1t/Banner 728x90

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ১৬ শেষ অংশ

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ১৬ বর্ধিত অংশ] 


উর্মির উপর দিয়ে যে কি একটা ঝড় যাচ্ছে এই কথা কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়।বাড়ি থেকে বাবা মা ফোন করে বারবার ধমকিধামকি করছে এদিকে রুমু পা কেটে বসে আছে।এই বিয়ে নিয়ে বাবা মা কেউ সন্তুষ্ট নয় একমাত্র ছেলের এমন বিয়ে তাও কি না শত্রু পক্ষের সাথে এই ব্যপারটা কে মানতে পারবে?উজ্জ্বল রাগারাগি করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে তামিম অফিস থেকে বাসায় ফিরে যখন জানল এই সাংঘাতিক কান্ডের কথা তখন আর ধৈর্য কুলায়নি।মুখে যা এসেছে তাই বলে বকাবকি করেছে উজ্জ্বলকে।উজ্জ্বল প্রথম পর্যায়ে সব হজম করলেও পরবর্তীতে আর হজম করার ধৈর্য রইল না।

নিজ কক্ষে ফিরে সশব্দে দরজা বন্ধ করে  রুমুকে বলে,


" তোর ভাইয়ের সাথে কি সলাপরামর্শ চলছে?আমাকে মারবি?নাকি আমার পরিবারকে মারবি?তার মানে ভাই বোন মিলে এসব নাটক করলি?এই যে পালিয়ে এসে বিয়ের কথা তোলা,হঠাৎ করে আমার সাথে ভালোবাসা-বাসি খেলা এসব তোর নাটক ছিল?"


রুমু চমকে গিয়ে ঢোক গিলল।তার মানে উজ্জ্বল কিছু আঁচ করেছে!উজ্জ্বল কি কিছু জেনে ফেলল?


" কি হলো মুখে কেন কোন কথা নেই ?"


" এই কয়েকদিনে আপনার কি মনে হয়েছে আমি নাটক করেছি?"


" করতেও তো পারিস।"


" এই চিনলেন আমাকে?"


" তুই রাশেদের বোন।সবচেয়ে বড় কথা কার পেটের মেয়ে আমি জানি তো।তোর মা স্টার জলসা, জি বাংলা সিরিয়ালের কুটনি মহিলাগুলোর থেকেও বেশি ভয়াবহ।এই মহিলার মেয়ে হয়ে ঝামেলা যে পাকাবি না তার গ্যারান্টি তো আমি পাচ্ছি না।তোর ভাইয়ের সাথে যে তোর ফোনে কথা হয় কি ভাবলি আমি কোনদিন জানবো না?"


রুমু রেগে গেল পালটা ধমকে উজ্জ্বলকে বলে,


"আপনি তো সব জানেন।আমার মা খারাপ কুটনি,আমার ভাই শয়তান 

তাহলে এতদিন আমার পেছনে ঘুরলেন কেন?"


" এই আমাকে ধমক দিবি না।"


" একশো বার দেব।সত্য মিথ্যা আপনাকে এখন আর বলে লাভ নেই।আপনার ত্যাড়া মাথায় যেটা ঢুকেছে সেটাই আপনার কাছে সত্যি মনে হবে।তাই আমি আর কোন মতামত দিতে পারবো না।দিতে বাধ্য নই।"


" তুই বাড়াবাড়ি করছিস রুমু।আমার মাথা হাই ভোল্টেজ গরম আছে লোড নিতে পারছে না।তোকে সাবধান করলাম যে কোন সময় যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে।"


" কী ঘটবে?বউ হিসাবে অস্বীকার করবেন?"


"তুই বেশি বকছিস রুমু।"


" আপনি কম করছেন?বিয়ের স্বাদ মিটে গেছে?এখন কি আবার ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবছেন?"


ডিভোর্স শব্দটা উজ্জ্বলের রাগ আরো বাড়িয়ে দেয়।ছেলেটা রাগের দরুনে

রুমুর গলা চেপে ধরে উজ্জ্বল।রুমুও কম যায় না পালটা উজ্জ্বলের গলা চেপে ধরে।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে একজন আগুন হলে অন্যজন হতে হয় পানি।অথচ রুমু উজ্জ্বল কেউ পানি নয় দুজনেই ধাউধাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন।উজ্জ্বল রুমুর গলা ছেড়ে দিতে রুমুও উজ্জ্বলের গলা ছেড়ে দেয়।ঝামেলা বোধহয় এখানে শেষ হলেও পারতো কিন্তু তা বুঝি হওয়ার নয়।


রুমু গলা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বলের খোলা শার্ট সরিয়ে বুকের মধ্যে কামড় বসায়।এক কামড়ে সারা শরীর ব্যথায় টনটন করে বিবশ হয়ে যায়।রুমু এতটাই জোরে কামড় দিল এক দলা মাংস অল্পের জন্য মেয়েটার মুখে চলে আসেনি।উজ্জ্বল রুমুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বুক চেপে ধরে।


এহেন কান্ডে ছেলেটার রাগ জেদ কোথায় যেন  উড়ে গিয়ে তার অবাকের পাল্লা ভারি হয়।মনে প্রশ্ন আসে,রুমু তো আস্ত একটা জল্লাদ মহিলা!


উজ্জ্বল এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না।দাঁতের তলায় দাঁত পিষে বুকে হাত চেপে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

রুমু তখন ক্ষুদার্ত হায়নার ন্যায় ফুসফাস করছিল।

.


" আপনাকে কে কামড়ালো!এতটা ভয়াবহ কামড়!এই আপনি কোন ভয়ংকর সাইকো কিলারের হাতে পড়েননি তো?"


" বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সারুন।"


" ইস অল্পের জন্য মাংস উঠে আসেনি।পুরো দাঁতটাই দেবে গেছিল?কতখানি রক্ত গেল, রাক্ষসের পাল্লায় পড়লেন নাকি?"


কটমট দৃষ্টিতে নার্সের দিকে তাকিয়ে সরে গেল উজ্জ্বল।একটা মহিলা নার্সের সামনে খালি গায়ে বসে থাকতে তার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার মাঝে রুমুকে নিয়ে যাচ্ছে তাই কথা বলে যাচ্ছে।এসব আর সহ্য হচ্ছে না তার।উজ্জ্বল ইমার্জেন্সিতে থাকা একজন ডিউটি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলে,


" আপনার নার্সকে বলুন থামতে।ক্ষত স্থানটা আপনার ব্যান্ডেজ করার কথা ছিল আর আপনি ফোনে প্রেমালাপ করছেন?নেব না এই হসপিটালের চিকিৎসা তবে আমি এমনি এমনি তো যাব না।অভিযোগ জানিয়ে যাব।"


উজ্জ্বল যেতে নিলে ডিউটি ডাক্তার দ্রুত তাকে ডেকে উঠে।


" আরে যাবেন না।আমার কাজ শেষ আপনি বসুন।"


উজ্জ্বল বসলো।বুকের ব্যথায় তার শ্বাস আটকে আসছে।দু'চোখ প্রতিবার ঝাপসা হচ্ছে কান্না লুকানোর এমন বাহানা এর আগে করা হয়নি তার।তাই তো এ বেলায় ভীষণ অপটু।নার্স এবং ডাক্তার উভয় বুঝতে পারলো উজ্জ্বল কাঁদতে চাইছে তারা একে অপরকে ইশারা করে চুপ রইল।


হসপিটালের কাজ শেষ করে উজ্জ্বল নিজের জন্য শার্ট কিনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।রক্তাক্ত শার্ট নিয়ে বাসায় ফিরলে একশো একটা প্রশ্নের জবাবদিহি করতে হবে, রুমুকেও অপমানিত হতে হবে এসব ভেবে নতুন শার্ট গায়ে জড়ালো ছেলেটা।

স্প্রিডে বাইক চালাতে চালাতে অনেক্ষণ কাঁদলো সে।কেন কাঁদলো নিজেও জানে ন।মনের ভেতরে রাগ জমেছে,অনেক প্রশ্ন খেলা করছে।এভাবে রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি তাকে ঠান্ডা মাথায় সবটা সামলাতে হতো অথচ সে বেফাঁস রাগ দেখিয়ে জল ঘোলা করলো।

কথায় কথায় রুমুকে আঘাত করাও কি ঠিক ছিল?এমন কন্ট্রোললেস হলে ভবিষ্যত অন্ধকার।


তবে উজ্জ্বল রুমুর এমন রণচণ্ডী রূপ আশা করেনি।রুমু যে এতটা রাগি জেদি সে আগে ভাবেনি রাগ থাকবে স্বাভাবিক তাই বলে এতটা!কই এই মেয়েটাকে বাইরে থেকে তো এমন বোঝা যায় না।


উজ্জ্বল রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরল।তামিম দরজা খুলে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।উজ্জ্বল দরজা বন্ধ করে চলে গেল নিজের কক্ষে।উর্মি রুমুর পাশে শুয়ে দুজনেই ঘুমিয়ে আছে।এই পর্যায়ে উর্মির প্রতি পালটা জেদ জন্মালো তার।নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে এমন করেছে উজ্জ্বল যেন রুমে আসতে না পারে।


উজ্জ্বল গটগটিয়ে অন্য রুমে চলে গেল তামিম পর্দার আড়ালে সবটা দেখলো।চুপচাপ উর্মির কাছে গিয়ে ডেকে আনলো তাকে।যা হয়েছে, হয়েছে এখন তাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে না ঢোকাই ভালো।উর্মি ভেবেছিল উজ্জ্বলকে আজকে আর রুমুর সাথে থাকতে দেবে না এটাই উজ্জ্বলের শাস্তি কিন্তু তামিমের আদেশে সে আর নিজের পরিকল্পনা সফল করতে পারলো না।


রান্না ঘর থেকে ঝনঝন আওয়াজ পেতে উজ্জ্বল বুঝতে পারে উর্মি নিশ্চয়ই উঠে গেছে।ছেলেটা দেরি করেনি দ্রুত চলে গেল নিজের কক্ষে এবং দ্রুত হাতে দরজা বন্ধ করে নিশ্চিন্ত হতো।রুমু ঘুমিয়ে আছে রুমুর পাশে চুপটি করে শুয়ে পড়লো সে।


রাত বাড়লো অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল।রুমু চোখ খুলে পাশে তাকাতে উজ্জ্বলকে দেখতে পেয়ে ঢোক গিলল।তখনকার কামড়ের কথা মনে পড়তে অনুশোচনায় ভরে গেল মন।উজ্জ্বলের বুক থেকে ধীরে ধীরে জামাটা সরাতে বড় ব্যান্ডেজ দেখে আতঁকে উঠে সে।বন্ধ চোখের পাতা ফটাফট খুলে ফেলল উজ্জ্বল হঠাৎ দুজনের চোখাচোখি হতে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রুমু।


" কুত্তী বউ!"


উজ্জ্বলের ধমকে কেঁপে উঠলো রুমু।দ্রুত পায়ে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পায়ের তালু যখন মেঝেতে লাগে ব্যথায় পা টনটন করতে ছিটকে পড়ে সে।উজ্জ্বল উঠে এসে দ্রুত রুমুকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসায়।


" কোথায় যাবি?"


" জাহান্নামে।"


" যে নারী স্বামীকে কামড়াকামড়ি করে সেই নারী এমনিতেও জাহান্নামেই যাবে।"


" ওহ আচ্ছা।যে স্বামী রোমান্সের নামে কামড়াকামড়ি করে সে বুঝি খুব সোওয়াব কামিয়ে ফেলবে?"


" ওটা কামড়াকামড়ি না লাভ বাইট মুর্খ।"


রুমু প্রত্যুত্তর করে না।সটান হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। উজ্জ্বল নিজেও শুয়ে পড়ে।দুজনের মাঝে ছেঁয়ে যায় নীরবতা।

আগ বাড়িয়ে কেউ কারো সাথে কথা বলে না।এভাবে কেটে যায় আরো দুইদিন দুইরাত।উজ্জ্বল আর রুমুর মাঝে বেড়েছে দুরত্ব।উজ্জ্বল আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চাইলেও রুমু বলেনি তীব্র জেদটাকে আঁকড়ে ধরে নিরবতাকে আপন করেছে।


শুনশান নিরবতা।আরেকটি রাত এসেছে যে রাতে উজ্জ্বল এবং রুমু দুজনে দু'কোনায়।হঠাৎ উজ্জ্বলের ফ্যাচফ্যাচ নাকের শব্দে রুমু উঠে বসে এবং মাথা তুলে তাকাতে দেখতে পায় উজ্জ্বল কাঁদছে।উজ্জ্বলের মতো শক্তপোক্ত,দেমাকী ছেলে কাঁদছে!ব্যপারটা যেন বেশ আশ্চর্যের বিষয়।


" উজ্জ্বল আপনি কাঁদছেন?"


" ক..কই।"


রুমু হাত বাড়িয়ে উজ্জ্বলের গাল ছুঁয়ে দেয় ভেজা গাল দেখে সহজে বুঝতে পারে উজ্জ্বল কাঁদছে।


" একি আপনি কাঁদছেন অথচ বলছেন কাঁদছেন না।কি হয়েছে দেখি..."


রুমু উজ্জ্বলকে টেনে ঘুরায়।উজ্জ্বল জেদ দেখিয়ে বালিশে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে।রুমুও কম যায় না বালিশ টেনে সরিয়ে ফেলে উজ্জ্বল কান্না আটকাতে না পেরে রুমুর কোলে মাথা রাখে তারপর শুরু হয় তার কান্নার জোয়ার।

যতটা সময় যায় উজ্জ্বলের কান্না ততই বাড়ে।বাচ্চাদের মতো হেঁচকি দিতে দিতে নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে যায়।


" আপনি কাঁদছেন কেন?"


" জানি না।"


" মানে কি?এই কান্না থামান।"


" থা..থামাতে পারছি না।আমি কান্না থামাতে পারছি নারে বউ।আরো জোরে কাঁদলে শান্তি লাগতো।"


" আরে কি হয়েছে। এই শুনেন এভাবে কাঁদে না আপনি বড় হয়েছেন।"


" কান্না কন্ট্রোলে আসছে না।আমি সব গুলিয়ে ফেলছি।"


উজ্জ্বল এভাবেই কাঁদতে থাকে অনেকক্ষণ।রুমু বুঝিয়েও উজ্জ্বলকে শান্ত করতে পারলো না।কালক্রমে রুমু বুঝতে পারলো উজ্জ্বলের কোন দিক দিয়েই কন্ট্রোল নেই না রাগে জেদে, রোমান্সে না হাসিতে না কান্নায়।


রাত শেষ হওয়ার পথে উজ্জ্বলেরো কান্না থেমে এলো।ছেলেটা বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুঁয়ে বসল বিছানায়।রুমুর প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি সে এড়িয়ে বলে,


"তোর চুমু খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি রিস্ক নিব না।তুই কুত্তী কখন জানি চুমু দেওয়ার উচিলায় আমার ঠোঁট কামড়ে পালিয়ে যাস।অবশ্য তোকে এসব কামড়াকামড়ির ট্রেনিং আমি দিয়েছিলাম।এখন তার সাইডইফেক্ট ভোগ করছি।"

চলবে....


No comments

Powered by Blogger.