#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ২৮
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
"তুমি যে আমার নেশা হুর। আমি তো সেদিনই তোমার নেশার মত্ত হয়েছি, ভিডিও কলের ওপাশে তোমার অগোছালো মুখ, নেশা মাখা কন্ঠ শুনে। আমি তো এই নেশা ত্যাগ করতে পারবো না।একমাত্র মৃত্যু ছাড়া এই নেশা ত্যাগ করা অসম্ভব। "
"তাই"
"হুম"
হুরিজিয়ান মেহমেদের দিকে ফিরে তাকালো, খিলখিল করে হেসেই জবাব দিলো, যাও বিয়ে কনফার্ম। তোমার মতো পাগল আর উম্মাদের উপর দয়া দেখালাম। বিয়ে আমি তোমাকেই করবো।
মেহমেদ ও দাঁত কেলায়, তাহলে বিয়ে আমরা ৪ দিন পড়েই করছি?
হুরিজিয়ান হতচকিত মেহমেদের কথায়, "বিয়ে কি মগের মুল্লুক। বললেই হলো নাকি। আজাইরা!"
মেহমেদ প্যান্টের পকেটে হাত গুজে, মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে ," মগের মুল্লুক ই। বিয়ে আমরা ৪ দিন পড়েই করবো। আর বিয়ের রাতেই বাসর করবো, ঠিক আছে বউ। "
হুরিজিয়ান কথাটা শুনেই বিছানার বালিশটা ছুড়ে মারলো মেহমেদের দিকে, মৃদু চেচিয়ে বলল, "কচু করবো! নির্লজ্জ বেহায়া, বেহেলাজ ছ্যাচড়া ব্যাটা। "
মেহমেদ বালিশটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে তড়িৎ, তারপর চোখ টিপুনি কেটে শুধায়, বিয়েটা আমরা ৪ দিন পড়েই করছি, বউ।খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নেও বুঝলে, অল দ্যা বেস্ট। অতঃপর উড়ুচুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলো মেহমেদ।
হুরিজিয়ান দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে, বিড়বিড় করে বলে ওঠে, "পাগল একটা। "
.
.
বসার ঘরের কিছুদূরেই দাঁড়িয়ে আছে হুর। ভেতরকার বিয়ের আলাপ-আলোচনা শোনার চেষ্টা চালাচ্ছে হুরিজিয়ান। ইতোমধ্যে ওয়াসিম চৌধুরীর কণ্ঠ শোনা গেলো, "বেয়াই সাহেব, চাইছি সামনের শুক্রবার বিয়েটা হোক। ছেলের জয়েন হতে আরও ১০ দিন বাকি। জয়েন হবার পর আর সময় ও থাকবে না। তাই ঝামেলা না করে এই ১০ দিনের মাঝেই শুভ কাজটা সেরে ফেলতে চাই। আপনি কি বলেন?
"
কবির চৌধুরী হাসলেন, মিষ্টি কাটা চামচে গেথেই আগালেন ওয়াসীম চৌধুরীর নিকট, অতঃপর বললেন" কোনো সমস্যা নাই বেয়াই সাহেব। চলেন মিষ্টি মুখ করে আলহামদুলিল্লাহ বলি "
কথাটা হুরের কানে পৌছাতেই যেনো লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো। ছুটে গিয়ে লাগালো কক্ষের দরজা। কেমন যেনো লাগছে তার। কেমন অদ্ভুত অনূভুতি। বুক ধুকপুক করছে। ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে, মেহমেদ তার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ হবে, পাগলাটে মেহমেদকে সামলাতে হবে আজীবন। তার পাগলামি, জ্বালাতন সারাজীবনের জন্য গায়ে মাখতে হবে, মেহমেদের সাথে জীবন যাপনের কথা চিন্তা করলেই যেনো লজ্জায় নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে।
ভাবনার মাঝেই দরজায় নক হতেই হুরিজিয়ান দরজা খুলে৷ দরজার ওপাশে মুনিবা বেগম দাড়িয়ে আছে। মুনিবা বেগম ভুবন ভোলানো হাসির রেখা টানলেন, হুরকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে বললেন, "সুখি হও। আমার ঘর আলো করো,আমার পাগল ছেলেটাকে সামলে রেখ, তোমার অপেক্ষায় রইলাম। অনেক রাত হয়েছে, বাসায় যাবো। তাই তোমায় আবার দেখতে এলাম। "
"আবার আসবেন কিন্তু আন্টি।"
"আন্টি বলো না, এখন থেকে আম্মুই ডাকো, আমি তাতে বেশি খুশি হবো। "
"ঠিক আছে "
মুনিবা হুরিজিয়ানকে নিয়েই সদর দরজার দিকে এগোয়, মুনিবা বেগম সবার সাথে বিদায় বিনিময় করে, সিড়ি ভেঙে নামে। নিচে মেহমেদ গাড়িও বের করেছে, এখন উদ্দেশ্য সবার বাসায় যাওয়া।
_____
সময় খুবই কম। কেনা কাটা চলছে বিন্দাস। সারা বাসা জুড়ে মেহমান রয়েছে । চৌধুরী প্যালেসের একই অবস্থা। বিয়ে নিয়ে যেনো হই হুল্লোড় কান্ড।
হুরের যে আজ মেহেদী অনুষ্ঠান হবে, সে দিকে কোনো খেয়ালই তার। বেড়াতে আসা খালা ফুফু কাজিনরাও তাকে ঘুম থেকে উঠাতে পারছে না।
হুরিজিয়ান বিছানায় পা ছড়াছড়ি করেই ঘুমু কন্ঠেই শুধায়, একটু ঘুমুতে দাও না সবাই। পরে মেহেদী দেবো। প্রতি উত্তরে শোনা গেল, আয়শা বেগমের গলা,
"ঝাড়ুর বারি খাইছিস নাকি দিমু তোরে । যার বিয়ে তার হুশ নাই, পাড়া-পড়শির ঘুম নাই। এই হায়াত, সনি, কায়দা ওরা ওঠা, নাইলে মাইর একটাও নিচে পড়বে না। "
অতঃপর বোনেরা সকলে মিলে হুরিজিয়ানকে টেনে হিচড়ে ওয়াশরুমে পাঠালো, কি আর করা। সারারাত মেহমেদ একটুও তাকে ঘুমতে দেয় নি। আধা ঘণ্টা, ১ ঘন্টা যেতে না যেতে বার বার কল দিয়েছে। হুর ঠিক মতো ঘুমতেও পারে নি। এখনও ঘুম পুরো হয় নি। কি আর করা, ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে, সাজ সম্পন্ন করলো হুর। তারপর শুরু হলো মেহেদী অনুষ্ঠান। তানজিলার আগমনে যেনো অনুষ্ঠান আরো মেতে উঠল। তার যে সইয়ের বিয়ে। একটুও মিস করা যাবে না। এভাবেই আনন্দে কেটে গেল, মেহেদীর অনুষ্ঠান।
হলুদের ভেন্যু ছাদে করা হয়েছে। বেশ মিউজিক বক্সে গান বাজছে। একে একে এসে হলুদ ছোয়াচ্ছে হুরকে। তার মাঝে মাঝেই মেসেজ টাইপ করে কথা চলছে। দিন যত যাচ্ছে মেহমেদের জ্বালাতন বাড়ছে। আদৌ আজ রাতে হুরের ঘুম হবে কিনা সন্দেহ। হুরিজিয়ান তার কিছু ছবি সেন্ড করে।
ওদিকে সেই ছবি দেখে মেহমেদ তার চোখ জুড়ায়। তার আর সহ্য হয় না। তার মনে চায় একটা বার নিজ চোখে দেখতে। সেও বের হতে পারছে না। তাদের বাসায় ও অনুষ্ঠান চলছে।
সে সময় গোনা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না। এর মাঝেই মেহমেদের টনক নড়লো সুজনের কথায়, "আহারে মামা, তুমি এতো দিন তলে তলে ট্যাম্পু চালাইয়া, আমাগো খালি হরতাল কইলা। এইডা কি তোমার উচিত হইছে। বেয়াইনের লগে টাংকি মারছ! আমাগো কইছো তোমার গার্লফ্রেন্ড শেওড়া গাছের পেত্নি। "
মেহমেদ হাসতে হাসতেই সুজনকে একটা গালি দিলো এবং বলল,” তোর মতো মিচকা শয়তানের কাছে কইলে আমার জানডাই তো তুই খতম কইরা দিতি। এখন কো তোর বউয়ের অবস্থা কি? "
সুজন হা হুতাশের ভান ধরলো," ভাবতাছি তুই যখন বিয়াডা কইরাই ফালাইতাছিস, আমি সামনের মাসে কামডা সাইরা ফালামু। "
অতঃপর শোনা গেলো সাইকার গলা," হো হো বিয়া করেন, বহুত বিবাহ খাওয়ার বাকি। আজই লিস্ট কইরা দেখলাম। "
সুজন বাকা হাসলো এবং বলল , মুরাদকে তো আশেপাশে দেখতাছি না, আবার পোলাডারে ঘুম টুম কইরা ফালাইলা নাকি সাইকা।
সাইকা গলা খাকারি দিলো, এই সুজনকে বিশ্বাস নাই, মাঠে ঘাটে যেখানে পাবে, সেখানেই রোস্ট করতে পাকা। সাইকা আর কথা এগোলো না। মেহমেদের কাছ থেকে ক্যামেরার চার্জাটা নিয়ে চলে গেলো।
অতঃপর শোনা গেলো রিও র কন্ঠ, সে সারা ঘরে ওড়া ওড়ি করে বলেই যাচ্ছে,
"আহা আহা, বসের বিয়ে!আহা আহা বসের বিয়ে! বস আমিও বিয়ে করবো, আমিও বিয়ে করবো। "
সুজন রিও র কথা শুনে মেহমেদকে চাটি মেরে বলল, দেখ তোর পাখিটাও বিয়ে করতে চায়, ওরেও একটা বিয়া দে, ওর বিয়াডাও খাই। বেচারা আর কত কাল একা থাকবে।
অতঃপর.....
~চলবে।
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও।মেহমেদ আর হুরিজিয়ানের বিয়ে নিয়ে সুন্দর মন্তব্য চাই। গল্পটা কার কেমন লাগছে তাও বলো। হ্যাপি রিডিং)
0 Comments:
Post a Comment