গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৬

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৬ ]


রুমুর প্রতি প্রচন্ড রাগে উজ্জ্বলের শরীরটা থরথর করে কাঁপছে অথচ এই রাগটা কিছুতেই তুলতে পারছে না সে।কাউকে উদুম কেলানি দিলে মনটা শান্ত হতো।রুমুর পরিবর্তে অন্য কেউ হলে এতক্ষণে মারতে মারতে আধমরা করে ছাড়তো।দুঃখের বিষয় এই আদুরে একটা বউকে কি করে গায়ে হাত তুলবে?এসব কথা ভাবলেও গায়ে কাঁপুন ধরে।উজ্জ্বলের কোন কন্ট্রোল নেই।কন্ট্রোললেস এই মানুষটা যে নিজের রাগ কত কষ্টে কন্ট্রোল করার মিছে চেষ্টা করছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

এত ধৈর্য অধৈর্যের পালা অতিক্রম করে পানির গ্লাসটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলল সে।হঠাৎ ভাঙচুরে চমকে যায় রুমু কিছু বুঝে উঠার আগে একে একে হাতের কাছে সব ভাঙতে থাকে উজ্জ্বল।অতিরিক্ত রাগে নিজের গায়ের শার্টটা এক টানে খুলতে সব বোতাম ছিটকে বেরিয়ে আসে।


" উজ্জ্বল!"


রুমুর ডাক উজ্জ্বলের কর্ণকুহরে আসতে উজ্জ্বল থেমে যায়।


" চুমু বউ ওহ না রুমু বউ তোর মনে যে এত শয়তানি এটা তো আমি ভাবতেও পারিনি।"


" আমি কি করেছি?"


" কিছু করিসনি।ইদানীং কৃপণ হয়ে গেছিস আমার ওষুধ কম দিচ্ছিস?"


" কি..কিসের ওষুধ? "


" উমম, চুমু বউটা কিচ্ছু বুঝেনা?তোকে এক চান্সেই পাকা বানিয়ে দিয়েছিলাম তাহলে এখন আবার কিসের প্রশ্ন করিস?"


রুমু গলা ঝারে এই ছেলের মতিগতি তার ঠাহরে আসছে না।এই রাগ দেখালো এখন আবার রোমান্সের কথা তুলছে কেন?


" রুমু আমার রাগটা মোটেও কমেনি তোকে ভালো মতো চটকে দিলে আমার রাগ কমতো।"


" আমি কি করেছি?"


" তুই আমাকে ঠকাচ্ছিস না তো?সিরিয়াস প্রশ্ন করেছি।"


" আপনার এমন কেন মনে হলো?"


" সন্দেহ ছাড়া নিশ্চয়ই কথাটা তুলিনি।"


" সন্দেহ!কয়টা দিনের সংসার?ওহ না সংসার হয়ে উঠেনি একটা সম্পর্ক।কয়টা দিনের সম্পর্ক আমাদের?এখনি সন্দেহ তুলছেন?সব ফেলে সব মিথ্যা করে আমি আপনার কাছে ছুটে এসেছি আর আপনি...আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন?"


রুমু ভীষণ রেগে গেল।রুমুর পালটা রাগে উজ্জ্বল নিজেও বেফাঁস ফেসে গেছে।সে ভাবতেও পারেনি 'সন্দেহ' শব্দটা এতটা ভয়াবহ ভাবে আঘাত করবে মেয়েটাকে।ক্রুদ্ধ দু'চোখের কোটরে ভেসে উঠেছে অশ্রুকণা।উজ্জ্বল অবাক হয়ে তাকাল মেয়েটার পানে রুমুর কি এতটাই আঘাত লেগেছে যে মেয়েটা কেঁদেই ফেলেছে!


" রুমু আমি এভাবে বলতে চাইনি তুই...."


" কীভাবে বলতে চেয়েছেন? আমি আপনাকে ঠকাচ্ছি?কেন ঠকাবো?কোন ভিত্তিতে ঠকাবো?আপনি আমার প্রেমিক লাগেন?আজ আছেন কাল নেই।আপনি আমার স্বামী হন।"


উজ্জ্বল থমথমে চোখে তাকাল রুমুর পানে।রাশেদের বলা কথা গুলো রুমুর প্রতিক্রিয়া কোনটাই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলছে না।আচ্ছা তার কি কোথাও ভুল হচ্ছে?


" আমার সাথে বোধহয় আপনার আর চলছে না।সন্দেহ নিয়ে সম্পর্ক টিকে না আমি বরং আমার পথে খুঁজে নেব।"


উজ্জ্বল রুমুর হাত ধরলো অথচ মেয়েটা হাত ঝারি দিয়ে উঠে দাঁড়াতে মেঝেতে ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো পায়ে বিঁধে যায়।চাপা আর্তনাদে রুমু 'আহ' ধ্বনি তুলে।


উজ্জ্বল দ্রুত রুমুকে কোলে তুলে বিছানায় বসায়।


" সাবধানে হাটবি তো।ক..কি করেছিস পা'টার।"


গলগলিয়ে রক্তে ভিজে গেল বিছানার চাদর।মেয়েটার দুই পায়ের তালুতেই কাঁচ বিঁধেছে।উজ্জ্বল কি করবে না করবে দিশ হারিয়ে ফেলল।ডোর বেলের শব্দে কোন মতে রুমের বাইরে গিয়ে দরজা খুলে উজ্জ্বল।উর্মি এসেছে মেয়েটা বিশেষ দরকারে বাইরে গিয়েছিল ফিরে এসে উজ্জ্বলের আতংকিত মুখখানি দেখে বলে,


" কিরে কি হয়েছে?"


" রুমুর পা কেটে গেছে।"


" কী বলিস কি ভাবে?"


" আ... আমার ভুলে।"

.

দু'পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে আছে রুমু।উর্মি দেদারসে বকবকি করে যাচ্ছে উজ্জ্বলকে।অবশ্য বকাবকিতে এই মামলা থেমে নেই বয়সে বড় বিধায় উজ্জ্বলের গায়ে বেশ কয়েকবার হাত তুলেছে।উজ্জ্বল নীরবে নিভৃতে সবটা হজম করেছে।

হাতে পানির গ্লাস আর ওষুধ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উজ্জ্বল।রাগান্বিত রুমুর সম্মুখে দাঁড়িয়ে আদেশ সুরে বলে,


" রুমু ঔষুধ খা ব্যথা কমে যাবে।"


" মনের ব্যথা বড় ব্যথা তা তো আপনি জানেন না।"


" সেই ঔষুধো আমার কাছে আছে।চোটপাট না করে ফটাফট ঔষুধ গুলো গিল।"


রুমু নিজের রাগ বজায় রেখে বলে,


" গিলবো না।"


" গিলতে বলেছি।"


"  বললাম তো গিলবো না।"


" এই কার সাথে ত্যাড়ামো করিস?আমিও পিএইচডি করা ত্যাড় উজ্জ্বইল্লা তোর সাধ্য নেই আমার সাথে ত্যাড়ামো করার।"


উজ্জ্বল রুমুর গাল চেপে ধরলো।মুখে ওষুধ পুরার আগে তার পিঠে পড়লো এক দানবীয় থাবা।তীব্র ব্যথায় দাঁত কিড়মিড়িয়ে পেছনে ঘুরতে দেখতে পেল রাগান্বিত উর্মিকে।


" তোর সাহস কি করে হয় রুমুকে মারার?বিয়ে করেছিস সেচ্ছায় কিচ্ছু বলিনি এখন বউ অত্যাচারে লেগে গেছিস!তুই আমার ভাই?বেয়াদব নিলর্জ্জ ছেলে মেয়েটার পায়ের এই অবস্থার জন্য কে দায়ী?এই তুই বেরহ, বেরহ রুম থেকে।"


উর্মি ধাক্কা দিয়ে বের  করে দিল উজ্জ্বলকে।বেচারা উজ্জ্বল হতভম্ব হয়ে পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে রইল।হতাশার শ্বাস টেনে আফসোস সুরে বলে,


" গাল চেপে যখন চুমু খাই তখন দোষ নাই।তখন তাকে অত্যাচার বলে না।অথচ ভালোর জন্য গাল চেপে ঔষুধ খাওয়াচ্ছিলাম এখন আমি অত্যাচারিত পুরুষ!"


চলবে...


[পর্বটা ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।৪ ঘন্টা যাবৎ কারেন্ট নাই।ফোনের চার্জ একদম শেষ পর্যায়ে আজ এইটুকুই থাক।]

0 Comments:

Post a Comment