গল্প রাজনীতি পর্ব ১১

 #রাজনীতি

#পর্ব_১১

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


প্রাপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আসাদ বলে , "তুমি আমার সেই ছাত্রী , যাকে আমি শিখিয়েছি সব নিজের হাতে । শিষ্য হয়ে গুরুকে তুমি মারবে কি শর্তে ? যদি করতে ভুল , তবে ক্ষমা পেতে বারংবার । তবে করেছো যে অন্যায় , তুমি'ই বলো সেটার কি ক্ষমা হয় ?"


প্রাপ্তি নির্বাক । বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে । আসাদ মুচকি হেসে অনন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো প্রাপ্তির সামনে থেকে । প্রাপ্তি নির্বাক তাকিয়ে আছে ওদের চলে যাবার দিকে । 


ক্যান্টিনে ঢুকে রাফিকে দেখে প্রাপ্তি ও'কে ডাক দিলো । প্রাপ্তির ডাকে সাড়া দিয়ে রাফি বলে , "হুম বলো !"


- "সময় হবে তোমার কাছে ?"


- "কেনো ?"


- "কিছু কথা ছিলো !"


- "হুম বলো না !"


- "এখানে নয় , ঐ দিকটা চলো !"


হাত দিয়ে ক্যান্টিনের পিছনের গেটের দিকে ইশারা করে বলে প্রাপ্তি ।


- "কেনো , এখানে বললে কি প্রবলেম ?"


- "এতো প্রশ্ন না করে , চলো প্লিজ !"


- "আচ্ছা চলো ।"


রাফি চলে যেতে নিলে , সিফাত প্রশ্ন করে , "কোথায় যাচ্ছিস ?"


- "এইতো একটু পিছনের গেটে যাচ্ছি !"


- "কেনো ?"


- "প্রাপ্তি নাকি কি বলবে তার জন্য !"


- "যা বলার এখানে বলতে বল , অন্য কোথাও যাবার প্রয়োজন নেই !"


- "প্রাপ্তির নাকি সমস্যা আছে এখানে । তোরা একটু বস আমি এক্ষুনি চলে আসবো !"


- "আমি কিন্তু বারন করছি রাফি !"


সিফাতের কথার তোয়াক্কা না করে রাফি চলে যায় প্রাপ্তির সাথে । পিছনের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাফি বলে , "হুম বলো , কি বলবে ?"


- "বলবো না করবো !"


- "মানে ?"


- "ওয়ান , টু , থ্রি ! সারপ্রাইজ !"


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ এবং অনন্যা ভার্সিটিতে ফিরে এসেছে । বাইক থেকে নেমে অনন্যা আসাদের হাতের উপরে হাত রেখে বলে , "থ্যাংকস , এতো সুন্দর একটা সময় আমাকে উপহার দেবার জন্য ।"


- শুধু থ্যাংকস ?"


- "তাহলে ?"


- "খিচুড়ি হলে মন্দ হতো না ।"


অনন্যা মুচকি হেসে বলে , "ওহ , এই ব্যাপার ? আচ্ছা ঠিক আছে , কালকে বানিয়ে আনবো !"


- "ওকে , তুমি ভিতরে যাও আমি বাইক রেখে আসছি ।"


- "একসাথেই যাই , সমস্যা নেই ।"


- "তাহলে একটু ওয়েট করো ।"


- "হুম ।"


আসাদ বাইক পার্ক করে এসে , "চলো !"


আসাদ এবং অনন্যা ক্যান্টিনে গিয়ে দেখে সিফাত এবং বাকিরা বসে আছে তবে রাফি নেই । সিফাতের কাছে জিজ্ঞেস করলে বলে , "রাফি তো প্রাপ্তির সাথে ক্যান্টিনের পিছনের গেটে গেছে ।"


- "কখন গেছে ?"


- "তা প্রায় এক ঘন্টার মতো হয়েছে ।"


- "পাগল নাকি তুই ? আটকাতে পারলি না ?"


- "আমি অনেকবার বলছি রাফিকে কিন্তু ও শোনেনি !"


- "শোনেনি বলে তুই নিশ্চিন্তে এখানে বসে আছিস , তাই তো ? তুই নিজেই আমাকে বললি সবকিছু আর এখন নিজেই এতো বড় ভুলটা কিভাবে করলি ?"


- "তুই এতো উত্তেজিত হচ্ছিস কেনো ? রাফির কিছু হবে না !"


- "বাহ , দারুণ বলেছিস তো !"


আসাদ ক্যান্টিন থেকে হন হন করে বেড়িয়ে গেলো । আসাদের পিছু পিছু বাকিরাও গেলো । পিছনের গেটের কাছে গিয়ে দেখে কেউ নেই । সম্পূর্ণ ভার্সিটি খুঁজেও রাফি এবং প্রাপ্তির কোনো হদিস পাওয়া গেলো না । নাম্বারও বন্ধ দেখাচ্ছে । আসাদ ক্ষিপ্র কন্ঠে সিফাতকে বলে , "রাফি কই ?"


- "এই একই প্রশ্ন তো আমারও !"


- "তুই থাকতে এটা কিভাবে হলো ? তোর কি আর একটু সবধান হওয়া উচিত ছিলো না ?"


অনন্যা আসাদের কাঁধে হাত রেখে শান্ত গলায় বলে , "একটু শান্ত হও , রাফি হয়তো প্রাপ্তির সাথে কথা বলে কোনো কাজে গেছে । কাজ শেষ হলে ফিরে আসবে ।"


- "কাজে গেলে ফোন বন্ধ কেনো ?"


- "নেটওয়ার্ক প্রবলেম হতে পারে না ?"


আসাদ আর কিছু না বলে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যায় । অনন্যাও গেলো পিছু পিছু । 


সিফাত বাকিদের চলে যেতে বলে নিজেও বের হয়ে যায় । 


-------------------------------------------------------------------------------------


সবাই বাসের জন্য অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার এক পাশে । যানজটের এই শহরে বাস কখন আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই । হঠাৎ ম্যানহলের ঢাকনা খুলে একজন লোক বেড়িয়ে আসলো । সবাই হাসতে হাসতে নাজেহাল । লোকটার পড়নে সাদা গেঞ্জি , কালো কোটি এবং কালো প্যান্ট । মাথায় ঘন কোঁকড়া চুল । হাসতে থাকা মানুষগুলোর সামনে গিয়ে লোকটা বলে , "এ তোমরা হাসতে আছো কিল্লোইগগা ?"


উত্তরে একটা লোক নিজের হাসির পরিমান ক্ষানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে , "সরকার এতো সুন্দর রাস্তা বানিয়ে দিলো , সেটা থাকতে আপনি ম্যানহলের ভিতরে কেনো ?"


- "আরে মিয়া , বোঝনা তো কিছু । খালি আমরে কও লিচু ! এতো যানজটের মইদ্দে রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে কবে যে গন্তব্যে পৌঁছামু হেয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নাই । হেল্লেইগা ম্যানহলের মইদ্দে দিয়া আইছি । মগবাজার দিয়া এইহানে আইছি মাত্র দশ মিনিটে । এইয়া যদি রাস্তা দিয়া অইতাম , হ্যালে দুই ঘন্টা লাগতো । যাউক , তোমরা খারাই থাহো । মোর কাম আছে , মুই যাই ।"


কিছুটা দূর আগাতেই ফোনটা বেজে ওঠে । কল রিসিভ করে বলে , "হ , ভাইগনা কও !"


- "কোথায় তুমি ?"


- "মুই তো শাহাবাগ আইছেলাম ।"


- "এখন , শাহাবাগ কেনো ?"


- "বোঝো না কেয়া আইছি ?"


- "সারাদিন ঐ বাল নিয়া'ই থাকো । কোথায় কি হয় তার খবর তো রাখো না !"


- "কি অইছে ভাইগনা ? এতো চেইত্তা আছো কিল্লোইগা ?"


- "রাফির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না । খোঁজ লাগাও , আজকের মধ্যে ও'কে আমার চাই !"


- "আচ্ছা , মুই দেখতে আছি । তুই চিন্তা করিস না !"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ১০

 #রাজনীতি

#পর্ব_১০

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


দিনটা ভালোই কাটলো আসাদের । সারদিনের মাঝে প্রাপ্তির কথা একটি বারের জন্যও মাথায় আসেনি । হয়তো আসতে দেয়নি । হয়তো , খেলার মোড় ঘুরাতে চাচ্ছে আসাদ । 


-------------------------------------------------------------------------------------


পরদিন সকালেও ভার্সিটিতে যায় আসাদ , রাফি এবং সিফাত । সাথে সাঙ্গপাঙ্গরা তো আছে'ই । তবে আজকে ভার্সিটিতে গেছে অন্য একটা কাজে । কয়েকদিন পরেই ভার্সিটিতে হল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । তবে প্রার্থী মাত্র দুই জন । নাবিল এবং রেজোয়ান । আসাদ নাবিলের পক্ষে থেকেই সম্পূর্ণ নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চাচ্ছে । অবশ্য নাবিলকে সাপোর্ট করার পিছনে যথেষ্ট কারনও আছে । কারন , নাবিলের মাঝে আসাদ নিজেকে দেখতে পায় । ভার্সিটিতে কারো কোনো সমস্যা হলে সবার আগে যদি কাউকে পাওয়া যায় সে হলো এই নাবিল । হোক সেটা ছোট বা বড় ধরনের কোনো সমস্যা । তো যার মাঝে মানুষকে সাহায্য করার প্রবণতা রয়েছে , সে নিশ্চয়ই একটা হল সামলানোর মতো সক্ষমতা রাখে নিজের মাঝে । 


আসাদ নাবিলকে সাপোর্ট করছে দেখে , উপায়ন্তর রেজোয়ান ছুটে গেছে বাপ্পির কাছে । বলা বাহুল্য , আসাদ এবং বাপ্পি একসময়ের সেরা বন্ধুত্বের খেতাব বহন করেছিলে ভার্সিটিতে । তবে এখন , একজন আরেক জনের চোখের বিষ । কারন , ঐ যে রাজনীতি । এই একটা শব্দ ওদের সাত বছরের বন্ধুত্ব সাত সেকেন্ডে শেষ করে দিয়েছিলো । কেউ ভাবেনি কখনো , স্কুল লাইফের এতো ঘনিষ্ঠ দুই জন বন্ধু শুধু এই রাজনীতির চক্করে পড়ে আলাদা হয়ে যাবে । 


বাপ্পি ঢুকছে গেট দিয়ে । মিনারের পাশে দৃঢ় পায়ে দাঁড়ানো হিজল গছের নিচে আসাদ নাবিলের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত । আসাদকে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো বাপ্পি । আসদ গ্রাহ্য করেনি । 


দু'জনের চোখাচোখি শেষ হলে , বাপ্পি মিনারের দু'টো শিড়ি উপরে উঠে হাতে একটা মাইক নিয়ে বলে , "আর কয়েকদিন পরেই তো ইলেকশন । নিশ্চয়ই তোমরা জানো কাকে ভোটটা দিতে হবে , বা কাকে দিলে তোমরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে । এখন আসি মূল কথায় । প্রেসিডেন্ট সবাই হতে পারে , কিন্তু সবাই দায়িত্ব পালন করতে পারেনা । তাই দায়িত্ববান কেউ'ই এই পদ পাবার যোগ্যতা রাখে বলে আমি মনে করি । আমার মতে , রেজোয়ানের চেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট তোমরা অত্র ভার্সিটিতে চিরুনি তল্লাশি চালালেও আরেকজন পাবেনা । তাই কারো প্ররোচনায় না এসে , নিজেদের ভালোটা বুঝতে শেখো ।"


কথাগুলো বলে ক্ষানিক জিরিয়ে নিলো বাপ্পি । অতঃপর আসাদের দিকে তাকিয়ে ঠাট্টার ছলে বলে , "অনেকে তো কোনো যোগ্যতা ছাড়াই রাজনীতিতে চলে আসে ! অতএব , সেসব যোগ্যতাহীন মানুষদের যতটা পারবে এড়িয়ে চলবে ।"


নিজের কথাগুলো শেষ করে , মুচকি হেসে হাত দিয়ে মাইকটা এগিয়ে আহ্বান করে আসাদকে নিজের কথা বলার জন্য । আসাদও প্রতিউত্তরে মুচকি হেসে মাইকটা হাতে তুলে নেয় । দুই আঙুল দিয়ে মাইকে দু'টো বারি মেরে বলতে আরম্ভ করে , "সবাই এতো দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ? মিনারের কাছে এসো , কথা আছে তোমাদের সাথে ।"


আসাদের ডাকে সকালে সাড়া দিয়ে , ধীরে ধীরে মিনারের কাছে এসে ভিড় জমালো । আসাদ বলে , "তোমাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে , সকলে উত্তর দেবে আশা করি ।"


সকলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালে আসাদের প্রথম প্রশ্ন , "মনে করো , তোমাদের সামনে দু'টো মোবাইল আছে । একটা দেখতে অনেক সুন্দর , পিছনে চারটা ক্যামেরা , ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সরও আছে । বড় সাইজের ডিসপ্লে । কিন্তু প্রসেসর ভালো না । অন্য ফোনে প্রথমটার মতো চারটা ক্যামেরা নেই , অনেক বড় ডিসপ্লে নেই , কিন্তু প্রসেসর অনেক ভালো । এখন আমার প্রশ্ন হলো , তোমরা কোনটা বেছে নেবে ? প্রথমটা নাকি দ্বিতীয়টা ?"


সকলে উচ্চস্বরে বলে উঠলো , "দ্বিতীয়টা !"


আসাদের মুখে হাসি ফুটলো । বাপ্পি রাগে ফুঁসছে , কিন্তু কিছু বলছে না । আসাদ আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো , "এবার আরেকটা প্রশ্ন করি , কেমন ? একজন যোগ্যতাবান ব্যক্তি যে তোমাদের কখনো কোনো বিপদে আপদে সাহায্য করেনি , তোমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি । অন্যদিকে একজন যোগ্যতাহীন ব্যক্তি , যার কোনো যোগ্যতা নেই । কিন্তু মানুষকে সাহায্য করার জন্য বড় একটা মন আছে । সকলের বিপদে আপদে এগিয়ে আসে , সবাইকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য মনে করে । এবার বলো , কাকে চাই তোমাদের  ? যোগ্যতাবান নাকি যোগ্যতাহীন ?"


এবারও সবার উত্তর আসাদের পক্ষেই এলো । বাপ্পি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে । কি'ই বা বলবে , বলার মতো কিছু নেই ওর কাছে । আসাদ মুখের হাসি বজায় রেখে বলে , "দেখো তোমাদের নেতা বাপ্পি হয়তো কিছু বলতে চায় । শোনো তাহলে মনোযোগ দিয়ে ।"


আসাদ মাইকটা বাপ্পির হাতে তুলে দিয়ে সবাইকে নিয়ে মিনারের সামনে থেকে চলে আসে । মাঝ মাঠে আসার পরে নাবিল বলে , "ভাই , চলে যাবে নাকি থাকবে ?"


- "কেনো ?"


- "সবাই মিলে একটু চা , সিঙ্গারা খেতাম আর কি !"


- "আমার সামনে ফর্মালিটি দেখালে মাইর এটাও মাটিতে পড়বে না । চা , সিঙ্গারা যারা তোকে ভোট দেবে , যাদের কারনে তুই জিতবি , তাদেরকে খাওয়াবি । আমরা ক্যান্টিনে আছি । প্রয়োজন পড়লে ডাক দিস !"


- "আচ্ছা , ভাই !"


আসাদ এবং বাকিরা চলে গেলো ক্যান্টিনে আর নাবিল গেলো নিজের কাজে । 


ক্যান্টিনে গিয়ে বসতে না বসতেই সিফাত আসাদকে খোঁচানো শুরু করে । আসাদ ত্যক্ত হয়ে বলে , "কি শুরু করছিস ? মেয়ে পেয়েছিস নাকি ?"


সিফাত হাসতে হাসতে বলে , "আরে তোর পাখি এসেছে !"


- "মানে ?"


- "একটু পিছনে তাকাও খোকা ।"


আসাদ পিছনে তাকিয়ে দেখে অনন্যা আসছে । তবে আজ চোখ ফেরাতে পারছে না অনন্যার থেকে । কালো শাড়ি , কালো টিপ , বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে । মুখে মাতাল করা হাসি , আসাদকে বেকাবু করে তুলছে । আসাদ নিজেকে সামলাতে পারছে না । অবস্থা বেশি বেগতিক হবার আগেই আসাদ নিজের চোখ ফিরিয়ে নেয় । 


আসাদের অবস্থা দেখে কেউ নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলো না । অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সবাই । ইতিমধ্যে অনন্যাও সেখানে এসে হাজির । বেশ উৎফুল্লের সাথে জিজ্ঞেস করে , "কি ব্যাপার , তোমরা এতো হাসাহাসি করছো কেনো ? আমাকেও বলো !"


রাফি আসাদের কাঁধে হাত রেখে বলে , "তেমন কিছু না , আসলে একজন হারিয়ে ফেলছিলো নিজেকে অন্য একজনের মাঝে । সেটা দেখেই হাসছি ।"


- "এভাবে অর্ধেক কথা বলিস কেনো? লাথি মারমু । পুরোটা বল ।"


- "আরে একটা কুত্তা একটা কুত্তির দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো , সেটাই বলছি ।"


- "কুত্তা কেমন ভাষা ? কুকুর বলতে পারিস না ?"


- "ওরা কুকুর না , ওরা কুৃত্তা !"


- "কই দেখি ?"


রাফি বিরবির করে বলে , "নিজেকে কিভাবে দেখবি ? এখানে তো আর আয়না নেই ।"


- "কি বললি , শুনতে পাইনি ।"


রাফি মুখ খোলার আগেই আসাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে অনন্যাকে বলে , "আরে ওদের কথা বাদ দাও তো । চলো ঐদিকটায় গিয়ে বসি ।"


- "আচ্ছা , চলো ।"


- "বসবে নাকি হাঁটবে ?"


খুশি হয়ে বলে , "চলো হাঁটি !"


অতঃপর আরকি , দু'জন মিলে বেড়িয়ে পড়ে কিছুটা আনন্দ খোঁজার উদ্দেশ্যে । তবে ভার্সিটির বাহিরে বাইকে উঠতে গেলে দেখা হয় প্রাপ্তির সাথে । প্রাপ্তি আসাদের দিকে তাকিয়ে বলে , "এসব কি আসাদ ? তুমি ওর সাথে কি করছো ?"

 

প্রাপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আসাদ বলে , "তুমি আমার সেই ছাত্রী , যাকে আমি শিখিয়েছি সব নিজের হাতে । শিষ্য হয়ে গুরুকে তুমি মারবে কি শর্তে ? যদি করতে ভুল , তবে ক্ষমা পেতে বারংবার । তবে করেছো যে অন্যায় , তুমি'ই বলো সেটার কি ক্ষমা হয় ?"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৯

 #রাজনীতি

#পর্ব_৯

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


রাগে চোখ রক্তবর্ণ ধারন করেছে । রক্তবর্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে , চোখের ঝাঁজ সহ্য করতে না পরে মাথা নিচু করে ফেলে ছেলেটা । মুচকি হেসে বলে , "শান্ত হবো ? হ্যাঁ আমি শান্ত হবো । তবে সেদিন , যেদিন আমার দেয়া কাজটা তোরা সম্পন্ন করতে পারবি । দুই দিন সুযোগ করে দিলাম , কিন্তু লাভ কি হলো ? ব্যর্থ । তোরা তো জানিস , ব্যর্থতা জিনিসটা আমার সহ্য হয়না । শেষ আরেকটা সুযো দিলাম । হয় আসাদকে মেরে ফেল , নাহয় তোদের মৃত্যু কেউ আটকাতে পারবে না । কথাটা যেন মাথায় থাকে । আমি বারবার বলবো না !"


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ বাসায় এসে পৌঁছেছে । অন্যন্যার সাথে সময়গুলো বেশ ভালোই কেটেছে ওর । পুরোনো স্মৃতিগুলো আবার জেঁকে বসেছে । ভার্সিটির সেই দিনগুলোর কথা মাথায় আসতেই , আসাদ নিজের অজান্তে হেসে ফেলে । 


সিফাত রুমে ঢুকে দেখে আসাদ আপনমনে হাসছে । বিছানায় নিজের তাসরিফ জমিয়ে কিছুটা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে , "কিরে হাসছিস কেনো ?"


- "হাসছি নিজের অবস্থার উপরে । কেমন ছিলাম , আর কেমন হয়ে গেলাম !" 


- "বাদ দে সব পুরোনো কথা । যার জন্য তোর কাছে আসা , লেখাগুলোর সন্ধিহান করতে পারলি ?"


- "হ্যাঁ , পারছি । তবে ভাবিনি কখনো , আমার সাথে এমনটা হবার ছিলো ।"


- "ভাবিস নি , তো এখন ভেবে নে !"


- "মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে । একটা চিরচেনা মানুষের এমন হঠাৎ পরিবর্তন কিভাবে মেনে নেই , বল ?"


- "যাকে তুই চিরচেনা বলছিস , তার কাছে তুই অপরিচিত ।"


- "কি জানি ।"


- "বুঝতে পারছিস , এটাই অনেক । সাবধানে থাকিস , এটুকুই বলবো । এখন বল , অনন্যা কে ?"


- "রাফি বলেনি কিছু ?"


- "আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি !"


- "আমার ক্লাসমেট ছিলো । ভার্সিটি লাইফ একসাথেই কেটেছে আমাদের । খুব ভালো একটা মেয়ে । মনটা অনেক পরিস্কার । বাকি সবার মতো মনে অতশত প্যাচ গোঁজ নাই । জানিস , একটা অপরিচিত মানুষ যাকে ও আগে কোনদিন দেখেনি পর্যন্ত , কিন্তু সে বিপদে পড়লে হাত বাড়িয়ে দেয়া মানুষ গুলোর মাঝে অনন্যা একজন । আমদের ক্যান্টিনে যে ছেলেটা আছে , ওর পড়াশোনার সকল খরচ অনন্যা'ই বহন করে !"


- "এতদিন তো মনে হয় , দেশের বাহিরে ছিলো ?"


- "হুম , গতকাল রাতেই এলো । বললো তখন , শুনলি না ?"


- "তো হঠাৎ দেশের বাহিরে কেনো গেছিলো , জানিস ?"


- "হয়তো পড়াশোনার জন্য , তাছাড়া আর কি হবে ? দেশের বাহিরে তো ওর কোনো আত্নীয়স্বজনও নেই ।"


- "বাবা-মা ?"


- "অনন্যা এতিম । মামা-মামি ও'কে বেশ যত্নে লালন-পালন করেছেন । আমার ভাষ্যমতে , আমি কোনদিন দেখেনি অনন্যাকে তারা নিজের মেয়ে ছাড়া অন্যকিছু ভেবেছেন ।"


- "তো তুই অনন্যার মামা-মামির থেকে জানতে পারতি না , অনন্যা কেনো দেশের বাহিরে গেলো সবাইকে ছেড়ে !"


- "আমি গিয়েছিলাম তাঁদের বাসায় , তবে তারা সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন । অনন্যার নাম্বারও বন্ধ দেখাচ্ছিলো । মামা-মামিরও কোনো খোঁজ পাইনি , তাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম । কিন্তু তুই হঠাৎ ওসব পুরোনো কথা ঘাটছিস কেনো ?"


- "ঘাটছি কারন , অনন্যা কি সত্যি পড়াশোনার জন্য দেশের বাহিরে গেছিলো ? নাকি এখানে অন্য কোনো গল্প আছে ?"


- "ভাই আমারে মাফ কর , প্লিজ । এমনিতেই একটা ধাঁধা সলভ করতে গিয়ে নাকানিচুাবানী খেয়ে বেসামাল অবস্থায় আছি । তার উপরে আবার অন্য কোনো ধাঁধা দিসনা !"


সিফাত ক্ষানিক হেসে আসাদের কাঁধে একটা হাত রেখে বলে , "এটা তোর জীবনের ধাঁধা । যেটার সমাধান তুই ছাড়া অন্য কারো কাছে নেই । দুর্বল আসাদ থেকে এই আসাদ হয়ে ওঠার গল্পটা নিশ্চয়ই সহজ ছিলো না । পিছনের সেই গল্পটা নিয়ে একটু ভাব , তুই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবি । আর এবারের ফলাফলটা তোর জীবন বদলে দেবে , মিলিয়ে নিস !"


আসাদ হাবার মতো তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে । সিফাত রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো কিন্তু তবুও আসাদের কোনো হেলদোল নেই । মাঝে মাঝে সিফাতের চরিত্রটা বুঝতে ভীষণ কষ্ট হয় আসাদের । হাবাগোবা ছেলেটার কয়েকটা জটিল কথা আসাদকে নিজের অবস্থানে স্থির করে দেবার জন্য যথেষ্ট । সিফাত ছেলেটার মাঝে কিছু একটা আছে , এটা আসাদের ভাবনা । ভাবনাটা কি সত্যি , নাকি ভাবনার অন্তরালে অন্য কোনো কাহিনী রচিত আছে ।


-------------------------------------------------------------------------------------


অনন্যার মন আনচান করছে আসাদের সাথে কথা বলার জন্য , কিন্তু ভাবছে কল দেবে কি দেবে না । নাম্বারটা বারবার ওপেন করে আবার কেটে দিচ্ছে । কথা বলতেও ইচ্ছে করছে আবার কল দিতেও কেমন কেমন লাগছে । ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আসাদের নাম্বারে কল দিলে , কিছুক্ষণ পরে আসাদ কল রিসিভ করে বলে , "হুম , বলো !"


- "কি করো ?"


- "এইতো ফেবুতে নিউজফিড ঘাটাঘাটি করছিলাম , তুমি ?"


- "ভাবছিলাম ।"


- "কি ?"


- "কোনো একজনের কথা !"


- "কার কথা ?"


- "পরে বলবো !"


- "আচ্ছা !"


- "এখন রাখি পরে কথা হবে ।"


আসাদের উত্তর না শুনেই অনন্যা ফোন রেখে দেয় । লজ্জায় লাল হয়ে গেছে অনন্যার মুখ । 


-------------------------------------------------------------------------------------


দিনটা ভালোই কাটলো আসাদের । সারদিনের মাঝে প্রাপ্তির কথা একটি বারের জন্যও মাথায় আসেনি । হয়তো আসতে দেয়নি । হয়তো , খেলার মোড় ঘুরাতে চাচ্ছে আসাদ । 


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৮

 #রাজনীতি

#পর্ব_৮

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


প্রাপ্তি কোনো উত্তর দিলো না । আসাদ প্রাপ্তির পাশ থেকে উঠে ক্যানটিনের দিকে যায় । কিছুটা সামনে এগোলে , কারো ডাক পেয়ে আসাদ থমকে দাঁড়ায় । গলার স্বরটা বেশ পরিচিত । তবে খেয়াল করতে পারছে না কোথায় শুনেছে । মাথায় জোর না দিয়ে পিছনে তাকালে দেখে , অনন্যা ওর দিকে এগিয়ে আসছে । মুখে বিরল হাসি । ভার্সিটি জীবন একসাথেই কেটেছে ওদের । তবে , দুর্বল আসাদ থেকে সবল হয়ে ওঠার রাস্তাটা ভীষণ কঠিন ছিলো । আর সেই রাস্তায় আসাদের সঙ্গীদের মাঝে অনন্যাও একজন । মজার বিষয় হলো , অনন্যা আসাদকে সব ভাবে সাহায্য করলেও আসাদের এটা অজানা । কিন্তু রাফি জানে , অনন্যা আসাদের জন্য ঠিক কতটা করেছে । 


আসাদের সামনে এসে মুখে হাসি রেখে অনন্যা বলে , "কি গো রাজনীতিবিদ , আমাকে তো ভুলেই গেলেন ! না কোনো কল , না ম্যাসেজ । পর হয়ে গেছি বুঝি ?"


আসাদ মাথা চুলকে বলে , "আরে তেমন কিছু না । আসলে তোমার নতুন নাম্বার আমার কাছে নেই , পুরাতন নাম্বারে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু সংযোগ হয়ে ওঠেনি ।"


- "রাফির কাছে তো আমার নাম্বার ছিলো , ও'কে বলতে পারতা !"


- "কই রাফি তো আমাকে কিছু বলেনি । আমি ওর কাছে তোমার নম্বার অনেকবার চেয়েছি । বাট ও বলেছে , ওর কাছে নেই ।"


- "আচ্ছা , বাদ দাও । চলো এক কাপ কফি খেয়ে আসি । ক্যান্টিনের সেই কফি , আর জমজমাট আড্ডা । উফ , অনেক মিস করি ।"


- "হুম , চলো । কফি পাগলি !"


- "বলছে তোমাকে ।"


- "বলছেই তো । কফি ছাড়া তো আর কিছু মাথায় আসে না তোমার !"


অনন্যা মুখ ভেংচি কেটে বলে , "তোমার মাথা !"


খুনসুটি করতে করতে ক্যান্টিনের সামনে চলে এসেছে । ভিতরে রাফি , সিফাত এবং বাকিরা সিঙ্গারার আড্ডায় মেতে উঠেছে । রাফির কাছে গিয়ে রাফির পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে অনন্যা বলে , "কিরে হারামি , তোর কাছে আমার নাম্বার নেই ?"


রাফি অনন্যাকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । অনন্যা মজা করে বলে , "হয়েছে ভাই , ছাড় এবার । নাহলে আমার হাড্ডি-গুড্ডি এখন ভাঙবে । যেভাবে ধরেছিস !"


অনন্যাকে ছেড়ে দিয়ে বলে , "এবার বল , হঠাৎ কি মনে করে ? আমাকে তো একটাবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করলি না যে , তুই আজকে ক্যাম্পাসে আসবি ।"


- "একটা থাপ্পড় মারবো । তুই আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে । আমার নাম্বার নেই তোর কাছে ?"


- "হুম , আছে ।"


- "আসাদ চয়েছিলো , তো দিলি না কেনো ?"


- "তুই তো জানিস কেনো দেইনি । তাও এই প্রশ্নটা কেনো করছিস ?"


- "দিতে পারতি , আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি । আমার সমস্যা হতো না । আমার জিনিসটা নাহয় একান্তই আমার থাক ।"


- "যাকগে , বদ দে ঐসব পুরোনো কথা । এখন বল , তুই দেশে আসলি কবে ?"


- "এইতো গতকাল রাতে এসেছি । নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না ক্যাম্পাসে আসা থেকে , তাই চলে এলাম টহল দিতে ।"


- "ভালো করেছিস , জানি তো কফির লোভে এসেছিস এখানে । আমাদের সাথে দেখা করতে এলে তো জানাতি ।"


- "আসাদের সাথে থেকে থেকে তুইও এখন আসাদের মতো কথা বলছিস !"


রাফি ক্ষানিক হেসে নিয়ে বলে , "আচ্ছা , তোরা ঐদিক টায় গিয়ে বস যা ! আমি একটু পরে আসছি ।"


- "ঠিক আছে ।"


আসাদ এবং অনন্যা গিয়ে কর্নারের একটা টেবিলে বসলো । আসাদ কফির অর্ডার দিয়ে অনন্যার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।


- "এতদিন কোথায় ছিলে ? ভার্সিটি লাইফ শেষ হবার পড়ে না কোনো খোঁজ , না কোনো খবর !"


একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে , "ছিলাম কারো স্মৃতিচারণে ।"


- "মানে ?"


- "বাদ দাও আমার কথা । তুমি বলো , এতো অল্প সময়ে এতো নাম ডাক কিভাবে ? দুই বছর আগের আসাদ আর এখনকার আসাদের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল । এতটা পরিবর্তন কিভাবে ?"


- "আমি সেই আগের আসাদ'ই রয়ে গেছি । শুধু তোমাদের দেখার নজরিয়াটা বদলে গেছে ।"


- "হয়তো ! তারপর , প্রাপ্তির কি খবর ?"


- "আছে ভালোই ।"


- "আগের মত'ই রয়ে গেছে নাকি পরিবর্তন এসেছে ?"


- "যেদিন থেকে আমি পরিবর্তন হয়েছি , সেদিন থেকে ওর মাঝেও পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি । এখন জানিনা , সেই পরিবর্তনটা কার জন্য এসেছে ।"


- "আলবাদ , তোমার জন্য । যেহেতু ও তোমাকে ভালোবাসে ।"


- "হয়তো , আবার হয়তো না !"


- "হয়তো কেনো বলছো , যাকে ভালোবাসো তাকে বোঝো না তুমি ?"


আসাদ কিছু বলার আগেই পিচ্চি কফি নিয়ে হাজির । অনন্যাকে দেখে ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বলে , "আপু তুমি কেমন আছো ? কতদিন পর তোমাকে দেখলাম ।"


মন খারাপ বলে বলে , "এখন তো আর আগের মতো আসো'ই না ।"


অনন্যা পিচ্চির গালে হাত বুলিয়ে বলে , "কিভাবে আসবো রে সোনা , আমি তো দেশে ছিলাম না । তুই কি পড়াশোনা করিস এখন ? নাকি আমার যাবার পড়ে সব বাদ , কোনটা ?"


- "তুমি'ই তো প্রতি মাসে রফিক চাচার কাছে আমার জন্য টাকা পাঠাতে , তাহলে কিভাবে বাদ দিবো বলো ? আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা ?"


কপালে চুমু একে দিয়ে বলে , "গুড বয় । আচ্ছা , এখন যা ।"


- "আচ্ছা !"


আসাদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে অনন্যাকে দেখছে । আসলেই মেয়েটা অদ্ভুত প্রকৃতির । যাকে চেনেনা , যার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই । তার দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । সবাই যদি এমন হতো , তাহলে হয়তো সমাজে কারো সাথে কোনো বৈষম্য থাকতো না ।


-------------------------------------------------------------------------------------


রুমের সবকিছু ভেঙে চুরমার । তবুও রাগ কমছে না । নিজেকে সামলাতে পারছে না কিছুতেই । টেবিলের উপরে এক হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে মেয়েটি । ভয়ে ভয়ে একটা ছেলে সামনে এগিয়ে এসে বলে , "আপু , শান্ত হও প্লিজ !"


রাগে চোখ রক্তবর্ণ ধারন করেছে । রক্তবর্ণ চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে , চোখের ঝাঁজ সহ্য করতে না পরে মাথা নিচু করে ফেলে ছেলেটা । মুচকি হেসে বলে , "শান্ত হবো ? হ্যাঁ আমি শান্ত হবো । তবে সেদিন , যেদিন আমার দেয়া কাজটা তোরা সম্পন্ন করতে পারবি । দুই দিন সুযোগ করে দিলাম , কিন্তু লাভ কি হলো ? ব্যর্থ । তোরা তো জানিস , ব্যর্থতা জিনিসটা আমার সহ্য হয়না । শেষ আরেকটা সুযো দিলাম । হয় আসাদকে মেরে ফেল , নাহয় তোদের মৃত্যু কেউ আটকাতে পারবে না । কথাটা যেন মাথায় থাকে । আমি বারবার বলবো না !"


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৭

 #রাজনীতি

#পর্ব_৭

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


রাত প্রায় দু'টো । আসাদ এবং রাফি নিজের কাজে বেড়িয়ে পড়েছে । শরীরে ভদ্রলোকের ট্যাগ লাগনো কারো হয়তো জীবনযাত্রার সমাপ্তি ঘটবে আজ । নাকি সব ভাবনাচিন্তা গুলো রং বদলাবে , আসাদের অজান্তেই ! 


শিক্ষক , নামটা শুনলেই একটা স্বস্তি পাওয়া যায় , তাই না ? যে ছাত্রদের নিজের হাতে গড়ে তোলে । স্নেহ , ভালোবাসা দিয়ে । আচ্ছা একজন রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে ওঠে , তখন তার কি শাস্তি হওয়া উচিত ? আসাদের মতে , মৃত্যুর চেয়ে বড় শাস্তি কাউকে দেয়া যায়না । তেমনি এক শিক্ষকের গল্পের সমাপ্তি ঘটাবে আসাদ । যে শিক্ষক পড়ানোর নামে ছোট ছোট মেয়েদের যৌন হয়রানির শিকার করে । 


বর্তমান সমাজের পরিস্থিতি হলো এমন , বাবা-মা দু'জন'ই কাজের সূত্রে দিনের বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকেন । হয়তো কেউ বাসায় আয়া রেখে দেন ছেলে-মেয়েদের একাকিত্ব দূর করার জন্য । আর কেউ কেউ রাখেন না এই ভেবে , ছেলে-মেয়ে তো দিনের তিন চতুর্থাংশ সময়'ই প্রাইভেট আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে । বন্ধুবান্ধবের সাথে থাকবে , কথা বলবে । একাকিত্ব কি সেটা বোঝার সুযোগ হয়ে উঠবে না । বাবা-মা টাকা কামাতে এতটাই ব্যস্ত যে , তার মেয়ে কোন পরিস্থিতিতে আছে সেটা খোঁজ রাখার সময়টুকুও হয়ে ওঠেনা তাদের কাছে । এমনও মেয়ে আছে যারা পুরো ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায় । আর যখন বুঝতে পারে , তখন হয়তো কিছুই করার থাকেনা । লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে বলতেও পারেনা । এই সময়টা যে কতটা কষ্টের , সেটা হয়তো সে'ই বুঝতে পারবে যে বা যারা এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে । 


এই ধরনের বিষয়গুলো যে শুধু শিক্ষকরা'ই করে এমনটা কিন্তু না । পরিবার-পরিজন , আত্মীয়স্বজনদের মাঝেও এমন কিছু নরপিশাচ থাকে , যারা ভালো মানুষির আড়ালে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যস্ত । এমন মানুষগুলো খুব'ই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির হয় , বিষাক্ত হয় । যাদেরকে খালি চোখে চেনা যায়না । কিন্তু তাদের বিষক্রিয়া মারাত্মক । 


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদের কাজ শেষ । সকালে খবের কাগজের হেডলাইন হবে , শিক্ষক নামের একজন নরপশু হত্যা । নাহ , একটু ভুল বলে ফেললাম । এই ভদ্রলোকের সামাজে তো সত্যের চেয়ে মিথ্যার দাপট বেশি । তাই, হয়তো এই খবরটাও বাকি খবরের আড়ালে চাপা পড়ে যাবে । 


-------------------------------------------------------------------------------------


অনেকদিন পর আসাদ আজ ক্যাম্পাসে এসেছে । গুলি লাগার পর থেকে আর আসা হয়নি । একটা শাস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করে ক্যান্টিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পরিচিত শিমুল গাছটার নিচে তাকালে দেখে , প্রাপ্তি ওর কয়েকজন বন্ধবীর সাথে বসে আছে নির্জীব মনে । 


আসাদকে আসতে দেখে বাকিরা উঠে যায় । প্রাপ্তি তখনও দেখেনি আসাদকে । কাহিনী বুঝতে না পেরে বলে , "কিরে সবাই চলে যাচ্ছিস কেনো ?"


আসাদকে দেখতে পেয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টা প্রাপ্তির বোধগম্য হলো । তাই আর কিছু না বলে পুনরায় নিজের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো । আসাদ প্রাপ্তির পাশে বসে বলে , "মন খারাপ ?"


- "জ্বী , না !"


- "তাহলে , কথা বলার ইচ্ছা নেই ?"


- "না , নেই ।"


- "চলে যাবো তাহলে ?"


- "তোমার ইচ্ছা । ভার্সিটিটা তো আর আমার একার না , যে আমি যা বলবো তাই হবে । এমনিতেই তোমার ভয়ে কোনো ছেলে আমার সাথে কথা বলতে চায়না ।"


- "ছেলেদের সাথে কথা বলতে চাও তুমি ?"


- "শুধু কি ছেলেরা , মেয়েরাও তো কথা বলে না আমার সাথে । কয়েকজন ছাড়া !"


- "আমি কি তাদের বারন করেছি তোমার সাথে কথা বলতে , বা না মিশতে !"


- "হয়তো করেছো । তোমাকে এর আগেও অনেকবার বলেছি , হয় আমাকে বেছে নাও , নতুবা তুমি রাজনীতি নিয়ে থাকো ।"


- "একটা কথা মনে আছে তোমার ?"


- "কি কথা ?"


- "যখন আমি একজন সহজ , সরল সাধারণ ছেলে ছিলাম । যখন আমার নাম , ডাক , পরিচিতি ছিলো না । তখন তুমি ঠিক কি কি করেছিলে ? ছেলেদের সাথে কফি শপে যাওয়া , কথা বলা , তাদের বিভিন্ন গিফট দেয়া । আমার জন্মদিন তুমি ভুলে যেতে , কিন্তু দুইদিন আগে পরিচিত হওয়া একটা ছেলেকে তুমি কফিশপে গিয়ে গিফট দিয়ে আসতে । এবং আমি যখন এগুলো তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম , তখন তোমার কাছে কোনো উত্তর থাকতো না । তুমি কথার ছলে সেগুলো এড়িয়ে যেতে । এবং মজার বিষয় হলো , আমিও তখন তোমার কাছে একটা প্রশ্ন করেছিলাম । আমাকে চাই নাকি তোমার ঐসব বন্ধুদের । তুমি কি বলেছিলে ? তোমার জীবন , তোমার মর্জি মতো চলবে । তাহলে আজ কেনো আমাকে যেকোন একটা বেছে নিতে বলছো ?"


- "আমি কিন্তু এখন কারো সাথেই কথা বলিনা , সেটা তোমার অজানা নয় !"


- "কবে থেকে কথা বলো না ? যেদিন থেকে এই শহরের মানুষ আসাদকে চেনে , সেদিন থেকে । যেদিন থেকে আসাদের নাম , জশ , খ্যাতি হয়েছে , সেদিন থেকে । যেদিন থেকে আসাদ নিজেকে সামলে নিতে শিখেছে সেদিন থেকে । কিন্তু আসাদ যখন অনেক দুর্বল ছিলো , যখন প্রাপ্তিকে ছাড়া আসাদ কিছু বুঝতো না , তখন কিন্তু তুমি আমার মনোবল না হয়ে আমাকে আরো ভেঙে দিয়েছো । এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে সেই দিনগুলো ? তোমার কি ভাবনা , আসাদ হাসিখুশি আছে , তার মানে সে অনেক ভালো আছে ? তাহলে বলবো তুমি আমার প্রেমিকা হতে পারোনি ।"


- "আমাকে নিয়ে এতকিছু ভাবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।"


আসাদ ক্ষানিকটা হেসে নিয়ে বলে , "যখন'ই আমার প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর তোমার কাছে থাকে না , তখন'ই এই একটা কথা বলে এড়িয়ে যাও সবকিছু ।"


- "হ্যাঁ , হ্যাঁ আমি খারাপ । আর কিছু বলতে চাও !"


- "বাদ দাও ঐসব কথা । ভার্সিটিতে আসলে বাট কল দিলে না ? দেখা করার কথা ছিলো আমাদের , তাই না ?"


- "মনে ছিলো না ।"


- "আচ্ছা , ঠিক আছে । তোমার তো মনে হয় একটু পরে ক্লাস শুরু হবে । থাকো তাহলে , আমি আসি ।"


প্রাপ্তি কোনো উত্তর দিলো না । আসাদ প্রাপ্তির পাশ থেকে উঠে ক্যানটিনের দিকে যায় । কিছুটা সামনে এগোলে...!!


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৬

 #রাজনীতি

#পর্ব_৬

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ সবটা খুলে বললে , সিফাত হাতে তালি দিয়ে বলে , "বাহ , ভালো তো । সবসময় শুধু রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকিস । বাহ্যিক কোনো জ্ঞান তো মাথায় নেই । স্প্রুফিং বুঝিস ?"


- "স্প্রুফিং ?"


- "হ্যাঁ , স্প্রুফিং !"


- "সেটা কি ?"


- "স্প্রুফি হলো এমন এক ধরনের পদ্ধতি যার মাধ্যমে তোর নাম্বার আমার কাছে নেই কিন্তু তোর নাম্বার দিয়ে আমি যাবতীয় সব কাজ করতে পারবো । যেমন , কাউকে ম্যাসেজ পাঠানো বা কল দেয়া । একই কাজ ইমেইল দিয়েও করা যায় ।"


- "কিন্তু কেউ আমার সাথে এমনটা কেনো করবে ? কি স্বার্থ থাকতে পারে তার ?"


- "স্বার্থ তো একটাই !"


- "কি ?"


- "তোর জীবন নেয়া !"


- "তুইও এই কথা বলছিস ? সকালে আসলো পার্সেল আর এখন তুই !"


- "যেটা দেখেছি , যেটা বুঝেছি , সেটাই বলেছি । স্প্রুফিং করে তোকে পুরোনো গোডাউনে ডাকা , তোর উপরে হামলা হওয়া । সবকিছু তো আর কাকতালীয় হতে পারে না , তাই নয় কি ?"


- "তোর কথায় যুক্তি আছে , কিন্তু এই কাজগুলো কে বা কারা করছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না ।"


- "কারা না , বল কে !"


- "তুই এতটা নিশ্চিত হয়ে কিভাবে বলছিস ?"


- "সকালের লেখাগুলো নিয়ে একটু খেলা করা শেখ , বুঝতে পারবি । যাই হোক , তোরা বিশ্রাম নে । আমি বাহির থেকে একটু হেঁটে আসি । ভালো লাগছে না বসে থাকতে ।"


- "আচ্ছা যা !"


সিফাত বাসা থেকে বের হয়ে শান্ত মনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে । হঠাৎ একটা কালো জিপ গাড়ি এসে থামে ওর সামনে । 


-------------------------------------------------------------------------------------


- "শোন , আসাদের দিকে সবসময় নজর রাখবি । কারন আসাদের জীবনের ঝুঁকি এখন অত্যাধিক মাত্রায় বেড়ে গেছে । সে আসাদকে প্রাণে না মারা অব্দি শান্তি পাবে না !"


- "ভাই , আমরা তো জানি কাজটা কে করছে । তাকে রাস্তা থেকে সড়িয়ে দিলেই তো হয় !"


- "নাহ ! আমি চাই , আসাদ এই রহস্যের শিখরে পৌঁছাক !"


- "পারবে কি ?"


- "জানা নেই আমার । আসাদ নিজেকে রাজনীতিবিদ বলে দাবি করে , কিন্তু ও এখনো রাজনীতে ভীষণ রকমের কাঁচা একজন খেলোয়াড় । রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝে উঠতে উঠতে ওর অনেকটা সময় পার হয়ে যাবে ।"


- "তুমি যেটা ভালো বোঝো । আমরা আসাদের ছায়া হয়ে থাকবো , তুমি সে বিষয়ে চিন্তা করো না !"


- "নিরাশ যেন হতে না হয় । সেদিকে খেয়াল রাখিস ।"


- "আচ্ছা ভাই !"


- "আমাকে নামিয়ে দিয়ে আয় , অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে ।"


- "জ্বী !"


-------------------------------------------------------------------------------------


ফোনের স্ক্রিনে প্রাপ্তির ছবি ভাসছে । আসাদ একমনে তাকিয়ে আছে সেদিকে । কেউ যে ওর জানের ভুখা হয়ে উঠেছে , সেই চিন্তা এখন ওর মাথায় নেই । প্রাপ্তির সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত গুলোই জড়োসড়ো হয়ে আছে ওর ভাবনা জুড়ে । শেষ বিকেলে নদীর পাড়ে হাত ধরে হাঁটা , প্রাপ্তির দুষ্টুমি ভরা কথা । আসাদ নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে প্রাপ্তিকে নিজের জীবনের অংশ করতে পেরে । তবে , সময়ের সাথে সাথে সেই ভাগ্যটা যেন র্দুভাগ্যে পরিনত না হয় , সেটাই দেখার বিষয় ।


রাত অনেক হয়েছে । কিন্তু কারো পেটে'ই খাবার পড়েনি । রাফি এসে একবার আসাদকে ডেকে গেছে , কিন্তু আসাদ নাকচ করে দেয় খাবেনা বলে । তাই রাফিও আর জোর করেনি । 


-------------------------------------------------------------------------------------


রাত প্রায় দু'টো । আসাদ এবং রাফি নিজের কাজে বেড়িয়ে পড়েছে । শরীরে ভদ্রলোকের ট্যাগ লাগনো কারো হয়তো জীবনযাত্রার সমাপ্তি ঘটবে আজ । নাকি সব ভাবনাচিন্তা গুলো রং বদলাবে , আসাদের অজান্তেই ! 


চলবে...!!

গল্প রাজনীতি পর্ব ৫

 #রাজনীতি

#পর্ব_৫

#রাসমিক_আরিফিন_আসিফ


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদ এবং রাফি বাসা থেকে বের হলে , সিফাত নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কল করে একটা পরিচিত নাম্বারে । কলটা রিসিভ হলে বলে , "আসাদ বেড়িয়ে পড়েছে । আশা করি , তোর কাজটা তুই ঠিকমতো করবি !"


- "জ্বী , ভাই !"


কল কেটে একটা রহস্যময় হাসি হাসে সিফাত । যে হাসির গভীরতা হয়তো অনেকটা বেশি । 


-------------------------------------------------------------------------------------


আসাদের বাইক এসে থামে গাজীপুর সালনার একটা পুরাতন ফ্যাক্টরির সামনে । সিফাত বারবার বলে দিলেও আসাদ রাফি ছাড়া অন্য কাউকে সাথে আনেনি । বাইক থেকে নেমে ভিতরে চলে যায় । কিন্তু রেদোয়ানকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না । উপায়ন্তর ফোন করে রেদোয়ানের নাম্বারে ।


-------------------------------------------------------------------------------------


সিলেটের একটা টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে রেদোয়ান এবং ওর কয়েকজন বন্ধু । হঠাৎ ফোনের রিংটোন বাজলে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আসাদের নাম্বার থেকে কল এসেছে । সাতপাঁচ না ভেবে কল রিসিভ করে বলে , "আসসালামু আলাইকুম , ভাই !"


- "ওয়ালাইকুমুস সালাম ! কোথায় তুই , এখনো আসছিস না যে ? আমি অপেক্ষা করছি ।"


- "আমি তো সিলেট আছি । আর কোথায় আসার কথা বলছো ?"


- "তুই না আমাকে ম্যাসেজে বললি পুরাতন গোডাউনে আসতে ।"


- "না ভাই , আমি তো ঢাকার বাহিরে আছি । তাহলে কেনো তোমাকে সেখানে আসতে বলবো , বলো ?"


- "তোর নাম্বার থেকে যে ম্যাসেজ আসলো , সেটা ?"


- "সত্যি , আমি কোনো ম্যাসেজ পাঠাই নি ।"


রেদোয়ানের কানে গুলির আওয়াজ ভেসে আসলে , তার কিছুক্ষণ পরেই কলটা কেটে যায় । 


-------------------------------------------------------------------------------------


উত্তরে আসাদ কিছু বলতে যাবে , ইতিমধ্যেই সেখানে গুলির বর্ষন শুরু হলো । রাফি তৎক্ষনাৎ কোমর থেকে নিজের গান বের করে কভার ফায়ার দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । আসাদকে নিয়ে রাফি একটা কন্টেইনারের পিছনে আশ্রয় নিলো । নিজেদের সুরক্ষার দিকটা নিশ্চিত করতে করতে গুলির আওয়াজ আর শুনতে পাচ্ছে না ওরা । আসাদ উঁকি দিয়ে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে কিন্তু লাশ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না । 


হঠাৎ কয়েকজন মধ্যবয়স্ক ছেলে এসে আসাদ এবং রাফির সামনে দাঁড়ালো । আসাদ কিছু বলতে যাবে , "চলুন , আপনাদের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি ।"


ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো । উত্তরে আসাদ বললো , "তোমাদের তো ঠিক চিনলাম না ।"


- "আমাদের না চিনলেও চলবে । তবে এতটুকু মাথায় রাখুন , আপনার কাছের মানুষগুলোই এখন আপনার জানের দুশমন হয়ে উঠেছে । তাই সেই সকল মানুষদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন ।"


- "বুঝলাম না তোমার কথা ।"


- "বুঝবেন আস্তে আস্তে । তবে দেরি করে যেন না বোঝেন , সেই দোয়া'ই রইলো । এখন চলুন , আপনাদের পৌঁছে দেই । আমাদের আরো কাজ আছে ।"


আসাদও আর কথা না বাড়িয়ে ওদের পিছন পিছন বাহিরে চলে গেলো । বাইকে উঠতে গেলে অন্য একজন ছেলে আসাদের হাত থেকে বাইকের চাবিটা নিয়ে বলে , "গাড়িতে উঠুন আমাদের সাথে । বাইক আপনার বাসায় পৌঁছে যাবে ।"


-------------------------------------------------------------------------------------


গাড়ি এসে বাসার সামনে থামলে , আসাদ এবং রাফি ওদের ধন্যবাদ জানিয়ে ভিতরে চলে যায় । ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছে সিফাত । দরজা খোলা থাকায় আসাদ এসে ড্রয়িং রুমের সোফায় নিজের তাসরিফ জমিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো । সিফাত দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করে , "একা গিয়েছিলি ?"


আসাদের তরফ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সিফাত আবারও বলে , "কি হলো , কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো নাকি ?"


- "হুম !"


- "একা কেনো গিয়েছিলি ? সবাইকে সাথে নিয়ে যেতে বলেছিলাম না ?"


- "ভাবিনি এমন কিছু হবে ।"


- "কি হয়েছে ?"


আসাদ সবটা খুলে বললে , সিফাত হাতে তালি দিয়ে বলে , "বাহ , ভালো তো । সবসময় শুধু রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকিস । বাহ্যিক কোনো জ্ঞান তো মাথায় নেই । স্প্রুফিং বুঝিস ?"


- "স্প্রুফিং ?"

 


চলবে...!!