গল্প গ্যাংস্টার পর্ব ৩

 #গ্যাংস্টার

#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)

পর্ব : ৩


বেশ কিছু সময় দুজনে এভাবেই বসেছিল। শুষ্কের চোখে ছিল রানির মুগ্ধতা আর রানির শুধু ছিল বিরক্তি।


তারপর শুষ্ক রানি কে জোর করে কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিল। তারপর রানি কে ছুটি দিয়ে দিল। যাওয়ার আগে রানি কে বলে দিল,

"এমন ভুল যেন আর না হয়। এবং কারো জন্যে এত অপেক্ষার পাহাড় পাড়ি না দিয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবো।"


শুষ্কের কথায় রানি কোনো পাত্তা দিল না তা সে বেশ বুঝেছে। 


রানি একটু নাক ফুলিয়ে চলে গেল। 

যেতে যেতে বলতে লাগল,

"লোকটা যেমনি হোক মন্দ পড়ায় না। দূর রানি তুই এত ভাবছিস কেন? তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে ঘুম দে। রাজ কে নিয়ে কল্পনা করলেও তোর মন মাথা দুটোই ঠিক থাকবে।"


রানি তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে যায়। আজ একটু শান্তি তেই আসতে পেরেছে বখাটে ছেলে টাকে আজ আর দেখা যায়নি।


রানি বাসায় এসেই শাওয়ার নিতে চলে যায়। 


তার মা সিনথিয়া এসে খাওয়ার জন্যে অনেক ডেকে গেছে কিন্তু সে মানা করে দিয়েছে। যখন তার সময় হবে তখন সে খেয়ে নিবে। 


শাওয়ার নিয়ে ভিজে চুল গুলি ছেড়ে সে ব্যালকুনিতে চলে যায়। 


মুক্ত বাতাসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। 

নিচ থেকে তার দিকে দুটি চোখ নজর দিচ্ছে। এক জোড়া চোখ লুকিয়ে থেকে তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। 


তারপর রানি নিজের রুমে চলে যায়। গিয়ে এক ঘুম দেয়। রাজ কে সে কল্পায় আঁকে।

ড্রিম বয় তার স্বপ্নেই থেকে গেল কবে যে সে সামনে আসবে তা রানির জানা নেই। কিন্তু তবুও কল্পনা জল্পনা করতে সে পিছু হাটে না। 


রাজ চৌধুরী বিখ্যাত বিজনেসম্যান। শুধু যে দেশ জুরে তার নাম তা নয়। বিদেশেও তার নাম ডাক প্রচুর। ইভেন বিশ্বের সেরা বিজনেসম্যানেও সে দ্বিতীয় স্থান কেড়ে নিয়েছে। বয়স তেমন নয় ২৮ বছর বয়সী এই ছেলে বিশ্বের মাঝে নামডাক তৈরি করে নিয়েছে। উদ্দাম সাহস চেষ্টা আর স্বপ্ন তাকে সেখানে নিয়ে পৌঁছেছে। এত নামডাক হলেও তাকে চেনার মতো মানুষের বড্ড অভাব। সে নিজের প্রাইভেসি নিয়ে চলে। মিডিয়ার সামনেও আসে না। কখনো কোনো ক্যামেরায় তাকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। সে কখন কোথায় কোন দেশে থাকে তা তার গার্ডরা ছাড়া কেউ জানে না। কানাঘুষা শুনা গেছে তাকে দেখতে কোনো প্রিন্সের চেয়ে কম নয়। এত বড় একজন ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মানুষ হয়েও সে সবার অগোচরে। তার নাম সবার মুখে তবে চোখে দেখা নয়। 


রানিও তাকে দেখেনি। যা শুধু নাম ডাকই শুনেছে। 


"মানুষের নিষিদ্ধ আর অদৃশ্য বিষয়ে প্রবল ঝুঁক বিদ্যমান।" রানিরও হয়েছে তাই। না দেখেই সে রাজে মশগুল। রাজ অন্তঃ প্রাণ তার। চোখে দেখেনি তবুও মারাত্মক এক ইচ্ছে মনে পোষন করে রেখেছে।


দেশের নাম করা এমন এক মানুষের সাথে সবারই তো দেখা করতে ইচ্ছে হয়। রানিও খুব করে হয়। 

সবাই নায়ক, খেলোয়াড় বা বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি কে পছন্দ করে। মনে মনে কত আশা করে। রানিও করে রাজ কে নিয়ে সেরা বিজনেসম্যান কে নিয়ে তারও অনেক স্বপ্ন কল্পনা জল্পনা আছে। রানি তো অনেক ছেলেকে রিজেক্ট করেছে। তারা দেখতেও যেমন ছিল প্রভাবশালীও ছিল। দেখতে তো সে রূপে কোনো অংশে কম নয়। যে কোনো ছেলের নজর কাড়া সৌন্দর্য তার। তবুও রানি তাদের সবাই কে মানা করে দিয়েছে। 


রানি তো মনে মনে ঠিকও করে নিয়েছে সে রাজ কে ছাড়া বিয়েই করবে না। দরকার হলে চিরকুমারী থাকবে। বিয়ের নামটাও শুনতে চায় না সে। 


বাবা বা মা কেউ বিয়ের কথা তুললে সে চিল্লায়ে বাসা মাথায় তুলে নেয়। যা মুখে আসে অদ্ভুত সব কথা বলে। নিজেকে রুমে আটকে রাখে। পরিস্থিতি ঠিক হলে আবার বদ্ধ ঘর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। 


বিকেলে ঘুম থেকে উঠলে তার মা তাকে খায়িয়ে দেয়। 


রাতে পড়া, ফেসবুকিং করে রানি ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে তার মা ঘুম থেকে ডেকে দিলে ফ্রেশ হয়ে কলেজে চলে যায়। 


রাস্তায় সামিয়া কে কল দেয়। রানির দেরি হয়ে যাওয়াতে সামিয়া কলেজের সামনে তার জন্যে অপেক্ষা করছে। 


রানি রিকশা ভাড়াটা দিয়ে নামতে নামতে বলল,

"তালগাছের মতো এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিস কেন? গেইট টা পাড় করলেই পারতি। ভাব দেখাচ্ছি যে তুই আমার জন্যে দাঁড়িয়ে আছিস।"

"আমি কি করব? তুই তো দেরি করে ঘুম থেকে উঠিস তাই.."

"থাক আর টেঙ্গরামাছের মতো ভাব দেখাতে হবে না। আমার ঘুম নিয়ে এত মরিস কেন বুঝি না। দেখিস তুই ঘুম গাধা এক জামাই পাবি।"

"কি?"

"তোর মাথা তাড়াতাড়ি চল।"


সামিয়া আর কথা না বাড়িয়ে দুজনে কলেজের ভেতর ঢুকে গেল। 


শুষ্ক ক্লাসে আসতেই রানি না পেড়ে সবার সাথে উঠে দাঁড়ায়। 


শুষ্ক সবাই কে কিছু ইমপটেন্ট বিষয় বুঝিয়ে দেয়। বিদেশ থেকে কোর্স শেষ করে এসেছে কি এমনি এমনি?


ক্লাস শেষের এক পর্যায় শুষ্ক রানির সামনে যায়। 

"অফিস রুমে এসো দরকার আছে।"

এটা বলেই চলে যায়। আর সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে রানি দিকে। 


রানি এত না ভেবে শুষ্কের কথায় তার কাছে যায়। 

"আসব?"

"হুম।"

"আপনি প্লিজ আমাকে আর ক্লাসের সবার সামনে এমন করে অফিস আসতে বলবে না।"

"কেন?"

"এমনি।।"

"কেন কেউ কিছু বলেছে?"

"কেউ না বললেও ভাবে।"


শুষ্ক নিজের ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়। তার কাছে গিয়ে বলে,

"কি ভাবে?"

".....

"কি হলো বলো।"

"জা জানি না।"

"তাহলে আমি যখন বলব তখন আসবে তুমি।"

"পারব না।"


বলে রানি চলে যেতে নিলে শুষ্ক তার হাত ধরে থামায়। হেঁচকা টানে নিজের কাছে আনে। 

"আমি কোনো রকম না শুনতে অভ্যস্ত নই। আমার ডিকশনারি তে 'না' নেই। সো.."

"সো কি?"

"প্রশ্ন করছো আমায়?"

"আপনাকে আমি প্রশ্ন করতে যাবো কেন? ছাড়ুন।"


রানি একটু ঝাড়ি দিয়ে শুষ্কের হাতের আবদ্ধ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। 


শুষ্ক এবার রেগে রানির বাহু টেনে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরে। দাঁত কটমট করে বলে,

"না আমি প্রশ্ন শুনতে চাই। আর না আমার কথা না শুনা মানতে চাই। আমার রাগ উঠিও না। তাহলে তোমারই ক্ষতি হবে।"


শুষ্কের চোখ আর এমন ব্যবহারে রানি খুব ভয় পায়। গলা শুকিয়ে আসছে তার। ভয়ে বুক কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথাও বলতে পারছে না। 


শুষ্ক তাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের জায়গায় চলে যায়। 

"বসো।"

"....

রানি তখনো ওখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।

"ডেমেট হোয়াট ডিড আই টেল ইউ?

"...


শুষ্কের ধমকে রানি তাড়াতাড়ি করে চেয়ারে বসে। 


শুষ্ক টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস টা তার দিকে এগিয়ে দেয়। রানি টগটগ করে সব টা পানি খেয়ে ফেলে।


"ভেতর শুকিয়ে গিয়েছিল?"

"....

"আমার রাগ উঠিও না। আগুনের চেয়েও আমি কম নই। রাগ চলে আসলে ভেতরে আগুন জ্বলে। ফলে অপর মানুষ টা কে আমি সেই আগুনে নিক্ষেপ করি।"


শুষ্কের ধারালো অস্ত্রে মতো কথায় রানি কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভেতর আত্মা শুকিয়ে আসছে তার। 


শুষ্ক বেশ কিছু সময় রানির দিকে তাকিয়ে ছিল। আর রানি মাথা নিচু করে বসে ছিল। 


"শুনেছি ইকনোমিকসে তোমার বেশ ঝুঁক আছে। তুমি নাকি খুব পাঁকা। সব সময় ইকনোমিকসে টপ রেজাল্ট করো।"

"জ্বি।"

"বই বের করো।"

"হ্যাঁ।"

"বই বের করতে বললাম।"


শুষ্ক আরো কিছুক্ষণ রানি কে একা পড়ায়। তারপর যেতে বলে। 


রানি গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বের হতে থাকে। শুষ্ক আবার তাকে পেছন থেকে ডাকে। রানি সেখানে দাঁড়িয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে শুষ্কের দিকে তাকায়। 


"তোমার ফোন নাম্বার টা দাও তো।"


রানি আর দেরি না করে শুষ্কের এমন কথা শুনে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। এক দৌড়ে মাঠে চলে আসে। 


শুষ্ক সেখানে বসেই বলতে থাকে,

"ডেমেট হোয়াট হ্যাপেন? ওহ শীট।"


চলবে....


(নাইস নেক্সট ওয়াও কমেন্ট না করে এক দুই লাইন লিখে যান। না হলে বাদ দিন।)

0 Comments:

Post a Comment