#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১২
তারপর দুজন মিলে মলের ভেতরে গেল। রানি বোরকার দোকানে গেল।
এত দেখেও কালো সুন্দর বোরকা পাচ্ছে না।
"রানি তুমি পর্দা করবে? এখন থেকে সত্যিই তুমি বোরকা পড়ে নিজেকে ঢেকে রাখবে?"
রানি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।
রাজ খুব খুশি হয়। তারপর হাত ধরে বলে,
"কাম ডেয়ার।"
রাজ রানি কে নিয়ে উপরে উঠে। সে যেতেই দোকানের লোক সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে।
রাজের যা লাগে এই দোকান থেকেই নেয়। বাকি কাস্টমারদের একটু পরে আসতে বলে দোকানদার।
"আসসালামু আলাইকুম স্যার।"
"ওয়ালাইকুম আসসলাম।"
"স্যার কি লাগবে বলুন।"
রাজ কিছু না বলে দেখছিল আশপাশ তাকিয়ে।
রাজের এমন কান্ডে রানি অবাক হয়।
দোকানদার বলে উঠে,
"স্যার ম্যডাম নাকি?"
রাজ মুচকি হেসে জবাব দেয়।
"ইনশাল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।"
"স্যার কার জন্যে লাগবে? আপনার নাকি ম্যামের?"
"ম্যামের জন্যে খুব ভালো বোরকা বের করো।"
"ওকে স্যার।"
দোকানদার ভালোভালো সব বোরকা রানির সামনে রাখে। রানি বোরকা দেখছে।
রাজ তিন টা কালো বোরকা হাতে নিল। তারপর একটা নেয় অনেক রঙএর মিশ্রণের। আর একটা সাদার মাঝে ছোট ছোট হাল্কা সবুজ রঙ এর ফুল সাথে লতা পাতা আর মেরুনের মিশ্রণের বোরকা নিল।
দোকানদারের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলল,
"এইগুলি প্যাক করে দিন।"
রানি এত বোরকা দেখে অবাক হয়ে রাজ কে বলে,
"এত বোরকা? আমি এত বোরকা নিব..."
রাজ গরম চোখে রানির দিকে তাকায়। তারপর রানি ঠোঁট উল্টিয়ে আর কিছু বলে না।
রাজ অনেক গুলি স্কার্ফ আর হিজাব, খিমার প্যাক করতে বলে।
তারপর রানির দিকে এগিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
"যখন সেটা পড়তে ইচ্ছে করবে সেটাই পড়বে।"
"কত এলো।"
"তা জেনে তুমি কি করবে?"
"ও মা না হলে দোকানদার আমায় বেঁধে রাখবে।"
"ননসেন্স কোথাকার।"
"কেন কি করলাম?"
"আমি প্রে করে দিব।"
"কেন বোরকা কি আপনি পড়বে যে আপনি প্রে করতে যাবেন।"
রাজ রাগে দাঁত কটমট করে চোখ লাল করে রানির দিকে ঝুঁকে। আঙ্গুল নিজের ঠোঁটের উপর রেখে রানি কে চুপ থাকতে বলে।
রানি ভয়ে একটু পিছিয়ে যায়। ঠোঁট উল্টিয়ে ঘনঘন চোখের পাতা ফেলে চুপ থাকে।
রাজ কার্ডে প্রে করে সানগ্লাস পড়ে নেয়।
ইসস মানুষটা কে সানগ্লাসে এত যে সুন্দর লাগে। তাও আবার আজ কালো শার্ট পড়েছে। চুল গুলিতে জেল দেওয়া। কালো চাঁপ দাঁড়ি গুলি মুখের সৌন্দর্য টা দিগুন করে দিয়েছে। এর উপর কালো সানগ্লাস টা যেন বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
তারপর রানি কে নিয়ে বের হয় দোকান থেকে।
মলের নিচে নামলে রাজের নজর যায় এক জায়গায় অনেক লোকের সমাগম। চেঁচামেচির শব্দও শুনা যাচ্ছে।
রাজ এড়িয়ে রানি কে চলে যেতে চাইলে রানি থেমে যায়।
"কি হলো? চলো।"
"ওখানে কি হয়েছে?"
"জানি না। চলো।"
"যদি কারো কোনো প্রবলেম হয়।"
কথাটা শুনে রাজ আর নিজেকে সামলাতে পাড়ে নি। রানির প্রোটেকশনের কথা ভুলে সেখানে গেল শপিং গুলি রানির হাতে দিয়ে।
এক ছেলে ড্রাংক অবস্থায় এক মেয়ের হাত ধরে বাজে ব্যবহার করছিল।
ছেলের মুখ দেখে রাজের বুঝা বাকি নেই এটা সেই নেতার ছেলে। বকে যাওয়া ছেলে। নেতার ভয়ে কেউ কিছু বলেনি। রাজ আরো একবার তার কু কীর্তির কথা শুনেছে। তার গ্যাং এর ছেলে ছবিও দেখিয়েছে। রাজ থমে ছিল। আজ এমন একটা দৃশ্য দেখে রাগে রক্ত মাথায় উঠে তার। রক্ত রাগে টগবগ করছে। সবাই তাকিয়ে দেখছে। মেয়ে টার ওড়না নিয়ে টানাটানি করছে।
রানি ভিড় ঠেলে সেখানে যায়। পিছনে রানিও যায়।
রাজ সরাসরি গিয়ে সেই ছেলের হাত ধরে।
ছেলেটা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আর নেশার কন্ঠে বলে,
"হো আর ইউ ম্যান।"
"তোর জম।"
"হোয়াট?"
"মেয়ে টা কে ছাড়।"
"আরে কে রে তুই?"
"বললামই তো তোর জম।"
রাজ তাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ছেলে কে মারতে থাকে। মেয়ে টা তাড়াতাড়ি দূরে চলে যায়। রাজ তাকে মারছে তো মারছেই। সবাই হা করে দেখছে।
রানি তো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে দেখছে আর ঢুক গিলছে। মানুষটা এত টা রাগি?
রাজ মারতে মারতে ছেলের অবস্থা বেহাল করে তুলে। শেষে দুপায়ের মধ্যবর্তী তে ছেলেটার নিম্নাঙ্গে লাথি দেয় বেশ জোরে। ছেলে ছিটকে নিচে বসে গোঙাতে থাকে।
তারপর পুলিশ কে কল দেয়। পুলিশ এসে একে দেখে ভয়ে ভয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। রাজ নিজের পরিচয় পুলিশ কে দিলে তারা নির্দ্বিধায় ছেলে টা কে গ্রেফতার করে।
রাজের সাথে হাত মিলিয়ে দারোগা বলে,
"ধন্যবাদ স্যার। আমরা চাকরিতে থাকলেও কিছু মানুষের কারণে নীরব থাকতে হয়। নিজেকে নিয়ে ভয় না পেলেও বউ বাচ্চার কথা তো বাদ দিতে পাড়ি না। আপনার জন্যে খুব সাহস পাচ্ছি।"
"উপর থেকে কল আসলে আমার কথা বলবেন। বেশি সমস্যা হলে না হয় আমাকে জানাবে আমি দেখে নিব।"
"ওকে স্যার।"
"আরেকটু ডলা দিবেন ওকে যেন আর এমন না করে।"
রাজ ছেলে টার গালে শক্তে এক চর দেয়। রানি ভয়ে কেঁপে উঠে। ভেতর তার শুকিয়ে আসছে।
পুলিশ ছেলে টা কে নিয়ে যায়।
লোক গুলির মাঝ থেকে একজন বলে উঠে উনি বিজনেসম্যান রাজ চৌধুরী। এই কথা শুনা মাত্র সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মেয়েরা তার গায়ে এসে পড়ছে একটা ছবি তুলার জন্যে। বিষয় টা রাজের বিরক্ত লাগল। বিষয়টায় রাজ বুঝতে পারছে না।
রানির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো রানির মুখটা কাচুমাচু হয়ে আছে।
সে বেশ বুঝতে পারছে রানির এই গুলি একদম ভালো লাগছে না। রাজ জোরে এক ধমক দেয়। তাতেই সবাই দূরে চলে যায় তার থেকে।
রানিও এক পা পিছিয়ে পড়ে।
রাজ রানির হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।
গাড়ি তে উঠে রানি আরো ভয় পাচ্ছে। রাজের রাগি রাগি মুখ আর এলোপাথাড়ি মারের কথা মনে হচ্ছে আর সে ভয়ে কেঁপে উঠছে। শুকনো ঢুক গিলছে।
সিটবেল না লাগিয়ে ভয়ে গুটিয়ে বসে আছে সে।
রাজ বিষয় টা বুঝতে পারছে যে রানি তাকে ভয় পাচ্ছে। সে একটু এগিয়ে গেলে রানি নিজের মাথা পিছনে এলিয়ে দেয় চোখ বন্ধ করে। রাজ কিছু না বলে মনে মনে হেসে সিটবেলটা লাগিয়ে দেয় রানির। তারপর পানির বোতল তার দিকে এগিয়ে দেয়।
"খাও।"
"এ্যা?"
"পানি খেতে বললাম।"
রানি তাড়াতাড়ি পানির বোতল মুখে তুলে নেয়। গরগর করে অনেক টা পানি খেয়ে নেয়।
রানির এই অবস্থা দেখে রাজ আর সামলে থাকতে পাড়ে না। একটু শক্তে হেসেই দেয়। তবে শব্দ করে নয়। এই হাসি কে অনেক টা মুচকি হাসি হিসেবেও ধরা যায়।
"প্রেয়সী বুঝি আমায় ভয় পাচ্ছে?"
"আ আমি বাসায় যাবো।"
"আমি ভালোর খুবই ভালো। আর শক্তের জম। তাই কথা মেনে চললে আমার অন্য রূপ দেখতে পাবে না। কিন্তু কথা না শুনলে..."
"আম্মু।"
"হোয়াট?"
"আ আম্মু আমার জন্যে চি চিন্তা করছে।"
"ননসেন্স মেয়ে।"
রানি আর একটা কথাও বলে না পুরো রাস্তায়। চুপ করে ছিল। রাজও তার ভয় ভাঙ্গাতে চায়নি। ভয় কি সহজ ভাবে ভাঙ্গানো যায়? ভয় এই ভাবে ভাঙ্গা যায় না।
"ভয় ভাঙ্গাতে হলে যে গভীর মুহূর্ত তৈরি করতে হয়।"
চলবে....
Sabriha Sadi
0 Comments:
Post a Comment