গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৬

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৬


বেশ কিছুদিন পরে সেদিনের এক ঘটনা, রানি কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকতে গেলে দেখে মাফি তার সঙ্গপঙ্গ নিয়ে বসে আছে বাইকের উপর। 


মাফি খুব রকম বকে যাওয়া একটা ছেলে। সাথে তার সাথে থাকা ছেলে গুলিও। সব রকম খারাপ কাজে তাদের পাওয়া যায়। মেয়েদের টিজ করা ছেলেদের সাথে ঝগড়া মারামারি করা। এমন কি প্রোফেসরদেরও সম্মান না করা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা। এমন অনেক খারাপ কাজে তারা লিপ্ত।


রানি আর সামিয়া একটু দূর দিয়ে গেলে মাফি বলে উঠে,

"ওয়ে ওয়ে ও সুন্দরি কোথায় যাও চুপি চুপি? একটু কাছে আসো না।"


মাফি আর তার সাথে ছেলে গুলি হুহু করে হেসে উঠে। রানি ঘৃণা নিয়ে মাফির দিকে তাকিয়ে আবার চলে যেতে চায়। 


"ওই সুন্দরি তোকে না আমি ডাকলাম। এদিকে আয়।"


মাফির কথা শুনে রানি আর সামিয়া বেশ ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি করা উচিৎ বুঝে পাচ্ছে না। 


পিছন থেকে কেউ একজন এসে রানির হাত ধরে মাফির কাছ দিয়ে রানি কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রানি হা করে আছে। সাথে অনেকেই। 


মাফি চোখ গরম করে শুষ্কের কাঁধ ধরে আটকে বলে উঠল,

"আরে কে রে তুই?"

"আর ইউ টকিং টু মি?"

"তো এখানে কে আছে মাফির খাবার কে নিয়ে যাওয়ার?"

"হাত টা ছাড়।"

"এই এই দেখেছিস তোরা? ও আমার সাথে কথা বলার সাহস পাচ্ছে। আবার তুই করেও বলছে দেখেছিস? কে রে তুই? মাফির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস।"


শুষ্ক মাফির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,

"পরিচয় পেলে আমার কাঁধ ধরা তো দূরে থাক চোখের দিকেও না তাকিয়ে পা ধরে বাপ বাপ করতি।"


শুষ্কের কথা শুনে মাফি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। 


শুষ্ক মাফির হাত নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে তার কাঁধ চাপড়াতে চাপড়াতে জোরে বলে,

"আমি এই কলেজের প্রোফেসর।"


এটা শুনা মাত্র মাফি খিল খিল করে হেসে দেয়। তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করে বলে,

"শুনেছিস তোরা? ওর পরিচয় পেলে নাকি আমি বাপ বাপ করব ওর পা ধরে। শুনলি তোরা ও কি পরিচয় দিল? ও নাকি এই কলেজের প্রোফেসর। এটা শুনে নাকি আমি.."


মাফি হাসছে তো হাসছেই সাথে তার ছেলে গুলিও। 


শুষ্ক ফোন নিয়ে কি একটা করে আবার রেখে দেয়। 


মাফি হাসি থামিয়ে বলে উঠে,

"তোর এই পরিচয়? আরে আমি যদি আমার পরিচয়.."


কথাটা শেষ করার আগেই মাফির কল বেজে উঠে। ফোনে কি কথা বলে তাড়াতাড়ি বাইক স্টার্ট দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যাওয়ার সময় বলে,

"তোকে পরে দেখে নিব।"


শুষ্ক রহস্যের একটা হাসি দিয়ে রানি কে নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। 


শুষ্কের টেবিলে সে আর রানি দুজন মুখোমুখি বসে আছে। 

"মাফি খুব বাজে ছেলে। এই কদিন ও দেশের বাড়ি ছিল। আজই হয়তো ফিরেছে। ওর জন্যে কলেজের কেউ শান্তি পায় না। স্যার ম্যামরাও না।"

"ওর চাপ্টার ক্লোজ। এখন নিজের কথা ভাবো।"


শুষ্কের কথায় রানি ঠোঁট ফুলিয়ে দেয়।

"আপনি যে ওর সাথে লেগেছেন যদি আপনার কি..."

"শাট আপ স্টুপিড। হোয়াট আই ক্যান সে? চুপ করতে বললাম না?"


শুষ্কের ধমকে রানি ভয় পায়। চুপ করে বসে থাকে। 


শুষ্ক রাগে ফুসফুস করছে। রাগ উঠলে সে কিছু তেই নিজেকে সামলাতে পাড়ে না। কি থেকে কি করে কে জানে? শুষ্ক পানির ক্লাস টা নিয়ে ঢগ ঢগ করে পানি গিলতে থাকে।


রানি কি মনে করে বলে উঠে,

"স্যার আপনি কি রাজ চৌধুরী কে চিনেন?"


কথাটা শুনা মাত্র শুষ্ক বিশম খেয়ে পড়ে। মুখে থাকা পানির ছিটেফোঁটা রানির মুখের উপর গিয়ে পড়ে। 


শুষ্ক কাশ তে থাকে। কাশতে কাশতে বলল,

"স সরি। আমি দেখিনি। ডোন্ট মাইট।"


রানি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখ মুখ খিঁচে বসে আছে নাক ফুলিয়ে। শুষ্ক কিছু টিস্যু রানির দিকে এগিয়ে দেয়। রানি সে গুলি দিয়ে মুখ মুছে নেয়। 

"তুমি এখন যাও। আজ আর কিছু পড়াব না। আমি পরে কথা বলব।"

"কিন্তু স্যার রাজ.."

"যেতে বললাম তো তোমায়? জাস্ট গো।"


রানি তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে মন খারাপ করে বাসায় চলে যায়। কি এমন হতো রাজের খবর দিলে তাকে?


বাসায় গিয়ে শাওয়ার নিয়ে খেয়ে এক ঘুম দেয় রানি।


শুষ্ক আর কলেজ থাকে না তার খুব কাজ আছে। এখনি যেতে হবে তাকে। ফোনে কারো সাথে কথা বলে সে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। 


খুব কালো এক অন্ধকার জায়গায় শুষ্ক নিজের গাড়ি থামায়। তারপর সাথে সাথে বিশাল দেহী দুই মানব "বস বস" করে দৌড়ে তার কাছে এলো। গাড়ির দরজা খুলে দিল। তারা শুষ্ক কে নিয়ে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার রুমের ভেতরে নিয়ে গেল। 


ছোট একটা লাইটের নিচে একটা চেয়ার রাখা। 


সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে মাফি আর তার সঙ্গরা এক সাথে বাঁধা অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। 


শুষ্ক চেয়াট টেনে বসে।

"তারপর বল। তখন কি যেন বলছিলি?"

শুষ্কের কথায় মাফি কাকুতিমিনতি করতে থাকে।


শুষ্ক মাফির গলা টিপে ধরে।

"কি কি বলছিলি রানি কে? মেয়েদের খাবার মনে হয় কুত্তারবাচ্চা? সব মেয়েদের টিজ করিস না কলেজে? আমাকে কি বলছিলি?"

"মাফ করে দিন। স্যার আমায় মাফ করে দিন। আমি আর এমন করব না।"


শুষ্ক কিছু না বলে এলোপাথাড়ি মারে সবাই কে। 


প্রায় আধঘণ্টা পর সে আবার চেয়ার টেনে তাদের সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে। হাত দিয়ে চুল ঠিক করে। 

সবাই তার পায়ে হুমড়ি খেয়ে পরছে আর যেন না মারে। 


"তোদের আর কলেজের সামনে পাওয়া যাবে?"

"না বস না।"

"কখনো আর কোনো মেয়ে কে অসম্মান করবি?"

"না বস।"

"অসহায় মানুষ কে আর মারবি?"

বলেই রুল দিয়ে একটা বারি দেয় মাফি কে। মাফি আর্তনাদ করে বলে,

"কখনো করব না বস।"

"ভালো হয়ে থাকবি?"

"জ্বি বস জ্বি।"


শুষ্ক উঠে দাঁড়ায়। 


বিশাল দেহী দুজনের উদ্দেশ্য করে বলে,

"ওদের হসপিটালে দিয়ে আসবে। আর হ্যাঁ তোকে বলছি কাল কলেজে গিয়ে সবার কাছে মাফ চাইবি। ভুল যেন না হয়।"

"ওকে বস সবার কাছে মাফ চেয়ে আসব। যা বলবেন তাই করব।"


শুষ্ক এক অদ্ভুত রহস্যের হাসি হেসে সেই জায়গা ত্যাগ করল। 


রানি সেই যে ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় উঠেছে। বিছানার পাশ থেকে ফোন নিয়ে দেখে ৫৬ টা কল দিয়েছে "ডেভিল রাক্ষস"। রানি ভয়ে ফোন টা বন্ধ করে ফেলে। 


না জানি রাগে কি করবে। ধমক দিতে তো আর কম জানে না লোকটা। মনে হয় কান ফেটে মগজে ঢুকে যাবে সেই ধমক।


চলবে....


(প্লিজ দুই চার লাইন লিখে যাবেন। আপনাদের এই দুই চার লাইন লেখা কমেন্ট লিখতে অনুপ্রেরণা দেয়। লেখার আগে আপনাদের পড়ার আগ্রহ দেখলে আমার লেখার আগ্রহ বাড়ে😊)

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৫

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৫


বিকেলে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে ঘরে আসতেই রানির কল আসে। ফোন নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। 


তাই সে আর কল রিসিভ না করে বিছানার উপর রেখে দেয়। 


পরপর দুই বার কল হয়ে কেটে যায়। তিন বারের সময় রানি বিরক্ত নিয়েই কল ধরে। শক্ত গলায় ভ্রু কুঁচকে বলে,

"আরে কে মশাই এত বার কল দি.."

"শাট আপ। রাবিশ কল ধতে এত সময় লাগে? কি করছিলে?"


রানি শুকনো ঢুক গিলে। মানুষটা তার নাম্বার পেলো কোথায়?


"কি হলো? আমি কল দিচ্ছিলাম না?"

"আ আসলে.."

"নিচে নামো।"

"কি?"

"তোমার বাসার নিচে নামে।"

"শুধু শুধু নিচে নামতে যাবো কেন স্যার? এখন আমি পারব না।"

"ডেমেট আমি দাঁড়িয়ে আছি। আড়লি নিচে আসো।"


শুষ্কের কথা শুনে রানি চমকে যায়। বলে কি লোক টা? নিচে মানে? সত্যিই চলে এলো নাকি? 


রানি জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয়। 

হ্যাঁ সত্যিসত্যি শুষ্ক কালো একটা ফিটফাট শার্ট পড়ে তার সাদা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কানে ফোন ধরে রাখা। চোখে কালো সানগ্লাস।


এক কথায় দিল কেড়ে নেওয়ার মতো স্টাইল। রানি হা করে আছে। জিম করা বডি যেন শার্ট বেদ করে আসবে আসবে। রানির বুক টা ধক করে উঠে এমন রূপ দেখে। এই প্রথম এই ভাবে কোনো ছেলে কে দেখছে। যেন কোনো সিনেমার হিরো শুটিং করছে।


রানি আমতাআমতা করে বলল,

"আ আপনি এখানে কি করছেন? আর আ আমার বাসায় চিনলেন বা কি করে?"

"চুরের মতো জানালা দিয়ে উঁকি না দিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নামো।"

"কি কি বলতে চাইছেন? আমার বাসায় আমি চুরি করতে যাবো কেন?"

"চুরি করেই তো আমায় দেখছো।"


রানি জানালার পাশ থেকে সরে এসে বলে,

"মু মুটেও না। আমি আ আপনকে দেখছিলাম না।"

"সেটা আমি বেশ দেখেছি। আর কি বললে? তোমার বাড়ি? মেয়েদের আসল বাড়ি হয় তার অর্ধাঙ্গের বাড়ি। মানে নিজের হাজবেন্টের বাড়ি। বাজে বকবক না করে নিচে নামো।"

"ন না আমি নামব না।"

"ওকে ফাইন আমিই উঠছি উপরে।"

"না না আ আমি নামছি।"

"গুড গার্ল। ফাস্ট আসো।"

".....


রানি ফোন হাতে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। 


তার মা সোফায় বসে টিভি দেখছিল,

"কিরে কোথায় যাস?"

"আম্মু আসছি একটু।"


রানি কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে। গেইট খুলে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। 


শুষ্ক গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 


রানি শুষ্কের এই রূপের দিকে তাকাতে চাইছে না। কারণ শুষ্কের এমন স্টাইল দেখে রানির কেমন কেমন লাগছে। তাই মাথা নিচু করে আছে। 


আর ও দিকে শুষ্ক রানি কে দেখেই চলছে।


"তাকাচ্ছো না কেন? আমাতে ফেঁসে যাবে নাকি?" 


শুষ্কের কথায় রানি ঘাবড়ে যায়। শরীর দিয়ে যেন ঘাম বের হয়।  অস্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠে,

"কে কেন আসতে বললেন আমায়?"

"...

"কি হলো?"

কথাটা রানি শুষ্কের দিকেই তাকিয়ে বলেছে। 


"কি কি দেখছেন?"

"নিশ্চয় তোমাকে না। বাড়ি টা দেখছিলাম।"


রানি মনে মনে বলতে লাগল,

"ছিঃ কি মিথ্যা কথা বলে ডেভিল টা। আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে কি না বাড়ির দিকে? ড্রাগন একটা।"


শুষ্ক গাড়ির ভেতর থেকে একটা শীট বের করে আনে। সেটা রানির দিকে এগিয়ে দেয়। রানি চোখ বুলিয়ে শুষ্ক কে প্রশ্ন করে,

"কি এটা?"

"তোমার মতো পিচ্চি কে তো আর লাভ লেটার দিব না।"


"কি আমি পিচ্চি? আরে ডেভিল তুমি তো জানো না কত ছেলে আমার পিছন ঘুরেছে। এখনো যদি হ্যাঁ বলি ছেলের লাইন লেগে যাবে আর তুমি কিনা বলছো আমায় পিচ্চি? খাডাস।"


কথা গুলি রানি মনে মনে আওড়াতে লাগল। 


শুষ্ক আবার বলে উঠে,

"তুমি পিচ্চি কি না সেটা মনে মনে আর ভাবতে হবে না। এটা নাও আর বাসায় ঢুকো।"


শীট টা শুষ্ক রানির হাতে ধরিয়ে দিয়ে গাড়ির ভেতর বসে। তারপর রানির সামনে দিয়ে সাই সাই করে চলে যায়। 

রানি ভ্যাবলার মতো চোখ বড় বড় করে শুষ্কের গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। 


গাড়ি টা আড়াল হয়ে গেলে রানি ঘনঘন চোখের পাতা ফেলে পরে একটা ঢুক গিলে বাসার ভেতরে যায়। 


মায়ের প্রশ্ন,

"কি রে কোথায় গিয়েছিলি?"

"আম্মু শীট আনতে।"


শুধু এটা বলে রানি দৌড়ে উপরে নিজের রুমে চলে যায়। 


শীট টা ভালো ভাবে দেখে বুঝে এটা বেশ কাজের। তাই সাথে সাথে বই নিয়ে বসে পড়ে। শীট টা শেষ করার প্রচেষ্টা করে। 


রাতে খেয়ে এসে ঘুমাবে এমন সময় তার কল আসে। 


স্কিনে "ডেভিল রাক্ষস" এর নাম ভেসে আসে। রানি ইচ্ছা করে কল টা না ধরে ফোন রেখে দেয়। 


দুই বার কল দিলেই রানি ধরে। ওপাশ থেকে বলে উঠে,

"হাউ ডেয়ার ইউ? আমার কল পিক করছিলে না কেন? ডেমেট বাসায় কি করো তুমি?"

"....

"তোমাকে না.."

"ডেভিল রাক্ষসের মতো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে না?"

"হোয়াট?"

"ন না আ আসলে আমি নিচে ছিলাম।"

"খেয়েছো?"

"হুম।"

"আমি খেয়েছি কি না জিজ্ঞেস করবে না?"


রানি বিড়বিড় করে বলল,

"আমার কিসের ঠেকা লাগছে?"

"কি বললে তুমি?"

"কিছুই না স্যার।"

"না আমি শুনলাম তুমি কিছু একটা বলেছো।"

"না স্যার আসলে বলছিলাম শীট টা দেওয়ার কারণে আপনাকে একটা ধন্যবাদ দিব।"

"রা.. আসলে আমি শুকনো ধন্যবাদ নেই না।"

"তাহলে?"

"আমি তার সাথে সময় মতো যা নেওয়ার নিয়ে নিব।"

"কি বললেন স্যার?"

"পড়া শুনা কেমন চলছে বলো।"


রানি শুষ্কের সাথে বেশ কিছুক্ষণ পড়া নিয়ে কথা বলল। রানিও সে গুলি মনোযোগ দিয়ে শুনল। শুষ্ককে তার ভালো না লাগলেও। পড়া নিয়ে কথা শুনতে সে নারাজ হয় না। 


শুষ্ক ঘড়িতে সময় দেখে বলে, 

"রাত ১১ টার উপরে বাজে যাও শুয়ে পড়ো।"

"ওকে বাই।"

"বাই।"


শুষ্ক ফোন রেখে ঠোঁটের কোণায় একটা হাসি ফুটিয়ে আনে। রানি ফোন রেখে তার স্বপ্নের রাজ কে নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়। 


চলবে.....


(একটু ধৈর্য ধরে গল্প টা পড়ুন। আর এত রাজ রাজ করছেন কেন? শুষ্কই বা কম কি? ওয়েট করে পড়ুন।আর ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান।😊

গঠনমূলক কমেন্ট করুন।)

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৪

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৪


রানি হাপাতে হাপাতে সামিয়ার কাছে যায়। সামিয়া তাকে দেখে অবাক হয়। 


"কিরে স্যার তোকে কেন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল? আর এমন হাপাচ্ছিস কেন?"

"বইন তাড়াতাড়ি চল না হলে রাক্ষস টা আমায় খেয়ে ফেলবে তাড়াতাড়ি চল।"

"মানে কে তোকে খেয়ে ফেলবে?"

"আগে চল তো।"


রানি সামিয়ার হাত টেনে নিয়ে যেতে থাকে। গেটের কাছে আসতেই রিক কে দেখতে পায়। 


এই একমাত্র ছেলে যাকে রানি এত এত কথা শুনায় তবুও সে রানির পিছু ছাড়ে না। রানির খুব বিরক্ত হয় ওকে দেখলে। এত বেহায়া মানুষ এর আগে সে একটাও দেখেনি। রিক খুব বাজে আর বখাটেও বটে। না হলে কেউ অপমান করলেও বারবার পিছু ঘুরে?


"হাই রানি। মাই ড্রারলিং সরি কাল আসতে পাড়ি নি। একটু বিজি ছিলাম।"


রানি সেই কথায় পাত্তা না দিয়ে সামিয়া কে বলল,

"সামু তাড়াতাড়ি চল।"


তাদের পথ আটকে রিক আবার বলে,

"আরে আরে যাচ্ছো কোথায়? চলো না একটু কফি খাই। তোমাকে কাল না দেখতে পেয়ে মন আনচান করছিল। আর তুমি আমার কষ্ট টা না বুঝে চলে যাচ্ছো?"

"আপনার মতো কুত্তা আর আমি একটাও দেখিনি। রাস্তার কুত্তা কেও পা দিয়ে লাথি দিলে সে আবার ফিরে আসতে ভয় পায়। আর আপনি সেই কুত্তাও নন। যতসব ফালতু খারাপ লোক।"

"কি করব বলো? তোমাকে না দেখে যে থাকতে পাড়ি না।"

"আপনি কুত্তার সাথে গলায় গলাগলি করে বসে থাকুন এটাই আপনাকে মানাবে। মিডিল ক্লাস লোক কোথাকার "


রানি আর কিছু না বলে সামিয়া কে নিয়ে রাগে চলে যায়। 


দূর থেকে এক জোড়া চোখ আবার রানির দিকে তাকিয়ে ছিল। এবার আর তার চোখে ছিল না মুগ্ধতা। 

শুধু ছিল রাগ আর ক্ষোভ।


বিকেলে রানি ব্যালকুনিতে যায়। 

সেখানে থাকা গাছ গুলিতে পানি দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু আজ আর এক জোড়া চোখ মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখল না। 


রাতে খেয়ে রানি তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। 


একটু পর তার রুমে তার বাবা আসে। 

"রানি রানি মা।"


রানি তখন ঘুমিয়ে গিয়েছে। বাবা এসে মুচকি হেসে তার গায়ের উপর চাদর টেনে দেয়। তারপর লাইট টা অফ করে চলে যায়। এসেছিল মেয়ের সাথে একটু কথা বলবে কিন্তু ঘুম পাগলি রানির জন্যে তা আর হলো না। অজ্ঞাত তিনি চলেই গেলেন। 


সকালে উঠে সামিয়া আর রানি কলেজের জন্যে রওনা দেয়। 


গেটের ভেতরে গেলেই কোথা থেকে দৌড়ে রিক আসে। হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে। 


সামিয়া আর রানি বেশ অবাক হয়। 

আবার প্রোপজ ট্রোপজ করে বসবে নাকি?


পাশ থেকে শুষ্ক নিজের গাড়ির চাবি আঙ্গুলের ঢগায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অফিস রুমে যাচ্ছিল। সবে মাত্র গাড়ি পার্ক করে সে এসেছে। 


চলে যেয়েও আবার রানির কাছে ফিরে আসে। 

"হোয়াট হ্যাপেন?"


রিক বিমড়ি খেয়ে শুষ্কের পায়ে পড়ে,

"স্যার আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আর হবে না।"

"মানে? কিছু বুঝলাম না।"

"স্যার আমি রানি কে মানে উনাকে প্রতিদিন বিরক্ত করতাম। আর এমন করব না আমি। মাফ চাইছি।"

"এখানে আমার কাছে মাফ চাওয়ার কি আছে? যাকে এতদিন বিরক্ত করেছিস তার কাছে মাফ চা।"


রিক তড়িঘড়ি করে রানির পায়ে হাত দিতে চাইলে রানি এক হাত দূরে সরে যায়। 


"আমায় মাফ করে দিন। আমায় মাফ করে দিন। এমন আর হবে না।"

"আরে আরে করছেন কি? মাফ চাইতে হবে না। শুধু আর বিরক্ত না করলেই চলবে।"

"আমি আর আপনাকে বিরক্ত করব না। আমায় শেষে বারের মতো মাফ করে দিন।"

" সত্যি তো? মনে থাকে যেন। ঠিক আছে আপনি যান।"


রিক একবার শুষ্কের দিকে তাকিয়ে চলে যায় আস্তে আস্তে।


রানির সে কি লাফালাফি।

"ইয়ে আমাকে আজ থেকে আর কেউ বিরক্ত করবে না। ইয়ে কি মজা।"


রানি বেশ খুশি হয়ে সামিয়া কে জড়িয়ে ধরে। 

পাশ ফিরে শুষ্কেও জড়িয়ে ধরতে চায়। কিন্তু তার অনেক টা কাছে গিয়ে রানি তার প্রসারিত হাত গুটিয়ে নেয়। 


ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বলে,

"স সরি স্যার"

"মন্দও ছিল না।"


শুষ্ক রানির দিকে তাকিয়ে এক গালে হেসে চলে যায়। রানি হা করে দেখছিল সেই হাসি। কি সুন্দর কত টা মায়াময় সে হাসি। 


রানি খুশি তে আবার লাফালাফি শুরু করে। 


সামিয়া তখন বলে উঠে,

"রানি এটা তোর বা আমার বেডরুম না। কলেজ এটা।"


রানি নিজেকে সামলে আশপাশ তাকায়। তারপর সামিয়া কে নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। 


প্রতিদিনের মতো শুষ্ক আজো প্রথমে ক্লাসে এলো। সবাই কে ক্লাস করায়। কিছু টপিক হাতে কলমে বুঝিয়ে দেয়। ক্লাস শেষে আজো রানি কে তার অফিস যেতে বলে। 


"আসব?"

"হুম কাম।"

"স্যার আমি আপনাকে আবারো বলেছি আজো বলছি প্লিজ আমাকে এই ভাবে আর ডেকে পাঠাবেন না।"

"আমি কেন ডাকব। কেন ডাকব না তা তোমাকে বলে করতে হবে নাকি? অযথা কথা বাড়াচ্ছো রানি।"

"স্যার এই গুলি সবাই ভালো চোখে নেয় না।"

"ও রেয়লি? তো কোন গুলি ভালো চোখে নেয়? তোমাকে বিরক্ত করা গুলি? কই এত দিন সে কলেজের সামনে তোমাকে ও বিরক্ত করেছে তাতে তো তারা কিছু বলেনি। তারমানে ও গুলি ওরা ভালো চোখেই নিয়েছে। তাই কিছু বলেওনি করেওনি।"

"...


"তোমাকে আমি এমনি এমনি তো ডেকেও পাঠাই না। কিছু টপিকও বুঝিয়ে দেই।"

"....

"এই কথাটা যেন আর মুখে না আসে। বসো।"

"...

"কি হলো?"

"হুম।"


রানি গিয়ে চেয়ারে বসে। 


শুষ্ক পাঁচ মিনিট রানির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর পড়া শুরু করে। 

রানিও মন দিয়ে পড়ে। 


যাওয়ার আগে রানি কে পিছু ডেকে বলে,

"রানি আমার কথার অবাধ্য হইও না ফলসরূপ খুব ভালো হবে না।"


রানি চলে যায়। যেতে যেতে ভাবতে থাকে,

"রাজ চৌধুরীর বিষয়ে স্যার কে কিছু জিজ্ঞাস করব? যদি উনি কিছু জানে। না না থাক। কি না কি ভাববে।"


বাকি আরেক টা ক্লাস করে রানি আর সামিয়া বসায় চলে যায়। 


আজ মন টাও ভালো লাগছে। রিক নামক বিরক্ত তার এখন থেকে দূর হলো। কিন্তু যাকে এত বকার পরেও কোনো কাজ হলো না। সে নিজ থেকে এসে এমন ভাবে মাফ চাইল কেন? বিষয়টা রানি ভেবে উঠতে পারে না। তবুও মনে মনে খুশি হয়। 


চলবে....


(দুই চার লাইন গঠনমূলক মন্তব্য করুন।)

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৩

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৩


বেশ কিছু সময় দুজনে এভাবেই বসেছিল। শুষ্কের চোখে ছিল রানির মুগ্ধতা আর রানির শুধু ছিল বিরক্তি।


তারপর শুষ্ক রানি কে জোর করে কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিল। তারপর রানি কে ছুটি দিয়ে দিল। যাওয়ার আগে রানি কে বলে দিল,

"এমন ভুল যেন আর না হয়। এবং কারো জন্যে এত অপেক্ষার পাহাড় পাড়ি না দিয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবো।"


শুষ্কের কথায় রানি কোনো পাত্তা দিল না তা সে বেশ বুঝেছে। 


রানি একটু নাক ফুলিয়ে চলে গেল। 

যেতে যেতে বলতে লাগল,

"লোকটা যেমনি হোক মন্দ পড়ায় না। দূর রানি তুই এত ভাবছিস কেন? তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে ঘুম দে। রাজ কে নিয়ে কল্পনা করলেও তোর মন মাথা দুটোই ঠিক থাকবে।"


রানি তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে যায়। আজ একটু শান্তি তেই আসতে পেরেছে বখাটে ছেলে টাকে আজ আর দেখা যায়নি।


রানি বাসায় এসেই শাওয়ার নিতে চলে যায়। 


তার মা সিনথিয়া এসে খাওয়ার জন্যে অনেক ডেকে গেছে কিন্তু সে মানা করে দিয়েছে। যখন তার সময় হবে তখন সে খেয়ে নিবে। 


শাওয়ার নিয়ে ভিজে চুল গুলি ছেড়ে সে ব্যালকুনিতে চলে যায়। 


মুক্ত বাতাসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। 

নিচ থেকে তার দিকে দুটি চোখ নজর দিচ্ছে। এক জোড়া চোখ লুকিয়ে থেকে তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। 


তারপর রানি নিজের রুমে চলে যায়। গিয়ে এক ঘুম দেয়। রাজ কে সে কল্পায় আঁকে।

ড্রিম বয় তার স্বপ্নেই থেকে গেল কবে যে সে সামনে আসবে তা রানির জানা নেই। কিন্তু তবুও কল্পনা জল্পনা করতে সে পিছু হাটে না। 


রাজ চৌধুরী বিখ্যাত বিজনেসম্যান। শুধু যে দেশ জুরে তার নাম তা নয়। বিদেশেও তার নাম ডাক প্রচুর। ইভেন বিশ্বের সেরা বিজনেসম্যানেও সে দ্বিতীয় স্থান কেড়ে নিয়েছে। বয়স তেমন নয় ২৮ বছর বয়সী এই ছেলে বিশ্বের মাঝে নামডাক তৈরি করে নিয়েছে। উদ্দাম সাহস চেষ্টা আর স্বপ্ন তাকে সেখানে নিয়ে পৌঁছেছে। এত নামডাক হলেও তাকে চেনার মতো মানুষের বড্ড অভাব। সে নিজের প্রাইভেসি নিয়ে চলে। মিডিয়ার সামনেও আসে না। কখনো কোনো ক্যামেরায় তাকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। সে কখন কোথায় কোন দেশে থাকে তা তার গার্ডরা ছাড়া কেউ জানে না। কানাঘুষা শুনা গেছে তাকে দেখতে কোনো প্রিন্সের চেয়ে কম নয়। এত বড় একজন ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মানুষ হয়েও সে সবার অগোচরে। তার নাম সবার মুখে তবে চোখে দেখা নয়। 


রানিও তাকে দেখেনি। যা শুধু নাম ডাকই শুনেছে। 


"মানুষের নিষিদ্ধ আর অদৃশ্য বিষয়ে প্রবল ঝুঁক বিদ্যমান।" রানিরও হয়েছে তাই। না দেখেই সে রাজে মশগুল। রাজ অন্তঃ প্রাণ তার। চোখে দেখেনি তবুও মারাত্মক এক ইচ্ছে মনে পোষন করে রেখেছে।


দেশের নাম করা এমন এক মানুষের সাথে সবারই তো দেখা করতে ইচ্ছে হয়। রানিও খুব করে হয়। 

সবাই নায়ক, খেলোয়াড় বা বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি কে পছন্দ করে। মনে মনে কত আশা করে। রানিও করে রাজ কে নিয়ে সেরা বিজনেসম্যান কে নিয়ে তারও অনেক স্বপ্ন কল্পনা জল্পনা আছে। রানি তো অনেক ছেলেকে রিজেক্ট করেছে। তারা দেখতেও যেমন ছিল প্রভাবশালীও ছিল। দেখতে তো সে রূপে কোনো অংশে কম নয়। যে কোনো ছেলের নজর কাড়া সৌন্দর্য তার। তবুও রানি তাদের সবাই কে মানা করে দিয়েছে। 


রানি তো মনে মনে ঠিকও করে নিয়েছে সে রাজ কে ছাড়া বিয়েই করবে না। দরকার হলে চিরকুমারী থাকবে। বিয়ের নামটাও শুনতে চায় না সে। 


বাবা বা মা কেউ বিয়ের কথা তুললে সে চিল্লায়ে বাসা মাথায় তুলে নেয়। যা মুখে আসে অদ্ভুত সব কথা বলে। নিজেকে রুমে আটকে রাখে। পরিস্থিতি ঠিক হলে আবার বদ্ধ ঘর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। 


বিকেলে ঘুম থেকে উঠলে তার মা তাকে খায়িয়ে দেয়। 


রাতে পড়া, ফেসবুকিং করে রানি ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে তার মা ঘুম থেকে ডেকে দিলে ফ্রেশ হয়ে কলেজে চলে যায়। 


রাস্তায় সামিয়া কে কল দেয়। রানির দেরি হয়ে যাওয়াতে সামিয়া কলেজের সামনে তার জন্যে অপেক্ষা করছে। 


রানি রিকশা ভাড়াটা দিয়ে নামতে নামতে বলল,

"তালগাছের মতো এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিস কেন? গেইট টা পাড় করলেই পারতি। ভাব দেখাচ্ছি যে তুই আমার জন্যে দাঁড়িয়ে আছিস।"

"আমি কি করব? তুই তো দেরি করে ঘুম থেকে উঠিস তাই.."

"থাক আর টেঙ্গরামাছের মতো ভাব দেখাতে হবে না। আমার ঘুম নিয়ে এত মরিস কেন বুঝি না। দেখিস তুই ঘুম গাধা এক জামাই পাবি।"

"কি?"

"তোর মাথা তাড়াতাড়ি চল।"


সামিয়া আর কথা না বাড়িয়ে দুজনে কলেজের ভেতর ঢুকে গেল। 


শুষ্ক ক্লাসে আসতেই রানি না পেড়ে সবার সাথে উঠে দাঁড়ায়। 


শুষ্ক সবাই কে কিছু ইমপটেন্ট বিষয় বুঝিয়ে দেয়। বিদেশ থেকে কোর্স শেষ করে এসেছে কি এমনি এমনি?


ক্লাস শেষের এক পর্যায় শুষ্ক রানির সামনে যায়। 

"অফিস রুমে এসো দরকার আছে।"

এটা বলেই চলে যায়। আর সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে রানি দিকে। 


রানি এত না ভেবে শুষ্কের কথায় তার কাছে যায়। 

"আসব?"

"হুম।"

"আপনি প্লিজ আমাকে আর ক্লাসের সবার সামনে এমন করে অফিস আসতে বলবে না।"

"কেন?"

"এমনি।।"

"কেন কেউ কিছু বলেছে?"

"কেউ না বললেও ভাবে।"


শুষ্ক নিজের ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়। তার কাছে গিয়ে বলে,

"কি ভাবে?"

".....

"কি হলো বলো।"

"জা জানি না।"

"তাহলে আমি যখন বলব তখন আসবে তুমি।"

"পারব না।"


বলে রানি চলে যেতে নিলে শুষ্ক তার হাত ধরে থামায়। হেঁচকা টানে নিজের কাছে আনে। 

"আমি কোনো রকম না শুনতে অভ্যস্ত নই। আমার ডিকশনারি তে 'না' নেই। সো.."

"সো কি?"

"প্রশ্ন করছো আমায়?"

"আপনাকে আমি প্রশ্ন করতে যাবো কেন? ছাড়ুন।"


রানি একটু ঝাড়ি দিয়ে শুষ্কের হাতের আবদ্ধ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। 


শুষ্ক এবার রেগে রানির বাহু টেনে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরে। দাঁত কটমট করে বলে,

"না আমি প্রশ্ন শুনতে চাই। আর না আমার কথা না শুনা মানতে চাই। আমার রাগ উঠিও না। তাহলে তোমারই ক্ষতি হবে।"


শুষ্কের চোখ আর এমন ব্যবহারে রানি খুব ভয় পায়। গলা শুকিয়ে আসছে তার। ভয়ে বুক কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথাও বলতে পারছে না। 


শুষ্ক তাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের জায়গায় চলে যায়। 

"বসো।"

"....

রানি তখনো ওখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।

"ডেমেট হোয়াট ডিড আই টেল ইউ?

"...


শুষ্কের ধমকে রানি তাড়াতাড়ি করে চেয়ারে বসে। 


শুষ্ক টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস টা তার দিকে এগিয়ে দেয়। রানি টগটগ করে সব টা পানি খেয়ে ফেলে।


"ভেতর শুকিয়ে গিয়েছিল?"

"....

"আমার রাগ উঠিও না। আগুনের চেয়েও আমি কম নই। রাগ চলে আসলে ভেতরে আগুন জ্বলে। ফলে অপর মানুষ টা কে আমি সেই আগুনে নিক্ষেপ করি।"


শুষ্কের ধারালো অস্ত্রে মতো কথায় রানি কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভেতর আত্মা শুকিয়ে আসছে তার। 


শুষ্ক বেশ কিছু সময় রানির দিকে তাকিয়ে ছিল। আর রানি মাথা নিচু করে বসে ছিল। 


"শুনেছি ইকনোমিকসে তোমার বেশ ঝুঁক আছে। তুমি নাকি খুব পাঁকা। সব সময় ইকনোমিকসে টপ রেজাল্ট করো।"

"জ্বি।"

"বই বের করো।"

"হ্যাঁ।"

"বই বের করতে বললাম।"


শুষ্ক আরো কিছুক্ষণ রানি কে একা পড়ায়। তারপর যেতে বলে। 


রানি গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বের হতে থাকে। শুষ্ক আবার তাকে পেছন থেকে ডাকে। রানি সেখানে দাঁড়িয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে শুষ্কের দিকে তাকায়। 


"তোমার ফোন নাম্বার টা দাও তো।"


রানি আর দেরি না করে শুষ্কের এমন কথা শুনে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। এক দৌড়ে মাঠে চলে আসে। 


শুষ্ক সেখানে বসেই বলতে থাকে,

"ডেমেট হোয়াট হ্যাপেন? ওহ শীট।"


চলবে....


(নাইস নেক্সট ওয়াও কমেন্ট না করে এক দুই লাইন লিখে যান। না হলে বাদ দিন।)

গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ২

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ২


নতুন স্যার ক্লাসে এসেছে সবাই খুশি মনে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানাল। সবাই কে বসতে বললেও মেয়ে রা তার দিকে হা করে আছে। 


শুষ্কের নজর গেল একজনের উপর। চোখ আটকে যাওয়া সেই মেয়ের দিকে। 


রানি কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঠোঁটের কোণায় হাসি টেনে আনে। স্যার যে ক্লাসে এসেছে তার সেদিকে বেমালুম খেয়ালই নেই। সে তার কল্পনার জগতে রাজ নামাক ব্যক্তি কে নিয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছে। 


শুষ্ক সবাই কে চোখ রাগিয়ে বসতে বলে। সব মেয়ে রা তাই করল। 


সে এগিয়ে গেল রানির দিকে। তখনো রানি যেই কে সেই। শুষ্ক এগিয়ে তার সামনে দাঁড়াল। ২ মিনিট দাঁড়িয়ে রইল। সামিয়া নিচ দিয়ে রানি কে চোখ খুলতে বললেও কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে শুষ্ক টেবিলে সজোরে এক থাপ্পড় দেয়। সাথে সাথে রানি সহ বাকিরা কেঁপে উঠে। 


রানি ধরফড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। সামনে তাকিয়ে নতুন স্যার কে দেখে ঘাবড়ে যায়। শুষ্ক ঢুক গিলে রানি।


"এটা ক্লাস রুম তাই নয় কি? এটা তোমার ঘুমানোর জায়গা মনে হয়?"

"....

"ডেমেট আন্সার মি।"


শুষ্কের ধমকে রানি খুব ভয় পায়। মুখ তোতলাতে তোতলাতে জবাব দেয়,

"স সরি স্যার।"

"এত ভুল হয় কি করে? তখনো তো আমার পায়ে তুমি পা লাগিয়ে দিয়েছিলে। এখন এলাম না দাঁড়িয়েছো। আর না নিজের মাঝে আছো। মনে হয় ভাবনার রাজ্যে চলে গিয়েছিলে।"

"....

"কিছু বলছি।"

"স সরি স্যার।"

"হোয়াট দ্যা সরি?"

"স্যার সরি মানে আমায় মাফ করে দিন।"

"হোয়াট?"


শুষ্কের রাগি কন্ঠ শুনে রানি বুঝতে পাড়ে এই ভাবে হুটহাট যা তা বলা যায় না। নিজের বলা কথায় সে নিজেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 


"নেক্সট টাইম যেন না হয়।" এটা বলে শুষ্ক সামনে যায়। 


ইকনোমিক্স নিয়ে পড়াবে শুষ্ক। রানির এই ক্লাস টায় বড্ড ঝুঁক থাকলেও ভালো লাগছে না। নতুন স্যার এসেই তার উপর ধমকানি শুরু করল। তাই রানির মন খারাপ। 


শুধু মাত্র রাজের কারণে সে ইকোনোমিক্স নিয়ে অনার্স শেষ করবে। সবে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে। রাজের কথা ভেবে সে এই সিদ্ধান্ত নেয়। 

যদি এর উছিল্লায় একবার রাজ কে দেখতে পায়। স্বপ্নের রাজপুত্র কে যদি একবার চোখে দেখার সুযোগ পায়।


শুষ্ক ক্লাস করাচ্ছে সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে। মেয়েরা শুনছে বললে দোষ হবে। একরকম তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সব কিছু গিলছে। 


রানি মাথা নিচু হয়ে বিড়বিড় করে বলছে,

"সামিয়ার বাচ্চা তোকে এনাকন্ডার মতো চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।"

"কি?"

"যা শুনেছিস ঠিক তাই।"


"আমি আবার কি করলাম? তুই তো তোর রাজ কে নিয়ে স্বপ্নে চলে গিয়েছিলি। আমি তো তোকে ডেকেও ছিলাম। তুই তো শুনিস নি। তাই স্যারের কাছে বকা খেয়েছিস। আমার কি দোষ?"

"যা দোষ সব তোরই। বান্দরনী কে বলেছিল তখন বলতে ইসস আজ শুরু তে যদি নতুন স্যার আসত। তোর অপয়া মুখের কথাই সত্যি হলো। কি হতো তখন এটা না বললে? তুই বলেছিলি বলেই তো স্যার এলো আর আমি বকা খেলাম। এখন দেখ দোষ কার তোর না অন্যকারো কুত্তি কোথাকার।"


রানির কথা শুনে সামিয়া তার দিকে তাকায়। অবাক হয় না। কারণ সে জানে রানি কি কি বলতে পাড়ে আর কতটা উদ্ভট। 


"যা এতে আমার দোষ কোথায়?"

"তোরই দোষ সব দোষ তোর। ওই রাক্ষস টা চোখ রাঙ্গিয়ে আমায় কত ধমক দিয়ে গেল। তুই কিছুই বললি না। বান্ধবী নামে তুই কলঙ্ক। আর ওই রাক্ষস টা স্যার নামে। প্রথম দিন এসেই কেউ এসব করে? কই অন্য কেউ তো..."


শুষ্ক প্যান্টের প্যাকেট দুই হাত দিয়ে বলল,

"অন্য কেউ তো কি?"

"অন্য কেউ ওই রাক্ষসের মতো প্রথম দিন এসেই এমন করেনি। বরং সুন্দর..."


রানি থেমে গিয়ে বলে,

"সামু তোর গলা টা এমন বেটা বেটা লাগে কেন? আমার বকা খেয় কি তোর গলার আওয়াজ মোটা হয়ে গেল নাকি?"


সামিয়া বেচারা ভয়ে চুপ করে আছে। 


শুষ্ক বলল,

"লিসেন এই দিকে তাকাও। ওদিকে নয়।"


কথা অনুযায়ী রানি মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতেই দেখে শুষ্ক প্যান্টের মাঝে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। 


রানি সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। সাথে ঢুক গিলে।


"আমি ক্লাস করাতে আসছিলাম। তোমার ননস্টপ বকবক শুনতে নয়। নিজের কারণে বকা শুনবে আবার দোষ দিবে অন্য কাউকে?"

"....

"সেই কখন থেকে দেখছি মাথা নিচে করে রেখেছো। এখানে না আসলে তো জানতামি না তুমি কি কি বলছিলে। বের হও।"


শুষ্কের কথায় রানি মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। 


"কি হলো? বললাম না বের হও।"

"স সরি স্যার।"

"শাট আপ। বের হও এখনি।"


শুষ্কের ধমক শুনে রানি তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে পড়ে। 


"ক্লাস থেকে বের হও।"

"কি?"

"বললাম ক্লাস থেকে বের হও। বারান্দায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো এটাই তোমার পানিশমেন্ট।"

"স্যার আর হবে..."


শুষ্ক কিছু না বলে রানির হাত ধরে টেনে দরজার কাছে নিয়ে যায়। 

"এখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে।"

"....


শুষ্ক ক্লাসে ঢুকে গেলে রানি মুখ ভেংচি কাটে।


"উমমম ঢং। ঢং দেখলে গায়ে আগুন জ্বলে। আরে যা যা তোর মতো কত ছেলে আমার কাছে আসল আর গেল। আর উনি আসছে কোন ঢং। উনি ভাবে না জানি আমি কি। আরে তুমি একটা ঢং। ঘোড়ার আন্ডা। স্যার কে এই সব বলা ঠিক হচ্ছে? আরে দূর দূরে স্যার এমন করলে স্টুডেন্ট রা এমন বলবেই।"


রানি বিড়বিড় করে চুপ হয়ে গেল। শুষ্ক ভেতরে ক্লাস করাচ্ছে। 


রানি আবার বকবক করা শুরু করল। 

"হায় রাজ চৌধুরী। কবে আমি আপনাকে দেখব? আর কত দিন ১ বছরের উপর তো হলো অপেক্ষা করছি। আর কবে দেখা দিবেন আপনার রানি কে? আপনাকে দেখার জন্যে তো আমি উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। হায় মাবুদ উনাকে আমার সামনে আনো। আল্লাহ প্লিজ প্লিজ প্লিজজ।"


রানি দরজার পাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে তার মনের কথা জানাচ্ছিল। 


শুষ্ক রানির কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলল,

"কার জন্যে এত অপেক্ষার প্রহর গুনা? কার জন্যে এত উদ্বিগ্নতা? কার জন্যেই বা এভাবে সময়ে অসময়ে আল্লাহর কাছে এত দোয়া চাওয়া?"


ফিসফিসানি কথা কানের কাছে শুনে রানির অন্তর কেঁপে উঠে। সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠে। থতবত খেয়ে চোখ খুলে শুষ্ক কে দেখে ঢুক গিলে। 


চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে রানি শুষ্কের দিকে। 

"চলো।"

"ক কোথায়?"

"আমাকে ফারদার প্রশ্ন করবে না। আই ডোন্ট লাইক ইট।"


শুষ্ক টানতে টানতে রানি কে মাঠ দিয়ে নিয়ে গেল। আর সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। 


শুষ্কের জন্যে বরাদ্দ করা রুমে রানি কে নিয়ে যায়। চেয়ার টেনে বলে,

"বসো।"

"ম মানে?"

"সিট ডাউন।"

"কে কেন?"


শুষ্ক চোখ গরম করলে রানি তাড়াতাড়ি করে বসে। শুষ্ক নিজের চেয়ারে বসে। 


রানি অনেক অস্বস্তি ফিল করছে। শুষ্ক তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে বাতাসে সামনের চুল গুলি তার মুখ ঢেকে দিচ্ছে। রানি বারবার সরাচ্ছে। ফ্যানের বাতাসে আবার এলোমেলো করে দিচ্ছে। শুষ্ক মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে রানির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে রানি একটু পিছনে হেলে পড়ে। 


শুষ্ক তার চুলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ঠিক করার বদলে এলোমেলো করে দেয় আরো। 


রানি চুল ঠিক করে মুখ ভেংচি কাটে। শুষ্ক জোরে হেসে উঠে। 


রানি ভাবতে থাকে,

"আজব উনি আমাকে এখানে সঙ এর মতো বসিয়ে কেন রেখেছে? আর কি অদ্ভুত আচারন। কোনো স্যার স্টুডেন্টের চুল এমন করে? এ তো আমার থেকেও অদ্ভুত। যাই হোক ভালোই হলো সবাই আমাকে অদ্ভুত অদ্ভুত বলে। এখন না হয় তাকে দেখিয়ে বলবো উনি আমার থেকেও অদ্ভুত।"


রানি আরো বেশ কিছু সময় বসে ছিল। পুরো টা সময় শুষ্ক রানির দিকেই পলকহীন তাকিয়ে ছিল। 


চলবে....


গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ১

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ১


আজ কলেজে নতুন স্যার আসবে। সবার মাঝে টানটান উত্তেজনা। বিশেষ করে মেয়েদের। তবে একজন বাদে।


হুম রানির সেদিকে না আছে কোনো আগ্রহ আর না আছে কোনো উত্তেজনা। কলেজের আসার পর থেকে দেখছে মেয়েদের হুড়াহুড়ি আর কলরব। সবার মুখে এক কথা "নতুন স্যার।" নতুন স্যার কে নিয়ে সবাই কথা বলছে। শুনা গেছে সে দেখতে খুবি সুদর্শন আর স্মার্ট। কিন্তু একমাত্র রানিরই সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ তার মন দখল করে আছে অন্য কেউ। 


প্রিন্সিপাল সহ সব প্রফেসর আর স্টুডেন্ট হাতে হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নতুন স্যার কে শুভেচ্ছা জানাবে। সবার হাতে ফুল আর মুখে হাসি। কিন্তু রানির মুখ বেজার। বিষয়টার তার "ডোন্ট কেয়ার" ভাব পাত্তাই দিচ্ছে না এটার মাঝে। 


ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সামিয়া।


"তুই এত লাফালাফি করছিস কেন? দম যেন তোর আহামরি করছে। ভালো করে একটু দাঁড়া। এখনি তো আমার পা টা বর্তা করে দিতি।"


রানির কথা শুনে সামিয়া জবাব দেয়,

"দেখ আজ এমন করিস না। শুনেছি নতুন স্যার নাকি অনেক সুন্দর। দেখতে নাকি প্রিন্স। ইসস আমার যে আর তর সইছে না।"

"তো আমি কি করব? তোর মতো কি আমি লুচ্চা নাকি? পারলে তুই গলায় ঝুলিয়ে নাচতে থাক। আজাইরা।"

"ঢং। যতসব বাজে কথা।"

"বাজে কি বললাম আমি?"

"এএ তুমি পাইছো একজন রে। চিনো না জানো না দেখোনি। তার জন্যেই দেওয়ানা হয়ে থাকো সবসময়। আর কারো দিকে নজর দেস না তুই। কত ভালো ভালো ছেলে কে তুই রিজেক্ট করেছিস জানিস? একেক জন কতটা সুন্দর আর স্মার্ট ছিল দেখেছিলি কি একটু নজর দিয়ে?"


সামিয়ার কথা শুনে রানি রেগে যায়।

"বান্দরনী ভুলেও আমার রাজ কে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। না হলে এখানেই তোর মাথা ঘেরে রাখব।"


সামিয়া একটা মুখ ভেংচি দেয়। বিড়বিড় করে বলে,

"পাইছে এক আবাল। যাকে কোনো দিন দেখেওনি তার জন্যে তিনি পাগল। কিছু বললেও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।"

"কি বললি? কি বললি তুই?"

"দোস্ত সিনক্রিয়েট করিস না। এখনি হয়তো.."


সামিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই মেয়েদের চিৎকার শুনা যায়। নতুন স্যার চলে এসেছে। 


সবাই এক সাথে চিৎকার করছে। যেন স্যার না মডেল এসেছে।


কলেজের গেইট দিয়ে ইয়া বড় এক হোয়াইট গাড়ি এলো। সেখান থেকে কালো একজোড়া সু দেখা গেল। ভেতর থেকে যে বেরিয়ে এসেছে তাকে দেখে সবাই চুপ করে রইল। সবার নজর তার দিকে। মেয়েদের বুকের ভেতর হার্টবিট বাড়তে থাকে। আরো কিছু হচ্ছে কি না তা শুধু তারাই জানে। 


সাদা প্যান্ট সাদা কোট সাদা ট্রাই কালো সানগ্লাস। লম্বা খাড়া চুল। চিকন লাল আভা যুক্ত ঠোঁট। এক হাত প্যাকেটে দিয়ে এগিয়ে আসছে।

খুব লম্বা, গায়ের রং ধবধবে সাদা। বডি তো দেখার মতো। সব মিলিয়ে সুদর্শনের থেকেও বেশি।


তার এমন স্টাইল দেখে সব মেয়েদের জান যায় যায়। সবাই মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। 


একে একে সবাই তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। শুধু রানি অন্যমনে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। 


নতুন স্যার এগিয়ে আসতে আসতে রানির কাছে যায়। রানি অন্য দিকে মুখ করে ফুল এগিয়ে দেয়। স্যার এক মনে তাকিয়ে থেকে বিষয়টা খেয়াল করে। অন্যমনস্ক থাকায় স্যারের পায়ে তার পা লেগে যায়। 


"হোয়াট দ্যা হ্যাল.."


রানি ঘাবড়ে সামনে তাকায়। লোকটার দিকে রানি কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে। এই কয়েক সেকেন্ডেই তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। লোক টা আসলেই সুদর্শন। শুধু সুদর্শন বললেও ভুল হবে তার থেকেও বেশি। কি বডি। জিম বডির মাংস গুলি কোট বেদ করেও রানির যেন খেয়াল হলো। আবার চোখ নামিয়ে নিচে তাকায়। 


স্যারের পায়ের উপর তার পা। খুব ভয় পেয়ে যায়। পা সরিয়ে,

"স সরি স্যার।"


এই টুক বলে রানি সামিয়ার হাত টেনে কোনো রকম সেই জায়গা থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় সামিয়া বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে স্যার কে দেখছিল। 


স্যার দুই আঙ্গুল দিয়ে সানগ্লাস টা খুলে রানির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। 

মনে মনে বলে উঠে,

"এই মেয়ে প্রথম দিনি এমন কান্ড করল?"


তার সামনে এসে প্রিন্সিপাল বলে,

"ওয়েলকাম টু আওয়ার কলেজ মিস্টার শুষ্ক আহমেদ।"

"ও ইয়েস।"


দুজন হাত মিলিয়ে অফিস রুমের দিকে যায়। যাওয়ার সময় একবার পিছন ফিরে রানি কে দেখার চেষ্টাও করল।


চিকন লম্বা ফর্সা মেয়েটার মুখ বারবার তার চোখের সামনে ভাসছে। টানা চোখ, ঘন চোখের পাঁপড়ি, লাল ঠোঁট লম্বা চুলের সেই মুখখানা শুধু ভাসছে শুষ্কের চোখে। 


শুষ্ক অফিস রুমে চলে গেলে সব মেয়ে রা তাকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। কি এটিডিউট, কি স্টাইল, কি স্মার্ট। এক কথায় পারফেক্ট। মন কেড়ে নেওয়ার মতো মানুষ। 


রানি সামিয়া কে নিয়ে মাঠের এক কোণায় চলে যায়। ভাবতে থাকে লোকটা কে নিয়ে সবাই এমনি তেই মাতামাতি করছে না। লোকটার মাঝে সত্যিই এমন কিছু আছে। রানি দাঁড়িয়ে আছে। সামিয়া রাগে বলল,

"আমাকে টেনে আনলি কেন? তোর ভালো লাগছিল না কিন্তু আমার তো সেই ভালো লাগছিল তবে?"

"....

"কি ভাবছিস তুই? বল কেন আনলি?"

"চুপ করবি তুই? মনে হচ্ছিল চোখ দিয়েই গিলে ফেলছিলি তুই।"

"তাতে তোর কি? সবাই তো তাই করছিল।"


"চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।"

"ইসস আজ যদি নতুন স্যার টা শুরুতে ক্লাস নিত।"


রানি রাগে সামিয়ার দিকে তাকায়। 

"আর একটা কথা বললেও তোকে ফোসকা বানিয়ে গিলে ফেলব। মনে থাকে যেন।"


রানির কথা শুনে সে চুপ করে রানির সাথে যেতে থাকে। 


ক্লাসের মাঝে থাকা যাচ্ছে না শুধু নতুন স্যার, নতুন স্যার আর নতুন স্যার। সব মেয়েদের মুখে এই এক মানুষের নাম ডাক। একেক জন একেক কথা বলছে। সবাই তার স্মার্ট আর সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলছে। তারা বলা বলি করছে উনার সাথে যদি রিলেশন করা যায়। এমন একজন কে পেলে জীবন ধন্য। এখন থেকে প্রতিদিন সেজেগুজে আসবে যদি একবার উনার নজর পড়ে। আরো কত রকম কথা। 


রানির শুধু এই গুলি বিরক্ত লাগছে। 

কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। মুহূর্তে ভাবনার জগতে ডুব দেয়। ভাবতে থাকে কবে রাজের সাথে তার দেখা হবে?


চলবে....

গল্প প্রিয়_বেলা পর্ব ৩৬ সমাপ্ত

 প্রিয় বেলা


শেষ পর্ব.

ভয়ংকর মুহুর্ত। ভয়ংকর তার কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, তীব্র প্রণয়। বাতাসের গতি ক্ষীণ বাড়ানো। নাম না জানা বিশাল বড় গাছটার মগডালে এক'যুগল পাখি বসে আছে। কপোত-কপোতীর বেসামাল, সিক্ত অনুভূতির বিক্ষিপ্ত স্পর্শ দেখে তারাও যেন লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। লহু লহু কাঁপছে বেলা। চোখের কোণে অশ্রুকণা চিকচিক করছে। বুক ভারী, চরম সুখময় মুহুর্তে জড়োসড়ো হচ্ছে মন। মানুষটার বুক খামচে ধরেছে সে। ধারালো নখ বিঁধিয়ে দিচ্ছে বাজেভাবে। চোখ বুজে রাখা। স্পর্শের গতি দ্বিগুণ প্রগাঢ় করে আদ্র সরে এলো তার একটুক্ষণ পরেই। বেলার থুতনি চেপে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো লাজুক মুখটা। মুগ্ধ হয়ে দেখলো নিমেষহীন, একমনে, অনেক্ষণ। লজ্জায় আড়ষ্ট বেলা তাকালো না। চোখের পাতা কাঁপিয়ে বন্ধ করেই রাখলো। আদ্র হাসলো। দূর্বোধ্য হাসি। ওষ্ঠের নিম্নাংশ দাঁত দ্বারা ক্ষতবিক্ষত করে মোলায়েম স্বরে শুধালো,

---"তাকাবে না বেলা?"


বেলার উত্তর নেই। ঘন শ্বাসকার্যে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে মাত্র। আদ্র আরেকটু ঘনিষ্ট হলো। আগের মতোই বললো,

---"তাকাচ্ছো না কেন? এদিকে তাকাও। আমার দিকে। দেখো তো, ধূলোবালিতে গোসল করা আমাকে কেমন লাগছে।"


বেলা আড়নজরে তাকায়। সরাসরি তাকানোর সাহস নেই। লোকটার মলিন মুখশ্রীও যেন জ্বলজ্বল করে অসীম সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে। চোখে অদৃশ্য তৃষ্ণা। অধরে লেগে আছে দুর্দান্ত ক্লান্তিমাখা হাসি। স্থির দৃষ্টি বেলাতেই আটক।

পলক এত কম ফেলছে কেন লোকটা? তাকে আজকে প্রথম দেখছে নাকি? নেত্রের খুব গভীরে কাছে পাওয়ার তীব্র বাসনা সুস্পষ্ট হতেই মাথা নোয়ালো বেলা। ছোট্ট নিশ্বাস ফেললো। মনে মনে ভীষণ জোরে স্বীকারোক্তি দিলো,

---"আপনি বড্ড বেসামাল আদ্র। প্রচন্ড অসভ্য প্রেমিক। পাষাণ নেতাদের এতটা বেহায়া হতে নেই। আপনিও হবেন না।"

তবে অকপটে সে গলা নামিয়ে ধীরে ধীরে বললো, "ফ্রেশ হবেন না? ক্লান্ত লাগছে আপনাকে। হাতে ব্যান্ডেজও করতে দিচ্ছেন না।"

আদ্র অদ্ভুদ ভাবে হাসলো তখন, "কিছু ক্ষত প্রশান্তি দেয় বেলা। জয়ের তৃপ্তি আনে। থাক না। ব্যান্ডেজ করতে ইচ্ছে করছে না।"


বেলা বুঝলো না কিছুই। অবুজ চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই কপাল কুঁচকে সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করলো, "আপনি কি মারপিট করে এসেছেন আদ্র?"

---"মারপিটে কেউ কামড় দেয় বেলা?"


কপালের ভাঁজ মিইয়ে গেল। নিজের বোকামিতে ক্ষীণ থতমত খেলো বেলা। মিনমিনে কণ্ঠে জানতে চাইলো, "তাহলে কিভাবে হ--?"

কথা শেষ হলো না। তাকে থামিয়ে দিয়ে আচমকা নিশ্বাস ভার করা কণ্ঠে বলে উঠলো আদ্র,

---"আমার দু'দিনের জন্য ঢাকা যেতে হবে বেলা।"


যেন একটু একটু করে বিরাট বজ্রপাত ঘটলো। আলোর ঝলকানিতে রুষ্ট হলো সব। তক্ষুণি মাথা উঁচিয়ে তাকালো সে। মুখ তুললো কাতর ভাবে। কি ভীষণ করুণ স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়লো,

---"সত্যি চলে যাবেন?"

আদ্রর অভ্যন্তরে পাথরেরা ঘর বেঁধেছে। নাক, মুখ কে যেন শক্ত করে চেপে ধরেছে। নিশ্বাস নিতে দিচ্ছে না। দমবন্ধকর বিশ্রী অনুভূতি।


---"তাড়াতাড়ি চলে আসবো তো। তোমার প্রিয় ফুল নিয়ে আসবো। ওইযে, রাস্তার মোড় থেকে যেটা সবসময় কিনতে তুমি?" আশ্বস্ত করার অল্প সল্প প্রচেষ্টা।

বেলার ভেতরটা গললো না তবুও। শুনলো না কিছুই। ম্লান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

---"কখন যাবেন?"

---"পরশু।"

বুক ছিঁড়ে নিশ্বাস বেরিয়ে এলো। পীড়াদায়ক নিশ্বাস! মনের অবনতি ঘটলো আরও। প্রশস্ত বক্ষের মধ্যিখানে আনমনে মাথা রেখে নিজের খারাপ লাগা প্রকাশ করলো অত্যন্ত সুকৌশলে। আদ্র বুঝে নিলো সেকেন্ডেই। আগলে ধরলো নিবিড়তা নিয়ে। নিভৃতে। প্রেয়সীর জলে টলমল মুখশ্রী পানে অনড় চেয়ে থেকে অভিযোগ জানালো,

---"চোখটাকে বারবার সমুদ্র করে ফেলো কেন বেলা? আমি যে প্রতিবার ডুবে যাই।"


-


সোফার অবিন্যস্তভাবে হাত,পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে আয়াজ। কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ফোনে সর্বোচ্চ লাউডে বাজছে,


'আমার সবটুকু বিশ্বাস 

যে দিয়েছে ভেঙ্গে 

তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই

সে যে দিয়েছে আমার

অন্ধ চোখে আলো, যার বিশালতার মাঝে আমি একটুকু পায়নি ঠায়।'


টেবিলে ছড়িয়ে থাকা আধ খাওয়া কোকাকোলার বোতল, চিপস নিতে নিতে রেখা খুব বিরক্তি নিয়ে তাকালেন আয়াজের পানে। রোষপূর্ণ চাহনিতে তাকিয়েই রইলেন কিছুক্ষণ। জোরেসোরে ধমক লাগালেন,

---"সমস্যা কি আয়াজ? সাত-সকালে কি শুরু করেছিস? তোরা কি আমাকে একটুও শান্তি দিবি না? ড্রইংরুমের এটা কেমন হাল! এখন যদি কোনো মেহমান এসে এমন অবস্থা দেখে? কি ভাববে বলতো?"


আয়াজ আগের মতোই ভাবলেশহীন। হতাশায় মুখ একটুখানি হয়ে আছে। তপ্ত নিশ্বাস ফেলে অনেকটা রয়ে-সয়ে ভণিতার রেশ ধরে বললো,

---"তোমার ছেলে ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে গেছে মা। ভাবছি সন্ন্যাসী সেজে প্রণয়ে ব্যর্থ বিরহের গান লিখবো। তুমি হবে সাইড নায়িকা।"


রেখা তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি প্রখর করলেন। একরাশ রাগের ফুল্কি নিয়ে, নিমিষেই ভস্ম করে দেওয়ার অত্যাধিক ক্ষমতার সঙ্গে। দ্বিগুণ জোরে চেঁচালেন, "বেয়াদপ! ঘর থেকে বের হবি এক্ষণি। তার আগে ময়লা সব পরিষ্কার করবি। ফাজিল! এসব কি ধরণের কথা? তোর মা লাগি সেটা ভুলে গেছিস?"

আয়াজের মাঝে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষিত হলো না। গান শুনতে শুনতে ঝিমিয়ে উঠলো সে। উত্তরে কিছুই বললো না। রেখা কটমটে চোখে চেয়ে থাকতে থাকতে চলে গেলেন রান্নাঘরে। তার ছেলে দুটো বখে গেছে সব। কিসব আজেবাজে কথাবার্তা।


গায়ে পরিপাটি কালো রঙা পাঞ্চাবী জড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিল আদ্র। তার একটু পেছনেই গুটিশুটি, ভীষণ ধীর পায়ে এগিয়ে আসছিল বেলা। মুখশ্রী ভরে আছে অত্যাধিক লাজের গাঢ় আবরণে। সোফায় আয়াজের মুখোমুখি বসলো আদ্র। গানের চরণ কানে বাজতেই ভ্রু কুঁচকে গেল তার। প্রশ্ন করলো,

---"এসব কি গান? চৈতির সঙ্গে ত্যাড়াব্যাকা কিছু হয়েছে নাকি? দেবদাস সেজেছিস কেন?"


আয়াজ কপাল থেকে হাত নামালো। একপলক তাকালো মাত্র। আফসোস নিয়ে বললো,

---"ছ্যাঁকা খেয়েছি ভাই।"

আদ্রর অবাক কণ্ঠ, "মানে?"

---"তুই আমাকে ছ্যাঁকা দিয়েছিস ভাই। মারাত্বক কষ্ট দিয়েছিস। আমাকে রেখে আগে আগে বিয়ে করার আগে তোর কি একটুও বুক কাঁপেনি? এত নির্দয় তুই?"


আদ্রর কপালের বলিরেখা তখন আকাশ ছোঁয়া। চোখ,মুখ কুঁচকে বললো,

---"বিয়ের মাস পেরবে। এতদিনে তোর কাঁপাকাঁপির কথা মনে হলো?"

---"মনে তো আগেই হয়েছে। কালকে আরেকটু গভীর ভাবে ভাবলাম। তুই যে ভাবীর সাথে আমার চক্ষের সামনে দিনরাত প্রেম করিস, কেন করিস? আমি যে বিয়ে পাগল জানিস না? আমার যে তোর মতো বিয়ে করে বাচ্চার প্লেনিং করতে ইচ্ছে করে বুঝিস না?"

---"তুই কি পাগল? আমি এখনই এসবের প্লেন করবো কেন?" কণ্ঠস্বরে আশ্চর্যের ধারা চুইয়ে চুইয়ে পরলো যেন। আয়াজ বেজায় বিরক্ত হয়ে মুখটা বিকৃত করে বললো, "এখনো করিস নি? কেন করিস নি? এত অলস কেন তুই? ওগো শুনছো ডাকটা না শুনতে পারি, চাচ্চু ডাকটা তো অনতত শুনাবি!"


বেলা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না সেখানে। চোখ বড় বড় করে দুই ভাইকে দেখলো একবার। দ্রুততর পায়ে রান্নাঘরে চলে গেল। আড়ষ্ট ভঙ্গিতে কাজ করতে করতে আবারও আয়াজের কথাগুলো কানে বাজতেই হড়বড়িয়ে গেল সে। লজ্জায় রাঙা হলো ফর্সা গাল। রেখা পাশ থেকে ডাকছেন। অথচ অস্বস্তিতে জবাবও দিতে পারছে না বেলা। তার যে এত কোথা থেকে আসে!


-


কাঠফাঁটা রোদ। খা খা করছে আশপাশ। ধূ ধূ মাঠ। সূর্যের সরাসরি বেগুনী রঙা ক্ষতিকর কিরণ। আদ্রর যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। মুখে নিস্তব্ধতা নিয়ে তার ব্যাগ গোছাচ্ছে বেলা। তিনটা ভিন্ন ভিন্ন রঙের ফাইল ব্যাগের একপাশে গুঁজে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

---"আর কিছু ঢোকাবেন ব্যাগে?"

---"হ্যাঁ।"


আলমারির কাছটায় পা বাড়ালো বেলা। দু'পাশের দরজা লাগিয়ে জানতে চাইলো, "কি ঢোকাবেন?"

---"তোমাকে।"

জড়তাহীন, নিঃসঙ্কোচ আবদার। বেলা হকচকিয়ে তাকায়। একান্ত গাঢ় কণ্ঠের ভাঁজে সিক্ত হয়। আদ্র খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ততক্ষণে। আলতো করে বেলার কোমড় জড়িয়ে বুকে চেপে ধরেছে। কপালে অধরের সূক্ষ্ণ স্পর্শ দিয়ে মুচকি হেসে বলে,

---"কাল সকাল সকাল চলে যাবো বেলা। তুমি এখন থেকেই কান্নার প্রেকটিসটা করে নাও। সকালে যদি আমি দেখার সময় না পাই?"


কথার পিঠে ভীষণ হতভম্ব হলো বেলা। চমকে পলক ঝাপটালো। খুব দৃঢ় অভিমান আষ্টেপৃষ্টে ধরলো। এতক্ষণ বহুকষ্টে আটকে রাখা অশ্রুগুলো বাঁধন হারা হলো। বুকে শক্তিহীন ধাক্কা দিয়ে সরে আসতে চাইলো সে। আদ্র দিলো না। শার্টের একাংশ নিমিষেই ভিঁজিয়ে বেলা ভাঙ্গা কণ্ঠে বিড়বিড় করলো, "আপনি এত খারাপ কেন? ভীষণ বাজে।"


প্রতিউত্তরে আদ্র শব্দ করে হেসে দিলো এবার। প্রাণ খুলে, বেশক্ষণ নিয়ে। নিকষকৃষ্ণ চুলের ওপর অধর ছুঁইয়ে উত্তর দিলো,

---"আমি তো তোমার কান্না দেখার জন্যই বিয়ে করেছিলাম বেলা। ভুলে গেছ?"


বেলা শুনলো। অভিমানে ভাড় হয়ে জবাব দিলো না। আদ্রর বুকের সঙ্গে লেপ্টে ফুঁফালো কিছুক্ষণ। বুকের শার্ট আঁকড়ে ধরলো। নিদারুণ অসহ্য কণ্ঠে থেকে থেকে বললো, "আপনি কেন চলে যাবেন? আমি কিভাবে থাকবো?"


বেদনায় ডুবে যাওয়া মুহুর্ত। রুমের এসি বন্ধ। ভনভন শব্দে বৈদ্যুতিক পাখা চলছে অবিরাম। অনিলের ঝাপটায় চুল এলোমেলো হচ্ছে। শুকনো গলায় ঢোক গিললো আদ্র। হাত বারিয়ে বেলার এলোমেলো চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো। বেলা ঘুমিয়ে গেছে। গালে কান্নার অবশিষ্ট জল দাগ হয়ে এঁটে আছে। আদ্র বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মোছার চেষ্টা করলো। গেল না। ব্যর্থ নিশ্বাস ফেলে বেলাকে কোলে তুলে নিলো। সোফা ছেড়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো খুব সাবধানে, ভীষণ যতনে। নিজে শুয়ে পরলো তার ঠিক পাশে। তাকিয়ে রইলো নিশ্চুপভাবে। মেয়েটাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। তেঁতো তেঁতো লাগছে সব। তিক্ত অনুভূতিতে বক্ষস্থল চিনচিন করছে। সময়টা এত দ্রুত এগোচ্ছে। কেন এগোচ্ছে? একটু ধীর ভাবে চলা যায় না?


-


জাতীয় সংসদ ভবন। আদ্রর বাবার চিরস্বপ্নের জায়গা। বাবার সবসময়কার বসার স্থানটা! আদ্র ফোনে দেখেছিলো একবার। এখানে দাঁড়িয়েই তো নিজের বক্তব্য দিতেন তিনি। আজ আদ্র বসেছে সেখানে। স্পর্শ করছে। যেন, যেন বাবাকে ধরেছে। বুক কাঁপলো। কেমন করে যেন নিশ্বাস ফেললো সে। সময়টা ছিল বর্ণাতীত। মাননীয় স্পিকার বসে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কিছু বলার জন্য। আদ্র নিজেকে সামলালো। বাবার মতোই মুখটা কঠিন করে একের পর এক হৃদয় কাঁপানো বক্তব্যের প্রস্তুতি নিলো নিপুণতার সঙ্গে।


-


সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে আদ্র সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলো। মুজিব কোর্ট খুলে পাঞ্চাবীর প্রথম কয়েকটা বোতাম খুলে রাখলো। সীটে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো। ক্লান্ত কণ্ঠস্বরে বললো, "গাড়ি সোজা কুমিল্লায় নাও আকিব। এখানে আর একটা দিনও থাকা সম্ভব না।"


আকিব গাড়ি চালু করলো না। চুপসানো ভঙ্গিতে বসে আছে ড্রাইভিং সীটে। এসির মাঝেও প্রচন্ড ঘামছে শরীর। কাঁপছে। আদ্র কপাল কুঁচকালো। বিরক্ত কণ্ঠে আবার বললো, 

---"কি সমস্যা আকিব? গাড়ি ছাড়ছো না কেন?"


ওপাশ থেকে কোনোরুপ উত্তর নেই। আদ্র নেত্রজোড়া উন্মুক্ত করলো। আকিবকে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো, "কি হয়েছে আকিব? কাঁপছো কেন?"

---"ভাই-- আসলে-- ভাবী-- আমি--"


এটুকু কথা বলতেই মিনিটখানেক লাগিয়ে দিয়েছে আকিব। আদ্রর বিরক্তির মাত্রা বাড়লো। গম্ভীর গলায় বললো, 

---"ঠিক ভাবে কথা বলো আকিব।"

---"আসলে, ভাবী-- ভাবীর ফোন থেকে কল এসেছিলো। উনি, উনার--।"


আদ্র ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো। শান্ত চোখে তাকালো,

---"এভাবে কথা বলছো কেন আকিব? ভালো ভাবে, একেবারে কথা বলো।"

---"ভাই, ভাবীর মুখে কে যেন এসিড ছুঁড়ে মারছে। অবস্থা ভালো না।"


একদমে, চোখ,মুখ খিঁচে বলে উঠলো আকিব। আদ্র স্তদ্ধ হলো। থমকালো দৃষ্টির চঞ্চলতা। বুকে ছুঁড়ির আঘাত স্পষ্ট অনুভূত হলো কি দারুণ ভাবে! আদ্র বিশ্বাস করে নিলো। বেলাকে নিয়ে অনতত মিথ্যা বলবে না আকিব। এমন মজা তো নয়ই। 

কণ্ঠ নড়বড়ে হওয়ার আগেই অস্বাভাবিক শীতল গলায় বললো,

---"কে করেছে কাজটা?"

আকিব ভীতু আঁখিজোড়া মেলে ধরলো,

---"জানি না ভাই। আয়াজ ভাই একটু আগে কল করেছিলেন। তিনি নাকি তখন ভাবীকে নিতে এসেছিলেন ভার্সিটিতে। রাস্তায়-- আসার সময় বাইকে করে দুজন ছেলে এসিড ছুঁড়ে মারে। ভাবীর চে-হা--রার একপাশ জ্বলে গেছে। আয়াজ ভাইয়ের হাতেও--।"

কথা শেষ হলো না। আদ্র আবারও বললো,

---"কখন হয়েছে এসব? আমাকে জানানো হয়নি কেন?"

---"আপনি সংসদে ছিলেন। আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি।"


সঙ্গে সঙ্গে প্রলংকারী হুঙ্কার ছাঁড়লো আদ্র। বজ্রকণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো, "আমি বিরক্ত হবো? এত বিশ্রী ভাবনা কেন তোমার? গাড়ি চালাও। এক্ষুণি! বসে থাকতে রেখেছি তোমাকে?"


গাড়ি চলতে শুরু করলো পরমুহুর্তেই।


-


কেবিনে জানালা আছে। অথচ বন্ধ করে রেখেছে কেউ। কৃত্রিম বৈদ্যুতিক বাতি সারাক্ষণ জ্বলে থাকে। মাথার ওপর ফ্যান চলছে ঠিকই, কিন্তু নিজের শীতল স্পর্শে কারো হৃদয় ছুঁতে পারছে না। দোলা দিয়ে উঠছে না মন। বিষাক্ত হয়ে আছে। হাসপাতালে পৌঁছাতে বেশি সময় নিলো না আদ্র। কেবিনের সামনে সারি করে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই। আয়াজকে এককোণে দেখা যাচ্ছে। বাহুর অংশ ব্যান্ডেজ করা। তাকে জড়িয়ে ধরে অবিশ্রান্ত কাঁদছেন রেখা। আদ্রকে দেখতে পেয়ে ছুঁটে এলেন। আচমকা চড় মেরে দিলেন ডান গালে। আদ্র হতবাক, বিমূঢ়। চোয়াল শক্ত। রেখা কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে উঠলেন,

---"তোকে বলেছিলাম না মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে? কেন নষ্ট করলি মেয়েটার জীবন? কি ক্ষতি করেছিল ও তোর? খুশি লাগছে না এখন? যা চেয়েছিস, তা তো পেয়েই গেছিস। এখন আবার কেন এসেছিস এখানে? চলে যা। বেলার সঙ্গে দেখা করতে দিবো না আমি।"

জবাবহীন আদ্র। কঠিন, রুষ্ট নেত্রে চেয়ে আছে মাত্র। 

সায়েদ সাহেব ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন। কাতর স্বরে আর্তনাদ করে উঠলেন, "আমার মেয়েটার সাথে এসব কি হয়ে গেল বাবা? তুমি তো বলেছিলে ওর কোনো ক্ষতি হতে দেবে না। তাহলে? এভাবে কথা ভেঙ্গে দিলে কেন? নাকি আমারই ভুল ছিল।"


কণ্ঠের রেশ বাড়ছে। কান্নার অশেষ শব্দ বিরক্ত করছে অন্যান্যদের। একজন নার্স সরঞ্জাম হাতে এদিক দিয়েই যাচ্ছিলেন। যাওয়ার আগে একবার বিরক্ত কণ্ঠে বললেন,

---"প্লিজ আওয়াজ কম করুন আপনারা। এটা হস্পিটাল। অন্যদের সমস্যা হচ্ছে। বোঝার চেষ্টা করুন।"

আয়াজ সামলে বললো, "বুঝতে পেরেছি। আর আওয়াজ হবে না।"


তারপর আবার আদ্রর দিকে চেয়ে বললো, "ভাবীর এখনো জ্ঞান ফেরেনি ভাইয়া। অপারেশন হয়েছে মাত্র। তুই কি দেখা করতে যাবি?"

আদ্র নিশ্চুপ। এক এক করে সবার দিকে তাকালো। সবার চোখেই তার জন্য রাগ, অসন্তুষ্টি ভাব। ক্ষীণ দূরে প্রভা বেগমকে দেখা যাচ্ছে। দরজার গোল কাঁচটার দিকে দৃষ্টি রেখে ফুঁপিয়ে, ফুঁপিয়ে কাঁদছেন তিনি। আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন। ছোট্ট বিহান মাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

আদ্র আর পাদুটো সামনে আগাতে চাইলো না। বেলাকে ওভাবে দেখার সাহস নিমিষেই হারিয়ে ফেললো। সে দূর্বল হয়ে পরবে নাহয়। থমথমে গলায় আকিবকে বললো,

---"গাড়ি বের করো আকিব।"

আয়াজ বিস্মিত হলো, "ভাই? বেলার কাছে যাবি না?"


আদ্র গটগট পায়ে চলে যেতে লাগলো। পিছু ফিরে তাকালো না। চোখটা জ্বলছে। লাল হয়ে গেছে শিরাগুলো। অসহায় লাগছে। বিশ্রী রকমের অসহায়।


-


জ্ঞান ফিরে আদ্রকে সর্বত্র খুঁজেছিল বেলা। অথচ সেটা যেন এখন বাবুন হয়ে চাঁদ পাওয়ার মতো ব্যাপার। ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলেও কাঁদতে পারে না বেলা। সারাক্ষণ মৃত্যু যন্ত্রণা হয় গালের চামড়ায়। ছটফট করে সে। দিন বেরিয়ে যায় কত! আদ্র আসে না। 

ব্যান্ডেজ খোলার পরও তাকে কেউ আয়না দেখতে দেয় না। বাম চোখ ঝাপসা ঝাপসা লাগে। চোখ সহ একপাশ জ্বলে গেছে তো! বেলা বুঝে। সে আর আগের মতো সুন্দর নেই। তাকে দেখে যে কেউ ভয় পাবে। তার যখন জ্ঞান ছিলো না, আদ্র কি দেখতে এসেছিলো তাকে? ভয় পেয়ে কি একেবারে ছেড়ে চলে গেছে? বেলার কান্না পায়। কাঁদতে পারে না আগাম যন্ত্রণার কথা ভেবে। কান্না আটকে রাখাও যে কি কষ্টের! আদ্রর তো এই কান্নাই বেশি পছন্দের ছিল। অথচ, সে কাঁদতে পারবে না।


-


মাঠ জুড়ে হইচই ভাব। আদ্র ইয়ানিদ মঞ্চে উঠেছে। রমরমে ভাব সর্বত্রে। সেই গম্ভীর কণ্ঠের আওয়াজটা হঠাৎ বেজে উঠলো কানে,

---"আমি আদ্র ইয়ানিদ। কুমিল্লা জেলার সদ্য হওয়া এমপি।"


হইচই দ্বিগুণ হলো। প্লাস্টিকের চেয়ার ছেড়ে সবাই উঠে দাঁড়ালো। আদ্র প্রখর দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখলো সবাইকে। শরীরে কাঁটা দেওয়ার মতো অসাধারণ কণ্ঠে আবারও বলতে শুরু করলো,

---"আমি আদ্র ইয়ানিদ। আমার জন্মস্থান, প্রিয় জেলা কুমিল্লার সদ্য এমপি। আমার বাবাও কিন্তু একজন এমপি ছিলেন। নাম শুনেছেন কখনো? আবদুর ইয়ানিদ। আমার রাজনীতিতে আসার মূল কারণ। কেন বলুন তো? বাবা রাজনীতি করে বলে ছেলের শরীরেও রাজনীতির রক্ত বইছে, ব্যাপারটা অনেকটা তেমন মনে হচ্ছে না? কিন্তু রাজনীতির প্রতি আমার একটুও আগ্রহ নেই। আমি শুধু মাত্র আমার বাবার জন্যে আজ এই প্লেটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি।

আমার বয়স খুব কম ছিল। নবম শ্রেণিতে পড়তাম। বাবা রাজনীতির জন্য আমাদের ঠিকভাবে সময় দিতেন না। বাসায়ও আসতেন না মাঝে মাঝে। তার প্রাণ ছিল এই পেশা। সময় দিতে না পারার ব্যর্থতাকে আমি আমার বাবার সাফল্য মনে করতাম। খুব ভালোবাসতাম বাবাকে। তিনিও বাসতেন। সময় পেলেই রাজনীতির খুটিনাটি জানাতেন। অথচ এই রাজনীতি তাকে কি দিলো? বিশ্বাসঘাতকতা। অনৈতিক কাজ করতে রাজী না হওয়ায় মেরে ফেললো। আমি তাদের নিচু দেখাতেই রাজনীতিতে এসেছিলাম। দেখিয়েছি। শান্তি পাইনি।


আপনারা হয়তো জানেন না, আমার বিয়ে হয়েছে আরও একমাস আগে। বেলা আহসান মেয়েটার নাম। ওকে আমি খুব ভালোবাসি। জানোয়ারগুলো আমার স্ত্রীকেও ছাড়ে নি। এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে ওর সুন্দর মুখটা। সাহসের অভাবে আমি ওর সামনে যাইনি। আমার কারণে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ও। আমি কিভাবে দেখবো? আমার মা কিন্তু ওর সাথে আমার বিয়ে দিতে চায়নি। মা তো! বুঝে গিয়েছিলেন এমন কিছুই ঘটবে।


আমি এমপি আদ্র বলছি, যারা আমাকে ভালোবেসে ফোট দিয়েছেন, তাদের আমি নিরাশ করবো না। এমপি হওয়ার আগে এবং পরে আপনাদের সবাইকে যা যা করে দেওয়ার কথা দিয়েছিলাম, তা সম্পূর্ণ করেই ছাড়বো। পরিশেষে প্রিয় জনগণ এবং দেশকে স্বাক্ষী রেখে ঘোষণা দিচ্ছি, আমি কিছুদিনের মাঝেই আমার পদত্যাগ করবো। রাজনীতি আমার জন্য না। মরিচিকার পেছনে ছুটতে চাইনা আমি।"


আদ্র থামে। মাঠে হইহই ভাব নেই। সবাই অস্বাভাবিক চুপচাপ। আদ্র একবার তাকিয়ে মঞ্চ হতে নেমে পরলো। তৎক্ষণাৎ কি যেন হলো। করতালির আওয়াজ যেন পুরো জেলা কাঁপিয়ে তুললো। ভীষণ ভাবে, অকৃত্রিমতা নিয়ে।


গাড়ি চলছে। আকিব হাঁসফাঁস করছে। জানালার কাঁচগুলো লাগিয়ে দিতে বাটন চাপ দিলো সে। মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করলো, "ভাবীর ওখানটায় নিয়ে যাবো ভাই?"

আদ্রর ছোট্ট উত্তর, "হুম।"

আকিব আবার বললো, "একটা কথা ছিল ভাই।"


আদ্র এবার কিছু বলে না। ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে রয়। নীরবতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে জড়তা নিয়ে বলে সে,

---"ইখতিয়ারের দেওয়া টাকাগুলো সব ড্রাগ আসক্তদের চিকিৎসার জন্য ওদের পরিবারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কিছু টাকা রয়ে গেছে। ওগুলো কি করবো ভাই?"

---"তোমার না বউয়ের ডেলিভারি কয়েকদিন পর? টাকা আছে সাথে?" গম্ভীর কণ্ঠে জানতে চাইলো আদ্র। আকিব অপ্রস্তুত হলো। থতমত খেয়ে মাথা চুলকালো। আমতা আমতা স্বরে বললো,

---"আছে কিছু জমানো। হয়ে যাবে ভাই।"

---"কত টাকা জমিয়েছ?"

---"আট হাজার।"

---"অনেক জমিয়েছ। যে টাকা রয়ে গেছে ওগুলো প্রয়োজনে খরচ করবে। বাড়তি কথা শুনতে চাই না।"


-


টিভি চলছে অনর্গল। ইখতিয়ারের পাগল হওয়ার সংবাদ বেশ জমজমাট করে দেখানো হচ্ছে খবরে। ভারসম্যহীন হয়ে রাস্তায় নাকি পরে থাকে এখন। তার দলের প্রায় লোক আদালতে স্বাক্ষীও দিয়েছে ইখতিয়ারের বিরুদ্ধে। ধরা পরেছে অনেকেই। যারা বেলাকে এসিড মেরেছে তারাও। এসি'ড ছোঁড়ার সময় ছেলেগুলোকে একদম সামনে থেকে দেখেছিল বেলা। টিভিতেও সেই বিভীষিকাময় বিভৎস চেহারা দেখাচ্ছে।


হঠাৎ টিভির পর্দায় আদ্রর মুখশ্রী ভেসে উঠলো। কতদিন পর মানুষটাকে দেখল সে! একয়দিনে চেহারা ম্লান হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। বেলা চশমা খুলে ফেললো। টিভি বন্ধ করে দিলো তৎক্ষণাৎ। লোকটাকে সে দেখবে না। এমন স্বার্থপর লোককে ভালোবাসে না সে। দূরে চলে যাক। আর কখনো যেন সামনে না আসুক। কখনো না।


তার ইচ্ছা পূরণ হলো না মোটেও। খট করে কেবিনের দরজা খুলে গেল। সুঠাম দেহের কে যেন এগিয়ে এলো। বেলা ঝাপসা দেখছে। আবারও হাতড়াতে হাতড়াতে চশমা খুঁজলো সে। পরলো। স্বার্থপর আদ্রকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো। মন, মস্তিষ্কের বেহায়া কথায় কান দিলো না।

আদ্র আস্তে করে বসলো তার পাশে। ঝলসানো মুখটা চোখে জল জড়ো করে দিলো। ভার ভার লাগলো নিজেকে। সে কি কখনো এতটা অসহায় বোধ করেছিল? বাবা মৃত্যুর সময়ও তো কি কঠিন ভাবে সামলে নিয়েছিল নিজেকে। তবে আজ পারছে না কেন? আদ্র সময় নিলো। গভীর নিশ্বাস নিয়ে ডাকলো,

---"বেলা? দেখো, আমি এসেছি। তাকাবে না?"


বেলা তাকালো না। শক্ত গলায় আওড়ালো, "কেন এসেছেন? কারো দয়া চাই না আমার। চলে যান।"

---"আমি তোমার ওপর দয়া করছি না বেলা। তুমি আমার ওপর একটু দয়া করো। এদিকে তাকাও।"

বেলা শুনলো না। ক্রমশই নিশ্বাস ঘন হচ্ছে তার। কষ্ট হচ্ছে। ভাঙ্গা গলায় সে জোর দিয়ে চেঁচাতে চাইলো,

---"আমি আপনার মুখ দেখতে চাইনা। চলে যান এখান থেকে। এতদিন পর কেন দরদ দেখাতে এসেছেন? নিশ্চই মুক্তি চাওয়ার জন্য। ঠিকাছে, দিয়ে দেব মুক্তি।"


পরিবেশে গুমোট ভাব। নিশ্চল সব। আদ্র নিষ্প্রভ চোখে নির্দয় বেলার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরলো গাঢ় ভাবে। বেলা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোড়াছোড়ি করলো। চেঁচালো। আদ্র শক্ত হয়েই রইলো। যা কিছু হোক, বেলাকে ছাড়বে না সে। একদমই না। দূর্বল বেলা একটু পরই শান্ত হয়ে গেল। প্রাণহীন গলায় অনুরোধ করলো,

---"এমন কেন করছেন আদ্র? চলে যান। আমি নষ্ট হয়ে গেছি। আমি আর আগের মতো সুন্দর নেই। সবাই ভয়ে দূরে দূরে চলে যায়। আয়না দেখায় না। কাঁদতেও পারি না। যন্ত্রণায় কান্না আসতে চায়না। আমি-- আমি আর আগের মতো নেই আদ্র। সবার অপ্রিয় হয়ে গেছি। কেউ আর ভালোবাসে না।"


বেলার মাথায় হাত বুলালো আদ্র। শব্দজোট খুলে কণ্ঠকে মোলায়েম করে বললো, "হুশ! শান্ত হও। কে বলেছে তুমি অপ্রিয় হয়ে গেছ? তুমি তো সবসময়ের জন্যই আমার প্রিয় বেলা।"

সিক্ত গলায় প্রতিবাদ করলো বেলা, "মিথ্যে বলছেন আপনি। আপনিও আমাকে ভালোবাসেন না আর। নয়তো আমার মুখ ঝলসে যাওয়ার পরে আর আসেন নি কেন?"

আদ্র তপ্ত নিশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো, "কে বলেছে বেলা? আমি তো রোজই আসতাম। তুমিই ঘুমিয়ে থাকতে।"


বেলার ভালো গাল বেয়ে জল গড়ালো। ঝলসানো চোখটা সময় নিলো খুব। বাজে শিরশিরে অনুভূতি নিয়ে, নেত্র তরতর করে কাঁপিয়ে একটুখানি জল বের হলো। সেই পানির দিকে চেয়ে রইলো আদ্র। হুট করে ঝুঁকালো মাথা। ঝলসে লাল হওয়া ভয়ংকর চামড়ায় অধর ছোঁয়ালো দৃঢ় ভাবে। ফিসফিস করে বললো, 

---"আমি তোমার চেহারাকে ভালোবাসিনি বেলা।"


কান্নার তেজ বাড়লো। করুণ কণ্ঠে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো বেলা। আদ্রর থুতনির ওপর কপাল ঠেকালো। আদ্র মুচকি হাসলো। মলিন স্বর শোনা গেল, 

---"কাঁদে না বেলা। তোমার না কষ্ট হয়?"


বেলা শুনে না। চরম অবাধ্য হয়ে বেহায়া হয়। নিজ ইচ্ছাতে অধরে অধর মিলিয়ে দেয়। সময় গড়ায়। গড়াতেই থাকে। খেয়াল থাকে না কারোরই। এর চেয়ে সুখময় অনুভূতি কি আর আছে। প্রশান্তি কি আর আছে? আদ্রর তো জানা নেই।


______________


সমাপ্ত~

ঈশানুর তাসমিয়া মীরা 


[প্রিয় বেলা- এই গল্পের নামের পেছনে রয়েছে বেলাকে পাওয়ার আদ্রর আকাঙ্ক্ষা, প্রেমিক পুরুষের একদম শেষ সীমান্তে চলে যাওয়ার একটি মাত্র গল্প। বেলার অপ্রকাশিত ভালোবাসা আর রাজনীতির একটুখানি করুণ পরিণতি। এই যা। অনেকদিন পর মন মতো এন্ডিং দিলাম। প্রচন্ড মনে পরবে আপনাদের। আমার সকল পাঠকদের মন থেকে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা।❤]