#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ৪
রানি হাপাতে হাপাতে সামিয়ার কাছে যায়। সামিয়া তাকে দেখে অবাক হয়।
"কিরে স্যার তোকে কেন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল? আর এমন হাপাচ্ছিস কেন?"
"বইন তাড়াতাড়ি চল না হলে রাক্ষস টা আমায় খেয়ে ফেলবে তাড়াতাড়ি চল।"
"মানে কে তোকে খেয়ে ফেলবে?"
"আগে চল তো।"
রানি সামিয়ার হাত টেনে নিয়ে যেতে থাকে। গেটের কাছে আসতেই রিক কে দেখতে পায়।
এই একমাত্র ছেলে যাকে রানি এত এত কথা শুনায় তবুও সে রানির পিছু ছাড়ে না। রানির খুব বিরক্ত হয় ওকে দেখলে। এত বেহায়া মানুষ এর আগে সে একটাও দেখেনি। রিক খুব বাজে আর বখাটেও বটে। না হলে কেউ অপমান করলেও বারবার পিছু ঘুরে?
"হাই রানি। মাই ড্রারলিং সরি কাল আসতে পাড়ি নি। একটু বিজি ছিলাম।"
রানি সেই কথায় পাত্তা না দিয়ে সামিয়া কে বলল,
"সামু তাড়াতাড়ি চল।"
তাদের পথ আটকে রিক আবার বলে,
"আরে আরে যাচ্ছো কোথায়? চলো না একটু কফি খাই। তোমাকে কাল না দেখতে পেয়ে মন আনচান করছিল। আর তুমি আমার কষ্ট টা না বুঝে চলে যাচ্ছো?"
"আপনার মতো কুত্তা আর আমি একটাও দেখিনি। রাস্তার কুত্তা কেও পা দিয়ে লাথি দিলে সে আবার ফিরে আসতে ভয় পায়। আর আপনি সেই কুত্তাও নন। যতসব ফালতু খারাপ লোক।"
"কি করব বলো? তোমাকে না দেখে যে থাকতে পাড়ি না।"
"আপনি কুত্তার সাথে গলায় গলাগলি করে বসে থাকুন এটাই আপনাকে মানাবে। মিডিল ক্লাস লোক কোথাকার "
রানি আর কিছু না বলে সামিয়া কে নিয়ে রাগে চলে যায়।
দূর থেকে এক জোড়া চোখ আবার রানির দিকে তাকিয়ে ছিল। এবার আর তার চোখে ছিল না মুগ্ধতা।
শুধু ছিল রাগ আর ক্ষোভ।
বিকেলে রানি ব্যালকুনিতে যায়।
সেখানে থাকা গাছ গুলিতে পানি দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু আজ আর এক জোড়া চোখ মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখল না।
রাতে খেয়ে রানি তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে।
একটু পর তার রুমে তার বাবা আসে।
"রানি রানি মা।"
রানি তখন ঘুমিয়ে গিয়েছে। বাবা এসে মুচকি হেসে তার গায়ের উপর চাদর টেনে দেয়। তারপর লাইট টা অফ করে চলে যায়। এসেছিল মেয়ের সাথে একটু কথা বলবে কিন্তু ঘুম পাগলি রানির জন্যে তা আর হলো না। অজ্ঞাত তিনি চলেই গেলেন।
সকালে উঠে সামিয়া আর রানি কলেজের জন্যে রওনা দেয়।
গেটের ভেতরে গেলেই কোথা থেকে দৌড়ে রিক আসে। হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে।
সামিয়া আর রানি বেশ অবাক হয়।
আবার প্রোপজ ট্রোপজ করে বসবে নাকি?
পাশ থেকে শুষ্ক নিজের গাড়ির চাবি আঙ্গুলের ঢগায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অফিস রুমে যাচ্ছিল। সবে মাত্র গাড়ি পার্ক করে সে এসেছে।
চলে যেয়েও আবার রানির কাছে ফিরে আসে।
"হোয়াট হ্যাপেন?"
রিক বিমড়ি খেয়ে শুষ্কের পায়ে পড়ে,
"স্যার আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আর হবে না।"
"মানে? কিছু বুঝলাম না।"
"স্যার আমি রানি কে মানে উনাকে প্রতিদিন বিরক্ত করতাম। আর এমন করব না আমি। মাফ চাইছি।"
"এখানে আমার কাছে মাফ চাওয়ার কি আছে? যাকে এতদিন বিরক্ত করেছিস তার কাছে মাফ চা।"
রিক তড়িঘড়ি করে রানির পায়ে হাত দিতে চাইলে রানি এক হাত দূরে সরে যায়।
"আমায় মাফ করে দিন। আমায় মাফ করে দিন। এমন আর হবে না।"
"আরে আরে করছেন কি? মাফ চাইতে হবে না। শুধু আর বিরক্ত না করলেই চলবে।"
"আমি আর আপনাকে বিরক্ত করব না। আমায় শেষে বারের মতো মাফ করে দিন।"
" সত্যি তো? মনে থাকে যেন। ঠিক আছে আপনি যান।"
রিক একবার শুষ্কের দিকে তাকিয়ে চলে যায় আস্তে আস্তে।
রানির সে কি লাফালাফি।
"ইয়ে আমাকে আজ থেকে আর কেউ বিরক্ত করবে না। ইয়ে কি মজা।"
রানি বেশ খুশি হয়ে সামিয়া কে জড়িয়ে ধরে।
পাশ ফিরে শুষ্কেও জড়িয়ে ধরতে চায়। কিন্তু তার অনেক টা কাছে গিয়ে রানি তার প্রসারিত হাত গুটিয়ে নেয়।
ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
"স সরি স্যার"
"মন্দও ছিল না।"
শুষ্ক রানির দিকে তাকিয়ে এক গালে হেসে চলে যায়। রানি হা করে দেখছিল সেই হাসি। কি সুন্দর কত টা মায়াময় সে হাসি।
রানি খুশি তে আবার লাফালাফি শুরু করে।
সামিয়া তখন বলে উঠে,
"রানি এটা তোর বা আমার বেডরুম না। কলেজ এটা।"
রানি নিজেকে সামলে আশপাশ তাকায়। তারপর সামিয়া কে নিয়ে ক্লাসে চলে যায়।
প্রতিদিনের মতো শুষ্ক আজো প্রথমে ক্লাসে এলো। সবাই কে ক্লাস করায়। কিছু টপিক হাতে কলমে বুঝিয়ে দেয়। ক্লাস শেষে আজো রানি কে তার অফিস যেতে বলে।
"আসব?"
"হুম কাম।"
"স্যার আমি আপনাকে আবারো বলেছি আজো বলছি প্লিজ আমাকে এই ভাবে আর ডেকে পাঠাবেন না।"
"আমি কেন ডাকব। কেন ডাকব না তা তোমাকে বলে করতে হবে নাকি? অযথা কথা বাড়াচ্ছো রানি।"
"স্যার এই গুলি সবাই ভালো চোখে নেয় না।"
"ও রেয়লি? তো কোন গুলি ভালো চোখে নেয়? তোমাকে বিরক্ত করা গুলি? কই এত দিন সে কলেজের সামনে তোমাকে ও বিরক্ত করেছে তাতে তো তারা কিছু বলেনি। তারমানে ও গুলি ওরা ভালো চোখেই নিয়েছে। তাই কিছু বলেওনি করেওনি।"
"...
"তোমাকে আমি এমনি এমনি তো ডেকেও পাঠাই না। কিছু টপিকও বুঝিয়ে দেই।"
"....
"এই কথাটা যেন আর মুখে না আসে। বসো।"
"...
"কি হলো?"
"হুম।"
রানি গিয়ে চেয়ারে বসে।
শুষ্ক পাঁচ মিনিট রানির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর পড়া শুরু করে।
রানিও মন দিয়ে পড়ে।
যাওয়ার আগে রানি কে পিছু ডেকে বলে,
"রানি আমার কথার অবাধ্য হইও না ফলসরূপ খুব ভালো হবে না।"
রানি চলে যায়। যেতে যেতে ভাবতে থাকে,
"রাজ চৌধুরীর বিষয়ে স্যার কে কিছু জিজ্ঞাস করব? যদি উনি কিছু জানে। না না থাক। কি না কি ভাববে।"
বাকি আরেক টা ক্লাস করে রানি আর সামিয়া বসায় চলে যায়।
আজ মন টাও ভালো লাগছে। রিক নামক বিরক্ত তার এখন থেকে দূর হলো। কিন্তু যাকে এত বকার পরেও কোনো কাজ হলো না। সে নিজ থেকে এসে এমন ভাবে মাফ চাইল কেন? বিষয়টা রানি ভেবে উঠতে পারে না। তবুও মনে মনে খুশি হয়।
চলবে....
(দুই চার লাইন গঠনমূলক মন্তব্য করুন।)
0 Comments:
Post a Comment