গল্প তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল পর্ব ৩০

 তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল

পর্ব_৩০

সারিকা_হোসাইন


এক লহমায় কেটে গিয়েছে পনেরটি দিন।সোহাগ নামিরা দের নিয়ে দেশে ফিরে এসেছে।

মিসেস তারিন কোনোভাবেই আর নাফিজ মাহমুদ এর বাংলো তে থাকতে রাজি নন।তিনি তার ছেলে মেয়েদের নিয়ে তার স্বামীর পুরাতন বাড়িটা তে বাকী যে কদিন বাঁচবেন সে কদিন কাটাতে চান।

পুরাতন যেই ক্ষত দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরে কিছুটা সেরে উঠেছে মুহিতের ফোন কল পাবার পর থেকে পুরোনো সেই ক্ষত থেকে চুয়ে চুয়ে যেনো গড়িয়ে পড়ছে লাল টকটকে রক্তের ধারা।


বাংলাদেশ আর্মি হেডকোয়ার্টার মুহিতের বাবা আর ভাইয়ের লাশ বাংলাদেশে আনার সকল ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।

আগামীকাল ভোরের ফ্লাইটে তারা বাংলাদেশে পৌঁছুবে।


নামিরা থেকে থেকে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।নামিরার কোলের আড়াই মাসের বাচ্চাটা থেকে থেকে করুন সুরে কেঁদে উঠছে।হয়তো মায়ের কান্না অবুঝ শিশুটিও সহ্য করতে পারছে না।

স্বর্গ বাচ্চাটাকে নামিরার কোল থেকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।একদিকে ভ্যাপসা গরম তার মধ্যে কান্নাকাটি।বাচ্চাটা একদম নেতিয়ে যাচ্ছে।


কিন্তু এতকিছুর ভিড়ে মিসেস তারিন নির্বিকার।দীর্ঘ বছরের শোক সইতে সইতে পাথরে পরিণত হয়েছেন।

তনুজার  কাছে এই মুহূর্তে তারিন কে রোবট মনে হচ্ছে।অবশ্য জন্ত্র মানবী বলাই চলে।

যার হৃদ ক্রিয়া চালানোর জন্য একটা আস্ত মেশিন বুকের ভেতর বসানো হয়েছে সে কি আর নরম দিলের মানুষ আছেন?


কিছু লোক লাগিয়ে বাড়ির পাশের জঙ্গল গুলো পরিস্কার করানো হচ্ছে।কাজের লোকেরা বাড়ি ঘর ধুয়ে মুছে সাফ করছেন।মনে হচ্ছে বিশেষ কোনো অতিথি এই বাড়িতে আসবেন।তার জন্য এতো এতো আয়োজন।


――――――

শুক্রবার,১২ ই  আগস্ট 

আজকের আবহাওয়া টা মনোরম।আকাশে তীক্ষ্ণ রোদের তেজ নেই।ধরনীতে স্বর্গের হাওয়া বিরাজ করছে সর্বত্র।বাতাসে মিষ্টি একটা গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে যেনো সারাক্ষন।এতো এতো কাজ কর্ম করেও কেউ হাপাচ্ছে না।


মুহিত বিমানে উঠার আগে ফোন করে জানিয়েছে যে,তারা আসছে।

মুহিতের দাদা বাড়ির কিছু নিকট আত্মীয় বাসায় ভিড় করেছে।কেউ কেউ কোরআন তেলাওয়াত, তসবিহ পাঠে ব্যাস্ত।

নামিরার কান্না যেনো শেষ ই হচ্ছে না।

যেই ব্যাথা নতুন অতিথি পেয়ে ভুলতে বসেছিলো সেই ব্যাথা আবার কিভাবে ফিরে এলো?

―ওরে আল্লাহ তুমি কেনো এতো নিষ্ঠুর হলে আমাদের প্রতি?


সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়াতেই পু পু সাইরেন এর আওয়াজ পাওয়া গেলো।

আদনান ওয়াসিফ এর বিশাল তিন  তলা বাড়ির খোলা প্রাঙ্গণে প্রথমে একটি পুলিশের গাড়ি প্রবেশ করলো।এর পর দুটো আর্মি জিপ।এরপর মুহিত দের এম্বুলেন্স।

পিছে পিছে এলো মন্ত্রী মহোদয় এর গাড়ি।

নিমিষেই মানুষে গিজগিজ করে উঠলো আদনান ওয়াসিফ এর পরিত্যক্ত খালি বাড়িটি।

কান্নার আওয়াজ বাড়ালো নামিরা।বাইরে বের হবার জন্য পাগল হয়ে গেছে সে।স্বর্গ আর তনুজা কেঁদে চলেছে নামিরাকে জড়িয়ে।

সোহাগ ছোট বাচ্চাটা কে নিয়ে পায়চারি করছে আর চোখের জল মুছছে।

অপরাধীর ন্যায় মুহিত ঘরে প্রবেশ করলো।

তার সারা শরীর ছোট ছোট জখমে ভর্তি ।মুহিতের রোগা মলিন চেহারা দেখে স্বর্গের বুক ধক করে উঠলো।

কিন্তু পরিস্থিতি এখন অন্য ধাঁচের।

মুহিতের কাছে এখন গিয়ে এসব নিয়ে কথা বলার প্রশ্নই আসে না।


মুহিত ড্রয়িং রুমে এসে জোরে ডেকে উঠলো

―মা!

মিসেস তারিন আজ নিজেকে সজ্জিত  করেছেন।

গায়ে জড়িয়েছেন ধবধবে সাদা শাড়ি।মধ্যে খানে সিঁথি করে শক্ত করে হাত খোঁপা করে বেঁধে নিলেন।চোখের চশমাটা ঠিক করে  মাথায় কাপড় দিয়ে দূতলার আদনান ওয়াসিফ এর ঘর থেকে ধীরপায়ে বেরিয়ে এলেন।


মুহিত তার মায়ের এমন নির্বিকার রূপ দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো।তার মা কি পাগল হয়ে গেলো অধিক শোকে?

মা কি আবার হারিয়ে যাবে তাদের জীবন থেকে?


নামিরা সহসাই এসে ঝাপটে ধরলো মুহিত কে।কেঁদে ভাসালো মুহিতের বুক।


নাফিজ মাহমুদ নিজেই কাউকে শান্তনা দেবার অবস্থায় নেই।নিমিষেই পুরো বাড়িটি শোকের মাতমে ছেয়ে গেলো।


মুহিত আজ তার শক্ত খোলস থেকে বেরিয়ে বোনের সাথে মিলে কাঁদছে।ছোট বাচ্চার মতো কাঁদছে মুহিত।

মুহিতের কান্না দেখে স্বর্গ নিজেকে সামলাতে পারছে না।

মেজর আদ্রিয়ান আর সৌম্য এসে মুহিত কে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করলো।


মিসেস তারিন এসে মুহিতের সামনে দাঁড়ালেন।

মুহিত অসহায় ভাবে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো

―পাপাকে নিয়ে এসেছি মাম্মা!


মিসেস তারিন আজ একটুও কাঁদলেন না।মুহিত কে কঠিন সুরে আদেশ দিলেন

―যাও তোমার পাপার লাশ গাড়ি থেকে বের করে আনো।তাকে ধোঁয়ানোর ব্যাবস্থা করো।দ্রুত জানাজা যে দিতে হবে মুহিত।


মায়ের আদেশ পেয়ে মুহিত দৌড়ে ফ্রিজিং কারের নিকট আসে।

লাশ গাড়ি থেকে নামানোর আগে পুলিশ আর রিপোর্টার এসে মুহিত কে বিভিন্ন জেরা শুরু করে।


আর্মি জেনারেল এটা দেখে রেগে গিয়ে পুলিশকে ধমকে উঠেন।

পুলিশ সরতেই তিনি আরো কয়েকজন সোলজার ডেকে কফিন গুলো নামাতে আদেশ দেন।


বিশাল বড় ড্রয়িং রুমের  ফাঁকা জায়গায় পরপর দুটো খয়েরি রঙের কফিন সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

মুহিতের মা আদেশ দিলেন কফিনের ঢাকনা খুলতে।


আদ্রিয়ান আর সৌম্য ঢাকনা খুলতেই নামিরা একবার বাবার কাছে একবার মুকিতের কাছে গিয়ে পাগলের মতো বিলাপ করতে শুরু করে।


মুকিতের ফ্যাকাশে মায়াবী মুখখানা প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয় কে মুষড়ে দিলো।কেউ কেউ কষ্টে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

মুকিতের কফিনের কাছে গিয়ে মিসেস তারিন হাটু ভেঙে বসে পড়লেন।


নরম সুরে ডেকে উঠলেন

―মুকিত!মানিক আমার,এই দেখ মাম্মা বসে আছি,চোখ খুলবি না?


কিন্তু হায় আদরের মুকিত।সে তো চোখ খুলে না।

এবার মিসেস তারিন আদনান ওয়াসিফ এর কফিনের কাছে এলেন।

―আদনান,এই আদনান উঠবে না?

কথা বলবে না আমার সাথে?

অনেক দিন তোমার সাথে মন খুলে কথা হয়না।

আমাকে নিঃস করে দিয়ে বাবা ছেলে কী সুন্দর ঘুমাচ্ছ নাহ?


নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিলেন মিসেস তারিন।হাউমাউ করে কাঁদার ক্ষমতাও হারিয়েছেন বহু আগেই।

একটু কাঁদলেই বুকে অসহনীয় ব্যাথা অনুভূত হয়।দম আটকে আসে।


মুহিত এসে তার মা কে জড়িয়ে ধরলো।সোহাগ কারো কাছে বাচ্চাটা গছিয়ে দিয়ে কফিনের কাছে এসে  বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

যেই মানুষটা তাকে এতো বড় করলো,বিপদ থেকে  উদ্ধার করলো।অথচ সোহাগ সেই মানুষটির কোনো উপকারেই আসলো না।

এর চাইতে নির্মম কিছু কি ধরনীতে আর কিছু আছে?


নিজেকে স্বাভাবিক করে নাফিজ মাহমুদ কে ডাকলেন মিসেস তারিন।

―তোর দোলাভাই এর গোসল এর ব্যাবস্থা কর।


যেহেতু লাশ গুলো দীর্ঘদিন প্রিজারভেটিং করা ছিলো তাই দীর্ঘ সময় এগুলো এভাবে না ফেলে রাখাই ভালো।

রোগ জীবাণু বা ভাইরাস ছড়াতে পারে যখন তখন।


নাফিজ মাহমুদের হুকুমে কয়েকজন লোক এসে গোসলের কাজ শুরু করে দিলো।

একে একে আদনান ওয়াসিফ আর মুকিতের গোসল শেষে তাদের সাদা কাফনের কাপড় পরিয়ে খাটিয়ায় তোলা হলো।


তাদের জানাজা পড়তে দলে দলে মানুষ আসতে শুরু করলো।

আদনান ওয়াসিফ এর সহকর্মীরা এলেন।

হাজার লোকের সমাগমে শেষ হলো জানাজা।


মিসেস তারিন কবর কোথায় হবে সেটা আগেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন।

জানাজা শেষে দ্রুত তাদের দাফনের ব্যাবস্থা করা হলো।

সমস্ত কাজ শেষ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে রাত নামলো।

 

কিছু পুলিশ আর আর্মির বড় বড়  অফিসাররা ভিড় করেছে মুহিতের বাসায়।

তাদের একটাই প্রশ্ন লাশ ওখানে কিভাবে গেলো?


মুহিত মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছে।বাবা আর ভাইয়ের করুন চেহারা মনে পড়তেই চোখ থেকে খসে পড়লো মোটা মোটা দু ফোটা জল।

প্রশ্নবিদ্ধ নজরে প্রত্যেকে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে।


নীরবতা ভেঙে মুহিত বলতে শুরু করলো

―যখন সবাই জানাজানি হতে শুরু করে যে নির্বাহী অফিসার আর তার ছেলেকে কেউ খুন করে দিয়েছে,ঠিক সেই মুহূর্তই  পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলে গিয়েছিলো।রিপোর্টের কোথাও লিখা ছিলো না যে পাপা আর মুকিত কে কুপিয়ে ,শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে।

পাপা আর মুকিতের লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছিলো  আর আমাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিলো।


মুহূর্তেই খবরের কাগজে আর সংবাদ শিরোনামে হেডলাইন বের হয় যে সৎ নির্বাহী অফিসার আদনান ওয়াসিফ আর তার পরিবার আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে।তাদের দেহাবশেষ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আমি আর মামা অনেক মর্গ অনেক হসপিটাল তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি।কিন্তু কেউ সেই লাশের হদিস দিতে পারেনি।


আর্মি জেনারেল প্রশ্ন করলেন

―কোথায় তোমার সেই মামা মুহিত?

মুহিত আঙ্গুলি দিয়ে নাফিজ মাহমুদ এর দিকে নির্দেশ করলো।

সকলেই মুহিতের আঙ্গুল বরাবর তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।


এক যোগে সবাই প্রশ্ন করলেন

―মেজর জেনারেল নাফিজ মাহমুদ তোমার মামা?


মুহিত মাথা নিচু করে জবাব দিলো জি স্যার।


তুমি একথা কেনো এতোদিন আমাদের বলো নি মুহিত? অবাকের স্বরে জানতে চাইলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।


―আমি চাইনি আমার বাবা আর আর ভাইয়ের মতো মামাও হারিয়ে যাক।আশরাফ চৌধুরী পাপা কে বলেছিলো আমাদের যে হেল্প করবে তাকেই মেরে ফেলবে।


মুহিত কিছু স্থির চিত্র আর পেনড্রাইভ বের করে নিয়ে আসলো তার কক্ষ থেকে।


 সেগুলো পুলিশের  ডিআইজির হাতে তুলে দিয়ে মুহিত আহত সুরে বললো  এখানে আশরাফ চৌধুরীর বিভিন্ন খারাপ কাজের সামিল হওয়া কিছু পুলিশ অফিসার  এর তথ্য আছে।যারা মোটা অংকের ঘুষ খায় আর অপরাধ করে বেড়ায়।এখানে তাদের সকল বায়োডাটা আর কি কি অপরাধ করে তার সকল বিবরণ রয়েছে।পাপা নিজে এদের শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু উনাকেই চিরতরে শেষ করে দেয়া হয়েছে।

আমি চাই আপনারা সকল প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের এরেস্ট করুন।দেশকে কলুষিত মুক্ত করুন।


এর পর মুহিত আবার বলতে শুরু করলো―


মা যে  বেঁচে ছিলো এটা আশরাফ চৌধুরী জানতেন না।

তিনি কৌশল খাটিয়ে লাশ গুলো থাইল্যান্ড নিয়ে যান।

সেখানে এগুলো এতোগুলো বছর  প্রিজারভেটিং করা ছিলো।

উনি কেন এতদিন পর্যন্ত লাশ গুলো রেখেছিলেন তা আমার  কাছে অজানা।

হয়তো পাপার মৃত্যুতে দেশে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিলো এজন্য তিনি নিজে বাঁচার জন্য লাশ পাচার করে গুম করে ছিলেন।


আশরাফ চৌধুরী এখন কোথায় আছেন?

জিজ্ঞেস করলেন এক পুলিশ অফিসার।


মুহিত সাবলীল কন্ঠে উত্তর দিলো

বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন তিনি।

আর্মি অফিসার রা পুলিশ  গুলোকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

নাফিজ মাহমুদ বোনকে বিভিন্ন শান্তনা  দিলেন।স্বর্গ এখনো ফুপিয়েই যাচ্ছে।

নামিরা জ্ঞান হারিয়ে পরে রয়েছে।

ইতোমধ্যে বাড়ি খালি হতে শুরু করেছে।ধীরে ধীরে আত্মীয় স্বজন ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ আবাসস্থলে।


মুহিত কে উদ্দেশ্য করে মিসেস তারিন বলে উঠলেন

―তুমি আমার মনের এতদিনের দাউদাউ করে জ্বলা আগুন নিভিয়ে দিয়েছো মুহিত।

তোমার বাবা সত্যি ই আমাদের জন্য তার অবর্তমানে একজন যোগ্য গার্ডিয়ান রেখে গিয়েছে।

এভাবেই আমাদের আগলে রেখো মুহিত ।

বলেই মুহিতের গালে মমতার হাত ছোয়ালেন মিসেস তারিন।


মায়ের আদুরে হাতের পরশে চোখ বন্ধ করে ফেললো মুহিত।টুপ করে গড়িয়ে পড়লো উষ্ণ দুফোটা জল।


মুহিতের আজকে সত্যি ই পিতার যোগ্য পুত্র মনে হচ্ছে।

মুহিত পেরেছে তার বাবা,ভাইয়ের লাশের জানাজা করে কবর দিতে এবং অপরাধীদের শাস্তি দিতে।

তার বাবা ভাইকে বেওয়ারিশ লাশ হতে হয়নি।


************-***********

সমস্ত ঝুট ঝামেলায় পেরিয়ে গেছে একটি মাস।


ধীরে ধীরে ক্ষত গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।

নিজের স্বামী সন্তানের কবরের দিকে তাকিয়েই শান্তিতে বুক ভরে নিঃশাস নেন মিসেস তারিন।

তিনি তার পাশেই পুত্র স্বামীর উপস্থিতি অনুধাবন করতে পারেন।

সবাই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপন এ অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।

আশরাফ চৌধুরী নামক মানুষের অস্তিত্ব ও ভুলতে বসেছে সবাই।


কেটে গিয়েছে আরো পনেরো দিন।

আজ সৌম্য আর পিউ এর রিশিপশন এর অনুষ্ঠান।

পিউ একটি  লাল খয়েরি রঙের ভারী লেহেঙ্গা পড়েছে,সাথে ভারী ভারী ম্যাচিং করা পাথরের গহনা,ভারী মেকআপ।

সৌম্যের কাছে পিউকে অপ্সরা লাগছে।

বহু কষ্টে বেচারা নিজেকে ধরে রেখেছে।না হলে মন বার বার বলছে 

―যা ব্যাটা জড়িয়ে ধরে চুমু খা।ঐটা তোর ই বউ।


সৌম্যের রিশিপশন এর আয়োজন করা হয়েছে সেনাকুঞ্জে।বড় বড় সকল আর্মি অফিসার এসেছেন নিমন্ত্রণ খেতে।


সৌম্য অলরেডি কোয়ার্টার এর জন্য আবেদন করেছে।আজকে আপাতত ভাড়া বাসায় উঠবে।বাসাটা অবশ্য পিউ এর পছন্দতেই নিয়েছে সৌম্য।

বিশাল ড্রয়িং রুম আর খোলা বারান্দা পিউ এর খুব পছন্দ।পিউ এর সকল চাওয়া পাওয়া অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে সৌম্য।


বিশাল জাকজমক ভাবে শেষ হয়ে গেলো সৌম্য আর পিউ এর বিয়ের অনুষ্ঠান।


মুহিত কে টেনে কমিউনিটি সেন্টার এর  একটি চিপায় নিয়ে এসেছে স্বর্গ।

মুহিতের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে স্বরে  জানতে চাইলো

―আমাদের টা কবে হবে?


মুহিত স্বর্গের ঠোঁটে চুমু দিয়ে আদর মিশ্রিত কন্ঠে বলে  উঠলো আরেকটু গুছিয়ে নেই সবকিছু?

স্বর্গ মন খারাপ করে দৃষ্টি অবনত করে সম্মতি জানালো।


স্বর্গের মুখের দিকে তাকিয়ে মুহিত মনে মনে অনেক কষ্টে পেলো।ভাষায় প্রকাশ না করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো

―বাসায় চলো।


চলবে।

0 Comments:

Post a Comment