#Crazy_for_you🦋
#পর্বঃ২১
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
ধরনীতে আঁধার নেমেছে। বারান্দার রকিং চেয়ারে দুলছে কবির চৌধুরী। সে বিশেষ ভাবনায় মগ্ন। এখনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হুরের সাথে কথা বলবে কি বলবে না তাই নিয়েই বহু জোট। মান সম্মানের একটা ব্যাপার আছে। ইমতিয়াজের ফ্যামিলি সম্পর্কে বেশ ভালো খবরই জানা আছে তার। মেহমেদ যে কদিন এ বাসায় ছিল, তার ছেলেটাকে বড্ড পছন্দ হয়েছে। কিন্তু হুর এ বিষয়ে কি মতামত দিবে তাই নিয়েই যত চিন্তা। যদি মেয়ে বিয়েতে অমত করে। জোর করে তো আর চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
আয়শা বেগমের ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় কবীর চৌধুরী।
"হু বলো হুরের মা "
"কি ভাবলেন, আপনি! বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে "
"ভাবছি হায়াতের সাথে কথা বলবো, বোন যেহেতু অন্য কোথাও পছন্দ থাকলে হয়তো নিশ্চয়ই জানবে, আচ্ছা যাও ফোনটা নিয়ে আসো কথা বলে দেখি "
আয়শা বেগম টুল ছেড়ে উঠে দাড়ালেন, হন হন করে পা ফেলে নিয়ে আসলেন ফোন। কবির চৌধুরী চশমাটা ঠিক করে চোখে পড়ে ডায়েল করলো হায়াতের নাম্বারে। অতঃপর হায়াত কিছুক্ষন বাদেই রিসিভ করল কল।
"হ্যা বাবা বলো! "
"তুমি নিশ্চয়ই এতোক্ষনে যেনেছ,মেহমেদের জন্য তোমার বোনের বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। আমি জানি হুর তোমায় সব কিছু বলে, এখন আমায় সত্যি করে বল দেখি হুরের কি কোনো পছন্দ আছে?"
হায়াত হেসে জবাব দিলো," বাবা তুমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাও, হুরের পছন্দ আমি জানি, ও অমত করবে না। "
"বলছিস তো? "
"হু তবে ওকে এখন কিছু জানিও না, আগের মেহমেদ বিসিএস টা দিক তারপর তুমি বিয়ের বিষয়ে ওর সাথে কথা বল,আপাতত ফুফা আব্বার সাথে কথা ক্লিয়ার করে রাখ "
মেয়ে-বাবার কথা শেষ হলো। কবির চৌধুরীর মাথা থেকে যেনো চিন্তা নামলো।অতঃপর ওয়াসীম চৌধুরীর সাথে বাকি কথা শেষ করে সিদ্ধান্ত হলো বিয়ে নিয়ে। তবে এ বিষয়ে কিছুই যেন জানতে পারলো না হুর। তাকে ইচ্ছে করেই জানানো হলো বিয়ের কথা। ওদিকে হুরের দিন নিজের মতো করে কাটাতে লাগলো।
_____
মাঝে ২ সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। টেষ্ট এক্সাম শেষ হয়েছে হুরের। আজই লাস্ট এক্সাম ছিল সকালে। কিন্তু হুর আরেক ঝামেলায় ফাইসা গেল, সাইকার কারণে, হুরিজিয়ান কথার মাঝে মুখ ফসকে বলে দিয়েছে, তার সাথে মেহমেদের প্রেম চলছে। সেই কথা শুনতেই যেন সাইকা ভাবি ভাবি ডাকতে ডাকতেই ফেনা তুলে ফেলেছে মুখে। কি এক জ্বালাতন। এ যেন দ্বিতীয় মেহমেদ। হায় আল্লাহ এই পাগলকে এখন কিভাবে সামলাবে। সাইকার মুখ বন্ধ করতেই হুর সাইকাকে অফার করলো, ট্রিট দেবার জন্য।
লক্ষি বাচ্চাদের মতোই যেনো মানলো তার কথা। অতঃপর হুরিজিয়ান, তানজিলা, সাইকা মিলে গেলো ক্যাফেতে।
ক্যাফেতে যেতেই কোথ থেকে এসে যেনো জুটলো প্রীতি। প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হল সবাই, তারপর জনতে পারলো প্রীতি সাইকার কাছেই এসেছে। তার প্রয়োজনীয় একটা জিনিস সাইকার কাছে রয়ে গেছে তাই। প্রীতি চলে যেতে চাইলেও যেনো সাইকার কথায় যুক্ত হলো খাবার টেবিলে। কিন্তু হুর সহ্য করতে পারলো না। তার মনে কেমন যেনো কু গাইছে। শত চিন্তার মাঝে ঘটে গেলো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা, স্পষ্টই যেন বোঝা গেলো হুরের ফোনে প্রীতি পানি ঢেলে দিয়েছে।
হুরিজিয়ান হতভম্ব হয়ে গেলো। তার গলা থেকে আর খাবার নামলো না। তার মনে ভয় নেমে আসলো, মেহমেদের কথা চিন্তা করে। এবার কি কান্ড ঘটিয়ে ফেলে মেহমেদ।
হুরিজিয়ান তড়িৎ উঠে দাঁড়ালো, সব ঘুছিয়ে তানজিলার কাছে পেমেন্ট বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলো সাভারে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে ফোন সারাতে হবে।
অতঃপর আরো হতাশা নেমে আসল হুরিজিয়ানের চোখে। ফোন পরশু নিয়ে হবে, তা জেনে। এখন কি করবে হুরিজিয়ান।
হুরিজিয়ানের জিমেলে সব নাম্বার সেভ করা থাকে। তার কাছে নাম্বার মুখস্ত করাও একটা জ্বালার মত।শুধু সে বাবার নাম্বারটাই মুখস্থ রেখেছে আজ পর্যন্ত। ভাগ্যও যেন হুরের সাথে খেলছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। মেহমেদকে কিভাবে কল করবে। ভাবতেই মাথা ব্যথায় ফেটে যায় হুর। বিরক্তিতে লাল হয় তার অবয়ব। রাগ কন্ট্রোল করেই সে বাসায় দিকে পা বাড়ায় ।
দেখতে দেখতে ২ দিন কাটলো, এখন বিকেল হলেই সে ফোন আনতে যাবে সাভার। এই ভেবেই সে বসল বিছানায়। এর মাঝেই আয়শা বেগমের কন্ঠ শোনা গেলো।
"হুর তোর বান্ধবি ফোন করেছে কথা বল "
কথাটা শুনতেই তাজ্জব বনে গেলো হুর, সে তো কাউকে তার মায়ের নাম্বার দেয় নি।
মোবাইলটা নিয়ে কর্নের কাছে ধরতেই শুনতে পাওয়া গেলো মেহমেদের কন্ঠ,
"৩০মিনিট সময় দিচ্ছি!"
এর মধ্যে যদি তোমায় বাগানবাড়ি রেস্টুডেন্টে না দেখতে পাই হুর, তাহলে তুমি ভালো করেই জানো আমি কি করতে পারি।
-টাইম স্টার্ট নাউ!
গম্ভির গলায় মোবাইলের ওপাশ থেকে কথাটা হুরিজিয়ানকে বলল,মেহমেদ।
হুরিজিয়ান পালটা উত্তর দেওয়ার আগেই কলটা কেটে গেলো অন্য প্রান্ত থেকে।
ঘড়ির পানে চাইলো হুরিজিয়ান, ঠিক ৪টা বেজেছে।
ওড়না জড়িয়ে, হাতে পার্স নিলো হুরিজিয়ান। আয়শা বেগমের হাতে ফোন খানা ধরিয়ে হুরিজিয়ান বলে উঠল, মা,এই তোমার মোবাইল। আমার এক বান্ধবি কল দিয়েছিল একটু ওদের বাসায় যাবো, আসতে সন্ধ্যা হবে।
মিসেস আয়শা কিছু বলার আগেই, পাদুকাজোড়া পড়ে সিড়ি দিয়ে ছুটে নামলো হুড়িজিয়ান। হাত ঘড়িতে আবার সময় দেখে নিলো, ৪ টা ৫ বেজেছে।
রিকশা থামিয়ে উঠল, হুরিজিয়ান।
এই মেহমেদ নামক লোকটা, হয়তো হুরিজিয়ান ম'রে গেলেও পিছু ছাড়বে না।
অস্থিরতা কাজ করছে হুরিজিয়ানের মাঝে। যেকোনো ভাবেই হোক ৪:৩০ এর আগে সেখানে পৌছাতে হবে তাকে।
দ্রুত শ্বাস ফেলার কারনে গলা কাট হয়ে গেছে হুরিজিয়ানের। পানি পান করে গলা ভেজানো দরকার। কিছুক্ষন বাদেই কাক্ষিত জায়গায় এসে থামল রিকশা। রিকশাওয়ালা মামা হুরিজিয়ানকে শুধালো,
আফা! আইয়া পড়ছি, রিকশা গনে নামেন!
হুরিজিয়ান খেয়ালই করে নি, এসে পড়েছে সে।
ইতোমধ্যে রিকশা থেকে নামলো হুরিজিয়ান,
ভাড়া চুকিয়ে প্রবেশ করল রেস্টুরেন্টে।
ওয়েটার কে বলে এক বোতল পানি নিয়ে নিলো সে। পানির টাকাটা দিয়ে বসে পড়ল কর্নারের কাক্ষিত জায়গায়। গলা ভিজিয়ে ঘড়ির পানে আবার চাইলো হুরিজিয়ান, ৪:২৫ বেঝেছে।
কি হবে আজ কিছুই জানে না। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত তার আসাটা যে ভয়ংকর বিষয়।
এইতো কয়েক মাস হলো তার সাথে পরিচয় হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে যে এতো কিছু হবে, হুরিজিয়ান তা কল্পনাও করতে পারে নি। জীবনটা তো খুব ভালোই চলছিলো। হুরিজিয়ানের বোনের বিয়ে হওয়ার পর থেকেই হুরের জীবনের রুটিন ওলোট পালোট হয়ে গেছে।
হুরিজিয়ান টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলো।
অতঃপর
হুরিজিয়ানের ভাবনার ঘোর কাটলো, পুরুষালী হাতের ছোয়ায়। চোখ তুলে চেয়ে দেখলো, তার সামনের সিটে মেহমেদ বসা। হাত চেপে ধরার কারনে পীরায় আতকে উঠল, হুরিজিয়ান।
দাতে দাত চেপে রাগন্বীত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেহমেদ বলল,মোবাইল কোথায় তোমার হুর?
হুরিজিয়ানের হাত টা ছেড়ে দিয়ে টেবিলে ঘুষি মারলো মেহমেদ,গম্ভির গলায় বলে উঠল,
সে সামথিং, হুর !
হুরিজিয়ান কান্নারত কন্ঠে জবাব দিলো, মোবাইলে পানি পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সারাতে দিয়েছি।
মেহমেদ সিট থেকে উঠে হুরিজিয়ানের নিকট মাথা নিচু করে গাল আকড়ে ধরলো,
২দিন হয়েছে, আমি তোমায় ফোন দিতে দিতে মরিয়া হয়ে পড়েছি। বাসায় কি আর কোনো ফোন নেই, আমায় কি কল করা যেত না!
আমি বহু কৌশলে তোমার আম্মার ফোন নাম্বার পেয়েছি। আমায় কেনো তুমি এভাবে শাস্তি দিচ্ছো, বলো হুর।
মেহমেদের হাত খানা গাল থেকে সরিয়ে চোখের অশ্রু মুছলো হুরিজিয়ান।
স্বর গাঢ় করে জবাব দিলো, আপনি পাগল হয়ে গেছেন, পাগল না হলে কেউ সামান্য এই কারনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে না।
মেহমেদ রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না, দেয়ালে চেপে ধরলো হুরিজিয়ানকে, চোখের পানে চেয়ে বলল,
হ্যা, আমি পাগল, আর এই পাগল আমি ছিলাম না । পাগল করেছ তুমি!
তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে, না পাড়ছি ঘুমতে, না পারছি আমি পড়তে। ৩ বেলা তোমার কন্ঠ না শুনতে পেলে আমি পাগল হয়ে যাই।
আমার যে তুমি নামক অসুখ হয়েছে, সেই অসুখের প্রিসক্রেপশনে যে তুমি ৩ বেলা।শুধু আর কয়েক মাস হুর। শুধু ক্যাডার পদটা পাই, তারপর সারাজীবনের ওষুধ হিসেবে তোমায় বিয়ে করে নিয়ে যাবো।
হুরিজিয়ান স্তব্ধ মেহমেদের কথা শুনে।
মেহমেদ ছেড়ে দিলো হুরিজিয়ান কে। এসে বসে পড়লো সোফায়। কলেজ ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে রাখলো টেবিলে।
হুরিজিয়ান বসলো মেহমেদের সামনে।
মেহমেদ ১মিনিট চুপ থেকে বলে উঠল, হুর তোমার জন্য এনেছিলাম, খুলে দেখো!
হুর কাপা কাপা হাতে বক্সটা কাছে টেনে নিলো। কিন্তু বক্স খুললো না। মৃদু গলায় বলল, আমায় বাসায় যেতে হবে। মেহমেদ হুরের কথা গ্রাহ্য করলো না, উলটো জিজ্ঞাসা করে বসল, ফোন সারিয়ে কবে দেওয়ার কথা বলেছে?
হুরিজিয়ান অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, আজ, আজকে দেওয়ার কথা বলেছে।
মেহমেদ এখনও তার শ্রেয়সীর পানে চেয়ে আছে, কিন্তু হুর মাথা নিচু করে আছে,
মেহমেদ ওয়েটার কে ডাকলো, নিজের মতো অর্ডার করে দিলো ডিশ।
অতঃপর কিছুক্ষন বাদেই চলে আসলো খাবার। হুরিজিয়ান টু শব্দও করলো না, চুপ চাপ আহার করলো, খাবার টুকু। খাওয়া শেষে হুরকে মেহমেদ বলল,চল!
হুর মাথা তুলে চাইলো, নিচু স্বরে বলল, কোথায় যাবো?
মেহমেদ ফিচেল হেসে জবাব দিলো, বিয়ে করতে।
মেহমেদের হঠাৎ এমন কথা শুনে, সবটা মাথার উপর দিয়ে গেলো বোধ হয়।
হুরিজিয়ান কিছু বলতে পারলো না, মেহমেদ হাত খানা খাবলে ধরে টেনে নিয়ে গেলো, রিসিভশনে। বিল পে করে, বাইরে বেড়িয়ে রিকশা দার করালো মেহমেদ। ছুটলো মোবাইলের দোকানে, যেখানে হুরিজিয়ান মোবাইল সারাতে দিয়েছে। ১০ মিনিট বাদেই সেখানে গিয়ে পৌছায় তারা৷ মোবাইলটা নিয়ে হুরকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে, মেহমেদ পা বাড়ায় তার নানুবাড়ির উদ্দেশ্যে।
~চলবে।
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাও। গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি)
0 Comments:
Post a Comment