গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ৩২ ( সমাপ্ত)

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- (অন্তিমপাতার শেষাংশ)


- আজ প্রায় এক সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে আবিরকে ছুটি দিলো,,সেইদিনের পর আজ একসপ্তাহ ধরে আবিরকে হাসপাতালে রাখা হয়েছিল,,,যখনই জ্ঞান ফিরছিলো তখনই পাখি পাখি বলে চিৎকার করছিলো আর তার সাথে জিনিসপত্র ভাঙচুর করছিলো,,,কখনো ঘর ছেড়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছিলো পাখিকে আনতে,,,নাওয়া খাওয়া তো ভুলেই গিয়েছিলো,,,এক কথায় আবির পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিল পেখমের শোকে,,,তাই বাধ‍্য হয়েই ডাক্তার ওকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়,,,এইকদিন ডাক্তার ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েই রেখেছিলো,,,কালকে থেকে পাগলামো কমায় আজকে একটু স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে ডাক্তার ওকে ডিসচার্জ করে দেয়,,,,


- আবিরের এই অবস্থার জন্যে অশোক বাবু আর অনুপমা দেবী ব‍্যাঙ্গালোরে চলে আসেন,,মনোরমার শরীরের অবস্থা ভালো না,,, বারবার চেতনা হারাচ্ছেন,,, দেবেন্দ্র বাবুর একই অবস্থা,,, তীয়াকে দেখার জন্য বাধ্য হয়ে লোক রাখতে হয়েছে,,আর পুলকের মাসিরাও এসেছে,,,বোনের শোকে পুলক ভেঙে পড়েছে,,, নিজের সদ‍্যজাত সন্তান আর বৌকে সময় দিতে পারছে না,,, সারাদিন পেখমের ঘরে থাকে,,,


- নরেন্দ্র বাবুকে কিছুই জানানো হয়নি,,, উনার শরীরের যা অবস্থা,, কিন্তু বিমলা দেবী সব জানেন তাই তো নরেন্দ্র বাবুর অগোচরে কাঁদেন,,,, আর তীয়া সেতো ভালো করে কাঁদতে পযর্ন্ত পারছে না,, একদিকে সিজার তার উপরে বাচ্চা আর এইরকম পরিস্থিতি,, ওর উপর দিয়ে কি যাচ্ছে সেটা এক মাত্র ওই জানে,,,


- আবিরকে অশোক বাবু কলকাতাতে নিয়ে চলে আসেন,,,ওর দেখভাল এখন অনুপমায় করছে,,,সারাদিন শুধু পেখমের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে,,, তারপর অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে,,,

________________________________________


- অনুপমা আজ সকাল বেলায় আবিরের ঘরে গিয়ে দেখে যে আবির ল‍্যাপটপে পাখির ছবি গুলো দেখছে,,আর ফোনে কার সাথে কথা বলছে,,,


- আমি ওসব কিছুই জানতে চাই না,,, ৩০ মিনিট সময় দিলাম তার মধ্যে ইনফরমেশন আমার চাই,,,যে কোনো কিছুর মূল্যে,,,,( কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দিলো আবির তারপর পেখমের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,,)


- কোথায় আছো তুমি??? কেন আমি আমার সর্ব চেষ্টা করেও তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না??? সবাই মেনে নিয়েছে যে তুমি আর নেই কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি,,, তুমি আছো,,,যতদিন আমার অস্তিত্ব থাকবে ততদিন তুমি আমার সাথেই থাকবে,,,আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে দেখো,,,কেনো ফিরে আসছো না,,,এই দেখো নিঃশ্বাস পযর্ন্ত নিতে কষ্ট হচ্ছে,,,,( বলেই কেঁদে ফেললো,,,কথায় আছে অতি কষ্টেও পুরুষ মানুষের চোখ দিয়ে জল গড়ায় না,,,কিন্তু আজ সে কষ্টের সীমা মনে হয় লঙ্ঘন হয়েছে,,, অনুপমা দূর থেকে ছেলের কষ্ট দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে নিরবে কাঁদতে থাকেন,,,ভগবান তো এমনটা না করতেও পারতো,,,কেন এত নিষ্টুর হলো ওদের দুজনের উপর)

___________________________________________


- পেখমের অন্তক্রিয়ার কাজ হচ্ছে মনোরমাদের বাড়িতে,,,সবাই নিশ্চুপ ভাবে বসে আছে,,, পেখমের বন্ধুরাও এসেছে,,, ওদের চোখ দিয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পড়ছে,,,, ব্রাহ্মণের মন্ত্র উচ্চারণ আর থেকে থেকে পুলক আর অদ্বিতীয়ার ছেলে প্রিয়মের কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে,,, তীয়া ছেলেকে চুপ করাতে বারবার ব‍্যর্থ হচ্ছে,,, ওইটুকু দুধের শিশুর দিকে তাকিয়ে মনোরমা হঠাৎ করে জোড়েই কেঁদে ফেললেন,,, তারপর তীয়ার কাছ থেকে প্রিয়মকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন,,, অমনি বাচ্চাটির কান্না বন্ধ হয়ে গেল,,,,


- পেখমের ঘরের দরজায় পাশে বসে আছে পুলক,,,চেয়েও নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না,,, কোথায় ওর দায়িত্ব সবাই কে সামলে রাখার কিন্তু পারছে না,,, দেবেন্দ্র বাবু ঘরে শুয়ে আছেন,,,আর উনার মাথার পাশে বসে আছেন বিমলা দেবী,,,স্বামীর অসুস্থতা, ছেলেকে এই ভাবে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে তারপর তার আদরের একমাত্র নাতনী যে আর নেই,,এই এক এক ধাক্কা সহ‍্য করে তিনি আজ শান্ত,,,,নরেন্দ্র বাবু পেখমের মৃত্যুর খবর শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন,,,আর সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত এখনো তিনি হসপিটালে রয়েছেন,,,, সংসার টা কেমন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে,,,,এতকিছুর মধ‍্যেও প্রিয়মের প্রতি কেউ অবহেলা করছে না,,, ওইটুকু দুধের শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই নিজেদের মনকে শক্ত করতে চেষ্টা করছে,,,কিন্তু যতবার আবিরকে দেখছে ততবারই সবাই আবার ভেঙ্গে পড়ছে,,,ছেলেটার দিকে তাকানো পযর্ন্ত যাচ্ছে না,,,


- অনুপমা অনেকটা জোড় করেই আবিরকে ঘর থেকে বের করে পেখমদের বাড়িতে এনেছে,,এইভেবে যে অন্তত পেখমের শেষ কাজে ওর পাশে থাকুক আবির ,,,কিন্তু এখানে এসে বাধলো এক বিপত্তি,,,আবির যখন দেখলো পেখমের ছবিতে মালা দেওয়া আর ওর অন্তিম কাজ চলছে,,তখন ওর মাথা মুহূর্তে গরম হয়ে গেল,, কপালের রগ ফুলে গেল,,,ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে চিৎকার বলে ওঠে,,,


- কার অনুমতি নিয়ে পেখমের অন্তিমক্রিয়া করা হচ্ছে??? 


- আবিরের চিৎকার শুনে সবাই ভয়তে সামনে তাকিয়ে আছে,,, আবির আবার বললো,,,


- আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি,,,কার অনুমতিতে এই সব করা হচ্ছে??? তোমরা কি সত্যিই ভেবে নিয়েছো যে পাখি মারা গেছে?? ওর ডেডবডি দেখেছো তোমরা?? বলো,,,,


- আবির তুই এসব কি বলছিস?? তুই একটু শান্ত হ বাবা,,(অনুপমা)


- এতক্ষণ প্রিয়ম চুপ করে থাকলেও আবিরের চিৎকার শুনে জোড়ে কেঁদে দিলো,,,তা দেখে সবাই ভড়কে গেল,,,তীয়া প্রিয়মকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়,, কারণ ও সবার আগে বারণ করেছিল পেখমের অন্তিমক্রিয়া করার,,,,ও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে পাখি বেঁচে আছে,,,,


- পুলক ,মামনি আর বাপির মাথা ঠিক নেই তাই ওরা মেনে নিয়েছে,, কিন্তু তুই?? তুই কি করে বিশ্বাস করছিস যে আমার পাখি মৃত??? আমি জানি ও বেঁচে আছে ভাই,,,আমি ওকে খুঁজে বের করবোই এইটুকু ভরসা রাখ,,,,আর এইযে আপনি(ব্রাহ্মণের উদ্দেশ্যে) হ‍্যাঁ আপনি এই মুহূর্তে বিদায় হবেন,,, এখানে কোনো কাজ হবে না,,, আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন,,আর তোমরা(পেখমের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে) তোমরাও কি মেনে নিয়েছো যে তোমাদের পেখু আর বেঁচে নেই??মারা গেছে,??(আবিরের মুখে এমন কথা শুনে ওরা কেঁদে দেয়,,তারপর বলে,,,)


- না আবির দা আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে পেখু আমাদের মধ্যে নেই,,, তাই মেনে নিতেও পারছি না,,, কিন্তু কষ্ট হচ্ছে আমাদের খুব,,,,( সবাই চোখের জল মুছে)


- পুলক আমি আজকে আর এই মুহূর্তে ব‍্যাঙ্গালোরে যাচ্ছি,,তুই যাবি আমার সাথে,,,(আবিরের কথা শুনে পুলক ওর দিকে তাকায়,,পুলকের চাহনি দেখে আবির বলে,,)


- আমার মন বলছে পাখির খোঁজ আমরা ওখানেই পাবো,,,হঠাৎ আবিরের ফোন বেজে ওঠে,,,ও দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে,,, ও ফোনটা রিসিভ করার কয়েক মুহূর্ত পর আপনাআপনি হাত থেকে ফোন পড়ে যায় ফ্লোরে ,,,,,,

__________________________________________


( পাঁচ বছর পর)


- টুকু টুকু কথা শুনবি কিন্তু,,, মা দেখেছো ও এই বাড়িতে আসলেই এমন করে,,,আমার কথা একদম শুনতেই চাই না,,,,


- আহ তীয়া তুই বেশি বকাবকি করিস তাই শুনতে চাই না,,, টুকু দাদুভাই এইদিকে এসোতো,,,,এই দেখো মা ভাত মেখেছে মাছ দিয়ে,, খেয়ে নাও,,একটু পরে ঠাম্মি ফোন করে যদি শোনে যে তুমি দুপুরে খাও নি তখন কিন্তু আমাকে আর মা কে বকা দেবে,,,,(অনুপমা)


- ও দিদুন আমি এই মাছ দিয়ে খাবো না,,,,প্লিজ জোড় করবে না,,,( প্রিয়ম)


- এইটুকু ছেলে আবার এটা খাবো না ওটা খাবো না করবে,,,মা তুমি ওর একটা কথাও শুনবে না,,,এইসব নাটক ও খাবে না বলে করছে,,,


- মা একদম এইটুকু এইটুকু ছেলে বলবে না,,, কাল আমার পাঁছ বছর পূর্ণ হবে,,,আর আমি এতটাই ভালো স্টুডেন্ট যে আমার তিন বছর বয়সে মামাই আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল,,, আর বাবা বলে আমি তার বোনের মতো মেধাবী,,, তাহলে হলাম না আমি বড়ো,,,,তাইনা দিদুন???(প্রিয়ম)


- হ‍্যাঁ প্রিয়ম একটু সবকিছুই আগে আগে শিখেছে,,,বাংলা উচ্চারণ, ইংরেজি উচ্চারণ খুব ভালো করে পড়তে পারে,,,এমনকি হিন্দ কথা বলতে পারে অল্প অল্প,,, বাড়ির সবাই ওকে পেখমের জেরক্স কপি বলে,,,,আবির সবার সামনে গম্ভীর হলেও একমাত্র ওর সাথে বন্ধুর মতো মেশে,,ওকে সঙ্গ দেয়,,,,


- হ‍্যাঁ তুমি একদম ঠিক কথায় বলেছো,,,তুমি আমার পেখমের পুরো জেরক্স কপি,,,এখন বলোতো কি খাবে??(অনুপমা)


- দিদুন তুমি আমাকে দই দিয়ে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দাও,,,( টুকুর কথা শুনে অনুপমা ওকে তাই খাইয়ে দেয়,,তারপর প্রিয়ম দৌড়ে আবিরের ঘরে চলে যায়)


- মা দই শুধু টুকু এই বাড়িতে আসলেই দাদাভাই কিনে আনে বলো??


-হ‍্যাঁ,, ছেলেটা আজও আমার উপর রেগে আছে,,,আমি বুঝতে পারি কিছু কিছু ক্ষেত্রে,,, দেখনা আজ পাঁচটা বছর নিজের জন্মদিনে আমাকে কিছু করতে দেয় না,,, পায়েসটা অবদি খাই না,,,(বলেই আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন)


- আমি দাদাভাই কে বললাম কাল তো টুকুর জন্মদিন,, তুই থাকবি তো?? তা সেই শুনে দাদাভাই বললো" টুকুর জন্মদিনে আমাকে পাবি,,,কিন্তু ভুলেও যেন আমার জন্মদিন পালন করতে যাবি না,,,তাহলে কিন্তু এই শেষবারের মতো টুকুর জন্মদিনে আমাকে পাবি,,,জানিস তো আমি এইসব পছন্দ করি না"।


- কেন যে সেইদিন পেখমের কথা মেনে নিয়ে ওকে যাওয়ার জন্য হ‍্যাঁ বলে দিয়েছিলাম?? আজ সেই থেকে ছেলেটা আমার,,(আর বলতে পারলেন না অনুপমা দেবী)


- পেখুকে খুব মিস করি মা,,,তোমার জামাই ,,মামনি পাপা সবাই খুব মিস করে,,,


- আমিও খুব মিস করি,,,মেয়েটা আমাকে এত ভালোবাসে,,,আমি যে কোনদিকে যাবো,,,,

__________________________________________


- টুকু চল ঘুমাবি,,,বাবা এসেছে নিতে,,,চল,,


- না মা আমি আজ মামাই এর সাথে থাকবো,,(টুকু)


- না মামাই এখন রেস্ট নেবে,,,তুমি চলো,,,আমাদের যেতে হবে,,


- তীয়া ও থাকুক আমার সাথে,,,তুই চলে যা পুলকের সাথে,,,(আবির)


- কিন্তু দাদাভাই,,,


- আহ তীয়া এক কথা বলতে আমার ভালো লাগে না,,, এখন যা তুই,,,( তীয়া চলে যাওয়ার পর আবির ল‍্যাপটপে কাজ করতে বসে যায় আর টুকু সারা ঘর জুড়ে খেলতে শুরু করে দেয়,,,একসময় খেলতে খেলতে ক‍্যাবিনেট থেকে একটা ডাইরি পাই,,,তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,,)


- মামাই এটা কি?? ওয়েট এতে লেখা আছে হৃ দ ওয়েট ওয়েট হৃদয় হ‍্যাঁ #হৃদয়হরণী,,,,, মামাই হৃদয়হরণী কে??? আর এটা কি???


- টুকু ওটা যেখানে ছিল, সেখানে রেখে দাও,,,,আর এইদিকে এসো,,,অনেক রাত হয়েছে,, ঘুমাবে,,,তুমি তো জানো টাইম মেইনটেইন করি আমি,,,


- সরি মামাই,,(তারপর টুকুকে ঘুম পাড়িয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,)


- "যে আমার বুকের বাঁ পাশে অবস্থিত এই হৃদয় টা হরণ করে নিয়ে গেছে,সেই তো আমার #হৃদয়হরণী"।


- রাত বারোটার সময় আবিরের ফোনে দুটো কল আসে,,আবির সেটা দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে ব‍্যালকনির দিকে চলে যায়,, আজ সে ঘুমাবে না,,,

_________________________________________


- আজ দুই পরিবার ভীষণ ব‍্যস্ত,,, কারণ টুকুর পাঁচ বছরের জন্মদিন টা খুব বড়ো করেই সেলিব্রেট করছে ওরা,,আর একটা কারণ আছে আর তা হলো আবির ,,,অন‍্যবার এইদিনে ও বাড়িতে থাকে না,, কিন্তু আজ থাকবে টুকুর জন্যে,,,,


- সন্ধ‍্যের সময় সব গেস্টরা চলে এসেছে আবিরদের বিল্ডিংয়ের হলরুমে,,, অনুষ্ঠানটা এখানে করা হচ্ছে,,, টুকু আজকে একটা রয়‍্যাল ব্লু শার্ট আর ব্ল‍্যাক ফরমাল প‍্যান্ট পড়েছে,,,কারণ এটা ওর পিমি পছন্দ করে পাঠিয়েছে,,, চুল গুলোতে জেল দিয়েছে,,,হাতে মামাই এর মতো ওয়াচ পড়েছে,,,,আর ওর ইচ্ছাতেই আবির আর পুলককেও একই ড্রেস পড়তে হয়েছে,,


-বার্থডে পার্টিতে যখন সবাই উপস্থিত তখন তীয়া ওকে কেক কাটতে বলে,,,কিন্তু টুকু বলে একটু পর সে কাটবে,,অনেকটাসময় পর সবাই যখন ওকে কেক কাটতে বলছে,,তখন ও কেকটা কাটছে না,,,


- প্রিয়ম কেকটা কাটো,,,(আবির)


- মামাই আমার একজন গেস্ট আসবে,,,আমি তার অপেক্ষায় আছি,,,


- সে কখন আসবে,,,সবাই অপেক্ষা করছে তো,,,(পুলক)


- ওই তো এসে গেছে,,,সামনে তাকিয়ে দেখো,,( টুকুর কথা মতো সবাই সামনে তাকায় আর সাথে সাথে নীল আলোর ফোকাস টা আগন্তুকের মুখের উপর পড়ে,,সবাই সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়,,, আবিরের তো কয়েক মুহূর্তের জন্যে হৃদস্পন্দন থেমে যায়,,,


- কারণ আবিরের সামনে নীল শাড়ি পরিহিতা এক নারী দাঁড়িয়ে আছে,,, ঘন কালো চুল গুলো যার খোলা থাকার দরুন বাতাসে উড়ছে,,,সাদা স্টোনের হার কানের দুল গুলো যেন নীল আলোয় চকচক করছে,,, আর কপালে সাদা স্টোনের টিপটা জ্বলজ্বল করছে,,,অবাধ্য চুল গুলোকে কানের লতিতে গোজার কারণে হাতের চুড়ি গুলোর রিনিঝিনি শব্দ আবিরের কানে বাজছে,,,হঠাৎ প্রিয়মের কথায় ওর হুশ ফেরে,,,


- পিমি তুমি চলে এসেছো,,, আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি,,,কেকটাও কাটিনি,,,,


- এখনো কেক কাটোনি,,,চলো চলো কেক কাটবে,,,


- পেখু তুই সত‍্যিই এসেছিস?? কোথায় কালকে একবারো তো বললি না??( মনোরমা)


- ঠাম্মাম ওটাতো সারপ্রাইজ,,,,(টুকু)


- পেখু এটা কিন্তু খুব অন‍্যায়,,( অনুপমা)


- সরি মা আর মামনি,,, কিন্তু আমি কি করবো,,,তোমাদের এই বিচ্ছুটা আমাকে বলতে বারণ করেছে,,,(টুকুকে উদ্দেশ্য করে পেখম কথাগুলো বললো,,,তারপর কেক কাটা হলে পেখম নিজের হাতে প্রিয়মকে আর আবিরকে কেক খাইয়ে দেয়,,আর আবিরের কানে কানে বলে শুভ জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা রইলো আপনার জন্যে,,,সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাই না বলে আবির কেকটা খেয়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে,,)

___________________________________________

(পাঁচ বছর আগের ঘটনা)


- সেইদিন রাজিব আবিরকে ফোন করে,, আর ফোন করে বলে,,পেখমের নাম বোডিং পাসে ছিল না,,, তারপর এয়ারপোর্টের সিসিটিভি চেক করে দেখে পেখম বোডিং পাস চেকিং করার সময় দ্রুত গতিতে দৌড়ে এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে চলে যায়,,, সেই কথাটা শুনে আবির আর পুলক তখনই এমারজেন্সি টিকিট কেটে ব‍্যাঙ্গালোরে চলে যায়,,,তারপর সেখানে গিয়ে থানায় ডাইরি করতে গিয়ে জানতে পারে ঐ দিন ঠিক ওই সময়ে এয়ারপোর্টের ব‍্যাকের রাস্তাতে গুরুতর ভাবে একটা এক্সিডেন্ট হয়,,দুজন স্পট ডেড আর দুজন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি,,, তাদের মধ্যে একজন মেয়ে আর একজন ছেলে,,,তাদের অবস্থা এখনো ক্রিটিক্যাল,,,,


- সেই কথা শুনে আবির আর পুলক তক্ষনাৎ হাসপাতালে যায়,,, আর গিয়ে জানতে পারে পেখম আই সি ইউ রুমে আছে,,,আবির এইভেবে শান্তি পাই যে পেখম বেঁচে আছে,,,গুরুতর জখম হওয়ার কারণে পেখমের এখনো জ্ঞান ফেরেনি,,,তারপর যখন পেখমের জ্ঞান ফেরে তখন জানতে পারে সেই দিন পেখম টিকিট টা আনেনি তাই দ্রুত বেরিয়ে এসে ফ্ল্যাটে যাচ্ছিলো ট‍্যাক্সি করে,, কিন্তু রাস্তার মাঝেই এক্সিডেন্ট হয় আর তারপর ওর কিছু মনে নেই,,আবির নিজের দায়িত্বে পেখমকে সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট নার্সিংহোমে শিপট করে,,,দীর্ঘ একমাস পর পেখম সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে কলকাতায় ফেরে,,তারপরেও বাড়িতে ডাক্তার আর নার্সের অধীনে থাকতে হয় ওকে তিনমাস,,,, সেই তিনমাস বাড়ির সবাই আর তার সাথে আবিরো নিজের ভালোবাসা আর কেয়ার দিয়ে ওকে সুস্থ করে তোলে,,,


- তারপর সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো প্রিয়মের যখন এক বছর বয়স তখন পেখমের নামে একটা চিঠি আসে,,আর তাতে লেখা থাকে পেখম সিলেক্ট হয়েছে নেপালের কাঠমান্ডুর এক নামকরা ইউনিভার্সিটি তে ভূগোলে এম এস সি করার জন্য,,,, বাড়ির সবাই পেখমকে যেতে দিতে রাজি থাকলেও মনোরমা আর আবির রাজি ছিল না,,কিন্তু পেখমের জেদের কাছে শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে ওদের,,, অনুপমা সবার আগে রাজি হওয়ার দরুন আজও আবির ওর মায়ের উপরে রেগে আছে,,,আর পেখমের সাথে সেই দিনের পর থেকে নিজে থেকে কোনো যোগাযোগ করে নি,,পেখম ফোন করলেও রিসিভ হয়নি সেই কল,,,

_________________________________________


- অনুষ্ঠান শেষে পেখম ওর বাড়ির সবার সাথে কথা বলে তারপর মামনি আর পাপার সাথে বাড়ি চলে আসে,,


- আজ না জানি কি হবে,,,তোর তো আজকে আসার কথা ছিল না মা??( অশোক বাবু)


- পাপা পরীক্ষা শেষ,, আর রেজাল্ট তো ইমেইল দিয়ে দেবে,,তাই ভাবলাম ওখানে থেকে আর লাভ নেই,,,আর রইলো বাকি তোমাদের ছেলের কথা সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও মামনি,,,(ওদের সাথে টুকিটাকি কথা বলে পেখম নিজের ঘরের দিকে যায়)


- আজ কত গুলো দিন পর ও ওর ভালোবাসার ঘরে যাচ্ছে,,, ক্রমেই আবিষ্কার করলো যে ওর হাত পা কাঁপছে,,, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে,,,মুখ ফুলিয়ে একটা শ্বাস ছেড়ে ও ঘরে গেল,,,ঘরে এসে দেখে যে ঘরে নীল মৃদু আলোটা জ্বলছে আর আবির ব‍্যালকনির রকিং চেয়ারে বসে আছে,,, ও ধীর পায়ে সেখানে গেল,,,


- পেখমের উপস্থিতি আবির বুঝতে পেরেও চোখের উপর থেকে হাত সরায় নি,,আর তাই দেখে পেখম হঠাৎ করেই আবিরের কোলে বসে পড়ে,,,


- হঠাৎ করে কোলের উপর ভারী কিছু অনুভব হতেই আবির চোখ মেলে তাকায়,,,আর তাকিয়ে দেখে পেখম ওর দিকেই চেয়ে আছে,,,আবির উঠে যেতে চাইলেও পেখম বাঁধা দিয়ে বলে,,,


- উঠবেন না,,,আপনি আর কতদিন আমার উপর রেগে থাকবেন?? এবার তো ক্ষমা করে দিন,,,(পেখমের কথায় আবির কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে নিয়ে চুপ করে থাকে,,,) প্লিজ চুপ করে থাকবেন না,, আমাকে বকুন ,,শাস্তি দিন তবুও চুপ করে থাকবেন না,,, আপনি তো জানতেন যে ওটা আমার স্বপ্ন ছিল,,, আর আপনি নিজেই তো বলেছিলেন আমার সব স্বপ্ন গুলো আপনি পূরণ করবেন তবে কেন আপনি এইরকম করছেন,,,


- আবির কিছু না বলে উঠে যেতে চাইলে পেখম আবিরকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে নিরবে চোখের জল ফেলে,,,বুকের উপর গরম তরল পদার্থ জাতীয় কিছু অনুভব হতেই আবির বলে ওঠে,,


- "সে কি জানে না তার ওই মায়াবী চোখের জল আমার সহ‍্য হয় না"??


- অথচ এই জল ছিল আমার এতগুলো দিনের সঙ্গী,,,(পেখম)


- ওটা তোমার শাস্তি ছিল পাখি,,,আমার অবাধ্য হওয়ার শাস্তি, যা নিতান্তই খুব কম ছিল আমার মতে,,,


- আপনি একজন নিষ্টুর লোক,,,এতগুলো বছর যে আমার সাথে কথা বলেনি কিন্তু ঠিক আমার খোঁজখবর নিয়েছে,,,কিন্তু তার একবারের জন্যও দয়া হয়নি আমার উপর,,,ঐ জন্যে তো একটি বারের জন্য আমার ফোন রিসিভ করেননি,,, এমনকি জন্মদিনের দিন গুলোতেও না,,,


- নিষ্টুর কি তুমি ছিলে না?? নিষ্টুর না হলে পারলে কি করে আমাকে এখানে ফেলে নেপালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে, যেখানে আমি বারণ করেছি,,, আর রইলো বাকি খোঁজ খবর নেওয়া,,,সেটাতো তুমিও নিতে টুকুর থেকে,,,আমি তোমার নাড়ি নক্ষত্র সব জানি পাখি,,, টুকু টাকে পুরো নিজের মতো করেছো,,,,


- ঠিক আছে সব ভুল আমার,,, আমি কালকেই নেপালে চলে যাবো,,,আর আপনাকে ডিসটার্ব করবো না,,, আসছি( কথাটা বলেই চলে যেতে নিলে আবির একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে পেখমকে,, তার পর বলে,,,)


- নেপালে ফিরে যাওয়ার কথা বললে এবার সত‍্যি সত্যিই তোমার পা দুটো ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো,,,(বলেই বুকে জড়িয়ে নেয় পেখমকে)


- আপনি ক্ষমা করেছেন আমাকে??


- তোমাকে আর কতবার ক্ষমা করবো পাখি??


- যতবার আমি ভুল করবো,,


- ভুল তো না,,,তুমি জেদ করো,,,আর দেখো সেই জেদের কাছে আমি বারবার পরাজিত হয়ে যায়,,, তাই না হলে এই যে এখন তোমাকে এইভাবে আমার বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে রাখতাম না,,,


- ভালোবাসি খুব আপনাকে,,,,


- পেখমের মুখে কথাটা শুনে আবির তৃপ্তির হাসি হেসে বলে ওঠে,,,


- " সে কি জানে তার মুখ থেকে আমি যতবারই ভালোবাসি শব্দটা শুনি ঠিক ততবারই আমার হৃদয়ের স্পন্দন কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও থেমে যায়"??


-"সে কি জানে, সে যদি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে তাহলে মৃত্যুর আগে পযর্ন্ত আমি তাকে আগলে রাখার ক্ষমতা রাখি"??


- "সে কি জানে , আমার হৃদয়ের প্রত‍্যেকটা স্পন্দনে শুধু মাত্র তার নামই প্রতিধ্বনিত হয়"??


- আবিরের মুখে কথাগুলো শুনে পেখম লজ্জায় মুখ গুজে রাখে আবিরের বুকে আর আবির তাই দেখে পরম স্নেহে পেখমের অবাধ্য চল গুলোকে কানের লতিতে গুজে দেয়, তারপরে কপালে অধরযুগল দ্বারা স্পর্শ করে বলে ওঠে ,,,


-" সে শুধু তার এই লজ্জা মাখানো মায়াবী মুখটা দেখিয়েই আমার হৃদয় হরণ করতে সার্থক হয়,,,আর তাই জন্যে আমি তাকে ভালোবেসে বলে ডাকি, সে আমার একান্তই আমার #হৃদয়হরণী" ।


                            (সমাপ্ত)


(


- যারা গল্পটি পড়েছেন সবাই রিয়‍্যাক্ট ও কমেন্টের মাধ‍্যমে জানাবেন কেমন লাগলো আজকের পর্ব আপনাদের,,, 

গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ৩১

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- (অন্তিমপাতার প্রথমাংশ)


- ভোর রাতে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও বাইরে শীতল বাতাস বইতে থাকে,,,,,অর্কিড ফুলের উপর বিন্দু বিন্দু জল জমা হয়েছে,,,, রাস্তা গুলো যেন বৃষ্টির জলে ধুয়ে নতুন রূপে সজ্জিত হয়েছে,,,, থেকে থেকে পাখির কোলাহল শোনা যায়,,, আকাশে উড়তে থাকে রঙ বেরঙের পাখি,,,,ধিরে ধিরে আকাশের অন্ধকারকে ম্লান করে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে,,,,,


- আর সকালের সেই কোমল রোদ ব‍্যালকনির থাইগ্লাসকে ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করে, এবং সারাঘরকে মৃদু আলোয় ভরিয়ে দেয়,,,হঠাৎ চোখের উপর আলোর আভাস পেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে পেখম,, তারপর কিছু সময় পর আস্তে আস্তে চোখ খোলো,,,চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে সামনে তাকতেই নিজেকে আবিরের উন্মুক্ত বুকে আবিষ্কার করে,,, তারপর নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জায় গুটিয়ে নেয় বিছানার চাদরে নিজেকে,, কাল রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠছে ওর,,,,কি করে আবিরের সামনে যাবে??তার চোখে চোখ রাখবে,,,ও তাড়াতাড়ি করে নিজের শরীরে বিছানার চাদর টা ভালো করে জড়িয়ে উঠে যেতে চাই,, কিন্তু পারে না,,, তার আগেই দুটো শক্ত হাত ওকে পিছন থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখে,,, ও লজ্জায় পিছনে তাকাতে পারে না,,,, হঠাৎ অনুভব করলো এই ঠান্ডা ওয়েদারের মধ‍্যেও ও ঘেমে যাচ্ছে,,,আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,,,প্লিজ ছাড়ুন না,,,আমি ওয়াশরুমে যাবো,,


- ওয়াশরুমে যাবে তা ঠিক আছে,, কিন্তু এই ভাবে পিছনে ফিরে আছো কেন?? আমার দিকে ফিরে তাকাও,,,


- আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,,, প্লিজ ছেড়ে দিন না,,,


- সত্যিই কি ছেড়ে দেবো??? ভেবে বলো??


- আবির কথাটা বলার সাথে সাথেই পেখম আবিরের দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে,,, আর তাই দেখে আবির ঠোঁট কামড়ে হাসে,,,,তারপর পেখমের কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বলে,,,


- " সে কি জানে এবারের জন্মদিনের সব থেকে সেরা উপহার টি সে আমাকে দিয়েছে?? সে কি জানে আমার জীবনের সব থেকে সেরা রাতটি কাল ছিল"??


- আবিরের কথায় পেখম কোনো উত্তর দেয় না,,,,আবির পেখমের অগোছালো চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে আবার বলে,,,,


- "তার তো আমার সামনে এত লজ্জা পাওয়ার কথা নয়,,,কারণ তার লজ্জা তো আমি কাল রাতেই সব নিবারণ করে দিয়েছি,,,( কথা গুলো বলে পেখমের মুখটা উচু করে কপালে ভালোবাসার পরশ দেয়)

_________________________________________


- আরে ছবি গুলো খুব সুন্দর হয়েছে,,কিন্তু তুই একটাও তুললি না ওর সাথে???


- উফফ বৌমনি একটু আস্তে কথা বলো,,,এত উত্তেজিত ভালো না এখন তোমার শরীরের পক্ষে,,,দাদুন কেমন আছে এখন??


- এখন একটু ভালো,,, তবে ডাক্তার সকালে এসেছিল,,,,


- আমি বরং একটা কাজ করি,,,উনাকে বলে আমি আজকেই কলকাতায় চলে যায়,,,, তোমারো শরীর টা ভালো যাচ্ছে না,,,আমি এখানে শান্তি মতো ঘুরতে পারবো না,,,


- ওরে আমার পাকা গিন্নি ,,তোমাকে অত চিন্তা করতে হবে না,,, মা ,মামনি,,, বাবা,পাপা সবাই আছে ,,আর তোর দাভাই তো আছে,,,অত চাপ নিস না,,,


- ডাক্তারের চেকআপ কবে??


- কালকে বিকেলে,,,,তোর দাভাই নিয়ে যাবে,,,


- তুমি একটু সাবধানে থাকবে,,,আর মাকে বলো আমি ফোন করেছিলাম,, এখন রাখছি,,দেখি কি রান্না করি,,,


- এই শোন তার আগে দেখ ফ্রিজে কি আছে??


- তেমন কিছুই নেই বৌমনি,,, ৫০০ মতো মটন আছে,,,আর অল্প চিংড়ি মাছ আছে,,,একটা ভাড়ে অল্প টক দই আছে,,,আর স‍্যালাটের সব সবজি আছে,,, আটার ব্রেড আছে,,ফল আছে,,ডিম আছে,,,


- তাহলে কি রান্না করবি??


- কি আর করবো,,উনি তো আবার আমাদের মতো খান না,,,তাই ভেবেছি,,,এখন জুস আর আফ বয়েল ডিম সিদ্ধ মরিচ গুঁড়ো দিয়ে আর একটা ব্রেড দেবো,,,দুপুরে মটন স্টু আর  সবজি ও ফ্রুটস স‍্যালাট দেবো আর পায়েস ,,,রাতের টা এখনো ভেবে দেখিনি,,


- এইগুলো তো দাদাভাই কে দিবি,,,কিন্তু তুই কি খাবি??


- ও আমি,,কেন গরম গরম ভাত আর চিংড়ি মাছের মালাইকারি,,, আর তার সাথে টক দইতে একটু চিনি মিশিয়ে নেবো,,ঠিক আছে এখন রাখছি,,,


-ঠিক আছে রাখ,,,আমিও কিছু খায়,,,কেমন যেন খিদে খিদে পাচ্ছে,,,

________________________________________


- আবির রেডি হয়ে লিভিং রুমে এসে দেখে পাখি রান্নাঘরে রান্না করছে আর বারবার শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের মুখ মুছছে,,,, তাই দেখে আবির পেখমের কাছে গিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে,,,


- নিজের কোমড়ে হঠাৎ কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে ওঠে পেখম,,, ওর আর বুঝতে বাকি থাকে না এটা কার স্পর্শ হতে পারে কারণ এটা যে ওর চিরচেনা স্পর্শ,,, আর তার থেকে বড়ো কথা হলো সেই মানুষটির শরীরের ঘ্রাণ, ও কাজ করতে করতে বলে,,,


- আপনি টেবিলে গিয়ে বসুন,,, আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি,,, এখন একদম জ্বালাতন করবেন না,,,


- আমি তো ভাবলাম বাইরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে ,,,তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো,,,


- ঘুরতে যাবো কিন্তু বিকেলের দিকে,,,এখন না,,,এমনিতেই কালকে আপনি ঘুমাতে দেননি সারারাত,,, ভোরের দিকে যদিও বা ঘুমালাম কিন্তু সকালের আলোর জন্যে ঘুম টা ভেঙে গেল,,,তাই আমি আজ সারা দুপুর ঘুমাবো,,,,


- সে তুমি ঘুমাতেই পারো কিন্তু যে কটা দিন এখানে আছো আমি কিন্তু একটা রাতও তোমাকে ঘুমাতে দেবো না,,,,বরং জ্বালাতনের মাত্রাটা একটু বারিয়ে দেবো,,,,


- আপনি ভীষণ লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছেন,,,, মুখে কিন্তু কিছুই আটকাচ্ছে না আপনার,,,,ছাড়ুন আমাকে কাজ করতে দিন,,,


- হমমম হুহুউউ  প্রথম কথা আগে আটকাতো কিন্তু কাল রাতের পর থেকে কিছু আটকাবার কথা না,,,আর দ্বিতীয়ত এখন ছেড়ে দিচ্ছি পরে কিন্তু ধরলে কোনো ছাড়াছাড়ি হবে না,,,( কথাটা বলেই পেখমের গালের পাশে অধর ছোঁয়ায়,,, আর সেই ছোঁয়ার আবেশে পেখম চোখ বন্ধ করে দেয়,,,, তাই দেখে আবির জোড়ে পেখমের কোমড়ে চিমটি কাটে,,,পেখম আওয়ুচচ করে শব্দ করতেই আবির ওকে ছেড়ে দৌড় দেয়,,,আর পেখম ওর পিছনে পিছনে দৌড়ায়)


-দাঁড়ান আপনি,, যদি সাহস থাকে তো একবার দাঁড়িয়ে যান,,,( সোফার পাশ দিয়ে গোল করে ঘুরছে দুজন,,)


- ক্ষমতা থাকলে ধরে দেখাও,,,


- তবে রে ( সোফা থেকে একটা বালিশ ছুড়ে মারে আবিরকে)


- তুমি আমাকে বালিশ দিয়ে মারলে তো,,,ঠিক আছে এবার দেখো কি করি তোমাকে বলেই উল্টে পেখমকে ধরতে যায়,,,আবিরকে এইভাবে আসতে দেখে পেখম ছুটে বেডরুমে চলে যায় তারপর দরজা লক করার আগেই আবির পৌঁছে যায়,, আর পেখমের বাহু দুটো ধরে ফেলে,,,


- বলো কি করবে এই তো আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি??? বালিশ ছুড়ে মারলে কেন??( গম্ভীর হয়ে)


- পেখম কিছুটা ভয় পেয়ে বলে সরি,,আর কোনো দিন এরকম হবে না,,,(মাথা নিচু করে)


- পেখমের চুপসানো মুখটা দেখে আবির মিটিমিটি হাসে,,,তারপর নিজেকে সামলে বলে "এরকম টা বার বার হবে" বলেই পেখমের গালে চুমু খায় তারপর পেখমের কোমড়ে গোজা শাড়ির আঁচল খুলে দিয়ে জোড়ে চিমটি কাটে তারপর খুব জোড়ে হাসতে হাসতে দৌড়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে,,,,


- পেখম কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,,, তারপর পুরো বিষয়টা বোধগম্য হতেই ও বলে ওঠে" দাঁড়ান আপনি,,আজকে আপনাকে আমি ছাড়বো না,,,বলেই দৌড়ে যায় আবিরের দিকে,,, আর আবির ওর থেকে পালাতে পালাতে বলে,,


- কে বলেছে তোমাকে ছাড়তে,,,আমি তো বলছি আমাকে ধরে রাখো,,,আমাকে ছেড়ো না( চোখ টিপ দিয়ে)


- আবিরের এইরকম কথা শুনে পেখম বলে" আপনি একটা অসভ্য লোক,,,খেতে আসুন,, অনেক দেরি হয়ে গেছে,,,

___________________________________________


- তুই কিন্তু ভীষণ দুষ্টু হয়ে যাচ্ছিস বাবা,,,,মাকে কেউ এভাবে কষ্ট দেয়,,,,তুমি দেখতে পাচ্ছো না মা কত কষ্ট পাচ্ছে তোমার লাথি দেওয়াতে,,,তীয়া খুব কষ্ট হচ্ছে??(পুলক)


- হমম ভীষণ দুষ্টু হয়েছে ঠিক তোমার মতো,,,


- আমি আবার কি করলাম,,, চ‍্যাম্প দেখেছিস তো তোর মা আমাকে দোষ দিচ্ছে,,,


- তা ছাড়া কি করবো ,,আপনিও আমাকে ভীষণ জ্বালাতন করেন,,,  সব সময় জোড় করে খাওয়ান,,,


- আবার আপনি,,,,তুমি করে বলতে বলেছি না,,,


- দশ বছরের অভ‍্যাস কি করে পাল্টাবো বলো,,,


- অনেক কথা হয়েছে এখন এই গরম দুধ টুকু খেয়ে নাও,,,হলুদ মেশানো আছে,,,


- আমার খেতে ইচ্ছা করছে না,, প্লিজ ,,


- একদম চুপ করে আমার কথা শুনবে,,,দুপুরে যা খেয়েছিলে সব বমির করে দিয়েছো,,, ওষুধ গুলো তো খেতে হবে,,তাড়াতাড়ি ফিনিশ করো তীয়া,,,


- বুঝলি চ‍্যাম্প তোর বাবা আমাকে একটুও ভালোবাসে না,,,,জোড় করে সব সময়


- আচ্ছা ভালোবাসি তাই সব সময় জোড় করি,,,বুঝলি চ‍্যাম্প তোর মা পুরো পাঁচ- ছয় বছরের বাচ্চা হয়ে গেছে ,,,জোড় করে তাকে খাওয়াতে হয়,,,আর একটু কিছু হলে সে রাগ করে,,,,


- এই একদম আমাকে পঁচাবেন না,,,


-ভালো হচ্ছে না কিন্তু,,,আবার আপনি???


- বেশ করবো আপনি বলে ডাকবো,,,,আপনি তো আমার " আপনি ময় তুমি,,,,খুব ভালোবাসি তোমাকে আমি"।


- আমিও খুব ভালোবাসি তোমাকে,, আর হ‍্যাঁ চ‍্যাম্প কেও,,,

__________________________________________


-আমি তো মাত্রই বায়না করতে যাচ্ছিলাম তখন আপনি কি করে বুঝলেন আমার তখন আইসক্রিম আর ভুট্টা খেতে ইচ্ছা করছিল???


- আমি তোমার নাড়ি নক্ষত্র সব জানি পাখি ,,,সুতরাং এইসব জানা আমার কাছে কোনো ব‍্যাপার না,,,( ল‍্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে)


- এখন এসব কাজ ফাজ রাখুন না,,,চলুন একটু ব‍্যালকনিতে গিয়ে বসি,,,আমি আপনার জন্য কফি করে আনছি,,,


- না তার আর দরকার নেই,,, এমনিতেই তোমার জন্য আজকে আমার খাওয়ার রুটিন উলোট পালোট হয়ে গিয়েছে,,, তার উপরে অত দুধ,মিষ্টি, বাদাম কিসমিস দিয়ে পায়েস করে জোড় করে খাওয়ালে আমাকে,,, পেটে আর একফোঁটা জায়গা নেই,,, 


- অত মেইনটেইন করে কি হবে,,,সেই তো আপনি বুড়োই থেকে যাবেন,,,


- আমি বুড়ো?? আমাকে দেখে কি তোমার বুড়ো মনে হয় পাখি???


- তা নয় তো কি?? এমন সুন্দর সময়ে কেউ ল‍্যাপটপ মুখের সামনে রেখে কাজ করে?? কোথায় আমি ভাবলাম আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে দেখবো,,,তা না,,,আপনি সত‍্যিই একটা বুড়ো লোক,,( বলেই ব‍্যালকনির দিকে চলে যায় পেখম)

__________________________________________


- আকাশের চাঁদটা আজ সম্পূর্ণ গোলাকৃতি,,, মিটিমিটি তারা ভর্তি আকাশে আজ চাঁদটাকে খুবই আকর্ষণীয় লাগছে পেখমের কাছে,,,থেকে থেকে মৃদু হাওয়া এসে ওর অবাধ্য চুল গুলোকে আরো অবাধ্য হতে সাহায্য করছে,,,,পাশে থাকা ঠান্ডা জলের বতল থেকে এক ঢোক জল পান করলো পেখম,, জল পান করার সময় কিছু জল ঠোঁট দিয়ে গড়িয়ে গলায় পৌঁছে যায়,,, জলের বতল টা রেখে ওড়না দিয়ে সেটা মুছে নিতেই আচমকা কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওকে,,,পেখম একটুও চমকায় না কারণ ও জানে আবির ছাড়া আর কেউ না,,তাই ও নড়াচড়া না করে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,


- এই পাখি সরি,,,চলো আমি কফি করে আনছি,,,তারপর একসাথে বসে গল্প করবো,,,


- তার দরকার নেই,,, এখন আমার কফি খাওয়ার মুড নেই,,,


- প্লিজ পাখি রাগ করো না,,, আচ্ছা বাবা সরি বলছি তো,,,ঠিক আছে তোমার যখন যা ইচ্ছা হবে আমাকে রান্না করে খাওয়াবে আমি একদম মানা করবো না,,, এবার আর রাগ করে থেকো না,,,


- কে বললো আমি রেগে আছি?? আমি রাগ করে নেই,,,,


- সে কি জানে ,সে যখন রেগে থাকে তখন তার নাক লাল হয়ে যায়?? সে কি জানে, সে যখন রেগে থাকে তখন এই হৃদয় ব‍্যাকুল হয়ে যায় তার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে??


- আবিরের কথায় পেখম মাথা নিচু করে নেয়,,আর তাই দেখে আবির বলে ওঠে,,


- ভালোবাসি তো,,,কেন সে বোঝেনা আমাকে??


- আমি যথেষ্ট বুঝি আপনাকে,,, আর আপনার থেকেও বেশি আমি আপনাকে ভালোবাসি,,,কিন্তু আপনি সেটা বোঝেন না,,,,


- আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে,, এবার তো ক্ষমা করে দাও,,,ঠিক আছে ফ্রিজে আরো এক বাটি পায়েস আছে না,,,ওটাও খেয়ে নেবো,,তারপর তোমার ওই আইসক্রিম গুলোও খাবো এবার একটু হাসো,,,,


- আবিরের এমন কথা শুনে পেখম হেসে ফেলল,,,তারপর আবার সিরিয়াস হয়ে বলে,,,আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন,,, আমি একটা অন‍্যায় করেছি,,,,


- পেখমের কথায় আবির ভ্র-যুগল কুঁচকে বলে,, কি অন‍্যায় করেছো???


- আমি সোহিনীকে নিয়ে আপনাকে সন্দেহ করেছিলাম আর তাই সেদিন আপনাকে ওইভাবে খারাপ খারাপ কথা বলে কষ্ট দিয়ে ছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনি যতটা না কষ্ট পেয়েছেন তার থেকে বেশি কষ্ট আমার হয়েছে,,,আপনি রাগ করে চলে আসার পর প্রতিটি রাত আমার নির্ঘুমে কেটেছে,,,


-,,,,,,,( নিশ্চুপ)


- আবির চুপ করে থাকায় পেখম আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,প্লিজ আমার উপর রাগ করে থাকবেন না,,, আমি অন‍্যায় করেছি তার জন্য ক্ষমাও চাইছি,,,,


- তা ভুলটা ভাঙ্গলো কি ভাবে??( গম্ভীর হয়ে)


- সোহিনী যখন ওর বিয়েতে ইনভাইট করতে এসেছিল,, তারপর রাজিব এর কথা বললো,,,তখন,,,( পেখমের কথা গুলো শুনে আবির ওকে বুক থেকে ছাড়িয়ে দিতে চাই,,কিন্তু পারে না,,, পেখম ওকে আরো শক্ত করে ধরে বলে,,)


- প্লিজ ক্ষমা করে দিন আমাকে,,, ঠিক আছে আমাকে আপনি যা শাস্তি দেবেন তা আমি মাথা পেতে নেবো,,,তবুও কথা বলুন আমার সাথে,,,চুপ করে থাকবেন না,,, রাগ করে আবার আমাকে ছেড়ে যাবেন না,,, আমার ভীষণ কষ্ট হয়,,,, মনে হয় আমি বোধহয় মরে যাচ্ছি,,,,(এতক্ষণ চুপ করে পাখির কথা শুনলেও শেষের কথাটা শুনে আবির আর চুপ করে থাকতে পারে না,,, ও শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,,,)


- আহহঃ পাখি চুপ করো,,,তোমার মুখে যেন আর কোনো বাজে কথা না শুনি,,,,তারপর কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে,,,আমি রাগ করে নেই,,সব কিছু শুনে একটু কষ্ট পেয়েছি,,তুমি আমাকে এতটা ছোট না ভাবতেও পারতে,,,( আবিরের মুখে এরকম কথা শুনে পেখম কেঁদে ফেলে বলে সরি,,,আর কোনো দিন হবে না,,)


- ঠিক আছে আমি রাগ করে নেই আর,,,প্লিজ কান্না করো না,,, তুমি জানো না তোমার চোখের জল আমার সহ‍্য হয় না,,,, আর তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো,,,আর তুমি মরার কথা বললে কি করে,,,যতদিন এই আবির চৌধুরী জীবিত থাকবে ততদিন সে তার পাখিকে আগলে রাখবে,,,,


- সত‍্যিই আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন??


- তার আগে তুমি বলো আর কোনো দিন ভুল বুঝবে না ,,,আমাকে দূরে সরিয়ে রাখবে না নিজের থেকে,,,,


- না রাখবো না,,,এই ভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখবো,,,


- তাহলে আমিও তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম,,, কিন্তু তোমাকে তোমার অন‍্যায়ের শাস্তি পেতে হবে,,,


- শাস্তির কথাটা শুনে পেখমের মুখ চুপসে যায়,,,তবুও নিজেকে সামলে বলে ,,,কি শাস্তি,,,


- আবির পেখমকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,,ভালোবাসার শাস্তি,,,


- পেখম লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ গুজে বলে,, আপনি কোনো দিনো শুধরাবেন না,,,


- সত‍্যি বলতে কি আমি শুধরাতে চাইও না,,,,(বলেই ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়,,,মেতে ওঠে পাখির সাথে দুষ্টুমিতে)

_________________________________________


- প্লিজ তাড়াতাড়ি গাড়িটা চালান,,,আমার খুব টেনশন হচ্ছে,,,, না জানি বৌমনি কেমন আছে??


- উফফফ পাখি টেনশন করা বন্ধ করো,,,ফ্লাইট আমাদের আধাঘণ্টা পর,, মা কি বললো সেটা আগে বলো,,,


- বৌমনির লেবার পেইন উঠেছে,,, ওরা নার্সিংহোমে নিয়ে গেছে,,,দাভাই ভীষণ চিন্তা করছে,,,কারণ ডেলিভারি ডেট এখনো কুড়ি দিন পর ছিল,,,


- ঠিক আছে,, চিন্তা করো না,,, কিছু হবে না তীয়ার,,, আমরা যাচ্ছি তো,,,ইমারজেন্সি দুটো টিকিট বুক করে দিয়েছি,,,


-কখন থেকে আপনার ফোন বাজছে,, রিসিভ করুন,,,


- হ‍্যালো( ফোন রিসিভ করে)


- হ‍্যালো স‍্যার,, এদিকে একটা সমস্যা হয়েছে,,, আপনাকে একবার অফিসে আসতে হবে,,,( ম‍্যানেজার)


- মানে কি অসুবিধা?? আর আমি এখনই কলকাতায় ব‍্যাক করছি ব‍্যক্তিগত কিছু সমস্যার জন্য,,,


- কিন্তু স‍্যার এইদিকে ডিল ফাইনাল করার জন্য ক্লাইন্ট রা চলে এসেছে বিনা নোটিশে,,,এখন বারণ করে দিলে এই ডিলটা আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে,,রাজিব স‍্যার থাকলে কোনো সমস্যা হত না,,,,


- ঠিক আছে রাখো,,আমি যাচ্ছি,,,( ফোন রেখে দেয়)


- পেখম এতক্ষণ সব কথা গুলো শুনেছে,,,তাই ও আবিরকে বললো,,, আমি যাবো কলকাতায়,,, আপনি অফিসে যান,,,


- তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?? আমি তোমাকে একা ছাড়তে পারবো না,,,আমার মিটিং শেষ হয়ে গেলে তারপর যাবো,,,নয়তো কাল যাবো


- প্লিজ যেতে দিন আমাকে,,আমি এখানে থাকলে টেনশনে শেষ হয়ে যাবো,,আর মাত্র তো আড়াই ঘন্টার পথ,,,আর এটা ভুলে যাবেন না যে আমি কিন্তু একাই এসেছিলাম,,,, প্লিজ,,,,


- উফফফ ঠিক আছে,, কিন্তু তুমি কলকাতায় পৌঁছে আগে আমাকে ফোন করবে,,,এখন বাজে সাড়ে দশটা,,, তোমার ফ্লাইট এগারোটার সময়,,,ঠিক আছে চলো আমি তোমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিচ্ছি,,,


- আর আপনি ভালো করে মিটিং টা শেষ করবেন,,, দেখবেন এই ডিলটা আমরা পাবো,,,

__________________________________________


- হ‍্যালো আবির,,,( অনুপমা)


- হ‍্যাঁ মা বলো,,তীয়া কেমন আছে??


- ও ভালো আছে,,,আর আমাদের তীয়ার ছেলে হয়েছে,,,ওরা দুজনেই ঠিক আছে,,, পেখম কোথায় ওকে একটু দে,,,ওর ফোন অফ বলছে,,,,


- মা ও এখন প্লেনে,,,আর আমি অফিসে,,জুরুরী মিটিং থাকায় আমি যেতে পারিনি,,,ও গেছে,,,


- তুই ওকে একা ছাড়লি কেন??


- তার আগে এই প্রশ্নটা আমি তোমাকে করি,,,,তুমি ওকে আগের দিন একা ছেড়েছিলে কেন??


- আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গেছে,,,


- হমম,,শোনো ওর ফ্লাইট মেইবি দেড়টার দিকে ল‍্যান্ড করবে,,,তুমি এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠিয়ে দাও,,,আমি মিটিং থাকবো,,,ও যেন পৌঁছে আমাকে ফোন বা ম‍্যাসেজ করে দেয়,,,আর শোনো আমি কালকে যাবো,,,তুমি চ‍্যাম্পের কটা ছবি তুলে আমাকে পাঠিয়ে দাও,,,,


- ঠিক আছে,,,,

___________________________________________


- প্রায় দুটোর দিকে আবিরদের মিটিং শেষ হয়,,, ও নিজের কেবিনে এসে বসে,,,তারপর গ্লাস থেকে জল পান করে ফোনটা হাতে নেয়,,,ফোনটা অন করে দেখতেই ও ভ্রু কুঁচকে ফেলে,,,ওর ফোনে ১০০ টার বেশি মিসডকল,,, সব মা,মামনি, পুলক,,,বাবার ফোন থেকে,,, ও দ্রুত পুলকের ফোনে ফোন করে,,,ফোন রিসিভ হওয়ার পর


- হ‍্যালো পুলক?? কি হয়েছে এত বার ফোন করেছিস,,,,


- ,,,,,,


- কি হলো কথা বলছিস না কেন??


- আবির,,,পেখু,,,


- হ‍্যাঁ পাখির,,,কি হয়েছে?? ও কোথায়??


- আবির পাখিদের ফ্লাইট ক্রাশ  করেছে,,, তুই একটু টিভি অন করে দেখ,,,আমি এখন এয়ারপোর্টে,,,আর বাবারা হাসপাতালে গিয়েছে যেখানে সবাই কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,,,


- পুলকের কথা শুনে আবিরের হাত থেকে ফোন পরে যায়,,,,দ্রুত নিজেকে সামলে টিভি অন করে আবির,,,নিউস চ‍্যানেলে দিতেই দেখে,,,


- নমস্কার এই মুহূর্তে জানা যাচ্ছে ব‍্যাঙ্গালোর টু কলকাতা ফ্লাইট নম্বর AK12267 কলকাতার মাটিতে ল‍্যান্ড করার পাঁচ মিনিট আগেই ক্রাশ হয়ে যায় শূন্যে,,, গোপন সূত্রে জানা যাচ্ছে যে হঠাৎ ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়ার কারণে পাইলট প্লেনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে,,,,৯৯% যাত্রী নিহত,,,কিছু সংখ্যক যাত্রীকে প‍্যারাসুটের মাধ‍্যমে বাঁচানো গেলেও তারা বেশ গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন,,,


- নিউসটা শোনার পর আবিরের চোখ থেকে অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়লো,,,ও খুব জোড়ে পাখি বলে চিৎকার করে উঠলো,,,আর সেই চিৎকার শুনে সবাই ছুটে এলো ওর কেবিনে,,,, 


- এরই মধ্যে খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে,,, রাজিব আর সোহিনী শোনা মাত্রই চেন্নাই থেকে ওরা আধাঘন্টার মধ্যে চলে আসে,,,


- পুলকরা পেখমের কোনো সন্ধান পায়নি,,,অনুপমার অবস্থা শোচনীয়,,, মনোরমা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন,,, তীয়াকে এখনো জানানো হয়নি,,, একটা খুশির সময় যেন খারাপ সংবাদে বিষাদে পরিণত হয়েছে,,,,


- তবে কি আমি আমার কথা রাখতে পারলাম না ,,,আমার জীবন থাকতেও আমি তোমাকে আগলে রাখতে পারলাম না,,, ভগবান তুমি এত নিষ্টুর কেন?? আমাকেও তুলে নাও,,,,(আবির)


- আবিরকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে,,,, এয়ারপোর্ট থেকে বিমান সব বন্ধ করে রাখা হয়েছে,,, আপাতত এক সপ্তাহ কোনো বিমান আকাশে উড়বে না,,,এইদিকে আবির পাগলামো করছে কলকাতায় যাওয়ার জন্য,,, আর সমানে বলে যাচ্ছে কেন আমি যেতে দিলাম তোমাকে,,,,কেন কেন কেন????জোড়ে চিৎকার করে কাঁদছে,,,আর ভাঙচুর করছে,,, না পেরে রাজিব ডাক্তার ডেকে আনে,,, ডাক্তার এসে ঘুমের ইনজেকশন দিতেই আস্তে আস্তে আবিরের দেহটা নিস্তেজ হয়ে যায় আর ঘুমিয়ে যায় গভীরতায়,,,,,


- আজ আবিরের কষ্টে তাল মিলিয়ে আকাশ ভেঙ্গে কাঁদছে,,,তবে কি এই পরিণতি ছিলো এই ভালোবাসায়???


চলবে,,,,,,

নেক্সট পর্ব লিংক👇

https://wwp.ailony.com/redirect-zone/e7dc6d73

গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ৩০

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ৩০


- সারা ঘরময় জুড়ে মৃদু আলো আর গোলাপের গন্ধে ভরপুর,,, থেকে থেকে শীতল বাতাস ব‍্যালকনির পর্দা গুলোকে উড়িয়ে দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করছে,,,যা ওই মৃদু আলো গুলোকে নিভু নিভু করতে প্রস্তুত,, আবার বাতাসের বেগ কমে এলে আলোর শিখা গুলো বড়ো হয়ে ওঠে,,,,বাইরে শীতল বাতাসের সাথে সঙ্গ দিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দেখাও মেলে,,,সেই সাথে মেয়েলি কন্ঠস্বরও আবিরের হৃদয়ের গহীনে গিয়ে আঘাত করে,,,


- কন্ঠস্বর টা যে ব‍্যালকনির দিক থেকে আসছে সেটা বুঝতে বাকি থাকে না আবিরের। মুহূর্তেই সেই মায়াবী কন্ঠস্বরের অধিকারিণী কে দেখার তীব্র ইচ্ছা জেগে ওঠে আবিরের,,,হাতের তোয়ালে টা ওয়াশরুমের স্ট‍্যান্ডে রেখে বেরিয়ে এসে,দ্রুত পায়েই ব‍্যালকনির দিকে যায় ও,,,ঘড়িতে তখন এগারোটা বেজে পঞ্চাশ,,আবির ব‍্যালকনির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অবাক হয়ে চেয়ে থাকে,,,,


- আবিরের মনে হচ্ছে পৃথিবী যেন থমকে গেছে,,,, ও যেন কোনো মায়াপুরী তে দাঁড়িয়ে আছে,,, আর ওর সামনে কোনো মায়াবী মানবী দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জল নিয়ে খেলছে,,,পড়নে তার সেই জর্জেটের কালো পারের লাল শাড়ি,,,, কালো স্লিভলেস ব্লাউজ,,,খোলা  চুল গুলো বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে,,,,গাঢ় লাল লিপস্টিকের দ্বারা আবৃত অধরযুগলে লেগে আছে মৃদু হাসি,,,বৃষ্টির ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে হাতের লাল- কালো চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ চারেদিকে বারি খাচ্ছে,,,,মুহূর্তেই আবির প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্যের সাথে তাল মিলিয়ে আবিষ্কার করলো তার সামনে এক বাদল কন‍্যা দাঁড়িয়ে আছে। 


- আর যখন সেই বাদল কন্যা ওর দিকে ফিরে এগিয়ে আসতে লাগলো তখন ,কানের ওই ঝুমকোর সাথে তাল মেলাতে ব‍্যস্ত হয়ে উঠলো গোল্ডেন স্টোনের সেই নুপূর জোড়া,,,,,গাঢ় কাজল দেওয়া চোখে যেন কত অভিমান আর একরাশ জল,,,পলক ফেললেই যেন ওই চোখ দিয়ে মুক্তধারা ঝড়ে পড়বে,,,,আবির হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে সেই মানবীর দিকে হঠাৎ ও উপলব্ধি করলো বুকের বাঁ পাশে থাকা হৃদয়ের গতিবেগ টা যেন মুহূর্তেই দ্বিগুণ হয়ে গেছে,,,, চোখটাকে সংযত করার চেষ্টা চালালেও পাড়ছে না,,,,


-নিজের মনের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ব‍্যস্ত যখন আবির,ঠিক তখনই ও উপলব্ধি করলো ওকে কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে, বুকে মাথা দিয়ে আছে,,,কিছুক্ষণ বাদে এটাও আবিষ্কার করলো যে টিশার্ট টা ভিজে উঠেছে সেখানে,, ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। ঘড়ির কাঁটা যখন ঠিক বারোটার ঘরে ছুঁই ছুঁই, তখন রিনরিনে কন্ঠস্বর আবিরের শ্রবণ যন্ত্রে গিয়ে ধাক্কা খায়,,,,মুহুর্তের মধ্যে শ্রবণশক্তি দৃঢ় হলো,,, মস্তিষ্কের নিউরন গুলো সজাগ হলো,,,কন্ঠস্বরটির অধিকারিণী আবার বলে ওঠে,,, 


- "শুভ জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো আপনার জন্য,,,"


- আবির কোনো প্রত‍্যুত্তর করলো না,,, শুধু নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,,,ওর এখন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে যে পেখম ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,, হমমম হুহুউউ শুধু সামনে নয় বরং ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে,,,,


- আমি আপনাকে খুব মিস করেছি,আপনি জানেন,,,, আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছে এই কদিন,,, মানছি আমি, সেইদিন আপনার সাথে ওই রকম ব‍্যবহার করা উচিত হয়নি আমার,,,আমাকে ক্ষমা করে দেবেন,,,, কিন্তু আমি,,,


- পেখমের শেষের কথাটা শুনে আবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে,,,পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে ও পেখমকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে একটু পিছিয়ে দাঁড়ায়,,,, আবিরের এইরূপ আচরণে পেখম কষ্ট পায়,,,তবুও নিজেকে সামলে বলে ওঠে,,,


- আপনি এভাবে কেন,,,( পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে আবির বলে ওঠে,,)


- তুমি এখানে কেন?? কিভাবে এলে?? ( গম্ভীর হয়ে)


- পেখম আবিরের কন্ঠস্বর শুনেই ভয় পেয়ে যায়,,, তবুও নিজেকে সামলে ধিরে ধিরে বলে,," বিকেলের ফ্লাইটে এসেছি"।


- তুমি বিকেলে এসেছো??,,,,কে দিয়ে গেল??  আর কলকাতা থেকে এখানে এলে কেন???


- আবিরের কথায় রাগ রয়েছে সেটা সম্পূর্ণ প্রকাশ পাচ্ছে,,,পেখম আমতা আমতা করে বলে,,,আমি একাই এসেছি,,,তারপর আপনার ড্রাইভার কে ফোন করতেই উনি আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে ফ্ল‍্যাটে পৌঁছে দেয়,,,


- বাহ আজকাল আমার অগোচরে এত কিছু হচ্ছে আর আমি নিজেই জানতে পারছি না,,,, ভালো তবে তুমি এতটাও বড়ো হয়ে যাও নি যে কলকাতা থেকে ব‍্যাঙ্গালোরে চলে আসবে আর আমি সেটা স্পেয়ার করবো,,এটা নিয়ে আমি মার সাথে পরে কথা বলে নেবো ,,, তা এত দিনে তো একবারের জন‍্যেও ব‍্যাঙ্গালোরে আসার প্রয়োজন পড়েনি,, তা আজ কেন প্রয়োজন হলো???( টাউজারের পকেটে হাত রেখে)


- আপনি এইভাবে কথা বলছেন কেন আমার সাথে?? আমার কষ্ট হচ্ছে,,,, একটু ভালো করে কথা বলুন না,,(ছলছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে)


- তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথে খারাপ ভাবে কথা বলছি??? আমার কিন্তু সেটা একবারের জন্য হলেও মনে হচ্ছে না,,,, আমি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পছন্দ করি,, তাই তোমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করছি হঠাৎ করেই এত কি প্রয়োজন হল যে তুমি কলকাতা থেকে ব‍্যাঙ্গালোরে চলে এলে তাও আবার এই চরিত্রহীন মানুষটির কাছে???


- আবিরের প্রশ্নে পেখমের হৃদয় ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে,,,মানুষটাকে চরিত্রহীন কি করে বলেছিলো সেইদিন ও,,,কতটা কষ্ট পেয়েছিল সেইদিন এই মানুষটি,,, না না ওর শাস্তি প্রয়োজন,,,


- কি হল চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?? আমার প্রশ্নের উত্তর দাও,,,আর তুমি যদি মনে কর এইভাবেই চুপ করে থাকবে,,,সুতরাং আমার কিছু বলার নেই,,, তুমি আমাকে মানুষ বলে গণ্য না করতেও পারো,,অযথা এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না,,,অনেক রাত হয়েছে আমি ঘুমাবো,,, চাইলে তুমি এই ঘরে শুতে পারো নয়তো,,


- নয়তো কি???( চোখের জল মুছে,,,)


- নয়তো পাশে আরো একটা বেডরুম আছে,,,ওখানে থাকতে পারো ( কথা গুলো বলেই ঘরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়)


- পারলে আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন,,,,আমি অন‍্যায় করেছি,,,সেই দিন আপনার সাথে ,,,


- পাখিকে বলতে না দিয়ে আবির পিছন ফিরেই বলে,,,ক্ষমার কথা আসছে কোথা থেকে পাখি?? তারপর পাখির দিকে ফিরে, পাখির চোখে চোখ রেখে বলে,,তুমি তো ক্ষমা চাওয়ার মতো এমন কিছু করোনি,,,কি করেছো এমন কিছু???( শান্ত ভাবে কথাটা বলে)


- আবিরের কথা শুনে পেখম ওখানেই কেঁদে দেয়,,,,


- একদম কাঁদবে না,,,জানো তো আমি তোমার ওই চোখের জল পছন্দ করি না,,, এখন যাও অনেক রাত হয়েছে,, আমি ভীষণ ক্লান্ত,, ঘুমাবো আর তুমি তো জানো আমি সবকিছু সময় মতো করতে পছন্দ করি,,,( কথা গুলো বলেই আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ঘরে চলে আসে আবির)

_________________________________________


- মোমবাতির মোম গুলো গলে জমাট বেঁধে আছে,,,ছোট ছোট বাতি গুলো সেই কখন নিভে গেছে,,,ঘরে শুধু মরিচ বাতি গুলোই জ্বলছে আর তার সাথে জ্বলছে দুটি হৃদয়,,,,


- আমি তো চেয়েছিলাম তোমাকে জড়িয়ে ধরতে,,,কিন্তু এই হাত দুটো কিছুতেই তোমাকে জড়িয়ে ধরতে দেয় নি,, আমি তো চেয়েছিলাম তোমার ওই চোখের জল নিজের অধর দিয়ে মুছিয়ে দিতে কিন্তু আমি তা পারিনি,, হয়তো আজ ভালোবাসার থেকে অভিমান টা জিতে গেল আমার কাছে,,,আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি,,,কিন্তু এই মন বলছে তোমাকে বোঝাতে হবে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আঘাত পেলে ঠিক কতটা যন্ত্রণা হয়,,,,( চোখের উপর বাহু দিয়ে কথা গুলো আবির মনে মনে ভাব


- ঘড়ির কাটা যখন একটা ছুঁই ছুঁই তখন আবির দেখে পেখম ঘরে আসেনি,,, বাইরে তখন ধুম বৃষ্টি হচ্ছে,,, কিছু একটা ভেবে ও বিছানা ছেড়ে উঠে ব‍্যালকনির দিকে যায়,, আর গিয়ে দেখে পেখম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে হাত দিয়ে চোখের জল মুছছে,,,


- না এই মেয়েটাকে আমি হাজার চাইলেও কষ্ট দিতে পারবো না,,, বরং তার থেকে বেশি কষ্ট আমি পাবো,,এইসব কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে পেখমের খুব কাছে চলে যায় ও বুঝতে পারে না,,, তারপর পেখমের উদ্দেশ্যে বলে,,,


- " একান্তই যদি বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করে,, তাহলে কলকাতাতে গিয়ে ভিজো,,,এখানে ভিজে অসুস্থ হলে কে সেবা করবে?? (রাশভারী গলায়)


- আবিরের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে পেখম ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে,,,আর ভিজবো না,,চলে যাচ্ছি আমি,,,তবে আমার একটা অনুরোধ রাখবেন প্লিজ,


- হমম বলো( গম্ভীর হয়ে)


- একবার কেকটা একটু কাটবেন,,, আমি অনেক কষ্ট করে এনেছি,,,নাহলে নষ্ট হয়ে যাবে,,,,একটু যদি সময় হয় আপনার প্লিজ,,,,


- পেখমের এইরকম আবদারে আবির না বলতে পারে নি,,, তাই মুখে কিছু না বলে ঘরের দিকে গেল,,,তারপর পেখমের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো,,," কেকটা কি আমি একা একা কাটবো"??


- আবিরের কথা শুনেই পেখম দ্রুত ঘরে আসে,,,তারপর আবিরের উদ্দেশ্যে বলে আপনার ফোনটা একটু দেবেন???


- কেন ফোন নিয়ে কি করবে??


- আসলে আমার ফোনটা কিচেনে,,,মামনি বলেছিল আপনার কেক কাটার ছবি পাঠাতে,,,


- ও ঠিক আছে নাও,,,তারপর আবিরের কেক কাটার কয়েকটা ছবি ক্লিক করে পেখম,,,, ফোনটা আবিরের কাছে দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে নিলে আবির জিজ্ঞাসা করে ,,,"কোথায় যাচ্ছো?? 


- পাশের ঘরে,,,


- চাইলে এখানে শুয়ে পড়তে পারো,,,,


- সরি ,আমি চাইনা আমার জন্য আর কোনো অসুবিধা হোক আপনার,,,, এমনিতেই আমি বুঝতে পেরেছি এইভাবে এসে আপনাকে সারপ্রাইস দেওয়া আপনার সেটা ভালো লাগেনি,,,বরং বিরক্তির কারণ হয়েছি,,,সরি আমি সত‍্যিই বুঝতে পারিনি আপনার মনে আমার জন্য কোনো ,,,আর বলতে পারে না কান্নার জন্যে,,, তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে আসে ও,,তারপর দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে,,,,হঠাৎ কি মনে করে ওয়াশরুমে চলে যায় পেখম তারপর মাথার উপরে শাওয়ার টা ছেড়ে তার তলায় বসে পড়ে,,, কিছু সময় পরে চোখের জল শাওয়ারের জলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়,,,,,


- এদিকে আবির নিজেও কষ্ট পাচ্ছে,,, শেষ পর্যন্ত না পেরে উঠে চলে যায় পাশের ঘরে,,, দরজা বন্ধ দেখে নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খোলে,,,,তারপর যখন দেখে ঘরে কোথাও পেখম নেয় তখন পাগল প্রায় হয়ে পাখি পাখি বলে চিৎকার করে ডাকে,,, কিন্তু কোনো উত্তর আসে না,,, হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে জলের আওয়াজ কানে আসতেই আবির সেদিকে যায়,,,দরজা খোলা থাকার দরুন ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে দেখে পাখি অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে,,, ও সাথে সাথেই পাঁজাকোলা করে নিজের ঘরে নিয়ে আসে,,,তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পেখমকে ডাকতে থাকে,,,,


- পাখি প্লিজ চোখ খোলো,,,আমার ভুল হয়ে গেছে,,, সরি সোনা পাখি,,,চোখ খোলো,,,চোখে মুখে বারি দিয়ে,, তারপর জলের ছিটা দিয়ে নানান কথা বলতে থাকে,,,হঠাৎ পাখিকে চোখ পিটপিট করতে দেখে আবির ওর মুখটা আজলা করে ধরে বলে,,,


- সরি,,,প্লিজ চোখ খোলো,,,আর কোনোদিন এমন হবে না পাখি,,, প্লিজ চোখ খোলো,,,পাখি ধিরে ধিরে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকাতেই আবির ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,,, আর তাই দেখে পেখম আবিরের বুকে মাথা রেখে জোড়ে জোড়ে কেঁদে দেয়,,,কাঁদার এমন এক পর্যায়ে এসে তখন শুধু হেঁচকি তুলছে,,,আবির তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস জল এনে পাখিকে খাইয়ে দেয়,,,,তারপর বলে,,,


- আমি কিন্তু এইসব বাচ্চামো একদম পছন্দ করি না পাখি,,,কি হত এখন যদি আমি ওইঘরে না যেতাম,,, মানে আমি কিছু বললেই রাগ দেখাতে হবে???


- আমি তো রাগ দেখায়নি,,,


- তবে ওইভাবে কেন ছিলে??? কেন ভিজে জ্ঞান হারিয়ে ছিলে?? 


- নিজেকে শাস্তি দিতে,,,( মাথা নিচু করে)


- নিজেকে কেন শাস্তি দিতে চাও???বলো কেন??? তুমি জানো না তোমার একটু কিছু হলে আমার উপর দিয়ে কি যায়??? জানো না ?? 


- আমার কিছু হলে তাতে আপনার কি??


- তুমি সত্যিই নির্বোধ পাখি,,, নাহলে এতদিনে এই প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক জানতে,,,


- কখনো কখনো উত্তর জানা থাকলেও সেটা প্রিয় মানুষটির মুখে শুনতে ভালো লাগে,,,


- যদি বলি ভালোবাসি তোমাকে,, বিশ্বাস করবে ?? নাকি সেই দিনের বলা মুখের কথাকে বিশ্বাস করে আজকের বলা কথাগুলোকে অবিশ্বাস করবে????


- ওই একভুল আপনার এই রাত-প্রেয়সী আর করছে না,,, বলেই আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করে দেয়,,,তারপর বলে আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন,, আমি আপনাকে অবিশ্বাস করেছি,,সন্দেহ করেছি,,আপনার ভালোবাসাকে অপমান করেছি,,,কিন্তু বিশ্বাস করুন আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি,,,,ভীষণ ভালোবাসি,,,আপনাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয় আমার,,, দম বন্ধ হয়ে আসে,,,কেন আপনি এত গুলো দিন এখানে থাকলেন আমাকে ছেড়ে??? জানেন আমার কত কষ্ট হয়েছে???


- কষ্ট কি শুধুমাত্র তুমি পেয়েছো??আমি পাইনি?? তোমার থেকে দ্বিগুণ কষ্টে আমি ছিলাম পাখি,,,,খুব ভালোবাসি তোমায় আমি,,, আর কোনো দিন কষ্ট দেবো না তোমাকে,,, সরি,,(বুকের থেকে পাখিকে সরিয়ে আজলা করে মুখটা ধরে কপালে অধর ছোঁয়ালো আবির,,,তারপর চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,,)


- জানোনা তোমার চোখের জল আমার সহ‍্য হয় না,,, যাও গিয়ে চেঞ্জ করে এসো,,,দেখো বিছানা ভিজে গেছে,,,,


- সরি আমি এক্ষুনি যাচ্ছি,,,( বলেই পাখি উঠে চলে যেতে নিলেই আবির ওর হাত ধরে বলে)


- এই দাঁড়াও দাঁড়াও ,,,তুমি এই শাড়িটা কোথায় পেলে??? তারপর কিছু একটা চিন্তা করে বললো ,,,তুমি আমার ডাইরি পড়েছো কেন পাখি??? জানো না কারোর অনুমতি না নিয়ে তার ব‍্যক্তিগত জিনিস স্পর্শ করতে নেই???(গম্ভীর হয়ে)


- হঠাৎ আবিরের এইরুপ কন্ঠস্বরে পেখম ভয় পেয়ে যায়,,, তারপর মাথা নিচু করে ফেলে,,,তাই দেখে আবির বলে ওঠে" কোনো ব‍্যাপার না ,,,তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী,, মানে আমার যা কিছু আছে তার উপরে আমার ঠিক যতটা অধিকার আছে,, ঠিক ততটাই তোমারো আছে,,,,বলেই পেখম কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,,,,আবিরের স্পর্শ পেয়ে পেখম কেঁপে ওঠে,,, তারপর খুব ধিরে বললো,,,


- আমার শরীর পুরো ভিজে,,,আপনি ভিজে যাবেন,,, আমাকে একটু সময় দিন,, আমি এই শাড়িটা পাল্টে আসছি,,,


- পাখি এই শাড়িটা আমি তোমাকে কখন পড়তে দিতাম বলোতো,,,যখন আমি তোমাকে নিজের ব‍্যক্তিগত ভাবে কাছে পেতাম,,,আর আজ তুমি কিন্তু এই শাড়িটা নিজে থেকে পড়েছো,,,(শান্ত স্বরে)


- আবিরের কথায় পেখম লজ্জায় লাল হয়ে যায়,,,হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ও কোনো মতে নিজেকে সামলে বলে আমাকে যেতে দিন,,,( কিন্তু আবির ছাড়ে না বরং আরো বেশি করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,, তারপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,,,)


- আমার জন্মদিনের উপহার কোথায় পাখি?? আমি আমার এই জন্মদিনে সবথেকে সেরা উপহারটা চাইছি তোমার কাছে,,, (শাড়ির আঁচলের ফাঁক দিয়ে পাখির মেদহীন পেটে স্লাইড করতে থাকে,,,) 


- পাখি কিছু না বলে শাড়ির আঁচল খামছে ধরে ,,,চোখ মুখ বন্ধ করে থাকে,,,,ওর এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে লজ্জায় মরে যাবে,,,মুখ কান গরম হয়ে যাচ্ছে আবিরের প্রত‍্যেকটা নিশ্বাসের বারিতে,,,,পেখমের এইরূপ অবস্থা দেখে আবির ঠোঁট কামড়ে হাসে,,,তারপর খুবই শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,,,,


- " সে কি দেবে অনুমতি তাকে নিজের করে কাছে পাওয়ার?? সে কি দেবে অনুমতি তাকে এই আবির চৌধুরীর অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নেওয়ার??? সে কি দেবে অনুমতি তাকে নিজের ভালোবাসার আদরে চাদরে মুড়িয়ে দেওয়ার??? সে কি দেবে অনুমতি তার ওই অধরযুগল যার দ্বারা আবৃত তাকে ঘেটে দেওয়ার??সে কি দেবে অনুমতি আমাদের শরীরে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেওয়ার?? সে কি দেবে অনুমতি তার ওই মুখশ্রীতে লজ্জার আবরণ আনার"???


- এতক্ষণ আবিরের কথা গুলো শ্রবণ হতেই পেখমের বলতে ইচ্ছে করছে এই মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর ও টুকুস করে মাটির মধ্যে ঢুকে যাক লজ্জা নিবারণ করার জন্য,,,আবার পরমুহূর্তেই আবিরের জন্য খুব গর্ববোধ হতে লাগলো,,,ওর মনে আবিরের জায়গাটা আরো বেশি সম্মানের লাগলো,,,মানুষ টা ওর কাছ থেকে এতদিনে জোড় করে হোক বা অন্য ভাবেই হোক ঠিক স্বামীর অধিকার আদায় করে নিতে পারতো,,,কিন্তু না তিনি তা করেননি,, বরং আজ এতগুলো দিন পর যখন দুজন দুজনকে ভালোবাসে জানে এবং সেটা জেনেও উনি এখন অনুমতি চাইছেন,,, কি করে ফিরিয়ে দেবে ও এমন মানুষকে,,, পেখম মুখে কিছু না বলে আবিরের দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে,,,,বুকে মুখ গুজে দেয় লজ্জায়,,,


- আবির ওর উত্তর পেয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,,,," মৌনতা সম্মতির লক্ষণ"। তারপর পাখিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার শুইয়ে দেয়,,আস্তে আস্তে সব অলংকার খুলে দেয় পাখির,, তার শরীরে লেপ্টে থাকা ভিজে শাড়িটা খুলতেই পেখম ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,, আবির পাশের বেডল‍্যাম্পটা বন্ধ করে দেয়,,,শুরু হয় ভালোবাসার নতুন অধ‍্যায়,,,,আর সেই ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে আনন্দে ধরণীতে নৃত্য করে প্রকৃতির বারিধারা,,,,,


চলবে,,,,,,


গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২৯

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২৯


- বাইরে প্রখর রোদ,,,আর সেই রোদের প্রতাপে সবকিছু যেন ঝলসে যাচ্ছে,,,,এইমত অবস্থায় সবার আশা শুধু একটাই ,যেন হঠাৎ করে ওই দীপ্তমান সূর্যকে মেঘরাজ ঢেকে নিক নিজের চাদরে আর কোমল বৃষ্টির জল যেন এই ধরণীর উপর আঁচড়ে পড়ুক,,, ঝলসে যাওয়া প্রকৃতিকে নিজের জল দ্বারা স্নান করিয়ে স্নিগ্ধ করে তুলুক,,,কিন্তু সেই মেঘরাজের দেখা মেলে না এই কদিন,,,বাইরে সূর্যের প্রখরতায় যেমন প্রকৃতি পুড়ছে ঠিক তেমনই নিজের করা ভুল গুলোর জন্যে অনুতাপের আগুনে পুড়ছে পেখমের মন,,,,


- পেখম স্তব্ধ হয়ে বসে আছে,,, চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে,,,, তীয়া বাঁধা দিচ্ছে না,,, কাঁদুক আজ মেয়েটা,,, কেঁদে যদি একটু হালকা হয়,,,


- আমি এত বড় একটা ভুল কি করে করতে পারলাম বৌমনি?? আমি উনার ভালোবাসাকে কি করে অপমান করতে পারলাম??( অঝোরে কাঁদছে)


- এখন চুপ কর,,,পাশের ঘরে মা আছে,,,আমি চাইনা তোদের স্বামী স্ত্রীর মধ‍্যেকার কথা আর কেউ জানুক। ভুল যখন করেছিস সেই মানুষটার সাথে,,তখন ক্ষমা চাইবি তার কাছে,,, আমার বিশ্বাস দাদাভাই তোকে ক্ষমা করে দেবে,,,,এতটাও পাষাণ আমার দাদাভাই নয়,,


- আমি তার কাছে ক্ষমা চাইবো কি করে বৌমনি?? সেতো আমার ফোন রিসিভ করছে না,,টেক্সটের রিপ্লাই করছে না,,, 


- করবে করবে,,,আচ্ছা সোহিনীর বিয়েতে আসছে না দাদাভাই??


- হ‍্যাঁ কেন??


- আরে বোকা মেয়ে,,তখন স্বামীর মান ভাঙাবি ,,,এবার যেন বলিস না কি করে ভাঙ্গাবি,,,(মুখ টিপে হেসে)


- হ‍্যাঁ তাই তো কি করে উনার রাগ মানে অভিমান ভাঙাবো বৌমনি??( চোখের জল মুছে)


- উফফফ ভগবান এই মেয়ের ঘটে কিছু নেই,, ঠিকই আছে দাদাভাই তোর উপরে রাগ করে আছে,,,


- ও বৌমনি বলো না,,, আচ্ছা আমি তোমার জন্যে কালকে ফুচকা আর চটপটি এনে দেবো ঝাল ঝাল করে,,,প্লিজ বলো,,,নাহলে কিন্তু আবার কাঁদবো,,,,(ঠোঁট ফুলিয়ে)


- ঠিক আছে এই দিকে আয়,,,তারপর তীয়া পেখমের কানে কানে বলে ****** যা শুনে পেখম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে বলে,,,


- এসব কি বলছো বৌমনি?? আমার ভাবলেই লজ্জা করছে,,,তার সামনে দাঁড়াবো কি করে?? না না আমি এসব পারবো না,,, ইশশশশ,,,,


- ইশশশ করছিস কেন,,,ঠিক আছে যা আমার কথা শুনতে হবে না,,, তুই যা পারিস তাই কর,,,তোদের সম্পর্কটাকে আরো জটিল কর,,,( রাগ করে বলে)


- তুমি রেগে যাচ্ছো কেন?? আচ্ছা ঠিক আছে,,, তুমি যা বলবে তাই হবে,,,এখন চলো খাবে,,,,


- ঠিক আছে ধর আমাকে,,,তোদের চ‍্যাম্প এখন বেশ কষ্ট দেয় আমাকে,,, এক এক সময় এমন লাথি মারে,,জীবন চলে যাওয়ার মতো,,,,


- চ‍্যাম্প মাম্মা কে বেশি কষ্ট দিও না,,, আর শোনো তোমার এই পিপি+মিমি খুব ভালোবাসে তোমাকে,,,, তুমি শুধু একবার মার পেট থেকে বেরিয়ে এসো,,,তারপর দেখো এই পিপি+মিমি সব সময় তোমাকে নিয়ে রাখবে,,,আর শোনো পিসো+মামাই কে বকে দেবে আসলে ,,,সে আমাকে ভীষণ জ্বালায়,,,,( তীয়ার পেটে চুমু খেয়ে) 


- এইই পেখু ও লাথি মেরেছে,,, দেখ পেখমের হাতটা পেটের মাঝে দিয়ে,,,


- এইই চ‍্যাম্প যেই মামার কথা বললাম ওমনি লাথি মারলি,,,আমার বোঝা হয়ে গেছে,, তুমি চাঁদু মামাই এর ভক্ত হবা,,,


-পেখমের কথা শুনে তীয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে,,,

__________________________________________


- সেইদিনের পর থেকে পেখম রোজ দিনে তিন থেকে চার করে আবিরকে ফোন করে,, কিন্তু দুঃখের বিষয় এটা যে ওপাশের ফোন কেউ রিসিভ করে না,,,


- আজ সোহিনীর বিয়ে,,,পেখম সেই সন্ধ‍্যেবেলার থেকে সাজতে বসেছে,,, আজ ও আবিরের মনের মতো করে সাজবে,,,কচি কলাপাতা রঙের শাড়ির সাথে ম‍্যাচিং করে সোনার চুড়ি,হার আর কানের দুল পড়েছে যেগুলো অনুপমা দিয়ে গিয়েছিল। শাশুড়ি আর বৌমাকে একি সাজে দেখে তো অশোক বাবু অনেকটা সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন ওদের দিকে তাকিয়ে,,, 


- কি হলো কি??? এই ভাবে ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে তাকিয়ে আছো কেন?? আগে আমাদের দেখোনি??(অনুপমা)


- না সত‍্যিই তো আগে তোমাদের দুজনকে এইভাবে দেখা হয়নি,,, দুজনেই একই ভাবে সেজেছো,,,তোমাদের দেখে কেউ বলবে না যে তোমরা শাশুড়ি বৌমা,,,বরং লোকে এটা বলবে এটা তোমার ছোট মেয়ে,,,,এসো তো তোমাদের দুজনের একটা ছবি তুলে দেয়,,,ফেসবুকে দেবো,,,(অশোক বাবু)


- শ্বশুরের কথা শুনে পেখম হেসে বলল,,পাপা তুমিও না পারো,,,চলো ছবি তুলি,,,তবে শুধু মা আর আমি না,,,আমাদের সাথে তোমাকেও তুলতে হবে,,,


- তোদের পাশে কি আমাকে মানাবে?? বলবে দেখ দেখ বুড়ো মানুষের দু পাশে দুটো যুবতী,,,(বলেই হেসে উঠলো আর তার সাথে যোগ দিলো অনুপমা আর পেখম)

_________________________________________


- কোনো কিছুর প্রতি বেশি প্রত‍্যাশা করলে সেই জিনিস টা হয়না,,,তখন সেই পরিস্থিতিতে মানুষের মনের মধ্যে কি চলে সেটা কেবল সেই মানুষটিই জানে,,পেখমেরো হয়েছে এখন তাই,কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,, 


-সকাল থেকে বেশি এক্সাইটেড ছিল ও সোহিনীর বিয়েতে আসার জন্য। সোহিনীকে ভুল বুঝেছে সেই জন‍্যেও কিছুটা অপরাধবোধ কাজ করছিল ওর মনের মধ্যে,,, তাই তো এখানে এসেই আগে ও সোহিনীর কাছে যায়,,,তারপর সোহিনীকে হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরে বলল,,


- তোমাকে খুব মিস করবো,,,তুমি করে বলছি বলে কিছু মনে করো না,,,,


- এমা ম‍্যাম আমি কিছু মনে করবো কেন,,আমি বরং এতে আনন্দ পেলাম যে আপনি আমাকে তুমি করে বলে নিজের কাছের মানুষের তালিকায় স্থান দিলেন,,,


- আমি তোমার থেকে অনেক ছোট,,, আমাকে ম‍্যাম বলে ডাকার দরকার নেই আর আপনি বলেও সম্বোধন করতে হবে না,,,নাম ধরে ডাকবে,,,


- ঠিক আছে পেখম,,,


- আচ্ছা সোহিনী তোমাদের স‍্যার আসেননি??


- না,,,রাজিব বললো যে স‍্যার আসতে পারবেন না,,,ওখানে কি সমস্যা হয়েছে তাই,,,আমি সকালে ফোন করে ছিলাম স‍্যারকে,,তখন তিনি রিসিভ করতে পারেননি,,, পরে অবশ্য ভিডিও কল করেছিলেন আমাকে,,,আর সরিও বলেছেন,,,,


- সোহিনীর কাছ থেকে এইসব শুনে পেখমের মনটা বিষাদে ভরে গেল,,, এখানে আর এক মুহূর্তের জন্যে ওর থাকতে ইচ্ছা করছে না,, কিন্তু সেটা মামনি আর পাপাকেও বলতে পারছে না,,,অগত‍্যা ওদের সাথেই থাকতে হলো।


- পেখমরা বেশ অনেক রাত করেই বাড়ি ফিরেছে,,,,মামনি আর পাপার সাথে কথা বলে পেখম নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়,,,তারপর ফোনটা নিয়ে একটা টেক্সট করে আবিরকে,,, তারপর ফোনটা থেকে আবিরের একটা ছবি বার করে বুকের মধ্যে নিয়ে খুব কাঁদে,,, এতটা কষ্ট ও আর সহ‍্য করতে পারছে না,,,, 


- কবে আসবেন আপনি আমার কাছে?? কবে নেবেন আমাকে আপন করে,, কবে এই শাস্তির মেয়াদ শেষ হবে??? প্লিজ আপনি ফিরে আসুন,,,আমি যে এই বিরহ সহ‍্য করতে পারছি না,,,,

___________________________________________


- আবির ল‍্যাপটপে অফিসের কিছু ডকুমেন্ট চেক করছিল,, হঠাৎ ফোনে ম‍্যাসেজ টোন শুনে ফোনের দিকে তাকায়,,আর সাথে সাথে ফোনের আলোয় দেখতে পাই হৃদয়হরণী সেন্ড ইউ অ্যা ম‍্যাসেজ,,, আবির কিছুক্ষণ ওই ভাবেই তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে যতক্ষণ না ফোনের আলোটা নিভে যায়,,,আবির ল‍্যাপটপ টা বন্ধ করে রেখে দেয়,,,তারপর ফোনটা নিয়ে ব‍্যালকনিতে চলে যায়,,,


- বাইরের আবহাওয়া ঠান্ডা,,, থেকে থেকে শীতল বাতাস বইছে,,, ব‍্যাঙ্গালোরের ওয়েদার সর্বদাই এইরকম,,, কখনো মেঘ,কখনো বৃষ্টি,,, আবার কখনো গরম তো কখনো ঠান্ডা,,, প্রায় প্রতি নিয়ত একবার করে হলেও বৃষ্টি হবেই হবে,,,পেখমের আবার এইরকম ওয়েদার খুব ভালো লাগে,,, আবিরের তো ইচ্ছা করে বৌটাকে এখানে এনে রাখতে,,,তারপর এইরকম ওয়েদারে রাতে একই ব্ল‍্যাকেটের মধ্যে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দৃষ্টি বিনিময় করা,,,কিন্তু সেসব যে এত সহজে হবে না,, সেটা সে জানে,,,,এইসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা অন করে ম‍্যাসেজটা ওপেন করলো,,,


- "খুব জানতে ইচ্ছে করছে সে কি করে এতটা নির্দয় হতে পারে?? এখন আর সে তার প্রেয়সীর চোখে জল এলেও মুছে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। এখন আর সে তার রাত-প্রেয়সীর মুখটা দেখার জন্য ছটফট করে না। একটিবারের জন্য হলেও সে এখন আর ব‍্যাঙ্গালোর থেকেই কলকাতায় ছুটে আসে না,,,, কিন্তু আমি চাই সে আসুক,,হ‍্যাঁ আসুক,,, এসে দেখে যাক তার জন্য এই অপেক্ষায় রত প্রিয়াকে,,,,হ‍্যাঁ তার প্রেয়সী অপেক্ষা করবে,,,,তাকে তো আসতে হবে,,,, আসতেই হবে তার প্রিয়তমার অপেক্ষার অবসান ঘটানোর জন্য হলেও তাকে আসতে হবে।সে তার প্রেয়সীকে ভালোবাসার আগুনে পুড়াতে চাইছে তো,,,ঠিক আছে সেই আগুনে পুড়ে দগ্ধ হতেও রাজি আছে সেই অপেক্ষারত প্রিয়া,,, কিন্তু সে এটা জানে না এই বিরহের আগুনে পুড়ে খাটি সোনার মতো ভালোবাসার পবিত্রতা গভীর হয়,,,,আর সেই পবিত্রতার গভীরতা এতটাই প্রখর হয় যে তার টানে তাকে আসতে বাধ্য হতেই হবে,, হমম হতেই হবে,,,এক পশলা বৃষ্টি হয়ে তাকে এই প্রিয়ার কাছে ধরা দিতেই হবে"।


- আবির ম‍্যাসেজের দিকে এখনো তাকিয়ে আছে,,, ঠিক মতো বোধগম্য না হওয়ার জন্যে সে আরও একবার ম‍্যাসেজ টা পড়ে বলে ওঠে" তবে কি সে সব জেনে গেছে,,,,জেনেই যদি যায় তাহলে তো এত সহজে তার কাছে আমি ধরা দেব না।এতদিন আমি পুড়েছি,, আজ থেকে নাহয় তুই একটু দহন সহ‍্য কর,,আমিও তো দেখতে চাই মিসেস আবির চৌধুরীর সহ‍্য ক্ষমতা কতটা?? আমার থেকে বেশি না কম,,,,,তারপর ফোন থেকে একটা পাখির ছবি বার  করে তার দিকে তাকিয়ে বলে,,,


- "সে কি জানে দীর্ঘ নয় বছর আমি তার ভালোবাসার আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়েছি। তার ওই চোখে ল‍্যাপ্টানো কাজলে পুড়েছি বারংবার,,,, পুড়েছি তার ঝঙ্কার তোলা হাসিতে,,,আবার পুড়েছি তার ঘুমন্ত মায়াবী ওই মুখে,,,, তার সেই বৃষ্টি ভেজা রাতে পবিত্র স্পর্শ পেয়ে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছি,,,,তার ভালোবাসার আগুনের দহন ক্রিয়ায় তো দগ্ধ হয়েছি আমি প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে,,, সে কি তার হিসেব রেখেছে???

___________________________________________


- দুপুরের অবসর সময়ে অনুপমা ব‍্যস্ত তার সিরিয়াল গুলো দেখার জন্য,,, এমন সময় পাখি এসে অনুপমার কোলে মাথা রেখে সোফায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে,,,তারপর একপাশ ফিরে অনুপমার কোমড় জড়িয়ে কোলের মধ্যে মুখ গুজে দেয়,,,পেখমের এইরূপ কান্ডে অনুপমা হেসে টিভি অফ করে দেয় তারপর পেখমের মাথায় হাত রাখে,,,,


- কি হয়েছে?? এইভাবে সোফায় এসে আমাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লি,,,শরীর ঠিক আছে তো?? নাকি আবার আমার গুণধর ছেলের সাথে ঝগড়া করেছিস??( মাথায় বিলি কাটতে কাটতে কথাটা বললো অনুপমা)


- হমমম ঝগড়া,,,,সেইদিনের পর থেকে আজ প্রায় একমাস হয়ে গেল আমি তার সাথে যোগাযোগ করিনি আর না সেও করেছে,,,,(মনে মনে)


- কি হলো চুপ করে আছিস কেন??? বল,,,,


- মামনি এমনি কিছু ভালো লাগছে না তাই,,,,


- এখুনি তোর মন ভালো হয়ে যাবে,,, আবির তোর পছন্দের মিষ্টি দই অর্ডার করেছে, যে দোকান থেকে তুই খাস,সেখান থেকে তাও আবার দশ কেজি,,,, তুই ভাব ছেলেটা কত পাগল তোর জন্য,,,


- মামনি আজ সন্ধ‍্যের ফ্লাইটে আমি ব‍্যাঙ্গালোরে যেতে চাই তার ব‍্যবস্থা করে দেবে প্লিজ 


- এই কি হয়েছে রে?? দুজনের মধ্যে মান- অভিমান চলছে নাকি,,,সেটা ফোন করে আজকাল বাবা- মার খোঁঝ না নিয়ে বৌ এর খোঁজ নেয়,,,


- কি বলছো কি মামনি?? কি বলে তোমার ছেলে?? ও মামনি বলো,,,


- এই তো তুই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছিস কিনা,,,কোচিং সেন্টারে নিয়মিত যাচ্ছিস কিনা,,,ঠিক মতো ঘুমাচ্ছিস কিনা,,,আমি যেন একটু তোর খেয়াল রাখি,,,


- ও তাহলে উনি তলে তলে আমার খোঁজ নেয়,আবার আমার পছন্দের দই পাঠায়,,(মনে মনে)


- ওই আবার কি ভাবছিস,,, আচ্ছা ব‍্যাঙ্গালোরে একা  কেন যাবি??আবিরের মান ভাঙ্গাতে নাকি কালকে ওর জন্মদিন তাই যাবি?? 


- দুটোই মামনি,,,,


- ভালো কথা  আবিরের জন্মদিনের ঠিক কুড়িদিনের মাথায় তোর জন্মদিন না,,,তুই এক কাজ কর ******

___________________________________________


- আবিরের অফিস থেকে আজকে আসতে একটু বেশি দেরি হয়েছে,,,কারণ এখানকার যে সমস্যা গুলো ছিল ও আর রাজিব মিলে তা সমাধান করে দিয়েছে,,,, প্রজেক্ট গুলোও হাতে পেয়েছে,,,, তাই ও ঠিক করেছিলো ওর জীবনের বিশেষ দিনটা মা আর পাখির সাথে কাটাবে,,,তবে পাখির সামনে গম্ভীর হয়ে থাকবে,,,,যেহেতু কালকে চলে যাবে কলকাতায় সেহেতু আজ সব কিছু ম‍্যানেজার কে বোঝাতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল,,,,


- চাবি দিয়ে ফ্ল‍্যাটের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে আবার দরজা লক করে আবির। তারপর সোফার উপর অফিসের ব‍্যাগটা রেখে হাত পা ছড়িয়ে বসে থাকে,,,,কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবির ফ্রেশ হওয়ার জন্য বেডরুমে চলে গেল,, তারপর ঘরের মৃদু আলো জ্বালিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,,,,


- প্রায় এক ঘন্টা মত শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় আবির। আর বেরিয়ে ও অবাক হয়ে চারদিকে তাকায়,,, দেখে ঘরের মৃদু আলোর বদলে রয়েছে ছোট ছোট লাল নীল মোমবাতি আর মরিচ বাতি,,,,বিছানার উপর গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো,,,, ঘরের সেন্টার টেবিলের উপর একটা কেক রাখা আছে,,,আর তার উপর জ্বলজ্বল করছে একটি লেখা ,,,,আর তা হল- শুভ জন্মদিন মিস্টার চৌধুরী,,,,


- আবির কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,,,তারপর ও ভাবতে থাকে ওর ফ্ল‍্যাটের চাবি কেবল মাত্র ওর কাছেই থাকে,,, তাহলে এত কিছু করলো কে?? আর ফ্ল‍্যাটেই বা কি করে ঢুকলো,,,এইসব কিছু ভেবেই চলেছে আবির,,,আর ঠিক সেই সময় ওর কানে ভেসে আসে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর,,,


-Chaahe kuchh na kehna


Bhale chup tu rehna

Mujhe hai pata

Tere pyaar ka

Khamosh chehra

Aankhon pe pehra

Khud hai gawah

Tere pyar ka


Chaahe kuchh na kehna


Bhale chup tu rehna

Mujhe hai pata

Tere pyaar ka

Khamosh chehra

Aankhon pe pehra

Khud hai gawah

Tere pyar ka


চলবে,,,,,,,,


গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২৮

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২৮


-পেখু তুই কিছু কি করছিস???


- না মামনি এমনি geography math গুলো দেখছিলাম,,, কেন কিছু বলবে??


- তীয়াকে এই কচুপাতা বাটা টা দিয়ে আসবি তো,,,আগের দিন তোর মা রান্না করেছিলো,,,তোর বৌমনি নাকি আর কিছু খাইনি,,, শুধু ও কচুপাতা বাটা দিয়ে সব ভাত খেয়েছে,,,তাই আজকে আমি রান্না করলাম,,,, মেয়েটা আজকাল কিছু খেতেই পারে না,,,


- ঠিক আছে দিয়ে আসবো,,,স্নান সেরে আমি ওবাড়িতে যাচ্ছি,,,


- ও হ‍্যাঁ আর একটা কথা কচি কলাপাতা রঙের কোনো শাড়ি তোর আলমারিতে আছে কিনা দেখিস তো,,


- কেন মামনি পড়বে তুমি??


- আরে তোর জন্য,,আমার একটা কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি আছে,তাই ভাবলাম সোহিনীর বিয়েতে তুই আর আমি এক রঙের শাড়ি আর এক ডিজাইন করা গয়না পড়ে যাবো,,,,সবাই বেশ তাকিয়ে দেখবে শাশুড়ি আর বৌমাকে,,, ব‍্যাপার টা কেমন হবে বলতো,,,আমার তো এখন থেকে ভাবলেই মজা লাগছে,,,


- আর আমার লজ্জা লাগছে,,


- তোর লজ্জা লাগে না আবার কোন জিনিসে তা কে জানে,,,, এখন দেখ আগে শাড়ি আছে কিনা,,, না থাকলে তীয়ার কাছ থেকে নিয়ে আসবি,,,আমি আসছি,,,


- ঠিক আছে,, আমি কিন্তু দুপুরে তাহলে ওবাড়িতে খেয়ে নেবো,,,


- সে কি আর বলতে,,আমি জানি তো মনোরমা তোকে না খাইয়ে পাঠাবে না,,,,( বলতে বলতে চলে গেল)

__________________________________________


- অনুপমা চলে যাওয়ার পর পেখম নিজের আলমারি খুলে শাড়ি খুঁজতে লাগলো,,,বিয়ের পর তীয়া একবার আলমারিটা ভালো করে গুছিয়ে দিয়েছিলো,আর কোথায় কি রেখেছে সব ওকে বলে দিয়েছিলো কিন্তু পেখমের সে সব কিছুই মনে নেই তাই বাধ্য হয়ে এখন সব জায়গায় ওকে দেখতে হচ্ছে,,,


- আলমারির সব জায়গায় খুঁজে অবশেষে উপরের তাকে একটা কচি কলাপাতা রঙের জামদানি শাড়ি পেল ওটা লাফিয়ে পেড়ে নিতেই শাড়ির সাথে একটা কিছু ওর গায়ের উপর পড়লো,,,জিনিস টা শক্ত হওয়ার দরুন পেখম একটু ব‍্যাথা পেল,,,,তারপর জিনিস টা কি ভালো করে দেখার জন্যে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিয়ে দেখলো যে এটা আবিরের ডাইরি,,,,ডাইরির উপরে স্পষ্ট করে লেখা আছে আবির চৌধুরী,,, Do not touch it


 - Do not touch it এই লেখাটা পড়ে পেখমের খুব ইচ্ছা করছে ডাইরির ভিতরে কি লেখা আছে সেটা পড়ার জন্য,,,যদিও সেটা অন‍্যায়,,, বিনা অনুমতিতে কারোর পারসোনাল ডাইরি পড়া কিন্তু পেখমের এই অন‍্যায় কাজটা করতে খুব ইচ্ছা করছে,,,তাই চুপচাপ দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল,,, তারপর ডাইরি টা খুলে দেখলো,,,,প্রত‍্যেকটা পাতায় অল্প অল্প করে কিছু না কিছু লেখা,,,,


২৩ সেপ্টেম্বর(২০১২)

- এটা আমার সাথে কি হচ্ছে,,কেন হচ্ছে,,,তবে কি আমি ঐ পিচ্চিটার প্রেমে পড়েছি,,,ও মাই গড,,,একটা পিচ্চি কিভাবে আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে,,,


 ১০ ফেব্রুয়ারি(২০১৩)

-ওকে আজ বলে এসেছি সে জানো শাড়ি না পড়ে,,,এই পিচ্চিবেলায় অত শাড়ি পড়তে হবে না,,, তখন দেখার মতো মুখ ছিল তার,,,কিন্তু সে কি করে বুঝবে কেন তাকে বারণ করলাম,,,তাকে ওই অবস্থায় দেখে তো আমি আর আমার মধ্যে থাকতে পারছিলাম না, শুধু মনে হচ্ছিলো তার মাথাটা আমার এই বুকে চেপে ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি,,তাহলে যদি এই বুকটা শান্ত হয়,,,


২২ জুন(২০১৩)

- আজ তাকে বৃষ্টি বিলাস করতে দেখেছিলাম ছাদে,,,বৃষ্টির ফোঁটা গুলো যখন তার ওই শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছিলো তখন খুব হিংসে হচ্ছিলো আমার,,,, কেন ছোঁবে আমার প্রেয়সীর শরীর সে,,,,


- পেখম ডাইরির লেখা গুলো পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে,,, তারপর কি মনে করে ডাইরিটা এলোমেলো করে পড়তে লাগলো,,,লাস্টের দিকে একটা পেজে পেখমের চোখ আটকে যায়,,,


১০ জানুয়ারি(২০১৯)

- আজ আবার আমার রাত- প্রেয়সীকে দেখার জন্য মনটা কেমন করছিল,,তাই তো রাতের ফ্লাইটে চলে আসলাম কলকাতায়,,, কিন্তু সে দেখো ঘুমাচ্ছে,,, কি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে সে,,,অথচ আমার এই চোখে ঘুমের বদলে রয়েছে শুধু তাকে দেখার তৃষ্ণা,,,,


৬ ডিসেম্বর(২০১৮)

-আজ বাবা আমাকে অফিসের কিছু ফাইল চেক করার জন্য বললো,,,সকাল থেকেই লেগে পড়লাম কাজে,,,অতিরিক্ত কাজের চাপের জন্যে মনটা ভীষণ কফি কফি করছে,,,পাখিকে দেখলাম করিডোর দিয়ে যেতে,,তাই ওকে বললাম এক কাপ ব্ল‍্যাক কফি করে আনতে,,কিন্তু মহারানী বলল সে নাকি কফি করতে পারে না,,, কথাটা শুনে মেজাজ টা অটোমেটিক খারাপ হয়ে গেল,,,,,, কদিন পড়ে যে আমাকে সামলাবে ,,, আর এখন সে বলে কফি করতে পারে না,,,দিলাম এক ধমক,,, বললাম দশ মিনিটের মধ্যে যেন সে আমাকে কফি করে এনে দেয়,,,,,পরে অবশ্য শুনেছিলাম মায়ের কাছে,,, পাখি নাকি তীয়ার কাছে গিয়ে কেঁদে কেটে কফি বানানো শিখে দশ মিনিটের মধ্যেই আমাকে কফি করে এনে দিয়েছিল,,, ভাবলে এখানো হাসি পাই,,,মেয়েটা আমাকে অতিরিক্ত ভয় পায়,,,,


- পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে পাখির চোখ একটা জায়গায় গিয়ে আটকে যায়,,,


১৫ জুন(২০১৭)

- আজ বন্ধুদের জোড়াজুড়িতে বাধ‍্য হয়েই শপিং মলে যেতে হল,,,যখন গেলাম তখন নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে নিলাম,,, মল থেকে বেরিয়ে আসার আগেই একটা শাড়ির স্টলে চোখ আটকে যায়,,,বন্ধুদের এগিয়ে যেতে বলে আমি চলে আসি সেই স্টলে,, একগুচ্ছ শাড়ির মধ্যে চোখে লাগে একটা হলুদ জামদানি শাড়ি আর ঠিক তার পাশে রয়েছে লাল রঙের কালো পাড়ের জর্জেটের শাড়ি,,আর সাথে সাথেই আমার প্রিয়তমার মুখ টা ভেসে ওঠে,,, শাড়ি দুটোই কিনে নিলাম,, আর তার সাথে ম‍্যাচিং করে দুল,চুড়ি কিনে নিলাম। রাতে পুলকদের বাড়িতে গিয়ে দেখি পাখি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে,,,আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো,,, আর বসতে বললো,,আমি পুলকের সাথে কথা বলে বাড়ি আসার আগে পাখির ঘরে নক করতেই ও দরজা খুলে দিয়ে বলল"কিছু বলবেন আবির দা"?আমি ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে  শাড়ি আর তার সাথে ম‍্যাচিং করা অর্ণামেন্টস গুলো এগিয়ে দিয়ে বলি এবারের স্বরস্বতী পূজোর সময় যেন সে এটা পড়ে,ও শুধু ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে চেয়ে ছিল,, তখন মনে হচ্ছিলো না থাক বলবো না।

আর লাল শাড়িটা আমি আমার আলমারিতে রেখে দিয়েছি,,,কোনো এক বিশেষ দিনে যখন আমি পাখিকে নিজের করে কাছে পাবো তখন এটা পাখিকে পড়তে বলবো, ওটা না হয় সেদিনের জন্যে তোলা থাক,,,


- পেখম তাড়াতাড়ি ডাইরিটা রেখে আলমারিতে শাড়িটা খোঁজে,,,অবশেষে আবিরের আয়রন করা শার্টের ভাঁজের থেকে ও সেই লাল শাড়ি, লাল কালো চুড়ি আর কালোর উপরে গোল্ডেন স্টোনের একজোড়া দুল পাই,,,পাখি সেইগুলো বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে,,,,অনেকক্ষণ পর নিজেকে ধাতস্থ করে আবার ডাইরি টা নেয়,,,পাতা উল্টিয়ে দেখে এবার সব উল্টো পাল্টা করে যেখানে সেখানে লেখা কোনো সাল নেই শুধু ডেট আছে,,ও প্রত‍্যেকটা পাতা পড়া শুরু করে,,,,


(৫জুলাই)

-সে কি জানে লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া তার রক্তিম মুখটাই যথেষ্ট আমার হৃদয়ের কম্পন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য??


(১৫ নভেম্বর)

-সে কি জানে তার অগোছালো স্বভাব আমার নিয়ন্ত্রণকে ভেঙেচুরে দেয় প্রতি নিয়ত??তার ওই ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখে আমার রাতের ঘুম উড়ে যায়,,,


(১৯ এপ্রিল)

- সে কি জানে তার অবাধ্য চুল গুলোর প্রতি আমার হিংসা হয় প্রতি নিয়ত?? যখন ওই অবাধ্য চুল গুলো তার চোখে মুখে আছড়ে পড়ে আমার খুব ইচ্ছা হয় তার কানের লতিতে চুলগুলোকে বাধ্য করে গুজে দিতে,,,


(২ ফেব্রুয়ারি)

-আজ ভীষণ কষ্ঠ হচ্ছে কি করে থাকবো তাকে না দেখে দু বছর,,,, বিসনেস কলেজে যেতে হচ্ছে আমাকে দু বছরের জন্য,,, এ দু বছরের প্রত‍্যেকটা দিন আমার কাছে বিষাদময় মনে হবে,,,,তাকে না দেখে,,,তার গলার স্বর না শুনে কি করে আমি সেখানে থাকবো,,,


- পেখম ভালো করে পৃষ্ঠা টা দেখলো,,,তাতে কাগজের উপর জল পড়লে যেমন টোপ খাওয়া মতো দাগ হয়,,ঠিক তেমনই দাগ আছে এই পৃষ্ঠাতে,,,ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে আবির এইকথা গুলো লেখার সময় কাঁদছিল,,, অজান্তেই ওর চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে ডাইরির সেই পৃষ্ঠার উপড়ে পড়লো,,চোখের জল মুছে আবার পড়া শুরু করলো,,,


(১৮ জুন)

- মহারাণী কাল থেকে কলেজ যাবেন,,,,পিচ্চিটা বড়ো হয়েই গেল ,,,,ব‍্যাঙ্গালোরে আমার আর থাকতে ইচ্ছা করছে না,,, কিন্তু না থেকেও উপায় নেই বাবার বিসনেস তো আমাকেই দেখতে হবে,,,তবে পিচ্চির সব খবরাখবর দেওয়ার জন্য আমার ওখানে লোক রাখা আছে,,,,আজ পর্যন্ত কম ছেলেকে তো আর সাইজ করলাম না,,,,,


(৫ অক্টোবর)

- আজ প্রথম স‍্যালারি দিয়ে তার জন্য একটা কালো শাড়ি কিনেছি,,,এবং বলেছি এটা যেন সে একান্তই আমার সামনে পড়ে,,,,


(২৯ জুলাই)

- তুর্যের কোলে ওঠার সাহস কি করে পাই এই মেয়ে,,,মনে তো হচ্ছে ঠাসিয়ে দুটো চড় মারি,,,,তারপর ওই তুর্যের হাত দুটো ভেঙে দি,,,,ননসেন্স,,,


- উফফফ এই মেয়েটা সত‍্যিই পাগল করে দেবে ,,এইভাবে কেউ বৃষ্টিতে ভেজে,,,একের থেকে পায়ে ব‍্যাথা কিন্তু না উনার বৃষ্টিতে ভিজতে হবে,,,নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে প্রেয়সীর নেশায়,,, আমি তাকে স্পর্শ করতে চেয়েও করিনি কারণ আমি চাই এতে যেন তার সম্মতি থাকে,,,যা হবে আমাদের পবিত্র ও শুদ্ধতম স্পর্শ,,,,,,


(১ জুন)

- ঋষিকে নিয়ে ভাবাচ্ছে ভীষণ এই মনটা ,,,কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে পাখি একমাত্র এই আবির চৌধুরীর হৃদয়ের কাছে ধরা দেবে,,,সেচ্ছায় বন্দি হবে এই আবির চৌধুরীর মনের খাঁচায়,,,


(১১ জুন)

- আজ আমি তার সম্মতি পেয়ে স্পর্শ করেছি তাকে,,,সেই স্পর্শে ছিলো পবিত্রতা,,, একরাশ ভালোবাসা,, ভালোলাগার অনুভূতি,,,, দুজনে মিলে প্রেমের বৃষ্টিতে ভিজেছি,,,অবশেষে ধরা দিয়েছে সে আমার হৃদয়ের খাঁচায়,,,


(১২ জুন)

- আজ আমর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,,, না আমি কাউকে বলতে পারছি,,,না সইতে পারছি,,,ঋষির সাথে পাখির বিয়ে কি করে ঠিক হয়??? আমি পারবো না চোখের সামনে এসব সহ‍্য করতে,,,,আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে,,, দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,, সব কিছু অন্ধকার,,,,


(১৫জুন)

-আজ যাবো আমি কাকুর সাথে কথা বলতে,,


(১৯ জুন)

- পাশাপাশি যখন নিজের বন্ধুর সাথে নিজের প্রেয়সীকে একসাথে রেস্টুরেন্টে দেখে তখন যে কি পরিমাণে কষ্ট হয়েছিল সেটা আমি লিখে বোঝাতে পারবো না,,,,


(২২ জুন)

- যে দিনটার জন্য আমি আজীবন প্রতীক্ষা করবো ভেবেছিলাম,, সেই দিনটা আজ এভাবে আমার কাছে এসে ধরা দেবে আমি বুঝতে পারিনি,,, হ‍্যাঁ সে আমার কাছে এসেছে,,,ভালোবাসে বলেছে,,,কিন্তু আমি তার পরিবর্তে তাকে আঘাত করেছি,,, তার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছি,,, জানিনা কোনো দিন সে আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কি না?? কিন্তু আমি নিরুপায়


-(২৯ জুন)

- পুলকটা আমার উপরে অযথা রাগ করেই বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে,,, আমার কথা বুঝলো না,,,,তীয়াকে আমি বুঝিয়ে বলেছি,,,বোনটা আমার জন্য সেদিন খুব কেঁদেছিল,,, ভীষণ ভালো বাসে আমাকে সেইদিন খুব করে উপলব্ধি করে ছিলাম,,, কিন্তু নিজের সুখের জন্য কারোর মৃত্যুর কারণ আমি হতে চাই না,,, হয়তো আমার কপালে পাখি ছিল না,,,


-(৩১ জুন)

- কাল কে তার বিয়ে,,, আমি ঠিক করেছি কাল বিকেলের ফ্লাইটে ব‍্যাঙ্গালোরে চলে যাবো,,,নিজের চোখে তার বিয়ে আমি সহ্য করতে পারবো না,,,, এতটা সাহস আমার নেই,,,, হয়তো এই ডাইরিতে এটাই আমার কলমের লাস্ট লেখা,,,, যেই মানুষটাকে নিয়ে লিখতাম মনের হাজারো অনুভূতি,,, কাল যখন সেই মানুষ টি অন‍্যকারোর হয়ে যাবে,,, তখন আর এই ডাইরি লিখে আমার লাভ নেই,,, হয়তো কোনোদিন খোলাও হবে না এই ডাইরি,,,,সময়ের সাথে ভালোবাসা যেমন হারিয়ে যায় তেমন এই ভালোবাসার অনুভূতি পূর্ণ ডাইরিটাও যেন হারিয়ে যায় কোনো এক নাম না জানা দেশে,,,,,


- পেখম তারপর ডাইরির পেজ গুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলো,,,না আর কোথাও কিছু লেখা নেই,,,,পরের পেজ গুলো সব সাদা,,,পেখম ডাইরিটা বুকে জড়িয়ে ঢুকরে কেঁদে ফেললো,,,আর বলতে লাগলো,,,,


- মানুষটা আমাকে এত গুলো বছর ধরে এতটা  ভালোবেসেছে আর আমি কিনা তাকেই এত অবিশ্বাস করলাম,,, কি করে পারলাম আমি এটা করতে?? সে কি আমাকে ক্ষমা করে দেবে?? আমাকে আবার বুকে টেনে নেবে?? আপনি প্লিজ ফিরে আসুন,,,, আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি,,,, আমাকে ক্ষমা করে দিন সেদিনের জন্যে,,,, কি করে পারলাম আপনার ভালোবাসাকে অপমান করতে?? কি করে পারলাম আপনাকে অপমান করতে?? কেন আমি আপনার মুখে বলা ওই কথা গুলো বিশ্বাস করলাম?? কেন আমি আপনাকে সন্দেহ করলাম??? প্লিজ আপনি ফিরে আসুন,,,,( কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে,,,ওর এখন এই মুহূর্তে তীয়ার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে,,, সব কথা জানতে ইচ্ছে করছে কি এমন হয়েছিল যার জন্য আবির এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে,,, তাড়াতাড়ি করে ডাইরি টা নিজের জায়গা মতো ঠিক করে রেখে স্নান করে ওবাড়িতে ছুটলো যাওয়ার জন্য)

___________________________________________


- হ‍্যাঁ রে আমি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছি,,,তোকে চিন্তা করতে হবে না,,, তুই শুধু এটা বল যে কবে আসছিস,,,আমার সাদেও তো এলি না দাদাভাই,,,আমি কিন্তু খুব রেগে আছি আর তার সাথে তোর চ‍্যাম্প ও রেগে আছে,,,(তীয়া)


- রাগ করিস না এইদিকে সবকিছু আগে সামলে নি তারপর ঠিক চলে যাবো ওখানে,,(আবির)


- আচ্ছা ঠিক আছে,, তুই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছিস তো?? তুই তো আবার তীয়ার কথা বলার মাঝেই ওর ঘরে হুরমুর করে পেখম ঢুকে পড়ে,,, পেখমকে এইভাবে আসতে দেখে তীয়া বলে" কি হয়েছে পেখু?? তুই এইভাবে দৌড়ে কোথা থেকে এলি??


-  পেখম তীয়ার ঘরে ঢোকার সময় শেষের কথা গুলো শুনেই বুঝতে পেরেছিলো যে তীয়া আবিরের সাথে কথা বলছিলো,,তাই তো এক্সাইটেড হয়ে এইভাবে এসেছে ,,,কিন্তু এখন তো সেটা বলতে পারবে না তাই কথা ঘুড়িয়ে বলল


- মামনি তোমার জন্য কচুপাতা বাটা পাঠিয়েছে,,,


- ও তাই আচ্ছা দাঁড়া ,,,এই দাদাভাই তুই একটু পেখুর সাথে কথা বল,,,বলেই ফোনটা কান থেকে নামাতে নিলেই আবির বলে ওঠে,,,


-তীয়া আমি এখন একটু ব‍্যস্ত আছি,,পাখির সাথে পরে কথা বলে নেবো,,,বলেই লাইনটা কেটে দেয়,,,


- তীয়া ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পাখির দিকে তাকায়,,, পাখির ছলছল চোখ দেখে ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে নিশ্চয়ই এই মেয়ে কিছু করেছে ওর দাদাভাই এর সাথে,,যার কারণে ওর দাদাভাই রেগে আছে,,,,ও পেখুর দিকে তাকিয়ে বলে,,


- পেখু সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো??? তীয়ার বলার সাথে সাথেই পেখম তীয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়,,,পেখমকে এইভাবে কাঁদতে দেখে তীয়া চমকে যায়,,, তখনই ভেবে নেয় যে ব‍্যাপারটা সিরিয়াস,,, ও ধির স্থির ভাবে পেখমকে বলে কি হয়েছে বলার জন্য,,, পেখম কাঁদতে কাঁদতে শুরু থেকে সবটা বলে দেয় তীয়াকে,,, কথাগুলো শুনে তীয়া উত্তেজিত হয়ে পড়ে,,,তারপর বলে ওঠে,,,


- এই মুহূর্তে আমার কি করতে ইচ্ছা করছে জানিস,,,মনে হচ্ছে তোর দুগালে ঠাসিয়ে দুটো চড় মারি,,, তুই কি করে পারলি এটা করতে??? এই আমি তোকে জিজ্ঞাসা করিনি যে পেখু তোদের মধ্যে সব কিছু ঠিক আছে কিনা?? স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক ঠিক আছে কিনা?? কি হল বল জিজ্ঞাসা করিনি??


- করেছো( চোখের জল মুছে) কিন্তু আমি উনার কথা গুলোর জন্য,,,( পেখমকে বলতে না দিয়ে তীয়া বলে,,)


- হ‍্যাঁ ওই মুখের কথা গুলো বিশ্বাস করে আমার দাদাভাই কে কষ্ট দিলি,,,একবারের জন্যও কি তোর এটা মনে হয়নি মানুষটা কত কষ্টের মধ্যে তোকে এইকথা গুলো বলছে?? বা এই মানুষটা এইরকম কথা বলতেই পারে না,,,,


- আমি সত‍্যিটা জানতে চাই বৌমনি প্লিজ বলো আমাকে,,,


- তুই যেটা করেছিস একদম ঠিক করিসনি পেখম,,, শেষ পর্যন্ত সন্দেহ করেছিস,,,জানি না দাদাভাই তোকে ক্ষমা করবে কিনা,,,ঠিক আছে শুনতে চাইছিস যখন শোন,,,তোর আর ঋষির বিয়ে যে দিন ঠিক হয় তারপরের দিনই দাদাভাই বাবাকে নিয়ে তোর বাবার কাছে যায় তোর হাত চাওয়ার জন্যে,,, তোদের সম্পর্কে কারোর কোনো অমত ছিলো না যদি তোরা একটু আগে সবাই কে বলতিস,,


(অতীত)


- কাকু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি পেখমকে সারাজীবন ভালো রাখবো,,,আগলে রাখবো,,,আমি ওকে খুব ভালোবাসি,,, ওকে ছাড়া আমি এক মুহুর্ত ভাবতে পারি না,,,(আবির)


- দেখতেই পারছিস তো ছেলেটার কি অবস্থা,,, আমি বাবা হয়ে কি করে সহ‍্য করবো দেবেন্দ্র তুই বল??( অশোক বাবু)


- কিন্তু আমি যে নিরুপায় আবির,,,বাবার দু দুবার স্টোক হয়েছে,,,একবার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে,,,এবার প্রায় মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে,,,শরীরের কান্ডিশন একদম ভালো না,,আমি যে কিভাবে বাবাকে এখানে এনেছি তা কেবল আমি আর ওই ভগবান জানেন,,,ডাক্তার আসার সময় বারবার করে বলে দিয়েছিলেন যে বাবা যেন বেশি উত্তেজিত হয়ে না পড়ে,,বিশ্বাস কর এই মুহূর্তে পেখমের বিয়ে আমিও দিতে চাইনি কিন্তু ওই যে বাবা তার বন্ধুকে কথা দিয়ে ফেলেছে তাই আর না করতে পারিনি,,, যাতে বাবার শরীর টা আর খারাপ না হয়,,,,এখন যদি আমি ঋষির সাথে পেখমের বিয়ে ভেঙে দিয়ে তোর সাথে ঠিক করি,জানি না বাবা কিভাবে রিয়‍্যাক্ট করবে,,,যদি বাবা উত্তেজিত হয়ে কোনো ক্ষতি হয়ে যায় বা শেষ নিশ্বাস ত‍্যাগ করে তখন সহ‍্য করতে পারবি তো আবির?? পেখমকে বিয়ে করে সুখী হতে পারবি তো?? সারা জীবন মনে হবে না কারোর মৃত্যুর কারণ তুই??? বল কি হল বল??? আমি যদি আগে জানতাম তাহলে কখনোই বাবাকে এগোতে দিতাম না,,,তুই বল অশোক আমি কি করবো??? না পারছি একজন ছেলের কর্তব্য পালন করতে আর না পারছি একজন বাবার কর্তব্য পালন করতে,,(বলেই সোফায় বসে পড়লেন দেবেন্দ্র বাবু)


- না কাকু ,,,আমার ভুল,,, হয়তো পাখি নেই আমার ভাগ্যে,,, আমি এতকিছু জানতাম না,,, জানলে কখনোই এই অন‍্যায় আবদার নিয়ে তোমার কাছে আসতাম না,,,আমি নিজের সুখের জন্য কখনোই কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারি না,,,, কখনো না,,,(আবির)


- আবিরের কথা গুলো শুনে দেবেন্দ্র আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন যে সত্যি যদি পাখি তোর ভাগ‍্যে থেকে থাকে তো ওর  সিঁথি তোর দেওয়া সিঁদুরে রাঙা হবে,,, 


চলবে,,,,



গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২৭

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২৭


- কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না পেখমের,, ওর মনে হচ্ছে ও যেন রোবটের মতো হয়ে গেছে,,যার মধ্যে নেই কোনো অনুভূতি,,, হঠাৎ হঠাৎ করে কাঁদতে ইচ্ছা করলে একঘন্টা মতো কেঁদে নেবে,,,তারপর ব‍্যালকনিতে গিয়ে রকিং চেয়ারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে,,,,কেন সেই মানুষটি একবারের জন্যেও ওর খোঁজ করছে না,,, ও তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, সেই দিন ওভাবে বলা উচিত হয় নি ওর কিন্তু ও বা কি করবে,,সহ‍্য করতে পারিনি আর,,,,


-আজ প্রায় তিন-চার মাস হয়ে গেল আবির ওর সাথে কথা বলে না,,এমনকি পেখমের ধরা- ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়ে ব‍্যাঙ্গালোরে বসে আছে,,,পেখম তো  ভেবেছিলো তীয়ার সাদে অন্তত আসবে মানুষটা কিন্তু না আসেনি সে,,,তার বদলে ভিডিও কলে তীয়া আর পুলকের সাথে কথা বলে নিয়েছে,,,এইসব কথা গুলো ভাবতে ভাবতে পেখম অতীতে ডুব দেয়,,,,,


(অতীত)


- তীয়া প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকে পেখম বেশ খানিকটা সময় ওবাড়িতে থাকতো প্রত‍্যেকটা দিন,, তারপর কোচিং, কলেজ আর আবিরের সাথে ঝগড়া, ভালোবাসা নিয়েই চলে যাচ্ছিল বেশ,,,কিন্তু এরই মাঝে পেখম লক্ষ‍্য করে আবির রাতে প্রায় ফোনে কথা বলে ব‍্যালকনিতে দাঁড়িয়ে,,, সোহিনীর আসা যাওয়াটাও ইদানিং বেশ বেড়েই গিয়েছিল,,,, যা ও চুপচাপ সহ‍্য করত। একদিন রাতে যখন আবির ওয়াশরুমে ছিল ঠিক তখন ওর ফোনে কল আসে,,,পেখম ফোনটা নিয়ে দেখে সোহিনী কল করেছে,,,তারপর কলটা কেটে গেলে ও আবিরের ফোন চেক করে দেখে সোহিনীর নাম্বার থেকে প্রায় কল আসে আর তার কথা বলার সময় প্রায় একঘন্টা কখনো কখনো দেড় ঘন্টা তাও আবার রাতে,,,যেটা দেখে পেখমের খুব কান্না পেল আর তার সাথে রাগও হল,,,ও ফোনটা জায়গা মতো রেখে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ বাদে আবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ফোন চেক করে,,, তারপর পেখমের দিকে তাকিয়ে ব‍্যালকনিতে চলে যায়,,,প্রায় একঘন্টা পর রুমে আসে,,তারপর সোফায় শুয়ে পড়ে,,,যদি একবার তখন পেখমের দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পারতো তার প্রিয়তমার অশ্রুসিক্ত মুখটা,,, কারণ পেখম তখনো জেগে ছিল আর কষ্টে কাঁদছিল,,,এই যন্ত্রণা যে কতটা ভয়াবহ তা যার উপর দিয়ে যায় সেই বোঝে,,,,


- এই রকম আরও একদিন পেখমদের কলেজের পর কোচিং থাকায় ওরা ঠিক করে কলেজ থেকে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে যাবে,সেখানে গিয়ে খেয়ে তারপর কোচিং সেন্টারে যাবে,,যথারীতি ওরা সবাই আশেপাশের একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যায়,,,সবাই যখন খাবার আসার জন্য অপেক্ষা করছিল তখন অর্নব বলে ওঠে," পেখু আবির দা না ওটা?? ওই যে সামনের টেবিলে বসে আছে,,, সঙ্গে একটা মেয়েও আছে দেখছি"। অর্নবের কথা শুনে সবাই ওদিকে তাকিয়ে দেখে যে হ‍্যাঁ সত‍্যিই ওদের ঠিক একটু আগের  টেবিলে বসে আছে আবির,,,পেখমতো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু সামনের দিকে,,, ও নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না যে আবির আর সোহিনী বসে আছে,, ও সবাইকে বলে একটু সাইডে গিয়ে আবিরকে ফোন করে,,,,কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর আবির রিসিভ করে,,


- হ‍্যালো


- হ‍্যাঁ পাখি বলো,,,


- আপনি কোথায় এখন??


- আমি তো মিটিং আছি কেন?? কিছু বলবে??


- না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম,,,


- ঠিক আছে আমি একটু ব‍্যস্ত আছি,,, রাখছি( বলেই আবির ফোনটা কেটে দেয়)


- আবিরের সাথে কথা বলে পেখম এসে দেখে আবির হেসে হেসে কথা বলছে সোহিনীর সাথে,,এই তার ব‍্যাস্ততা,পেখমের আর গলা দিয়ে খাবার নামলো না,,,এতবড় একটা মিথ্যে কথা বলতে পারলো,,আজ এই মানুষটাকে পেখমের কাছে বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে,,, একটিবারের জন্যে জিজ্ঞাসা অবদি করলো না যে পেখম খেয়েছে কিনা,,,


- কি রে পেখু খা,,,কি ভাবছিস??? আর আবির দার সাথে দেখা করেছিস??( রুশা)


- না রে উনি অফিসের কাজ নিয়ে আলোচনা করছে এখানে তাই আর ডিসটার্ব করলাম না,,, আর শোন আমার না শরীর টা কেমন খারাপ লাগছে,,,আমি বাড়ি যাচ্ছি,,,


- এমা সেকি,,তাহলে চল আমি তোকে দিয়ে আসি,,,( দিপু)


- না না তোরা খা আমি আসছি( বলেই পেখম রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে,,,সারা রাস্তা প্রায় কাঁদতে কাঁদতে আসে)


-সেদিন রাতে আবির বাড়ি ফিরে আসেনি,,, অফিসের কাজ থাকার কারণে সেখানে থেকেই গিয়েছিল,,,আর এইদিকে পেখম কেঁদে কেটে নিজের চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিল,,,


- আমি তো আপনাকে খুব ভালোবাসি সেটা কি আপনি বোঝেন না?? আপনার এইসব ব‍্যবহারে বা ওই সোহিনী কে আপনার পাশে দেখলে এই বুকের ভিতরে ভীষণ কষ্ট হয় সেটা কি আপনি বোঝেন না?? এইভাবে কষ্ট না দিয়ে আমাকে তো মেরে ফেলতেই পারতেন,,, কেন সেদিন বাঁচিয়েছিলেন???আমি তো ভেবেছিলাম আপনাকে কদিন জ্বালিয়ে তারপর আমি আপনার কাছে ধরা দেব,,,অথচ আপনি আমাকে সেই প্রথম থেকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আসছেন,,,, আমি আর সহ্য করতে পারছি না,,, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,,, এই আপনি টাকে আমি চিনি না,,, খুব অচেনা লাগে,,,,আমার সেই আগের আবির দাকে চাই ,,


-সারাদিন রাত কাঁদার ফলে খুব ভোরের দিকেই পেখম ঘুমিয়ে পড়ে,,, ঘুম ভাঙে যখন, তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা একটা বেজে দশ মিনিট,,, ও তড়িঘড়ি করে উঠে স্নান করে নীচে যায়,,,,


- কি রে তোর শরীর ঠিক আছে তো??


- হ‍্যাঁ মামনি আমার আবার কি হবে??


- না আজ অনেক সময় ধরে ঘুমালি,,আমি তো তোর ঘরে গিয়ে দেখি তোর চোখ মুখ সব ফুলে গেছে,,,শোন তুই আর রাত জেগে পড়বি না,,,এখন খেয়ে নে,,,


- মামনি তোমার ছেলে,,,


- পেখমের কথা শেষ করতে না দিয়ে অনুপমা বলে" ও একেবারে রাতে আসবে,,,ভীষণ চাপ নাকি,,,আমি ফোন করে ছিলাম,,,, কেন তোর সাথে কথা হয়নি??


- না আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই,,,


- ওওওও

_____________


- রাত প্রায় দশটার দিকে আবির বাড়ি ফেরে,,তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে যায়,যেখানে অনুপমা, অশোক আর পাখি ওর জন্যে অপেক্ষা করছে,,,


- তা সব কিছু কি রেডি হয়ে গেছে???( অশোক)


- না একটু বাকি আছে,,, রাজিব আর সোহিনী ওরা সামলে নেবে,,আর আমি তো আছি,,


- তা কালকে কখন যাচ্ছো??( অশোক)


- যাচ্ছে মানে?? কোথায় যাচ্ছে ও??(অনুপমা)


- ও মা তোমাকে তো বলা হয়নি,,,আমি আর সোহিনী কালকে ব‍্যাঙ্গালোরে যাচ্ছি,,,ফিরতে হয়তো এক মাস লাগবে,,,কিন্তু সোহিনী,,,,


- এতক্ষন চুপচাপ এদের কথা শুনছিলো পেখম,, কিন্তু আর থাকতে না পেরে আবিরের কথা বলার মাঝেই ও উঠে দাঁড়ায়,,,


- কি হলো উঠলি যে,,,খাবি না আর??( অনুপমা)


- না মামনি,,, আমার আর ভালো লাগছে না খেতে,,,


- কেন মা শরীর ঠিক আছে তো??( অশোক)


- হ‍্যাঁ পাপা ঠিক আছে,,, আর চিন্তা করো না খিদে পেলে ফ্রিজে তো দই আর জুস আছে,,,খেয়ে নেবো,,,আসছি আমি তোমরা কন্টিনিউ করো,,,গুড নাইট,,,( এই বলে পেখম চলে আসে)


- হ‍্যাঁ আবির তুমি কি বলছিলে??( অশোক)


- সোহিনী এক সপ্তাহ পর এখানে চলে আসবে আর তোমার সাথে জয়েন করবে,,,রাজিব আমার সাথে ওখানে থাকবে,,,


-ঠিক আছে,,,

________________

- রাতে আবির মা বাবার সাথে কথা বলে ঘরে যায়,,,ও আজ ভেবেই রেখেছিল যেহেতু অনেক দিন থাকবে না সেহেতু আজ ও ওর প্রিয়তমাকে একটু আদর করবে,,,এই বেহায়া মনটার আজকে তার রাত- প্রেয়সীকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করছে,,,আবির ঘরে গিয়ে দেখে পেখম ঘরে নেই,,,ব‍্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখে পেখম ওখানে দাঁড়িয়ে আছে,,,


- আবির পিছন থেকে গিয়ে পেখমের কোমড় জড়িয়ে ধরে পেখমের কাঁধে নিজের থুতনি রাখে,,,কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর আবির যখন দেখলো তার রাত-প্রেয়সী তাকে বাঁধা দিচ্ছে না তখন সে তার স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতর করলো,,,পেখম আজ  নিজেও চাই আবিরের কাছে নিজেকে সপে দিতে,তারপর এই মানুষটিকে বোঝাবে মোহ কি জিনিস,,,,কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো সামান্য কিছু প্রমাণ করার জন্য নিজের সম্মান সে নষ্ট করতে পারবে না,,, তাই আবিরে ওই গভীরতর স্পর্শের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে চাই,,,কিন্তু পারে না,,, আবির তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখে,,,পেখম কোনো উপায় না পেয়ে বলে ওঠে,,


- আপনার আর রিকের ছোঁয়ার মাঝে কোনো তফাৎ খুঁজে পাচ্ছি না আমি আজ,,,


- পেখমের এই কথাটা শুনে আবিরের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসে,,কথাটা বোধগম্য হতেই আবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,,, হয়ে ওঠে চোখ দুটো রক্তিমময়,,, পেখমকে ছেড়ে দেয় সাথে সাথে ও,,,তারপর বলে,,," তুমি যেটা বলছো ভেবে বলছো তো???


- একদম ভেবে বলছি,,,(অন‍্যদিকে তাকিয়ে)


- পাখি এসব তুমি কি বলছো?? মাথা ঠান্ডা করে বলো,,রিকের সাথে আমার তুলনা করছো???


- ও সরি আমার ভুল হয়ে গেছে,,, আপনি রিকের থেকেও একটা খারাপ লোক,,, আপনি একজন চরিত্রহীন,,, আপনার ঘরেও একটা লাগে আর বাইরেও একটা লাগে,,,না জানি কোথায় কোথায় কি করে বেরিয়েছেন,,,, আপনি একটা মিথ‍্যেবাদি,,,প্রতারক,,,,আপনি সেদিন কেন বাঁচিয়েছিলেন আমাকে?? মরতে দিতেন তাহলে আমি সত‍্যিই বেঁচে যেতাম,,,,


- পাখিইইইইইইই ( জোড়ে চিৎকার করে)


- একদম চিৎকার করবেন না,,,, আমি জাস্ট আপনাকে সহ‍্য করতে পারছি না,,, এই আমি তো আপনার শুধু মোহ,,,আমার প্রতি আপনার শুধু আকর্ষণ ছিল,, সেইজন্য বারবার আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন বলুন,,,,কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার ছোঁয়ায় আমার শরীর ঘিনঘিন করে ওঠে,,,,


- আবির পাখির কথায় এত রেগে যায় যে সেন্টার টেবিলে থাকা ফুলদানি নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে,,,তারপর পাখির দুই বাহু শক্ত করে ধরে  ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে  বলে,,,,, ইনাফ পাখি অনেক বলে ফেলেছো,,,আমি চুপ আছি বলে এই না যে তুমি যা ইচ্ছা তাই আমাকে বলবে,,,ঠিক আছে তুমি চাও না তো আমাকে বেশ,,,তোমার দেওয়া সব অভিযোগ আমি মাথায় পেতে নিলাম,,, আর ওইসব মিথ্যে অভিযোগ গুলোকেই সত‍্যি করে তুলবো আমি,,,,আজকে ভীষণ হার্ট করেছো তুমি আমাকে,,,, আমার স্পর্শ কে তুমি অপমান করেছো,,,,আমার স্পর্শে তোমার শরীর ঘিনঘিন করে তাই তো,,,একদিন আমার এই সামান্য স্পর্শ পাওয়ার জন্য তুমি ব‍্যাকুল হয়ে উঠবে,,,,আমাকে পাওয়ার জন্য কাতরাবে,,,,,( কথা গুলো বলে আবির পেখমের হাত ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,, আর পেখম ওখানে বসেই কাঁদতে থাকে,,,ও চাইনি বলতে কিন্তু যা হচ্ছে সেসব ওর সহ‍্য হচ্ছিলো না,,পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ও আর আবিরকে দেখতে পাইনি,,, আর সেই থেকে আজ তিন-চার মাস হয়ে গেল না কোনো ম‍্যাসেজের রিপ্লাই করেছে,,,না কোনো খোঁজ নিয়েছে পেখমের,,, পেখম ভাবে হয়তো ওখানে আনন্দেই আছে আবির,,,সোহিনী থাকতে ওর কোনো অসুবিধা হবে না,, হওয়ার কথাও না,,,)

__________________________


(বর্তমান)


- রেখাদির ডাকে পেখমের ভাবনার সুতোয় টান পড়ে,,,অতীত থেকে বেরিয়ে আসে,,,, নিজেকে সামলে নিয়ে বলে" কি হয়েছে রেখা দি???


- মা নিচে তোমাকে ডাকছে বৌমনি,,,,,


- ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি,,,,কিছুক্ষণ পর পেখম নিচে নেমে দেখে যে ড্রয়িংরুমের সোফায় সোহিনী বসে আছে,,,সোহিনীকে দেখে পেখম ভাবলো যে তাহলে হয়তো আবিরও বাড়িতে এসেছে,,,পেখমকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোহিনী বলে ওঠে,,


- আরে ম‍্যাম কেমন আছেন?? আপনার সাথে অনেকদিন পর দেখা হচ্ছে,,,


- পেখম আশেপাশে চোখ বুলিয়ে হাসি মুখে বলে আমি ভালোই আছি,,,ইনফ‍্যাক্ট খুবই ভালো আছি মিস সোহিনী,,,তা আপনি এখানে হঠাৎ,,,,


- আরে পেখু ওর তো বিয়ে সামনের সপ্তাহে,,,(অনুপমা)


- বিয়ে??( পেখম অবাক হয়ে বললো)


- হ‍্যাঁ বিয়ে,,,আর জানিস কার সাথে হচ্ছে,,,আবিরের বিসনেস কলেজের বন্ধু রাজিবের সাথে,,,,সোহিনী এই রাজিব তো আমাদের নতুন প্রজেক্টের কাজে আবিরকে সাহায্য করছে বল???


- হ‍্যাঁ আন্টি,,,( লজ্জা পেয়ে)


- সোহিনীর সাথে তো আবির রাজিবের সোর্সেই পরিচিত হয়েছে,,,আচ্ছা তোরা কথা বল আমি রান্নার দিকে গেলাম,,(অনুপমা)


- তবে ম‍্যাম আমি খুবই থ‍্যাঙ্কফুল আবির স‍্যারের কাছে,,,স‍্যার না থাকলে আমার আর রাজিবের বিয়েটা হত না,,,,(সোহিনী)


- এতক্ষণ কথা শুনে পেখম নিজের কৌতূহল দমন করতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে কেন??


- আরে রাজিব তো ব্রাহ্মণ,,,, তাই ওর বাবা ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে ছাড়া ছেলের বিয়ে দেবে না,,,, দীর্ঘ দশ বছরের প্রেম আমাদের,,, কত ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এই নিয়ে,,, কিন্তু শেষে স‍্যার সবার সাথে কথা বলে বুঝিয়ে,, সবাই কে রাজি করাই,,,এট লাস্ট আমাদের বিয়েটা হচ্ছে(সোহিনী)


- কিন্তু তুমি আজ এখানে,,, তোমাকে তো ব‍্যাঙ্গালোরে থাকার কথা??( পেখম)


- হ‍্যাঁ ম‍্যাম আমার যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওখানে এক সপ্তাহ থেকে আমাকে ব‍্যাক করে বড়ো স‍্যারের সাহায্য করতে বলেছিল স‍্যার,,, কিন্তু,,(সোহিনী)


- কিন্তু কি মিস সোহিনী??( পেখম)


- কিন্তু আমাদের যাওয়ার আগের দিন রাতে স‍্যার হঠাৎ আমাকে ফোন করে বলে যে আমাকে যেতে হবে না,,, আমি যেন এইদিক টা সামলায়,,,ওখানে যা কাজ আছে স‍্যার আর রাজিব মিলে করে নেবে,,,,(সোহিনী)


- আচ্ছা আগের দিন আপনাদের কোনো মিটিং ছিল রেস্টুরেন্টে??(পেখম)


- হ‍্যাঁ ছিল,,, মুম্বাইয়ের দুটো ক্লাইন্টের সাথে,,,কেন ম‍্যাম?? এনিথিং রঙ????( সোহিনী)


- এতক্ষন চুপচাপ সব প্রশ্নের উত্তর গুলো শুনে ঠিক থাকলেও শেষের উত্তর টা শুনে পেখম ঠিক থাকতে পারলো না,,, ও বুঝতে পারলো ওর দ্বারা কি বড়ো ভুল হয়েছে,,, এই ভুলের কি কোনো ক্ষমা হয়?? ও কি আবিরের কাছে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য???


- পেখমকে চুপ থাকতে দেখে সোহিনী জিজ্ঞাসা করে,,,ম‍্যাম কি হয়েছে আপনার???


- মিস সোহিনী ভীষণ বড়ো ভুল করে ফেলেছি আমি,,,কিন্তু আমি আপনাকে সেটা বলতে পারবো না,,, আপনি শুধু এইটুকু বলুন আপনার স‍্যার কি আপনার বিয়েতে আসছেন???


- হ‍্যাঁ উনি তো আসবেন,,,, আপনি কিন্তু অবশ্যই যাবেন ম‍্যাম ,,,


- হ‍্যাঁ আমি নিশ্চয়ই যাবো,,,


- ধন্যবাদ আজ তাহলে উঠি,,,,


- সোহিনী চলে যাওয়ার পর পেখম ওখানেই বসে থাকে,,,আর ভাবতে থাকে সেদিন বিনা দোষে মানুষটাকে সে  কি কি বলেছে,,,,আর সব কিছু মনে পড়তেই আবিরের বলা শেষের কথাটা বারবার মনে পড়ে ", একদিন এই স্পর্শের জন্যে তুমি ব‍্যাকুল হয়ে উঠবে,,, আমাকে পাওয়ার জন্য কাতরাবে"

কথা গুলো মনে পড়তেই আঁতকে ওঠে পেখম,,,


চলবে,,,,


গল্প হৃদয়হরণী পর্ব ২৬

 #হৃদয়হরণী

#কলমে সৌমিতা

#পর্ব- ২৬


- সময় ,স্রোত সর্বদা প্রবাহমান,,,ঠিকই যেমন ঘড়ির কাঁটা আর ক‍্যালেন্ডার জানান দেয় দিন পেরিয়ে রাত,,মাস পেরিয়ে বছর ক্রমাগত ভাবেই পরিবর্তন শীল,,,,দেখতে দেখতে প্রায় মাস তিনেক পার হয়ে গেছে কিন্তু আবির আর পেখমকে দেখলে মনে হবে তারা ঠিক আগের জায়গাতে আছে,,,আসলে সম্পর্কের ভিত যদি হয় নড়বড়ে সেক্ষেত্রে সেটা মজবুত করতে দুজনেরই প্রচেষ্টা দরকার,, কিন্তু এখানে ব‍্যাপার টা সত‍্যিই জটিল ,,,,


- বিশ্রী ফিনাইলের গন্ধে গা গুলিয়ে এলেও নাকে রুমাল দিয়ে  হাসপাতালের করিডোরে পাইচারি করছে পেখম,,, অশোক বাবু তো অনুপমা দেবীকে সামলাতে ব‍্যস্ত,, এদিকে পুলক ওর মাকে জড়িয়ে বসে আছে,,,দেবেন্দ্র বাবু তার বাবার সাথে ফোনে কথা বলছে,,,পেখম একটানা অপারেশন থিয়েটারে লাল আলোটার দিকে তাকিয়ে আছে,,, ভিতরে কি হচ্ছে ও কিছু বুঝতেই পারছে না,,, চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসতেই সেটাকে হাত দিয়ে মুছে ফেললো,,,কাঙ্খিত নাম্বারটিতে অনেক বার কল করা সত্ত্বেও ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স পেলো না,,,,বার কয়েক সবার দিকে তাকিয়ে আবার পাইচারি দিতে লাগলো,,,হাত ঘেমে যাচ্ছে,,,এই গুমোট পরিবেশের মধ্যে কেমন অসুস্থতা অনুভব করছে পেখম,, হঠাৎ করে ওর ফোন বেজে উঠলো,, হাতে থাকা ফোনের উপর নজর দিয়ে দেখলো কাঙ্খিত সেই নাম্বার থেকে ফোন এসেছে,,,সাথে সাথে রাগে শরীর জ্বলে উঠলো ওর,,ফোন রিসিভ করেই বলতে শুরু করে,,,


- কোনো মানুষের যদি কোনো সমস্যা হয় এবং সেই সমস্যা আপনাকে ফোন করলেই সমাধান হয়ে যাবে তাহলে তো আপনাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাবে না। বিগত এক ঘন্টা ধরে আমি  ফোন করেই যাচ্ছি,অথচ আপনি একটা বারের জন্যে ফোনটা রিসিভ করেননি,, মানছি আপনি আমাকে নিজের কেউ মনে করেন না,, তা বলে আমি আপনার কাছে এতটাই গুরুত্ত্বহীন???( এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নিলো পেখম)


- মাথা ঠান্ডা করে কথা বলো,,,তুমি নিজেও জানো না আমাকে কি বলছো,,,আসল কারণ না জেনে অযথা চিৎকার করছো কেন?? একটা  important meeting   ছিলাম,,তাই ফোন কলস অ্যাটেন্ট করতে পারিনি,,, এখন বলো কি হয়েছে?? এভাবে ফোন করার কারণ কি?? ( শান্ত কন্ঠে গম্ভীর হয়ে বলল আবির)


- আবিরের কথা গুলো কর্ণপাত হতেই পেখমের মনে রাগটা ধুপ করে আরও জ্বলে ওঠে,,,যথা সম্ভব নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে আবিরকে বলে হাসপাতালে চলে আসতে,,,,


- হাসপাতালে কেন?? কি হয়েছে?? সবাই ঠিক আছে তো??( চিন্তিত হয়ে)


- বৌমনি মাথা ঘুরে বাথরুমে পড়ে গেছে,,মাথায় আঘাত লেগেছে,,প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে,,, আর এখনো জ্ঞান ফেরেনি,,,


- ঠিক আছে তুমি অপেক্ষা করো আমি আধাঘণ্টার মধ্যে যাচ্ছি,,,


___________________________________________


- প্রায় পনেরো মিনিট পর ডাক্তার বেরিয়ে বললেন, পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে,,দুটো স্টীজ দিতে হয়েছে,,, উনার শরীর খুব দুর্বল,, she needs to rest ,,,আমি মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে দিয়েছি,,, but আপনারা এত  careless কেন?? পেসেন্টের এই অবস্থায় উনার উপর খেয়াল রাখা উচিত ছিল আপনাদের বিশেষ করে খাওয়ার উপর,,,,


- ডাক্তারের কথা সবাই ঠিক বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে ওঠে,, তীয়ার কি হয়েছে??


- তখন ডাক্তার বললো, পেসেন্ট চার মাসের প্রেগনেন্ট,,, আপনারা একটু পরে উনার সাথে দেখা করতে পারবেন বলেই ডাক্তার চলে গেল,,


-সেই কথা শুনে সবাই অবাকের সাথে সাথে খুশি  হয়ে যায়,,এতক্ষণ যে চিন্তা হচ্ছিলো সেখানে এখন চিন্তার বদলে একরাশ ভালোলাগার অনুভূতি জায়গা করে নেয়,, পেখম খুশিতে অনুপমাকে ধরে হেসে ওঠে আর চোখের জল মোছে,,,পুলক ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে , মা আমি বাবা হবো,,,আমি বাবা হবো মা?? তারপর কেঁদে দেয়,,এ হলো সুখের কান্না,,, এখানে উপস্থিত প্রতিটা মানুষের চোখে জল,,,


- কি রে এখন তো দাদু হয়ে গেলাম দুজনে,,, এবার বুঝতে পারছি ,,বয়স হয়েছে আমাদের কি বলিস??( কথাটা দেবেন্দ্র বাবু অশোক বাবুকে বলে হেসে ওঠে,,আর অশোক বাবু দেবেন্দ্র কে জড়িয়ে ধরে)


- ওদের কথার মাঝেই উপস্থিত হয় আবির আর ওর ক্লাইন্ট,,,আবির সব কথা শুনে পাখিকে বলে,,,


- পাখি আমি মামা হবো?? সত‍্যি আমি মামা হবো,,আর তুমি মামী হবে??( খুশিতে চিৎকার করে বলে)


- পাখি বলতে যাবে মোটেও না মশাই আমি মামীর আগে পিপি হবো আর আপনি হবেন পিসেমশাই,,,কিন্তু বলা হলো না আবিরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখে,,,ও নিরুত্তর ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলো,,,,এই মেয়েটাকে ও এর আগেও অনেকবার দেখেছে আবিরের সাথে,,,,


- পেখমকে চুপ থাকতে দেখে অনুপমা বলে ওঠে"হ‍্যাঁ আবির তুই মামা হবি,,,আর আমি দিদুন হবো,,,,

_________________________________________


- তীয়াকে বিকেলে ডিসচার্জ করে নিয়ে আসা হয়েছে বাড়িতে,,,তীয়ার খবরটা সবাই শুনে খুব খুশী হয়েছে,,,নরেন্দ্র বাবু তো খুশিতে তীয়ার মাথায় হাত রেখে অনেক আশীর্বাদ করলেন,,


- তীয়া এই শরবত টা খেয়ে নাও,,,( পুলক)


- আমার কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না,,,


- একদম চুপ ,,ডাক্তার বলেছে তুমি খুব দুর্বল,,,সুতরাং এটা তাড়াতাড়ি শেষ করো,,,


- পুলকের হাত থেকে শরবতের গ্লাস টা নিয়ে এক নিশ্বাসে খেয়ে নিলো তীয়া,, তারপর পুলকের হাতে গ্লাস টা দিয়ে বলল "তুমি খুশি হয়েছো তো"??


- আমি ভীষণ খুশি তীয়া,,, তুমি আজকে আমার জীবনের সবথেকে বড়ো উপহার টা দিলে(মাথায় চুমু খেয়ে),,,আচ্ছা তীয়া ও এখন এখানে বলো( পেটের দিকে ইশারা করে)


- পুলকের কথায় তীয়া মাথা নাড়িয়ে হ‍্যাঁ বলে,,,


- তীয়া আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি বাবা হবো,,,আমার অংশ তোমার শরীরের ধিরে ধিরে বেড়ে উঠবে,,,,আর কদিন পরে এই দুই হাতে আমি ওকে কোলে তুলে নেবো,,,আমাদের সামনে ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে হেঁটে বেড়াবে,,আর আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকবে,,,,তীয়া আমি খুব খুশি,, আমি সত‍্যিই খুব খুশি,,, বাবা হওয়ায় এত আনন্দ আমি বলে বোঝাতে পারব না,,,( বলেই চোখের কোনে থাকা জল মুছলো)


- পুলকের কথায় তীয়াও কেঁদে ফেলল,,,সত‍্যিই তো ও মা হবে,,, এর থেকে প্রাপ্তি জীবনে আর কি আছে?? ও নিজের চোখের জল মুছে পুলকের হাতটা ধরলো,,,


- আচ্ছা তীয়া মা তখন কি বলছিলো??


- তেমন কিছু না,, আমি আগে কেন বলিনি,,,কিন্তু বিশ্বাস করো আমি নিজেও বুঝতে পারিনি,,,তুমি তো জানো আমার রেগুলার হয় না,,তাই সেটা মাকে বললাম,,, আর এখন থেকে আমাকে কি ভাবে চলতে হবে,,,কি কি করবো না এইসব গুলো ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো,,,,


- ওওও 


- আসতে পারি ( দরজায় নক করে পেখম বললো)


- আরে আয়,,,ভিতরে আসবে তা আবার পারমিশন নিচ্ছে,,,( তীয়া)


- বৌমনি তোমাকে একটু  ড্রয়িংরুমে যেতে হবে,,,


- কেন??


- কেন গিয়ে দেখবে চলো দাভাই আর তোমার ভাই দুজনে মিলে কি করেছে,,


- পেখম তীয়াকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই তীয়া অবাক হয়ে দেখে,,ড্রয়িংরুমে চারপাশে বাচ্চাদের খেলনা, টেডিতে ভরে গেছে,,, ডাইনিং টেবিলের উপর মিষ্টির প‍্যাকেট ভর্তি,,, বাবাদের কথা জিজ্ঞাসা করলে মনোরমা জানায় আবিরদের বিল্ডিং আর পুলকদের বিল্ডিংয়ের সব পরিবারকে মিষ্টির প‍্যাকেট বিতরণ করতে গেছে অশোক আর দেবেন্দ্র বাবু,,,বিমলা দেবী নাতবৌমার মা হওয়ার খুশিতে একজোড়া সোনার কানের উপহার করেন তীয়াকে,,,,তীয়া একটু পর দেখে আবির প‍্যাকেট ভর্তি করে তীয়া যা পছন্দ করে সব খাবার এনেছে সাথে দশ কিলো মতো ফল এনেছে ওর বক্তব্য ডাক্তার বলেছে তুই ভীষণ উইক তাই তোকে এইগুলো সব খেতে হবে,,,নাহলে নাকি ওর ভাগ্নে বা ভাগ্নির সাস্থ্য ভালো হবে না,, এদের এসব কান্ড দেখে তীয়া হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। আজ একটা সংবাদ দুই পরিবারে খুশির জোয়ার এনে দিয়েছে।

___________________________________________


- পেখু এই আচার টা খেয়ে দেখ তো কেমন হয়েছে???(অনুপমা)


- খুব ভালো হয়েছে মা,,( একটু খানি টেস্ট করে),,


- ঠিক আছে কাল তুই কলেজে যাওয়ার সময় ওবাড়িতে দিয়ে আসিস,,,


- ঠিক আছে,,,


- আন্টি আমি আসছি,,,( পিছন থেকে আবিরের সেই ক্লাইন্ট বলে ওঠে)


- সে কি,,,এখন যাবে কেন সোহিনী,,, এখন তোমার যাওয়া চলবে না,,, একেবারে ডিনার করে যাবে,,,(অনুপমা)


- হমম মা ঠিক কথায় বলেছে সোহিনী,,, একেবারে ডিনার করেই তুমি যেও,,,গাড়ি কি এনেছো??( আবির)


- না স‍্যার,,আসলে আমি উবারে এসেছি,,,আর অন্য একদিন ডিনারে আসবো আন্টি,,( সোহিনী)


- না না ,,আজকে যখন এসেছো একেবারে ডিনার করেই যাবে,,(অনুপমা)


- হমম অন্য একদিন আসবো,,,এই তুই কেন আসবি?? আর লোকের বরের দিকে তোর নজর কেন?? এত গাঁ ঘেষাঘেষি করে কেন দাঁড়াবি?? ইচ্ছে তো করছে এই আচার গুলো সব তোর মুখে ছুড়ে মারি,,,( পেখম কথা গুলো মনে মনে বলছে,,,)


- ঠিক আছে সমস্যা নেই,, আমি তোমাকে পৌছে দেব,,,তুমি লাইব্রেরি রুমে গিয়ে বসো,,,আমি ফাইল গুলো নিয়ে আসছি,,,( আবির)


- হ‍্যাঁ তা সমস্যা থাকবে কেন?? আমারই ফুঁটো কপাল ভগবান,,, সত‍্যি বলতে এই লোকটার চরিত্রের দোষ আছে,,,না হলে এত রাতে একা একা ওই মেয়েটাকে নিজে গিয়ে দিয়ে আসবে বলে,,,সেদিন কি বলেছিল যেন,,ও হ‍্যাঁ মনে পড়েছে আমি আমার জীবন টাকে উপভোগ করতে চাই,,,,করাচ্ছি আপনার উপভোগ দাঁড়ান,,,( মনে মনে বলছে আর রেগে ফেটে পড়ছে পেখম এদের কথা শুনে)


- পাখি তুমি একটু দু কাপ কফি করে পাঠিয়ে দিও তো লাইব্রেরি রুমে,,,( আবির)


- হ‍্যাঁ নিয়ে যাচ্ছি আপনারা যান,,,( জন্মের মতো কফি খাওয়াবো)


- প্রায় আধাঘণ্টা পর পেখম ট্রে করে দু কাপ কফি লাইব্রেরি রুমে নিয়ে যায়,,,রুমে ঢুকে ওর চক্ষু চড়কগাছ,,, রাগে সারা শরীর রি রি করে উঠলো,,একের থেকে মেয়েটা ছোট স্কার্ট পড়ে এসেছে তার উপর ,পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে যার কারণে হাঁটুর অনেক উপরে স্কার্ট উঠে গেছে,,,আর ওই ভাবে বসে আছে আবিরের সামনে,,আবির একটু ওর দিকে তাকালেই নজরে আসবে ,,, পেখম নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে গাল ফুলিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লো,,তারপর একটা টেডি স্মাইল দিয়ে ওদের সামনে গেল,,,


- হমম মম এই নিন আপনাদের কফি,,,


- হমম ওখানে রাখো,,,সোহিনী কফি নাও,,,( আবির)


- খা না খা,,,একবার খেয়ে দেখ বেলজ্জে  মেয়ে,,,( মনে মনে বলে পাখি) নিন কফিটা,,, আর আপনিও নিন ,,নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে,,,( পেখম)


- প্লিজ ম‍্যাম আমাকে আপনি করে বলবেন না,,, এম্বারাসিং লাগে খুব,,,বলেই কফি মগটা হাতে নেয় চুমুক দেওয়ার জন্যে,,,(সোহিনী)


- এম্বারাসিং ফিল হওয়া বেরিয়ে যাবে একবার শুধু কফিটা খা,,,( মনে মনে বলে পেখম)


- ওয়াক ওয়াক,,,থু থু,,,ইসস কি বিশ্রী ম‍্যাম,,,, এটা কি,,,(সোহিনী)


- হোয়াট রঙ সোহিনী??( আবির)


- আমার মনে হয় মিস সোহিনী ভুল করে আপনার কফিটা খেয়েছে,,, কিন্তু এতটা বাজে তো হয়না মিস সোহিনী,,, বরং আপনার স‍্যার বলেন আমি যতই ব্ল‍্যাক কফি করি না কেন তাতে মিষ্টতার স্বাদ থাকবেই,,,(পেখম)


- আবির সবে এক চুমুক কফিতে দিয়েছিল কিন্তু পেখমের কথা শুনে আবির চোখ মোটা মোটা করে ফেলে ,,আর সাথে সাথে বিষম খাও,,,মনে মনে বলে ওঠে" এই মেয়েটা কি একটু বোঝে না কোথায় কি বলতে হয়"??


- পেখমের কথা গুলো শুনে সোহিনী একবার আবিরের দিকে তাকায়,,, তারপর মিটিমিটি হেসে বলে,,, ok no problem,,,( সোহিনী)


- ঠিক আছে আমি নতুন করে কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি ,,,মিস সোহিনী একটু অপেক্ষা করো,,( পেখম)


- ম‍্যাম কফি আর পাঠানোর দরকার নেই,,, একেবারে ডিনার করে নেবো,,,( সোহিনী)

___________________________________________


- রাতে ডিনারের পরে সোহীনীকে আবির নিজে ওর ফ্লাটে পৌঁছে দেয়,,,তারপর ফিরে আসে বাড়িতে,,, রাস্তায় জ‍্যাম থাকায় একটু দেরি হয়,,, আর এদিকে সারা ঘরময় পাইচারি করে বেরাচ্ছে পেখম,, আর মনে আবির আর সোহিনীকে বকা দেয়,,,


- রাত প্রায় সাড়ে বারোটা তখন আবির রুমের  দরজা খুলে দেখে যে পেখম নিজের মনে বকবক করছে আর সারা ঘরময় হেঁটে বেরাচ্ছে,,,


- পাখি কি হয়েছে?? শরীর ঠিক আছে তো??


- এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়লো,,,যান না যান আপনার ওই সোহিনীর কাছে,,,বাড়ি ফেরার কি দরকার ছিল,,, কথা গুলো মনে মনে বললেও সেটা প্রকাশ করলো না পাখি,,,,আবিরের কথার উত্তর না দিয়ে নাইট ড্রেস টা নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,,আর দরজা শব্দ করে লক করে,,, পেখমের এইরূপ ব‍্যবহার দেখে আবির বলে ওঠে,,,


- " সে কি বোঝে না তার এইরূপ ব‍্যবহারে আমার কষ্ট হয়?? কবে বুঝবে সে আমায়?? বলবে কবে সে আমাকে ,ভালোবাসি আমি আপনাকে"??


চলবে,,,,