গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৬

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৬


বেশ কিছুদিন পরে সেদিনের এক ঘটনা, রানি কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকতে গেলে দেখে মাফি তার সঙ্গপঙ্গ নিয়ে বসে আছে বাইকের উপর। 


মাফি খুব রকম বকে যাওয়া একটা ছেলে। সাথে তার সাথে থাকা ছেলে গুলিও। সব রকম খারাপ কাজে তাদের পাওয়া যায়। মেয়েদের টিজ করা ছেলেদের সাথে ঝগড়া মারামারি করা। এমন কি প্রোফেসরদেরও সম্মান না করা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা। এমন অনেক খারাপ কাজে তারা লিপ্ত।


রানি আর সামিয়া একটু দূর দিয়ে গেলে মাফি বলে উঠে,

"ওয়ে ওয়ে ও সুন্দরি কোথায় যাও চুপি চুপি? একটু কাছে আসো না।"


মাফি আর তার সাথে ছেলে গুলি হুহু করে হেসে উঠে। রানি ঘৃণা নিয়ে মাফির দিকে তাকিয়ে আবার চলে যেতে চায়। 


"ওই সুন্দরি তোকে না আমি ডাকলাম। এদিকে আয়।"


মাফির কথা শুনে রানি আর সামিয়া বেশ ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি করা উচিৎ বুঝে পাচ্ছে না। 


পিছন থেকে কেউ একজন এসে রানির হাত ধরে মাফির কাছ দিয়ে রানি কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রানি হা করে আছে। সাথে অনেকেই। 


মাফি চোখ গরম করে শুষ্কের কাঁধ ধরে আটকে বলে উঠল,

"আরে কে রে তুই?"

"আর ইউ টকিং টু মি?"

"তো এখানে কে আছে মাফির খাবার কে নিয়ে যাওয়ার?"

"হাত টা ছাড়।"

"এই এই দেখেছিস তোরা? ও আমার সাথে কথা বলার সাহস পাচ্ছে। আবার তুই করেও বলছে দেখেছিস? কে রে তুই? মাফির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস।"


শুষ্ক মাফির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,

"পরিচয় পেলে আমার কাঁধ ধরা তো দূরে থাক চোখের দিকেও না তাকিয়ে পা ধরে বাপ বাপ করতি।"


শুষ্কের কথা শুনে মাফি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। 


শুষ্ক মাফির হাত নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে তার কাঁধ চাপড়াতে চাপড়াতে জোরে বলে,

"আমি এই কলেজের প্রোফেসর।"


এটা শুনা মাত্র মাফি খিল খিল করে হেসে দেয়। তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করে বলে,

"শুনেছিস তোরা? ওর পরিচয় পেলে নাকি আমি বাপ বাপ করব ওর পা ধরে। শুনলি তোরা ও কি পরিচয় দিল? ও নাকি এই কলেজের প্রোফেসর। এটা শুনে নাকি আমি.."


মাফি হাসছে তো হাসছেই সাথে তার ছেলে গুলিও। 


শুষ্ক ফোন নিয়ে কি একটা করে আবার রেখে দেয়। 


মাফি হাসি থামিয়ে বলে উঠে,

"তোর এই পরিচয়? আরে আমি যদি আমার পরিচয়.."


কথাটা শেষ করার আগেই মাফির কল বেজে উঠে। ফোনে কি কথা বলে তাড়াতাড়ি বাইক স্টার্ট দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যাওয়ার সময় বলে,

"তোকে পরে দেখে নিব।"


শুষ্ক রহস্যের একটা হাসি দিয়ে রানি কে নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। 


শুষ্কের টেবিলে সে আর রানি দুজন মুখোমুখি বসে আছে। 

"মাফি খুব বাজে ছেলে। এই কদিন ও দেশের বাড়ি ছিল। আজই হয়তো ফিরেছে। ওর জন্যে কলেজের কেউ শান্তি পায় না। স্যার ম্যামরাও না।"

"ওর চাপ্টার ক্লোজ। এখন নিজের কথা ভাবো।"


শুষ্কের কথায় রানি ঠোঁট ফুলিয়ে দেয়।

"আপনি যে ওর সাথে লেগেছেন যদি আপনার কি..."

"শাট আপ স্টুপিড। হোয়াট আই ক্যান সে? চুপ করতে বললাম না?"


শুষ্কের ধমকে রানি ভয় পায়। চুপ করে বসে থাকে। 


শুষ্ক রাগে ফুসফুস করছে। রাগ উঠলে সে কিছু তেই নিজেকে সামলাতে পাড়ে না। কি থেকে কি করে কে জানে? শুষ্ক পানির ক্লাস টা নিয়ে ঢগ ঢগ করে পানি গিলতে থাকে।


রানি কি মনে করে বলে উঠে,

"স্যার আপনি কি রাজ চৌধুরী কে চিনেন?"


কথাটা শুনা মাত্র শুষ্ক বিশম খেয়ে পড়ে। মুখে থাকা পানির ছিটেফোঁটা রানির মুখের উপর গিয়ে পড়ে। 


শুষ্ক কাশ তে থাকে। কাশতে কাশতে বলল,

"স সরি। আমি দেখিনি। ডোন্ট মাইট।"


রানি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখ মুখ খিঁচে বসে আছে নাক ফুলিয়ে। শুষ্ক কিছু টিস্যু রানির দিকে এগিয়ে দেয়। রানি সে গুলি দিয়ে মুখ মুছে নেয়। 

"তুমি এখন যাও। আজ আর কিছু পড়াব না। আমি পরে কথা বলব।"

"কিন্তু স্যার রাজ.."

"যেতে বললাম তো তোমায়? জাস্ট গো।"


রানি তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে মন খারাপ করে বাসায় চলে যায়। কি এমন হতো রাজের খবর দিলে তাকে?


বাসায় গিয়ে শাওয়ার নিয়ে খেয়ে এক ঘুম দেয় রানি।


শুষ্ক আর কলেজ থাকে না তার খুব কাজ আছে। এখনি যেতে হবে তাকে। ফোনে কারো সাথে কথা বলে সে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। 


খুব কালো এক অন্ধকার জায়গায় শুষ্ক নিজের গাড়ি থামায়। তারপর সাথে সাথে বিশাল দেহী দুই মানব "বস বস" করে দৌড়ে তার কাছে এলো। গাড়ির দরজা খুলে দিল। তারা শুষ্ক কে নিয়ে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার রুমের ভেতরে নিয়ে গেল। 


ছোট একটা লাইটের নিচে একটা চেয়ার রাখা। 


সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে মাফি আর তার সঙ্গরা এক সাথে বাঁধা অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। 


শুষ্ক চেয়াট টেনে বসে।

"তারপর বল। তখন কি যেন বলছিলি?"

শুষ্কের কথায় মাফি কাকুতিমিনতি করতে থাকে।


শুষ্ক মাফির গলা টিপে ধরে।

"কি কি বলছিলি রানি কে? মেয়েদের খাবার মনে হয় কুত্তারবাচ্চা? সব মেয়েদের টিজ করিস না কলেজে? আমাকে কি বলছিলি?"

"মাফ করে দিন। স্যার আমায় মাফ করে দিন। আমি আর এমন করব না।"


শুষ্ক কিছু না বলে এলোপাথাড়ি মারে সবাই কে। 


প্রায় আধঘণ্টা পর সে আবার চেয়ার টেনে তাদের সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে। হাত দিয়ে চুল ঠিক করে। 

সবাই তার পায়ে হুমড়ি খেয়ে পরছে আর যেন না মারে। 


"তোদের আর কলেজের সামনে পাওয়া যাবে?"

"না বস না।"

"কখনো আর কোনো মেয়ে কে অসম্মান করবি?"

"না বস।"

"অসহায় মানুষ কে আর মারবি?"

বলেই রুল দিয়ে একটা বারি দেয় মাফি কে। মাফি আর্তনাদ করে বলে,

"কখনো করব না বস।"

"ভালো হয়ে থাকবি?"

"জ্বি বস জ্বি।"


শুষ্ক উঠে দাঁড়ায়। 


বিশাল দেহী দুজনের উদ্দেশ্য করে বলে,

"ওদের হসপিটালে দিয়ে আসবে। আর হ্যাঁ তোকে বলছি কাল কলেজে গিয়ে সবার কাছে মাফ চাইবি। ভুল যেন না হয়।"

"ওকে বস সবার কাছে মাফ চেয়ে আসব। যা বলবেন তাই করব।"


শুষ্ক এক অদ্ভুত রহস্যের হাসি হেসে সেই জায়গা ত্যাগ করল। 


রানি সেই যে ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় উঠেছে। বিছানার পাশ থেকে ফোন নিয়ে দেখে ৫৬ টা কল দিয়েছে "ডেভিল রাক্ষস"। রানি ভয়ে ফোন টা বন্ধ করে ফেলে। 


না জানি রাগে কি করবে। ধমক দিতে তো আর কম জানে না লোকটা। মনে হয় কান ফেটে মগজে ঢুকে যাবে সেই ধমক।


চলবে....


(প্লিজ দুই চার লাইন লিখে যাবেন। আপনাদের এই দুই চার লাইন লেখা কমেন্ট লিখতে অনুপ্রেরণা দেয়। লেখার আগে আপনাদের পড়ার আগ্রহ দেখলে আমার লেখার আগ্রহ বাড়ে😊)

0 Comments:

Post a Comment