#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ৭
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রানি কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
কলেজে গিয়ে দেখে আজ তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে। সামিয়া আর সে মাঠে দাঁড়িয়ে আছে।
শুষ্ক আসলে একটু পর পিছুপিছু মাফি আর তার সাথে থাকা ছেলে গুলিও আসতে থাকে।
অবাক করা বিষয় কাল যারা ভালো ছিল আজ তাদের কারো হাতে কারো কপালে কারো নাকে কারো পায়ে ব্যান্ডেজ করা। মাফির হাত ভেঙ্গে আছে। কপালে পায়ে ব্যান্ডেজ করা। হাত গলায় ঝুলিয়ে সে কলেজে আসছে।
সবাই ভাবছে তাদের এমন অবস্থা করল কে?
মাফি এসে আগে দৌড়ে রানির কাছে যায়। তার কাছে মাফ চায়। আস্তে আস্তে কলেজের ছোট বড় সবার কাছে মাফ চাইছে। অদ্ভুত এক বিষয় মাফি আড় চোখে চোখে শুষ্কের দিকে তাকাচ্ছিল। বিষয়টা রানি বেশ খেয়াল করছে। শুধু কারণ বুঝতে পারছে না।
শুষ্ক দূরে প্যান্টের প্যাকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার রহস্যের হাসি।
সর্বশেষ মাফি শুষ্কের কাছে যায়। তার পায়ে হুমড়ি খেয়ে মাফ চায় কালকের জন্যে। শুষ্ক তাকে নিচ থেকে তুলে ভাঙ্গা হাতে আস্তে একটা চর দেয়। মাফি উহহহ করে উঠে।
শুষ্ক চোখ দিয়ে ইশারা করলে মাফি আর বাকি ছেলে গুলি চলে যায়।
বিষয়টায় কলেজের সবাই অবাক হয়। সব চেয়ে বেশি রানি অবাক হয়। কারণ তার কাছে সন্দেহ লাগছে।
রানি ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। শুষ্ক এসে রানি কে হেঁচকা টান দিলে তার ধ্যান ভাঙ্গে।
"কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?"
শুষ্ক তাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। দরজাটা বন্ধ করে দেয় ঠাস করে। রানি কে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরে। মুহূর্তেই তার চোখে রাগের রূপ দেখা যায়। একটু আগেও যার ঠোঁটে রহস্যের হাসি দেখল এখন তার চোখে রাগ দেখছে রানি। তবুও চোখ মুখে রানি রহস্যের ঘনঘটা দেখতে পাচ্ছে।
"হাউ ডেয়ার ইউ ননসেন্স? রাত থেকে ফোন অফ ছিল কেন?"
শুষ্কের কিড়িমিড়ি কথায় রানি ঘনঘন চোখের পাতা নাড়ে।
"কি হলো কি বলছি আমি?"
"কি?"
"মানে কি বলছি আমি তুমি তা শুনতে পাচ্ছো না?"
"না আসলে.."
"ফোন অফ ছিল কেন?"
"চার্জ ছিল না।"
"কারেন্ট তো ছিল চার্জে লাগাও নি কেন?"
"মনে ছিল না।"
"কেন তোমার এই টুকু মন কোথায় থাকে?"
"রাজ চৌধুরীর কা.. না মানে আ আসলে কিছু না।"
শুষ্ক ফ্যালফ্যাল করে রানির দিকে তাকিয়ে আছে।
"ইসস হাতির মতো শরীর নিয়ে ঝুঁকে আছে আমার উপর। ইসস সরুন।"
"হোয়াট আর ইউ সেয়িং ডেমেট?"
"কিছু না। সরুন।"
শুষ্ক রানির বাহু চেঁপে ধরে। মুখ খুব কাছে নিয়ে,
"সারা দিন এত রাজ চৌধুরী রাজ চৌধুরী করো কেন? কি আছে ওর মাঝে? যা অন্য কারো কাছে পাও না।"
"পারসোনালিটি। উনাকে আমি আমার সব টা দিয়ে দিয়েছি। সব ভালো লাগা। সব। এখন ছাড়ুন আমায়।"
শুষ্ক রানির মুখের আরো কাছে চলে যায়।
"কেন তা আমাকে দেওয়া যায় না রানি? প্লিজ বলো না।"
"কি কি যা তা বলছেন?"
রানি ধাক্কা দিয়ে শুষ্ক কে ঠেলে দেয়। শুষ্ক একটু দূরে গিয়ে পড়লে তার প্যাকেট থেকে একটা কার্ড পড়ে যায়। শুষ্ক মাথা নিচু করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। বিষয়টা তার রুচি তে লাগে। তার রাগ উঠেছে।
রানি কার্ডটা তুলে দেখে বুঝতে পারে আইডি কার্ড। অপর পৃষ্টায় চোখ বুলালে দেখে তার ছবি। নামের দিকে নজর দিলে দেখতে পায় "রা..
বাকি টা দেখার আছে ছো মেরে শুষ্ক সেটা নিয়ে নেয়।
রানি দেখতে চাইলেও শুষ্ক তা কেড়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। রানি কাড়াকাড়ি করেও পাড়ে না নিতে।
"মাফি কে আপনি মেরেছেন তাই না?"
রানির কথায় শুষ্ক অবাক হয়। মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রানি আবার তার দিকে ফিরে।
"কি হলো বলুন স্যার।"
"ক্লাসের টাইম হয়ে গিয়েছে ক্লাসে যাও।"
"তার মানে আপনিই মাফি কে মেরেছেন তাই না স্যার?"
"বললাম না ক্লাসে যাও।"
"স্যার আগে আমায় বলুন আপনার নাম আসলেই শুষ্ক তো? তাহলে আইডি কার্ডে আপনার ছবির সাথে না.."
শুষ্ক আর কিছু না বলে দরজা খুলে সেখান থেকে হনহন করে বের হয়ে যায়।
রানি পিছন থেকে অনেক ডাকে কিন্তু সাড়া পায় না।
ক্লাসে শেষে শুষ্ক আজ আর রানি কে তার রুমে যেতে বলে না। রানি তাড়াতাড়ি করে বের হয়। কিন্তু তার আগেই শুষ্ক নিজের গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
রানি বাসায় গিয়েও শুষ্ককে কল করে কিন্তু পায় না। রানির রাগ হয় সাথে সন্দেহের পাহাড় জমে।
শুষ্ক নিজের বাসায় সুইমিংপুলের পাশে রাখা ডিভানে বসে আছে। মুখের উপর হাত রাখা। তার মাঝেও চিন্তার ছাপ। চোখ গুলি টগটগ করে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা পরছে না।
"আর কত এই ভাবে? অনেক দিন তো হলো এই লুকোচুরি খেলা। আর কত দিন এই লুকোচুরি খেলা চলবে? এখনো কি সময় হয়নি? এখনো এইভাবে আড়ালে থাকার কোনো মানে আছে? হয়তো বা না। আর না নিজের ভালোবাসার কাছে আত্মপ্রকাশের সময় চলে এসেছে। প্রেয়সী সময় যে আগত।"
ভাবতেই মানুষটার মুখে হাসি ফুটে আসে।
এমন সময় তার কল আছে,
"হ্যালো।"
...
"ইয়েস বলো।"
...
"কাল কেই?"
...
"কানাডা?"
...
"ঠিক কত দিন সময় লাগবে?"
...
"ওকে ফাইন। কনফার্ম করে দাও। আর পার্সফোট টাও রেডি করে নাও। কাল ১২ টার ফ্লাইটে।"
...
"ওকে রাখছি।"
কাজের জন্যে তাকে দুই দিনের জন্যে কানাডা যেতে হবে। তারপরে এসেই প্রেয়সীকে সারপ্রাইজ দিবে। বড় ধামাকা অপেক্ষা করছে।
রানি রাতেও স্যার কে কল দেয় কিন্তু ফোন বন্ধ পায়। এবার খুব রাগ হয় রানির।
সে রাতে রানির ঘুম হয় না। রাগ, চিন্তা, ভাবনা আর সন্দেহ সব মিলেমিশে এক হয়ে উঠেছে তার। আইডি কার্ড টা দেখার পর থেকে আরো কেমন যেন লাগছে। ছবি তো ঠিকি আছে তবে নাম? নামের জায়গায় রা.. কেন? উনার নাম শুষ্ক তবে? নাকি শুষ্কের আগে আরো কিছু আছে?
রানি মাথার চুল টেনে বলতে থাকে,
"ইসসস আর পারছি না। এত চিন্তা করতে আর পারছি না। প্রচন্ড ধরেছে মাথা টা। উফফ। না কাল উনার সাথে কথা বলতেই হবে। আমার থেকে পালিয়ে গেলেও উনাকে আর ছাড়ছি না। উনার সব কিছু বলতেই হবে। কেন সেদিন রিক আমার কাছে মাফ চাইল? যাকে এত এত অপমান করেও পিছু ছাড়াতে পারলাম না। সে কি না দৌড়ে উনার পায়ে পরল মাফ চাইতে? উনি বলার পর আমার কাছে মাফ চাইছে কেন? আর মাফি? যাকে কলেজের স্টুডেন্ট সহ প্রোফেসরা পর্যন্ত ভয় পায় তার কি না এ হাল হলো? কেন এমন করল তাদের? আবার এসে সবার কাছে মাফও চাইল। বড় কথা বারবার কেন স্যারের দিকে তাকাচ্ছিল মাফি? তবে কি মাফি কে স্যারই.... না না সব না জানা পর্যন্ত আমি আর ঠিক থাকতে পারছি না। কিছু তেই না।"
দরজার ওপাড় থেকে তার বাবা বলে উঠল,
"কিরে রানি মা কি বিড়বিড় করছিস? এখনো ঘুমাসনি?"
"নিশ্চায় বাবা আমার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হায় হায় কি বলব এখন?"
"কিরে রানি মা?"
"হ্যাঁ বাবা আসি।"
রানি গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
"মা কি করছিলি এতক্ষণ?"
"...
"কি রে?"
"বাবা পড়ছিলাম।"
"মিথ্যে বলছিস? লাইট তো অফ ছিল।"
রানি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
"আসলে বাবা ইয়ে মানে আমার ঘুম আসছিল না।"
মেয়ের কথা শুনে আরমান হেসে একাকার।
"চল তোকে ঘুম পারিয়ে দেই।"
"না বাবা লাগবে না। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি ঠিক ঘুমিয়ে যাবো।"
"আরে আয়। গল্প শুনে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বি।"
আরমান মেয়ে কে নিয়ে বিছানায় যায়। যেতে যেতে বলে,
"জানিস ছোট থাকতে তুই গল্প না শুনে কিছুতেই ঘুমাতি না। সে কি বায়না ছিল তোর।"
রানি মুচকি হেসে বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তার বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গল্প করতে থাকে। রাজপুত্র আর রাজকন্যার গল্প। রানি রাজপুত্রের জায়গায় রাজ কে কল্পনা করতে করতে চোখ নেতিয়ে আনে।
"বাবা তো এক জাদুর পরশ। এই ছায়া মাথার উপর থাকলে সব কিছু খুব মনোরম লাগে। নিজেকে খুব হাল্কা হাল্কা লাগে। বাবা নামক জাদুকর হলো দুনিয়ার সব চেয়ে বড় জাদুকরের সেরা। বাবার সাথে ঠিক কারো তুলনা হয় না। বাবারা প্রতিটা সন্তানের ভালোবাসা হয়। বাবার ছায়ার তলে থাকলে চিন্তা ভাবনা কম থাকে। কারণ মাথার উপর তো বাবা আছেই। আর যদি সেই বৃক্ষ টার ছায়া পাওয়া না যায় তবে আকাশ সমান চিন্তা মাথায় চেঁপে বসে। বাবার ছায়া এমন হয়।"
পরের দিন রানি খুব তাড়াতাড়ি করে কলেজে যায়। কিন্তু কলেজের সময় হয়ে যাচ্ছে শুষ্ক তো আসছে না।
অবশেষে প্রথম ক্লাস অন্য স্যার এসে করিয়ে গেল।
রানি ভেবেছে হয়তো স্যার আজ আসবে না। রানি সোজা প্রিন্সিপালের কাছে যায়।
"মে আই কামিং স্যার।"
"ইয়েস।"
"স্যার শুষ্ক স্যার আজ আসবে না।"
"না।"
"স্যার একটা কথা।"
"বল রানি।"
"স্যার আমি কি স্যারের ডিটেল্স সম্পর্কে একটু জানতে পাড়ি?"
"রানি তুমি আমার মেয়ের মতো। আমার কলেজের খুব ভালো একটা স্টুডেন্ট তুমি নিজেও খুব ভালো। সব মিলিয়ে তোমাকে খুব স্নেহ করি আমি। আমি চাই না এমন কিছু বলো যা তোমাকে কটু কথা শুনাবে। আশা করি বুঝতে পেরেছো কি বললা।"
"জ্বি স্যার। সরি ভুল হয়ে গিয়েছে।"
"যাও কাজ আছে আমার।"
রানি চলে এলো রাগে কটমট করছে। সেদিন আর ক্লাস করে নি। বাসায় চলে যায়।
এর পরের দিনও কলেজে গিয়ে দেখে আজো শুষ্ক কলেজে আসেনি। রানির রাগ সন্দেহ যেন হিমালয় ছুঁয়েছে। মুখ ভুতা করে আবার বাসায় চলে যায়।
চলবে....
(গল্প পড়ে দুই চার লাইন লিখে যাবেন।)
0 Comments:
Post a Comment