গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান পর্ব ১৯

 গল্পঃ গরীব ছেলে যখন বিজনেসম্যান

 

পর্বঃ ১৯


লেখকঃ নামহীন লেখক 

..

..

..

--মিতু খেঁতে থাকলো আর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। 

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মিতুর অবস্থা অনেকটা নাজেহাল। তাই ওকে এবার মুক্ত করে দিলাম। 

---- মিতু কান্না করে চলেছে। আমি ওকে কান্না থামাতে বললেও ও আমার কথা শুনছেই না তাই দেখে আমি এবার মিতুকে এক ধমক বসিয়ে দিলাম। ও আমার ধমক শুনে অনেকটা ভয়ে গুটিয়ে গেলো। 

---- মিসেস মিতু এইটুকু কষ্ট পেয়েই এতটা কাঁন্না করছো,,,?? একবার ভেবে দেখো তো আমার আপুটা ঐদিন কেমনটা কেঁদেছিলো,,,,!! 

আপু আজও আড়ালে তোমার ভাইয়ের জন্য চোখের জল ফেলে। 

---- মেনে নিতেছি যে দোষটা আমারই ছিলো কিন্তু সেই দোষে তুমি আমার আপুর সংসারটা কেনো ভেঙ্গে দিলে...?? 

---- আবির আমি ঐদিন এমন টা করেছিলাম তোমার আপুর সংসার ভাঙ্গতে নয় তোমার ওপর রাগ হয়েছিলো আর ভাইয়ার হাত থেকে বাঁচতে। 

---- বাহ মিতু বাহ। 

আমাকে একমাস জেল খাঁটিয়েও কি তোমার আমার ওপরে জমে থাকা প্রতিশোধের নেশাটা মিটে নাই ...?? যে তুমি পরবর্তীতে আবার এভাবে প্রতিশোধ নিয়েছিলে..??

---- আমার কথার উত্তর না দিয়ে মিতু চুপ করে কাঁদতেই থাকলো। 

মিতু তোমাকে যেদিন অপু ডিভোর্স দিয়েছিলো সেদিনও কী তুমি বুজেছিলে নাহ একটা মেয়েকে স্বামী ডিভোর্স করলে তার কতটা কষ্ট হয় 

সেদিন কী পারতে না তোমার ভাইয়াকে সবটা খুলে বলতে..??

---- সাহস পাইনি ভাইয়াকে সব খুলে বলার৷ 

তোমার ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আমি নিজেই সেই প্রতিশোধের আগুনে জলে পুড়ে গেছি। তুমি আমার পিছু হাঁটা ছেড়ে দিয়েছো । ভাইয়াকে সব বলে ভাইয়াও যদি আমাকে ছেড়ে দিতো তখন আমি কোথায় যেতাম,,,?

---- একটা লম্পটকে ভালোবেসে আমি হারিয়েছি আমার মায়ের মত ভাবীর আদর। হারিয়েছি আমি তোমার মত একজন বেস্টফেন্ড কে। তোমার চরিত্রে দাগ লাগাতে ও ভাবীর সংসারটা ভাঙ্গতে গিয়ে.. আজ আমারই সংসারটা ভেঙ্গে গিয়েছে আমারও চরিত্রে কলংঙ্কের দাগ লেগে গিয়েছে। আজ বুজেছি পাপ কাউকেই ক্ষমা করে না৷ 

---- আবির তুমি আমাকে একটা সুযোগ দাও প্লিজ আমি কথা দিচ্ছি আমি বাসায় ফিরে ভাইয়াকে সব কথা খুলে বলবো,,, এতে ভাইয়া আমাকে যা শাস্তি দিবে আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নিবো। আমাকে এই সুযোগটি দাও প্লিজ আবির ৷ 

---- আচ্ছা ঠীক আছে মিতু । যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমরা আজই বাসায় ফিরবো বলে আমিও রেডি হতে চলে গেলাম। 

---- অনুকে ফোন করে আমার বাসায় চলে আসতে বললাম। আমি আর মিতু ওর বাসার দিকে রওনা দিলাম। 

---- মিতুর বাসায় পৌঁছে গেলাম। 

সারাবাড়ি খুঁজেও মিতুর ভাই মাসুদ ভাইয়াকে পেলাম নাহ। মিতুকে ওর ভাইয়াকে ফোন দিতে বললাম। মিতু মাসুদ ভাইয়াকে ফোন দিলে উনি ফোন উঠাচ্ছে নাহ। 

---- মিতুকে রেখে আমি বাসার দিকে রওনা হয়ে গেলাম। বাসায় আসতেই আপু আমার কাছে দৌঁড়ে আসলো। 

---- ও ভাই আমার বুকের মানিকটা কোথায়,,,?? তুই না বললি মিসকাত কে নিয়ে বাসায় ফিরবি,,,,!! আমি কিছু বলার আগেই আপু আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। আপুকে শান্ত করে বললাম আপু কাঁদিস না আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাগ্নে কে নিয়ে অনু বাসায় ফিরবে । ভাগ্নে অনুর হেফাজতে আছে৷ 

---- ভাই তুই আমাকে মিথ্যা শান্তনা দিস,,,,!! আমি জানি তুই আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছিস রে ভাই ।। সত্যি করে বল না ভাই মিসকাতের কি হয়েছে,,,,?? 

---- বুজলাম আপুকে এভাবে বলে বিশ্বাস করানো যাবে নাহ তাই ফোন বের করে অনুকে ফোন দিলাম৷ 

হ্যালো অনু.... মিসকাত তোমার কাছে আছে নাহ,,,,?? আপুকে একটু বলো তো অনু তুমি যে মিসকাতকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসছো। 

---- ফোনটা এবার আপুকে দিলাম। অনু আপুকে সব বললেও আপু তবুও যেনো বিশ্বাস করলো নাহ।

---- তাই আমি অনু এগিয়ে নিয়ে আসছি বলে একটু এগিয়ে বাস্টান্ডের দিকে যেতে লাগলাম। রাস্তায় হঠাৎ অপুর সাথে দেখা হয়ে গেলো। 

----অপুঃ আবির কেমন আছো...??

হুমম আছি এইতো । তুমি কেমন আছো অপু?? 

এই কোনরকম আবির। তা মিতু কেমন আছে...?? আর তোমরা কবে বিয়ে করছো আবির?? 

----মানে,,,!! অপু এসব কি বলো তুমি ...?? 

অপুঃ হুমম...। আমি সত্যিই তো বলছি তোমরা কবে বিয়ে করছো সেটা জানতে চাইছি আরকি। 

---- দেখো অপু আমি কেন মিতুকে বিয়ে করতে যাবো,,,?? 

অপুঃ মিতু তোমায় ভালবাসে তাই। 

ভালোবাসে মানে এসব কি বলছো তুমি আমিতো কিছুই বুজছি নাহ। 

----ওহ তাহলে শুনো আবির.. 

অপুঃ ঐদিন বাসর রাতে আমি যখন মিতুর কাছে যেতে থাকি তখন ও আমাকে বাঁধা দেয়।

আমি বাঁধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মিতু বলে ও তোমায় ভালোবাসে তোমাকে ছাড়া ও কোনদিনও কাউকে স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারবে নাহ। 

----- মিতুর কথা শুনে আমার রাগ হয়। তাই জোর করেই আমি ওর কাছ থেকে স্বামীর অধিকার কেড়ে নিতে ওর কাছে যেতে থাকি। ফলে মিতু আমাকে লাথি মেরে বেড থেকে নিচে ফেলে দেই। 

--- তখনই আমি রাগের বশে ওকে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকি। সাড়ারাত ধরে ওর ওপর অত্যাচার করলেও মিতু আমাকে স্বামীর অধিকার দেই নি শুধু তোমায় ও ভালোবাসে বলে।

---- এসব কি সত্যিই নাকী...?? 

হুমম সত্যিই আবির। 

মিতু যদি আমাকে ভালোবাসে তাহলে ও কেনো তোমায় বিয়ে করলো?? 

--- ওর ভাইয়ের চাপে আর আমার কাছে ওর কিছু অপীতিকর পিক থাকায়। যার জন্য মিতু ভয়েই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো। 

--- আচ্ছা তা না হয় মানলাম কিন্তু মাসুদ ভাইয়া কেন তোমার সাথে মিতুকে বিয়ে দিতে রাজি হলেন,,,?? 

---- কেননা মিতুর ভাই জানতে পেরে গিয়েছিলো মিতু তোমাকে ভালোবাসে। তাই ঐদিন উনি আমার সাথে মিতুকে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলো ।

---- আচ্ছা আবির এখন আমি আশি আর দোআ করি তোমরা সুখী হও। বলে অপু চলে গেলো আমি রাস্তার একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণের জন্য ভাবতে থাকলাম.... 

--- যে মাসুদ ভাইয়া একদিন মিতুকে অপুর হাত থেকে বাঁচাতে 

আপুকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে নিয়ে অপু কে জেলে দিয়েছিলো 

অথচ আবার সেই অপুর হাতেই মিতুকে 

তুলে দিতে ঐদিন যেনো উনি একটুও দ্বিধাবোধ করেন নি। 

কারণটা হলো শুধু মিতু আমাকে ভালোবাসে বলে। 

---- আজ যেনো বেশ কিছু সংকোচ বেঁধেছে আমার মনে । মিতু যদি একসময় অপুকেই ভালোবাসতো তাহলে সে কিভাবে আবার আমাকে ভালোবাসতে পারে,,,?? বুজছি নাহ,,,,!! 

আবার মাসুদ ভাইয়াও মিতুর সাথে এটা কেন করলো সেটাও যেনো আজ অপরিষ্কার আমার কাছে । 

আমি কী অপুর চেয়ে খারাপ ছেলে ছিলাম নাকি যে মাসুদ ভাই মিতুকে জোর করে অপুর সাথে বিয়ে দিলেন,,,,!!!!

---- জানিনা এসব সংকোচ কীভাবে দূর হবে আমার মন থেকে। 

দেখি অনুকে ফোন দিয়ে ও কতদুর আর কতক্ষণ লাগবে আসতে। 

ফোন বের করে অনুকে ফোন দিলাম। 

অনু কোথায় তুমি আর কতক্ষণ লাগবে আসতে?? 

----- আবির আর আধা ঘন্টার মত লাগবে। 

অনু তোমার আসতে তো এত সময় লাগার কথা নয়। 

আবির আমরা ট্রাফিক জ্যামে আটকে পরেছিলাম তাই দেরি হচ্ছে আরকি,,,। 

---- ওহ তা ভাগ্নে কি করছে?? 

ও আমার কোলে ঘুমাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে কিছু খাওয়ালাম এখন ঘুমাচ্ছে। 

---- আচ্ছা তাহলে ভালো করে এসো। আমি বাসস্টান্ডে আছি। বাস থেকে নেমেই ফোন দিও। আচ্ছা বাস থেকে নেমেই তোমায় ফোন দিবো বলে অনু ফোন কেটে দিলো। 

---- আমি এক চায়ের দোকানের পাশে চা অর্ডার করে দাঁড়িয়ে আছি। একটুপর দোকানদার চা নিয়ে এসে আমার হাতে দিলো৷ আমি চায়ের কাপ মুখে দিতে যাবো কী অমনি কেউ কিছু একটা দিয়ে চায়ের কাপে বারি বসিয়ে দিলো।

---- আমি লাফ মেরে উঠলাম। 

পাশে তাকাতে দেখি...

চল একমাস জেল খেঁটে তোর শিক্ষা হয়নি দেখছি এবার তোর সারাজীবনটা জেলেই কাঁটবে। 

বলে আমি কিছু বলার আগেই মিতুর ভাই আমাকে হাতে হাতকড়া পড়িয়ে দিলো। 

---- মানে....?? আমি কি করেছি আর আমার অপরাধই বা কী,,,?? 

তোর অপরাধ কী তা থানায় গেলেই জানতে পারবি। 

নাহ আপনি তো বিনাদোষে আমাকে থানায় নিয়ে যেতে পারেন নাহ আগে আমাকে কোন অপরাধে থানায় নিয়ে যাবেন সেটা বলুন নইলে,,,,, 

নইলে কী করবি,,,বলে উনি আমার শার্টের কলার ধরে টানতে শুরু করে দিলো। 

----- আমাকে জিপে উঠিয়ে নিয়ে থানায় নিয়ে গেলো। 

জেলের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে উনি একজন অফিসারকে বললো এর নামে চারশিট তৈরী করুন। 

---- ঐ পুলিশ অফিসার আমার অপরাধ বা কারন জানতে চাইলে উনি বললেন... 

কিডন্যাপ,, একজন মেয়েকে কিডন্যাপ ও তার ওপর রাতভর অত্যাচারের জন্য ওর ওপর নারী নির্যাতনের দায়ে চারশিট তৈরী করুন। কালকেই ওরে কোটে চালান দেওয়া হবে।

---- নারী নির্যাতন মানে,,,,?? আমি কাকে কিডন্যাপ ও নির্যাতন করেছি?? 

----- চুপপপপ 

আর একটা কথাও যদি মুখ থেকে বার করিস তাহলে তোকে এই খানেই মেরে পুঁতে ফেলবো। তোর ভাগ্য ভালো তাই এখনো তোর ওপর হাত উঠায় নি। জানিস না কাকে কিডন্যাপ করেছিস তুই,,,,!! 

---- তার মানে মিতু আমাকে.....

..

..

..

(গল্পটি ভালো লাগলে জানাবেন)

0 Comments:

Post a Comment