গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ২৫

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

পর্ব_২৫

সারিকা_হোসাইন


গ্রীষ্মের এই তাপদাহ আর কোনো মতেই সহ্য করা যাচ্ছে না।জনজীবন বিতৃষ্ণায় ভুগছে।এই অতিরিক্ত গরম কেও ছাপিয়ে আরো  সবকিছু উত্তপ্ত করেছে মন্ত্রী মোশতাক আহমেদ এর আকস্মিক মৃত্যু।


ব্রিফ মিটিং এ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন সেগুলোই বিভিন্ন চ্যানেল এ টেলিকাস্ট করা হচ্ছে ঘুরে ফিরে।


পুলিশের বক্তৃতা অনুযায়ী চেক আউট এর টাইম পার হবার পরেও মন্ত্রী মোশতাক আহমেদ চেক আউট এর জন্য রিশিপশন এ না এলে তাকে ইন্টার কমে কল করা হয়।


দীর্ঘ সময় কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।


শেষে হোটেলের ম্যানেজার আর একজন এমপ্লয়ী তার কক্ষের সামনে এসে দরজায় ক্রমাগত নক করতে থাকেন।


দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার পরও দরজা না খুললে তাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়।


তাদের কাছে থাকা কপি  ডোর লক কার্ড পাঞ্চ করে রুমে ঢুকে তাকে না পাওয়া গেলে ওয়াশরুমের দরজা খোলা দেখে তারা সেখানে সন্ধান চালায়।

এমপ্লয়ী  বাথটাবে তাকে খুঁজে পায়।কিন্তু তাকে ডাকাডাকি করলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়না।


হোটেল কতৃপক্ষ  দ্রুত নিকটস্থ থানায় ফোন করে সব জানালে পুলিশ  সেখানে উপস্থিত হন।


তার লাশ  মেডিকেল এ আনা হলে ডিউটিরত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর  জানান তিনি হার্ট এট্যাক এ মারা গেছেন।


আপাতত আমাদের কাউকেই সন্দেহ হচ্ছে না কারন মন্ত্রী মহোদয় এর সাথে কারো কোনো শত্রুতা কখনো পরিলক্ষিত হয়নি।


মোশতাক আহমেদ এর মৃত্যুতে বিরোধী দলীয় মন্ত্রী সারা শহরে মিষ্টি বিতরণ করলেন।একজন মানুষের মৃত্যু নিমিষেই আনন্দ উৎসবে পরিণত হলো।

এসবে মুহিতের কিছু যায় আসছে না।সে হন্যে হয়ে আশরাফ চৌধুরীর খুঁজ চালিয়ে যাচ্ছে।

মুহিত  দুই আঙুলের সহিত কপাল স্লাইড করতে করতে চোখ বন্ধ করে ভাবছে

―কোথায় লুকিয়েছে আশরাফ চৌধুরী?


মুহিতের ভাবনার মাঝেই কর্কশ স্বরে বেজে উঠলো রিডিং টেবিলের উপর থাকা মোবাইল টা।

স্ক্রিনে সৌম্যের নম্বর দেখে দ্রুত রিসিভ করে ফোন কানে তুললো

―হ্যা ক্যাপ্টেন বলো

―স্যার আগামী নয় তারিখ  দুপুর দুটো পঁয়তাল্লিশ মিনিটে আহিয়ান এর সাথে আপনার ভিজিটিং আওয়ার।

সৌম্যের কথা কর্ণকুহরে আসতেই ঠোঁটের হাসি প্রশস্ত হলো মুহিতের।


――――

পুব আকাশে গোলাকার রবি ধীরে ধীরে রক্তিম আভা ছড়াচ্ছে সাথে মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে।চারপাশে পাখিদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে।কিছু সোলজার কোয়ার্টার এর মাঠের ঘাস গুলো পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে।মানুষের সাড়া শব্দ নেই বললেই চলে।স্নিগ্ধ মনোরম লাগছে সবকিছু।


ফজরের নামাজ পড়ে স্বর্গ তার বেলকনিতে পাতানো  দোলনায় বসে সকালের এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে।বিভিন্ন ঝামেলায় এতোদিন সকাল সকাল উঠা হয়নি।

আজ থেকে তার হসপিটালে ডিউটি শুরু হয়েছে এজন্য উঠে গেছে  ভোর বেলা।এখন থেকে প্রতিদিন এই রুটিন ই চলবে।


ধীরে ধীরে কিছুক্ষণ আগের রক্তিম সূর্য সোনালী রঙের তেজী কিরণ ছড়াচ্ছে।বাতাস ও কোথায় যেনো মিলিয়ে গেলো।এখন আর সকাল মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে দুপুর।

স্বর্গ বার বার ঘড়িতে সময় দেখে নিচ্ছে।সাতটা বাজলেই মুহিতকে সে কল করবে।

অপেক্ষার সময় যেনো কাটতেই চায় না।ঘড়ির কাটা যেনো নড়ছেই না।

ছয়টা ঊনষাট বাজতেই এভারেস্ট জয়ের হাসি দিলো স্বর্গ।


ইয়েস বলে ফোন হাতে নিয়ে  মুহিতের নম্বর  ডায়াল করে ফোন  কানে তুললো।

এই বজ্জাত পুরুষের ঘুমু ঘুমু কন্ঠ টা মারাত্মক  লাগে শুনতে।মন চায় গলা কেটে ফেলতে।এতো সুন্দর হতে  হবে কেনো তার কন্ঠ?


প্রথম রিং হতেই ফোন তুলে ফেললো মুহিত।

ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো

―গুড মর্নিং জান।

স্বর্গ যেনো কোরবান হয়ে গেলো।এতো আদর লাগিয়ে কে কথা বলতে পারে?

মুহিত ছাড়া কেউ তাকে এতো সুন্দর করে আদর করে কথা বলতে পারবে না।

মুহিতের নেশাক্ত কন্ঠ শুনে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো স্বর্গ।

এখন মুহিত পাশে থাকলে টিপে মেরে ফেলতো সে মুহিত কে।

এর পর মুহিত আবারো বলে উঠলো

―ঘুম থেকে উঠলেই কাছে পেতে ইচ্ছে করে তোমাকে,যেমন এখন তোমাকে খুব চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।

মুহিতের সাথে সায় জানিয়ে স্বর্গ ও তার মনের ভাব ব্যাক্ত করলো

―আমারো তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।

কিন্তু তুমি আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছো।

নেক্সট বার এলে উচিত শিক্ষা দেব।

দিল খোলা হাসি দিলো মুহিত।এর পর আদুরে কন্ঠে বললো

―আচ্ছা দিও যতো খুশি ততো শিক্ষা,আমি সকল শিক্ষা গ্রহন করতে প্রস্তুত।বিনিময়ে তোমাকে আদর করতে পারলেই হবে।


মুহিতের এমন ঠোঁট কাটা কথায় লজ্জায় গোলাপি আভা ছড়ালো স্বর্গের দুই গালে।

হঠাৎ ই স্বর্গ মেকি রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো―

তুমি না  ক্যাপ্টেন তুলিকা ফার্নাজ এর সাথে হাত ধরে হিহি করেছিলে?


স্মিত হাসলো মুহিত।স্বর্গকে উদ্দেশ্য করে হাসতে হাসতে বললো

―এই প্রশ্ন টা এই পর্যন্ত তুমি চারশত সাতাত্তর বার করেছো।আর কতোবার করলে আমি ক্ষমা পাবো তোমার কাছে বলতে পারো?


আর দেখা করতে যাবার উপর আমার কোনো দোষ নেই সব দোষ আমার শশুরের।


মুহিতের হাসি দেখে স্বর্গের হঠাৎ ই রাগ উঠে গেলো সাথে নিজের বাপের উপর ও চটে গেলো।

ক্যাপ্টেন তুলিকার চুল ছিড়তে পারলে শান্তি লাগতো মনে।

কতবড় সাহস মুহিতের গায়ে হাত দেয়।

রাগের চোটে মুহিতের মুখের উপর ফোন কেটে দিয়ে সুইচড অফ করে দিলো।

হনহন করে রুমে এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে হসপিটাল যাবার জন্য পা বাড়ালো।


স্বর্গের এমন রাগের মাহাত্ম বুঝলো না মুহিত।ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।নিজের ভুলটা কোথায় হয়েছে সেটাই ভাবতে লাগলো।


তনুজা আর নাফিজ মাহমুদ সকালের ব্রেকফাস্ট সাড়ছেন, পিউকে ডেকে এসেছেন,পিউ পরে খাবে।

হঠাৎ কোনো দিকে না তাকিয়ে স্বর্গকে সদর দরজার দিকে যেতে দেখে ডেকে উঠেন তনুজা

―সে কী না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস?

―স্বর্গ গর্জে উঠা কন্ঠে বলে উঠলো

―খাবার খাওয়ার মতো কোনো অবস্থা রেখেছো তোমরা?


মেয়ের হঠাৎ এমন রেগে যাবার কোনো কারণ দেখতে পেলেন না তনুজা।

নাফিজ মাহমুদ আদুরে স্বরে মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে মা?

এবার রাগ ঢালার মানুষ পেলো স্বর্গ।

এতদিন পর সে জানতে পেরেছে ক্যাপ্টেন তুলিকার সাথে মুহিত কে বিয়ে দেয়ার ঘটক তার বাবা নিজেই।

দাঁত কটমট করে স্বর্গ বলে উঠলো

―এমন ভান ধরছো যেনো কিছুই জানোনা?

―ক্যাপ্টেন তুলিকার সাথে মেজর মুহিত কে দেখা করার ব্যাবস্থা কেনো করে ছিলে?


মেয়ের এহেন গাধার মতো প্রশ্নে বেক্কল হয়ে গেলেন নাফিজ মাহমুদ।তবুও স্বাভাবিক স্বরে বললেন

―মুহিত কে বিয়ে দিতে হবে না?

মেজর মুহিত কি তোমাকে ঘটক রেখেছে বাপী?

নাফিজ মাহমুদ মেয়েকে অবাকের সুরে জিজ্ঞেস করলেন

তুমি এতো রেগে যাচ্ছ কেনো?


""তখন তো আপা তোমাকে দিয়ে মুহিতের বিয়ের কথা বলেনি""

আর মেয়েটা যথেষ্ট ভালো এজন্য দেখা করিয়েছি।যদিও মুহিত যেতে চায়নি।


স্বর্গ দাঁতে দাঁত চেপে বললো

""তোমার ঐ যথেষ্ট ভালো মেয়ে কি করেছে জানো?

–বার বার মুহিতের হাতে হাত রাখার চেষ্টা করছিলো, আর হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছিলো।


পুরাতন বিষয় নিয়ে তুই কেনো পরে আছিস মা?উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন তনুজা।

―ঐ মেয়ের কথা মনে পড়লেই হিংসে হয় আমার,শরীরে আগুন জ্বলে,সহ্য করতে পারিনা আমি বুঝতে পেরেছো?

বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেলো স্বর্গ।


নাফিজ মাহমুদ মেয়ের যাবার পানে তাকিয়ে তনুজাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

―এটা কার মেয়ে?এমন হিংসুটে মেয়ে কোথা থেকে এনেছো তনু?

তনুজা নাফিজের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে

―কথাটা আবার বলো,তার পর তোমাকে দেখে নিচ্ছি।


সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিলো পিউ।

আজকে তার মা,বাবার সম্পর্ক ঠিক থাকলে এমন খুনসুটিময় একটি পরিবার তার ও হতো।

কিন্তু নির্মম নিয়তি কতো নিষ্ঠুর ভাবেই না তাকে নিঃস্বঙ্গ করে দিয়েছে!


চোখের জল আড়াল করে সকলের অগোচরে উপরে উঠতে নিলেই নাফিজ মাহমুদ ডেকে উঠলো

―পিউ!


–এদিকে  একটু আয় তো রে বাবা।


নিজেকে স্বভাবিক করে অবনত মস্তকে নীচে নেমে এলো পিউ।


নাফিজ মাহমুদ এর পাশের চেয়ার টেনে পিউকে বসতে বললেন নাফিজ মাহমুদ।


পিউ বসতেই নাফিজ মাহমুদ আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো

―ক্যাপ্টেন সৌম্য তার ফ্যামিলি নিয়ে তোকে আংটি পড়াতে আসতে চাইছে।

আসতে বলবো?


কথাটি শোনা মাত্রই হুহু করে কেঁদে উঠলো পিউ।

যেই দায়িত্ব নিজের বাবার পালন করার কথা সেটা পালন করতে চাচ্ছে বান্ধবীর বাবা!

এর চাইতে কষ্টের কি ধরনীতে দ্বিতীয় কিছু আছে?


তনুজা উঠে এসে পিউ এর পাশে দাঁড়ালেন।

পিউ এর মাথা তার পেটের কাছে জড়িয়ে ধরে আদর করে হাত বুলালেন।

তনুজা বলে উঠলেন

―আমাদের সেভাবে আপন ভাবতে পারছিস না বাবা?

―স্বর্গ আর তুই সমান সমান আমাদের কাছে।ছোট থেকে তোকে দেখে আসছি।

তুই ভাবিস না আমরা যেমন তেমন করে তোকে সৌম্যের হাতে তুলে দেবো।

মনে কর আমি ই তোর মা।মায়ের কাছে যেভাবে সব শেয়ার করে সন্তান রা ,তুই ও সেভাবে সব শেয়ার করবি আমাকে।

―ক্যাপ্টেন সৌম্য আসবে বাবা?

তনুজার আদুরে মমতায় আশার আলো পেলো পিউ।


পিউ উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো তনুজার প্রশ্নে।


হ্যা বোধক উত্তর পেয়ে নাফিজ,তনুজা দুজনের মুখেই খুশির ঝিলিক দেখা গেলো।


★★★★

চৌধুরী ম্যানশন এর চার তলা বিশিষ্ট বাড়িটা আশরাফ চৌধুরী এমন ভাবে ডিজাইন করেছেন যে কারো দেখলে মাথা ঘুরে যাবে।

যেমন বাইরের নান্দনিক সৌন্দর্য তেমনি ভেতরে।।

শুধু তাই নয়,রয়েছে একটি গুপ্ত কুঠুরি ও।যার সন্ধান আশরাফ চৌধুরী ছাড়া কেউ জানেনা।

জানতো আরেকজন যিনি বাড়ির ডিজাইন করেছেন।

কিন্তু আশরাফ চৌধুরী তাকেও দুনিয়া থেকে খালাস করে দিয়েছেন।

আশরাফ চৌধুরীর রহস্য কেউ জানতে পারবে না কোনোদিন বলেই হা হা করে হেসে উঠলেন আশরাফ চৌধুরী।

হঠাৎই হাসি থামিয়ে রাগে ফুঁস করে উঠলেন।

না পারছেন ঠিক মতো খাবার খেতে না পারছেন ফোন খুলে কারো সাথে যোগাযোগ করতে।

ফোন খুললেই নেটওয়ার্ক ট্র্যাক করে কুকুর গুলো খুঁজে বের করে ফেলবে তাকে।

যেভাবেই হোক তিন তলায় নিজের কক্ষের আলমারি থেকে গোপন ফোন টা বের করে আনতে হবে।

একবার এই বাড়ি থেকে বের হয়ে জাহাজে উঠতে পারলেই তার একটা লোম ও কেউ বাঁকা করতে পারবে না।

আর বাকী রইলো মেজর মুহিত!

ওর বংশ নির্বংশ করে দেবে এবার সুযোগ বুঝে আশরাফ চৌধুরী।


আজ পর্যন্ত কখনো তাকে এই গুপ্ত কুঠুরিতে অবস্থান করতে হয়নি।

সামান্য একটা মেজরের ভয়ে সে এখানে লুকিয়েছে!

এর জন্য কঠিন মূল্য যোগাতে হবে ওই হারামজাদা মেজর কে।


এদিকে ছেলেটা কি আসলেই উন্মাদ হয়েছে নাকি ভান ধরে আছে সেটাও বুঝা যাচ্ছে না।

শুয়োর টাকে জেলের ভেতর ই যদি শেষ করে দেয়া যেতো!

আপাতত শান্তিতে ঘুমানো যেতো।

ছেলের মুখ খোলার চিন্তায় কুঠুরিতে এসেও আরামে ঘুমানো যাচ্ছে না।


――――――


নাফিজ মাহমুদের ড্রয়িং রুমে বসে আছে মুহিত।আজ তার ছুটির দিন,স্বর্গ ও বাসাতেই আছে।এতো ভোর বেলায় মুহিত কে এই বাসায় দেখে অবাক হলেন তনুজা।মুখে কিছুই বললেন না।ঘুম ঘুম চোখে  হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে এলেন নাফিজ মাহমুদ।ভেবেছিলেন ছুটির দিনে একটু আরামে লম্বা সময় ধরে ঘুমাবেন,কিন্তু তনুজার ডাকাডাকি তে তা আর হলো না।

মুহিত কে চিন্তিত মুখে বসে থাকতে দেখে নিমিষেই ঘুম ছুটে গেলো তার।

কিছু হয়েছে কি না ভাবতেই ভয়ে এক প্রকার দৌড়েই নামলেন।মুহিতের পাশে বসতে বসতে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলেন কোনো সমস্যা হয়েছে মুহিত?

অসহায় এর ন্যায় মুহিত বলে উঠলো―

―বিশাল বড় সমস্যা হয়ে গেছে স্যার।


সমস্যার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলেন নাফিজ মাহমুদ।চিন্তিত হয়ে জানতে চাইলেন কি সমস্যা মুহিত?

―আপনার মেয়ে দুদিন ধরে ফোন তুলছে না স্যার।


"তোমরা ঝগড়া করেছো? জিজ্ঞেস করলেন নাফিজ মাহমুদ।

অসহায় বদনে মুহিত বলে উঠলো

― না স্যার।


নাফিজ আগ্রহ সহকারে জানতে চাইলো

―দোষটা কার?

মুহিত সাবলীল ভাবে উত্তর দিলো

―আপনার!


ঘটনা আন্দাজ করতে সময় লাগলো না নাফিজ মাহমুদ এর।

অপরাধীর ন্যায় জিজ্ঞেস করলো

এখন কি করবে?

―আজ যেহেতু অফ ডে আছে দেখি একটু হাওয়া খাইয়ে নিয়ে আসি,যদি মন গলে।

নাফিজ মাহমুদ তনুজাকে ইশারা করলেন মেয়েকে ডাকতে।


দরজার ফাঁক দিয়ে চোরের মতো মুহিত কে দেখে যাচ্ছে স্বর্গ।সকালে নামাজ পড়ে বেলকনিতে দাঁড়াতেই মুহিতের জিপ দেখতে পেয়েছে সে।মুহিতকে কিভাবে চুম্বকের মতো টানতে হয় সেই বুদ্ধি ভালোই আছে স্বর্গের।


সিঁড়ি দিয়ে তনুজাকে উঠতে দেখে ঘুমের ভান ধরে বিছানায় পরে রইলো স্বর্গ।

তনুজা এসে ডাক দিতেই চোখ খুলে এতো সকালে ডাকার কারন জিজ্ঞেস করলো স্বর্গ।

―মুহিত এসেছে শিগ্গির আয়।

―তুমি যাও,আসছি বলে তনুজাকে তাড়িয়ে দিলো স্বর্গ।

নিজের নাইট ড্রেস চেঞ্জ করে একটা নরমাল লং শার্টের সাথে ডেনিমের লোজ প্লাজো পরে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে,চুল গুলো এক পাশে সিঁথি করে কাঁধের দুই পাশে ফেলে পরিপাটি হয়ে বেরিয়ে এলো স্বর্গ।

ড্রয়িং রুমে এসে মুহিতের আকর্ষণীয় হটনেস দেখে মনের ভেতর প্রজাপতি উঠতে থাকলো তার।

এস কালার সফট ডেনিম শার্টের সাথে ব্ল্যাক জিন্স পড়েছে।হাতে কালো ফিতার ব্র্যান্ডেড ঘড়ি,মনে হচ্ছে গোসল করেছে।একদম স্নিগ্ধ লাগছে তাকে।এখনই একটা চুমু মুহিতের অবশ্যই প্রাপ্য।

সময় বুঝে মুহিতকে দিয়ে দেবে স্বর্গ মনে মনে ভাবলো।


নাফিজ মাহমুদের ধমকে হঠাৎই ধ্যান ভেঙে চমকে উঠলো স্বর্গ।

―এটা কেমন বেয়াদবি করছো মুহিতের সাথে?

একজন ডাক্তার হয়ে এসব আচরণ তোমার মানাচ্ছে?

ছেলেটাকে হয়রানি করছো কেনো?

ছুটির দিনে না ঘুমিয়ে তোমার রাগ ভাঙাতে এসেছে!সব সময় সব কিছুতে জেদ করছো ইদানিং।

দিনে দিনে ফাজিল হয়ে যাচ্ছ বেশি আদরে?

একটা ব্যাক্তিত্ববান ছেলে তোমার জন্য ব্যাক্তিত্ব হারা হচ্ছে।

বয়স কতো তোমার?


সকাল সকাল বাবার মুখে ধমক খেয়ে চোখের কোনে  জল জমা হলো স্বর্গের।

বহু কষ্টে চেষ্টা করলো আটকে রাখতে।

তবুও টুপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।

মুহিত পড়লো মহা ফ্যাসাদে।এখন তো মনে হচ্ছে হ্যাঙ আউটে ও যাওয়া হবে না।

নাফিজ মাহমুদ কে সামলিয়ে মুহিত স্বর্গ কে বললো 

―এসো আমার সাথে,প্লিজ কেঁদোনা।

মুহিত ভেবেছিলো স্বর্গ তার উপর মুখ ঝামটা দিয়ে চলে যাবে,কিন্তু মুহিত কে ভুল প্রমাণ করে গাড়িতে উঠে বসলো।


গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দ্রুত কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে গেলো মুহিত।

আজ সারাদিন স্বর্গকে সময় দেবে সে।স্বর্গ যা যা করতে চায় তাই তাই করবে।


একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে ব্রেক কষলো মুহিত।স্বর্গ না খেয়েই বাসা থেকে বেরিয়েছে।তাকে আগে ব্রেকফাস্ট করাতে হবে,তারপর ঘুরতে যাওয়া।


―নামো।

বলে গাড়ির  দরজা খুলে দিলো মুহিত।

কোনো টু শব্দ না করে বাধ্য মেয়ের ন্যায়  নেমে দাঁড়ালো স্বর্গ।


স্বর্গের হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভেতর প্রবেশ করলো মুহিত।

একটা ওয়াইটার ডেকে  স্বর্গের পছন্দের চিকেন স্যুপ আর গার্লিক নান ওর্ডার দিলো।সাথে ভেজিটেবল স্যালাড।


ওয়েটার চলে যেতেই স্বর্গের হাত ধরে ফেললো মুহিত।

আদুরে নরম স্বরে বললো

―তুলিকা ফার্নাজ এর সাথে দেখা করার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।প্লিজ তুমি এভাবে আমার থেকে দূরে থেকো না,বুকের এখানে খুব  কষ্ট হয় বাবু।


―তুমি বোঝোনা?


আমি আর কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না,ইভেন তুমি  না বললে হাসবো ও না।

হ্যাপি?


স্বর্গ মাথা নিচু করে চুপ হয়ে বসে রইলো।


মুহিত স্বর্গের থুতনি ধরে মুখ উপরে তুলে আহ্লাদী হয়ে বললো

―আজকে সারাদিন আমি তোমার কাছে আছি,যেভাবে চাইবে সেভাবেই আজকে পাবে আমাকে।

মনে করো আমি তোমার ভালোবাসায় কেনা  বাধ্যগত দাস,আমি তোমার সকল হুকুম পালন করতে আজকে প্রস্তুত।


কথাটা জাদুর মতো কাজ করলো স্বর্গের উপর।

নিমিষেই মন খারাপের কালো মেঘ সরিয়ে বলে উঠলো

―সত্যি?

মুহিত প্রশস্ত হেসে বললো 

―তিন সত্যি!


চলবে।

0 Comments:

Post a Comment