#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ১৮
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
ঈদের পর আরো দুদিন কেটে গিয়েছে।চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে হুরিজিয়ানের। ঈদের দিনেও একটু স্বস্তি পায় নি হুর। বার বার এ কেমন মেহমেদের হুমকি খাচ্ছে হুর। ঈদের সারাটা বিকেল কাটালেও নাকি মন মেটে নি। কিছুক্ষন আগেও আয়শা খানমকে বিভিন্ন বাহানা দেখিয়ে বের হয়েছে হুর। সব কিছু যেনো ওভার লোড লাগছে। দিন দিন মেহমেদ পাগল হয়ে যাচ্ছে। এতো কৌফিওত কি দেওয়া সম্ভব।
হুরের ও কেমন পাগল পাগল লাগছে। হুটহাট বায়না করে বসে মেহমেদ দেখা করার জন্য। কই তার বোনরাও তো প্রেম করে, কই তাদের প্রেমিকরা তো এতো পাগলামি করে না৷
উফ, ভাবতেই মাথা ভার হয়ে আসে তার।
রিকশা জাহাঙ্গীর নগরের পথে ছুটছে সাই সাই করে।
গেরুয়া থেকে আবার রিকশা পালটে বটতলায় নামলো হুরিজিয়ান। দূরে দেখা যাচ্ছে মেহমেদ বাইক নিয়ে বসে আছে।
হুরিজিয়ান দীর্ঘ শ্বাস টানে। দৃঢ় পায়ে এগোয় সেথায়।
মেহমেদের সামনে গিয়ে দাড়াতেই হুরিজিয়ান বলে ওঠে, একটু কি ক্লান্ত হও না তুমি মেহমেদ!
মেহমেদ হাত টেনে আলতো কাছে টানে, হালকা হেসে বলে, আর সহ্য হয় না হুর। চল না পালিয়ে আজ একবার বিয়ে করি, তারপর আবার বিয়ে করবো। তারপর নাহয় আবার বিয়ে করবো।
হুরিজিয়ান মেহমেদের কপালে আলতো ধাক্কা দিয়ে শুধায়, পাগল কোথাকার। উম্মাদ।
"তাই বুঝি,আমি উম্মাদ!আমি পাগল! "
"তোমাকে সামলানো কষ্টকর মেহমেদ। বোঝনা কেন, সবসময় সবকিছু সম্ভব না।মা সবসময় সন্দেহ করছে। "
"জানি না আমি কিছু, তুমি আমার নেশা। তোমায় আমি কিছুতেই আড়াল করতে পারবো না। "
"আমায় যেতে হবে মেহমেদ, মাকে মিথ্যা বলে এসেছি, আমায় যেতে দাও। "
মেহমেদের চোখ অশান্ত হলো,বেশ কিছুসময় পাড় হলো দুজন দুজনের সাথে কথা বলে, অতঃপর পাশ থেকে একটা রিকশা ডেকে উঠিয়ে দিলো হুর কে।
.
.
বাসায় আসতেই হায়াতকে হুরিজিয়ান মেসেজ করলো,আয়শা বেগমকে বোঝানোর জন্য, মেহমেদ যদি একবার বাসায় চলে আসে
সেই কথা ভেবে আর কিছুতে মন বসাতে পারছে না হুরিজিয়ান। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে হুরিজিয়ান বিছানায় পড়ে পড়ে গেমস খেলছে। তার মাঝেই আয়শা বেগম এসে হুরিজিয়ানকে শুধালো, এই যে আলসেমীর ঘটি, উঠে গোসল করতে জান, বিকেলে দুলাভাই আসলে তার সাথে যাবেন । ব্যাগ পত্র গুছান।
আপনার বোন আপনাকে আজই যেতে বলেছে।
হুরিজিয়ান খেলতে খেলতে জবাব দিলো যাচ্ছি যাচ্ছি। এই মেস শেষ হলেই যাবো।
আয়শা বেগম চলে গেলেন । অতঃপর হুরিজিয়ান স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল, আপাতত মাথা থেকে চিন্তা দূর হলো। আজ আর ওয়াশরুমে
দেড়ি করল না হুর। তাড়াতাড়ি বের হয়ে গুছালো বিয়েতে যা পড়বে তাই। ওদিকে মেহমেদ মেসেজ দিচ্ছে হুরিজিয়ান যাবে
কিনা আজ সেটা জানার জন্য।
হুর রিপ্লাই করে আবার বসল বিছানায়। এই লোক এই দুদিন হুরের সাথে কি করবে এই ভেবেই অস্থির মনা হচ্ছে মন । মেহমেদ ১ সেকেন্ড ও হুরকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। হুটহাট এসে জ্বালাতন করে। বিয়ে বাড়ি কত মানুষ জন আসবে। তার মাঝে যদি কিছু করে ফেলে তাহলে কী করবে হুরিজিয়ান। এই মেহদের জন্য তার সবসময় লজ্জায় পড়তে হয়। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই যে কখন
বিকেল হলো হুর টেরই পেল না। ইমতিয়াজ আসাতেই বুঝি নিজ ভাবনা হতে বের হলো হুর । অতঃপর বেরিয়ে গেলো ইমতিয়াজের সঙ্গে হুরিজিয়ান।
______
"তোমায় ডেইলি ডেইলি জ্বালাতন না করলে কেমন যেন অশান্তি অশান্তি লাগে।
মনে হয় কি জানি একটা
গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি।"
কথাটা শুনতেই সামনে তাকালো হুর এবং
দাঁতে দাঁত চেপে বলল, লাজ শরমের মাথা খেয়েছ নাকি । তোমার ভাগনির বিয়ে হচ্ছে। বুঝদার মানুষের মত আচরণ কর। এভাবে জ্বালাতন করবে না। সবাই সন্দেহ করবে। সেই ছ্যাচড়ার মতো পিছু লেগেই আছো।
সুজন ভাই এখনি বলছে, তুমি বারবার কেনো আসো। আরেকটা কথা বলেছি না পাবলিক প্লেসে বউ বলে ডাকবে না, মাথা কী নষ্ট হয়ে গেছে তোমার। মানুষ কি বলবে বলো। কথাটুকু
শেষ করতেই মেহমেদ দাঁত কেলিয়ে আবার বলে উঠল,
"বউ"।
এবার যেনো হুরিজিয়ান চরম বিরক্ত হলো। রাগে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে তার। এর মাঝেই মুরাদ এসে শেষ ডাকলো হুরিজিয়ানকে।
এই বেয়াইন ওখানে কী
করো?
এদিকে আসো অনুষ্ঠান শুরু হবে চলো। অতঃপর হুরিজিয়ান মুরাদের পিছু পিছু চলে গেলো অনুষ্ঠানের ভেনুতে। ছাদে গায়ে হলুদের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মেহমানে ছাদ গিজগিজ করছে। হুরিজিয়ানের সাথে আজ অনেকের পরিচয় হয়েছে। সবাই খুবই মিশুক। ব্যাপারটা খুব ভালো লেগেছে তার। ধাপে ধাপে অনুষ্ঠান এগোচ্ছে। মুনিবা বেগম কিচ্ছুক্ষন আগে এসে দেখা করে গেছে হায়াত আর হুরিজিয়ানকে।
এর মাঝেই কোনের কন্ঠে শোনা গেলো, এনাউন্সমেন্ট।
আমার একটা ইচ্ছে বাকি আছে। সেটা হলো আমার চিরযৌবনা ৩ মামার পক্ষ থেকে একটা নাচ দেখতে চাই।
অতঃপর বাগনীর আবদার মেটাতে মেহমেদ, মুরাদ আর সুজন নামলো নাচতে।
তাদের নাচ শেষ হতেই যে যার মতো আবার চলে গেলো।
মিউজিক বক্সে গান চলছে, দুষ্টু কোকিল ডাকেরে কুক কুক কুক। সেই গানে কনে সহ নাচছে তার বন্ধু মহল।সেই গানের তালে তালে নাচছে সবাই। সেখানে হুরিজিয়ান, হায়াত দাড়িয়ে তালি দিচ্ছে। হঠাৎ মেহমেদের কান্ডে হেসে উঠল হায়াত। মেহমেদ হুরিজিয়ানের পাশে পাশে ঘুরতে ঘুরতেই গানের সাথে সাথে গাইতে লাগলো,
" নদির বুকে চড়,আমি কি তোর পর
আকাশ ভরা চান্দের আলোয়
বাধঁবো সুখের ঘর "
হুরিজিয়ান ও গানের তালে তালে গুলির ইশারা করলো মেহমেদ কে। ওমনি মেহমেদ পেছনের সোফার ঢলে পড়ার ভান করল। এই অবস্থা দেখে হায়াত মেহমেদকে বলে উঠল, আবার আসবা আমার বোনরে জ্বালাইতে, পরের বার তো গুলি করবে না। একেবারে শেষ করেই দিবে।
মেহমেদ ও জবাব দিলো, হো হো দেখবো, তোমার বোনের দৌড় কতদূর।
হুরিজিয়ান যেন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলো, কিন্তু মেহমেদ দাঁত কেলিয়ে এখনও হাসছে। কি একটা অবস্থা, হুরিজিয়ান হায়াতকে খুটিয়ে বলল, আপু চল ওদিকটায় অতঃপর
হায়াত ও হুরিজিয়ান গিয়ে আবার কনের পাশে গিয়ে বসল।
মেহমেদ সোফায় হেলান দিয়েই পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল, তারপর হুরকে মেসেজ করলো, এভাবে গুলি করতে পারলা বউ। ১০ মিনিটের মধ্যে এসে যদি ব্যথা না কমিয়ে দাও, আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই মারা যাবো।
হুরিজিয়ান মেসেজ টা দেখতে পেয়েই লিখল, ব্যাটা মানুষের এত যে ব্যথা কোথ থেকে আসে আমার তা বুঝে আসে না। চুপ করে বসে থাকো, পারবো না আমি আসতে।
অতঃপর...
~চলবে।
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও। গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি)
0 Comments:
Post a Comment