#Crazy_for_you🍁
#পর্বঃ২
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
হুরিজিয়ান বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। তার ঘুম যেনো ইংল্যান্ডের এলিজাভেথের ঘুমের ন্যায়। হায়াত এসে বার কয়েক ডেকে গেলো। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। ঘড়িতে ১০ টা বেজেছে। হায়াত বোনের এমন ঘুম দেখে দীর্ঘ শ্বাস টানে, কিন্তু আবারো হেসে ফেলে হুরিজিয়ানের মিষ্টি মাখানো অবয়ব দেখে। এর মধ্যেই ইমতিয়াজ দরজায় নক দিতেই, হায়াত ভিতরে আসতে বললো ইমতিয়াজকে। ইমতিয়াজ হাসে হুরিজিয়ানকে দেখে। সে হাক ছেড়েই বলে ওঠে, ও শালিকা উঠ, তোমার যে তানপুরা এসেছে। হুরিজিয়ান হাই তুলতে তুলতেই জবাব দিলো, হোয়াট ইজ মিন বাই তানপুরা , দুলাভাই?
ইমতিয়াজ হাসে, সে বলে ওঠে, তোমার একটা বেয়াই এসেছে।
হুরিজিয়ান তড়াক করে উঠে বসে, চোখ ডলতে ডলতেই জবাব দেয়, আমি তো জানতাম মাওইমায়ের আপনি একটাই ছেলে, একটু আগে যার কথা বললেন, সে কি মাত্রই ডাউনলোড হলো নাকি?
হায়াত বিছানা গোছাতে গোছাতে বলল,আরে যে এসেছে সে আমার ছোট ফুফু শাশুড়ীর ছোট ছেলে। সায়েমা আপার নাম তো শুনেছিস, তার মেয়ের আজ রাতে অকাদ হবে। আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে। যা এখন ফ্রেশ হো। তারপর আমার দেওরের সাথে দেখা কর গিয়ে। শত হলেও তুই তাদের এক মাত্র বেয়াইন।
ইমতিয়াজ কক্ষ ত্যাগ করতেই হুরিজিয়ান ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়।
.
.
ইমতিয়াজ এর কোনো ভাই বোন নেই। কাজিন আছে সংখ্যায় ছয়জন। হায়াতের বিয়ে ঘরোয়া ভাবে হওয়ায় ইমতিয়াজের কাজিনরা আসতে পারে নি বিয়ে তে। ইমতিয়াজের মামা একজন ও ফুফু দুজন। মামাতো ভাইবোন আছে দুজন আর বড় ফুফুর এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছোট ফুফুর দুটো ছেলে।বড় ফুফুর বাসা ইমতিয়াজদের বাসা থেকে কাছেই আর ছোট ফুফু নাকি চট্টগ্রাম থাকে। ইমতিয়াজের নানা বাড়ি ও কাছেই।
বোনের শশুরবাড়ি এসে আরেকদফা বিয়ের দাওয়াত পেয়েই হুরিজিয়ান আনন্দে লাফিয়ে উঠল। ইমতিয়াজের মামাতো বোন সায়েমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে, ঘরোয়াভাবে আকাদ হবে, ইদের সময় নিয়ে যাবে এমনটা কথা হয়েছে। ইমতিয়াজের বড় ফুফুর ছেলের সাথে মামাতো বোন সায়েমায় বিয়ে হওয়ার কারনে দুই দিক থেকেই সবাই আত্নীয়। তাই সায়েমা হিসেবে হুরিজিয়ানের বেয়াইন হয়। খুব আকুতি করেছে হুরিজিয়ানকে যেন নিয়ে যাওয়া হয় । এছাড়াও ইমতিয়াজের ছোট ফুফুর পরিবারকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশে হুরিজিয়ান একটু বেশিই চুপচাপ থাকে, প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলে না। হায়াতের বিয়ের সময় আত্নীয় স্বজন না আসায় কারো সাথে তেমন পরিচয় হয়ে উঠে নি।
এইতো ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই হুর তৈরি হয়েছে, বেয়াইয়ের সাথে দেখা করতে যাবে।
গেস্ট রুম থেকে বের হয়েই বসার ঘরে পা দিতেই চোখ আটকে গেলো সামনে বসা যুবকটার পানে, হুরিজিয়ানকে স্টেচুর ন্যায় দাড়িয়ে থাকতে দেখেই হায়াত তার কাছে গিয়ে হুরিজিয়ানের সাথে পরিচয় করে দিলো মাত্র। হায়াত বলে উঠল এই হচ্ছে আমার ছোট ফুফু শাশুড়ির ছোট ছেলে মুরাদ।
হুরিজিয়ান মনে মনেই আওরালো, ও মাই গড, দেখলেই প্রেমে পড়ে যেতে যে কেউ বাধ্য।
মুরাদ ভাবির কথা শুনে মুচকি হাসে, সে বলে ওঠে, তাহলে ভাবি এই হচ্ছে আমাদের এক মাত্র বেয়াইন। পরক্ষনেই হুরিজিয়ান জোর পুর্বক হাসি টেনে বলল জ্বি। কিছুক্ষন কথা হওয়ার পর হুরিজিয়ানের সাথে ফেসবুক আইডিতে অ্যাড হয় মুরাদ। হুরিজিয়ান কথার প্রসঙ্গে জানতে পারে মুরাদ প্রেম করছে, শেষে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ও অ্যাড করে দিয়েছে হুরিজিয়ানকে।হুরিজিয়ানের এবার মুরাদ কে জিজ্ঞেস করলো, আপনার ভাই আসে নি। মুরাদ জবাব দিলো মেহমেদ ভাইয়ের পরিক্ষা আছে তাই আসতে পারে নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এম বি,এ করছে। আমিও ওই খানেই অনার্স ৪র্থ বর্ষে আছি।
"ওহ আচ্ছা।"
মুরাদ হুরিজিয়ানের ফোনটা নিয়ে মেহমেদের আইডিতে ডুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে দিল। তড়িৎ এইরকম কাজে হুরিজিয়ানের বলে উঠল মুরাদকে, আরে আরে কি করছেন রিকুয়েষ্ট পাঠাবেন না, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না অলরেডি রিকুয়েষ্ট চলে গেছে। মুরাদের ফোন বের করে মেহমেদকে কল দিয়ে বলল বেয়াইনের ফোন থেকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছি রিকুয়েষ্ট কনফার্ম করো। হুরিজিয়ান হা করে আছে মুরাদের পানে চেয়ে। কি হলো মাত্র। সবটাই যেন মাথার উপর দিয়ে গেলো।
দুই মিনিট না যেতেই রিকুয়েষ্ট কনফার্ম হলো, হুরিজিয়ান সাথে সাথে ফোনের ওয়াইফাই কানেকশন অফ করে দিলো। হুরিজিয়ান ভাবতে লাগলো লোকটা কি ভাবলো, নিশ্চিত ভেবেছে হুরিজিয়ান মেয়েটা গায়ে পড়া। হুরিজিয়ানকে চুপচাপ দেখেই মুরাদ হুরিজিয়ানকে বলে উঠল, বেয়াইন আমার ভাইটা না কেমন যেনো, এখন ও একটা প্রেম ও করে নি, আর আমায় দেখো প্রেম করে বিয়া বাচ্চার প্লেন ও করে ফেলছি।বেয়াইন তুমি কিন্তু আমার পাশে থাকবে, আমার বউর বাড়ি কিন্তু তুমিও যাবে বিয়ের কথা বলতে বুঝলা। হুরিজিয়ান মুরাদের কথা শুনে বুঝতে পারলো এই ছেলে খুব মন খোলা, নিমিষেই মানুষের সাথে মিশে যায়। হুরিজিয়ান আর ফোনের ডাটা অন করলো না। সে মুরাদের কথায় মাথা দুলালো, যার মানে ঠিক আছে।
অতঃপর এভাবেই কথা চলল দুজনের মাঝে।
____
ইতোমধ্যে সন্ধ্যা নেমে রাতে পরিনত হয়েছে। হায়াত আর হুরিজিয়ান ইতোমধ্যে রেডি হয়েছে বিয়েতে যাওয়ার জন্য , হুরিজিয়ান সাদা থ্রিপিস পড়েছে। হালকা করে নুড কালার লিপ্সটিক,চোখে কাজল পড়েছে, হুরিজিয়ানের এই অব্দিই সাঝ, এর চেয়ে বেশি কখনও সাজে না। চুল অতিরিক্ত লম্বা হওয়ায় খোপা করে রাখে হুরিজিয়ান।
ইমতিয়াজ,হায়াত আর হুরিজিয়ান একসাথে সায়েমাদের বাসায় এসেছে। হায়াত হুরিজিয়ানকে একটা রুমে বসিয়ে রেখে চলে গেছে সায়েমার সাথে কথা বলতে। হুরিজিয়ান বসে ফোনে নিজের কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। এর মধ্যেই মুরাদ একটা ছেলেকে টানতে টানতে নিয়ে এসে হাজির হলো হুরিজিয়ানের সামনে।হঠাৎ কোনো অচেনা পুরুষকে দেখেই হুরিজিয়ান একটু ঠিক হয়ে বসলো ফোনটাকে পাশে রেখে। মুরাদ হুরিজিয়ানকে বলে উঠল, বেয়াইন দেখো এই দেখো এই তোমার আরেকটা বেয়াই, এই হচ্ছে সায়েমা আপার ছোট ভাই সুজন ও চট্টগ্রামে জব করে আমরা আজ এক সাথেই এসেছি। কাজ করছিলো আমি নিয়ে আসলাম তোমার সাথে দেখা করাতে, যতই হোক তুমি আমাদের একমাত্র বেয়াইন।
শ্যামসুন্দর গড়নের ছেলেটার পানে চাই লো হুরিজিয়ান একপলক। চাপ দাড়িতে অবয়বটা বেশ ভালো দেখাচ্ছে। হুরিজিয়ান একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সুজন কে সালাম দিলো, সুজন সালামের উত্তর দিয়ে বলল বাহ, বেয়াইন তো আমাদের একের, তা বেয়াইন সঙ্গি আছে নাকি এখনও নিঃসঙ্গ।
হুরিজিয়ান বলে উঠল, কিযে বলেন না বেয়াই আমি তো এখনও ছোট ওই সব বড়দের জন্য, এইগুলা আমায় চয়েজ করে না।
হুরিজিয়ানের কথা শুনে মুরাদ ও সুজন দুজন ই খিল খিল করে হেসে দিলো।
সায়েমা আপা ডাক দিতেই তখনই দুজনই বের হয়ে গেলো কক্ষ থেকে।
কিছু ক্ষন পর মুরাদ আর সুজনের এন্ট্রি দেখেই আবারো তাজ্জব বনে গেলো হুরিজিয়ান। সুজনের হাতে পান, হুরিজিয়ানকে এগিয়ে দিয়ে বলল, বেয়াইন বিয়েতে এসেছেন পান খাবেন না। হুরিজিয়ান জবাব দিতে গিয়েও যেন আটকে গেলো, না আসলে আমি..... মুরাদ বাকা হেসে মুখে পানটা খুজে দিয়ে বলল, আরে বেয়াইন খেতে হয়, মাথা ঘুরালে তো আমি আছি!
অতিরিক্ত পানে জর্দা দেওয়ার কারনে হুরিজিয়ানের মাথা ঘুরতে থাকলো অবিরাম। সুজন একগ্লাস শরবত দিলো হুরিজিয়ানের হাতে, শরবত দেখে সুজনের পানে হুরিজিয়ান চাইলো, ভ্রু কুচলে বলে উঠল , আপনারা আমার সাথে মজা করার জন্যই এই গুলো করছেন, এবার সুজন শয়তানি হাসি দিয়ে বলল বেয়াইরা বেয়াইনদের সাথে মজা করবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি।
~চলবে কি?
0 Comments:
Post a Comment