#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ২৫
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
সে দেয়াল ঘেঁষেই বসে পড়ে নিচে। কিছুক্ষণ আগে কি হলো ভেবেই আবারো কেদে ফেলে হুর। অতঃপর সে আবারো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। ওদিকে মেহমেদ অন্য কক্ষের বেসিনে গিয়ে কলের টেপ ছাড়লো, তড়িৎ তার অবয়বে ঝাপটালো পানি, নিজেকে কন্ট্রোল করে, চুল ব্রাশ করল মেহমেদ। হুরর অতি নিকটে গেলে তাকে ছোয়ার নেশা যেন মেহমেদের জেকে বসে। আর একটু
দেড়ি হলে হয়তো মেহমেদ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতো। মেহমেদ এটা কখনই চায় না। সে যে তাকে হালাল ভাবেই ছুঁতে চায়। অতিমাত্রার রাগে দিক-দিশা হারিয়ে ফেলেছে সে, হুরের
ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হওয়ার ধরুন মেহমেদের হুঁশ ফিরেছিল। মেয়েটার কাছে যাওয়া উচিত। মেহমেদ দ্রুত পা চালিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে। তখন হুর হাটুতে মুখ গুঁজে এখনও কাদছে,, তার হাতের বাধন এখনও বাধা রয়েছে শক্ত অবস্থায়। মেহমেদ নিজ ব্যাগ হতে টাওয়াল বের করে মাথায় বোলায়। মিনি ফাস্টএইড
বক্সটা বের করে সে বিছানায় রাখে। অতঃপর পা চালিয়ে আসে তার শ্রেয়সীর পানে। হুর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। মেহমেদ ও আসন মেরে বসল হুরের নিকটে, হুরের হাতের বাধন খুলতেই মুখ তুলে তাকায় হুর। কি নিষ্পাপ চাহুনি। মেহমের মৃদু হাসে। উঠে দাড়ায় সে হুরকে কোলে তুলেই। হুর কিছু বলে না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে মেহমেদের কাজগুলো। হুরকে ইতোমধ্যে বিছানায় বসিয়ে বাক ফিরে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে আসল মেহমেদ। তারপর পাশে পড়ে থাকা চুলের কাঠি
টা তুলে খুব যত্ন করেই একটা খোপা গাঁথলো মেহমেদ। অতঃপর হুরের শরীরে ওড়না জড়ালো । গালে পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো কনে গুঁজে দিলো হুরের। তারপর হুরের গালে আলতো হাতে বুলিয়ে , নরম গলায়
মেহমেদ শুধালো, ব্যথা করছে?
হুর ইশারায় বুঝালো তার ব্যথা করছে। মেহমেদ কিছু তুলো পাকিয়ে ধীরে ধীরে পরিষ্কার করতে লাগল, হুরের ঠোঁটের ফেটে যাওয়া অংশের। কাটা জায়গায় ভায়ডিন লাগাতেই হালকা আর্তনাত করে ওঠে হুর। তারপর হুরকে কাছে টেনেই বুকে নেয় মেহমেদ
এবং শুধায়, "তোমার কি সত্যিই মনে হয় প্রীতির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল । আমি জীবনে শুধু একটা মেয়েকেই ছুয়েছি,তাও তোমাকে বাধ্য হয়ে। সীমার ভেতরে থেকে। সেই সাহস আমার নেই । তোমায় আমি পবিত্র ও হালাল ভাবে গ্রহন করতে চাই । বেপোরেয়া মন, অবাধ্য চাওয়াকে সামলিয়েছি।তবে আজ যা করেছি এর জন্য আমায় ক্ষমা কর হুর। তোমায় এইভাবে বাইট দেওয়া উচিত হয়নি আমার। আমি তোমায় কোনো কিছুই খোলোসা করে বলতে পারবো না প্রীতির ব্যাপারে। আমি সাইকাকে কল করছি । ও সবটা তোমায় বলবে।"
মেহমেদের কথা শেষ হতেই হুর মেহমেদের বুক থেকে মাথা তুলে বসল, মোবাইলটা নিয়ে কর্নে চেপে ধরতেই শোনা গেলো সাইকার কন্ঠ,
"হ্যা ভাইয়া বলো"
হুরিজিয়ান কথা গুছিয়ে জবাব দেয়, "ভাবি বলছি। এখন আমায় বলো, প্রীতির সাথে
মেহমেদের কিসের সম্পর্ক ছিল?
" প্রীতি ভাইয়াকে পছন্দ করতো কিন্তু মেহমেদ ভাই পছন্দ করতো না, বড় আব্বু বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল মামুর কাছে, কিন্তু ভাই প্রথমেই মামনিকে বারণ করে দিয়েছে। ভাই প্রীতির ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতো, প্রীতির কয়েকটা ছেলের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন ও হয়েছে, মেহমেদ ভাই জানতো।প্রীতি যখন ভাইকে বলেছিল, ও ভাইকে পছন্দ করে, তখন মেহমেদ ভাই লোক লাগিয়ে সব জানতে পেরেছে। তারপর এক অনাকাক্ষিত কারনে
বাড়িতে মেহমেদ ভাই আর আসে না "
হুরিজিয়ান ভাবুক হয়েই জিজ্ঞাসা করল, "কি হয়েছিল"।
সাইকা ঢোক গিলে কথা গুছালো অতঃপর জবাব দিলো," মেহমেদ ভাই সেদিন
আমাদের বাসায় মামুর কিছু জিনিস নিয়ে এসেছিল,বাইরে তারপরই বৃষ্টি শুরু হয়। ভাই ওই বৃষ্টিতে যেতে চাইলেও যেতে দেইনি মা। মা আমায় বলেছিল, ভাইকে টাওয়াল দিয়ে আসতে কক্ষে। তখন আমি ঢুকতেই ভাই আমায় বাথরুমে টাওয়াল রাখতে বলেছিল আমি সেটাই রাখতে গিয়েছিলামI বের
হতেই দেখেছিলাম, প্রীতি ভাইকে বদনাম করতেই নিজ জামা ছিড়তে ছিড়তেই চিৎকার করছিল, তখন আমি সবটা চোখে দেখে ছিলাম। তারপর থেকেই মেহমেদ ভাই আমাদের বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
এই কারনে ভাই চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিল। মেহমেদ ভাইয়ের কোনো দোষ নেই ভাবী। ভাইকে ভুল বুঝ না । আমি কখন ও যদি কিছু
দেখেছি ওইটা মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করি না। "
সাইকার কথা শেষ হতেই হুরিজিয়ান কল কেটে দিলো।তারপর ফোনটা পাশে রেখে চুপ করেই বসে রইল।
মেহমেদ ও চুপ করে বসে আছে হুরের মতো। হচ্ছে না কোনো বাক্য বিনিময়। এর মধ্যেই মেহমেদের মোবাইল আবার বেজে উঠল, কল রিসিভ করতেই মেহমেদের কথার ধরন শুনেই হুর বুঝতে পারলো, ডেলিভেরী ম্যান খাবার নিয়ে এসেছে।
মেহমেদ চলে গেলো খাবার আনতে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে খাবার নিয়ে হাজির হলো মেহমেদ।
মেহমেদ এসে খাবার রেডি করে, হুরকে খাইয়ে দেয় এবং নিজেও খায়। তবুও আর একটি কথাও বলে না হুর। খাওয়া শেষ হতেই কক্ষ ত্যাগ করে মেহমেদ। মনে অভিমানের মেঘ জমেছে হুরের। সেটা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে মেহমেদ। তাই সাময়িক নিরবতা সেও পালন করলো।
.
.
বেশ কিছুক্ষন কেটে গিয়েছে। হুর ভাবুক দৃষ্টিতে চাইলো দরজার পানে। মেহমেদের কোনো দেখাই নেই। সবটা খোলসা হয়েছে। শুধু শুধু রাগ করার কোনো মানে হয় না। হ্যা সে রাগ করেছে, এই কারনে যে, মেহমেদের জ্বালাতন দিন দিন বেড়েছে তাই। তবুও তো লোকটা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। হুর বিছানা থেকে পা বাড়ায়, হেটে চলে মেহমেদকে খুজতে। ফুল ইউনিটের বাসাটা যেনো গলকধাধার মতো লাগছে। মাল জিনিসে বরপুর, কিন্তু কিছু গোছানো হয় নি।মেহমেদকে খুজতে খুজতে চোখ আটকে গেলো বারান্দার দোলনায়। সেখানে একাকী, নিরব হয়ে বসে আছে মেহমেদ। দেখে বোঝা যায়, একরাশ বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরেছে। হুর গিয়ে পাশে বসে, মাথা হেলিয়ে দেয় মেহমেদের কাধে তারপর বলে ওঠে, একদম কথা বলবো না আপনার সাথে, আমি রাগ করেছি।
মেহমেদ হাসে, কয়েক সেকেন্ড বাদেই উঠে দাঁড়ায় হুরের সামনেই, অতঃপর পাজাকোলে তুলেই শুধায়, তাহলে যাওয়া যাক রাগ ভাঙাতে।
হুরিজিয়ান হতভম্ব। সে চেচিয়ে বলে, নিচে নামাও মেহমেদ। কিন্তু মেহমেদ শোনে না, কক্ষে নিয়ে দাড়া করায় হুরকে। অতঃপর এগোয় হুরের নিকট। হুরের অবয়বে ফু দিয়ে এলোমেলো করে ছোট চুলগুলো। হুর তড়িৎ চোখ বন্ধ করে। মেহমেদ মুচকি হেসে, হুরের নাকের ডগায় আঙুল ছোয়ায়। মেহমেদ বলে ওঠে, তার রুপসী প্রেমীকাকে।"যেহেতু তুমি রাগ করেছ, রাগ ভাঙ্গানোর দায়িত্ব আমার। আমি তোমার রাগ তিন পর্যায়ে ভাঙ্গাতে পারি, ১.প্রাথমিক পর্যায় ২.মাধ্যমিক পর্যায় ৩. উচ্চতর। এখন বলো বলো তুমি কোন পর্যায়ের টা চাইছো। হুরিজিয়ান নাক-চোখ কুচকে জবাব দিলো,” আজাইরা!আমরা এখানে অংক করতে এসেছি নাকি? "
"আচ্ছা তোমায় বুঝিয়ে বলছি। প্রাথমিক পর্যায়ে রাগ ভাঙ্গাতে গেলে, তোমায় আমি রোমান্টিক কবিতা বা শাহেরি শোনাতে পারি, প্রাথমিক পর্যায়েও যদি কাজ না হয় তাহলে দ্বিতীয় পর্যায় প্রয়োগ করবো। সেখানে তোমার আর আমার মধ্যে কিছু গিফট দেওয়া নেওয়া যেতে পারে। তাতেও যদি কাজে না আসে, তাহলে উচ্চতর প্রয়োগ করতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ে থাকবে......
কথাটুকু বলেই মেহমেদ থেমে গিয়ে এক দুষ্টু হাসি হাসলো। হুরিজিয়ান এই দুষ্টু হাসির ইশারা বুঝতে পেরেই চোখ গোল গোল হয়ে গেলো হুরের,অতঃপর বিছানায় পড়ে থাকা বালিশটা তুলেই মেহমেদকে তাড়া করলো হুর৷ টম জেরির মতো ছোটাছুটির এক পর্যায়ে হুরিজিয়ানকে নিয়ে মেহমেদ আবদ্ধ হলো আলমেরীর দরজায়। ছোটাছুটির ফলে হুরের নিঃশ্বাস ভারি হয়। মেহমেদ ও শ্বাস ফেলে নিজেকে ঠিক করে। অতঃপর অন্য হাত দিয়েই আলমেরীর দরজা খুলেই বের করে হুরের সমান এক পান্ডা পুতুল। পান্ডাটা হুরের সামনে ধরতেই আনন্দে চকচক করে ওঠে চোখ। মেহমেদের পানে তাকিয়েই হুর শুধায়, " অনেক কিউট মেহমেদ "
মেহমেদ হুরের নাকের ডগায় টোকা মারে,মুচকি হেসে বলে, "আমার রিটার্ন গিফট চাই যে?"
পান্ডা পুতুলটায় হাত বুলিয়ে হুর জবাব দেয়, "হুম, আজকে তোমায় একটা রিটার্ন গিফট দেওয়াই যায়, বলো কি চাই? "
মেহমেদ পান্ডা পুতুলটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে, হুরের কোমড় জড়িয়ে কাছে টানে এবং নরম গলায় শুধায়,
"ডান্স উইথ মি বেইব, ফর সামটাইমস! "
হুরিজিয়ান ও শায় দেয় ,"যো হুকুম মেরে আকা "অতঃপর......
~চলবে।
(ছোট পর্ব এর জন্য দুঃখিত। পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও। তবে এর জন্য খুবই ভালো লাগে সবাই আমার গল্পের জন্য অপেক্ষা কর। আমি আগেও বলেছি। আমি অনেক ব্যস্ততার মাঝে গল্প লেখি। তাই ইনবক্সে এসে গালাগালি করবেন না। আমি পোস্ট করে চলে যাই,আমার মডারেটর পরে সবটা দেখে। আমি তেমন অনলাইনে আসি না। আমি এই ৫ দিন ধরে অনেক অসুস্থ, তাই দেড়ি হয়েছে গল্প দিতে। তাই গল্প দেড়িতে আসলে আমার উপর রাগ করবেন না। হ্যাপি রিডিং।)
0 Comments:
Post a Comment