড়ির দরজা খুলে)

---- নাহ আমি হেঁটেই চলে যাবো। 


আরে আমি তো এইদিক দিয়েই যাবো আসো তো।

উঠে পড়লাম গাড়িতে। আচ্ছা আবির খাবার দেওয়ার পর তোমার কী ঐ খানে কোন কাজ আছে,,,?? 

---- নাহ কাজ তো নেই। তাহলে চলো না খাবার দিয়ে এসে আমরা একটু গাড়িতে করে ঘুরি৷ 

নাহ এসব কী বলো তুমি?? সবাই দেখলে কী বলবে?? 

---- কি বলবে,, আমরা তো বেস্টফেন্ড। আমরা একসাথে ঘুড়তে পারি না নাকি। 

আমি ভাবছি আমি আবার অনুর বেস্টফেন্ড হয়ে গেলাম কবে থেকে।

প্লিজ প্লিজ চলো নাহ। আমি ওর কথায় রাজি হয়ে গেলাম। 

--- আব্বুকে খাবার দিতে আমি ভিতরে গেলাম ও গাড়ি নিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকলো। খাবার দিয়ে আব্বুকে বলে ক্যাশ হতে কিছু টাকা নিয়ে আসলাম। কেননা টাকা লাগতেই পারে।

---- গাড়িতে এসে বসলাম। অনু আর আমি অনেক ক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম। ও বললো চলো এবার আমরা কিছু খাবো। এক দামি হোটেলের সামনে অনু গাড়ী দার করালো। 

অনু আমি না খেয়ে এসেছি৷ আজকে না খায়। অন্য একদিন খাবো নি।

--- মানুষ শুধু খেতেই কি খেতেই যাই নাকি,, 

তাহলে...?? 

চলো গিয়েই বুজবে। অনু আগে আগে আর আমি ওর পিছনে পিছনে গিয়ে হোটেলে ঢুকলাম। 

---- ও ওয়েটার কে ডেকে ওর্ডার করা শুরু করে দিলো। 

এতক্ষণে বুজলাম ও কেনও আমাকে লিফট দিলো ও হোটেলে নিয়ে আসালো তার কারণটা কী৷ আমাকে বললো তুমি কি খাবে। 

একটা কিছু ওর্ডার করে দেও । কফি হলেও চলবে। 

---- আচ্ছা অনু তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো। হুমমম বলো। 

আচ্ছা আমার জানা মতে মিতু তো ফেল করেছিলো ও কিভাবে আমাদের সাথেই পড়ছে??

---- কেন তুমি জানো না ,,,! মিতুর ict তে দুই মার্কের জন্য ফেল এসেছিলো পরে ও বোর্ড চ্যালেন্জ করেছিলো৷ কোন রকমে পাশ এসেছে আরকি৷

---- ওহ আচ্ছা। 

আবির আমরা তো বেস্টফেন্ড সো আমরা তুই করে বললে তোমার কী কোন সমস্যা হবে?? 

আরে নাহ সমস্যা কেন হবে। 

---- থ্যাংকু। নাও এবার খাওয়া শুরু করো (সব খাবার আমার দিকে ঠেলে দিয়ে) 

মানে,, এসব তো তুমি খাবে বলে ওর্ডার করলে?? 

আরে নাহ এগুলো তোমার জন্য ওর্ডার করেছি ,, আর তুমি যা খেতে চেয়েছো আমি তা খাবো । 

---- আমি কিছুই বুজলাম নাহ অনু এমন কেন করলো। খাওয়া শুরু করলাম৷ এক হাত দিয়ে খাচ্ছি আর অন্য হাত পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে টাকাগুলো নাঁড়ছি আর ভাবছি,,,রক্ষা করো প্রভু না জানি আজকে কত অপমান হতে হবে। আমার যেনো খাবার গুলো ভিতরে যাচ্ছে নাহ গলায় গিয়ে আটকে যাচ্ছে। খাবার নয় মনে হচ্ছে অপমান গিলে খাচ্ছি।

---- কি হলো খাও। আসলে অনু তুমিও যদি আমার সাথে খেতে তাহলে ভালো হতো আরকি। অনুও আমার সাথে খাওয়া শুরু করলো৷

----- খাওয়া শেষ। ওয়েটার বিল দিলো ১৬০০ টাকা বিল হয়েছে। আমি জানি আমার পকেটে মাত্র ৫০০ টাকা রয়েছে। বাকি ১১০০ টাকা কোথা হতে আসবে। বিলের কাগজ নিয়ে আমি যেন ঘামতে শুরু করে দিলাম টেনশনে।

---- দেখি কত টাকা বিল এসেছে৷ মাত্র ১৬০০ টাকা । এই নিন বিল। (ব্যাগ হতে বার করে দিয়ে) 

অনু থাক না আমিই বিল দিয়ে দিচ্ছি। (টাকা নাই তবুও বললাম আরকি)

---- অনু আমাকে বাসা অবদি নামিয়ে দিয়ে কাল কলেজ যাবো কিনা জানতে চেয়ে চলে গেলো। আমি বাসায় এসে দেখছি আপু শুয়ে আছে। আপুর মুখের দিকে খেয়াল করতেই লক্ষ্য করলাম ওর চোখের নিচ দিয়ে কালচে দাগ পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। 

---- একটু পর এক ব্যক্তি এসে একটা লেটার দিয়ে গেলো। আমি খুলে পড়তেই যা পড়লাম সত্যিই আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি নাহ। ফেরেশতার মতো একটা মানুষ এটা করতে পারে কীভাবে আমার মাথায় ঢুকছে নাহ। আমি চেয়ারে বসে পড়লাম।

---- চিঠি খুলে পড়ে দেখি এটা আমার আপুর ডিভোর্স লেটার। মাসুদ ভাই আপুকে ডিভোর্স দিয়ে একটা সই চেয়েছেন। আমার মাথাটা যেনো ঘুরতে লাগলো সবার আগে আমার  গল্প পড়তে চাইলে  "নীল ক্যাফের ভালোবাসা" পেজে পাবেন।


---- আপু ঘুম থেকে উঠলে আমি ভাই হিসাবে কিভাবে এই কাগজ খানা ওকে ধরিয়ে দিয়ে বলবো,, আপু ভাই তোকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন।

---- আপু সারাজীবন কত কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছে। কত কষ্টই না সহ্য করেছে। কিন্তু আজ কী ও এই কষ্টটা সহ্য করতে পারবে,,!! পারবি কী যে মানুষটার জন্য নিজে জীবন দিতে বসেছিলো ঐ মানুষটাও কত কষ্ট করে তাকে ভালো করেছে এসব ভুলে থাকতে। 

---- আমি চিঠিটা টেবিলে রেখে। মুখে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কান্না করতে শুরু করে দিলাম। এই কি হয়ে গেলো। আমার জন্য আপুর এমন মধুর সংসার টা আজ ভেঙ্গে গেলো। 

---- একটুপর 

ভাই তোর কি হয়েছে,,?? তুই এভাবে বসে থেকে কাঁদচিস কেনো?? 

আমি গিয়ে আপুর পা চেঁপে ধরতে গেলে ও আমাকে আঁটকে দিয়ে বললো আরে এসব কি করচিস কি হয়েছে বল। 

---- আপুর হাত চেপে ধরে ক্ষমা চাইলাম। আপু আমাকে মাফ করে প্লিজ আজ আমার জন্য তোর,,, 

ভাই কি হয়েছে বল,,। 

আমি একটু টেবিলের দিকে তাকালাম। আপু বুজতে পেরে ডিভোর্স লেটারটি পড়তে শুরু করে দিলো।

---- আমি মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম। একটুপর আপুর হাত হতে ডিভোর্স লেটারটি মাটিতে পড়ে গেলো। ও বিছানায় চুপ করে বসে পড়লো। আমি গিয়ে ওর পা দুটো জরিয়ে ধরলাম। 

---- আপু আমাকে মাফ করে দে। আজ আমার জন্য.....

আমার মাথাটি আপু জরিয়ে ধরে বললো,, 

ভাই যে মানুষটার সাথে সারাজীবন কাঁটাবো ভেবে হাতটা ধরেছিলাম আজ সে আমার হাতটা এভাবে ছেঁড়ে দিবে ভাবি নাই। 

এভাবে আমাকে পর করে দিলো ভাই।

---- কি বলবো কি শান্তনা দিবো কোন ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি নাহ। শুধু চোখের পানিই বয়ে যেতে থাকলো। 

---- ভাই তুই নিজেকে দোষ দিস নাহ। আমার ভাগ্যর লিখন সব। আপুর হাত ধরে বললাম,, আপু চল আমাদের মাসুদ ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলা উচিৎ।

-----ডিভোর্স লেটারটি হাতে নিয়ে আমি আর আপু মাসুদ ভাইয়ার বাসায় ছুটে গেলাম..


আমার গল্প যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অবশ্যই আমার আইডিটা ফলো দিয়ে রাখেন প্লিজ।


..

..

.. 

চলবে?? 

..

(গল্পটি আপনাদের যদি ভালোলাগে তাহলে  কমেন্ট করে জানিয়ে 

দিবেন)

0 Comments:

Post a Comment