#Crazy_for_you🍁
#পর্বঃ৩
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
মুরাদ মুচকি হেসে হুরিজিয়ানের পাশে আসন পেতে বসল।
টেবিলে বরের টোপরটা কাছে টেনে নিয়ে তড়িৎ হুরিজিয়ানের মাথায় পড়িয়ে দিলো, মুরাদ কক্ষের আলনা থেকে একটা লাল ওড়না নিয়ে এসে নিজের মাথায় পেচালো,এবং সুজনকে বলে উঠল, ভাই! কয়েকটা ছবি তুলে দেওতো, বেয়াইন কে বর বেশে ভালোই লাগছে।
সুজন পকেট থেকে ফোন বের করতে করতেই মুরাদকে বলে উঠল, তোকে বউ বেশে ডাইনি লাগছে।
দু ভাইয়ের কথা শুনে, হুরিজিয়ান হো হো করে হেসে দিলো, অনেক কয়েকটা ছবি তুলল সুজন মুরাদ হুরিজিয়ানের সাথে। এবার সুজন শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, কিরে মুরাদ মেহমেদের কাছে পাঠিয়ে দেই, ওযে আজ কত কিছু মিস করলো, এমন বেয়াইন থাকলে জানলে ওর জায়গায় আমি থাকলে পরিক্ষা রেখেই চলে আসতাম।
হুরিজিয়ান এবার সুজন কে বলল, আরে ছবি পাঠাবেন না প্লিজ। লজ্জায় ফেলে দিয়েন না।
এবার মুরাদ বলে উঠল ছবি তো সেন্ড হয়ে গেছে। সিন ও হয়ে গেছে।
হুরিজিয়ানের মাথা টাল হয়ে গেলো, বিস্ময় চোখে তাকিয়ে বলে উঠল, এটা ঠিক কাজ করলেন!, ওনার সাথে আমার না হয়েছে কথা না হয়েছে দেখা, এইগুলা করা আপনাদের ঠিক হয় নি।
মুরাদ হাসে সে বলে উঠে,
আরে চিল, আমার ভাই কিন্তু ওমন না, দেখা হলে বুঝতে পারবে, তাছাড়া তুমি তো কিছু কর নি আমারাই তো করেছি, তাই কোনো চিন্তা কর না। এভাবেই চলতে লাগলো, হাসি, ঠাট্টা, তামাশা। অতঃপর রাতে আকদ শেষে খাওয়া দাওয়া হলে ইমতিয়াজ তার পরিবার নিয়ে বাড়িতে ফেরে।হায়াত বিছানা রেডি করে চলে গিয়েছে মাত্র। হুরিজিয়ান ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ল।
আনমনা হয়ে মোবাইলের ওয়াইফাই অন করার সাথে সাথে নোটিফিকেশন আসতেই চেয়ে রইল পলহীন ভাবে।
"খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে আপনার সাথে হুর। "
কিন্তু হুরিজিয়ান কোনো রেসপন্স করলো না। সে আবারো অনলাইনের দুনিয়া থেকে বের হয়ে, ঘুমে আছন্ন হয়ে পড়লো।
অতঃপর কেটে গেলো আরো কয়েকটা দিন। সব গোছগাছ করছে হুরিজিয়ান। সামনে তার পরিক্ষা, ভার্সিটিতেও ক্লাস করতে হবে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এই কয়েক দিনের মধ্যে মুরাদের সাথে বেশ জমেছে হুরিজিয়ানের। কিন্তু সুজন বা মেহমেদের সাথে হলো না তার একটি কথাও। হায়াতের পরিবারকে বিদায় জানিয়ে হুরিজিয়ান চলল বাসায়।
_____
"দোস্ত, খুব পিপারেশন নিতে হবে। কজ আমাদের পরিক্ষা সামনে। তুই তো রাত দিন ২৪ ঘন্টাই পড়িস। আমায় একটু সকালে উঠাইয়া দিলে পারোস না "কথাটা হুরিজিয়ান বললো, তার প্রান প্রিয় বেষ্টিকে।
তানজিলা চোখ নাক কুচকালো ভিডিও কলে বলল, তোর মুখের গালি শোনার জন্য আমি রাজি না। অন্য কাউরে খোজ।
হুরিজিয়ান ভিডিও কলেই কান ধরলো, এই দেখ দোস্ত কান ধরসি। আর তোরে গালি দিবো না। সেদিন তো তুই একেবারে অনেক তাড়াতাড়ি উঠিয়েছিস। তাই একটু মিষ্টি মিষ্টি গালি দিয়েছে।
তানজিলা, হুরিজিয়ানের কথা শুনে বেংচি কেটে আবারো বলল, ওরে আল্লাহ, তোমার যে গালি তাও মিষ্টি। আচ্ছা ঠিক আছে যা। সকাল ৬ টায় উঠাইয়া দিবো আনে। যা ঘুমা। এভাবেই
দু বেষ্টির মাঝে কথা শেষে হতেই ঘুমিয়ে গেলো হুরিজিয়ান।
______
রাত ৪.৩০টা।
স্টেডি টেবিলে বসে বই পড়ছে মেহমেদ। ওদিকে মুরাদ বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। নিরব রাতে হালকা শোনা যাচ্ছে পোকাদের আওয়াজ। বাইরে মৃদু বাতাস বইছে। ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে চেয়ারে হিলিয়ে দিলো তার মস্তিষ্ক। মেসেঞ্জার লিস্টে গিয়ে বার কয়েক ফিরেও আসলো মেহমেদ। হুরের ছবি গুলো বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছে এই কয়দিন। মেয়েটার মধ্যে কি যেন একটা আছে। সে তো কখন এমন খুটিয়ে খুটিয়ে কাওকে দেখে নি। সেদিনের পর মেয়েটা আর কোনো মেসেজ করে নি। তার কি উচিত মেয়েটার সাথে কথা বলা। মেহমেদ আনমনেই দুষ্টু বুদ্ধি আটে। তার যে মেয়েটার গলা শুনতে ইচ্ছে করছে। সে ঘড়ির পানে চেয়ে দেখল, ইতোমধ্যে ৫ টা বেজে গেছে। নিজের পার্সনাল ফোনটাকে বের করে ফের হুরিজিয়ানের ইনবক্সে ডুকলো মেহমেদ। আলতো হাতে ভিডিও কলে টাচ করতেই দেখতে পেলো রিনিং, যা মানে মেয়েটা ওয়াইফাই অন করেই ঘুমিয়েছে। অতঃপর অপেক্ষা করতে রইল কল রিসিভ করার।
.
.
ওদিকে অগোছালো হুরিজিয়ান পড়ে পড়ে ঘুমচ্ছে। চুলগুলো মুখ এসে লেপ্টে গেছে। হঠাৎ ফোন আসাতেই নাক চোখ কুচকে ফোনটা রিসিভ করে, বেশ কয়েকটা গালি দিলো হুরিজিয়ান, গালি শেষ করে আবার বলে উঠল তানজিলার বাচ্চা তোরে কইছি ৬ টায় উঠাইতে, তুই উঠাইলি কয়টায়?
ঘুমু ঘুমু কন্ঠের গালি শুনে মেহমেদ তাজ্জব বলে গেলো। কি সব বলল মেয়েটা। কিন্তু হুরিজিয়ানের এমন রুপ দেখে অনায়াসে ঢোক গিলল মেহমেদ। সে চোখ ফেরাতে পারছে না। তার কেমন যেনো পাগল পাগল লাগছে। মেহমেদ নরম গলায় বলে উঠল, আপনি তো বেশ সুন্দর গালি দিতে পারেন, আই লাইক ইট।
পুরুষালি কণ্ঠ শুনেই, হুরিজিয়ানের টনক নড়লো বুঝি।সে চোখ মেলে তাকাতেই স্ক্রিনে লেখা দেখতে পেলো মেহমেদের নাম টা, এবং দেখা যাচ্ছে তার হাস্য উজ্জ্বল মুখ খানি। হুরিজিয়ান ফোনটাকে তড়িৎ কেটে দিয়ে উঠে বসলো বিছানায়। কিছুক্ষন আগে কি হলো সেই ভেবেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তার।
আবার মোবাইল ফোনে কল ভেসে আসতেই নড়ে চড়ে বসলো সে, মেহমেদ কল করেছে, তাও আবারো ভিডিও কলে। হুরিজিয়ান এবার কি করবে। জানালা খোলা থাকায় সকালের মৃদু আলো কক্ষে প্রবেশ করেছে, তাতে যেনো সব স্পষ্ট দেখা যায়, তাহলে কি মেহমেদ তাকে বাঝে ভাবে দেখে ফেলল নাকি। না না সে কি করে সম্ভব, সে তো কাথা টেনে ঘুমচ্ছিল। ফের আবারও কল আসাতে হুরিজিয়ান চমকে উঠল, তড়িৎ সে ওড়না জড়িয়ে কল টা রিসিভ করলো।
অতঃপর..... ঘুমু ঘুমু কন্ঠেই হুরিজিয়ান মেহমেদকে শুধালো, আসসালামু আলাইকুম।
মেহমেদ হাসলো, সে সালামের জবাব দিয়ে, পালটা প্রশ্ন করলো, তা বেয়াইন এতো সুন্দর গালি-গালাজ কোথা থেকে শিখলেন?
হুর কি বলবে উত্তরে, তাই ভেবে পাচ্ছে না। আরে কিছু মনে করবেন না, জাস্ট চিল, এইগুলো আসলে শিখাতে হয় না৷, এমনি এমনি হয়ে যায়। আমার এক বন্ধবীকে বলে ছিলাম আমায় উঠিয়ে দিতে, আমি বুঝতে পারি নি আপনি কল করেছেন, আমি যদি জানতাম তানজিলা বাচ্চা ফোন না হয়ে আপনার ফোন আসবে, আমি জীবনেও এমন গালি দিতাম না। মেহমেদ হুরের কথায় নিঃশব্দে হাসল। হুরের কথা শুনে সে বুঝতে পারলো, মেয়েটা বড্ড দুষ্টু। মেহমেদ উত্তর না দেওয়াতে হুরিজিয়ান বলে উঠল, বেয়াই তাহলে আজ রাখি, আমার সময়ের খুব মূল্য, আমার মতো জাতীয় সম্পদের সময় নষ্ট করার কোনো অধিকার আপনার নেই, আমি এখন পড়তে বসব, রাখি। কথাটা বলেই হুরিজিয়ান কল কেটে দিল। কল তো কাটলো তার সাথে ওয়াইফাই অফ করে দিল।
সে তো এ কথা বলেছে, লজ্জায় সে কথাও বলতে পারছে না। ওদিকে তাড়াহুড়ো করে এমন ফোন কেটে দেওয়ায় মেহমেদ আবারো কল করলো, কিন্তু হুরিজিয়ান অনলাইনে নাই। মেহমেদ বুঝতে পারলো, হুর লজ্জা পেয়েছে। হুরের লজ্জা পাওয়া মুখ খানি যেনো মেহমেদের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। অতঃপর বিছানায় শরীর হেলিয়ে দিয়ে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো মেহমেদ।
~চলবে নাকি?
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাও। মেহমেদ আর হুরিজিয়ানকে কেমন লাগছে তোমাদের। সুন্দর মন্তব্য আশা করছি)
0 Comments:
Post a Comment