গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ১৩

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ১৩


বাসায় গিয়ে রানি যেন ভাবতেই পারছে না তার সাথে কি না হয়ে গেল। এটা সত্যিই ছিল? নিজেকেও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার। 


হঠাৎ তার ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে।

"প্রেয়সী বুঝি আমার কথা ভাবছে?"


ম্যাসেজ টা পড়ে রানি মুচকি হেসে দেয়। রাজের নাম্বার টা নতুন নাম দিয়ে সেভ করে "ড্রিমবয়"। ফেন টা রেখে দেয়। ম্যাসেজের রিপ্লে আর দেয় না। 


ওযু করে এসে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়ে। 


অন্য দিনের মতো আজ আর ঘুমের মাঝে রাজ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে না। আজ বাস্তবে একটু আগে রাজের দৃশ্য গুলি চোখে ভাসছে। কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে সে নিজেও তা হয়তো জানে না। 


ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে যায়। মায়ের সাথে গলাগলি করে কিছুক্ষণ বসে থাকে। 


ঘর থেকে ফোনের আওয়াজ ভেসে আসলে তাড়াতাড়ি চলে যায়।


তার "ড্রিমবয়" কল দিয়েছে। 

"আসসালামু আলাইকুম।"

"ওয়ালাইকুম আসসলাম। কি করছিলে?"

"আম্মুর সাথে ছিলাম।"

"ওও"

"নামাজ পড়েছেন?"


কথাটা রানি বলেই নিজে লজ্জা পায়। কি ভাবে অনায়াসে কথা বলছে সে। চুপ করে থাকে। 

ওপাশ থেকে রাজ মুচকি হেসে জবাব দেয়।

"পড়ব।"

"...

"কথা কি উড়ে গিয়েছে?"

"...

"কাল কলেজে যাওয়ার সময় কল দিও। ইনফেক্ট আমিই থাকব ওখানে।"

"ক্লাস করাবেন?"

"না আর কলেজে ক্লাস করাব না। কাল তোমায় কিছু শীট দিয়ে দিব সে গুলি কমপ্লিট করবে।"

"ঠিক আছে।"

"মন দিয়ে পড়বে। আমার মতো হতে হবে। পরে আমাকে হ্যাল্প করবে।"

"....


রানি চোখ গুলি বড় করে ঢুক গিলে শব্দ করে,

"এই ভীতুর ডিম। এত ঢুক গিললে চলবে?"


রাজের কথায় রানির বিষম খাওয়ার উপক্রম। চোখ গুলি ডিমের মতো বড় বড় করে চেয়ে আছে।


"ওই ওই মুখে মশা ঢুকবে।"

রাজ এই কথা বলে ওপাশ থেকে জোরে হেসে দেয়। রানি মুখ বন্ধ করে চোখের পাতা ফেলে। 


"আমার কাজ আছে। রাতে কথা হবে। পড়তে বসো। বাই।"


রাজ ফোন কেটে দিলে রানি ভাবতে থাকে,

"লোকটা এত টা বুদ্ধিমান কি ভাবে? আন্দাজেও ডিল ছুড়লে লেগে যায়। আসলে কি লোক টা মন পড়তে জানে? আল্লাহ জানে এমন শক্তি উনাকে দিয়েছে কি না।"


এমন করে দিন যাচ্ছে। ফোনে কথা বলা, পড়ার টিপস দেওয়া, শীট দেওয়া, উপদেশ সব মিলিয়ে রাজ রানি কে ব্যস্ত আর নজরে রাখে। 


সেদিন রাতে রাজ কল করে বলছিল,

"যে গুলি পড়তে বলেছিলাম সেগুলি শেষ হয়েছে তো?"

"আচ্ছা আমাকে কি আপনার রোবট মনে হয়? এত এত পড়া উপদেশ দেন কি করে? একটুও কি ভাবেন না যে আমার মতো এত ছোট একটা মেয়ে কি করে সব গুলি মেনটেন্ট করবে? এত গুলি যে দেন আপনিও কি একটু বোর হন না?"

"হোয়াট দ্যা। কি বলছো তুমি?"


রাজের ধমক সুরে কড়া কথা শুনে রানি ভয় পায়। সত্যিই তো কি কথা বলে ফেলেছে। জিহ্বায় কামোর দিয়ে রাখে রানি। না জানি কি শুনতে হয় তার। 


ওদিকে রাজের একটু রাগই হলো বৈকি। বেচারা মুখের উপর কথা একদম বরখাস্ত করতে পারে না। 


"এএ আ আসলে আমি না বাদ দিন। কি কি করছেন?"

"আসতে হবে?"

"কি?"

"তোমার বাসায় আসতে হবে?"


রানি ভয়ে বলতে থাকে,

"কে কেন?"

"মুখের উপর কথা বলার শাস্তি দিতে।"

"....

"কি হলো?"

"আ আসলে আমি বলি না। কিভাবে যে বলে ফেললাম বুঝতে পারছি না।"

"ও তুমি বলো নি? তো কে বলল?"

"আ আসলে সত্যিই আমি বলি নি। বলেছে তো আমার ঠোঁট আর জিহ্বা। এখানে আমার দোষ কি বলুন?"


রানির এমন ভীতু সুরে কথায় রাজ জুরে হেসে দেয়। রানির ভয় টা একটু কমে।


একটা মাস এমন করেই চলে গেল। 


সেদিন রাজ জানাল।

"শুনছেন আপনি?"

"হুম বলুন।"

"আমি চলে যাচ্ছি।"


রাজের কথায় রানি খুব ভয় পায়।

"যাচ্ছেন মানে? কোথায় যাচ্ছেন? আপনি চলে গেলে আমার কি হবে?"

"....

রানি নিজের কথায় খুব লজ্জা পায়। আমতাআমতা করে বলে,

"ন না আসলে আ আপনি কোথায় যাবেন আমি আসলে সেটাই জি জিজ্ঞাস করছিলাম।"

"ও তাই?"

"হুম তা তা নয় তো কি?"

"আমি তো ভাবলাম..."

"আ আপনি কি ভাবলেন?"

"আমি লন্ডন যাচ্ছি।"

"...

"কয়েক দিন পরই চলে আসব।"

".....

"আমি জানি প্রেয়সী আমার মাঝে ডুবে থাকে। ইনশাল্লাহ এটা হয়তো আর বেশি সময়ের জন্যে হবে না।"

"....

"চিন্তা করো না ৪/৫ দিনের একটা মিটিং আছে। না গেলেই নয়। তাই তো.."

"কবে যাবেন?"

"কাল।"

"কখন?"

"দুপুরের ফ্লাইটে।"

"ও"

"হুম।"

"কল দিলে নিচে নামবে একবার দেখে যাবো।"

"....

"মন খারাপ বুঝি?"

"সাবধানে যাবেন।"


রানি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। খুব খারাপ লাগছে তার। তাই আর কথা বলতে চায়নি। গলাও ধরে আসছিল কষ্টের ঘোরে।


ওদিকে রাজ মুচকি হেসে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বলে দিল, "পাগলি একটা।"


পরের দিন রাজ রানি কে কল দিল। রানি ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিয়ে উপরের ব্যালকুনিতে গেল। রাজ একবার দেখে নিল তার প্রেয়সী কে। তারপর একটু হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। 


রানির চোখের কোণায় এক ফোটা পানি চলে হলো। 


ফোনের ম্যাসেজ টোন বাজলে রানি ব্যালকুনি ছেড়ে রুমে যায়। হ্যাঁ রাজ ম্যাসেজ দিয়েছে। 

"পাগলি কান্না করার কিছু নেই। চোখের পানি টা মুছে নিও। সাবধানে থেকো আমি হয়তো এই কদিন বিজি থাকব। একদম বেখেয়ালি হবে না। নিজের খেয়াল রাখবে আর সময় মতো পড়বে। কাঁদে না পাগলি আমার। পিচ্চির জন্যে চকলেট নিয়ে আসব।"


রাজের ম্যাসেজ পড়ে রানি এক গাল হেসে দেয়। লোকটা পারেও বটে। আস্তো একটা পাগল। 


চলবে....


Sabriha Sadi

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ১২

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ১২


তারপর দুজন মিলে মলের ভেতরে গেল। রানি বোরকার দোকানে গেল। 

এত দেখেও কালো সুন্দর বোরকা পাচ্ছে না।


"রানি তুমি পর্দা করবে? এখন থেকে সত্যিই তুমি বোরকা পড়ে নিজেকে ঢেকে রাখবে?"


রানি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। 


রাজ খুব খুশি হয়। তারপর হাত ধরে বলে, 

"কাম ডেয়ার।"

রাজ রানি কে নিয়ে উপরে উঠে। সে যেতেই দোকানের লোক সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে। 


রাজের যা লাগে এই দোকান থেকেই নেয়। বাকি কাস্টমারদের একটু পরে আসতে বলে দোকানদার। 


"আসসালামু আলাইকুম স্যার।"

"ওয়ালাইকুম আসসলাম।"

"স্যার কি লাগবে বলুন।"


রাজ কিছু না বলে দেখছিল আশপাশ তাকিয়ে। 


রাজের এমন কান্ডে রানি অবাক হয়। 

দোকানদার বলে উঠে,

"স্যার ম্যডাম নাকি?"


রাজ মুচকি হেসে জবাব দেয়।

"ইনশাল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।"

"স্যার কার জন্যে লাগবে? আপনার নাকি ম্যামের?"

"ম্যামের জন্যে খুব ভালো বোরকা বের করো।"

"ওকে স্যার।"


দোকানদার ভালোভালো সব বোরকা রানির সামনে রাখে। রানি বোরকা দেখছে। 


রাজ তিন টা কালো বোরকা হাতে নিল। তারপর একটা নেয় অনেক রঙএর মিশ্রণের। আর একটা সাদার মাঝে ছোট ছোট হাল্কা সবুজ রঙ এর ফুল সাথে লতা পাতা আর মেরুনের মিশ্রণের বোরকা নিল। 


দোকানদারের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলল,

"এইগুলি প্যাক করে দিন।"


রানি এত বোরকা দেখে অবাক হয়ে রাজ কে বলে,

"এত বোরকা? আমি এত বোরকা নিব..."


রাজ গরম চোখে রানির দিকে তাকায়। তারপর রানি ঠোঁট উল্টিয়ে আর কিছু বলে না। 


রাজ অনেক গুলি স্কার্ফ আর হিজাব, খিমার প্যাক করতে বলে। 


তারপর রানির দিকে এগিয়ে আস্তে আস্তে বলে,

"যখন সেটা পড়তে ইচ্ছে করবে সেটাই পড়বে।"

"কত এলো।"

"তা জেনে তুমি কি করবে?"

"ও মা না হলে দোকানদার আমায় বেঁধে রাখবে।"

"ননসেন্স কোথাকার।"

"কেন কি করলাম?"

"আমি প্রে করে দিব।"

"কেন বোরকা কি আপনি পড়বে যে আপনি প্রে করতে যাবেন।"


রাজ রাগে দাঁত কটমট করে চোখ লাল করে রানির দিকে ঝুঁকে। আঙ্গুল নিজের ঠোঁটের উপর রেখে রানি কে চুপ থাকতে বলে। 

রানি ভয়ে একটু পিছিয়ে যায়। ঠোঁট উল্টিয়ে ঘনঘন চোখের পাতা ফেলে চুপ থাকে। 


রাজ কার্ডে প্রে করে সানগ্লাস পড়ে নেয়। 


ইসস মানুষটা কে সানগ্লাসে এত যে সুন্দর লাগে। তাও আবার আজ কালো শার্ট পড়েছে। চুল গুলিতে জেল দেওয়া। কালো চাঁপ দাঁড়ি গুলি মুখের সৌন্দর্য টা দিগুন করে দিয়েছে। এর উপর কালো সানগ্লাস টা যেন বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। 


তারপর রানি কে নিয়ে বের হয় দোকান থেকে। 


মলের নিচে নামলে রাজের নজর যায় এক জায়গায় অনেক লোকের সমাগম। চেঁচামেচির শব্দও শুনা যাচ্ছে। 


রাজ এড়িয়ে রানি কে চলে যেতে চাইলে রানি থেমে যায়। 

"কি হলো? চলো।"

"ওখানে কি হয়েছে?"

"জানি না। চলো।"

"যদি কারো কোনো প্রবলেম হয়।"


কথাটা শুনে রাজ আর নিজেকে সামলাতে পাড়ে নি। রানির প্রোটেকশনের কথা ভুলে সেখানে গেল শপিং গুলি রানির হাতে দিয়ে। 


এক ছেলে ড্রাংক অবস্থায় এক মেয়ের হাত ধরে বাজে ব্যবহার করছিল। 


ছেলের মুখ দেখে রাজের বুঝা বাকি নেই এটা সেই নেতার ছেলে। বকে যাওয়া ছেলে। নেতার ভয়ে কেউ কিছু বলেনি। রাজ আরো একবার তার কু কীর্তির কথা শুনেছে। তার গ্যাং এর ছেলে ছবিও দেখিয়েছে। রাজ থমে ছিল। আজ এমন একটা দৃশ্য দেখে রাগে রক্ত মাথায় উঠে তার। রক্ত রাগে টগবগ করছে। সবাই তাকিয়ে দেখছে। মেয়ে টার ওড়না নিয়ে টানাটানি করছে। 


রানি ভিড় ঠেলে সেখানে যায়। পিছনে রানিও যায়। 


রাজ সরাসরি গিয়ে সেই ছেলের হাত ধরে।

ছেলেটা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আর নেশার কন্ঠে বলে,

"হো আর ইউ ম্যান।"

"তোর জম।"

"হোয়াট?"

"মেয়ে টা কে ছাড়।"

"আরে কে রে তুই?"

"বললামই তো তোর জম।"


রাজ তাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ছেলে কে মারতে থাকে। মেয়ে টা তাড়াতাড়ি দূরে চলে যায়। রাজ তাকে মারছে তো মারছেই। সবাই হা করে দেখছে। 


রানি তো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে দেখছে আর ঢুক গিলছে। মানুষটা এত টা রাগি? 


রাজ মারতে মারতে ছেলের অবস্থা বেহাল করে তুলে। শেষে দুপায়ের মধ্যবর্তী তে ছেলেটার নিম্নাঙ্গে লাথি দেয় বেশ জোরে। ছেলে ছিটকে নিচে বসে গোঙাতে থাকে। 


তারপর পুলিশ কে কল দেয়। পুলিশ এসে একে দেখে ভয়ে ভয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। রাজ নিজের পরিচয় পুলিশ কে দিলে তারা নির্দ্বিধায় ছেলে টা কে গ্রেফতার করে। 


রাজের সাথে হাত মিলিয়ে দারোগা বলে,

"ধন্যবাদ স্যার। আমরা চাকরিতে থাকলেও কিছু মানুষের কারণে নীরব থাকতে হয়। নিজেকে নিয়ে ভয় না পেলেও বউ বাচ্চার কথা তো বাদ দিতে পাড়ি না। আপনার জন্যে খুব সাহস পাচ্ছি।"

"উপর থেকে কল আসলে আমার কথা বলবেন। বেশি সমস্যা হলে না হয় আমাকে জানাবে আমি দেখে নিব।"

"ওকে স্যার।"

"আরেকটু ডলা দিবেন ওকে যেন আর এমন না করে।"


রাজ ছেলে টার গালে শক্তে এক চর দেয়। রানি ভয়ে কেঁপে উঠে। ভেতর তার শুকিয়ে আসছে। 


পুলিশ ছেলে টা কে নিয়ে যায়। 


লোক গুলির মাঝ থেকে একজন বলে উঠে উনি বিজনেসম্যান রাজ চৌধুরী। এই কথা শুনা মাত্র সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মেয়েরা তার গায়ে এসে পড়ছে একটা ছবি তুলার জন্যে। বিষয় টা রাজের বিরক্ত লাগল। বিষয়টায় রাজ বুঝতে পারছে না।


রানির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো রানির মুখটা কাচুমাচু হয়ে আছে। 

সে বেশ বুঝতে পারছে রানির এই গুলি একদম ভালো লাগছে না। রাজ জোরে এক ধমক দেয়। তাতেই সবাই দূরে চলে যায় তার থেকে। 


রানিও এক পা পিছিয়ে পড়ে। 


রাজ রানির হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। 


গাড়ি তে উঠে রানি আরো ভয় পাচ্ছে। রাজের রাগি রাগি মুখ আর এলোপাথাড়ি মারের কথা মনে হচ্ছে আর সে ভয়ে কেঁপে উঠছে। শুকনো ঢুক গিলছে। 


সিটবেল না লাগিয়ে ভয়ে গুটিয়ে বসে আছে সে। 


রাজ বিষয় টা বুঝতে পারছে যে রানি তাকে ভয় পাচ্ছে। সে একটু এগিয়ে গেলে রানি নিজের মাথা পিছনে এলিয়ে দেয় চোখ বন্ধ করে। রাজ কিছু না বলে মনে মনে হেসে সিটবেলটা লাগিয়ে দেয় রানির। তারপর পানির বোতল তার দিকে এগিয়ে দেয়।


"খাও।"

"এ্যা?"

"পানি খেতে বললাম।"


রানি তাড়াতাড়ি পানির বোতল মুখে তুলে নেয়। গরগর করে অনেক টা পানি খেয়ে নেয়। 


রানির এই অবস্থা দেখে রাজ আর সামলে থাকতে পাড়ে না। একটু শক্তে হেসেই দেয়। তবে শব্দ করে নয়। এই হাসি কে অনেক টা মুচকি হাসি হিসেবেও ধরা যায়। 


"প্রেয়সী বুঝি আমায় ভয় পাচ্ছে?"

"আ আমি বাসায় যাবো।"

"আমি ভালোর খুবই ভালো। আর শক্তের জম। তাই কথা মেনে চললে আমার অন্য রূপ দেখতে পাবে না। কিন্তু কথা না শুনলে..."

"আম্মু।"

"হোয়াট?"

"আ আম্মু আমার জন্যে চি চিন্তা করছে।"

"ননসেন্স মেয়ে।"


রানি আর একটা কথাও বলে না পুরো রাস্তায়। চুপ করে ছিল। রাজও তার ভয় ভাঙ্গাতে চায়নি। ভয় কি সহজ ভাবে ভাঙ্গানো যায়? ভয় এই ভাবে ভাঙ্গা যায় না। 

"ভয় ভাঙ্গাতে হলে যে গভীর মুহূর্ত তৈরি করতে হয়।"


চলবে....


Sabriha Sadi

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ১১

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ১১


ঘর যেমন বিশাল ওয়াশরুমও তেমনি। 


রানি বিড়বিড় করে বলে,

"লোকটার ওয়াশরুমে এত জায়গা লাগে? এই জায়গায় কি করে যে এত বড় লাগে। এটা তো আমার শুয়ার রুমের মতো। হায় মাবুদ। আল্লাহ জানে এখানে উনি শুয়ে টুয়ে থাকে নাকি।"


রানি ঠোঁট উল্টিয়ে তাড়াতাড়ি শাওয়াল নিয়ে নেয়। 


তারপর রাজের দেওয়া জামা কাপড় পড়ে। 


খুব অবাক হয় যেই মানুষটার জন্যে আল্লাহর কাছে এত দোয়া করল সে আজ নাকি তার জামা গায়ে জড়ালো? বিষয়টায় রানি খুব অবাক হয়। 


রানির চুল এলোমেলো। টপটপ পানি পড়ছে। 


রাজ এতক্ষণে প্যান্ট আর কালো একটা শার্ট পড়ে নিয়েছে। হাতা গুলি বোল্ড করা। চুল গুলি উপর তুলে রেখেছে হাত দিয়ে। সেই লাগছে। 


রানি ওয়াশরুম থেকে এসে ব্যালকুনিতে যায়। রাজ বিছানা ছেড়ে উঠে সেখানে যায়। রাজের সাদা ঢিলে শার্ট আর টাউজার তার উপর ভেজা চুলের টুপটুপ করা পানি তে রানি কে বলার বাহিরে লাগছে। 


হুট করে হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে রাজ।

"উইল ইউ মেরি মি মাই লিটল কুইন?"


রানি হা করে আছে। চোখের পাতাও ফেলছে না। সেই মানুষটার সাথে বিয়ে না হলে ভেবেছে সে কোনো দিন বিয়েই করবে না। সেই মানুষটাই নাকি তাকে বিয়ের প্রোপোজাল দিচ্ছে।


রানির চোখ দিয়ে টপটপ করে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।


রাজ উঠে বলে,

"দুনিয়াতে রাজের জন্যেই আল্লাহ হয়তো তোমায় পাঠিয়েছে। সেই আল্লাহ ছাড়া কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে নিতে পারবে না।"


রানি অবাক হয়ে রাজ কে দেখছে। 

"ওয়েট করো কফি বানিয়ে আনি।"


এই বলে রাজ চলে যায়। রানি সেখানে দাঁড়িয়ে কান্না করে খুশির কান্না। আকাশের দিকে তাকিয়ে ফ্যালফ্যাল করে কান্না করছে। আল্লাহ তার ইচ্ছে টা পূরণ করেছে। আল্লাহর কাছে চাইলেই পাওয়া যায় সব। রানি মনে মনে ঠিক করে নেয় আর বেপর্দা চলা যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরতে হবে। আল্লাহর জন্যে বাকি জীবন টা পার করতে হবে। 


ততক্ষণে রাজ চলে এসেছে। 


দুজন কফি খাচ্ছে নীরবে। কেউ কথা বলছে না। দুজনের মাঝে যথেষ্ট দূরত্ব অবস্থান করছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। 


রাজ বলে উঠে,

"মাই লিটল কুইন আর কিছু দিন পর না হয় আঙ্কেলের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।"


এই কথা শুনে রানি বিষম খায়। কাশতে থাকে। রাজ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,

"আর ইউ ওকে রানি?"

"...

"পানি দেই?"

"না না ল লাগবে না।"

"শিওর?"

"হুম।"


দুজন আবার কফি খেতে থাকে। 


"সাইদুল হয়তো খাবার নিয়ে চলে এসেছে। তুমি ওয়েট করো আমি আসছি।"


রাজ কফির মগ গুলি নিয়ে চলে যায়। 


একটু পর ট্রে তে করে খাবার নিয়ে আসে। 

"এই গুলি খেয়ে নাও। আমি নিচে আছি। আর ওখানে তোমার ড্রেস রাখা আছে। রেডি হয়ে নাও বাসায় দিয়ে আসব গিয়ে।"


রাজ আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। 

সে থাকলে হয়তো রানির অসুবিধা হবে তাই নিজেকে সামলে চলে গিয়েছে। 


রানি ভাবতে থাকে,

"লোকটা অবাকের শেষ সীমানায়। এত মানুষ দুনিয়ায় দিয়েছো আল্লাহ। তোমার সৃষ্টি কত অদ্ভুত। উনার জায়গায় হয়তো অন্য কেউ থাকলে একা একটা মেয়ে কে পেয়ে অনেক কিছুই করতে পারত। কিন্তু উনি? আল্লাহ তোমার কাছে অনেক শুকরিয়া।"


রানি খাবার খেয়ে ড্রেস পড়ে নিচে যায়। রাজ তখন ডাইনিং টেবিলে খাচ্ছিল। 


"আর ইউ রেডি? ওকে ৫ মিনিট ওয়েট করো আসছি আমি।"


রাজ হাত ধুয়ে উপর থেকে চাবি টা নিয়ে এলো। তারপর দুজন বেরিয়ে গেল। 


রানি সিটবেল না লাগিয়ে বসে আছে।


"আমাকে মারতে চাইছো নাকি অকালে?

রাজের কথায় রানি অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। 


রাজ বলল,

"সিটবেল টা না লাগালে যেকোনো সময় অঘটন হতে পাড়ে। আর তোমার সামান্যা কিছু হয়ে গেলেও এই রাজ বাঁচবে না।"


রাজ নিজেই একটু এগিয়ে রানির সিটবেল টেনে আনে। লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।


রানি জানালার বাহিরে মুখ নিয়ে ভাবতে থাকে,

"আল্লাহ লোক টা কে এত টা ভালো কেন বানিয়ে দিয়েছো তুমি? লোক টা এত টা আকর্ষণীয় কেন?"


রানি রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,

"আমাকে শপিং মলের সামনে নামিয়ে দিবেন।" 

রাজ ড্রাইভ করতে করতে রানির দিকে তাকিয়ে বলে,

"কেন? কিছু কিনবে?"

"হুম দরকার আছে।"

"ওকে আমিই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।"

"না না লাগবে আমি..."

"সুহহ। একদম চুপ। রাজ চৌধুরীর হবু বউয়ের প্রোটেকশনের একটা ব্যাপার আছে না?"


রাজ রানির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে মুচকি হাসে। রানি লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। তারপর মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়। 


রাজ মলের সামনে গাড়ি থামায়। 

রানি নেমে যায়। 


"তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি গাড়ি টা পার্ক করেই আসছি।"

"হুম।"


রাজ গাড়িটা পার্ক করে এসে দেখে রানি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। 


রাজ গিয়ে বলে,

"চলো।"

"....

"কি হলো?"

"আমি ফুচকা খাবো।"

"হোয়াট?"

"হুম।"

"ওমন নোংরা খাবার খেতে হবে না। দেখা যাবে পেটের অসুখের কারণে বিছানা থেকেই উঠতে পারবে না।"

"না এমন কিছুই হবে না। আমি অনেক খাই "

"আর খেতে হবে না। চলো।"

"আপনি যান আমি খেয়ে আসছি।"

"কি?"

"হুম। আমি ফুচকা খাবো।"

"তার মানে তুমি খাবেই?"

"হুম। আপনিও চলুন না। অনেক মজার।"

"ওকে যাও।"


রাজ রানি দুজনে সেখানে যায়। রানি এক প্লেট ফুচকা হাতে নেয়। রাজ কে বললেও সে এসব খাবে না। তাই রানিই খাওয়া শুরু করে। 


"আপনিও নিন না একটা।"

"না আমি তোমার মতো পঁচা খাবার খাই না। তুমিই খাও।"

"উমম মুটেও তা নয়। আপনি খান দেখবেন আপনারও ভালো লাগবে।"


রানির জোরাজোরি তে রাজ একটা মুখে দেয়। সে কি ঝাল। সে একদম ঝাল খেতে পাড়ে না। ঝালে চোখ লাল হয়ে আছে। হুহা করছে ঝালের কারণে।


রাজ কে দেখে রানির ভয় হয়। না জানি কোন বকা দেয় এখন।


দোকানদার পানি দিলে রাজ সে পানি খায় না। তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে যায় সেখান থেকে এক বোতল পানির অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। তবুও ঝাল কমছে না। 


পানি খেতে খেতে রাজ রানির দিকে তাকায়। মেয়ে টা কি মনের আনন্দে এক প্লেট শেষ করে আরেক প্লেট নিল। ঝালে শিশি করছে তবুও মন খুলে খেয়েই চলছে। রাজ ঝালের কথা ভুলে রানির দিকে তাকিয়ে থাকে। ইচ্ছে করছে এই ঝাল কাটাতে রানির ওই প্রসারিত ঠোঁট কে আঁকড়ে নিতে। কিন্তু তা অসম্ভব এখন। রাজ মুচকি হেসে সেখানে যায়। 


রাজ ১০০০ টাকার একটা নোট নিয়ে দোকানদার কে দিলে সে তা নিতে নারাজ হয়। 


রাজ তার কাঁধে হাত রেখে বলে,

"ভাই এই ফুচকা যে কত মেয়ের পছন্দের তা তুমি জানো। কত মানুষকে তুমি এটার দ্বারা খুশি করো বলো তো। সেটা তুমি নিজেও জানো না। বিশ্বাস করো আমি মন থেকে খুশি হয়ে এটা দিলাম তোমায়। কারণ তুমি আমার কুইন কে খুশি করেছো। রাখো।"


দোকানদার খুশি মনে টাকা টা নেয়। 

আর রানি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে।


চলবে....


Sabriha Sadi

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ১০

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ১০


রানি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তার মুখের কথাও হারিয়ে গেছে। 


বিশ্বাস করতেও পারছে না। এটাই তার সেই রাজ? রানি চোখ বড়বড় করে রাজ কে দেখে। 


রাজ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার থেকেও বেশ লম্বা চড়া একটা মানুষ। টাওয়াল পেঁচিয়ে দিব্যি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জিম বডি চুলে সদ্য দেওয়া পানি টপটপ করে পড়ছে। চুল সামনে এলোমেলো হয়ে আছে। বুকের উপর দানাদানা পানি লেগে আছে। লাল ঠোঁটের কোণায় এক অদ্ভুত হাসি। ঘোর লাগানো চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। 


"ক্যান নট ইউ বিলিভ মি?"  (বিশ্বাস করতে পারছো না আমায়?)

"আ আপনি?"

"আই এম রাজ। ইয়েস আই এম রাজ চৌধুরী। আর এটা ১০০% ঠিক নয় সঠিক।"

"....


রানি অবাক চোখ নিয়েই রাজের খুব কাছে যায়। পা থেকে মাথা অবধি একবার দেখে নেয়। 


"আ আপনি সত্যিই রাজ চৌধুরী?"


রাজ মুচকি হেসে রানির হাত ধরে নিয়ে দরজার কাছে যায়। লক অন করে তাকে নিয়ে একটা রুমে যায়। রুম টার মাঝে শুধু ইয়া বড়বড় ছবি। 


রাজ রানি কে নিয়ে খুব বড় একটা ছবির সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড়া করায়। 


রানির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সেখানে থাকা পর্দা টা সরিয়ে নেয়। রানি অবাক হয়ে দেখছে। 


প্রিন্টিং করা রাজের ছবি। যেখানে রাজ নেশা ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সাদা একটা শার্ট গায়ে দেওয়া। রানি ছানাবড়া চোখ নিয়ে ড্যাবড্যাব করে দেখছে। নিচে গুটাগুটা অক্ষরে লেখা "রাজ চৌধুরী"। 


সারা ঘরে এমন অনেক ছবি। রাজের একেকটা ছবির দিকে যে কেউ এইভাবে তাকিয়ে থাকবে। 


"এই গুলি আমার ড্যাড এঁকে গিয়েছিল। জন্মের কয়েক বছর পর মা মারা যায়। ড্যাড সব টা দিয়ে আমায় মানুষ করেছে। ছোট থেকে বড় করেছে। আমেনা আন্টি আমায় লালনপালন করেছে। ড্যাডও সেই আমায় একা করে ২ বছর আগে চলে গেল। এই প্রিন্টিং গুলি ৩/৪ বছরের আগের। ড্যাড যখন জানলেন ছবি আঁকা মহাপাপ। সেদিন থেকে ছেড়ে দিয়েছিল। আর সে দিনই এই ছবি টা প্রিন্টিং করে শেষ করেছিল।"


রানি মোহ নিয়ে একেক টা ছবি দেখছে ঘুরে ঘুরে আর ছবির মাঝে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

কি নিখুঁত অঙ্কন। শিল্পকৌশল চুয়েচুয়ে পরছে।


"কাম ডেয়ার।"


রাজ আলতো হাতে রানি কে টেনে তার বেড রুমে নিয়ে গেল। রানি শুধু রাজ যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকে যাচ্ছে। তার চোখের চাওনি রাজের দিকে স্থির।


তাকে নিয়ে রাজ নিজের রুমে গেল। ওয়ালেট থেকে আইডি কার্ড টা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

"জাস্ট লুক এট ইট মাই কুইন।"


রাজের হাত থেকে রানি আইডি কার্ড টা নেয়। সেখানে দেখতে পায় রাজের ছবি আর নামের জায়গায় স্পষ্ট অক্ষরে লেখা "রাজ চৌধুরী" তার মানে এই মানুষটা সত্যিসত্যি রাজ? তার সেই আকাঙ্ক্ষিত রাজ?


তার এখন কি রিয়েক্ট করা উচিৎ সে সেটা বুঝতে পারছে না। 


পাথরের মতো ঠাই দাঁড়িয়ে বারবার রাজ কে দেখছে। রানির এই পরিস্থিতি দেখে রাজ মিটিমিটি হাসে। তারপর বলতে থাকে,

"তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে তো? আমি এত বড় একজন বিজনেসম্যান হওয়ার পরেও কলেজের টিচার কি ভাবে হলাম? কলেজেই কেন গেলাম? আর তোমার সাথে কেন আষ্টে থাকতাম তাই তো?"


রানি চোখের পাতা ফেলতে ফেলতে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।


"হুম আমি একজন টপার বিজনেসম্যান। কিন্তু নট এ টিচার। আমি আসলে প্রোফেসর পথে যুক্ত ছিলাম না তোমার কলেজে। আমি প্রিন্সিপালের সাথে শুধু চুক্তি করেছিলাম। দেশের সব স্কুল কলেজে আমি টাকা দেই। তোমাদের কলেজেও দেই। সেই জন্যে প্রিন্সিপালও রাজি হয় আমার সর্তে। আর বড় কথা ইকনোমিকস ডিপার্টমেন্টে আমি অনেক কিছুই দিতে পাড়ি নিজ থেকে। কিছু টিপস তোমাদের দিলে তা ফিউচারে কাজে আসবে তোমাদের। সেই কারণে আমি জাস্ট কিছু দিনের জন্যে তোমাদের কলেজে গিয়েছিলাম। আর তোমাদের নিউ প্রোফেসর হিসেবে পরিচিত হলাম।"


রাজের কথা শুনে রানি রাজের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। 


রাজ এতক্ষণ রানির দিকে তাকিয়ে কথা গুলি বলছিল। এবার সে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে একটু দূরে গিয়ে বলে,

"এখন মনে মনে ভাবছো আমি কেন এমন টা করলাম। কেন ওই কলেজে পরিচয় গোপন করে গেলাম এই তো?"


রানি কিছুই বলতে পারছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজের কথার উপর হুম না বলার শক্তি টাও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে। 


রাজ নিজেই আবার বলা শুরু করে,

"আসলে আমি তোমাকে ঠিক আগেই দেখেছিলাম। হুম আমার মনে তুমি অনেক আগে জায়গা করে নিয়েছিলে। তোমাদের কলেজে গেলাম মাত্র ১ মাস হয়েছে। কিন্তু তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিলে আরো ৩ মাস আগে। হ্যাঁ তিন মাস আগে আমি তোমায় প্রথম দেখেছিলাম একটা বাচ্চাদের স্কুলে। তুমি তখন তাদের চকলেট দিচ্ছিলে। তাদের সাথে খেলছিলে নাচানাচি করছিলে। তখন তুমি নিজের মাঝে ছিলে না। তোমার মাঝে বাচ্চামি একটা স্বত্বা দেখা গিয়েছিল। আর সেটাই আমার মন টা কেড়ে নেয়। আমি তখন সেই রাস্তা দিয়েই ড্রাইভ করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এই রকম দৃশ্য দেখে আমার চোখ সেখানে আটকে যায়। তোমাকে মনের পিঞ্জরে আটকে নেই। চেয়ে ছিলাম তোমার সামনে যাবো কিন্তু সে দিন আর কি জন্যে যেন পাড়ি নি।"


রাজ রানির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে,

"ইউ নো তোমার কারণে আমি খুব বড় একটা ডিল মিস করেছিলাম।"


রানি তখন রাজের দিকে চোখ আরো বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। যেন এই তার চোখ বের হয়ে এলো। 


রাজ নিজের ব্যালকুনিতে চলে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,

"সেদিন তোমাকে দেখতে দেখতে তোমার মাঝে হারিয়ে যেতে যেতে আমি এত ইমপটেন্ট একটা মিটিং মিস করাল। যার কারণে ডিল টা হলো না। অথচ এটা আমাদের জন্যে খুব দরকার ছিল। বিশ্বাস করো এত কষ্ট করলাম ডিল টার কারণে বাট সেটা হলো না তার জন্যে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট বা খারাপ লাগেনি। সে রাত টা তোমার ছবি চোখে নিয়েই কেটেছে আমার। মনে মনে তোমাকে মনের রানী করব ভেবে নিয়েছিলাম। তোমার ছবি তুলেছিলাম। যার জন্যে তোমাকে খুঁজতে আমার এক দিনও সময় লাগেনি। আমি আমার গ্যাং এর সব চেয়ে কাছে মানুষ টা কে ছবি টা পাটিয়ে দেই। তারা তোমার ডিটেল্স আমায় দেয়।"


রাজের প্রতিটা কথা রানির দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম করছিল। নিশ্বাস ফেলাও তার জন্যে দায় হয়ে উঠছিল। ক্রমশ দম আটকে আসছিল রানির। 


"তখন থেকে আমি তোমায় নজর বন্ধি করে রাখি। বলতে গেলে তুমি কখন কি করছো না করছো তার হিসাব রাখতাম। তার দুদিন পর আরেক টা ডিলের কারণে আমায় আমেরিকা চলে যেতে হয়। সেখানে প্রায় ২৫ দিনের মতো ছিলাম আমি। কিন্তু একটা সময়ও একটা মুহূর্ত ছিল না তুমি আমার চোখের আড়াল হয়েছো। ঠিক কি ভাবে ওই সময়ে আমি ডিল টা সামলেছি আমি জানি। এত বড়বড় কাছ করেও আমি কখনো নার্ভাস ফিল করিনি। কিন্তু তুমি মনে থাকায় অনেকটা নার্ভাস ছিলাম। পরে তোমার কথা ভেবেই মনে শক্তি নিয়েছিলাম। ভেবেছি ডিল টা হয়ে গেলেই তোমার সামনে যাবো। তুমি আমার লাইফে হয়তো একটা আলো। তাই ডিল টা পেয়ে গেলাম। তোমার কারণে যেটা হারিয়ে ছিলাম। তার থেকেও বড় ছিল এই ডিল টা। ডিল হওয়ার পরের দিন আমি চলে এলাম। ততদিনে আমি জেনে গিয়েছিলাম রাজ অন্তঃ প্রাণ তুমি। তাই আমি আমার পরিচয় লুকিয়ে তোমার কলেজে গেলাম। যেহেতু তুমি আমায় দেখো নি। ততদিনে আমি জেনে গিয়েছিলাম লোক মুখে আমার নাম শুনেই নাকি তুমি আমাতে প্রাণ হারিয়েছো"


রাজ একটু নিশ্বাস নেয়। আবার বলে,

"হ্যাঁ রিক মাফি কে আমিই মেরেছিলাম। আমার একটা গ্যাং আছে আর সেই গ্যাং এর গ্যাংস্টার আমি। আমার গ্যাং টা কোনো রকম খারাপ কাজ করে না। বরং অসহায় মানুষদের সাহায্য করে। তার জন্যে যত টাকা লাগে আমি প্রে করি। কারণ এত এত সম্পদ আমাদের বেবির কেন তার ছেলে মেয়েদেরও লাগবে না।"


রাজের এই কথা শুনে রানি ভীষণ লজ্জা পায়। গাল লাল হয়ে উঠে। 


রাজ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখ টিপি দেয়। 


রানি লজ্জায় মাথা নিচু করে। 

রাজ বলে,

"এই কারণেই আমি আমার প্রাইভেসি বজায় রাখতাম। কখনো কোনো ক্যামেরার সামনে যেতাম না। মিডিয়ার সামনে যেতে আমার মুটেও ভালো লাগত না। আড়াল থেকে আমি আর আমার গ্যাং সবাই কে হ্যাল্প করি। আমাকে অনেক সময় অনেক বাজে লোকের সামনে যেতে হয়। অনেক লোকের সাথে মারামারি তেও যেতে হয়। আমাকে চেনা থাকলে অনেক প্রবলেম হতে পাড়ে তাই নিজেকে আড়ালে রাখি। তোমার কাছেও আড়াল রেখেছিলাম। কিন্তু তুমি সেই আমার পিছু নিয়ে চলেই এলে এখান অবধি। যে আমি রাজ কে এত বড়বড় মানুষ হাতের নাগালে পায়নি। সেই আমি রাজ নাকি একটা পিচ্চির সামনে।"


রাজ রানির দিকে ফিরে মুচকি হাসে। 


রানি তো লজ্জায় লাল হয়ে আছে। রাজ এগিয়ে তার সামনে যায়। 


"ময়লায় তো পুরো ড্রেস শেষ করে দিয়েছো। আলমারি তে আমার শার্ট আছে আর একটা টাউজার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। কাপড় গুলি আমাকে দিও আমি ওয়াশিং মেশিনে ওয়াশ করে দিব।"

"....


রানি ঠিক কি বলবে না বলবে ভেয়ে পায় না। এমন লোকও দুনিয়ার বুকে আছে ভেবে রানি খুব অবাক হয়। ঢুক গিলে। এই লোক কি না তাকে আগে থেকেই....

তার আকাঙ্ক্ষিত লোক টাই নাকি তাকে ভালোবাসে।


রানি এই অবস্থায় রাজের সামনে থাকতে ইতস্তত বোধ করছে। 

তাই না পেরে সে আলমারির কাছে যায়। 


কি নিবে ভেবে পায় না। 


রাজ তার কাছে যায়। আলমারি থেকে সাদা একটা শার্ট বের করে দেয় সাথে একটা টাউজার।


রানি সেই গুলি নিয়ে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে চলে যায়। রাজের সামনে থাকলে বুঝি সে মরেই যাবে দম আটকে। যেমন অবাক হচ্ছে তেমনি লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় যেন লজ্জাবতী রানির মরণ মুখে উপনীত হয়ে যাবে। এই বুঝি দমটা রাজের সামনেই বের হয়ে যাবে। 


চলবে....


(ক্লিয়ার? এখন আর বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না তো আপনাদের? আশা করি সব পর্দা সরেছে। গল্প পড়ে কয়েক লাইন লিখে যাবেন😊)


Sabriha Sadi

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৯

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৯


শুষ্ক অনেক স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। মাঝে মাঝে খুব জোরে জোরে ব্রেক নিচ্ছে। 


আর রানি ওখানে থেকে থেকে জান তার বেহাল হয়ে গিয়েছে। শুষ্ক কে খুব বকছে।

"আরে হাতির শক্তি কেন দিচ্ছে গাড়ির উপর? এতটা রাক্ষস মানুষ হয় কি করে? নাকি গাড়ি চালাতে যানে না আল্লাহ জানে। আমার কোমর হাড় সব ভেঙ্গে তো শলা হয়ে যাচ্ছে রে। আরে গন্ডার গাড়িও থামাচ্ছে না। নিজের জান নিয়ে পালাতে পারলে বাঁচি। আল্লাহ দয়া করো। আরে গন্ডার রে।"


রানি ঝাঁকি খাচ্ছে আর শুষ্ক কে বকছে। 


বেশ সময় নেওয়ার পর গাড়ি থামল। রানি একটু হাফ ছেড়ে বাঁচল। ইচ্ছে করছে এখনি এখান থেকে বের হয়ে যেতে। কিন্তু রাক্ষসের মুখের সামনে যদি পড়ে? তবে তো একদম গিলেই খাবে। তার থেকে না হয় ভালো একটু বসে থাকা যাক। এই ভেবে রানি চুপ করে মুখে হাত দিয়ে বসে আছে।


শুষ্ক গাড়ি পার্ক করে দারোয়ান কে বলল,

"সাইদুল তুই যা তো।"

"কোথায় যাবো স্যার?"

"উমম তুই এক কাজ কর তুই রেস্টুরেন্টে যা। কি কি লাগবে আমি তোকে ফোনে বলে দিব।"

"ঠিক আছে স্যার।"


সাইদুল চলে যায়। শুষ্ক ভেতরে যায়। আসার সময় আমেনা আন্টি কে চলে যেতে বলল। কাল বলেছিল তার মেয়ে অসুস্থ তাই পাঠিয়ে দিয়েছে। সাইদুল কে দিয়েও তো খাবার আনতে বলল। এটা দিয়েই চলে যাবে আজ। 


শুষ্ক চাবি আঙ্গুলের ঢগায় ঘুরাতে ঘুরাতে ভেতরে চলে গেল। 


রানি দরজা টা উঁচু করে দেখে কেউ নেই। কোনো রকম সেখান থেকে বের হয়ে এলো। বিশাল এক বাড়ি। চারপাশ টা কি সুন্দর। কত গাছ অনেক টা জায়গায় শুধু গাছের কারণে সবুজ। 

বিশাল জায়গা জুরে গাছ পালা সুন্দর ফুলের বাগান। সামনে বড় একটা পুল সেখানে কি সুন্দর মাছেরা দৌড়া দৌড়ি করছে। পাশেই ছোট ছোট কিসের গাছ। 


বাড়ি তো নয় যেন বিলাসিতায় ভরপুর।


রানি চারপাশ দেখছে আর অবাক হচ্ছে। পুলের কাছে গিয়ে সেখানে হাত দিলে কিছু মাছ তার আঙ্গুল ঠুকরে দেয়। 

রানি খিলখিল করে হেসে হাত তুলে নেয়।


তারপর মুখে হাত দিয়ে চারপাশে চোখ বুলায়।


"ভেতরে যাওয়া টা আমার ঠিক হবে? নাকি চলে যাবো? এত টা জায়গা রাক্ষসের ঝাঁকি খেয়ে এসে এমনি চলে যাবো? দূর গিয়ে দেখিই না গুহায় কে আছে?"


কথা গুলি বিড়বিড় করে নিজের সাথে বলেই পা টিপে টিপে রানি ভেতরে গেল। 


দরজা টা খুলে ভেতরে যায়। 


ভেতরে গিয়ে আরো অবাক হয়। কি সুন্দর করে সাজানো। কত বিলাসবহুল জিনিস। কি সুন্দর ভেতরটা। রানি ঘুরছে আর দেখছে আর অবাক হচ্ছে। 


শুষ্ক তখন ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছে লম্বা শাওয়ার নিচ্ছে আর মনে মনে অনেক কিছু ভাবছে। 


রানি সব ঘর দেখতে দেখতে কোণার এক রুমে চলে যায়। 


শুষ্কের বিশাল এক ছবি দেওয়ালে ঝুলছে। আশেপাশে কত জিনিস। রুম টা বেশ পরিপাটি। বেডে কি সুন্দর সাদা চাদর বিছানো। দেওয়ালও সাদা। সাথে হাল্কা রঙের প্রিন্টিং। রানির ঘর টা খুব পছন্দ হয়েছে। 


দেখতে দেখতে রানি বেশ ভেতরে ঢুকে গেছে। 


ওয়াশরুম থেকে শাওয়ারের শব্দ টা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দরজা খুলার শব্দে রানি হকচকিয়ে যায়। 


তাড়াতাড়ি কোনো দিশা না পেয়ে আলমারি খুলে সেখানে ঢুকে।


শুষ্ক টাওয়াল পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ভিজে চুল দিয়ে পানি টুপটুপ করছে। সদ্য গোসল করে আসায় তার শরীরের শুভ্রতা আরো ভেসে আসছে। সামনের চুলের পানি এসে বুক ভিজে যাচ্ছে। 


রুমের আশপাশ এক বার দেখে আলমারির কাছে যায়। 


আলমারি খুললে রানি গুটিশুটি করে নিচে বসে থাকে। শুষ্কের ভয়ে জড়সড় হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।


শুষ্ক নিজের কাপড় খুঁজতে লাগে। হেঙ্গার গুলি এদিক ওদিক করতে করতে রানির হাত পেয়ে টেনে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসে। 


পা দিয়ে আলমারির দরজা টা বন্ধ করে রানি কে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। 


রানি চোখ বন্ধ করে আছে। যেন এই বুঝি রাক্ষসের করাল গ্রাসে পড়ল। রানি ভয়ে শুষ্কের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। 


শুষ্ক অপলক রানি কে দেখছে আর মিটমিট হাসছে। 


রানি কিছুক্ষণ বাদে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়। শুষ্ক কে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখতে কি করবে সে ভেবে পায় না। তবে খুব ভয় পায় সাথে লজ্জাও। এভাবে কেউ তাকায় নাকি কারো দিকে? 


শুকনো ঢুক গিলে শুষ্কের দিকে তাকায়। 


শুষ্কের বুক থেকে নিজেকে দূরে নিয়ে আমতাআমতা করতে থাকে,

"আ আসলে আমি না। আসছি।"


রানি দৌড়ে চলে যেতে নিলে শুষ্ক পিছন ফিরেই রানির হাত ধরে তাকে আটকায়। রানি খুব ভয় পেয়ে যায়। 


রাজ আবার হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে রানি কে। কোমড় টেনে আরো কাছে আনে।


"প্রেয়সী দ্যান মাই আইডেন্টিটি কাম দিজ পোয়েন্ট।"  (প্রেয়সী তাহলে আমার পরিচয়ের টানে চলেই এলো এখান অবধি।)


"আ আমি আ আসলে.."

"আমার প্রেয়সী।"

"ম মানে?"

"মানে তুমি আমার ভালোবাসা।"

"কি কি সব বলছেন এই সব?"

"কি সব নয় ঠিকি বলছি। আমার পরিচয় জানা এতোই দরকার ছিল বুঝি প্রেয়সী?"

"কি কিসের প পরিচয়?"


শুষ্ক রানি কে ছেড়ে একটু দূরে যায়। 


রানি দৌড়ে দরজার কাছে গেলে দরজা আর খুলতে পাড়ে না। শুষ্ক মুচকি হেসে পেছন ফিরেই বলে,

"দ্যা কিংডম ওফ ইউর ড্রিমস দাজ নট হোয়্যাক সো রাউ।"  (তোমার স্বপ্নের রাজ এত কাঁচা কাজ করে না।)


মানুষটার কথা শুনে রানি ভীষণ রকম অবাক হয়। ঘনঘন চোখের পাতা নাড়ে। 


"রানি লকিং দ্যা ডোর।"  

"প্লি প্লিজ দরজা টা খু খুলে দিন প্রোমিজ আর কোনো দিন আসব না। আই প্রোমিজ।"


রানির পেছন দিকে মুখ করে রাখা মানুষটা শান্ত গলায় বলে,

"হোয়াই? ডোন্ট ইউ কাম হার উইদ সো মাচ ট্রাভেল টু ফাইনড আউট মাই রিয়েল আইডেন্টিটি।"  (কেন? তুমি না আমার আসল পরিচয় বের করবে বলে এত কষ্ট করে এখানে এলে।)


"ন না আমি আ আসলে আমি কখন এখানে এলাম আমি নিজেই জানি না। কিভাবে এলাম তাও জানি না। প্লিজ দরজা টা আনলক করে দিন আমি বাসায় যাবো।"


রানির দিকে তাকিয়ে মানুষটা শান্ত গলায় বলে,

"প্রেয়সী আমি রাজ। রাজ চৌধুরী। আমিই তোমার সেই স্বপ্নের রাজ যাকে দেখার জন্যে সর্বদা তুমি উদ্বিগ্ন থাকো। আমি তোমার ড্রিমবয়। যাকে সব সময় তুমি স্বপ্নে দেখে আসছো কিন্তু বাস্তবে খুঁজে চলেছো। যার অস্তিত্ব ছিল না তোমার কাছে সেই আমি আজ তোমার নয়নগোচরের দাঁড়িয়ে আছি। যাকে একটা বার দেখার জন্যে তুমি ব্যাকুল হয়ে থাকো আমিই তোমার সেই রাজ।"


রানি রসগোল্লার মতো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে মানুষটার দিকে।


চলবে....


(অনেকেই বলেন পেইজ নাকি তাদের নিউজফিটে যায় না। সবাই কমেন্ট করলে নিজের আইডির রিচ বাড়বে। যার ফলে অন্যজনও পেয়ে যাবে। তাই গল্প পড়ে দুই চার লাইন লিখে যাবেন😊)


Sabriha Sadi

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৮

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৮


ঠিক তিন দিনের মাথায় শুষ্ক কলেজে যায়। প্রিন্সিপাল কে সে বলেই গিয়েছিল। 


রানি তখন সামিয়ার সাথে কথা বলছিল,

"রানি তুই এই ভাবে কেন বসে আছিস?"

"তো কলেজের এত লোকের সামনে কি নাচব?"

"না মানে হাসি হাসি মুখে কথা তো বলতে পারিস।"

"তোর মতো পাগল ছাগল আমি?"

"কি?"

"জিজ্ঞাস করলাম তোর মতো কি আমি পাগল ছাগল যে কোনো কারণ ছাড়া বেক্কলের মতো হাসব।"

"এই ভাবে কথা বলছিস কেন?"

"তোর ভাগ্য ভালো এখনো যে তোর ২৪ গোষ্ঠী কে ধুয়ে দেই নি।"


সামিয়া আর কিছু বলে না। চুপ করে যায়। তা না হলে রানির বলা শেষ হবে না। 


রানি বসে বসে মাঠের ঘাস উবরাচ্ছিল।


"তুই গরু হয়ে গেলি?"

"হোয়াট ননসেন্স?"

"না মানে কখন থেকে ঘাস উঠাচ্ছিস।"

"এই গুলি ভেজে মোমের ভেতর চিকেনের বদলে দিয়ে তা আবার ভেজে তোর হবু জামাইয়ে খাওয়াব। সাথে তোর গলার উপর উঠে তোকে গিলাব।"

"কি?"

"..


রানি মন খারাপ করে ঘাসে হাত দিতে গিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে শুষ্ক কি সুন্দর কলেজের ভেতর আসছে।


রানি আর চিন্তা বা সময় নষ্ট না করে দৌড়ে তার সামনে যায়।


"কোথায় ছিলেন দুদিন?"

রানির কথায় শুষ্ক থেমে একবার তার দিকে তাকায়।

পরে কোনো কথা না বলে হাটতে থাকে। সে ভালো করেই জানে রানি কে কিছু না বললে সে তার সাথে যেতেই থাকবে।


শুষ্ক আপন মনে হাঁটছে। যেতে যেতে সে নিজের রুমে চলে যায়। আর রানি তো তাকে প্রশ্নের উপর প্রশ্নের আবরণে মুড়িয়ে দিচ্ছে। বকবক করতে করতে এটাও তার খেয়াল নেই যে সে রুমের ভেতর চলে এলো। 


রানি ভেতরে যেতেই শুষ্ক দরজা বন্ধ করে দেয়। 

এবার রানির হুশ ফিরে। ঢুক গিলে বলে,

"আ আপনি দরজা বন্ধ ক করলেন কেন?"

"....

"আ আমি পরে কথা বলব। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে আমি যাই।"


রানি তাড়াতাড়ি কথা গুলি বলে দরজার দিকে যেতে চাইলে শুষ্ক তার হাত ধরে পথ আটকে বলে,

"উম উম কোথাও নয়। কোথাও যাওয়া হবে না। এতক্ষণ না  ননসেন্সের মতো ননস্টপ বকবক করছিলে? সো এখন প্রশ্ন করো। শাহজাদীর উত্তর দিতে আমি প্রস্তুত।"

"ম মানে?"

"মানে প্রশ্ন করো।"

"ন না আমার তো কোনো প্রশ্ন নেই। আমি যাই।"


রানি আবার যেতে চাইলে রাজ হাত প্রসারিত করে তাকে বাঁধা দেয়। 


এবার রানি ভয়কে যায়। ঢুক গিলছে আর ঘনঘন চোখের পাতা ফেলছে। শুষ্ক তার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

"ডো ইউ সাসপেক্ট মি?" (আমাকে তুমি সন্দেহ করছো?)

"ম মানে?"

"তাহলে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন ছুড়ছো কেন?"

"এ এমনি"

"ও রেয়লি? ডোন্ট ইউ সাসপেক্ট মি? বাট আই ক্যান সী দ্যা আবিউস ডাউট ইন ইউর আইস।" (ও সত্যি? তুমি আমাকে সন্দেহ করছো না? কিন্তু আমি তোমার চোখে স্পষ্ট সন্দেহ দেখতে পাচ্ছি।)


"কি কি যা তা বলছেন আমাকে যেতে দিন।"


এবার শুষ্ক রানির কোমর জড়িয়ে টেনে আনে।

"কি কি করছেন? ছাড়ুন আমায়। ছাড়ুন বলছি।"

"কেন জানতে চাইবে না আমার আসল পরিচয়?"

"গুলি মারি আপনার পরিচয়। জান বাঁচানো ফরজ কাজ। ছাড়ুন আমায়।"


রানি শুষ্কের বুকে হাতে কিল চর দিতে থাকে। শুষ্ক মুচকি হেসে রানি কে ছেড়ে দেয়। রানি হুড়মুড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে পড়ে। 


শুষ্ক তার হাসি টা ভেতরে রেখে বলে,

"ওকে দ্যান ডোন্ট টক এভাউট দিজ এনিমোর।"

"নিজে বাঁচলে বাপের নাম। আর কখনোই বলব না।"


রানি আর দেরি না করে শুষ্কের পাশ কাটিয়ে দৌড়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায়। 


শুষ্ক মুচকি হেসে হেসে বলে,

"প্রেয়সী ইউ উইল রিম্মেবার ইট এগেইন এন্ড এগেইন।"  (প্রেয়সী এটা তুমি বারবার মনে করবে।)


রানি যেতে যেতে ভাবতে থাকে।

"মানুষটার মাঝে সত্যিই কিছু একটা আছে। না হলে কি আর এমন করে? কেনই বা বলল পরিচয় জানার কথা? তবে সত্যিই কি উনি উনার পরিচয় গোপন করছে? না হলে কেন এমন কথা বলবে? নিশ্চয় কোনো গণ্ডগোল আছে। বিষয়টা ছেড়ে দিলে চলবে না। না রাতের ঘুম হারাম করার চেয়ে ঘুটিয়ে দেখা ভালো।"


শুষ্ক দ্বিতীয় ক্লাসে গিয়ে দেখে রানি নেই। 

এদিক সেদিক তাকিয়েও তাকে পাওয়া গেল না।


সে সামিয়ার কাছে যায়।

"সামিয়া!"

"জ্বি স্যার।"

"রানি কোথায়?"

"স্যার আপনার সাথে সেই যে গেল তারপর তো আর এলো না।"

"হোয়াট?"

"হুম স্যার এর পর থেকে তাকে আর দেখা যায় নি।"


শুষ্ক ভেবে নিয়েছে, হয়তো ভয়ে পালিয়ে গিয়েছে।


"ওকে বসো।"


শুষ্ক ক্লাস শেষে বের হয়ে গেল। রানি কে সারা কলেজ খুঁজেও পাওয়া যায়নি। শুষ্কও গটগট করে কলেজ থেকে বের হয়ে এলো।  


গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে চলে যায়। 

একটা বিশাল বড় বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামায়। তারপর শুষ্ক বের হয়ে ভেতরে চলে যায়। 


রানি গাড়ির পেছনের দরজা একটু খুলে উঁকি দিল। চারপাশ টায় চোখ বুলিয়ে নিল। দেখে মনে হচ্ছে অফিস টফিস। 


আসলে সে পেছনে মাল রাখার জায়গায় লুকিয়ে ছিল। 


সেখান থেকে একটু বেড়িয়ে নিজেই বলতে থাকে,

"ভাগ্যিস বুদ্ধি টা মাথায় এসেছিল। আর আয়ান টাকেও কি বলে যে ধন্যবাদ দিব। ও না থাকলে তো এখান পর্যন্ত আসতেও পারতাম না। এত আগে এই গুহার মাঝে বসে থাকলে দম আটকে কবেই মরে যেতাম। ওকে বললাম বলেই তো ডেভিল রাক্ষস বের হওয়ার সাথে সাথে আমায় ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিয়েছে। আর আমি টুক করে ওখানে বসে গেলাম। ডাইনোসর টা টেরও পায় নি। নিহাত আয়ান আমায় পছন্দ করে না হলে তো বলেই দিত। ইসস ছেলে টা কি কিউট।"


রানি মিষ্টি একটা হাসি দেয়। 

আবার বলে,

"এটা তো অফিস। কিন্তু লোক টা এখানে কেন আসল?"


রানি আশপাশ তাকায়। তরপর উপরে তাকিয়ে নাম দেখে খুব বেশি অবাক হয়। অবাক বলতে ধাক্কা খায় সে। বড় বড় ডিজাইন করা লিখা আছে "রাজ কোম্পানি" এখানে এই লোক টা কি করছে? 


ভেবে রানির মন আরো জট পাকিয়ে যায়। সন্দেহের মাত্রাও বেড়ে যায়। 


রানি ভেতরে যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতেই দেখে শুষ্ক আসছে প্যান্টের প্যাকেটে হাত দিয়ে। দুই তিন টা লোক তাকে দাঁড়িয়ে আবার সম্মানও দিল। রানি কিছুই বুঝতে পাড়ল না। 


সময় নষ্ট না করে দৌড়ে আবার পেছনে গিয়ে বসে পড়ল। 


চলবে....


(গঠনমূলক কমেন্ট করুন।)


Sabriha Sadi

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৭

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৭


সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রানি কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। 


কলেজে গিয়ে দেখে আজ তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে। সামিয়া আর সে মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। 

শুষ্ক আসলে একটু পর পিছুপিছু মাফি আর তার সাথে থাকা ছেলে গুলিও আসতে থাকে। 


অবাক করা বিষয় কাল যারা ভালো ছিল আজ তাদের কারো হাতে কারো কপালে কারো নাকে কারো পায়ে ব্যান্ডেজ করা। মাফির হাত ভেঙ্গে আছে। কপালে পায়ে ব্যান্ডেজ করা। হাত গলায় ঝুলিয়ে সে কলেজে আসছে। 


সবাই ভাবছে তাদের এমন অবস্থা করল কে? 


মাফি এসে আগে দৌড়ে রানির কাছে যায়। তার কাছে মাফ চায়। আস্তে আস্তে কলেজের ছোট বড় সবার কাছে মাফ চাইছে। অদ্ভুত এক বিষয় মাফি আড় চোখে চোখে শুষ্কের দিকে তাকাচ্ছিল। বিষয়টা রানি বেশ খেয়াল করছে। শুধু কারণ বুঝতে পারছে না। 


শুষ্ক দূরে প্যান্টের প্যাকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার রহস্যের হাসি। 


সর্বশেষ মাফি শুষ্কের কাছে যায়। তার পায়ে হুমড়ি খেয়ে মাফ চায় কালকের জন্যে। শুষ্ক তাকে নিচ থেকে তুলে ভাঙ্গা হাতে আস্তে একটা চর দেয়। মাফি উহহহ করে উঠে। 


শুষ্ক চোখ দিয়ে ইশারা করলে মাফি আর বাকি ছেলে গুলি চলে যায়। 


বিষয়টায় কলেজের সবাই অবাক হয়। সব চেয়ে বেশি রানি অবাক হয়। কারণ তার কাছে সন্দেহ লাগছে।


রানি ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। শুষ্ক এসে রানি কে হেঁচকা টান দিলে তার ধ্যান ভাঙ্গে।

"কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?"


শুষ্ক তাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। দরজাটা বন্ধ করে দেয় ঠাস করে। রানি কে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরে। মুহূর্তেই তার চোখে রাগের রূপ দেখা যায়। একটু আগেও যার ঠোঁটে রহস্যের হাসি দেখল এখন তার চোখে রাগ দেখছে রানি। তবুও চোখ মুখে রানি রহস্যের ঘনঘটা দেখতে পাচ্ছে। 


"হাউ ডেয়ার ইউ ননসেন্স? রাত থেকে ফোন অফ ছিল কেন?"

শুষ্কের কিড়িমিড়ি কথায় রানি ঘনঘন চোখের পাতা নাড়ে। 

"কি হলো কি বলছি আমি?"

"কি?"

"মানে কি বলছি আমি তুমি তা শুনতে পাচ্ছো না?"

"না আসলে.."

"ফোন অফ ছিল কেন?"

"চার্জ ছিল না।"

"কারেন্ট তো ছিল চার্জে লাগাও নি কেন?"

"মনে ছিল না।"

"কেন তোমার এই টুকু মন কোথায় থাকে?"

"রাজ চৌধুরীর কা.. না মানে আ আসলে কিছু না।"


শুষ্ক ফ্যালফ্যাল করে রানির দিকে তাকিয়ে আছে।

"ইসস হাতির মতো শরীর নিয়ে ঝুঁকে আছে আমার উপর। ইসস সরুন।"

"হোয়াট আর ইউ সেয়িং ডেমেট?"

"কিছু না। সরুন।"


শুষ্ক রানির বাহু চেঁপে ধরে। মুখ খুব কাছে নিয়ে,

"সারা দিন এত রাজ চৌধুরী রাজ চৌধুরী করো কেন? কি আছে ওর মাঝে? যা অন্য কারো কাছে পাও না।"

"পারসোনালিটি। উনাকে আমি আমার সব টা দিয়ে দিয়েছি। সব ভালো লাগা। সব। এখন ছাড়ুন আমায়।"


শুষ্ক রানির মুখের আরো কাছে চলে যায়।

"কেন তা আমাকে দেওয়া যায় না রানি? প্লিজ বলো না।"

"কি কি যা তা বলছেন?"


রানি ধাক্কা দিয়ে শুষ্ক কে ঠেলে দেয়। শুষ্ক একটু দূরে গিয়ে পড়লে তার প্যাকেট থেকে একটা কার্ড পড়ে যায়। শুষ্ক মাথা নিচু করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। বিষয়টা তার রুচি তে লাগে। তার রাগ উঠেছে। 


রানি কার্ডটা তুলে দেখে বুঝতে পারে আইডি কার্ড। অপর পৃষ্টায় চোখ বুলালে দেখে তার ছবি। নামের দিকে নজর দিলে দেখতে পায় "রা..


বাকি টা দেখার আছে ছো মেরে শুষ্ক সেটা নিয়ে নেয়।


রানি দেখতে চাইলেও শুষ্ক তা কেড়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। রানি কাড়াকাড়ি করেও পাড়ে না নিতে। 


"মাফি কে আপনি মেরেছেন তাই না?"


রানির কথায় শুষ্ক অবাক হয়। মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রানি আবার তার দিকে ফিরে।

"কি হলো বলুন স্যার।"

"ক্লাসের টাইম হয়ে গিয়েছে ক্লাসে যাও।"

"তার মানে আপনিই মাফি কে মেরেছেন তাই না স্যার?"

"বললাম না ক্লাসে যাও।"

"স্যার আগে আমায় বলুন আপনার নাম আসলেই শুষ্ক তো? তাহলে আইডি কার্ডে আপনার ছবির সাথে না.."


শুষ্ক আর কিছু না বলে দরজা খুলে সেখান থেকে হনহন করে বের হয়ে যায়। 


রানি পিছন থেকে অনেক ডাকে কিন্তু সাড়া পায় না। 


ক্লাসে শেষে শুষ্ক আজ আর রানি কে তার রুমে যেতে বলে না। রানি তাড়াতাড়ি করে বের হয়। কিন্তু তার আগেই শুষ্ক নিজের গাড়ি নিয়ে চলে যায়। 


রানি বাসায় গিয়েও শুষ্ককে কল করে কিন্তু পায় না। রানির রাগ হয় সাথে সন্দেহের পাহাড় জমে।


শুষ্ক নিজের বাসায় সুইমিংপুলের পাশে রাখা ডিভানে বসে আছে। মুখের উপর হাত রাখা। তার মাঝেও চিন্তার ছাপ। চোখ গুলি টগটগ করে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা পরছে না।


"আর কত এই ভাবে? অনেক দিন তো হলো এই লুকোচুরি খেলা। আর কত দিন এই লুকোচুরি খেলা চলবে? এখনো কি সময় হয়নি? এখনো এইভাবে আড়ালে থাকার কোনো মানে আছে? হয়তো বা না। আর না নিজের ভালোবাসার কাছে আত্মপ্রকাশের সময় চলে এসেছে। প্রেয়সী সময় যে আগত।"


ভাবতেই মানুষটার মুখে হাসি ফুটে আসে। 


এমন সময় তার কল আছে,

"হ্যালো।"

...

"ইয়েস বলো।"

...

"কাল কেই?"

...

"কানাডা?"

...

"ঠিক কত দিন সময় লাগবে?"

...

"ওকে ফাইন। কনফার্ম করে দাও। আর পার্সফোট টাও রেডি করে নাও। কাল ১২ টার ফ্লাইটে।"

...

"ওকে রাখছি।"


কাজের জন্যে তাকে দুই দিনের জন্যে কানাডা যেতে হবে। তারপরে এসেই প্রেয়সীকে সারপ্রাইজ দিবে। বড় ধামাকা অপেক্ষা করছে।


রানি রাতেও স্যার কে কল দেয় কিন্তু ফোন বন্ধ পায়। এবার খুব রাগ হয় রানির। 


সে রাতে রানির ঘুম হয় না। রাগ, চিন্তা, ভাবনা আর সন্দেহ সব মিলেমিশে এক হয়ে উঠেছে তার। আইডি কার্ড টা দেখার পর থেকে আরো কেমন যেন লাগছে। ছবি তো ঠিকি আছে তবে নাম? নামের জায়গায় রা.. কেন? উনার নাম শুষ্ক তবে? নাকি শুষ্কের আগে আরো কিছু আছে?


রানি মাথার চুল টেনে বলতে থাকে,

"ইসসস আর পারছি না। এত চিন্তা করতে আর পারছি না। প্রচন্ড ধরেছে মাথা টা। উফফ। না কাল উনার সাথে কথা বলতেই হবে। আমার থেকে পালিয়ে গেলেও উনাকে আর ছাড়ছি না। উনার সব কিছু বলতেই হবে। কেন সেদিন রিক আমার কাছে মাফ চাইল? যাকে এত এত অপমান করেও পিছু ছাড়াতে পারলাম না। সে কি না দৌড়ে উনার পায়ে পরল মাফ চাইতে? উনি বলার পর আমার কাছে মাফ চাইছে কেন? আর মাফি? যাকে কলেজের স্টুডেন্ট সহ প্রোফেসরা পর্যন্ত ভয় পায় তার কি না এ হাল হলো? কেন এমন করল তাদের? আবার এসে সবার কাছে মাফও চাইল। বড় কথা বারবার কেন স্যারের দিকে তাকাচ্ছিল মাফি? তবে কি মাফি কে স্যারই.... না না সব না জানা পর্যন্ত আমি আর ঠিক থাকতে পারছি না। কিছু তেই না।"


দরজার ওপাড় থেকে তার বাবা বলে উঠল,

"কিরে রানি মা কি বিড়বিড় করছিস? এখনো ঘুমাসনি?"


"নিশ্চায় বাবা আমার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হায় হায় কি বলব এখন?"


"কিরে রানি মা?"

"হ্যাঁ বাবা আসি।"


রানি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। 

"মা কি করছিলি এতক্ষণ?"

"...

"কি রে?"

"বাবা পড়ছিলাম।"

"মিথ্যে বলছিস? লাইট তো অফ ছিল।"


রানি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,

"আসলে বাবা ইয়ে মানে আমার ঘুম আসছিল না।"


মেয়ের কথা শুনে আরমান হেসে একাকার। 

"চল তোকে ঘুম পারিয়ে দেই।"

"না বাবা লাগবে না। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি ঠিক ঘুমিয়ে যাবো।"

"আরে আয়। গল্প শুনে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বি।"


আরমান মেয়ে কে নিয়ে বিছানায় যায়। যেতে যেতে বলে,

"জানিস ছোট থাকতে তুই গল্প না শুনে কিছুতেই ঘুমাতি না। সে কি বায়না ছিল তোর।"


রানি মুচকি হেসে বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তার বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গল্প করতে থাকে। রাজপুত্র আর রাজকন্যার গল্প। রানি রাজপুত্রের জায়গায় রাজ কে কল্পনা করতে করতে চোখ নেতিয়ে আনে।


"বাবা তো এক জাদুর পরশ। এই ছায়া মাথার উপর থাকলে সব কিছু খুব মনোরম লাগে। নিজেকে খুব হাল্কা হাল্কা লাগে। বাবা নামক জাদুকর হলো দুনিয়ার সব চেয়ে বড় জাদুকরের সেরা। বাবার সাথে ঠিক কারো তুলনা হয় না। বাবারা প্রতিটা সন্তানের ভালোবাসা হয়। বাবার ছায়ার তলে থাকলে চিন্তা ভাবনা কম থাকে। কারণ মাথার উপর তো বাবা আছেই। আর যদি সেই বৃক্ষ টার ছায়া পাওয়া না যায় তবে আকাশ সমান চিন্তা মাথায় চেঁপে বসে। বাবার ছায়া এমন হয়।"


পরের দিন রানি খুব তাড়াতাড়ি করে কলেজে যায়। কিন্তু কলেজের সময় হয়ে যাচ্ছে শুষ্ক তো আসছে না। 


অবশেষে প্রথম ক্লাস অন্য স্যার এসে করিয়ে গেল।


রানি ভেবেছে হয়তো স্যার আজ আসবে না। রানি সোজা প্রিন্সিপালের কাছে যায়।

"মে আই কামিং স্যার।"

"ইয়েস।"

"স্যার শুষ্ক স্যার আজ আসবে না।"

"না।"

"স্যার একটা কথা।"

"বল রানি।"

"স্যার আমি কি স্যারের ডিটেল্স সম্পর্কে একটু জানতে পাড়ি?"

"রানি তুমি আমার মেয়ের মতো। আমার কলেজের খুব ভালো একটা স্টুডেন্ট তুমি নিজেও খুব ভালো। সব মিলিয়ে তোমাকে খুব স্নেহ করি আমি। আমি চাই না এমন কিছু বলো যা তোমাকে কটু কথা শুনাবে। আশা করি বুঝতে পেরেছো কি বললা।"

"জ্বি স্যার। সরি ভুল হয়ে গিয়েছে।"

"যাও কাজ আছে আমার।"


রানি চলে এলো রাগে কটমট করছে। সেদিন আর ক্লাস করে নি। বাসায় চলে যায়। 


এর পরের দিনও কলেজে গিয়ে দেখে আজো শুষ্ক কলেজে আসেনি। রানির রাগ সন্দেহ যেন হিমালয় ছুঁয়েছে। মুখ ভুতা করে আবার বাসায় চলে যায়।


চলবে....


(গল্প পড়ে দুই চার লাইন লিখে যাবেন।)