গল্প জোড়_করে_বিয়ে পর্ব ৩

 জোড় করে বিয়ে

পর্বঃ৩

#আবির হাসান নিলয়


পরিক্ষার রুমে ডুকতেই দেখতে পেলাম জান্নাত

সিটে বসে আছে।আর কি যেনো আনমনে ভেবে

চলেছে।প্রতিটা মানুষের কিছু ভালো লাগার

বিষয় থাকে।তার মধ্যে একটা হলো ভালোবাসার

মানুষটার দুষ্টু-মিষ্টি পাগলামি। এ জন্যই হয়তো

রবী ঠাকুর ভেবে বলেছেনঃআমরা সেটাই

মুগ্ধভাবে উপভোগ করি।যেটা আমাদের উপভোগ

করার বিষয়।সে যাই হোক আমিতো আর রবী

ঠাকুর না।যে তার কথার ব্যাখ্যা দিবো।


অনেকক্ষণ জান্নাতকে দেখার পরে সিটে গিয়ে

বসলাম।আমার বসা দেখে প্রথমে কিছুটা ভয়

পেয়েও তেমন কোনো রিয়াক্ট করলো না।

আমিঃকেমন আছো হবু বউ।

জান্নাত কিছু না বলে অগ্নিময় দৃষ্টি নিয়ে আমার

দিকে তাকালো।ওর চোখের ভাষাটা কিছুটা হলেও

আমি বুঝতে পারছিলাম।ওর চোখ দু'টো দেখে

বোঝা যাচ্ছে আমায় এখন চিবিয়ে খাবে।

আমিঃকি হলো কথা বলছো না কেন?

জান্নাতঃকি বলবো শুনি।আর আমায় বউ ডাকার

আপনি কে?আমাদের কি বিয়ে হয়েছে?

আমিঃকেনো বউ রাগ করছো কেন।এখন না

হয় কিছুদিন করে ঠিকি বিয়ে হবে।

জান্নাতঃঅসম্ভব।আমার জান থাকতে আপনাকে

আমি বিয়া করবো না।

আমিঃসেটা না হয় সময় বলে দিবে।

জান্নাতের সাথে কথা বলতে বলতে স্যার এসে

পরিক্ষার প্রশ্ন আর খাতা দিলো।


পরিক্ষা শেষ করে আমি জান্নাতের জন্য অপেক্ষা

করছি।কিছুক্ষণ পরেই জান্নাত রুম থেকে বের হলো।

আমিঃজান্নাত এদিকে চলো।

জান্নাতঃনা যাবোনা।আর আজ মারলে আমি

বাসায় গিয়ে আম্মুকে বলে দিবো।

জান্নাতের কথা শুনে আমি হাসবো নাকি কান্না

করবো ভেবে পাচ্ছি না।এতো বড় মেয়ে হয়েও

৩-৪বছরের মেয়েদের মতো কথাবার্তা।

আমিঃপ্লিজ তোমার সাথে একটা জরুরী কথা আছে।

জান্নাতঃনা আমি যাবোনা।আপনার জন্য কাল

আমি আম্মু থেকে বকা শুনছি।

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম।ছাত্রছাত্রী সংখ্যা

তেমন কোনো নেই।এই সুযোগটাতেই মায়াবতী

গালে ছোট একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলাম।

চুমুটা দেয়ার পরে জান্নাত আমার কলার ধরে

কলেজের এক পাশে নিয়ে গেলো।


জান্নাতঃতুই আমাকে চুমু দিলি কেনো

ওরেম্মা এই মেয়ে এগুলো কি বলে।যে মেয়েকে কেউ

ধমক দিলে চুপ হয়ে যায়।সেই কিনা রেগে কথা

বলছে সেটাও আবার তুই করে।অবশ্য এরকম

ভাবে কথা বলাটাই স্বাভাবিক। কারণ অপরিচিত

কেউ এভাবে চুমু দিলে রাগ করাটাই সাজে।কিন্তু

হবু বউটাকে অনেক রুপবতী লাগছে।রাগ করলে

জান্নাতকে রাগলে এতোটা রুপবতী লাগে না দেখলে

হয়তো জীবনের অনেক বড় একটা জিনিশের

অপূর্ণতা রয়ে যেতো। জান্নাতকে দেখে মনটা 

চাইছে জরিয়ে ধরে একটু আদর করি। 

জান্নাতঃকি হলো হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

আমিঃতাছাড়া কি করবো।

জান্নাতঃঐ হারামি, বাদর,কালো বিড়াল,হনুমান

তুই আমাকে চুমু দিলি কেন?সেটা বল।

আমিঃতুমি কি এগুলো আমাকে বলছো..

জান্নাতঃতো তুই ছাড়া এখানে কে বা আছে?

আমিঃছিঃ..এভাবে কি কেউ হবু বরকে বকা দেয়।

জান্নাতঃকে হবু বর।

আমিঃকেনো আমি।

জান্নাতঃআর একবার যদি বাজে কথা বলিস তাহলে

(গলা চেপে ধরে)তোকে মেরেই ফেলবো।😡

আমিঃতোমার লজ্জা করে না।এভাবে কাউকে মারতে

জান্নাতঃসালা লুচু তোর লজ্জা লাগেনা।আমাকে চুমু খাস।

আমিঃআমি তো আমার....(থামিয়ে দিয়ে)

জান্নাতঃতোর পায়ে পরি প্লিজ আর বউ বলিস না।

আমিঃঠিক আছে। আজ আর বলবো না।


তারপর আর কোনো।কথা না বলে জান্নাত চলে গেলো।

আমিও বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে দেখি

আম্মু বসে আছে।আমাকে দেখে...

আম্মুঃএকটা সত্যি কথা বলবি?

আমিঃআমি কি মিথ্যা কথা বলছি কোনো?

ডাহা মিথ্যা কথা।কারণ আমি সত্য বলা থেকে

মিথ্যা কথা বেশি বলি।

আম্মুঃহ্যা আইছে আমার সত্যবাদী ছেলে।এখন

তুই আমাকে সত্যিকরে বল ঐ মেয়েটা কে?

আমিঃকোন মেয়ে আম্মু?(অবাক হয়ে)

আম্মুঃগতকাল যে হাসপিতালে নিয়ে এসেছিলি।

আমিঃআসলে আম্মু আমি ওকে.....

আম্মুঃহুম বল...তুই ওকে

আমিঃআমি ওকে ভালোবাসি আর বিয়ে করতে চাই।

আম্মুঃ আলহামদুলিল্লাহ। ছেলের আমার পছন্দ আছে।

তা কিভাবে কি হলো আমাকে প্রথম থেকে বল.।


তারপর আম্মুকে প্রথম থেকে শুরু করে সব বললাম।

আর আম্মুকে এটাও বললাম যে আমি জান্নাতকে

খুব তাড়াতাড়ি বিয়া করবো।কিন্তু জান্নাত যেনো

এই বিষয়ে না জানতে পারে।


পরেরদিন........

পরিক্ষার হলে বসে আছি। আর বোরিং হচ্ছি কারণ

জান্নাত এখনো আসেনি।তাই চোখ বন্ধ করে নিচের

দিকে তাকিয়ে আছি।কিন্তু হঠাৎ পাশে কাউকে

অনুভব করলাম।তাকিয়ে দেখলাম জান্নাত বসে

আছে।কিন্তু আজ একটু মন খারাপ লাগছে।

যে কেউ আজ জান্নাতকে দেখে বলে দিবে আজ

ওর মন খারাপ।

আমিঃজান্নাত তোমার কি মন খারাপ???

জান্নাতঃ...(নিশ্চুপ)

আমিঃকি হলো বলো....

জান্নাতঃআজ জেরি এক্সিডেন্ট করছে?

আমিঃজেরি কে??

জান্নাতঃআমাদের বাসার বিড়াল...

আমিঃএহহহ..বিড়াল।হাহাহাহা😂😂

(কেউ বিড়ালের জন্য নাকি মন খারাপ করে।

সেটাও আবার পরিক্ষার হলে।জান্নাত যেভাবে

মন খারাপ করে আছে।ওকে দেখে মনে হবে ওর

কোনো আত্মীয় ইন্তেকাল করেছে।কিন্তু পাগলিটা

এমন ভাবে কথা বলছে যেনো ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড)


জান্নাতঃকি হলো হাসতেছেন কেনো?

আমিঃনা তেমন কিছু না।এমনি।

জান্নাতঃওহ

আমিঃজ্বি।

সেদিনের মতো পরিক্ষা শেষ করে বাইরে বের হলাম।

কিছুক্ষণ পর জান্নাত বের হলো।ওকে ডাকাতেই

মন মরা হয়ে কাছে আসলো।

আমিঃজান্নাত একটা কথা বলি?

জান্নাতঃবলেন...

আমিঃআমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমাকে

বিয়ে করতে চাই।

জান্নাতঃআমি আপনাকে ভালোবাসি না।আর আপনাকে

তো আমি জীবনেও বিয়া করবো না।ঢেঙা ষাঁড় কোথাকার।

আমিঃকি বললে তুমি।আবার বলো.....

জান্নাতঃগাধা হনুমান।

বলেই হোসাইন বোল্টের মতো দৌড়ে চলে গেলো।


আমারো ভালো লাগে জান্নতের এমন পাগলামি।

এরই মাঝে ৭টা পরিক্ষা শেষ। আর মাত্র ২টা আছে।

না জানি পাগলিটা আমার ভালোবাসা বুঝবে কিনা।

আর ইদানীং আমিও কেন জানি না জান্নাতের প্রতি

অনেকটা দু্র্বল হয়ে পড়েছি।ওকে না দেখলে মনে

হয় পৃথিবীটা ধমকে গেছে।মনে হয় বন্ধুকের বুলেটগুলো

আমার হৃত্পিণ্ডকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিবে।

চলবে........

0 Comments:

Post a Comment