গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান পর্ব ৫

 গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান 


পর্বঃ ০৫


লেখকঃ নামহীন লেখক 

..

..

..

..


---- এতদিন নিজের ছেলে- মেয়ের কোন খোঁজ খবর নেই আর আজকে মেয়ের বিয়েতে নামের আগে মৃত বলায় পিতার পরিচয় নিয়ে এসেছেন। আমিসহ বিয়ে বাড়ির সবাই আমার পিতা নামের বেঈমান টাকে অপমান করে অনেক কথাই শুনিয়ে দিলাম।

---- ভাই হাজার হলেও উনি আমাদের বাবা, আমাদের জন্মদাতা। আপু তুই চুপ কর উনি আমাদের কিসের বাবা,,!! জন্মদিলেই কি বাবা হয়ে যাই,,?? উনি পিতা হিসাবে কি দায়িত্ব পালন করেছেন যে আমাদের পিতা হবেন উনি । 

---- আমার পিতা ও মাতা একমাত্র তুই আর কেউ নই। আপু তুই আমার সব। একটু পর উনি সহ আমার সৎ মা চলে গেলেন।

----- আপু এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করলেন। মাসুদ ভাইয়া এসে বললেন লাবণ্য শান্ত হও । কাজী আবার আপুর বিয়ের কাজ শুরু করে দিলেন।

--- বিয়ে পড়ানো শেষ, এখন খাওয়া - দাওয়া হবে। আমি একটা জিনিস ভেবে পাচ্ছি না মিতুকে সেই সকালে আপুর সাথে রুমে দেখলাম। ও কোথায় গিয়েছে মনে মনে খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি নাহ।

---- অতপর মিতুসহ ওর বান্ধবীদের দেখা মিললো খাওয়ার টেবিলে। আমি খেয়াল করে দেখলাম মিতুর সাথে যারা বসে আছে একটাও আমার চিনা পরিচিত কেউ নই।

--- আমি ওপর দিকে এক টেবিলে খাবার দিচ্ছি,, হঠাৎ মিতুর এক বান্ধবী আমায় ডেকে বললো ,, তুমি আবির নাহ??

---হুমমম,,, আরে চিনতে পারো নাই আমাকে,,,?? 

একদিন নাহ তুমি আমি মিতু একসাথে তোমাদের কলেজে গিয়ে আড্ডা দিয়ে আসলাম। 

আসলে আমার তো মনে পড়ছে নাহ,, 

ওহ,,, আচ্ছা 

আমি আবার একটু এদিকে আসলাম,, 

কিরে মিতু আবিরের সাথে কথাই বললি নাহ যে ?? ও না তোর বেস্টফেন্ড। ঝগড়া করেচিস নাকি??

---- মিতু কিছু না বলে খেতে থাকলো,, মিতু একটা কথা বলবো তোকে??

---- দেখ আবির আগে কত ক্ষ্যাত ছিলো,, এখন অনেক স্মার্ট হয়েছে তাই না?? 

---- কেন তোর কি পছন্দ হয়েছে আবির কে,, ডাক দিয়ে বলবো যে তুই প্রেম করবি ওর সাথে?? 

--- আরে নাহ এগুলো কি বলিস। তাহলে চুপ করে খা৷

--- খাওয়া - দাওয়া শেষ,, আপুকে এখন মাসুদ ভাইয়ার বাসায় নিয়ে যাওয়ার পালা। আমি শুধু ভাবছি আমি এখন বাসায় গিয়ে কি করবো,,?? কার সাথে গল্প করবো?? একা একা কিভাবে থাকবো?? আমায় কে রান্না করে খাওয়াবে?? 

--- কিছু না হতেই কে এসে ভাই ভাই করে ডাকবে ?? 

আপু অনেক কান্না করলেন,, কিন্তু আমি চাইলেও আপুর মত চিৎকার করে কাঁদতে পারলাম নাহ শুধু দুচোখ বেয়ে জল বেয় হয়ে আসলো।

--- আমি আপুকে বিদায় দিলাম। একে একে সবাই হোটেল হতে বিদায় নিলো৷ আমিও বের হয়ে আসছি আর ভাবছি,, আপু যখন মেয়ে হয়ে জন্মনিয়েছে তখন তাকে পরের ঘরে একদিন না একদিন যেতেই হবে৷ কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আমি যেন আজ সত্যিই এতিম হয়ে গেলাম।

--- বাসায় এসে বসতে আপু ওর বাটন ফোনে ফোন দিলো। অনেকক্ষণ আপুর সাথে কথা হলো৷ ও অনেক কান্না করলো। আমি কি বলে শান্তনা দিবো তার ভাষা খুঁজে পেলাম নাহ।

--- দুইদিন পর ওয়ার্কশপে সেলাইয়ের কাজ করা সবাই আমার বাসায় আসলো

--- বাবা তিনদিন হলো আমরা সবাই কাজ করতে এসে প্রতিদিন ঘুরে যাচ্ছি,, তোমরা কি আর আমাদের দিয়ে কাজ করাবে নাহ???

--- আমরা কি ঠীক মতো কাজ করি নাহ,,?? নাকি আমাদের কাজে তোমাদের পুষাচ্ছে নাহ?? 

----- আসলে তা নয়,,আমার আপুর বিয়ে হলো তো তাই আরকি,,।

ওহ আচ্ছা লাবণ্য মামুনির বিয়ে হয়ে গেলো,,!! তা বাবা জামাই কী করে??

---- দুলাভাই পুলিশ অফিসার। 

ওহ লাবণ্য মামনি ভালোই ভাগ্যবতী তাহলে এমন একটা বর পেলো ও। 

--- আপনারা বসুন একটু,, আমি ওনাদের একমাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে দিলাম। উনারা টাকা পেয়ে এতটা খুশি হবে আমি ভাবিনাই৷ কেউ কেউ বললো বাবা এতদিন যে আমরা গার্মেন্টস এ নিজেদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলাম কোন সময় ঠীকমতো টাকা পাই নি,, আর তুমি আমাদের অগ্রিম বেতন দিয়ে দিলে। আমরাও আমাদের সর্বত্র দিয়ে কাজ করবো কথা দিলাম।

--- আচ্ছা তাহলে কাল হতেই আপনারা আবার নিয়মিত কাজে আসা শুরু করুন। উনারা সবাই চলে গেলো। আমি জানি যারা এসেছিলেন তারা সবাই গরীব । একমাস পর তো উনাদের বেতন দিতেই হতো এখনি টাকা আছে তো দিতে সমস্যা কোথায়। তাই দিয়ে দিলাম এতে উনারা কাজ করতে ভালো উৎসাহ হবেন।

--- ভেবেছিলাম নিজের ভাগ্যটা নিজেই লিখবো,, কিন্তু আপুও এসে সাময়িকের জন্য আমার সাথে যোগ দিয়ে আমায় সঠীক ও ভালো একটা পথ দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। যাক নিজের ভাগ্যটা নিজেরই লিখতে হয় তা বুজতে পারলাম।

--- পরেরদিন আমি সব কাজ দেখাশোনা করছি,, আপু ফোন দিয়ে বললো,, ভাই আজ ৪ দিন হলো তোরে দেখিনাই। আইনা আজকে আমার বাসায়। অনেক কাজ না হলে আমিই যেতাম ভাই। 

---- আচ্ছা আমি তাহলে বিকালে যাবো,,

আমার যাওয়ার কথা শুনে আপু অনেক খুশি হলো,, বিকালে আপুর বাসায় চলে গেলাম।

---- আপুর রুমে যেতেই দেখলাম মিতু আর আপু বসে টিভি দেখছে, আমাকে দেখে মিতু তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো।

----মিতুকে চলে যাওয়া দেখে আমি বললাম "রাগলে অনেক সুন্দর লাগে " 

ও দাঁড়িয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবে কি,, আপু নে এগুলো রাখ (মিষ্টি দিয়ে)

--- ভাই বস তুই,, একটু পরেই আপু আমাকে খাবারের টেবিলে নিয়ে গেলো। 

আমি টেবিলে গিয়ে তাকিয়ে ভাবছি এই বাড়িতে শুধু ২ টা কাজের মানুষ,মাসুদ ভাইয়া, মিতু, আপু আর উনার বৃদ্ধ বাবা আছেন তাহলে টেবিলে এত রকমের এত খাবার কেনো??

-- কি হলো বস,, আমি খাওয়ার টেবিলে বসতে,,ভাবি অনেক খিদে পেয়েছে খেতে দাও বলতে বলতে মিতু আসলো খেতে,, ও আমাকে দেখে আবার ঘুড়পাক খেয়ে চলে যাবে কি আপু বললো কোথাই যাচ্ছ এসো খাবে নাহ??

---- পরে খাবো,, আমার রুমে খাবার দিয়ে রেখো। মুখটা বাকা করে চলে গেলো। 

দেখচিস আপু তোর ননদ টা কেমন ডেমাকি,, আমি খেতে বসেছি দেখে ও খেতে এসেও চলে গেলো। 

ওর কথা বাদ দে,,তুই খা 

----- আপু আমাকে অনেক রকমের খাবার দিলো,,যেগুলো আমার আজ অবদি খাওয়া হয়নি। খাবার মুখে দিয়েই মনের অজান্তে চোখ বেয়ে জল আসলো।

---- আপুকে লুকিয়েই চোখের জল মুছে বললাম আপু রান্না অনেক স্বাদ হয়েছে। তাই ভাই খা তুই যত ইচ্ছে। 

--- খাওয়া - দাওয়া শেষে ভাবছি আসলেই আমার আপু অনেক ভাগ্যবতী তাই হয়তো এমন একটা বাড়ির বউ হতে পেরেছে।

---- খাওয়া - দাওয়া শেষে আপুর রুমে গিয়ে টিভি দেখছি,, একটুপর আপু আসলো টিভির রিমোট টা নিয়ে ও সিরিয়ালে দিলো,, কিহ আপু তুই এই চারদিনেই সিরিয়াল দেখা শুরু করে দিয়েচিশ??

---- আসলে ভাই আমি নাহ,, মিতু প্রতিদিন এসে আমার সাথে বসে সিরিয়াল দেখতো,, ওর সাথে সাথে আমিও একটু দেখতাম আরকি। 

----- ওহ আচ্ছা তা আজ যে আসছে না দেখতে?? 

আসবে কি করে তুই আছিস যে,, ভাই শুননা মিতু নাহ আমার ওপর অনেক খুশী হয়েছে। 

---- কেনও আপু,,,.? ঐযে অপু কেমন তা ওহ তো আমার জন্যই বুজতে পেরেছে। ওহ একটু রাগী হলেও ওর মনটা অনেক ভালো রে ভাই। জানিস না সারাদিন আমার সাথে কত মজা করে। তোর ভাই অনেক রাতে বাসায় ফিরে,, ততক্ষণ আমার কাছে এসে বসে থাকে।

---- ওর মনটা অনেক ভালো। 

আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি,, আপু তুইতো মাত্র কয়দিন হলো ওকে চিনিস আর আমার সাথে ওর কতদিনের সম্পর্ক। কিন্তু আপু হঠাৎ মিতুর গুনগান নিয়ে পড়লো কেন?? 

---- আমি যে মিতুকে পছন্দ করি ও তা জানতে পেরে গিয়েছে নাকি??

সিরিয়াল দেখা শেষে আপু বললো ভাই যাই,, মিতুকে ওর রুমে খাবার দিয়ে আসি তুই বস।

---- আপু খাবার দিয়ে আসলে জানতে চাইলাম মাসুূদ ভাই কখন আসবে?? 

ও বললো ওর আসতে রাত হবে,, চল পাশের রুমে তোর থাকার ব্যবস্থা করা আছে। আমি আপুরে সাথে গিয়ে শুয়ে পড়লাম আপু চলে গেলো।

---- শুয়ে শুয়ে বলছি মিসেস মিতু,, তুমি যতই আমার থেকে দুরে সরে থাকার চেষ্টা করো না কেন এবার থেকে দুইদিন পরপর এই বাসায় আসবো,,আর তোমাকে জালাবো। দেখি তুমি কি করো। 

--- এ বাসায় আসার অধিকার এখন আমি পেয়ে গিয়েছি। 

একটু পর বাহিরে মাসুদ ভাইয়ার গাড়ির শব্দ পেলাম। ভাই হয়তে এসে গেছে৷ আমি পাশের রুমে শুয়ে শুনছি,, 

ভাই আপুকে বলছে,, কই তোমার ভাইকে যে ফোন করে সকালে আসতে বললে ও আসে নাই??

--- হুমমম এসেছে,,, কোথায় ডাকো সালাবাবু প্রথম আসলো বাসায় একটু গল্প করি বসে। ও পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে। ওহ ঘুমিয়ে গিয়েছে নাকি তাহলে ডেকো নাহ। 

নাহ ঘুমায় নি,, তোমার জন্য বসে থেকে থেকে এই মাত্র গেলো । 

ভাইয়া আমাকে সালাবাবু বলে ডাকলো আমি উঠে গেলাম। 

---- কিছু কথাবার্তা বলার পর উনি বললেন,, কালকে তোমরা দুজন আমার সাথে একটু থানায় যেও। তোমাদের আব্বু জেলে। 

আমি কিছু বলতে যাবো কি আপু বলে বসলো,, আব্বু জেলে মানে কি হয়েছে আব্বুর ?? 

---- তোমার সৎমা আর উনার বাবা তোমার আব্বুর দ্বিতীয় পক্ষ ও ছেলে মেয়ে রয়েছে জানতে পেরেছেন। তোমার আব্বু উনাদের মিথ্যা কথা বলা ও সব গোপন রাখাই উনাকে চোরের অপবাদসহ আর কিছু মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন ।

---- তুমি আমার আব্বুকে জেলে দিতে পারলে,,?? আমার হাত আইনে বাঁধা। 

আপু এত অস্থির ও কান্না করছে কেন উনাকে জেলে দিয়েছে তো কি হয়েছে,, উনি তো আমাদের কাছে মৃত,, বুজলাম নাহ আমি

--- উনার যেমন কর্ম তেমনই ফল পেয়েছেন ,, আপুর কান্নাটা বেড়েই গেলো। মাসুদ ভাইয়া ও আমি আপুকে শান্তনা দিয়ে আমি রুমে চলে আসলাম।

---- পরের দিন সকালে উঠতেই মিতু আমার রুমে কফি নিয়ে আসলো,, আমি তো পুরাই অবাক মিতু আমার জন্য...


সবাই  গঠন মুলক মক্তব্য করেন। 

..

..

..

..

চলবে??

..

( ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন)

.

0 Comments:

Post a Comment