গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২১

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২১] 


উজ্জ্বল ভাইয়ের সল্প সময়ের মজা যে অন্য দিকে মোড় নেবে কে জানত?গতকাল প্রফাইলের পিকটি হঠাৎ ভাইরাল হয়ে যায়।নানান পাবলিক পেইজে তাদের নিয়ে চলছে মাতামাতি এইছাড়াও কেউ কেউ ফেসবুক প্রফাইলটি শেয়ার করে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।যদিও সবাই মজার ছলেই নিয়ে ছিল ব্যপারটি।ভাইরালের ব্যপার নিয়ে রুমুর কোন ভাবাবেগ নেই।উজ্জ্বল ভাই যে এমন একটা কাজ করতে পারে কখনো তার ভাবনায় আসেনি।ভাইরাল ছবিটি দেখে রাশেদ,হিমেল বেজায় চটে আছে তাদের সুখের সম্পর্ক ওদের কাছে যেন বিষ ফোঁড়া।


সামনে ফাইনাল পরিক্ষা।এভাবে আর কতদিন ঘর বন্দি থাকা যাবে?পড়াশোনায়  ব্যাপক হচ্ছে বিধায় উজ্জ্বল রুমুকে নিয়ে আজ কলেজে গেল।

উজ্জ্বলের বাইকে চড়ে কলেজের সামনে নামতেই পরিচিত সবাই তাদের দিকে অবাক পানে তাকিয়ে আছে।তাছাড়া ভাইরাল ছবিটির কথা কেউ ভুলেনি সবার মাঝেই কানাঘুষা চলছে।রুমু বাইক থেকে  নামতে উজ্জ্বল আদেশ সুরে বলে,


 " আমি ফোন করা ছাড়া কলেজ মাঠেও আসবি না।ক্লাসে বসে থাকবি।এতদিন কি কি করিয়েছে সব নোট'স নিবি সুরাইয়ার কাছ থেকে।আমি আবার নিতে আসবো।"


" ঠিক আছে।তুমি ক্লাসে যাবে না?"


" না।কাজ আছে।আমি ফোন করলে বের হবি দুপুরের খাওয়া সেরে বাসায় যাব।"


"আমি তাহলে ক্লাসে যাই।"


" যা।"


রুমু চলে গেল ক্লাসে।উজ্জ্বলের মাথা ভরতি চিন্তারা বাসা বেঁধেছে।বাবার কি এখনো রাগ পড়বে না?তিনি কি তার জেদে অটল থাকবেন!এই মুহূর্তে কিছু তো উজ্জ্বলকে করতেই হবে রুমুর পড়াশোনার খরচ এছাড়াও অন্য খরচের তো কমতি নেই।উর্মি আপা বলেছে চিন্তা করতে হবে না খরচ তারা দেবেন কিন্তু বোন দুলাভাইয়ের কাছ থেকে কতদিন হাত পেতে নেওয়া যায়?


যেভাবে এসেছিল সেই ভাবে আবার চলে গেল উজ্জ্বল।নিয়ম মাফিক এভাবে কেটে গেল আরো সাতটি দিন।উজ্জ্বলের সংসারে ভালোবাসার কমতি নেই মিলেমিশে চলছে তাদের পুতুল পুতুল সংসার।সৈয়দ শামসুল রেগে থাকলেও নার্গিস কিছুটা দমে গেছেন।মাঝে মাঝে তার রান্না করা খাবার আড়ালে উজ্জ্বলের রুমে রেখে যান রুমুর সাথেও ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলেন।মনকে বুঝিয়ে তিনি উত্তর পায় না কার উপর রাগ করবেন তিনি?

ছেলের বউয়ের উপর?ছেলের বউটাকেও তো ছোট বেলা থেকে নিজ হাতে গড়ে মানুষ করেছেন।সেই ছোট্ট রুমু চাচি আম্মা বলে যতটা পাগল ছিল নিজের মায়ের জন্যেও ততটা পাগল ছিল না।অপরদিকে উজ্জ্বলের উপর রাগ দেখাবে?বুঝ হওয়ার পর থেকে উজ্জ্বলের একটাই কথা সৈয়দ বাড়ির বউ রুমু হবে আর কেউ নয়।

দুজন যখন দুজনকে মেনে নিয়েছে তখন তাদের রাগ করাতে কি যায় আসে?এসব যুক্তি সৈয়দ শামসুলের কাছে খাটে না।তিনি তার যুক্তিতে অনড়।

.

উজ্জ্বলের বুকের কোণে লেপ্টে শুইয়ে আছে রুমু।মেয়েটার উদাম শরীরে তর্জনির আঙুলের সাহায্যে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুমুকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে উজ্জ্বল।সূর্য্যি মামা জানলার পর্দা গলিয়ে আলোর তীর্যক রশ্মি ফেলছে।নিস্তব্ধ রুমটায় রুমুর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিধ্বনি শোনা যায়।


" রুমু রুমু।"


নরম স্বরে ডাকল উজ্জ্বল।কলেজে পরিক্ষা চলছে এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকলে উঠবে কখন, রেডি হবে কখন, 

আর যাবে কখন।উজ্জ্বল রুমুকে শরীর থেকে সরাতে চায় কিন্তু অবাধ্য রুমু উজ্জ্বলের গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে রয়।


" রুমুরে উঠ না পরিক্ষা দিতে যাবি না?"


" আরেকটু ঘুমাই।শরীরটা ভালো লাগছে না।"


" অজুহাত দিবি না রুমু।"


রুমু পিটপিট চোখে তাকায় উজ্জ্বলের পানে।এতদিন অজুহাত দেখালেও তার শরীরটা আজ সত্যিই ভালো লাগছে না।মাথাটা কেমন ঘুরছে সারা শরীর মেজমেজে করছে।

রুমুর মায়াময় চাহনি উজ্জ্বলকে ঘায়েল করে।অতি যত্নে পরপর বেশ কয়েকবার ওষ্ঠ ছোঁয়ায় রুমুর গালে।


" উঠে যা চুমু বউ।"


" আরেকটু শুই?ভালোলাগছে না।"


" কেন?"


রুমু প্রত্যুত্তর করে না।গায়ের কাঁথা টেনে আড়মোড়া কাটিয়ে বলে,


" আজকের পরিক্ষাটা না দিলে কিছু হবে না।সব তো দিলাম।"


" রুমু উঠ।নাটক করিস না তো।"


রুমু উঠে বসল তবে তার আগে বিরক্তি নিয়ে উজ্জ্বলের গালে কামড় বসাল।উজ্জ্বল অবাক হয় না রুমুর এটা পুরোনো অভ্যস।অন্তত বিয়ের পর থেকে এই মেয়েটার কামড় খেতে খেতে কুকুর দেখলে এখন আর ভয় লাগে না।আচ্ছা রুমু যদি উজ্জ্বলের এই কথা জানে নিশ্চয়ই রাগারাগি করবে।উজ্জ্বল হেসে উঠে বসে। 


" ডার্লিং উঠে যান।আমাকে কনভেন্স করে লাভ নেই আমি এখন রোমান্টিক মুডে নেই সিরিয়াস মুডে আছি।"


" আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।"


" উঠে যা।পরিক্ষা শেষে আমি নিতে আসবো যেহেতু পরিক্ষা শেষ আজকে আমরা বাইরে খাবো ঠিক আছে?"


" ঠিক ভুল সবটাই আপনি বিচার করেন আমি আর কি বলবো?"


রুমু রাগ দেখিয়ে উঠে যায় তাতে উজ্জ্বল হাসে।

.

আজকে রুমুর পরিক্ষাটা আগে আগে শেষ হয়েছে।মেয়েটা কাগজ জমা দিয়ে কলেজের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে।মাঠে যাওয়ার ইচ্ছে জাগলেও একা মাঠে যাওয়া তার জন্য নিষিদ্ধ আর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উজ্জ্বল।হঠাৎ দপ্তরি এসে রুমুর খোঁজ করলেন যেহেতু রুমু ক্লাসের আশেপাশে ছিল তাই সুরাইয়া দেখিয়ে দিল রুমুকে।দপ্তরি রুমুকে দেখে বলেন,


" তোমার গার্জিয়ান এসেছে আমার সাথে আসো।"


" আমার গার্জিয়ান কে?"


" আসলে দেখতে পাবে।"


রুমু দপ্তরির পেছন পেছন যায় ভেবেছিল উজ্জ্বল এসেছে তবে এত তাড়াতাড়ি আসার তো কথা নয়।অফিস কক্ষের সামমে এসে রুমু দেখা পেল তার ভাবীর।আনিকাকে দেখে মেয়েটা চমকে যায় মুখ ফুটে কিছু বলার আগে আনিকার অশ্রুসিক্ত চাহনি দেখে কলিজাটা মোচড় দেয়।


" ভাবী কি হয়েছে?"


" আম্মা আর নেই রুমু।"


" নেই মানে?"


" আম্মার এক্সিডেন হয়েছে।অবস্থা খুব খারাপ আব্বা বলল তোকে নিয়ে যেতে।যেকোন সময় অঘটন হয়ে যাবে। তুই আমার সাথে চল।"


" এসব কি বলছো।আম্মার কিছু হবে না।"


" তুই চল রুমু।আব্বা বলল তোকে নিয়ে যেতে।"


" কিন্তু উজ্জ্বলকে ছাড়া আমি যাব না।উজ্জ্বল আর কিছুক্ষণ পরেই আসবে।"


" এখন উজ্জ্বল তোর সব আমি জানি।কিন্তু তুই তোর মাকে শেষ দেখা দেখবি না?যত যাই হয়ে যাক মা তো মাই।"


রুমু কান্না পেয়ে যায়।নিজেকে না দমাতে পেরে মেয়েটা কেঁদেও ফেলে।অবশেষে উজ্জ্বলের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দিয়ে রুমু আনিকার সহিত বেরিয়ে যায়।

.

প্রায় আধাঘন্টা পর কলেজে এসে উপস্থিত হয় উজ্জ্বল।সুরাইয়ার কাছে জানতে পারে রুমু বেরিয়ে গেছে দপ্তরি নাকি তাকে খুঁজেছে।উজ্জ্বল দপ্তরির কাছে যোগাযোগ করে জানতে পারে তার ভাবী এসে তাকে নিয়ে গেছে।রুমুর মা নাকি এক্সিডেন করেছে।


কলিজা মোচড় দেয় উজ্জ্বলের রুমুকে নিয়ে যাওয়ার মানেটা উজ্জ্বল যানে।একটা মিথ্যা নাটক সাজিয়ে রুমুকে উজ্জ্বলের আড়ালে নিয়ে গেল!উজ্জ্বল বাইক স্টার্ট দেয় কয়েক মিনিটে পৌঁছে যায় রুমুদের বাড়ি।উজ্জ্বল কোন কিছু তোয়াক্কা না করে রুমুকে জোরে জোরে ডাকতে থাকে উজ্জ্বলের ডাকাডাকিতে উপস্থিত হয় আনিকা এবং রাবেয়া।

তাদের উপস্থিত পেয়ে উজ্জ্বল রাগান্বিত স্বরে বলে,


" আমার বউকে মিথ্যা বলে নিয়ে গেলেন।ঝামেলা করতে চাই না আমার বউকে ফিরিয়ে দিন।"


রাবেয়া তেতে উঠলেন। 


" কে তোর বউ?"


" জানেন না?আপনার একমাত্র মেয়েকে এখানে এনে হাজির করুন।আমি প্রেক্টিক্যালি বুঝিয়ে দিব কে আমার বউ।"


চলবে..

[

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২০

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২০]


বিয়ে করে উজ্জ্বল ভাই  বাড়িতে বউ আনেননি এনেছেন দামী হীরা,যা অমূল্য।রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা চোখে চোখে রাখতে হয়,যত্ন নিতে হয়, সবসময় পাহাড়ায় রাখতে হয়।এই বুঝি উজ্জ্বল ভাইয়ের একটু অলক্ষ্যে কেউ হীরাটি নিয়ে যাবে এসব ভয়ে দিন দিন উজ্জ্বল ভাইয়ের মুখটা শুকিয়ে যাচ্ছে।একদিকে পরিবারের ঘাড়ত্যাড়ামি অপরদিকে রুমুর চিন্তা সব মিলিয়ে উজ্জ্বল ভাই রুদ্ধশ্বাস ছাড়েন।

যারপরনাই এত চিন্তার মাঝে গতরাতে রুমুর সাথে ঝামেলা বেঁধেছে মেয়েটা তাকে ছোঁচা বলে সম্বোধন করেছে।আশ্চর্য! উজ্জ্বল ভাই কি ছোঁচা হতে পারে?চকলেট প্রেমিরা যেমন চকলেট পাগল,আইস্ত্রিম প্রেমিরা যেমন গরম শীত বর্ষা কিছুই না মেনে গ্রোগ্রাসে সময় অসময়ে আইসক্রিমকে বরণ করে নেয়,বিরিয়ানি প্রেমিরা যেমন বিরিয়ানির সুঘ্রাণ পেলে মাতাল হয়ে উঠে তেমনি উজ্জ্বল ভাই তার বউকে দেখলে সকল ধ্যান ধারনা জলাঞ্জলি দিয়ে বেসামাল হয়ে উঠেন।

তাই বলে ছোঁচা ডাকবে!এত বড় অপমান না করলে কি চলে না?অন্যের বউয়ের কাছে কি উজ্জ্বল ভাই আবদার নিয়ে যায়?ঘরে নিজের একখান দামি বউ আছে তাহলে,তাহলে...

এসব বলে ভেবে কাজ নেই।উজ্জ্বল ভাই দ্বিতীয়বার রুদ্ধশ্বাস ছাড়েন।তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি শাড়ি পরে রঙঢঙ করছে, ছবি তুলছে অথচ উজ্জ্বল ভাই নিরবে নিভৃতে সবটা হজম করছেন।


আজ এই বাড়িতে আসার তৃতীয় দিন।উজ্জ্বল সেদিন তার বাবাকে বলেছিল মেহমানকে অন্তত তিনদিন আদর যত্ন করতে হয়।সৈয়দ শামসুল তাই করলেন তিনদিন ছেলে ও ছেলের বউকে একসাথে খাওয়ার অনুমতি দিলেন তবে এরপর থেকে তাদের হাড়ি আলাদা থাকবে।


" চুমু বউ।"


" বলুন।"


" কি বলবো?"


" আপনি ডেকেছেন আপনি জানেন কি বলবেন।"


" ওহ হ্যাঁ।ভালোবাসি।"


" তা তো জানি।"


" উত্তর দিবি না?"


" উত্তর দিয়ে কী বিপদে পড়বো?"


" মানে?"


" শেয়ালকে কখনো মুরগী ধরতে দেখেছেন?"


" হুহ, গ্রমে নানার বাড়িতে দেখেছিলাম।"


"আমি দেখিনি তবে শুনেছি।বিয়ের পর থেকে তা অনুভব করছি।তাই আমার উত্তর এখন দেওয়া যাবে না শেয়ালটা যে ওত পেতে আছে।"


উজ্জ্বল ভাইকে শেয়ালের সাথে তুলনা!বেচারা উজ্জ্বল ভাই ফসফস শ্বাস ছাড়ল।তার মুখের রিয়েকশনটা হলো তার অতি পছন্দের কিবোর্ডের সেন্টি নামক ইমুজিটার মতো(🙂)।তিনি এক মিনিট রুমুর দিকে একই অঙ্গভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলেন।রুমু হাসল।উজ্জ্বল ভাইকে জব্দ করার মতো আনন্দ ইদানীং আর কোন কিছুতে সে পায় না।এই যে রুমু হাসছে উজ্জ্বল ভাই কি ছেড়ে দেওয়ার লোক?হাহ,সে কথা রুমু নিজেও জানে, উজ্জ্বল ভাই ছেড়ে দেওয়ার লোক না।


উজ্জ্বল চুপচাপ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে গিয়ে ফটাফট প্রফাইল চেঞ্জ করল।ছবিটা ছিল উজ্জ্বল আর রুমুর হাস্যজ্বল একটা ছবি সেখানে ক্যাপশনে লিখলো, 

'রাতের আঁধারে শিকার করা আমার মুরগিটা।'

উজ্জ্বল পোস্ট করে চুপচাপ ফোন রেখে বারান্দায় গেল।তার বারান্দা থেকে রুমুদের বাড়ির ছাদ স্পষ্ট দেখা যায়।আম গাছটার আড়ালে কেউ যে আছে বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারে উজ্জ্বল।তবে কে আছে এই ব্যপারটা মোটেও বুঝতে পারেনি।সে আবার রুমে ফিরল নিজেকে আড়ালে রেখে চেক করে বুঝতে পারল আম গাছের ঝোপের আড়ালে হিমেল দাঁড়িয়ে।উজ্জ্বল রেগে গেল না বরং হাই তুলে রুমুকে কাছে টেনে বলে,


" লিপস্টিকের কালারটা তো সুন্দর।এটা না আমি চয়েজ করেছিলাম?"


উজ্জ্বল এতক্ষণ ছিল নুইয়ে যাওয়া মুড়ির মতো অথচ এখন মুড়মুড় ভাবটা এলো কেন!রুমু অবাক হয় তবুও স্বাভাবিক ভাবে প্রত্যুত্তরে বলে,


" হ্যাঁ ওটাই।"


" ঘ্রাণটা উফফ চকলেট চকলেট।"


"খাবেন নাকি?"


" সিরিয়াসলি?"


" হ্যাঁ।"


উজ্জ্বল খুশিতে গদগদ হয় দ্রুত গিয়ে বারান্দার দরজা বন্ধ করে জানলার পর্দা টেনে দেয়।এক জোড়া তৃষ্ণার্ত চোখে আবেগ ঢেলে রুমুর কাছে আসতে রুমু মুচকি হাসে।উজ্জ্বল যেন আরো ঘায়েল হয়।উজ্জ্বল যতটা এগিয়ে আসে ততটাই পিছিয়ে যায় রুমু।দেয়ালের সাথে ঠেসে দাঁড়াতে উজ্জ্বল বাঁকা হাসে সে হয়তো বোঝাতে চায় এবার যাবি কই?উজ্জ্বলের সীমানায় বন্দি তুই চুমু বউ।উজ্জ্বল হাতের আঁজলায় রুমুর গাল পুরে যখনি মাথা ঝুকে তখনি রুমু হাতে থাকা লিপস্টিকটা উজ্জ্বলের হাতে ধরিয়ে বলে,


" নিন খান।"


" হোয়াট দ্যা..."


উজ্জ্বলের মেজাজটা চড়ে গেল সপ্তম আকাশে।লিপস্টিক খাবে মানে কি?উজ্জ্বল ভাই পর পর দুইবার দেয়ালে থাবা দেয়।রুমু প্রথম পর্যায়ে হাসলেও পরবর্তীতে ভয়ে মেয়েটা চুপসে যায়।


" আমি জিজ্ঞেস করলাম খাবেন নাকি আপনি কী বুঝলেন?"


" কি বুঝেছি তুই বুঝিস নি?"


" না আমি তো ভাবলাম লিপস্টিক খাবেন।"


রুমুর ইনোসেন্ট ভাবটা উজ্জ্বলের রাগ বাড়ায় অথচ তার রাগটা রোমান্সের কাছে ফিকে হয়ে আসে।রুমুকে এতটা কাছে পেয়ে সে কি সুযোগটা মিস করবে?না একদমি না।উজ্জ্বল ভাইকে রাগানো যাবে না খুনশুটি করতে গিয়ে যদি রাগিয়ে দেয় তাহলে উজ্জ্বল ভাই কন্ট্রোল হারিয়ে যা তা করে ফেলবে।রুমু উজ্জ্বলের ঘাড়ে হাত ঝুলিয়ে দাঁড়ায়।


" রাগ করছেন কেন?"


" রাগ করিনি।"


" তাহলে চুমু খেলেন না কেন?এতক্ষণে তো রেডি ওয়ান টু থ্রি গো হয়ে যাওয়ার কথা।"


" তোদের মেয়েদের মাথায় কি চলে বলতো?তখন বললি আমার নাকি কন্ট্রোল নাই,আমি ছোঁচা তাহলে এখন এই কথা বলছিস কেন?"


" আমি তো কত কথাই বলি।"


উজ্জ্বল আড় চোখে তাকাল।তার বউটা ভীষণ পাজি।উজ্জ্বল বারান্দার দরজা খুললো সেই সাথে জানলার পর্দা সরিয়ে রুমুকে কোলে তুলে বারান্দায় গেল।রুমু ভয় পায় আকড়ে ধরে উজ্জ্বলের শার্টের কলার।


" উজ্জ্বল কি করছেন কি..আমার বাড়ির ছাদ থেকে কেউ দেখে ফেললে মানসম্মান স্যুপ হয়ে যাবে।"


" হোক স্যুপ।এত ভয় পাচ্ছিস কেন?"


" প্লিজ রুমে চলুন।"


" আশ্চর্য শ্বশুর বাড়ির সামনে বারান্দা থাকলেও তো বিপদ দেখছি।উর্মি আপার বাসায় বারান্দায় এতকিছু করলাম নিষেধ করলি না আর এখন...আমার লাভ লস নাই আমার লাইফটাই লস।একটা বিয়ে করলাম শ্বশুর বাড়ির মধুর হাড়ি কিছুই কপালে জুটলো না।বাবা মা ভিন্ন করে দিল।বউ ছোঁচা বলল।যাও একটা বারান্দা আছে সেই বারান্দাতেও রোমান্স করা নিষিদ্ধ।এই উজ্জ্বলের জীবনে আর কী আছে?"


রুমু ফিক করে হেসে ফেলল।তাদের খুনশুটি ছাদ থেকে দেখছিল হিমেল।হিমেলের মনে জেদ জন্মালো,রাগে বিভোর হয়ে দাঁতে দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে রইল।রুমু ছাদে তাকাতে হিমলে দেখতে পেয়ে ভড়কে যায়।উজ্জ্বলের ঘাড় আরো শক্ত করে ধরে বলে,


" উজ্জ্বল চ..চলুন।হিমেল এখানে।"


" জানি।"


" জানেন মানে?"


" জানি মানে জানি।তাকে দেখাতে হবে তো আমরা কতটা হ্যাপি আছি।"


" উজ্জ্বল আমার ভয় করছে প্লিজ চলুন।"


রুমু পুনরায় হিমেলের পানে তাকায়।উজ্জ্বল রুমুকে নিয়ে চলে যায় রুমে।


" তোর ছবি তোলা শেষ?"


" হুম।"


" তাহলে এখন কী আমাকে সময় দেওয়া যাবে?"


" উজ্জ্বল আমার ভয় করছে হিমেল ভাই হঠাৎ এই বাড়িতে কেন এলো!"


" সে আসতেই পারে তবে সত্যি করে বল রাশেদের সাথে তোর যোগাযোগ হয়?"


" না না।যোগাযোগ হয় না।আপনি বিশ্বাস করছেন না?আপনার রোমান্সের কসম আমি..."


উজ্জ্বল তেতে উঠলো।রুমুকে ঠাস করে কোল থেকে ফেলে দিল বিছানায়।


"কত্ত বড় সাহস উলটা পালটা কসম কাটতে তোকে কেউ বলেছে?তোর উলটা পালটা কসমে যদি আমার রোমান্সে এফেক্ট পড়ে তখন?যদি কলিকাতা হারবালের প্রয়োজন পড়ে যায় তখন কি হবে?"


রুমু চমকে যায় কোন মতে কোমড়ে হাত রেখে উঠে বসে।উজ্জ্বলের প্রশ্নের পালটা জবাব দিয়ে বলে,


" তখন আমিও গান গাইব,আমি জুয়ান একটা মাইয়া,বুড়া জামাইয়ের কাছে আমায় বাবায় দিছে বিয়া।"


" আমি বুড়া!"


ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে উজ্জ্বল।রুমু বাকি গান গাওয়ার আগে উজ্জ্বল শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে,


" আজ তোকে প্র‍্যাক্টিক্যালি বোঝাব কে বুড়া।"


" উজ্জ্বল আপনার এসব প্র‍্যাক্টিকেল বুঝতে বুঝতে এখন আর আমার মাথায় একাডেমির কোন পড়া ঢুকে না।"


শেষোক্ত বাক্যটি কাঁদো কাঁদো সুরে আওড়ালো রুমু।

.

রুমুর পরের দিন সকালটা শুরু হলো ভিন্ন ভাবে।আজকে কেউ তাকে নাস্তা করতে ডাকেনি,যদিও রুমু ভাবতেও পারেনি চাচাজান যা বলেছেন তা করবেন।তবে কি সত্যি সত্যি উজ্জ্বল আর রুমুর হাড়ি আলাদা!

দোকান থেকে গরম গরম পরোটা নিয়ে ফিরল উজ্জ্বল দুজনে একসাথে নাস্তা সেরে বসল।রুমুর মুখটায় আজ আঁধার নেমেছে।চিন্তায় মেয়েটার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে লাগছে।


" তোর কি হয়েছে চুমু বউ?মন খারাপ কেন?"


" আমার কারণে আপনাকে আলাদা করে দিল।চাচাজান যে এমন করবে আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।"


" তোর বাপ আমার বাপ দুজনের ঘাড়ের রগ একটা বাঁকা জানিস না?"


" সেই সাথে আপনারো।"


" কার ছেলে দেখতে হবে তো।"।


" এখন কি করবেন উজ্জ্বল?এমন তো না যে চাকরি পেয়ে যাবেন বা জমানো মোটা অংকের টাকা আছে।"


" তোকে এতকিছু ভাবতে বলেছি আমি?তোর দায়িত্ব আমি নিয়েছি তাই সব চিন্তা আমার।তোর দায়িত্ব শুধু তুই আমাকে সাপোর্ট করবি,আমার পাশে থাকবি মাঝে মাঝে উপরে নিচেও থাকতে পারিস সমস্যা নাই।"


রুমু কোলের বালিশটা ছুড়ে দিল উজ্জ্বলের গায়ে।সিরিয়াস কথায় মজা উড়ানোর মানে আছে?


নার্গিস সকাল থেকে উজ্জ্বল এবং রুমুর উপর নজর রাখছেন।যতই রাগ জেদ দেখানো হোক মন তো মানে না।উজ্জ্বলো কম যায় না দুপুরে বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরল সে।সৈয়দ শামসুল এবং নার্গিস তখন খেতে বসেছেন উজ্জ্বল তাদের দেখে গলা ছেড়ে বলে,


" উচিত কথার ভাত নাই তো কি হয়েছে?বিরিয়ানি তো আছে।আজ থেকে বিরিয়ানি খাব।"


ছেলের কান্ডে নার্গিস আড়ালে মুচকি হাসলেন।সৈয়দ শামসুল তাচ্ছিল্য হেসে বলেন,


" যাও যাও এতই সোজা!কতদিন খেতে পারো দেখবো।"


উজ্জ্বল বাবার কথায় পালটা উত্তর দিয়ে বলে,


"দাঁত আছে যতদিন খেয়ে যাব ততদিন।"

চলবে...


[গল্পটা কে কে পড়ছেন?সবাইকে সাড়া দেওয়ার অনুরোধ রইল।গল্পের কোন চরিত্র ভালোলাগে?উজ্জ্বল নাকি রুমু।]

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৯

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৯]


বাড়িতে বউ এসেছে নতুন বউ সবারি নিশ্চয়ই হই হুল্লোড়ে মেতে থাকার কথা।বউকে বরণ করার কথা।নতুন বউকে নিয়ে আহ্লাদে আটখানা হওয়ার কথা,কিন্তু সেসব কিছুই হয়নি।সাত সকালে সৈয়দ বাড়িতে রুমুর আগমন ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।কেউ খুশি নয় সবার মুখটা ভার হয়ে আছে।রুমুর বুকটা ভার হয়ে যায় কলিজা মুচড়ে উঠে।মেয়েটা কাঁদতে পারে না উর্মি তার হাতটা চেপে দাঁড়িয়ে আছে শক্ত করে।বসার ঘরে নিগূঢ় নিস্তব্ধ পরিবেশ, থেকে থেকে নার্গিসের কান্নার শব্দে ভারি হচ্ছে পরিবেশ।

উজ্জ্বল বুঝে পায় না বাবা মায়ের এতটা রিয়েক্ট করার কি আছে?সে একটা বিয়ে করেছে মা ডা র তো করে আসেনি।উর্মি তামিম দুজনেই নিরব তারা জানতো রুমুর আগমন সবার মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে।উজ্জ্বলের মাথা গরম হয় মায়ের দুহাত ঝেরে বলে,


" আম্মা তাকাও আমার দিকে।তাকাও।"


" তুই ছাড় আমাকে।তোর মতো..."


" আমার মতো কি?"


" তুই তোর কবর খুড়লিরে বাপ।আমার একটা মাত্র ছেলে। আমার কলিজার ধন বিপদের মুখে।"


" কবর খুড়েছি মানে কি?আমি কি করেছি?"


" তুই রাশেদরে চিনস না।অবুঝের মতো কথা বলিস না।"


" আমি অবুঝ?তোমরা অবুঝের মতো কাজ করছো।"


" আমি এতকিছু জানি না।আমি শুধু আমার ছেলেকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখতে চাই আর কোন ঝগড়া বিবাদ চাই না।"


উর্মি এগিয়ে এসে নার্গিসকে জড়িয়ে ধরে বলে,


" আম্মা শুধু শুধু এসব চিন্তা কেন করছো?"


" কেমন চিন্তা করছি?তুইও ভুলে গেলি তোর চাচি তোর সাথে কি কি করেছে।ওই মহিলার মনে কতটা বিষ থাকলে তোর একেরপর এক বিয়ে ভেঙে দিয়েছে,এলাকায় তোর নামে বদনাম রটিয়েছে।"


" আম্মা আমি ভুলিনি।কিন্তু এসব ভেবে আমাদের কাজ নেই।আমাদের ঘরের বউ যদি ঠিক থাকে তবেই হবে।"


নার্গিস উঠে দাঁড়াল অতিদ্রুত এগিয়ে এসে ধরলেন রুমুর হাত।


" মা তুই কথা দে আমার ছেলেকে বিপদে ফেলবি না।"


রুমু ঘাবড়ে যায়।তার নিজেকে মনে হচ্ছে কাঠগড়ায় থাকা আসামি।রুমু একবার তাকায় উজ্জ্বলের পানে আরেকবার তাকায় উর্মির পানে মেয়েটা ঘাবড়ে গিয়ে মাথা নাড়ে।নার্গিস চোখের জল মুছে দৃঢ় হয়ে দাঁড়ান।


" রুমু তোর বয়স কম নিশ্চয়ই আবেগে পড়ে উজ্জ্বলের কাছে এসেছিস।"


রুমু মাথা নাড়ে,


" আবেগে আসবো কেন?উজ্জ্বল ভাই তো আমাকে এটা ওটার লোভ দেখায়নি যে আমি আবেগে আসবো।"


" এবার তুই নিজেই বল সজ্ঞানে বাড়ি ছেড়েছিস?"


" হ্যাঁ সজ্ঞানে বাড়ি ছেড়েছি।"


" আমার ছেলে কি তোকে জোরাজোরি করে বিয়ে করেছে?"


" একদমি না আমি নিজেই বিয়ের প্রস্তাব রেখেছি।"


" তোর মা ভাই যদি কেস-মামলা করে আমার ছেলের জীবন নষ্ট করে এসবের জন্য তুই দায়ী থাকবি আমি আগেই বলে দিলাম।এখন যা যা বলেছিস ভবিষ্যতেও এসব কথা ভুলবি না।"


রুমু চুপ হয়ে যায় মনে মনে মেয়েটা ভাবে,নতুন বউ বেশে লাল শাড়ি না পরে একটা কালো শাড়ি পরা উচিত ছিল।তার আজ শোক দিবস যে ভাবে সবাই জেরা করছে সে তো আসামি।তামিম উজ্জ্বলকে চুপ থাকতে বলে।সৈয়দ শামসুল এতক্ষণে মুখ খুললেন তিনি তার গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলেন,


" এই বিয়ে আমরা মানা না মানায় নিশ্চয়ই তোদের কিছু যায় আসে না।তোরা নিজেদের যুক্তিতে বিয়ে করেছিস।বিয়ে করে ক্ষান্ত হলিনা লুকিয়ে এতটা দিন ছিলি।তোরা যা ভালো মনে করেছিস তাই করেছিস আমার আর কিছু বলার নেই।তবে উজ্জ্বল তুই আমার ছেলে তোর ভরণপোষণের জন্য তুই আমার উপর নির্ভর।যেখানে তুই নিজেকে নিজে সামলাতে পারিস না সেখানে তুই আরেকটা মেয়ের দায়িত্ব নিয়ে নিলি।আমাদের একটাবার জানালিও না।যেহেতু তুই তোর যুক্তির কাছে সঠিক এবার আমিও আমার যুক্তির কাছে সঠিক।তোর কিংবা তোর বউয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না।আজ থেকে তুই তোর রাস্তা ধর।"


এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না উজ্জ্বল।ছেলেটার মাথায় আচমকা যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।এক মুহূর্তে মনে হলো পায়ের নিচের মাটিটাও নড়ে গেছে।বাবার এমন সিদ্ধান্তে উর্মি প্রতিবাদ করল,


" আব্বা এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।উজ্জ্বল আপনার একমাত্র ছেলে।টাকা পয়সা আপনার অভাব আছে?এত এত উপার্জন করেও ছেলে আর ছেলের বউয়ের প্রতি অবিচার কেন করছেন?"


" আমি ওদের বিয়ে করতে বলেছি?নাকি আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিয়েছি।আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।উজ্জ্বলের বউয়ের ভরণপোষণ তার নিজেকেই নিতে হবে,তবে একটা সাহায্য করছি, তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছি না।এ বাড়িতেই তারা থাকবে তবে হাড়ি আলাদা হবে।"


" আব্বা এসব ঠিক না ওরা কি না খেয়ে থাকবে?উজ্জ্বলের ইনকাম আছে যে সে আলাদা সব কিছুর ব্যবস্থা করবে।আমার তো মনে হচ্ছে আপনি সংসার ভাগ করছেন।"


" উর্মি আমার উপর কথা বলবি না।তোর যদি এত মায়া মহাব্বত থাকে ওদের নিয়ে এখান থেকে দূর'হ।"


" এতদিন যখন ওরা আমার কাছে ছিল এখনো থাকবে।তোমাদের কতবার ফোনে বোঝালাম বিয়েটা মেনে নাও আর এখন...এই উজ্জ্বল চল তোরা আমার সাথে যাবি।"


উজ্জ্বল ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।রুদ্ধশাস ছেড়ে বলে,


" আপা আমি কোথাও যাব না।আব্বা বলেছিল পড়াশোনা ছেড়ে ব্যবসায় বসতে ঠিক আছে আজ থেকে আমি ব্যবসায় বসব তখন নিশ্চয়ই আমাকে আকাইম্মা মনে হবে না।"


সৈয়দ শামসুল তাচ্ছিল্য হাসলেন।হাসতে হাসতে পুনরায় বসলেন সোফায়।


" আমার ব্যবসায় বসে এত পাওয়ার তোমাকে দেখাতে হবে না।বুকে দম থাকলে নিজে করে দেখাও এবার কি করবে তুমি সেটা নিজেই ভাব।"


একেরপর এক ধাক্কা হজম হলো না উজ্জ্বলের।প্রচন্ড চিন্তায় যখন তার ভেঙে পড়ার কথা অথচ উজ্জ্বল কঠিন পরিস্থিতিতেও হেসে ফেলল।গলা ঝেরে কেশে বলে,


" আব্বা রুমু এখন অতিথি।আপনার ভাইয়ের মেয়ে তাকে কি অযত্নে রাখলে চলে?আপনার ভাইয়ের কাছে আমি কিন্তু বিচার দিব।"


উজ্জ্বলের এমন আচরণে সবাই ভড়কে যায়।উজ্জ্বল যেন এতে আরো বেশি আনন্দ পায়।


" আব্বা অতিথিকে কিভাবে আপ্যায়ন করবেন সেটা আপনার দায়িত্ব।অন্তত তিনদিন অতিথিকে আদর যত্ন করুন এরপর অতিথির ব্যবস্থা আমি করে নেব।তাছাড়া দুলাভাই এসেছে ভালো মন্দ রান্নার ব্যবস্থা করুন।আপনাদের সব বক্তিতা শেষ?এবার আমি যাই।"


উজ্জ্বল নিজের রুমে চলে গেল আর পেছনে ফেলে গেল পাঁচ জোড়া হতবাক চোখ।

.

বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে আছে উজ্জ্বল মাথাটা কেমন ঝিম ধরে গেছে।পারিপার্শ্বিক চিন্তা এখন তার মাথায় নেই।আব্বা নিশ্চয়ই রাগের দরুনে এসব বলেছে একদিন না একদিন ঠিকি মন গলে যাবে।তবে রাশেদ এখন যে যুদ্ধটা করবে তার বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হলে অবশ্যই পারিবারিক সাহায্য দরকার অথচ উজ্জ্বলের ভাগ্যটাই হয়তো খারাপ সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল।


রুমের পর্দা সরিয়ে রুমুর আগমন ঘটে।রুমুকে দেখেই ছেলেটা বিস্তার হাসে। 


" স্বাগতম ডার্লিং।"


কৌতূহলের চোখ নিয়ে উজ্জ্বলের রুমটা পরখ করল রুমু।


" কতদিন পর এলাম।এই রুমটা আগে আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল।"


" তুই যা দুষ্টু ছিলি।আমার সারা রুম এলোমেলো করে পালিয়ে যেতি।"


" উজ্জ্বল এসব কথা আপনার মনে পড়ে?মিস করেন সেই দিনগুলো?"


"ভীষণ।মনে আছে একবার ডয়ারে থাকা আমার সব শার্টে তুই  কিস করে লিপস্টিকের ছাপ দিয়ে গেছিলি।তোর ঠোঁটের ছাপ দেখে কি যে  তুলকালাম কান্ড করেছি।"


" ওটা তো আমি একটা সিনেমায় দেখে শিখেছিলাম।"


" তুই অনেক দুষ্টু ছিলি রুমু।"


" আপনাকে জ্বালিয়ে আমি খুব আনন্দ পেতাম।"


" বলেছিলাম না এই রুম, এই খাট, এই বালিশ,সবকিছু তোর হবে দেখলি তো প্রমাণ করে দিলাম।"


" আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগছে উজ্জ্বল ভাই।"


" কী প্রশ্ন?"


" চাচাজান যা বলেছে তা আপনি করতে পারবেন?আমি কোন রাস্তা দেখছি না অথচ শেষ মুহূর্তে আপনি হাসতে হাসতে কথা ঘুরিয়ে দিলেন।"


উজ্জ্বল রুমুকে টেনে কোলে বসাল।মেয়েটার উদম পেটে হাত রেখে চেপে ধরল শক্তভাবে।


" এখন এসব ভাবার সময় নেই।আজ তোকে বাড়ি তুলেছি আজ আমার দ্বিতীয় বাসর।"


" ভালো কিছু ভাবতে পারেন না আপনি?"


" এটা মন্দ কিছু? আমি অন্যের বউকে নিয়ে ভেবেছি?আমি আমার বিবাহিত বউকে নিয়ে ভাবছি।"


" এই বাসায় কয়টা বেড রুম?"


" চারটা বেড রুম।কেন?"


" এখন থেকে আপনি আমি আলাদা থাকবো।আপুর বাসায় সুযোগ ছিল না বলে কিছু বলিনি।"


" অসম্ভব।পাষাণ মহিলা এই কথা বলার আগে তোর কলিজা কাঁপেনি?"


" না কাঁপেনি।"


" নাটক করিস না।রাত হলে দেখা যাবে।"

.

উজ্জ্বল বউ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে এবং সেই বউ রুমু এই কথাটা চারিদিকে বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে পড়ল।রাশেদের সুপ্ত মস্তিষ্ক পুনরায় দাউদাউ করে জ্বলছে বাড়ির উঠনে ঘন্টার পর ঘন্টা রুমু আর উজ্জ্বলকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল করেছে,শেষ পর্যায়ে রুমুর মাও ধমকাধমকি শুরু করে কিন্তু কেউ সাহস করে উজ্জ্বলের বাড়ির ত্রিসীমানায় আসার সাহস করেনি।উজ্জেল প্রস্তুত ছিল আজ তো ব্যাটে বলের ছক্কা চলবেই অথচ ঝামেলা খুব বেশি হলো না।রুমু ভয়ে কুঁকড়ে ছিল মেয়েটার ভীতু মুখখানী দেখে নার্গিস অবজ্ঞায় হাসলেন।একবার তো রুমুকে বলেও ফেললেন, "এসব যে হবে জানতি না?ভেবে চিনতে যখন পালিয়েছিস তবে এখন ভয় কেন পাচ্ছিস?শুন,তোর দায়িত্ব যেমন আমার ছেলের উপর তেমনি আমার ছেলের দায়িত্ব তোর উপর।তাকে এসব ঝামেলা থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব কিন্তু তোর।"


সে কথায় রুমু শুধুই মাথা নাড়ে এছাড়া আর কিছুই বলার নেই তার।

.

রাত হলো।রাতের খাবার খেয়ে যে যার রুমে ফিরল।শর্তমতে রুমু আজ আলাদা রুমে থাকবে এতে অবশ্য উজ্জ্বল কিছুই বলল না।রুমুকে আলাদা রুমে রেখে এসে সে নিজের রুমে ফিরল।গা থেকে এক টানে টিশার্ট খুলে রাখল চেয়ারে।আয়নায় দাঁড়িয়ে শরীরটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বিছানায় শুয়ে পড়ে।একাকী রুমটায় গলা ছেড়ে গান ধরে সে গানের মাঝ পর্যায়ে দেখতে পেল রুমু দরজার কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।উজ্জ্বল অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে,


" চুমু বউ তুই এখানে?"


" আপনি ঠিক আছেন কি না দেখতে এলাম।আপনার তো আবার বউ ছাড়া চলে না।"


"ওও দেখা হয়েছে?এবার যা।"


রুমু গাল ফুলাল এগিয়ে এলো উজ্জ্বলের সামনে,


" আপনি একা ঘুমাতে ভয় পাবেন না?"


" না পাব না।এত বছর একাই ঘুমালাম।"


" না আপনি ভয় পাবেন।"


" পাব না।"


" আপনি জানেন না?ছেলেরা রাতে ঘুমাতে ভয় পায় বলেই আমরা মেয়েরা বিয়ে করি।নয়তো জামাই আহামরি কিছুই নয়।"


উজ্জ্বল খকখক করে কেশে উঠল।কাশতে কাশতে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল রুমুকে।নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলে,


" আমার ভীষণ ভয় লাগছে বউ।দেখো না ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।আসো কাছে আসো আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।"


" উজ্জ্বল দম বন্ধ লাগছে ছাড়ুন।"


" আমার ভয় লাগছে ছাড়া যাবে না।"


উজ্জ্বল দরজা বন্ধ করে রুমুকে কোলে নিয়ে বিছানায় যায়।ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,


" রাতে কোল বালিশের উপর অত্যাচার কমাতে আমরা ছেলেরা বিয়ে করি।নয়তো বউ এত আহামরি কিছুই নয়।"


চলবে..

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৮

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৮ ] 



চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে এপাশ ওপাশ চোখের পলক ঘুরাল রুমু।হাতে থাকা টোস্ট বিস্কুটে কামড় বসিয়ে আরেকবার চায়ে চুমুক দিল।সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে সোডিয়ামের আলোয় আলোকিত দোকানটা।টঙ দোকানে টানা তিন ঘন্টা যাবৎ বসে আছে সে।দোকানিও বেশ ভালো রুমুর বিপদ শুনে আস্থা দিয়ে বসতে বলেছেন।

মেয়েটা বসল উজ্জ্বলের নাম্বার সহ অন্য কারো নাম্বার তার মুখস্ত নেই।বাবার নাম্বার মুখস্ত পারলেও এখন বাবাকে ফোন দেওয়া যাবে না।বুদ্ধি করে দোকানির ফেসবুক আইডি থেকে উজ্জেলের আইডিতে মেসেজ পাঠাল।মেসেঞ্জারে বেশ কয়েকবার ফোন করল।অথচ উজ্জ্বল অফ লাইনে ছেলেটা নিশ্চয়ই রুমুকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে গেছে।উজ্জ্বলকে লাইনে না পেয়ে উর্মির আইডি খুঁজে মেসেজ করল ফোন করল অথচ উর্মিও আজ অফ লাইনে।এরা নিশ্চয়ই সবাই চিন্তায় আছে এবং তাকে খুঁজছে।


শেষে কোন উপায় না পেয়ে উজ্জ্বলের বন্ধু সিয়ামকে মেসেজ করল।ভাগ্য ক্রমে সিয়াম তার মেসেজ দেখে এবং উজ্জ্বলের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয়।


উজ্জ্বল দোকানির সাথে কথা বলে সঠিক ঠিকানা নেয় এবং জানায় উজ্জ্বল আসছে।অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল অথচ উজ্জ্বলের আসার নাম নেই।


চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা যথা স্থানে রাখল রুমু। 


" আর কিছু খাইবা মা?"


এক গাল হাসলেন দোকানি।রুমু তার হাসির বিপরীতে মাথা নাড়িয়ে না জানাল।

বাইকের শব্দে মাথা ঘুরাল রুমু,ওই তো উজ্জ্বল এসেছে।ছেলেটা চটজলদি বাইক দাঁড় করিয়ে রুমুর কাছে আসে।


"এখানে কি করছিস?"


" বলবো আগে বাড়ি নিয়ে চলুন।"


উজ্জ্বল কথা বাড়ায় না দোকানিকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুমুকে নিয়ে নিজ গন্তব্যে ছুটতে থাকে।

উজ্জ্বলের গা ঘেষে বসেছে রুমু ছেলেটার গায়ের ঘামের গন্ধ তার নাকে লাগছে। 


" উজ্জ্বল গোসল করেননি?"


" মুতু করার সময় দিসনি তুই আবার আসলি গোসলের খবর নিয়ে।"


" যাহ দুষ্টু।উজ্জ্বল জানেন পায়ে ভীষণ ব্যথা পেয়েছি।ব্যথা করছে।"


" ব্যথা পেলি কি করে?"


" আজ তো সেই দৌড় দিয়েছিলাম।"


" সত্যি করে বলতো রুমু তুই এখানে এলি কি করে?"


" আমি আর উর্মি আপা রাস্তা পার হবো উর্মি আপা রাস্তার মাঝামাঝিতে আমিও পেছন পেছন আসছিলাম এমন সময় দেখলাম আমার পাশেই রাশেদ ভাইয়ার বন্ধু কিরণ রিক্সায়।আমার মুখে মাক্স ছিল তবুও উনি আমাকে বোধহয় চিনে ফেলেছে।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাতে আমি ভীষণ ঘাবড়ে যাই ডানে বামে না তাকিয়ে রাস্তা পার না হয়ে উলটা দিকে হাটতে থাকি।কিরণ ভাই আমাকে রুমু বলে ডেকে উঠে ব্যস তারপর দিলাম সেই এক দৌড়।উনিও আমার পেছন পেছন আসেন।তারপর দিশ হারিয়ে ফেললাম।জানেন অনেক খুঁজেছি কোন রাস্তা দিয়ে এলাম কিংবা বাড়ির রাস্তা কোনটা আমি মেলাতেই পারিনি।গোলকধাঁধার মতো ঘুরতে ঘুরতে দোকানি আঙ্কেলের কাছে সাহায্য চাই।"


" আর আমি তোর ভাইকে সন্দেহের তালিকায় রেখে দুনিয়ার সব গালি একদিনেই দিয়ে দিলাম।বিশ্বাস কর কলিজা হাতে চলে এসেছিল।"


" ওও এত ভয় পাচ্ছিলেন?সকালেই তো কে জানি বলল আমাকে সন্দেহ করে।"


" তোর কর্মকান্ডে সন্দেহ না করে থাকা যায়?রাশেদের সাথে তোর যোগাযোগ হচ্ছে এটা আমি মানতে পারছি না রুমু।যোগাযোগ হতেই পারে কিন্তু আমার কাছে আড়াল করছিস কেন?"


" আড়াল তো করছি না।"


" সত্যটা বললে ক্ষতি কী?"


" আমি সবটা আপনাকে বলতে চাই কিন্তু মুড খারাপ করে দিয়েছেন।যেদিন মনে হবে বলা যায় সেদিন বলব।"


উজ্জ্বল কথা বাড়ায় না।ক্লান্ত শরীরে ভর করেছে ঘুম তার মাঝে রুমু যেভাবে পিঠে লেপ্টে আছে শরীরটা তাকে অন্য বার্তা দিচ্ছে।

.

বাসায় ফিরে সবার বকুনি খেয়ে রুমু খেয়ে দেয়ে কড়া একটা ঘুম দিয়েছে।উজ্জ্বল তার কাজ শেষ করে বাসায় ফিরল রাত বারোটায়।রুমু তখন গভীর ঘুমে মেয়েটাকে বিরক্ত না করে উজ্জ্বল দ্রুত গোসল শেষ করল।আগামীকাল ভাগ্যে কি যে আছে ভাবতেই তার কলিজা কাঁপছে।কাল রুমুকে নিয়ে বাড়ি যাবে,যে ছেলের নিজের ভরণপোষণের খরচ নিজে চালানোর মুরদ নেই সেই ছেলে কি না আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করেছে!আরেকটা মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে।এই সমাজ এসব তো মানবে না।এতে অবশ্য উজ্জ্বলের কিছু যায় আসে না।ভেজা তোয়ালে বারান্দায় রেখে রুমে ফিরল উজ্জ্বল।এলোমেলো ভঙ্গিমায় রুমু ঘুমিয়ে আছে।মেয়েটার মাথা এক দেশে পা আরেক দেশে।টিশার্টের কোনা তুলে পেটের এক পাশ সাদৃশ্যমান।উজ্জ্বল শটান হয়ে শুয়ে পড়ল রুমুকে আঁকড়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,


" রুমু এই রুমু।"


" হু.."


" উঠ আমি গোসল করেছি।"


" হু।"


" আরে কলিজা উঠ না।"


"হু।"


" কি হু হু করছিস উঠ না।"


উজ্জ্বলের ডাকাডাকিতে রুমু চোখ মেলে তাকায়।উজ্জ্বল তার ভেজা শরীর নিয়ে তার সাথে কেমন চিপকে আছে।ঘুম ঘুম চোখে রুমুর মাঝে বিরক্তিরা হানা দেয়।


" উফফ উজ্জ্বল ভাই বিরক্ত করবেন না সরুন তো"


" আরে কে ভাই?আমি তোর বর, হাজবেন্ড, স্বামী,পতি।এই চুমু বউ উঠ না কত রাত কেটে গেল দুরুত্বে।"


" উফ ঘুমাতে দিন।অসময়ে জ্বালানো আপনার সবচেয়ে বড় বাজে স্বভাব।"


উজ্জ্বল বাঁধা মানে না।রুমুকে ঠেলে আরো কাছে নিয়ে আসে।ঘুমন্ত মুখখানি কুচকে উজ্জ্বলকে বকতে থাকে অথচ উজ্জ্বল কি বাঁধা মানে?অনেক দিন পর বউটাকে কাছে পেয়েছে তার ধৈর্য শক্তি ধীরে ধীরে কর্পূরের ন্যায় উড়ে যাচ্ছে।উজ্জ্বলের এলোপাতাড়ি চুমুতে রুমুর আর ঘুম হলো না পিটপিট চাহনিতে উজ্জ্বলকে বলে,


" আমার ঘুমটা..."


" চুপ।বিরক্ত করে না চুমু বউ।"


উজ্জ্বলের বাড়াবাড়িতে রুমুর ঘুম উড়ে যায়।মেয়েটা কাঁদো কাঁদো সুরে বলে,


" এইজন্য এতদিন ইচ্ছা করে ঝগড়া করে দূরে দূরে ছিলাম।কারণ আপনি আমাকে ঘুমাতে দেন না।এতদিন অন্তত শান্তির ঘুম দিয়েছিলাম আজ আবার...।"


উজ্জ্বল মুখ তুলে তাকাল।তার কানে যেন অবিশ্বাস্য কোন বাক্য প্রবেশ করেছে।রুমুকে ছেড়ে উঠে বসল সে।


" তার মানে!আমাকে বোকা বানালি?"


" আমি কি করবো?আপনি জানেন না আমি ঘুম পাগল।"


" তুই জানিস না আমি তোর জন্য পাগল।"


" উজ্জ্বল..."


" আজ থেকে তোর ঘুম হারাম করার দায়িত্ব আমার।গত কয়েকদিনে তোর চালাকি সুদে আসলে ফেরত নেব।"


রুমু চোখ ছোট করে তাকায়।উজ্জ্বলের বক্ষে নিজেকে অনুভব করতে চুপসে যায়।


" কাল যাবে তো শ্বশুর বাড়ি দ্বিতীয় বাসরের ব্যবস্থা করবো চুমু বউ?"


" আমার ভাই আপনার বাসরে কেরোসিন ঢেলে আ গু ন লাগিয়ে দেবে।"


" চুপ।রোমান্টিক মুহূর্তে এসব জাদরেলের কথা তুলিস কেন?"


" আপনি আমাকে ধমক দিচ্ছেন?থাকবো না আপনার সাথে।"


রুমু সুযোগ খুঁজে উঠে যেতে চায় কিন্তু উজ্জ্বল তার চালাকি বুঝতে পেরে দেহের সাহায্যে চেপে ধরে।উজ্জ্বলের বলীয়ান দেহে রুমু পারে না।


" আমার সাথে থাকবি না?চালাকি করছিস?"


উজ্জ্বল হাসে।নিগূঢ় নিস্তব্ধ সময়টাতে উজ্জ্বলের বুকের কামড়ের দাগটাতে রুমুর চোখ লাগে।মেয়েটা সেই দাগে আঙুলের সাহায্যে ছুঁতে চোখ ভিজে আসে।নিজের জেদের কাছে হেরে কতটা কষ্ট দিল এই মানুষটাকে।বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে উজ্জ্বল রুমুর চোখ মুছে।রুমু ভেবেছিল উজ্জ্বল তাকে মায়া দেখাচ্ছে অথচ কন্ট্রোললেস উজ্জ্বল পালটা আক্রমণ দেখিয়ে দাঁতের সাহায্যে পিষে দেয় রুমুর ঘাড়, গলা।এসব তো নতুন নয় দাঁতে দাঁত চেপে উজ্জ্বলের এসব পাগলামো সহ্য করছে মেয়েটা।

.

সময়টা সকাল ছয়টা।বিয়ের লাল শাড়ি পরে উজ্জ্বলের বাইক চেপে বসেছে রুমু।উর্মি তামিম তারা সিএনজি করে আসছে।শাড়ি পরে উজ্জ্বলের বাইকে উঠা রুমুর এই প্রথম না।গায়ে হলুদের রাতেও পালিয়েছিল উজ্জ্বলের বাইক বসে।মন মস্তিষ্কের চিন্তাদের ছুটি জানিয়ে উজ্জ্বলের পেট জড়িয়ে বসেছে সে। বাতাসের দাপটে উড়ছে তার চুল।নব বধূর এতটা হই হুল্লোড় দেখলে নিশ্চয়ই যে কেউ অবাক হবে।লাল চুড়িগুলো মেয়েটার হাতে কি সুন্দর মানিয়েছে, গলায় সরু স্বর্নের চিকন চেইনটা গলাটাকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে।উজ্জ্বল তার বউয়ের শতরূপে ঢোক গিলে।সাত সকালের শীতল পরিবেশে রুমুর কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে সারাটা রাত উজ্জ্বল তাকে ঘুমাতে দেয়নি এই ছেলেটার এত তেজোময় ভাব দেখলে রুমুর ভয় লাগে।আর কারো ভাগ্যে পড়ার ছিল না?তার ভাগ্যেই কেন পড়তে গেল!


পেটে আবদ্ধ থাকা রুমুর হাতটা উজ্জ্বল আকড়ে ধরে।হাতের পৃষ্ঠে চুমু খেয়ে বলে,


"চুমু বউ চা চলবে?"


" হু।"


উজ্জ্বল রাস্তার ধারে বাইক থামায়।একটা টং দোকানে দুই কাপ চায়ের কথা বলে এগিয়ে আসলো বাইকের সামনে।রুমু তখন হাত তুলে হাই দিচ্ছিলো,হাত তোলার দরুনে শাড়ি সরে রুমুর পেটটা সাদৃশ্যমান হয়।উজ্জ্বল সুযোগ বুঝে রুমুর পেটে চিমটি কেটে বলে,


" বড্ড অসময় বউ,এখন তোমার হটনেস না ছড়ালে বেশি খুশি হব।

চলবে....

 যারা ভেবেছিলেন রুমুকে রাশেদ নিয়ে গেছে তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা🫣

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৭

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৭ ] 


ভেজা চুল ঝারতে ঝারতে গানের সুর তুলল রুমু।আকাশটা আজ ঝকঝক করছে।সাদা নীল মিশে একি একাকার সৌন্দর্য!উজ্জ্বল ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে রুমুর পানে।মেয়েটা সেচ্ছায় উজ্জ্বলের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করছে।সদ্য ফোটা গোলাপের ন্যায় স্নিগ্ধ আর আকর্ষনীয় লাগছে তাকে।উজ্জ্বল রুমুর পানে তাকিয়ে বালিশ আঁকড়ে বসে আছে বালিশের কোনা কামড়ে কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,


" এই চুমু বউ।"


"কে যেন বলেছিল কুত্তী বউ।"


" ভুল কিছু বলেছিলাম?"


"একদমি না।"


" তাহলে?"


রুমু চুপচাপ রইল।উজ্জ্বলকে ইদানীং কম পাত্তা দিচ্ছে মেয়েটা।


" এইইই বউ, তোকে একটু ছুঁই?একটুখানি আদর করবো।"


" এক কামড়ে এত ভদ্র হয়ে গেলেন!অনুমতিও নিচ্ছেন!এখন যদি অনুমতি না দি তাহলে কি গতরাতের মতো কান্না করবেন?"


" খবরদার আমার কান্না নিয়ে মজা নিবি না।তুই জানিস না আমি আবেগ অনুভূতি কন্ট্রোল করতে পারিনা।

তবে আমার মাথায় একটা প্রশ্ন এখনো ঘুরছে তুই কি সত্যিই রাশেদের কথায় আমার সাথে এসব করছিস?"


উজ্জ্বলের কথা শুনতেই রুমুর মাথা গরম হয়ে গেল।মেয়েটা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,


" আবার সন্দেহ!উজ্জ্বল আবার সন্দেহ করছেন।"


" রাশেদের কথায় আমি স্পষ্ট বুঝেছি তোদের মধ্যে কোন সাংঘাতিক পরিকল্পনা চলছে।সাবধান করছি রুমু, আমাকে ঠকানোর চিন্তা তোর মাথায় যদি কোনদিন আসেও নিজেকে বাঁচাতে হলেও এসব ঝেরে ফেলবি।"


" আমার মনে বিষ থাকলে যা করার আগেই করে দিতাম।ভেবেছিলাম সত্যিটা বলবো কিন্তু তার আগেই আপনি জল ঘোলা করলেন।আমাকে সন্দেহ করছেন,এমন ভাব করলেন আমি যেন....থাক থেমে যাই যেদিন আমার মন চাইবে সেদিন সত্যটা বলবো।"


" এই যে গলা তুলে কথা বলছিস,সত্যটা এড়িয়ে যাচ্ছিস তোর কি ধারণা উজ্জ্বল এতই সোজা?উজ্জ্বল কি এসবের জন্য কঠোর হবে না?তবে তুই ভুল।যতদিন আমি তোকে মাথায় তুলে রাখবো তোর সুখ ততদিন।যেদিন তোর কৃতকর্মের জন্য মাথা থেকে আছাড় দেব সেদিন বুঝবি এই উজ্জ্বল কি।" 


রুমু ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।কিছুটা এগিয়ে এসে তর্জনির আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিল উজ্জ্বলের গাল।কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলে,


" এই যে প্রতিবার রোমান্সের উচিলায় আমায় কোল থেকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলেন এটা কি আছাড় নয়?তবুও এখন আবার থ্রেট দিচ্ছেন আছাড় দেবেন আপনার তো সাহস কম নয়।"


" আমার সিরিয়াস কথায় তুই এসব বলে মুড পালটে দিস কেন বলতো?"


রুমু সরে দাঁড়ায়।এই যে উজ্জ্বল গলে যাচ্ছে এই রূপটা দেখতে তার ভীষণ ভালোলাগে। উজ্জ্বল উঠে দাঁড়ায় তার এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়।


" চুমু বউ একটা প্রশ্ন করবো?"


" হুম।"


" তুই আমাকে সত্যি ভালোবাসিস তো?"


" ভালোবাসা কারে কয়?"


" জানিনা।"


"আমিও জানিনা।"


" তুই এমন কেন?"


" কেমন?"


"আমাকে বড্ড জ্বালাচ্ছিস।"


রুমু প্রত্যুত্তর করে না।উজ্জ্বলের অনাবৃত দেহে তাকিয়ে বুকে হাত রাখে।কামড়ের অংশটায় দাগ পড়ে আছে।রুমু সেই দাগে ঠোঁট ছোঁয়ায়।উজ্জ্বল সেই সুযোগটা কাজে লাগায় রুমুর কোমড়ে হাত ঠেকিয়ে  বুকের সাথে মেশায়।


" শ্বশুর বাড়ি যাবি?"


" কেন যাব না?"


" মানসিক ভাবে প্রস্তুত?একটা ঝড়ের কবলে পড়বি কিন্তু।"


" আপনি আছেন তো।"


" আমি ততক্ষণ পারবো যতক্ষণ তুই আমার সহ যোদ্ধা থাকবি।আমার এত যুদ্ধে তুই যদি না থাকিস তবে আমার পরাজয় নিশ্চিত।"


রুমু কথা বাড়ায় না।উজ্জ্বলের বুকে মাথা গুটিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

.

সকালের নাস্তায় তামিমের দেখা নেই ছেলেটা অফিসে চলে গেছে।উর্মি রুমুর অপেক্ষায় ছিল এতক্ষণ সবাইকে খাবার বেড়ে সেও বসলো।উজ্জ্বল আজ রুমুর পাশে নাস্তা খেতে বসেছে ব্যপারটা দেখে উর্মি বলে,


" তোমাদের বনিবনা হয়েছে?গ্রেট।"


উজ্জ্বল বিরস মুখে বলে,


" আমার বউটাকে তুমি চালাক বানাচ্ছো আপা।তুমি যেমন দুলাভাইকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাও সেও এমন করছে।"


" তোরা ব্যাডা জাত খুব ভালো?চুপচাপ খা আরেকটা কথা শুন,আম্মা ফোন করেছে চাচি নাকি মামলার ধমকি দিয়েছে।"


" তো?মামলা টামলা করলে আমার কী?আমি কাল যাচ্ছি এলাকায়।একা যাব না বউ নিয়ে যাব।"


"সর্বনাশ এলাকায় তবে আ গু ন জ্বলবে।"


" হুহ।ব্যবস্থা করে যাব।এইজন্যই তো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম হাতের কাজ শেষ করতে হবে।খেয়ে দেয়ে আমি বের হব।"


" সেকি আমি তো ভাবলাম শপিং করতে যাব।বিয়ের পর রুমুকে কিছু দেওয়া হয়নি তোর ভাইয়া বলল তোদের নিয়ে যেতে।"


" শপিং!মানে ঘরের বাইরে যেতে হবে!না না রুমুকে বের করবে না রিস্ক আছে।"


" কিসের রিস্ক?ওর ভাই এখানে আসবে কোথা থেকে?"


" আসতেও পারে।রাশেদকে চেনো না।সে বড্ড সেয়ানা লোক বুঝলে।"


" তুইও চল আমাদের সাথে।"


" আমি যেতে পারবো না কাজ আছে।"


" ঠিক আছে তাহলে আমরা একাই যাই।"


" না না।একা যাবে না রাশেদের সাথে যদি দেখা হয়ে যায় তখন কি করবে?ভালোর জন্য বলছি বের হইও না।"


" কিছু হবে না।তুই ফাও চিন্তা করিস না তো।"


উজ্জ্বল অনেকবার বারণ করল কিন্তু উর্মি কথা শুনল না।উজ্জ্বল নিজ কাজে বেরিয়ে গেল অপরদিকে রুমু এবং উর্মি দুজনে বেরিয়ে গেল শপিং এর উদ্দেশ্যে।

রুমুর জন্য কিছু গোল্ডের জুয়েলারি কিনে শাড়ি কেনার উদ্দেশ্যে অন্য আরেকটি দোকানে যায়।দুজনে কেনাকাটায় এতটাই মগ্ন ছিল রাশেদের ভয়ে সতর্ক থাকার কথা ভুলেও গেল।

.

দ্বিপ্রহরে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে উর্মি মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে।উজ্জ্বল দ্রুত বাইক রেখে উর্মির কাছে আসল,


" কিরে আপা রুমু কোথায়?"


" আ..আমরা রাস্তা পার করবো বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম রুমু আমার পেছনেই ছিল হঠাৎ মেয়েটা গায়েব।আধাঘন্টা যাবৎ খুঁজে যাচ্ছি আমি ওঁকে পাচ্ছি না উজ্জ্বল।"


উজ্জ্বলের বুকটা কেঁপে উঠল।ভয়ে শরীরটা তারও কাঁপছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কোন সিসি ক্যামেরা আছে কি না, কিন্তু নেই।


" তুমি ফোন দিয়েছিলে?"


" হ্যাঁ কিন্তু রুমুর ফোন বন্ধ।"


" আমি বলেছিলাম বের হইও না।সব কাজে বাড়াবাড়ি।"


" আমি বুঝতে পারছি না।রুমুকে কোথায় পাবি?"


" জানি না।মাথা কাজ করছে না।কি করবো আমি।"


রুমুকে খোঁজার উদ্দেশ্যে সারটাদিন কেটে গেল।সন্ধ্যার সময় উজ্জ্বল পুনরায় দিপুকে ফোন করল ,রাশেদের বাড়ির আশেপাশে উজ্জ্বল আগে থেকেই লোক লেগে ছিল অথচ আশ্চর্যের বিষয় কেউ রুমুকে দেখেনি।এমনকি কাজের মহিলা রহিমাও জানায় রুমুদের বাড়ির পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক আগের মতো।তাহলে রুমু কোথায় গেল?


চলবে..

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৬ শেষ অংশ

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৬ বর্ধিত অংশ] 


উর্মির উপর দিয়ে যে কি একটা ঝড় যাচ্ছে এই কথা কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়।বাড়ি থেকে বাবা মা ফোন করে বারবার ধমকিধামকি করছে এদিকে রুমু পা কেটে বসে আছে।এই বিয়ে নিয়ে বাবা মা কেউ সন্তুষ্ট নয় একমাত্র ছেলের এমন বিয়ে তাও কি না শত্রু পক্ষের সাথে এই ব্যপারটা কে মানতে পারবে?উজ্জ্বল রাগারাগি করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে তামিম অফিস থেকে বাসায় ফিরে যখন জানল এই সাংঘাতিক কান্ডের কথা তখন আর ধৈর্য কুলায়নি।মুখে যা এসেছে তাই বলে বকাবকি করেছে উজ্জ্বলকে।উজ্জ্বল প্রথম পর্যায়ে সব হজম করলেও পরবর্তীতে আর হজম করার ধৈর্য রইল না।

নিজ কক্ষে ফিরে সশব্দে দরজা বন্ধ করে  রুমুকে বলে,


" তোর ভাইয়ের সাথে কি সলাপরামর্শ চলছে?আমাকে মারবি?নাকি আমার পরিবারকে মারবি?তার মানে ভাই বোন মিলে এসব নাটক করলি?এই যে পালিয়ে এসে বিয়ের কথা তোলা,হঠাৎ করে আমার সাথে ভালোবাসা-বাসি খেলা এসব তোর নাটক ছিল?"


রুমু চমকে গিয়ে ঢোক গিলল।তার মানে উজ্জ্বল কিছু আঁচ করেছে!উজ্জ্বল কি কিছু জেনে ফেলল?


" কি হলো মুখে কেন কোন কথা নেই ?"


" এই কয়েকদিনে আপনার কি মনে হয়েছে আমি নাটক করেছি?"


" করতেও তো পারিস।"


" এই চিনলেন আমাকে?"


" তুই রাশেদের বোন।সবচেয়ে বড় কথা কার পেটের মেয়ে আমি জানি তো।তোর মা স্টার জলসা, জি বাংলা সিরিয়ালের কুটনি মহিলাগুলোর থেকেও বেশি ভয়াবহ।এই মহিলার মেয়ে হয়ে ঝামেলা যে পাকাবি না তার গ্যারান্টি তো আমি পাচ্ছি না।তোর ভাইয়ের সাথে যে তোর ফোনে কথা হয় কি ভাবলি আমি কোনদিন জানবো না?"


রুমু রেগে গেল পালটা ধমকে উজ্জ্বলকে বলে,


"আপনি তো সব জানেন।আমার মা খারাপ কুটনি,আমার ভাই শয়তান 

তাহলে এতদিন আমার পেছনে ঘুরলেন কেন?"


" এই আমাকে ধমক দিবি না।"


" একশো বার দেব।সত্য মিথ্যা আপনাকে এখন আর বলে লাভ নেই।আপনার ত্যাড়া মাথায় যেটা ঢুকেছে সেটাই আপনার কাছে সত্যি মনে হবে।তাই আমি আর কোন মতামত দিতে পারবো না।দিতে বাধ্য নই।"


" তুই বাড়াবাড়ি করছিস রুমু।আমার মাথা হাই ভোল্টেজ গরম আছে লোড নিতে পারছে না।তোকে সাবধান করলাম যে কোন সময় যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে।"


" কী ঘটবে?বউ হিসাবে অস্বীকার করবেন?"


"তুই বেশি বকছিস রুমু।"


" আপনি কম করছেন?বিয়ের স্বাদ মিটে গেছে?এখন কি আবার ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবছেন?"


ডিভোর্স শব্দটা উজ্জ্বলের রাগ আরো বাড়িয়ে দেয়।ছেলেটা রাগের দরুনে

রুমুর গলা চেপে ধরে উজ্জ্বল।রুমুও কম যায় না পালটা উজ্জ্বলের গলা চেপে ধরে।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে একজন আগুন হলে অন্যজন হতে হয় পানি।অথচ রুমু উজ্জ্বল কেউ পানি নয় দুজনেই ধাউধাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন।উজ্জ্বল রুমুর গলা ছেড়ে দিতে রুমুও উজ্জ্বলের গলা ছেড়ে দেয়।ঝামেলা বোধহয় এখানে শেষ হলেও পারতো কিন্তু তা বুঝি হওয়ার নয়।


রুমু গলা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বলের খোলা শার্ট সরিয়ে বুকের মধ্যে কামড় বসায়।এক কামড়ে সারা শরীর ব্যথায় টনটন করে বিবশ হয়ে যায়।রুমু এতটাই জোরে কামড় দিল এক দলা মাংস অল্পের জন্য মেয়েটার মুখে চলে আসেনি।উজ্জ্বল রুমুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বুক চেপে ধরে।


এহেন কান্ডে ছেলেটার রাগ জেদ কোথায় যেন  উড়ে গিয়ে তার অবাকের পাল্লা ভারি হয়।মনে প্রশ্ন আসে,রুমু তো আস্ত একটা জল্লাদ মহিলা!


উজ্জ্বল এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না।দাঁতের তলায় দাঁত পিষে বুকে হাত চেপে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

রুমু তখন ক্ষুদার্ত হায়নার ন্যায় ফুসফাস করছিল।

.


" আপনাকে কে কামড়ালো!এতটা ভয়াবহ কামড়!এই আপনি কোন ভয়ংকর সাইকো কিলারের হাতে পড়েননি তো?"


" বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সারুন।"


" ইস অল্পের জন্য মাংস উঠে আসেনি।পুরো দাঁতটাই দেবে গেছিল?কতখানি রক্ত গেল, রাক্ষসের পাল্লায় পড়লেন নাকি?"


কটমট দৃষ্টিতে নার্সের দিকে তাকিয়ে সরে গেল উজ্জ্বল।একটা মহিলা নার্সের সামনে খালি গায়ে বসে থাকতে তার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার মাঝে রুমুকে নিয়ে যাচ্ছে তাই কথা বলে যাচ্ছে।এসব আর সহ্য হচ্ছে না তার।উজ্জ্বল ইমার্জেন্সিতে থাকা একজন ডিউটি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলে,


" আপনার নার্সকে বলুন থামতে।ক্ষত স্থানটা আপনার ব্যান্ডেজ করার কথা ছিল আর আপনি ফোনে প্রেমালাপ করছেন?নেব না এই হসপিটালের চিকিৎসা তবে আমি এমনি এমনি তো যাব না।অভিযোগ জানিয়ে যাব।"


উজ্জ্বল যেতে নিলে ডিউটি ডাক্তার দ্রুত তাকে ডেকে উঠে।


" আরে যাবেন না।আমার কাজ শেষ আপনি বসুন।"


উজ্জ্বল বসলো।বুকের ব্যথায় তার শ্বাস আটকে আসছে।দু'চোখ প্রতিবার ঝাপসা হচ্ছে কান্না লুকানোর এমন বাহানা এর আগে করা হয়নি তার।তাই তো এ বেলায় ভীষণ অপটু।নার্স এবং ডাক্তার উভয় বুঝতে পারলো উজ্জ্বল কাঁদতে চাইছে তারা একে অপরকে ইশারা করে চুপ রইল।


হসপিটালের কাজ শেষ করে উজ্জ্বল নিজের জন্য শার্ট কিনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।রক্তাক্ত শার্ট নিয়ে বাসায় ফিরলে একশো একটা প্রশ্নের জবাবদিহি করতে হবে, রুমুকেও অপমানিত হতে হবে এসব ভেবে নতুন শার্ট গায়ে জড়ালো ছেলেটা।

স্প্রিডে বাইক চালাতে চালাতে অনেক্ষণ কাঁদলো সে।কেন কাঁদলো নিজেও জানে ন।মনের ভেতরে রাগ জমেছে,অনেক প্রশ্ন খেলা করছে।এভাবে রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি তাকে ঠান্ডা মাথায় সবটা সামলাতে হতো অথচ সে বেফাঁস রাগ দেখিয়ে জল ঘোলা করলো।

কথায় কথায় রুমুকে আঘাত করাও কি ঠিক ছিল?এমন কন্ট্রোললেস হলে ভবিষ্যত অন্ধকার।


তবে উজ্জ্বল রুমুর এমন রণচণ্ডী রূপ আশা করেনি।রুমু যে এতটা রাগি জেদি সে আগে ভাবেনি রাগ থাকবে স্বাভাবিক তাই বলে এতটা!কই এই মেয়েটাকে বাইরে থেকে তো এমন বোঝা যায় না।


উজ্জ্বল রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরল।তামিম দরজা খুলে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।উজ্জ্বল দরজা বন্ধ করে চলে গেল নিজের কক্ষে।উর্মি রুমুর পাশে শুয়ে দুজনেই ঘুমিয়ে আছে।এই পর্যায়ে উর্মির প্রতি পালটা জেদ জন্মালো তার।নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে এমন করেছে উজ্জ্বল যেন রুমে আসতে না পারে।


উজ্জ্বল গটগটিয়ে অন্য রুমে চলে গেল তামিম পর্দার আড়ালে সবটা দেখলো।চুপচাপ উর্মির কাছে গিয়ে ডেকে আনলো তাকে।যা হয়েছে, হয়েছে এখন তাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে না ঢোকাই ভালো।উর্মি ভেবেছিল উজ্জ্বলকে আজকে আর রুমুর সাথে থাকতে দেবে না এটাই উজ্জ্বলের শাস্তি কিন্তু তামিমের আদেশে সে আর নিজের পরিকল্পনা সফল করতে পারলো না।


রান্না ঘর থেকে ঝনঝন আওয়াজ পেতে উজ্জ্বল বুঝতে পারে উর্মি নিশ্চয়ই উঠে গেছে।ছেলেটা দেরি করেনি দ্রুত চলে গেল নিজের কক্ষে এবং দ্রুত হাতে দরজা বন্ধ করে নিশ্চিন্ত হতো।রুমু ঘুমিয়ে আছে রুমুর পাশে চুপটি করে শুয়ে পড়লো সে।


রাত বাড়লো অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল।রুমু চোখ খুলে পাশে তাকাতে উজ্জ্বলকে দেখতে পেয়ে ঢোক গিলল।তখনকার কামড়ের কথা মনে পড়তে অনুশোচনায় ভরে গেল মন।উজ্জ্বলের বুক থেকে ধীরে ধীরে জামাটা সরাতে বড় ব্যান্ডেজ দেখে আতঁকে উঠে সে।বন্ধ চোখের পাতা ফটাফট খুলে ফেলল উজ্জ্বল হঠাৎ দুজনের চোখাচোখি হতে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রুমু।


" কুত্তী বউ!"


উজ্জ্বলের ধমকে কেঁপে উঠলো রুমু।দ্রুত পায়ে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পায়ের তালু যখন মেঝেতে লাগে ব্যথায় পা টনটন করতে ছিটকে পড়ে সে।উজ্জ্বল উঠে এসে দ্রুত রুমুকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসায়।


" কোথায় যাবি?"


" জাহান্নামে।"


" যে নারী স্বামীকে কামড়াকামড়ি করে সেই নারী এমনিতেও জাহান্নামেই যাবে।"


" ওহ আচ্ছা।যে স্বামী রোমান্সের নামে কামড়াকামড়ি করে সে বুঝি খুব সোওয়াব কামিয়ে ফেলবে?"


" ওটা কামড়াকামড়ি না লাভ বাইট মুর্খ।"


রুমু প্রত্যুত্তর করে না।সটান হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। উজ্জ্বল নিজেও শুয়ে পড়ে।দুজনের মাঝে ছেঁয়ে যায় নীরবতা।

আগ বাড়িয়ে কেউ কারো সাথে কথা বলে না।এভাবে কেটে যায় আরো দুইদিন দুইরাত।উজ্জ্বল আর রুমুর মাঝে বেড়েছে দুরত্ব।উজ্জ্বল আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চাইলেও রুমু বলেনি তীব্র জেদটাকে আঁকড়ে ধরে নিরবতাকে আপন করেছে।


শুনশান নিরবতা।আরেকটি রাত এসেছে যে রাতে উজ্জ্বল এবং রুমু দুজনে দু'কোনায়।হঠাৎ উজ্জ্বলের ফ্যাচফ্যাচ নাকের শব্দে রুমু উঠে বসে এবং মাথা তুলে তাকাতে দেখতে পায় উজ্জ্বল কাঁদছে।উজ্জ্বলের মতো শক্তপোক্ত,দেমাকী ছেলে কাঁদছে!ব্যপারটা যেন বেশ আশ্চর্যের বিষয়।


" উজ্জ্বল আপনি কাঁদছেন?"


" ক..কই।"


রুমু হাত বাড়িয়ে উজ্জ্বলের গাল ছুঁয়ে দেয় ভেজা গাল দেখে সহজে বুঝতে পারে উজ্জ্বল কাঁদছে।


" একি আপনি কাঁদছেন অথচ বলছেন কাঁদছেন না।কি হয়েছে দেখি..."


রুমু উজ্জ্বলকে টেনে ঘুরায়।উজ্জ্বল জেদ দেখিয়ে বালিশে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে।রুমুও কম যায় না বালিশ টেনে সরিয়ে ফেলে উজ্জ্বল কান্না আটকাতে না পেরে রুমুর কোলে মাথা রাখে তারপর শুরু হয় তার কান্নার জোয়ার।

যতটা সময় যায় উজ্জ্বলের কান্না ততই বাড়ে।বাচ্চাদের মতো হেঁচকি দিতে দিতে নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে যায়।


" আপনি কাঁদছেন কেন?"


" জানি না।"


" মানে কি?এই কান্না থামান।"


" থা..থামাতে পারছি না।আমি কান্না থামাতে পারছি নারে বউ।আরো জোরে কাঁদলে শান্তি লাগতো।"


" আরে কি হয়েছে। এই শুনেন এভাবে কাঁদে না আপনি বড় হয়েছেন।"


" কান্না কন্ট্রোলে আসছে না।আমি সব গুলিয়ে ফেলছি।"


উজ্জ্বল এভাবেই কাঁদতে থাকে অনেকক্ষণ।রুমু বুঝিয়েও উজ্জ্বলকে শান্ত করতে পারলো না।কালক্রমে রুমু বুঝতে পারলো উজ্জ্বলের কোন দিক দিয়েই কন্ট্রোল নেই না রাগে জেদে, রোমান্সে না হাসিতে না কান্নায়।


রাত শেষ হওয়ার পথে উজ্জ্বলেরো কান্না থেমে এলো।ছেলেটা বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুঁয়ে বসল বিছানায়।রুমুর প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি সে এড়িয়ে বলে,


"তোর চুমু খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি রিস্ক নিব না।তুই কুত্তী কখন জানি চুমু দেওয়ার উচিলায় আমার ঠোঁট কামড়ে পালিয়ে যাস।অবশ্য তোকে এসব কামড়াকামড়ির ট্রেনিং আমি দিয়েছিলাম।এখন তার সাইডইফেক্ট ভোগ করছি।"

চলবে....


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৬

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৬ ]


রুমুর প্রতি প্রচন্ড রাগে উজ্জ্বলের শরীরটা থরথর করে কাঁপছে অথচ এই রাগটা কিছুতেই তুলতে পারছে না সে।কাউকে উদুম কেলানি দিলে মনটা শান্ত হতো।রুমুর পরিবর্তে অন্য কেউ হলে এতক্ষণে মারতে মারতে আধমরা করে ছাড়তো।দুঃখের বিষয় এই আদুরে একটা বউকে কি করে গায়ে হাত তুলবে?এসব কথা ভাবলেও গায়ে কাঁপুন ধরে।উজ্জ্বলের কোন কন্ট্রোল নেই।কন্ট্রোললেস এই মানুষটা যে নিজের রাগ কত কষ্টে কন্ট্রোল করার মিছে চেষ্টা করছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

এত ধৈর্য অধৈর্যের পালা অতিক্রম করে পানির গ্লাসটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলল সে।হঠাৎ ভাঙচুরে চমকে যায় রুমু কিছু বুঝে উঠার আগে একে একে হাতের কাছে সব ভাঙতে থাকে উজ্জ্বল।অতিরিক্ত রাগে নিজের গায়ের শার্টটা এক টানে খুলতে সব বোতাম ছিটকে বেরিয়ে আসে।


" উজ্জ্বল!"


রুমুর ডাক উজ্জ্বলের কর্ণকুহরে আসতে উজ্জ্বল থেমে যায়।


" চুমু বউ ওহ না রুমু বউ তোর মনে যে এত শয়তানি এটা তো আমি ভাবতেও পারিনি।"


" আমি কি করেছি?"


" কিছু করিসনি।ইদানীং কৃপণ হয়ে গেছিস আমার ওষুধ কম দিচ্ছিস?"


" কি..কিসের ওষুধ? "


" উমম, চুমু বউটা কিচ্ছু বুঝেনা?তোকে এক চান্সেই পাকা বানিয়ে দিয়েছিলাম তাহলে এখন আবার কিসের প্রশ্ন করিস?"


রুমু গলা ঝারে এই ছেলের মতিগতি তার ঠাহরে আসছে না।এই রাগ দেখালো এখন আবার রোমান্সের কথা তুলছে কেন?


" রুমু আমার রাগটা মোটেও কমেনি তোকে ভালো মতো চটকে দিলে আমার রাগ কমতো।"


" আমি কি করেছি?"


" তুই আমাকে ঠকাচ্ছিস না তো?সিরিয়াস প্রশ্ন করেছি।"


" আপনার এমন কেন মনে হলো?"


" সন্দেহ ছাড়া নিশ্চয়ই কথাটা তুলিনি।"


" সন্দেহ!কয়টা দিনের সংসার?ওহ না সংসার হয়ে উঠেনি একটা সম্পর্ক।কয়টা দিনের সম্পর্ক আমাদের?এখনি সন্দেহ তুলছেন?সব ফেলে সব মিথ্যা করে আমি আপনার কাছে ছুটে এসেছি আর আপনি...আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন?"


রুমু ভীষণ রেগে গেল।রুমুর পালটা রাগে উজ্জ্বল নিজেও বেফাঁস ফেসে গেছে।সে ভাবতেও পারেনি 'সন্দেহ' শব্দটা এতটা ভয়াবহ ভাবে আঘাত করবে মেয়েটাকে।ক্রুদ্ধ দু'চোখের কোটরে ভেসে উঠেছে অশ্রুকণা।উজ্জ্বল অবাক হয়ে তাকাল মেয়েটার পানে রুমুর কি এতটাই আঘাত লেগেছে যে মেয়েটা কেঁদেই ফেলেছে!


" রুমু আমি এভাবে বলতে চাইনি তুই...."


" কীভাবে বলতে চেয়েছেন? আমি আপনাকে ঠকাচ্ছি?কেন ঠকাবো?কোন ভিত্তিতে ঠকাবো?আপনি আমার প্রেমিক লাগেন?আজ আছেন কাল নেই।আপনি আমার স্বামী হন।"


উজ্জ্বল থমথমে চোখে তাকাল রুমুর পানে।রাশেদের বলা কথা গুলো রুমুর প্রতিক্রিয়া কোনটাই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলছে না।আচ্ছা তার কি কোথাও ভুল হচ্ছে?


" আমার সাথে বোধহয় আপনার আর চলছে না।সন্দেহ নিয়ে সম্পর্ক টিকে না আমি বরং আমার পথে খুঁজে নেব।"


উজ্জ্বল রুমুর হাত ধরলো অথচ মেয়েটা হাত ঝারি দিয়ে উঠে দাঁড়াতে মেঝেতে ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো পায়ে বিঁধে যায়।চাপা আর্তনাদে রুমু 'আহ' ধ্বনি তুলে।


উজ্জ্বল দ্রুত রুমুকে কোলে তুলে বিছানায় বসায়।


" সাবধানে হাটবি তো।ক..কি করেছিস পা'টার।"


গলগলিয়ে রক্তে ভিজে গেল বিছানার চাদর।মেয়েটার দুই পায়ের তালুতেই কাঁচ বিঁধেছে।উজ্জ্বল কি করবে না করবে দিশ হারিয়ে ফেলল।ডোর বেলের শব্দে কোন মতে রুমের বাইরে গিয়ে দরজা খুলে উজ্জ্বল।উর্মি এসেছে মেয়েটা বিশেষ দরকারে বাইরে গিয়েছিল ফিরে এসে উজ্জ্বলের আতংকিত মুখখানি দেখে বলে,


" কিরে কি হয়েছে?"


" রুমুর পা কেটে গেছে।"


" কী বলিস কি ভাবে?"


" আ... আমার ভুলে।"

.

দু'পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে আছে রুমু।উর্মি দেদারসে বকবকি করে যাচ্ছে উজ্জ্বলকে।অবশ্য বকাবকিতে এই মামলা থেমে নেই বয়সে বড় বিধায় উজ্জ্বলের গায়ে বেশ কয়েকবার হাত তুলেছে।উজ্জ্বল নীরবে নিভৃতে সবটা হজম করেছে।

হাতে পানির গ্লাস আর ওষুধ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উজ্জ্বল।রাগান্বিত রুমুর সম্মুখে দাঁড়িয়ে আদেশ সুরে বলে,


" রুমু ঔষুধ খা ব্যথা কমে যাবে।"


" মনের ব্যথা বড় ব্যথা তা তো আপনি জানেন না।"


" সেই ঔষুধো আমার কাছে আছে।চোটপাট না করে ফটাফট ঔষুধ গুলো গিল।"


রুমু নিজের রাগ বজায় রেখে বলে,


" গিলবো না।"


" গিলতে বলেছি।"


"  বললাম তো গিলবো না।"


" এই কার সাথে ত্যাড়ামো করিস?আমিও পিএইচডি করা ত্যাড় উজ্জ্বইল্লা তোর সাধ্য নেই আমার সাথে ত্যাড়ামো করার।"


উজ্জ্বল রুমুর গাল চেপে ধরলো।মুখে ওষুধ পুরার আগে তার পিঠে পড়লো এক দানবীয় থাবা।তীব্র ব্যথায় দাঁত কিড়মিড়িয়ে পেছনে ঘুরতে দেখতে পেল রাগান্বিত উর্মিকে।


" তোর সাহস কি করে হয় রুমুকে মারার?বিয়ে করেছিস সেচ্ছায় কিচ্ছু বলিনি এখন বউ অত্যাচারে লেগে গেছিস!তুই আমার ভাই?বেয়াদব নিলর্জ্জ ছেলে মেয়েটার পায়ের এই অবস্থার জন্য কে দায়ী?এই তুই বেরহ, বেরহ রুম থেকে।"


উর্মি ধাক্কা দিয়ে বের  করে দিল উজ্জ্বলকে।বেচারা উজ্জ্বল হতভম্ব হয়ে পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে রইল।হতাশার শ্বাস টেনে আফসোস সুরে বলে,


" গাল চেপে যখন চুমু খাই তখন দোষ নাই।তখন তাকে অত্যাচার বলে না।অথচ ভালোর জন্য গাল চেপে ঔষুধ খাওয়াচ্ছিলাম এখন আমি অত্যাচারিত পুরুষ!"


চলবে...


[পর্বটা ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।৪ ঘন্টা যাবৎ কারেন্ট নাই।ফোনের চার্জ একদম শেষ পর্যায়ে আজ এইটুকুই থাক।]