#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১৩
বাসায় গিয়ে রানি যেন ভাবতেই পারছে না তার সাথে কি না হয়ে গেল। এটা সত্যিই ছিল? নিজেকেও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার।
হঠাৎ তার ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে।
"প্রেয়সী বুঝি আমার কথা ভাবছে?"
ম্যাসেজ টা পড়ে রানি মুচকি হেসে দেয়। রাজের নাম্বার টা নতুন নাম দিয়ে সেভ করে "ড্রিমবয়"। ফেন টা রেখে দেয়। ম্যাসেজের রিপ্লে আর দেয় না।
ওযু করে এসে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়ে।
অন্য দিনের মতো আজ আর ঘুমের মাঝে রাজ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে না। আজ বাস্তবে একটু আগে রাজের দৃশ্য গুলি চোখে ভাসছে। কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে সে নিজেও তা হয়তো জানে না।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে যায়। মায়ের সাথে গলাগলি করে কিছুক্ষণ বসে থাকে।
ঘর থেকে ফোনের আওয়াজ ভেসে আসলে তাড়াতাড়ি চলে যায়।
তার "ড্রিমবয়" কল দিয়েছে।
"আসসালামু আলাইকুম।"
"ওয়ালাইকুম আসসলাম। কি করছিলে?"
"আম্মুর সাথে ছিলাম।"
"ওও"
"নামাজ পড়েছেন?"
কথাটা রানি বলেই নিজে লজ্জা পায়। কি ভাবে অনায়াসে কথা বলছে সে। চুপ করে থাকে।
ওপাশ থেকে রাজ মুচকি হেসে জবাব দেয়।
"পড়ব।"
"...
"কথা কি উড়ে গিয়েছে?"
"...
"কাল কলেজে যাওয়ার সময় কল দিও। ইনফেক্ট আমিই থাকব ওখানে।"
"ক্লাস করাবেন?"
"না আর কলেজে ক্লাস করাব না। কাল তোমায় কিছু শীট দিয়ে দিব সে গুলি কমপ্লিট করবে।"
"ঠিক আছে।"
"মন দিয়ে পড়বে। আমার মতো হতে হবে। পরে আমাকে হ্যাল্প করবে।"
"....
রানি চোখ গুলি বড় করে ঢুক গিলে শব্দ করে,
"এই ভীতুর ডিম। এত ঢুক গিললে চলবে?"
রাজের কথায় রানির বিষম খাওয়ার উপক্রম। চোখ গুলি ডিমের মতো বড় বড় করে চেয়ে আছে।
"ওই ওই মুখে মশা ঢুকবে।"
রাজ এই কথা বলে ওপাশ থেকে জোরে হেসে দেয়। রানি মুখ বন্ধ করে চোখের পাতা ফেলে।
"আমার কাজ আছে। রাতে কথা হবে। পড়তে বসো। বাই।"
রাজ ফোন কেটে দিলে রানি ভাবতে থাকে,
"লোকটা এত টা বুদ্ধিমান কি ভাবে? আন্দাজেও ডিল ছুড়লে লেগে যায়। আসলে কি লোক টা মন পড়তে জানে? আল্লাহ জানে এমন শক্তি উনাকে দিয়েছে কি না।"
এমন করে দিন যাচ্ছে। ফোনে কথা বলা, পড়ার টিপস দেওয়া, শীট দেওয়া, উপদেশ সব মিলিয়ে রাজ রানি কে ব্যস্ত আর নজরে রাখে।
সেদিন রাতে রাজ কল করে বলছিল,
"যে গুলি পড়তে বলেছিলাম সেগুলি শেষ হয়েছে তো?"
"আচ্ছা আমাকে কি আপনার রোবট মনে হয়? এত এত পড়া উপদেশ দেন কি করে? একটুও কি ভাবেন না যে আমার মতো এত ছোট একটা মেয়ে কি করে সব গুলি মেনটেন্ট করবে? এত গুলি যে দেন আপনিও কি একটু বোর হন না?"
"হোয়াট দ্যা। কি বলছো তুমি?"
রাজের ধমক সুরে কড়া কথা শুনে রানি ভয় পায়। সত্যিই তো কি কথা বলে ফেলেছে। জিহ্বায় কামোর দিয়ে রাখে রানি। না জানি কি শুনতে হয় তার।
ওদিকে রাজের একটু রাগই হলো বৈকি। বেচারা মুখের উপর কথা একদম বরখাস্ত করতে পারে না।
"এএ আ আসলে আমি না বাদ দিন। কি কি করছেন?"
"আসতে হবে?"
"কি?"
"তোমার বাসায় আসতে হবে?"
রানি ভয়ে বলতে থাকে,
"কে কেন?"
"মুখের উপর কথা বলার শাস্তি দিতে।"
"....
"কি হলো?"
"আ আসলে আমি বলি না। কিভাবে যে বলে ফেললাম বুঝতে পারছি না।"
"ও তুমি বলো নি? তো কে বলল?"
"আ আসলে সত্যিই আমি বলি নি। বলেছে তো আমার ঠোঁট আর জিহ্বা। এখানে আমার দোষ কি বলুন?"
রানির এমন ভীতু সুরে কথায় রাজ জুরে হেসে দেয়। রানির ভয় টা একটু কমে।
একটা মাস এমন করেই চলে গেল।
সেদিন রাজ জানাল।
"শুনছেন আপনি?"
"হুম বলুন।"
"আমি চলে যাচ্ছি।"
রাজের কথায় রানি খুব ভয় পায়।
"যাচ্ছেন মানে? কোথায় যাচ্ছেন? আপনি চলে গেলে আমার কি হবে?"
"....
রানি নিজের কথায় খুব লজ্জা পায়। আমতাআমতা করে বলে,
"ন না আসলে আ আপনি কোথায় যাবেন আমি আসলে সেটাই জি জিজ্ঞাস করছিলাম।"
"ও তাই?"
"হুম তা তা নয় তো কি?"
"আমি তো ভাবলাম..."
"আ আপনি কি ভাবলেন?"
"আমি লন্ডন যাচ্ছি।"
"...
"কয়েক দিন পরই চলে আসব।"
".....
"আমি জানি প্রেয়সী আমার মাঝে ডুবে থাকে। ইনশাল্লাহ এটা হয়তো আর বেশি সময়ের জন্যে হবে না।"
"....
"চিন্তা করো না ৪/৫ দিনের একটা মিটিং আছে। না গেলেই নয়। তাই তো.."
"কবে যাবেন?"
"কাল।"
"কখন?"
"দুপুরের ফ্লাইটে।"
"ও"
"হুম।"
"কল দিলে নিচে নামবে একবার দেখে যাবো।"
"....
"মন খারাপ বুঝি?"
"সাবধানে যাবেন।"
রানি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। খুব খারাপ লাগছে তার। তাই আর কথা বলতে চায়নি। গলাও ধরে আসছিল কষ্টের ঘোরে।
ওদিকে রাজ মুচকি হেসে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বলে দিল, "পাগলি একটা।"
পরের দিন রাজ রানি কে কল দিল। রানি ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিয়ে উপরের ব্যালকুনিতে গেল। রাজ একবার দেখে নিল তার প্রেয়সী কে। তারপর একটু হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
রানির চোখের কোণায় এক ফোটা পানি চলে হলো।
ফোনের ম্যাসেজ টোন বাজলে রানি ব্যালকুনি ছেড়ে রুমে যায়। হ্যাঁ রাজ ম্যাসেজ দিয়েছে।
"পাগলি কান্না করার কিছু নেই। চোখের পানি টা মুছে নিও। সাবধানে থেকো আমি হয়তো এই কদিন বিজি থাকব। একদম বেখেয়ালি হবে না। নিজের খেয়াল রাখবে আর সময় মতো পড়বে। কাঁদে না পাগলি আমার। পিচ্চির জন্যে চকলেট নিয়ে আসব।"
রাজের ম্যাসেজ পড়ে রানি এক গাল হেসে দেয়। লোকটা পারেও বটে। আস্তো একটা পাগল।
চলবে....
Sabriha Sadi