গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ৩৪

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ৩৪ ]


ভালো সময়রা অদ্ভুত নিয়মে ছুটে চলে যায় এতটাই তাড়াতাড়ি ছুটে বেড়ায় বারবার মনে হয় চোখের পলকে পেরিয়েছে সময়।বন্ধুত্ব শব্দটা যেমন নিগূঢ় তেমনি সম্পর্কটাও মধুর।এই মধুর সম্পর্কে কেউ বা হুল ফোটানোর অপেক্ষায় থাকে আবার কেউ কেউ নিঃস্বার্থে সাহায্যের হাত বাড়ায়।এই যে আরশাদ সে দেখতে চায় তার প্রতিষ্ঠিত বন্ধুকে একটা ছেলের জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ বেকারত্ব ঘুচে যাওয়া।তার চাওয়াটা পূর্ণ হয়েছে সবাই উজ্জ্বলকে কম বেশি সাহায্য করেছে সবাই সমান তালে পরিশ্রম করেছে আরশাদ তার সামর্থ অনুযায়ী করেছে।এদিক থেকে উজ্জ্বল নিজেকে বড্ড ভাগ্যবান ভাবে এমন বন্ধ কয়জনে পায়?সিয়াম দিপু তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী সব করেছে,মনোবল দিয়েছে প্রতিটা কাজে নানান ভাবে সাহায্য করেছে বন্ধুরা যদি পাশে না থাকতো উজ্জ্বলের এই জার্নিটা বড্ড কঠিন হতো।


আরশাদের উজ্জ্বলের বাড়িতে থাকা হলো পাঁচ দিন এই পাঁচটা দিন চোখের পলকে কেটে গেল ভালো সময়টা অতিদ্রুত চলে যায় কেন?উজ্জ্বলের পরিবার অতিথি আপ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখেনি এতটা আন্তরিক এই পরিবারের সদস্যগুলো।খুশবু নার্গিসকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল এই মানুষটা এতটা ভালোবাসা দিয়েছে তা কখনো ভোলা যাবে না।


" আন্টি আপনি ভীষণ ভালো একদম আমার মায়ের মতো।"


" আবার আসবে কিন্তু আমরা তোমাদের অপেক্ষা থাকব।"


" জি আসব।"


রুমু মনটা খারাপ করে দাঁড়িয়ে যেন এক্ষুনি অভিযোগ ছুড়বে খুশবুর উপর,কেন তারা চলে যাচ্ছে আরেকটু থেকে গেলে হতো না?


" রুমু তুমি মন খারাপ করছো কেন?আমাদের তো যোগাযোগ হবেই।"


" আরকটা দিন থেকে গেলে হতো না?"


" আমরা আবার আসব মন খারাপ করে না।"


খুশবু বিদায় জানিয়ে গাড়ি চড়ে বসল।আরশাদ শেষ মুহূর্তে জড়িয়ে ধরল উজ্জ্বলকে, 


" যেভাবে সব শুরু করেছিস সেভাবেই হাল চালিয়ে যাবি একদম ছেড়ে যাবি না।"


" আমি চেষ্টা করে যাব।"


" অলদা বেস্ট।আসছি ভালো থাকিস।"


আরশাদ গাড়ি চড়ে বসল যতটা আনন্দ নিয়ে এসেছে ততটাই বিস্বাদ ঢেলে চলে যাচ্ছে।গাড়ি চলতে শুরু করেছে তার গতিতে যতক্ষণ পর্যন্ত গাড়িটা দেখা যায় ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে রইল সকলে।এই দুটো মানুষ মায়ার সুতো বেঁধে দিয়ে গেল মাত্র অল্প দিনে।

.

ইদানীং শরীরটা বড্ড খারাপ যাচ্ছে তার উপর পরিবারের ভাঙনের ভয় বাসা বেঁধে সৈয়দ ইসমাইলের মনে।একমাত্র ছেলে বিগড়ে গেছে বাবাকে শ্রদ্ধা তো দূরের কথা মান্যই করে না।যে মায়ের কথায় ভালো মন্দের বিচার করতো না আজকাল সেই মাকেই মান্য করছে না।আনিকাকে ডিভোর্স দেবে বলে খুব বেশি ঝামেলা করছে এমন ঝামেলা আর কতদিন মানা যায়?

পরিবারটার এমন বিধ্বস্ত রূপ আর যে মানা যায় না।আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগের কথা যখন সৈয়দ ইসমাইলের বাবা মা জীবিত ছিলেন তখন দুই ভাইর সংসারে না ছিল দুরত্ব না ছিল ঝগড়া বিবাদের সাহস।উজ্জ্বলের দাদা-দাদি ভীষণ রাগি ছিলেন হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছেন গোটা সংসারটাকে।দুই ছেলের আলাদা সংসার হওয়া শর্তেও সংসারের যেকোন সিদ্ধান্তে উজ্জ্বলের দাদা দাদিকে সবার আগে জানানো হতো এবং তাদের দিক থেকে অনুমতি পেলেই সেই কাজ বা সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো।এভাবেই নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য শাসনে সংসারটাকে জোড়ায় রেখেছিলেন তারা কিন্তু মানুষ মরণশীল আজীবন তো বেঁচে থাকে না।চোখের পলকে অল্প কয়েক মাসের ব্যবধানে উজ্জ্বলের দাদা দাদি মারা গেলেন।তার পরেই সংসারে অনাসৃষ্টি শুরু হলো বিশেষ করে রুমুর মা রাবেয়া তিনি সর্বদা চেয়েছেন সংসারটা নিজের দাপটে রাখতে একি আদৌ সম্ভব!ওয়ারিশে পাওয়া সম্পত্তিগুলো নিয়েও তার ছিল মন কষাকষি।সম্পত্তির জেরে তাদের ঝগড়া ঝামেলা তীব্র রূপ ধারণ করে।প্রথম পর্যায়ে উজ্জ্বলের বাবা মা এসবে জড়াতে চাননি কিন্তু দিনের পর দিন ব্যাপারটা এতদূর গড়িয়ে যায় তারাও আর চুপ থাকতে পারেনি।

রুমুর মামাদের সাহায্যে জাল দলিল বানিয়ে রাবেয়া দখলদারিতে লেগে পড়ে।

একদিন এসব নিয়ে ঝামেলার মাঝেই রাশেদ চাকুর সাহায্যে সৈয়দ শামসুলের পিঠে পোঁচ দেয়।আকস্মিক ঘটনায় দুই দলের পালটা পালটি মারপিঠ শুরু হয় দুই দলেই লোক ছিল।কতজন যে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় তার হিসাব নেই পুলিশ আসে ঝামেলা মিটমাট করতে চায় কিন্তু এসব আজও মিটমাট হয়নি।রুমুর মামারা টাকার বলে পুলিশের মুখ বন্ধ রাখে দুই ভাইয়ের মাঝে সৃষ্টি হয় বিস্তার ফাটল।

এক নারীর প্রলোভনে দুই ভাইয়ের মাঝে বিস্তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়।এই দূরত্ব ঘুচাতে চায় উজ্জ্বল সেই সাথে পেতে চায় যার জন্য কৈশোরে জন্মেছে এক বিস্তার অনুভূতি।অল্প বয়স থেকেই রুমুর প্রতি যত্নশীল উজ্জ্বল এই যে এক ধারণের টান কাজ করে এই টানের নাম দেওয়া হয়নি কিংবা উজ্জ্বল জানেই না এর নাম কি।সময়ের সাথে সাথে উজ্জ্বল  সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে রুমুকেই সে বিয়ে করবে এবং দুই ভাইয়ের সম্পর্ক পুনরায় জোড়া লাগাবে।


চায়ের কাপে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে সৈয়দ শামসুল তাকালেন ভাইয়ের দিকে।


" কিছু বলবে?হঠাৎ এত জরুরি তলব?"


" আমার সংসারের অবস্থা আশা করি কম বেশি তুমি জানো।আজ বাদে কাল যদি মরে যাই আমার ছেলে সব সম্পদ নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেবে।আমার ছেলেটার উপর এক বিন্দু পরিমান ভরসা আমার নেই।"


সৈয়দ ইসমাইল থামলেন।হতাশার শ্বাস ছেড়ে পুনরায় বলেন,


" রাশেদ ইদানীং আনিকাকে তালাক দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে যে মেয়ে এই জানোয়ারটাকে ভালোবেসে বাড়ি ঘর ছাড়ল সেই মেয়েটার এমন দুর্দশা আমি মানতে পারছি না।আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জীবিত অবস্থায় আমার সব সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করব।"


" উত্তম সিদ্ধান্ত।তা হঠাৎ আমাকে ডাকলে কেন?"


" ভাইজান রেগে থাকবেন না অতীতে যা হয়েছে তা নিয়ে আমি লজ্জিত হাজারবার বলেছি আবারো বলছি।তুমি ছাড়া আমাকে কে সাহায্য করবে ভাইজান?"


" তোমার কি সাহায্য চাই?"


" আমার সম্পদের একভাগ আমি এতিমখানায় দান করব।"


" উত্তম সিদ্ধান্ত।"


" বাকি যা আছে তা রুমুর নামে আনিকার নামে স্ত্রীর নামে এবং রাশেদের নামে ভাগ করে দেব।আমার যে তোমার সাহায্য চাই।"


" ঠিক আছে আমি তোমায় সাহায্য করব

তবে আবার দেখো আমার ছেলের সংসারে এসব নিয়ে রাশেদ কোন ঝামেলা করে।ওরা ভালো আছে ভালো থাকতে দাও।"


" আমি কি চাইব না আমার মেয়ে ভালো থাকুক?"


সেদিনের কথা এতটুকুতেই সমাপ্ত হয়।তারপর দুইভাই মিলে সম্পত্তি ভাগে যাবতীয় কাজে লেগে পড়ে


সেদিনের পর কেটে গেল কয়েকমাস।আজ রৌদ্র ঝলমল একটি দিন।রান্নাঘরের যাবতীয় কাজ শেষে আনিকা রুমুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিল আজ তারা বিকালে ঘুরতে যাবে।আনিকা যে রুমুর সাথে বের হবে এই ব্যাপারটা নিয়ে রাশেদের নিশ্চয়ই বিরোধীতা থাকবে কিন্তু এসব নিয়ে এখন আর মাথা ব্যথা নেই আনিকার।জীবন চলছে উদ্দেশ্যহীন যা হবার হবে এই তো চলছে চলার মতো।

হঠাৎ রাশেদ এবং তার মায়ের চিৎকার চেচামেচি বাড়লো ইদানীং মা ছেলের ঝগড়া লেগেই থাকে।আনিকা প্রথম প্রথম পাত্তা না দিলেও পরবর্তীতে আর বসে থাকতে পারল না ছুটে গেল বসার ঘরে।


" আম্মা আমি বিয়া যখন করব বলছি তখন করবোই।ওই আনিকারে আমি তালাক দিব।"


" খবরদার রাশেদ তুই যদি আনিকারে তালাক দেস তাহলে তোরে আমি ত্যাজ্যপুত্র করব।আমার কোন ছেলে নাই।"


" আম্মা বাড়াবাড়ি কইর না।আনিকার চেয়েও ময়না হাজারগুন বেশি সুন্দরী।"


" আনিকার মতো কেউ তোরে ভালোবাসবে না।এই সংসারকে আগলাই রাখবে না।রাশেদ আমার আব্বা মাথা ঠান্ডা কর তুই ভালো হয়ে যা এমন করিস না বাপ।তুই আমার একমাত্র ছেলে আজকাল আমার আফসোস জাগে উজ্জ্বলের মতো তুই কেন হইলি না।"


" উজ্জ্বল!ওও এখন উজ্জ্বল তোমার চোখে ভালো!"


" ভালো মন্দ না।তাকে দেখ কীভাবে সব.."


" চুপ করো।আব্বারে বলবা সম্পত্তি ভাগ করতে আমার সম্পত্তি আমারে দিতে বলবা।আমি আমার বউ নিয়ে আলাদা হবো।"


" তোর বউ মানে?"


" ময়না।ময়নাই হবে আমার বউ।"


" জানোয়ার তোর গলা কা ই ট্টা ফেলবো আরেকবার যদি সম্পত্তির কথা মুখে আনিস।"


" গলা কা ট বা?আমার কথা মতো না চললে ভবিষ্যতে কপালে ভাতও জুটবে না।আব্বার সব সম্পত্তি আমার হবে আমার।এই সম্পত্তির ভাগ আমি কাউকে দিব না।"


" তোর যতটা অধিকার রুমুরো ততটাই অধিকার।"


"রুমু!রুমু সম্পত্তির কানা কড়িও পাবে না।সব হবে রাশেদের,এই সৈয়দ বংশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ব্যক্তি হব আমি।"


রাশেদ দাঁতে দাঁত চেপে বেরিয়ে গেল।রাগে থরথরে কাঁপছে তার শরীর।আনিকা দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে দেখছে সব।এই ছেলেটাকে সে ভালোবেসেছিল!রাশেদ তো এমন ছিল না,আনিকার এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ার আগে টলটলে চোখ দেখলে যে ছেলে সব উত্তাল করে ছাড়তো সেই ছেলে এখন আনিকাকে প্রতিনিয়ত নিয়ম করে কাঁদায়।ভালোবাসার রঙ পালটায় কেন?কেন তার স্থিতি নেই?


মাত্রই ঘরে প্রবেশ করলেন সৈয়দ ইসমাইল।এই ঘরে ঝগড়া তর্কাতর্কি এখন নিত্যদিনের কাজ তাই এসবে তিনি গা লাগালেন না।চুপচাপ চলে গেলেন বিশ্রাম নিতে।বাইরের ঝুট ঝামেলা শেষে নীড়ে ফেরা হয় একটু শান্তির উদ্দেশ্যে সেই নীড়েই যদি শান্তি না থাকে তবে মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিধস্ত হতে হয়।রাবেয়া কাঁদতে কাঁদতে সৈয়দ ইসমাইলের নিকট উপস্থিত হলেন,


" ছেলেটার কিছু একটা ব্যবস্থা করেন।এই ছেলে তো মানসিক ভাবে ঠিক নাই।জন্তু হয়ে গেছে জন্তু।"


" ছেলের এই অবস্থার জন্য দায়ী কে?তোমার অতিরিক্ত লোভ,লালসা হিংসা সব কিছুতেই ছেলেটাকে জড়িয়ে আজ এতদূর এনেছো।"


" আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি।আজ বলল সম্পত্তি সব তার।সে নাকি সম্পত্তি তার নামে লিখে নেবে।"


ইসমাইল বিগলিত হাসলেন।


" সম্পত্তি আরো আগেই আমি ভাগাভাগি করে ফেলেছি।যার যা প্রাপ্য সে তাই পাবে।তবে তোমার অমানুষ ছেলে কিছুই পাবে না।যতদিন না সে নিজের ভুলে অনুতপ্ত হচ্ছে ততদিন সে কিছুই পাবে না।"


" এসব তুমি করলে কখন?"


" কয়েক মাস আগেই।"


" একদম যথাযথ কাজ করেছো।এবার দেখবো ময়নাকে কি করে বিয়ে করে।"


ইসমাইল তাচ্ছিল্য হাসলেন।কিছুটা টিপ্পনী কেটে বলেন,


" আশ্চর্য ছেলের পক্ষ নেবে না?হঠাৎ বিপক্ষে গেলে কেন?ছেলের পক্ষ নিয়ে অনেক তো কাহিনী রটালে শেষ পর্যায়ে আমার একমাত্র মেয়েটাকেও ছাড়লে না।"


রাবেয়া প্রত্যুত্তর করার আগে হিংস্র রূপ ধারণ করে রুমে প্রবেশ করে রাশেদ।তার রক্তিম ভয়াবহ চাহনিতে কলিজা কেঁপে উঠল রাবেয়ার।


" বাইরে থেকে আমি সব শুনেছি সব।"


রাশেদের শান্ত স্বর রাবেয়ার ভয় বাড়াল।

তবুও তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,


" তোর আব্বা বেশ করেছে।তোর মতো ছেলেকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া দরকার।"


" এসব কথা বলে লাভ নেই।আজকে এই মুহুর্তে আমি ময়নাকে বিয়ে করব।"


" তুই কর সাহস থাকলে আমার লাশের উপর দিয়ে ময়নাকে নিয়ে আসবি।"


মা ছেলের ঝগড়া পুনরায় বাড়ল।ইসমাইল  কিছুই বললেন না তিনি চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন এসব যেন হওয়ারি ছিল।আনিকা চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে জীবনের সমীকরণে আজ সে ব্যর্থ।আজ যা হবার হবে।ঝগড়ার মাঝে উপস্থিত হয় সে এবং দৃঢ় স্বরে বলে,


" রাশেদ আমি আপনারে ছাড়ব না।তালাক দিলেও যাব না।"


" খা*** কি বললি!ছাড়বি না মানে?তোরে এক্ষুনি তালাক দিব।"


রাশেদ মুখ দিয়ে তালাক উচ্চারণ করার আগে রাবেয়া কষিয়ে চড় মা র ল।এই প্রথম রাবেয়া ছেলের গায়ে হাত তুলেছেন ইসমাইল এবং আনিকা দুজনেই অবাক হয়।রাশেদ হিংস্র থেকে হিংস্রতর হয়ে উঠে আনিকার চুলের গোছা টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,


" মা** তোর কেউ নাই।তোরে আজ খুন কইরা লা শ মাটিতে পুতামু।তোর লা শ কেউ খুঁজতেও আসবো না।"


রাশেদ রান্না ঘরের দিকে যায় এবং দা হাতে নিয়ে ফিরে আসে।এবার প্রচন্ড ভয় পান ইসমাইল।এই ছেলের হুশ জ্ঞান নেই কি থেকে কি করবে কে জানে।রাবেয়া রাশেদের হাত ধরে দা ছিনিয়ে নিতে চায় কিন্তু রাশেদের শক্তির সাথে তিনি কিছুতেই পেরে উঠলেন না।


" রাশেদ দা ছাড় আনিকারে মা রা র আগে আমারে মা র।"


" তোমারে মারমু আনিকারেও মারমু এই বাড়ি এই সম্পদ সব আমার।সব আমার আর ময়নার।তার আগে এই খা** মারমু।"


রাশেদ আনিকার দিকে কোপ দিতেই আনিকাকে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে যান রাবেয়া ততক্ষণাৎ কোপ লেগে যায় রাবেয়ার মাথায়।এবং দা'টা  এতটাই শক্তপোক্ত ভাবে মাথায় গেঁথে যায় দা তোলার আর সাহস করেনি রাশেদ।


চলবে....


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ৩৩ বাকি অংশ

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ৩৩ বাকি অংশ ]


নিজ বাড়ি থেকে ঝগড়ার শব্দে দাঁত মুখ খিঁচে বসে আছে রুমু রাশেদ কি নিয়ে ঝামেলা লেগে বিশ্রি বিশ্রি গালাগাল ছুড়ছে।দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে গালাগাল গুলো যে উজ্জ্বলের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝল রুমু।সকালের নাস্তা শেষে এগারোটায় চায়ের আড্ডায় বসেছে সকলে।আরশাদ খুশবু রুমুর পাশেই বসে তারা কেউ কিছু না বললেও কান খাড়া করে সবটা শুনছে।এত এত বিশ্রি গালাগালিতে মাথা নত করে সকলেই বসে আছে আরশাদ কয়েকটা কথার অর্থ বুঝলেও বেশিরভাগ গালাগালির অর্থ সে বুঝেনি।


"রাশেদ ভাইপারটাকে রাগিয়ে দিয়েছে কে?এদিকে তেড়ে আসছে কেন?"


রুমুর পাশে বসে স্বগোতক্তি স্বরে বলল উজ্জ্বল।রুমু চুপ রয় মান সম্মানটা যেন  মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।


" তুই কি লজ্জায় নত হচ্ছিস?আরে প্যারা নাই তোর ভাই বলে তোর যতটা লজ্জা লাগছে রাশেদ কিন্তু আমারো ভাই আমরা একই বংশ একই রক্তের লোক।"


" তারপরেও..."


" চুপ থাক।"


রুমু কথা বাড়ায় না।চায়ের আড্ডা শেষে তারা সকলে রেডি হতে চলে যায়।আজকের দুপুরের খাবার সবাই উজ্জ্বলের রেস্টুরেন্টেই করবে।উর্মি তামিম,আরশাদ খুশবু, তাদের সাথে উজ্জ্বল রুমু তারা ছয় জনেই তৈরি হয়ে রওনা দিল রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে।বাড়ির গেট থেকে বের হতেই রুমুর মুখোমুখি হলো রাশেদ।রাশেদের রক্তিম চোখ রাগান্বিত চাহনি ভয়টা বাড়িয়ে দিল রুমুর। অতিথির সামনে আবার না কোন কাহিনী ঘটে যায়।রাশেদকে প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইল কিন্তু যে ভয়টা রুমু পেয়েছে ঠিক সেটাই হলো রাশেদ আজ হয়তো অগ্রীম প্রস্তুত ছিল আজ সে ঝামেলা করবেই।


" আড়ালে আয় কথা আছে।"


" ভাইয়া আমার কোন কথা নাই।পথ ছাড়ো।"


" রুমু তেজ দেখাবি না খবরদার।"


" তেজ দেখাচ্ছি না।"


রাশেদ পুনরায় ধমক দিল।উজ্জ্বল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও এবার আর চুপ থাকতে পারল না।রুমুকে সরিয়ে এগিয়ে গেল সে।


" কি সমস্যা তোর?ঝামেলা করতে চাইছিস?"


" ঝামেলা তো তুই করছিস আমার বোনকে বিয়ে করে ঝামেলা কে বাড়াল?"


" যাকে বিয়ে করলাম তার মাথা ব্যথা নাই,যার মেয়েকে বিয়ে করলাম তারও মাথা ব্যথা নাই তুই কোন খেতের মুলা?"


"কথা বার্তা সাবধানে বল।নষ্ট কোথাকার তোর..."


রাশেদ কথা শেষ করার আগেই তার বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল রুমু।ঘটনাটা এতটাই তাড়াতাড়ি ঘটলো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উর্মি তামিম সহ অন্যরা বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে।


" খবরদার আমার স্বামীকে নিয়ে বাজে কথা বলবে না।তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হয়।চোখের সামনে থেকে সর।"


" তোর সাহস দেখি বেড়েছে।"


" হ্যাঁ বেড়েছে অনেকটা বেড়েছে আর প্রমাণ করতে চাই না।"


রুমু দ্রুত উজ্জ্বলের হাত টেনে নিয়ে গেল।সবার সামনে একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে এখন থেকে চলে যাওয়াই উত্তম।

সারাটা দিন তারা অনেক আনন্দে কাটাল আরশাদ এই শহরে নতুন তাই উজ্জ্বল তাকে সবটা দেখাচ্ছে বোঝাচ্ছে নতুন অতিথি নিয়ে তাদের সময়টা কাটছে ভীষণ ব্যস্তময়।

.

বৃষ্টির স্যাঁতসেঁতে ভাবটা কাটিয়ে দুইদিন রোদের দেখা মিললেও সন্ধ্যায় পুনরায় ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামল চারিদিকের তপ্ত পরিবেশ মুহূর্তে শিতিল হলো গাছ পালায় ফিরে এলো স্বস্তি।রাশেদের গত দুইদিন ময়নার কাছে যাওয়া হয়নি বাড়িতে সবাই সন্দেহ করছে পরপর প্রতিটা রাতেই যদি সে নিখোঁজ থাকে সবাই নিশ্চিয়ই তাকে প্রশ্নের বানে ঘিরে ধরবে।এখন যে প্রশ্ন তুলে না তা কিন্তু নয় কিন্তু গলার জোর দেখিয়েও তো পাশ কাটানো যায়।বৃষ্টির দাপটে ছাতা উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বেশ কসরতে ছাতাটা ধরে রাখলেও হঠাৎ এক দমকা বাতাসে ছাতা একপাশ উলটে ভেঙে যায়।কয়েক সেকেন্ডে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে যায় রাশেদ তড়িঘড়ি ময়নার ঘরের সামনে এসে দরজায় টোকা দিয়ে ডাকল ময়নাকে।অতি সত্বর দরজা খুলল ময়না রাশেদকে দেখে তার দু'চোখে তারারা খেলা করছে তার চাহনিতেই বোঝা যায় সে কতটা খুশি।


" কেরে আইলো ময়না?"


বৃদ্ধার আওয়াজে দাঁত মুখ খিঁচে ফেলল রাশেদ ভেবেছিল আজ রাতটা সেদিনের মতো আনন্দে কাটাবে কিন্তু তা আর বোধহয় হবে না।পাশের রুম থেকে বৃদ্ধা এগিয়ে এলেন এবং পুনরায় বলেন,


" কিরে ময়না কে আইলো?"


" দাদি তোমার নাত জামাই।"


কথাটি বলেই লজ্জায় হাসলো ময়না।তার হাসিতে বাঁকা হাসলো রাশেদ অতি দ্রুত ঘরে প্রবেশ করে সালাম জানাল বৃদ্ধাকে।


" দাদি ভালো আছেন?"


" তোমারে না কইছি এবার আইলে বিয়ের কথা নিয়া আইবা।"


" রেগে যাচ্ছেন কেন দাদি?আমি তো ময়নারেই বিয়া করমু।"


" কবে করবা?সেই কবে থেকে হুনলাম বিয়া করবা।তোমার বউরে তালাক দাও নাই?"


" তালাক দিতে কি সময় লাগে?তিন তালাক দিলেই হইব ধৈর্য ধরেন দাদি।"


" হুনো তোমারে আর অল্প কয়ডা দিন সময় দিলাম এত মধ্যে ময়নারে বিয়া করলে করবা আর নইলে ময়নার লাইগা নতুন পোলা দেখমু।"


আজ সারাটা দিন রাশেদের মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল তার উপর বৃদ্ধার কথায় তার মেজাজটা পুনরায় তপ্ত হলো।নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৃদ্ধার গলা চেপে ধরল ময়না ভীষণ ভয় পেল।শরীর কাঁপতে কাঁপতে রাশেদকে সরাতে উদ্যাত হলো,রাশেদের পেশিবহুল শক্তপোক্ত দেহের সাথে ময়না কি পারে?মোটেও না বরং রাশেদের ঝটকায় ছিটকে পড়ল বিছানায়।দাদির জিহ্বা বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ময়না ভীষণ ভয় পেল রাশেদের পা জড়িয়ে বলে,


" কসম লাগে দাদিরে ছাইড়া দেন।"


" এই বুড়ি মরলেই আমার শান্তি।"


" রাশেদ আল্লার দোহাই দাদিরে ছাইড়া দেন।"


রাশেদ বৃদ্ধার গলা ছাড়ল রাগে থরথরে কাঁপছে তার শরীর।বৃদ্ধা মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই রাশেদ বলে,


" চুপ কর বুড়ি,ময়না আমার।ময়না কার?"


" তো...তোমার।"


" হুম।এখন চুপচাপ পাশের রুমে যাবেন কোন কথা যেন না শুনি আজ ময়না আমার কাছেই থাকবে।"


বৃদ্ধা চুপচাপ কাঁপতে কাঁপতে চলে গেল পাশের রুমে অপরদিকে রাশেদ বাঁকা হেসে জাড়িয়ে ধরল ময়নাকে।এই লালসার ছোঁয়ায় ময়না কি বাঁধা দিল?একদমি না বরং তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাসনায় আঁকড়ে ধরল রাশেদের বাহু।

.

অনেকদিন পর বৃষ্টি পেয়ে ছাদে নিজের খুশি মতো ভিজেছে উর্মি সেই সাথে রুমু তো আছেই উজ্জ্বল বাড়িতে নেই বিধায় এই কাজ করার সাহস পেল সে।সবাইকে ভিজতে দেখে খুশবুর মনেও ইচ্ছেরা ডানা ঝাপটে ফেলল সেও ভিজবে।ছাদে পা বাড়াতেই আরশাদের কড়া নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই ভেজা যাবে না এই একটা বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে বেশ কথা কাটাকাটি হলো।খুশবু ভীষণ রেগে গেল রাগ দেখিয়ে আরশাদের সাথে আর একটুও কথা বলেনি।


ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে সেই সাথে বাতাসটা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে খুশবু।আরশাদ পেছন থেকে এসেই জড়িয়ে ধরল তাকে।


" ফ্লুজি আমার জান কী করছো?"


" ছাড়েন তো।"


" এখনো রেগে আছো।"


" আমি কারো উপর রেগে থাকি না।"


আরশাদ শ্লেষ হাসল খুশবুর অনিচ্ছা শর্তেও তাকে জড়িয়ে ধরল।এভাবে পেরিয়ে গেল অনেকটা সময় কিন্তু খুশবুর রাগ কমল না আরশাদ অতিদ্রুত কোলে তুলে নিল তার ফ্লুজিকে।ভালোবাসার ছোঁয়ায় খুশবুর ঠোঁট আঁকড়ে ধরতে হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল খুশবু। আরশাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।আরশাদ কয়েক পলক তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইল তবে মোটেও পারল না লাহমায় চেপে ধরল খুশবুর বাহু তীব্র রাগ দেখিয়ে বলে,


" তুমি জানো না তোমার এড়িয়ে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারি না।এমন করছো কেন!"


" আরশাদ... "


ভয়ে ঢোক গিলল খুশবু।আরশাদ থেমে গেল আচমকাই খুশবুর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে উন্মাদ হয়ে পড়ল।খুশবু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করল না সে জানে এতে লাভ নেই বরং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে ছেলেটা।রাত বাড়ল অথচ আরশাদ কিছুতেই ছাড়ল না তার ফ্লুজিকে মেয়েটা ঘুমের ঘোরে বারবার আরশাদকে সরাতে চাইছে, 


" আরশাদ ঘুমাতে দিন,কি ভাবেন আমায়?"


" ডানোর ডিব্বা।"

চলবে...


" মাই ফ্লুজি"র জন্য অনেকেই মেসেজ করেছেন ইবুকটা প্রকাশ হবে ২০ জুলাই।যারা পড়তে চান  ৩৭ টাকা জমিয়ে রাখুন।বইটই ইবুক মেলা উপলক্ষ্যে ২৫% ছাড়ে মাই ফ্লুজি পেয়ে যাবেন মাত্র ৩৭ টাকায়।


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ৩৩

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ৩৩ ]


" উর্মি আপা বাচ্চা নাও না কেন?"


" তুইও তো দেখি মুরব্বিদের মতো কথা শিখেছিস।"


" তো আমি কি মুরব্বি না?তোমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ তোমার ভাবী।আমি কিন্তু মুরব্বিদের কাতারে পড়ি বুঝলে?"


রুমুর কথা গাল টেনে দিল দিল উর্মি।বাবার বাড়িতে উর্মির আসা হয়েছে বেশ কয়েকমাস পর উজ্জ্বলের রেস্টুরেন্ট ওপেনিং এর দিনো তার আসা হয়নি কেননা তামিমের অফিসের কাজের জন্য বের হওয়ার সুযোগ পায়নি।এই বাড়িতে এসে যা বুঝলো বর্তমান মধ্যমনি হলো রুমু।এই মেয়েটা সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যে কাজটা আগে উর্মি করতো। আসার পর আনিকার সংসারিক অবস্থা শুনে উর্মি নিজেই বাক্যহারা সাধাসিধা মেয়েটার কপালে এমন একটা জানোয়ার জুটলো!


" রাশেদ ভাই ছোট থেকেই গোঁয়ার প্রকৃতির ছিল চাচাজান যাও শাসনে রাখতো কিন্তু চাচি আম্মার জন্য তাও হতো না।আদরের ছেলেকে কেউ কিছু বললেই রেগে মেগে এক শেষ অবস্থা।"


" এখন তো আম্মার কথাই শুনে না।আম্মাকে পাত্তা দেয় না।"


" আনিকার কি হবে?মেয়েটার তো বাপের বাড়ির দিক দিয়েও কেউ নেই।"


" জানিনা কি হবে আব্বার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে হবে।"


গরম গরম নকশি পিঠা ভেজে তুলল উর্মি সিরায় ঢালার সাথে সাথে পিঠাগুলো কেমন রসে মাখো মাখো অবস্থা।রুমু তৃপ্তি সহিত তাকিয়ে রইল নতুন অতিথির জন্য যে কত প্রকার পিঠার আয়োজন করা হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না।রান্নার কাজ শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই।দুপুর পেরিয়ে গেছে রোদেরা পাতার ফাঁকে ঝিলিক দিয়ে রান্নাঘরের জানলা ছুঁয়েছে।রুমু এগিয়ে গেল নিজ কক্ষে উজ্জ্বল এসেছে আওয়াজ পাওয়া গেছে।


" উজ্জ্বল আপনার বন্ধুরা কতদূর?"


" আরে বলিস না ওরা নাকি গুগলে দেখে আসতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে এখন ফোনে বলে দিয়েছি শটকাট চলে আসবে।"


উজ্জ্বল আপাদমস্তক তাকাল রুমুর পানে।মেয়েটা আজ শাড়ি পরেছে হালকা সাজে দুর্দান্ত লাগছে মেয়েটাকে।গায়ের টি শার্টটা খুলতে খুলতে উজ্জ্বল বলে,


"শাড়িটা তো আমি দেইনি কোথায় পেলি?"


" উর্মি আপা এনেছে।আমাকে কেমন লাগছে?"


" লাল মরিচের মতো লাগছে।"


" কি!এটা কেমন কথা?"


" সত্যি কথা।চিকনাচাকনা শরীরটায় লাল শাড়ি জড়িয়েছিস তোকে আসলেই লাল মরিচের মতো লাগছে।"


" লাল মরিচের ঝাল নেবেন না উজ্জ্বল ভাই?"

 

উজ্জ্বল 'ভাই' শব্দটা শুনেই ধমকে উঠল,


" অব কে তোর ভাই?তাছাড়া এই মরিচে ঝাল নেই মিষ্টি মিষ্টি।"


রুমু ঠোঁট বাঁকালো এগিয়ে এসে কামড় বসাল উজ্জ্বলের বুকে।সে বুঝিয়ে দিতে চাইল তার ঝাল কিন্তু উজ্জ্বল কি কম যায়? রুমুকে সরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে আরো কাছে টেনে নেয় এবং কামড়ে দেয় রুমুর ঘাড়ে।উজ্জ্বলের আক্রমণে রুমু ভড়কে যায় নিজেকে ছাড়াতে নিলেও ছাড়া পায় না।

রুমু ব্যথায় দাঁত খিঁচে বলে,


" ওরে রক্তচোষা বাদর ছাড় আমাকে।"


" চুমু বউ চুমু রেখে কামড়া কামড়ি করছো কেন?"


" উজ্জ্বল ছাড়েন শাড়ি এলোমেলো হচ্ছে আমার সাজ..."


" চুপ।কার জন্য সাজলি আমার জন্য না?আমি এলোমেলো করেছি কেউ তো করেনি।"


আঁচল আটকে থাকার জন্য কাধে লাগানো সেফটিফিনটা উজ্জ্বল খুলে দিল।মুহূর্তে ঝরঝরিয়ে জরজেট শাড়িটা মেঝেতে পতিত হলো রুমু উজ্জ্বলকে ছেড়ে নিজেকে আড়াল করতে চাইল কিন্তু তা কি আর হয়?প্রেমময় প্রহরটা যে উজ্জ্বল কিছুতেই হাত ছাড়া করবে না যখনি রুমুর দু'ঠোঁট নিজের আয়ত্তে আনল তখনি বাড়ির উঠনে বেজে উঠল গাড়ির হর্ন।উজ্জ্বল অতি সত্বর দূরে সরল এবং রুমুর হাতে পুরে দিল আঁচলের অংশটুকু।রুমু ঠোঁট টিপে হেসে বলে,


" আমি জানতাম এমনটাই হবে।"


" আমিও জানতাম।যখনি একটু মুডে আসি তখনি... যাই হোক শাড়ি ঠিক করে আয়।"

.

বেশ কয়েক বছরপর ইতালির কুয়োর ব্যাঙটা এবার দেশে ফিরেছে।সময় সুযোগ কোনটাই এই ব্যস্ত জীবনে হয়ে উঠছে না আসবে আসবে করেও যখন আসা হচ্ছে না ব্যস্ততা ক্রমশ ঘিরে ধরেছে তাই ব্যস্ততাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্লেনের টিকেট কেটে এনে নিজের স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিল।এই তো এবার যাচ্ছে তারা বাংলাদেশ।আরশাদের স্ত্রী খুশবু এমন সুংবাদ দেখে খুশির তালে মুর্ছা যায় যায় অবস্থা কত বছর পর ফিরছে নিজ দেশে।

আরশাদের পুরো নাম আরশার ইহসান তার জন্ম থাকা সবটাই ইতালিতে।ইতালির বাতাসে বেড়ে ওঠা ছেলেটা নিশ্চয়ই বিয়ে করবে ইতালির স্থানীয় কোন মেয়েকে কিন্তু না এই ছেলে ভালোবেসে ফেলল অতি সাধারণ বাঙালি  এক মেয়েকে।এই মেয়েকে পাওয়া কি এতই সহজ ছিল?আরশার ইহসান নাকে দড়ি নিয়ে ঘুরেছে পথ হারিয়েছে ভ্রমে পড়েছে সব পেরিয়ে খুঁজে পেল তার ফ্লুজিকে।এখন আবার হয়তো ভাবছেন ফ্লুজি কে?সেই খুশবুই হলো আরশাদের ফ্লুজি।


আশেপাশে বৃহৎ গাছপালা এবং ফুল গাছে সুসজ্জিত মাঝ উঠনে গাড়ি থামাল আরশাদ।লোহার ভারি গেটটা খোলাই ছিল নিশ্চয়ই আরশাদের কথা ভেবেই পূর্বে খুলে রেখেছিল উজ্জ্বল।গাড়ি থেকে নেমেই মুলাকাত হলো উজ্জ্বলের সহিত।সামনা সামনি দুই বন্ধু একে অপরকে পেয়ে খুব বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছে।সৈয়দ শামসুল এবং নার্গিসকে সালাম জানাল আরশাদ এবং খুশবু বাড়ির উঠনে বিদেশি লোকটাকে দেখে সবার মাঝেই চলছে নানা আগ্রহ।


রুমু দ্রুত শাড়ি গুছিয়ে সবার মাঝে উপস্থিত হলো আরশাদ কয়েকপল তাকে দেখে ভ্রু কুচকে অপরিপক্ব বাংলায় বলে বলে,


" এই বাচ্চা মেয়েটা তোমার বউ!"


শারিরীক গড়নে রুমুকে সবার মাঝে ছোটই মনে হয় তার মাঝে যখন শাড়ি পড়ে উপস্থিত হলো তখন বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা কেটে গেলেও আরশাদের কাছে রুমুকে সেই ছোটই মনে হলো।রুমু আগ্রহ ভরা চোখে পরখ করল আরশাদকে ধবধবে ফর্সা চামড়া চোখ জোড়া বাদামী মণি'র অধিকারী এই মানুষটাকে নিয়ে তার কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে।এতকাল যাবৎ টিভিতেই দেখেছিল এমন বিদেশি নায়কদের আজ যেন চোখের সামনে একটা নায়ক দাঁড়িয়ে আছে।সব পছন্দ হলেও আরশাদের কথা মোটেও পছন্দ হলো না রুমুর।এ কেমন বাংলা বলা!ঘেটে ঘ করে দিচ্ছে মধুর বাংলাটাকে।


" আমি বাচ্চা নই।"


বেশ জোর নিয়ে বলল রুমু।তার প্রতিক্রিয়া দেখে হেসে ফেলল আরশাদ সেই সাথে হাসল বাকিরা।এত ঘন্টার জার্নি শেষে আরশাদ এবং খুশবুকে পাঠানো হয়েছে আলাদা একটি কক্ষে সুসজ্জিত কক্ষে প্রবেশ করতেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল খুশবু।


" আরশাদ কতদিন পর নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে এলাম।"


" অন্য কোথাও যাওয়ার নাম নিলে আমার ভয় করে তবুও যে সাহস করেছি এটাই অনেক।"


" কেন ভয় করে আরশাদ?"


" ভুলে গেলে?"


" মনে পড়ছে না।"


" গ্রামে আসব বলে আমাদের সেই বাস এক্সিডেন্টের কথা মনে নেই?অল্পের জন্য তোমাকে হারাতাম।"


খুশবু চুপসে যায়।চুপচাপ তাকিয়ে রয় আরশাদের পানে এই বীভৎস স্মৃতি সে ভুলে যেতে চায়।


" আমরা এখানে কয়দিন থাকব আরশাদ?"


" যতদিন না ব্যস্ত জীবনের তাড়া আসে।"


" আমার গোসল করা উচিত শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে।"


" ঠিক আছে যাও।"


জামা হাতে তুলে ওয়াশরুমে পা বাড়ল খুশবু।দুপুরের খাবার খেতে বসল সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে।সবাই মিলে জড়োসড়ো হয়ে আরশাদ এবং খুশবুকে আপ্যায়নে ব্যস্ত।উজ্জ্বল মুরগীর লেগ পিসটা আরশাদের প্লেটে দিতে আরশাদ তা তুলে দিল খুশবুর প্লেটে উজ্জ্বলের প্রশ্নবিদ্ধ চাহনির উত্তর সাজিয়ে বলে,


" ফ্লুজির এটা পছন্দ।"


" ভাবিরটাও তো আছে।আচ্ছা দাড়া মাছের ডিমের ভুনা দিচ্ছি ওটা ট্রাই কর।"


" ফ্লুজিকে দে ওর মাছের ডিম ভীষণ পছন্দ।"


আরশাদের একেরপর এক কান্ডে সবার মাঝে খুশবু বেশ বিব্রতবোধ করছে।এ আর নতুন কি?আরশাদের এসব অভ্যাস আজকালের নয় সেই শুরু থেকেই।রুমু আড় চোখে তাকাল উজ্জ্বলের পানে সে যেন কিছু ইঙ্গিত করছে যখনি উজ্জ্বল সরে দাঁড়াল তখনি গাল ফুলিয়ে রুমু বলে,


" কই এমন ভাবে কখনো আমার প্লেটে মোরগের রান মাছের ডিম তুলে দিয়েছ?"


" তুলে দিব কেন?বাটি থেকে সরাসরি তোর প্লেটেই পড়ে তাহলে তুলে দিব কেন?অন্যকে দেখে অনুকরন করা বন্ধ কর।"


" উহ।"


এত এত খাবার খেয়ে আরশাদের পেটটা যেন এক্ষুণি ফেটে যাবে।সবাই তাকে এতই ঠেসেঠুসে খাইয়ে ছেড়েছে এতদিনের ডায়েট চোখের পলকে জলে ভেসে গেল।আরশাদ বসার ঘরে সবার সহিত আড্ডা দিচ্ছিল অথচ খুশবু চুপসে আছে সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না সে।কে কি বলছে করছে আপাতত এসব পরখ করাই তার একমাত্র কাজ।


আড্ডা শেষে বিশ্রামের জন্য আরশাদ নিজ কক্ষে ফিরল ইতোমধ্যে খুশবুর সাথে রুমুর বেশ ভাব হয়েছে দুজনে বেশ অনেকক্ষণ গল্পসল্প করল।তাদের কথার মাঝে আরশাদ উপস্থিত হলো রুমুকে আবদার সুরে তার অপরিপক্ব বাংলায়  বলে,


" হামাকে টাল খাউয়াবে ওকে?"


" টাল!সেটা আবার কি?"


" আরেহ টাল।"


" টাল মানে?"


" টাল বুচো না?টাল টাল।"


রুমু ঢোক গিলল এই ইতালিয়ান বাদরটার বাংলা সে একটুও বুঝেনা এসব কি বলে?দূর ছাই।


" টাল মানে কি ভাইয়া?আপনি কি মদ চাইছেন?ইয়ে মানে মদ খেয়ে টাল মাটাল হতে চাইছেন?"


" উফফ সো সিলি গার্ল।"


খুশবু পাশে বসে হাসছিল।সে আরশাদের কথা বুঝতে পেরেও কিছুই বলল না রুমুকে একটু গোল খাওয়ানো যাক।


" সিলি টিলি বাদ দিন।এবার বলুন টাল কী?"


আরশাদ উঠে দাঁড়াল।এখানে কেউ তার বাংলা খুব বেশি বোঝেনা তার বাংলা বলাটা এত বিশ্রি কেন?চাইলেও সংশোধন হচ্ছে না।

রুমু ভ্রু কুচকে বলে,


" তোমার বর কি বলল?"


" তালের কথা বলেছে।তোমার গেটের বাইরে যে তাল গাছটা আছে ওটা দেখেই সে আমাকে বলেছিল এবার এসেছে যখন তাল খাবে।"


রুমুর মাথায় হাত পড়ল কি অদ্ভুত! তালকে কেউ টাল বলে?

.

ঘুমের ঘোরে স্বপ্নরা কেমন বাস্তব বাস্তব অনুভূত হয় মনে হয় যেন অন্য জগৎ-এ ছিটকে পড়েছি সুখের স্বপ্ন সুখানুভূতি তেমনি দুঃখের স্বপ্নে চোখ ভিজে একাকার।গভীর রাতে ভিজে আছে খুশবুর চোখ দুঃস্বপ্নে কাঁপছে সে

 ঘুমের ঘোরেই হু হু শব্দ তুলে কেঁদে ফেলল, তার উথাল-পাথাল শ্বাসে বুকের অস্বাভাবিক ওঠা নামায় আচমকা কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল আরশাদের।খুশবুর অস্বাভাবিক আচরণে খুশবুর বুক থেকে মাথা তুলে তাকাল।খুশবুর ভেজা গাল স্পর্শ করতে বুকের ভেতরটা মোচড় দিল।

আরশাদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,


"ফ্লুজি আমার জান ঠিক আছো?"


চলবে...

গল্পে আরশাদকে নিয়ে এলাম এটাই ছিল সারপ্রাইজ।কিন্তু আপনারা ঠিকি আগেই ধরে ফেললেন উলটা আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়েছি🥹।আরশাদ এবং খুশবু ফ্লুজি গল্পের দুটো চরিত্র।যারা গল্পটি পড়েননি পড়ে ফেলুন।আরেকটা কথা #ফ্লুজি গল্পের মাধ্যমে আমাকে কে কে চিনেছেন?👀


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ৩২

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ৩২ ]


" বাচ্চা নাও না কেন?স্বামীরে বশ করার মূলমন্ত্র হইলো বাচ্চা-কাচ্চা বিয়ের এত বছরেও বুঝ নাই?"


পান চিবুতে চিবুতে কথাটি বলল প্রতিবেশি একজন বৃদ্ধা।তিনি এসেছেন বসেছেন টুকটাক আলাপচারিতা করেছেন ইদানীং এই বাড়িতে যে ঝামেল লেগেই আছে এসব ব্যাপারে খোঁজ নিতে এসেছেন।উক্ত কথাটি বলেই তিনি ঘোমটা টেনে চলে গেলেন আনিকা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে বৃদ্ধার পানে।রাবেয়া হতাশার শ্বাস ছাড়লেন আনিকাকে দোষারোপ করে বলেন,


" বিয়ের এত বছর হলো বাচ্চা নিলা না কেন?বাচ্চা ছাড়া কি পুরুষ মানুষের সংসারে মন ভরে?বিয়ের এক বছরেই তো বাচ্চা নিতে হয়।"


" আম্মা আপনার ছেলেই তো বলল বাচ্চার নাম যেন দুই বছরেও না তুলি।"


" দুই বছর করে যে আরো কত বছর পার করলা সেটা কি আমার ছেলের দোষ?"


" আল্লাহ আমার গর্ভে সন্তান না দিলে আমি কি করতে পারি আম্মা?"


" তর্ক করবা না।"


" তর্ক না করে আর কতকাল থাকব?আমি বলি নাই ডাক্তার দেখাতে?আপনার ছেলে পাত্তাই দিল না।আপনিও কোন গুরুত্ব দিলেন না।"


" আমার ছেলে কেন যাবে ডাক্তারের কাছে?সমস্যা তোমার, তোমার গর্ভে বাচ্চা আসেনা তাহলে আমার ছেলে কেন ডাক্তারের কাছে যাবে?"


" আম্মা আপনি এই যুগে এসেও অবুঝের মতো কথা বললেন!"


" এই আমারে যুগের দোহাই দিবা না।এখন তো স্বামী হাত থেকে ছুটছে কি করবা করো।"


রাবেয়া প্রস্থান করলেন।এমন ভাবে কথাগুলো বললেন যেন সব দোষ আনিকার।বাচ্চা না হওয়া নিয়ে ঠিক কয়েক মাস আগেও চিন্তায় থাকলেও এখন আর চিন্তা আফসোস কিছুই করে না বরং সময়ের সাথে সাথে মনে হচ্ছে বাচ্চা না হয়ে সে বেঁচেই গেছে এই অসভ্য বর্বর লোকটা নিশ্চিয়ই নিজের বাচ্চাকেও ছাড়তো না।একটা অসুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠত কোমল শিশুটি।যা হবার হবে যা হবার দেখা যাবে। 


রাশেদ ইদানীং রাতে বাড়ি ফেরে না, সৈয়দ ইসমাইল কি করবেন নিজেই ভেবে পাচ্ছেন না।তিনি সবার শালিস বৈঠকে যান এলাকার সম্মানীয় ব্যক্তি তিনি অথচ তার ঘরেই চলছে নিন্দনীয় কাজ-কারবার এসব শুনলে কি মানুষ হাসবে না?অবশ্যই হাসবে উপহাস করবে।যেদিন আনিকাকে মেরে হসপিটাল পাঠিয়েছিল সেদিনি এলাকার লোক নানান কথা তুলেছে নানা সমালোচনা হয়েছে।তার একমাত্র ছেলে যেন এক টুকরো নরক নিজের মেয়ে জামাইকে এক বেলা আদর আপ্যায়নে খাওয়াতে পারেননি কত রাত কেটে গেছে এই ছেলের চিন্তায় শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না।ব্যবসায় যাও হাত লাগিয়েছিল ইদানীং তাও ছেড়ে দিয়েছে অথচ টাকা টাকা করে নিয়মিত ঝগড়া করছে।বয়স তো বেড়েছে আর কতকাল কুলাঙ্গারটার এসব সহ্য করবেন?ছেলেটাকে এতটা উগ্র আচরণের মূল কারণ তার মা।মায়ের আশকারায় ছেলেটা ছোট থেকেই অন্যায় কাজে প্রশ্রয় পেয়েছে সাহস পেয়েছে সব মিলিয়ে এখন তার অন্যায় সহ্যের বাইরে চলে গেছে।যে ছেলে মায়ের কথায় চোখের পলক ফেলত সেই ছেলে এখন মায়ের কথা এক কানে ঢুকায় তো আরেক কান দিয়ে বের করে।


রাতের খাবার খেয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে আনিকা তার পাশেই শুয়ে আছে রাশেদ।এক বিছানায় থাকলেও মনের দিক দিয়ে বিশাল দূরত্বে তারা।কাঁদতে কাঁদতে আনিকার চোখের পানিও ফুরিয়ে এসেছে যে ছেলেটাকে ভালোবেসে গৃহ ত্যাগ করেছে সেই ছেলেটাই আজকাল তাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়।

ভালোবাসা এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়!কাকে ভালোবাসলো আনিকা?জীবনের হিসাব কষলে মনে হয় জীবনটা তার ভুলে ভরা।আবার পড়াশোনা শুরু করবে আবার সাজাবে জীবনটা কিন্তু কোথা থেকে কি যে শুরু করবে।


" ওই শুন।"


রাশেদ আচমকা হেঁচকা টেনে কাছে আনল আনিকাকে।মেয়েটা ভয় পায় শারিরীক মেলামেশা ইদানীং তাদের হয়না বললেই চলে যতবার রাশেদ তার কাছে এসেছে তাকে মারতেই এসেছে।


" ছাড়েন আমারে।"


" এত দেমাক কিসের?"


"ছাড়েন আপনার ছোঁয়া আমার বিষের মতো লাগে।"


" নতুন নাগর জুটছে নাকি?"


" ছি লজ্জা লাগে না?সবাইকে কে কি নিজের মতো ভাবেন?"


" কথা কম বল।তোর ননদরে ফোন লাগা।"


" ক..কেন?"


" বিশ হাজার টাকা দিতে বল।তুই বললে এমনেই টাকা বের হবে।"


" আপনি ভাবলেন কি করে আমি রুমুর কাছে টাকা চাইব!"


" চাইবি না কেন?উজ্জ্বল যে পরিমান ইনকাম করতেছে তোর ধারণা আছে?"


" সে তার পরিশ্রম সততা দিয়ে ইনকাম করতেছে আপনার জুয়া খেলার জন্য আমি তার কাছে টাকা চাইব?ভুল ভাবলেন।"


আচমকা আনিকার চুল টেনে ধরল রাশেদ।টনটনে ব্যথায় দাঁত মুখ খিচে রইল মেয়েটি।


" তোরে তালাক দিব বেশি গ্যাঞ্জাম করলে আজ রাতেই দিব।"


" দেন তালাক দেন।ভয় পাই না আমি।"


" কি পাস না?"


" ভয় পাই না।"


দৃঢ় কণ্ঠে বলল আনিকা।রাশেদ যেন আরো রেগে যায় টেনে ধরে মেয়েটার চুল।যে স্বামীর হাতে ভালোবাসার ছোঁয়া ছিল আজকাল সেই স্বামীর হাতে যন্ত্রণার ছোঁয়া।


" খা** নাগর পাইছিস নতুন নাগর পেয়েই তোর গলার আওয়াজ এত ধারালো হইলো।"


" চুল ছাড়েন অনেক সহ্য করছি আর না।"


" কি করবি তুই?"


" পুলিশের কাছে যাব।"


রাশেদ হো হো শব্দে হেসে উঠল।তাদের কুৎসিত হাসিতে গায়ে কাটা তুলল আনিকার।মেয়েটা এবার ভয় পেল এই ভয়ার্ত চাহনিটা ঠিকি ধরে ফেলল রাশেদ।


" পুলিশ তোর নতুন নাগর নাকি?"


শেষোক্ত কথাটি বলেই আনকাকে বিছানা থেকে ছুড়ে ফেল দিল নিচে।আনিকা উঠে বসার আগেই মাটির বড় ফুলদানিটা ছুড়ে ফেলল তার মাথায়।নিস্তব্ধতা কাটিয়ে ফুলদানি ভাঙার শব্দ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।চিনচিন ব্যথায় দ্রুত মাথায় হাত রাখল আনিকা রক্তে ভেসে যাচ্ছে কপাল।এই রক্তাক্ত শরীর দেখে রাশেদের মায়া হয় না বরং একে একে গালি ছুড়তে থাকে আনিকাও আর সহ্য করতে পারে না  ছোট টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাস দিয়ে মাথায় বারি মা র ল  রাশেদের।আনিকা এমন কাজ করতে পারবে স্বপ্নেও ভাবেনি রাশেদ তার মাথা না ফাটলেও প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে।

.

উজ্জ্বল আজ ভীষণ ব্যস্ত তার রেস্টুরেন্টটা সম্পূর্ণ আবারো সাজানো হয়েছে বাড়ি ঘর সব পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের কাজ চলছে তার বন্ধু দেশে আসবে।উজ্জ্বলের পাশাপাশি রুমুও ভীষণ আগ্রহের সহিত কাজ করছে কিন্তু তার কাজের গতিক থেমে যায় আনিকার সহিত কথা বলে।রাশেদ যে দিনকে দিন তার অত্যাচার বাড়িয়ে দিচ্ছে এসব আর মানা যাচ্ছে না এর একটা সমাধান দরকার।সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত দেহ টেনে বিছানায় শুলো উজ্জ্বল রুমু এসে বসল তার পাশেই।


" উজ্জ্বল আপনার সাথে কথা আছে।"


" বল।"


" আনিকা ভাবীর কিছু একটা করা উচিত রাশেদ জানোয়ারটা তাকে গতকালো মেরেছে।"


" কি করবি তুই?তুই নিজেই তো মার খাবি।"


" আমি একা তো পারবো না আপনিও আমার সাথে থাকবেন।আজকাল নাকি তালাক দেবে বলে হুমকি দেয়।"


" তো দিচ্ছে না কেন?মেয়েটা অন্তত বেঁচে যায়।"


" আমিও তাই চাই।"


" সেসব পরে হবে।সারাদিন অনেক কাজ করেছিস এখন রেস্ট কর।"


" আপনার বন্ধুরা কখন আসবে?"


" ঢাকায় এসে তো পৌঁছে গেছে কালকেই এখানে আসবে।"


উজ্জ্বল হঠাৎ চুপসে গেল কিছু বলবে করেও বলার সাহস পায় না।রুমু তার চোরা চাহনিটা ঠিকি ধরে ফেলে।


" উজ্জ্বল আপনি কি কিছু বলবেন?"


" ইয়ে মানে রুমু তোর ভাই একটা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়েছে তাকে নাকি বিয়েও করবে।"


" কে সেই মেয়ে?"


" মেয়েটার নাম ময়না ডিভোর্সি।"


" তবে ওই মেয়ের কাছেই চলেন।মেয়েটাকে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই রাশেদের সঙ্গ ছাড়বে।"


" লাভ নেই মেয়েটা সব জানে।"


" কি বেয়াদব মেয়েরে বাবা হাতে ধরে নিজের বিপদ ডাকছে।"


" এসব মেয়েকে বলেও লাভ নেই রুমু জেনে শুনে যখন এমন করছে নিশ্চয়ই আমাদের কথা শুনবে না।"


" হুম তা ঠিক।"


রুমু উঠে দাঁড়াল কিছু ভেবে ফিরে আসল পুনরায়।ফল কাটার ছুরিটা নিয়ে বসল উজ্জ্বলের পাশে।


" কিরে ছুরি আনলি কেন?"


" আনিকা ভাবীর সংসার তছনছের পেছনে মূল কারণ বিয়ের এত বছরেও বাচ্চা না নেওয়া এতে নাকি রাশেদ ভাই বিগড়ে গেছে সংসারে মন হারিয়েছে।"


" তোর ভাই কি বিয়ের আগে খুব ভালো ছিল?"


" কথা শেষ করতে দিন।"


" বল।"


" পাশের বাসার চাচি এটাই বলল।আজ আমাকে পরামর্শ দিয়ে গেল  এই বছরেই যেন বাচ্চা নিয়ে ফেলি  তা না হলে আপনিও সংসারে মন হারাবেন।"


রুমু আচমকাই উজ্জ্বলের গলায় ধারাল ছুরিটা চেপে ধরল।উজ্জ্বল হাসবে নাকি কাঁদবে তার প্রতিক্রিয়া বোঝাতে ব্যর্থ।


" তুই দেখি আজকাল পাড়া প্রতিবেশির কথা খুব শুনিস।"


" আজ শেষ বারের মতো দেখিয়ে যাচ্ছি শুধু আমার ভালোবাসায় আঘাত দেন গলা কে টে ফেলব মাইন্ড ইট।"


" ওকে ওকে।সেম টু ইয়ু ওকে?"


" বাচ্চা কি নিব?"


" আগে বাচ্চা বানান কর তারপর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।"


চলবে...



গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ৩১

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ৩১ ]❌কপি করা নিষেধ ❌


নগ্ন দেহের ভাজে নিজেকে আড়াল করেছে রাশেদ।বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি ঝরছে প্রলয়কারী ঝড়ে এক্ষুণি টিনের চালটা যেন ছিদ্র হয়ে যাবে।এই বুঝি বাতাসের তান্ডবে উড়ে যাবে ঘরের চাল।থেকে থেকে আকাশের বাজ পরিবেশটাকে আরও দুর্বোধ্য করে তুলছে।অনৈতিক সম্পর্ক আর অনৈতিক ছোঁয়া দুটোকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে সে।একে অপরের কামুক চাহিদা পূরণে ব্যস্ত বৃষ্টির ঝমঝম শব্দের সহিত মেয়েটির শীৎকার ধ্বনি মিশে একাকার।আশেপাশের দূর দূরান্তের কেউ তো জানেই না এই ছোট্ট ঘরে কি লীলাখেলা চলছে।আদৌ জানার কথা না এই রাতে ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে অতি দরকার ছাড়া কে বা বের হবে?


" আস্তে ব্যথা লাগে।"


তীব্র ব্যথায় কুঁকড়ে বলল মেয়েটি।রাশেদ মুখ তুলে তাকায়।অন্ধকারে হারিকেনের আলোয় দেখতে পায় মেয়েটির কামুক চাহনি।দাঁতে দাঁত চেপে হাসল সে রসিকতার স্বরে পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ল,


" কি লাগে?"


" বুঝেন না?ব্যথা লাগে।"


পুনরায় হাসল রাশেদ।মেয়েটির কথা অগ্রাহ্য করে বলিষ্ঠ হাতের সাহায্যে চেপে ধরল এক দলা মাংস পিন্ড।মুহূর্তে ব্যথায় দাঁতে দাঁত খিঁচে চুপসে গেল মেয়েটি।


" কিরে সুন্দরি চুপ কেন?"


" ছাড়েন তো।"


" আজ রাত কি ছাড়া যাবে?ছাড়ার মতো রাত না।"


" বাড়ি ফিরবেন না?"


" বৃষ্টি দেখিস না?এই রাতে বের হব না।"


" আপনার বাবারে কি জবাব দিবেন?"


" আগে সকাল হোক তারপর ভাবা যাবে।"


রাশেদ উঠে বসল।খাটের পাশে থাকা টেবিল থেকে মদের বোতলটি নিয়ে সম্পূর্ণ মুখে পুরে নিল।মেয়েটি আশাহত চোখে তাকিয়ে রয় রাশেদের পানে এই লোক মদ কবে ছাড়বে?এসব ছাইপাশ গেলা কি খুব দরকার?মেয়েটির নাম ময়না ইদানীং রাশেদ যার কাছে এলে নিজের সুখ খুঁজে পায় মানসিক শারিরীক তৃপ্তি পায় এই সেই মেয়ে।ময়না সাহস নিয়ে রাশেদের হাত থেকে মদের বোতল ছিনিয়ে নেয়।


" কবে ছাড়বেন?আর কতবার বলব বলেন তো।"


" বোতলটা শেষ করতে দে।"


" নেশা ছাড়েন রাশেদ।"


" তোর নেশা বড় নেশা বুঝলি।"


" বোঝা লাগবে না।এই নেশা আমার এক সংসার ভাঙছে আমি আর চাই না আপনারে হারাতে।"


রাশেদ শব্দ করে হাসল কোমড় জড়িয়ে কাছে টানল ময়নাকে।মেয়েটার শরীর থেকে কাথা সরিয়ে নগ্ন করে জড়িয়ে ধরল বুকের মাঝে।


" বোকা ভয় পায় না।"


"আমরা বিয়ে কবে করব?"


" আগে তোর সতিনরে বিদায় করি।"


" কবে করবেন?"


" এত তাড়া কেন তোর?আমারে কি সন্দেহ করস?"


" না না একদম না।"


" তাহলে?সবকিছুর সুযোগ আর সময় আছে।"


" কিন্তু আর কতদিন আপনার সাথে রাত কাটাব?এলাকার মানুষ জানলে কি হবে ভাবতে পারছেন?ভাগ্যিস কেউ দেখে না যদি দেখে ফেলে?তাছাড়া দাদি তাড়া দিতাছে।"


" তোর দাদিরে বলবি আর কয়েকদিন তারপরেই তোরে আমার ঘরে তুলব।বুড়ি আজ বাড়ি না থাইকা বেশ ভালোই হইছে মন মতো থাকা যাচ্ছে।"


" দাদি বারণ করছে আপনার সাথে আর যেন শারিরীক মেলামেশা না করি।"


" তোর দাদি বলছে?"


"হু।"


" বুড়ির গলা কাইট্টা কুত্তারে খাওয়ামু।"


কিড়মিড়িয়ে কথাটি বলল রাশেদ।ময়না ভয় পায় কথা ঘুরাতে রাশেদকে পুনরায় কাছে টেনে নেয়।রাশেদ ভ্রমে পড়ে যায় ময়নার শরীরে সুখ খুঁজতে ব্যস্ত সে।রাশেদের এলাকার কিছুটা দূরেই ময়নার বাড়ি মেয়েটার স্বামী মাত্র চার মাস আগেই তাকে তালাক দিয়েছে তার প্রথম স্বামীও নেশা জুয়ায় আসক্ত।মায়ার মা ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে সেখানে উনার নতুন সংসার হয়েছে।ময়না এখন দাদির সাথেই থাকে।অন্যের সংসার ভেঙে মায়া যে সংসার গড়তে স্বপ্নের জাল বুনছে এ যে অন্যায় আবদার তা সে জানে।এই জানাতেও তার বিবেকে বাঁধে না কেননা নিজ স্বার্থ আগে রাশেদের মতো টাকার মেশিনকে বিয়ে করলে তাকে আর দরিদ্রতার বশে থাকতে হবে না।

.

ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে কাচের দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে রুমু।রেস্টুরেন্টের বাইরে ছোট্ট একটা পুল করা হয়েছে সেখানে রাখা হয়েছে রঙিন মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ সেই সাথে ফুটে আছে কিছু বড় বড় পদ্ম ফুল।রেস্টুরেন্টের এক কোনায় করা হয়েছে ফোয়ারা উচু স্থান থেকে গড়িয়ে পড়ছে পানি দুইধারে বেশ কিছু গাছ এবং পাথর।কৃত্রিম এসব কিছুতে অন্যরকম শান্তি খুঁজে পায় রুমু।হাতে থাকা কফির কাপটা আচমকা টেনে নিল উজ্জ্বল সেই কাপটায় চুমুক বসিয়ে তৃপ্তির শব্দ তুলল।


" ডার্লিং একা বসে কেন?"


" আমি আমার ডার্লিংকে পাহারা দিচ্ছি এখানে মেয়েদের উৎপাত একটু বেশি তো তাই।"


" গুড।কিছু খাবে?"


" ভালো লাগছে না।"


" কেন?"


" বাড়ি যাব এখানে এসেই আটকে গেলাম।সকালে রোদ দেখে যা খুশি হয়ে এলাম এখানে এসেই নামলো বৃষ্টি।নেমেছে তো নেমেছেই থামার নাম নেই।"


" দুপুর হয়ে এসেছে এখান থেকে খেয়েই যেও।"


" আচ্ছা দেখি।তুমি..."


রুমু কথা শেষ করার আগেই উজ্জ্বলের কাছে এসে দাঁড়ায় একটি মেয়ে।তার হাস্যোজ্জ্বল চাহনি উজ্জ্বলকে কিছুটা বিব্রত করে মেয়েটা কি তাকে চেনে?কই সে তো চিনে না।অবশ্য তার গান অনলাইনে শুনে অনেকেই তার সাথে রেস্টুরেন্টে আসে দেখা করতে আজকাল পথে ঘাটে দেখলেও উজ্জ্বলকে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা চিনে ফেলে।


" ভাইয়া আপনি উজ্জ্বল না?"


" জি।"


" আপনার কণ্ঠ বেশ মধুর।আমার ভীষণ ভালো লাগে।"


" ধন্যবাদ আপু।"


" আপনার রেস্টুরেন্টেটাও অনেক সুন্দর বর্তমানে সবার মাঝেই হাইপ তুলেছে।"


" জি সবি আপনাদের সাপোর্ট।"


মেয়েটা কৌতূহল চোখে রুমুর পানে তাকাল।


" আপনার ওয়াইফ না?"


" জি।আমার ওয়াইফ রুমু।"


"মাশাআল্লাহ আপনাদের একসাথে দারুন লাগে।"


" ধন্যবাদ।"


মেয়েটা আরও কিছু কথা বলে নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে বসল।বৃষ্টি থেমেছে রুমু দ্রুত বাড়ির যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।

উজ্জ্বল বলেছিল এগিয়ে দেবে তবে রুমু বলল কাজে আছে কাজেই থাকুক।রেস্টুরেন্টের বাইরের রোডটা প্রধান সড়ক বাস সিএনজির ছড়াছড়ি।রিক্সার জন্য দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও রিক্সা পেল না সে যাও একটা পেল বিশ টাকার ভাড়া চেয়ে বসল পঞ্চাশ টাকা।ঝিরঝির বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে বাঁধ্য হয়ে যখনি রেস্টুরেন্টে ফিরবে তখনি তাকে ডেকে উঠল কেউ।


" ওই রুমু।"


চকিতে নজর ঘুরাল সে।চেক শার্টে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি তার অত্যন্ত পরিচিত।হাই স্কুলে তাদের বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল কিন্তু কলেজে উঠতে শুভ চলে যায় অন্য শহরে।


" আরে শুভ তুই এখানে?"


" তোদের বাড়িতেই যাচ্ছিলাম।কত বছর হয়ে গেল তোকে দেখিনা।"


" এখানে কোথায় এসেছিস?"


" এদিকে আমার কে আছে?কেউ নেই।এই তো পাশের শহরে মামার বাড়ি।কাউকে না জানিয়ে এদিকে চলে এলাম।"


" ভালো করেছিস তোকে দেখে ভীষণ খুশি হয়েছি।"


" কোথাও যাচ্ছিস নাকি?"


" হ্যাঁ বাড়ি ফিরব।"


" আয় বাইকে বস তোকে নামিয়ে দেব।"


" নানা আমি রিক্সায় যাব।"


"আরে বস তো।"


শুভ চট করে ধরে ফেলল রুমুর হাত এবং টেনে এনে বাইকে বসাতে উন্মুখ হলো।শুভ কি তার কাজে সফল হলো?মোটেই না তার আগেই রুমুর হাত টেনে ছিনিয়ে আনল উজ্জ্বল।হঠাৎ টান সামলাতে না পেরে রুমু ছিটকে পড়ল রাস্তার ধারে কাদা পানিতে।আকস্মিক ঘটনায় রুমু শুভ দুজনেই অপ্রস্তুত বাক্যহারা।শুভ উজ্জ্বলের মুখপানে তাকাতেই ভয় পেল সে চেনে উজ্জ্বল ভাইকে।স্কুল লাইফে তাকে কতবার যে শাসিয়েছে যেন রুমুর সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করে।রুমুকে পাগলের মতো ভালোবাসে উজ্জ্বল সে কথা শুভ জানত কিন্তু এত বছর পর এসেও যে উজ্জ্বলের থাবায় পড়বে কে জানত?রুমু যে পড়ে গেল উজ্জ্বলের সেদিকে হুশ নেই সে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে শুভ এগিয়ে এসে পুনরায় রুমুকে তুলতে নিলে তার আগেই উজ্জ্বল রুমুকে পাঁজাকোলে তুলে নিল।


" উ..উজ্জ্বল ভাই ভালো আছেন?"


" এখানে এসেছিস কেন?"


" এ..এমনি।"


" এমনি এসেছিস এমনি চলে যাবি।গো.."


বেশ ধমক দিয়েই বলল উজ্জ্বল।শুভ আর দাঁড়ানোর সাহস করেনি দ্রুত বাইক স্টাট দিয়ে চলে গেল অপরদিকে রুমু দাঁত মুখ খিঁচে তাকাল উজ্জ্বলের পানে।


" এটা আপনি কি করলেন?"


" চুপ।"


এবারের ধমকটা বেশ জোরেই দিল উজ্জ্বল।রুমু কথা বলার সাহস করে না।রুমুকে নামিয়ে বাইক আনল এবং রুমুকে বসতে নির্দেশ দিল।


বাড়ি ফিরে উজ্জ্বলের রাগ দেখে কে।সারাঘর জুড়ে পাইচারি করছে ঠান্ডার মাঝে খালি গায়েও সে ঘামাচ্ছে রুমু মাত্রই গোসল সেরে এসেছে উজ্জ্বলের রাগান্বিত ভাবটা সে বড্ড ভয় পায়।


" উজ্জ্বল এখনো রেগে আছেন?"


" শুভ তোর হাত ধরেছে কেন?"


" ধ...ধরে ফেলেছে ভুলে আমি কিছু বলার..."


" চুপ কর।এসব আমার ভালোলাগে না তুই জানিস না?"


" জানি।"


" তাহলে?"


" রেগে যাচ্ছেন কেন?"


" আশ্চর্য আমি রাগবো না?"


" না মানে..."


আচমকা রুমুর হাত শক্ত করে চেপে ধরল উজ্জ্বল দাঁতে দাঁত চেপে বলে,


" এসব আমার একদম পছন্দ না রুমু আমি কিন্তু একবার খারাপ হলে আমাকে ভালো রূপে পাবি না।"


টনটনে ব্যথায় চোখে পানি চলে এলো সেই সাথে উজ্জ্বলের ধমকে মনটা কেমন মরে যাচ্ছে।ঝাপসা চোখে মুহূর্তে দু'তিন ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে পালটা ধমক দিল।তখনি বাইরে থেকে ডেকে উঠলেন নার্গিস।মায়ের ডাকে হাত ছেড়ে দরজা খুলল উজ্জ্বল।নার্গিস এসেছেন রুমুর কাছে তাই বিনা বাক্যে রুমে ঢুকতে দেখতে পেল রুমুর কান্নামাখা চাহনি।রুমু অবশ্য ইচ্ছা করেই চোখ মুছেনি সে চায় উজ্জ্বল নার্গিসের কাছে যেন বকা খায়।


" কিরে রুমু কাঁদছিস কেন?"


" আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করেন।"


নার্গিস ভ্রু কুচকে বলেন,


" রুমু কাঁদছে কেন?"


" রাস্তার পাশে কৈ মাছ উঠতে দেখেছে ধরতে পারেনি বলে কাঁদছে।দেখেছো মা কি বোকা মেয়ে।একটা মাছের জন্য কেউ কাঁদে?"


উজ্জ্বলের কথায় ভড়কে গেল রুমু।কি হয়েছে আর কি বলছে!নার্গিসের মুখ থেকে রাগের মেঘটা কেটে গেল।তিনি হাসি মুখে বলেন,


" আরে ফ্রিজেই তো কৈ মাছ আছে কৈ মাছ খাবি?দাঁড়া আমি ভেজে দিচ্ছি তোকে।"


নার্গিস চলে গেলেন।রুমু রেগেমেগে তাকাল উজ্জ্বলের পানে।


" আপনাকে বিয়ে না করে অন্তত শয়তানের সাথে প্রেম করা অনেক ভালো ছিল।"


" আশ্চর্য জমজ ভাইবোন প্রেম করে কেমনে?"


" কি!"


চলবে...


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ৩০

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ৩০]


" রুমু আমি ওই বাড়িতে যাব না কিছুতেই যাব না।এমন বিশ্রি জীবনে আর কতকাল থাকব?যত দিন যাচ্ছে রাশেদ সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে।জানিস রুমু রাতে মেয়ে সাথে কথা বলে আমি প্রতিবাদ করতে গেলে গায়ে হাত তুলে।"


এই তো গতরাতেই কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেছিল আনিকা।ভাইয়ের অধঃপাতনের  কথা শুনে প্রত্যুত্তর করতে পারেনি রুমু।যে নিজের মায়ের পেটের বোনকেই ছাড় দেয় না পরের মেয়েকে কতটা ছাড় দিচ্ছে তা নিশ্চয়ই বলতে হবে না।যে মেয়েটা গতরাতে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেছিল সেই মেয়েটাই এখন শ্বশুর বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।সৈয়দ ইসমাইলকে সব কথা জানিয়েছিল উজ্জ্বল তিনি ভোরে বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়।এসব নিয়ে রাশেদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হয় সব যখন সহ্যের সীমানায় পেরিয়ে যাচ্ছিল তখনি রাশেদের গালে চড় বসালেন তিনি।এই ছেলেকে মারলে কি দমে?উলটা ইসমাইলের দিকে তেড়ে আসল।

বাড়ির বউ বাইরে থাকবে ব্যাপারটা ইসমাইলের নিকট সমীচীন নয় সকাল দশটায় তিনি উপস্থিত হন উজ্জ্বলদের বাড়িতে।বেশ অনেক বছরপর ভাইয়ের ঘরে এসে কি বলবে কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন  না।তার বিব্রত ভাবটা উজ্জ্বল ঠিকি ধরতে পারল ছেলেটা টিপ্পনী কেটে বলে,


" চাচাজান ইতস্ত বোধ করছেন কেন?মনে রাখবেন আপনি কিন্তু আপনার ভাইয়ের বাসায় নয় বেয়াইয়ের বাসায় এসেছেন।"


" বেয়াই!"


চোখাচোখি হলো দুই ভাইয়ের।অন্যরকম অনুভূতিতে চুপসে গেল তারা।নার্গিস আজ ভীষণ খুশি কি করবেন না করবেন তিনি ভেবে পাননা কত বছর পর রুমুর বাবা এসেছে।তিনি চটজলদি রান্নার কাজে লেগে গেলেন সেই সাথে রুমুও টুকটাক সাহায্য করছিল।খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে আনিকাকে নিয়ে ফিরে গেলেন তিনি।


দিন আসে আবার ব্যস্ততা ঘিরে রেখে দিন যায়।বেশ অনেকদিন কেটে গেল রাশেদ আর আনিকার সম্পর্ক এখনো ঠিক হলো না ইদানীং রাশেদ নেশা করে বাড়ি ফিরে।রাশেদের মা এখন আর প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না।যে ছেলে বখে গেছে সেই ছেলেকে যত যাই বলুক আর কি পোষ মানে?রাশেদের প্রত্যেকটা কাজে কথায় সাফাই গাইতেন রাবেয়া,ভুলকে ভুল তিনি কখনোই বলতেন না।রাশেদ যা করছে তাই সঠিক এরূপ মনোভাব ইদানীং কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার।


এতদিনের জল্পনা কল্পনাকে রূপ দিয়ে অবশেষে উজ্জ্বলের সেই দিন এসেই গেল।আজ উজ্জ্বলের নতুন রেস্টুরেন্টের উদ্বোধন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।তাদের হাতে যতটা সময় ছিল উজ্জ্বলের বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষীগন রুমু তারা পুরো দস্তুর অফলাইন অনলাইনে প্রচারণা চালিয়েছে।উজ্জ্বলের এখন নিজস্ব একটা পরিচয় গড়ে উঠেছে অপরদিকে অনলাইনে উজ্জ্বলের বেশ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তৈরি হয়েছে।তারা সকলেই উজ্জ্বলের গানের ভক্ত।যদিও উজ্জ্বল শুধু গান গায় আর বাকি সব রুমুর দায়িত্বে।অনলাইনের এসবে উজ্জ্বলের খুব বেশি ধ্যান ধারণা নেই।

মানুষের ভিড়ে উজ্জ্বল হতভম্ব কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছেলেটা এতটাও আশা করেনি এত এত মানুষ আসবে।এক দেখায় সবার কাছে রেস্টুরেন্টটা ইউনিক লেগেছে বিশেষ করে যারা ছবি তুলতে পছন্দ করে তাদের জন্য এই রেস্টুরেন্টটা যুতসই।খাওয়া দাওয়ার মান বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছে উজ্জ্বল।সকালে উদ্বোধনের সময়টাতে রুমু নার্গিস,সৈয়দ সামসুল, সৈয়র ইসমাইল এসেছিলেন।সবাই বাড়ি ফিরে গেলেও থেকে গেল রুমু।ব্যস্ততম একটি দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নামল সৈয়দ শামসুল তার কাজে ফিরছিলেন হঠাৎ রাস্তার ধারে থমকে দাঁড়ালেন তিনি।ঝলমলে আলোয় সুসজ্জিত একটি ভবন আশেপাশে মানুষের ঢল বোঝাই যাচ্ছে ব্যস্তময় স্থান।এই তো এই স্থানটাই অকর্মা উজ্জ্বলের কর্মের স্থান।তার চোখ ভিজে উঠল একটা ছেলেটা কম কাটখোট্টা হয়ে এতদূর আসেনি,কিন্তু সব বুঝেও তবু সৈয়দ শামসুলের রাগ কমলো না সহানুভূতি জাগল না। তিনি চোখ মুছে চলে গেলেন নিজ গন্তব্যে।

.

ফোন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ল রুমু হঠাৎ গালে ঠোঁটের স্পর্শে চমকে উঠে সে।উজ্জ্বলের ভেজা চুল গলায় ঝুলানো গামছা দেখে তড়িঘড়ি উঠে বসল।


" কখন এলেন?"


" অনেকক্ষণ হলো।"


" আমাকে উঠালেন না কেন।"


" সারারাত যখন জাগবি এখন ঘুমিয়েই থাক।"


" বাজে কথা ছাড়ুন।"


রুমু উঠে বসল ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে রইল উজ্জ্বলের পানে।ছেলেটা মিষ্টি হেসে মুখ ডুবায় রুমুর গলায় ভেজা ছোঁয়ায় ছলকে উঠে মেয়েটা।রুমু সরাতে চায় উজ্জ্বলকে কিন্তু উজ্জ্বল তার কাজে ব্যস্ত। সে ছাড়া তো দূরের কথা বরং আরো কাছে টেনে নেয় কোলে তুলে চুলের বাঁধন খুলে দেয়।


" উজ্জ্বল সব ঠিকঠাক ছিল?"


" হুম।"


" সবাই সন্তুষ্ট তো?"


" হুম।"


"আজকের দিনটাতে আপনার বন্ধুটা এলে ভালো হতো উনি এতটা সাহায্য করলেন অথচ থাকতেই পারলেন না।"


" হুট করে চলে আসা যায়?সে নিজেও ব্যস্ত বুঝলে।"


" উজ্জ্বল।"


" বলো ডার্লিং।"


" খেয়েছেন?"


" এই তো খাচ্ছি।"


রুমু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল উজ্জ্বলকে কত বড় বেয়াদব ছেলে এসব বলে।উজ্জ্বল নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রুমুর পানে অথচ রুমুর চাহনি আগুনের চুল্লির ন্যায়।উজ্জ্বল পুনরায় এগিয়ে এলো রুমুর ঠোঁট ঠোঁট মিশিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালো।রুমু উজ্জ্বলকে আবার সরালো হুটহাট উজ্জ্বলের এসব আক্রমণ সে নিতে পারে না কিন্তু উজ্জ্বল কি বাঁধা মানে? ছেলেটা এগিয়ে এসে আবার জড়িয়ে ধরে রুমুকে তার ওষ্ঠের ছোঁয়ায় রুমু প্রতিবারি হার মানে।রুমু কাতর হয়ে হেলে পড়ার আগেই উজ্জ্বল তাকে টেনে ধরে।


" সৈয়দ উজ্জ্বল আনিসের ওয়াইফ এইটুকুতে কুপোকাত হলে চলবে?একটুতো স্ট্রং হ।"


রুমু উজ্জ্বলের কথায় প্রত্যুত্তর করতে পারে না।মেয়েটা জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে বসে পড়ে বিছানায়।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সে পানি খুঁজলো কিন্তু পানির দেখা নেই।উজ্জ্বল বুঝতে পারে তার চাওয়া দ্রুত পানি এনে রুমুর হাতে ধরিয়ে দেয়।


" এতদিনেও তোকে স্ট্রং করতে পারলাম না।আমি ব্যর্থ।"


" আর এতদিনেও আপনাকে কন্ট্রোলে আনতে পারিনি আমি ব্যর্থ।"


" তুই আমাকে কন্ট্রোলে আনবি?তোকে দেখলেই তো আমার কন্ট্রোল ব্যাগপত্র গুছিয়ে বিদায় জানায়।তুই হাসলেও ভাল্লাগে,কাঁদতেও ভাল্লাগে,রাগলেও ভাল্লাগে।এত ভালোলাগা বোধহয় অপরাধ।"


" ভীষণ অপরাধ।"


রুমু উঠে দাঁড়াল উজ্জ্বল তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,


" কোথায় যাচ্ছিস?"


" ক্ষুধা পেয়েছে।"


" এই তো খাওয়ালাম তাও ক্ষুধা পায়!এটা পেট নাকি মহা সাগর?"


রুমু বিরক্ত হলো।উজ্জ্বলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে গেল রুমের বাইরে।রাতের খাবার টেবিলে উজ্জ্বল রুমু একাই খেল।খাওয়ার মাঝেই উজ্জ্বল রুমুর পাতে শিং মাছ তুলে দিতে চাইলে রুমু বাঁধা দিলে ছিটকে ঝোল পড়ল রুমুর গায়ে।


" এই আপনি জানেন না আমি শিং মাছ খাই না।"


" তোর মতো বেক্কল মেয়ে আর কারো ঘরে আছে বলে তো মনে হয় না।এই স্বাদের মাছ তুই রিজেক্ট করিস!আজ পর্যন্ত তুই ভালো জিনিস চিনতে পারিসনি খাবি তো বয়লার বোটকা মুরগি দেশি জিনিস চিনবি নাকি।"


" ঠিক বলেছেন আমি ভালো জিনিস চিনি না।এই যে দেশে এত ছেলে থাকতে আপনার মতো ছেলেকে কেন যে বিয়ে করলাম।"


আফসোস সুরে কথাটি বলল রুমু।নিজের যুক্তিতে নিজেই ধরা পড়ল উজ্জ্বল।আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত হাতে প্লেট নিয়ে চলে যায় হাত ধুতে।

রুমু রুমে গিয়ে জামা কাপড় হাতে তুলে নেয় উজ্জ্বল গায়ে ঝোল ফেলায় তার মেজাজটা বড্ড বিগড়ে গেছে।উজ্জ্বল যখনি রুমে প্রবেশ করল রুমু তাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিল। 


" এটা কি হলো! আমাকে বের করে দিলি কেন?"


" আমি জামা পাল্টাব আপনি জান।"


" যাব কেন?এটা যাওয়ার মতো কিছু?"


" অবশ্যই।আপনার লজ্জা শরম না থাকতে পারে আমার তো আছে।"


রুমু মুখের উপর সশব্দে🔥 দরজা লাগিয়ে দিল।উজ্জ্বল তাচ্ছিল্য হেসে বলে,


" নিজের স্বাধীন করা দেশে নিজেরি প্রবেশ নিষিদ্ধ ভাবা যায়!"


চলবে...

কন্ট্রোললেস গল্পে আপনাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আসছে👀



গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২৯

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২৯]


সময়েরা চোখের পলকে ছোটাছুটি করলেও রুমুর কাছে মনে হয়েছে এই এক মাস এক বছরের সমান।প্রতিটা সেকেন্ড মিনিটের সমতুল্য,প্রতিটা মিনিট ঘন্টায় এমনকি ঘন্টা যেন দিন হিসেবে ছুটছে।টানা একমাসের কসরত বিদায় জানিয়ে অবশেষে রুমুর ছুটির দিন এসেছে মেয়েটার আজ পরিক্ষা শেষ।রুমুর খুশি দেখে কে এই ছুটিতে কত কি করবে ভেবে বসে আছে।পরিক্ষা শেষ করে বাড়ি ফেরা হয়নি তার উজ্জ্বলের সাথে চলে এসেছে তাদের রেস্টুরেন্টে।

রেস্টুরেন্টের বিল্ডিংএর কাজ অনেকটা শেষ।রঙ করাও হয়ে গেছে বাইরের কিছু কাজ বাকি।এদিকে একটা রেস্টুরেন্ট নির্মানে যেসব লাইসেন্স প্রয়োজন সব ঝামেলাই উজ্জ্বল কাটিয়ে উঠেছে কিন্তু সবকিছুর মাঝেও বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা।শূন্য হাতে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া যে চারটিখানি কথা নয়।বন্ধুদের কাছ থেকে অনেকটাই সাহায্য পেয়েছে এছাড়াও বোন দুলাভাই কম করেনি তার জন্য।শেষ পর্যায়ে উজ্জ্বলের মা নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারলেন না এতদিন স্বামীর ভয়ে উজ্জ্বলকে সাহায্য করতে না পারলেও একটা সময় এসে ঠিকি তিনি তার এতবছরের জমানো টাকা থেকে উজ্জ্বলকে সাহায্য করলেন।সবাই সব দিক থেকে উজ্জ্বলের জন্য মানসিক আর্থিকভাবে এগিয়ে এলেও সৈয়দ শামসুল ছিলেন তার জেদের কাছে অনড়।উজ্জ্বল সাহস করে তার বাবাকে টাকার কথাও বলেনি শামসুল আদৌ ছেলের এত বড়ো উদ্যাগে খোঁজ নেয়নি।


ভিডিও কলে উজ্জ্বল তার বিদেশে থাকা বন্ধুর সহিত কথা বলছে ছেলেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবকিছু দেখাতে ব্যস্ত।এক কোনায় বসে রুমু গরম গরম সিঙ্গারা মুখে পুরে তাকাল সিয়ামের পানে,


" সিয়াম ভাই উনার বিদেশি বন্ধুটাকে দেখেছেন?দেখতে শুনতে একটা হিরোর চেয়ে কম না।"


" নজর দিচ্ছিস নাকি?"


" আরেহ না।"


" উজ্জ্বল জানলে তোকে মাটিতে গেড়ে দিবে।তোর জন্য এতসব আর তুই যদি বাইরে নজর ঘুরাস তবে কিন্তু.... "


" তবে মানে?আমি কি অন্য কোন ইনটেনশনে কথাটা বলেছি নাকি?আরে উনার ঘরে বউ আছে ছি ছি সিয়াম ভাই এভাবে আপনি বলতে পারেন না।"


উজ্জ্বল এগিয়ে এসে বসল সিয়াম এবং রুমুর মুখোমুখি ছেলেটার চাহনিতে বোঝা যাচ্ছে সে কোন সুসংবার দিতে চলেছে।


" একটা গুড নিউজ আছে।"


রুমু কৌতূহলি চোখে শুধায়,


" কি?"


" আমার সেই বন্ধুটা আমাকে টাকা পাঠাবে বলেছে।আমার একাউন্টে যথা সময়ে টাকা এসে পৌঁছে যাবে।"


" কি সত্যি!তাহলে তো কাজ আর থেমে থাকবে না তাই না?"


" একদম তাই এবার অন্তত বাকি কাজ করা যাবে।বাকি সব ডেকোরেশনের কাজ আমরা কাল থেকে শুরু করব।সিয়াম তুই বাড়ি চলে যা আজ আর কাজ নেই রাতে একবার দেখা করিস।"


উজ্জ্বলের আদেশ পেয়ে সিয়াম বিদায় জানাল।রুমু চোখ ঘুরিয়ে পুরো রেস্টুরেন্টটা একবার দেখল।নীল সাদা রঙের মিশেলে রেস্টুরেন্টের ভেতরের কাজটা বেশ সুন্দর হয়েছে এক কথায় চোখের শান্তি।


" উজ্জ্বল আপনার রেস্টুরেন্টের প্রথম দিন স্পেশাল কি খাওয়াবেন আমায়?"


" চুমু খাওয়াবো।"


" দূর প্রতিদিন খাই অন্যকিছু বলেন।"


" থাপ্পড় খাবি?"


" মেজাজ খারাপ করছেন কেন আমি সিরিয়াস।"


" বাড়ি চল, কি খাওয়াবো বাড়ি গিয়ে বলছি।"


রুমু ঠোঁট বাঁকাল।কাঁচা রঙের গন্ধে আচমকা তার মাথা ধরে গেল।মেয়েটা দ্রুত বের হতে উজ্জ্বলকে তাড়া দিল।

.

রুমু খেয়াল করেছে উজ্জ্বলের হাবভাব বেশ অনেকটা পালটে গেছে এই যে তার এতদিন শক্তপোক্ত শাসন শাসন ভাব এখন এসব কিছুই নেই।এ যেন আগের বেহায়া বেশরম উজ্জ্বল।এই যে ঘুমে কুপোকাত রুমু উজ্জ্বলের কি উচিত ছিল না তাকে ঘুমাতে দেওয়া?কিন্তু উজ্জ্বল তো তা করেনি সে জেদ ধরে রুমুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।রুমু ঘুমের মাঝেও বেশ কয়েকবার উজ্জ্বলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়েছে অথচ উজ্জ্বল যেন পাথর মানব নড়েনা চড়েনা।


" উজ্জ্বল এই উজ্জ্বল ছাড়েন।"


" উহ।"


" আল্লার ওয়াস্তে ছাড়েন এত পুতুপুতু এতদিন কোথায় ছিল?"


" চুপ থাক।ঘুমাতে দে।"


" কে কাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না?"


" তোর হাজবেন্ড কতটা পরিশ্রমি তুই জানিস না?মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দে।"


" একদম চুল তুলে ন্যাড়া করে দিব।"


" দে সমস্যা নাই।"


ঘুমের ঘোরেই তর্কতর্কি হলো তাদের।এর মাঝেই আবার ঘুমিয়ে পড়ল তারা।এক ঘুমে রাত বেজে গেল নয়টা উজ্জ্বল ঘুম থেকে উঠেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে কত কাজ বাকি অথচ সে ঘুমিয়েছিল!এই যে উজ্জ্বল এতক্ষণ বেঘোরে ঘুমিয়েছে এর পেছনে দোষটা কার?নিশ্চয়ই রুমুর।রুমু হাত মুখ ধুয়ে কক্ষে ফিরতেই উজ্জ্বল বলে,


" গায়ে কি ঘুমের ওষুধ মেখে রাখিস?"


" মানে?"


" মানে তোর কারণে এতক্ষণ ঘুমালাম।আমার কতটা লস হয়েছে জানিস?"


" এতে আমার দোষ কি?"


" তোকে জড়িয়ে রেখেছি বলেই ঘুমের ঔষুধ নাকে যেন সুড়সুড়ি দিয়েছে।"


" আশ্চর্য আমি বলেছিলাম আমাকে ধরে থাকেন?"


উজ্জ্বল ভ্রু নাচালো রুমুকে হেঁচকা টেনে বিছানায় ফেলে তার উপর ভর ছেড়ে দিল।


" তুই বললে তোকে ধরে থাকব এই চিন্তা ভাবনা আসে কেমনে?তুই আমার ডার্লিং না?কলিজা না?ময়না না?চুমু বউ না?"


" বাতাস অন্যদিকে বইছে কেন?"


" আর আমার চুমু বউ ডিউটিতে ফিরেছে এখন শুধু তার কাজ আমাকে ভালোবাসা।"


" পরিক্ষা শেষ আমাকে কোথাও একটু ঘুরতে নিয়ে যান।"


" যাবি?"


" যাব বলুন কোথায়?"


" চল তোর রাশেদ ভাইপারের সাথে দেখা করে আসি।"


" মজা নিচ্ছেন?আমাকে ছাড়ুন।আজ কিন্তু আপনাকে গান গাইতে হবে।"


" অসম্ভব।"


" উজ্জ্বল আমায় কিন্তু কথা দিয়েছিলেন আপনাকে গান গাইতেই হবে।"

.

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমু উজ্জ্বল ছাদে এলো।আজকের আকাশে তারায় ভরা থাকলেও চাঁদের দেখা নেই।দুজনে ছাদের কোণায় বসে নিজেদের গালগল্পে মেতে আছে।এর মাঝে উজ্জ্বল খালি গলায় গান ধরল আজ নেই কোন গিটারের সুর।রুমু ভিডিও করল এই ভিডিওটাও সে পোস্ট করবে।

যেহেতু অনেকটা সময় তারা ঘুমিয়েছে মাঝ রাতেও তাদের ঘুমের রেশ নেই।উজ্জ্বলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে রুমু মস্ত বড় আকাশটা আজ তার ছাউনি।নিরিবিলি পরিবেশটায় হঠাৎ হট্টগোলের শব্দে দুজনে সচেতন হয় কান খাড়া করতে শুনতে পেল রাশেদের গলা এবং কে যেন কিছু একটা ভাঙছে।রুমু ভয় পেয়ে যায় তার জানা মতে বাবা আজ বাড়িতে নেই তবে কি সেই সুযোগটাই নিল রাশেদ!তবে রাশেদ ঝামেলা করছেই বা কি নিয়ে?


" উজ্জ্বল আমার ভয় লাগছে রাশেদ ভাই কার সাথে এতটা ঝামেলা করছে?"


" চাচির গলাও তো শোনা যাচ্ছে, মা ছেলে ঝামেলা লাগলো নাকি?"


" বু..বুঝতে পারছি না উজ্জ্বল।আমার ভয় করছে।"


" আরে ভয় পায় না।আমি বরং দেখে আসি তুই ছাদে একা থাকতে পারবি না?"


" পারব।"


উজ্জ্বল গাছ বেয়ে রুমুদের ছাদে গেল।এরপর ছাদ থেকে সুপারি গাছ বেয়ে নেমে গেল নিচে।রাশেদের রুমের জানলা একটু ফাঁক ছিল বিধায় সে দেখতে পেল আসল ঘটনা।আনিকাকে বেল্ট দিয়ে দেদারছে মারছে রাশেদ তবে কি নিয়ে তাদের ঝগড়া বুঝে উঠতে পারছে না কিছুতেই।উজ্জ্বলের দম বন্ধ হয়ে এলো একটা মানুষ এতটা পাষাণ কি করে হতে পারে?সবচেয়ে বড় পাষাণ তো রাবেয়া যিনি কি না ছেলের অন্যায়ে মুখ বুঝে সহ্য করছেন আনন্দ লুটছেন।উজ্জ্বল যখনি চেচিয়ে রাশেদকে ডাকতে যাবে তখনি রাশেদ কাঁচের একটি ঔষুধের শিশি ছুড়ে দিল আনিকার মাথায়।মুহূর্তে মেয়েটার মাথা ফেটে গলগলিয়ে রক্ত ঝরছে।এই দৃশ্য উজ্জ্বলকে হিংস্র করে তুলে চোখের সামনে এক মুহূর্তের জন্য ভেসে উঠল রুমুকেও নিশ্চয়ই এভাবেই মারা হয়েছিল!উজ্জ্বলের চিৎকার চেচামেচিতে এলাকার সকলে জড়ো হয় বাড়ির উঠনে।আনিকা মাথা চেপে দাঁড়িয়ে আছে রুমু দ্রুত আনিকার ফাটা মাথা ওড়নার সাহায্যে চেপে ধরল।আনিকাকে ধরে রিক্সা নিয়ে উজ্জ্বল এবং রুমু চলে গেল হাসপাতাল।সবাইকে উঠনে দেখে রাশেদের রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেল।দেদারসে গালাগাল দিয়ে সবাইকে বের করে গেট বন্ধ করল সে।


রুমুর চোখে চোখ রাখতে ভীষণ লজ্জায় পড়ল আনিকা।যে মেয়েটাকে সে জমের মুখে ফেলেছিল সেই মেয়েটাই আজ তাকে নিয়ে ছোটাছুটি করছে।আনিকা নিজের ভুলের অনুশোচনায় ভুগে কিন্তু রুমু কি তাকে আদৌ ক্ষমা করবে?রুমুর গায়ের জামাটায় রক্তের ছড়াছড়ি ওড়না ভিজে  আছে রক্তে।উজ্জ্বলের মুখখানি পাংশুটে বর্ণ ধারণ করেছে সবচেয়ে বড় কথা উজ্জ্বল প্রচন্ড রেগে আছে তার চোখে চোখ রাখলে আঁতকে ওঠে রুমু।আনিকার মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে টুকটাক ঔষুধপত্র কেনা শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তারদের সময় লাগল রাত চারটা।উজ্জ্বল বাইরে দাঁড়িয়ে রিক্সা খুঁজে কিন্তু এই রাতে রিক্সা কি সহজে পাওয়া যায়?আনিকার শরীর ভেঙে আসে তাই তাকে বসানো হলো টং দোকানের একটি বেঞ্চিতে।


রুমু আনিকাকে রেখে এগিয়ে এলো উজ্জ্বলের কাছে। 


" উজ্জ্বল আপনি ঠিক আছেন?"


" না একদম ঠিক নেই।বাড়ি চল।"


" কি হয়েছে?"


উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করে না অনেকক্ষণ পর একটি রিক্সা পেলে বাড়ি পৌঁছাতে সক্ষম হয়।আনিকাকে রুমু নিয়ে এলো উজ্জ্বলের বাড়ি সে কিছুতেই চায় না রাশেদের কাছে এই মুহূর্তে আনিকা ফিরে যাক।

বাড়ি ফিরেই উজ্জ্বল শটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।রুমু জামা কাপড় পালটে ফিরল উজ্জ্বলের কাছে।


" আপনি রেগে আছেন কেন?"


" একটু কাছে আয় কথা আছে।"


রুমু ভ্রু কুচকালো।এই তো সে কাছে আর কতটা কাছে আসবে?উজ্জ্বল মেজাজ দেখিয়ে রুমুকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরল।রুমু অবাক হলো না চুপচাপ মুখ বুঝে রইল সে।


" তোকেও কি এইভাবেই আঘাত করেছিল?জানোয়ারটাকে কি করি বল তো।রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।"


" আব্বা আসুক ওর একটা উচিত শিক্ষা হবে।"


" শিক্ষা!জানোয়ারটার শিক্ষা হবে বলে মনে হয় না।"


রুমু প্রত্যুত্তর করে না।তার শরীর কাঁপছে চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেদিনের দৃশ্য, রাশেদ কিভাবে মেরেছিল তাকে।একটা মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হলে এমন কাজ করতে পারে তা ভেবে কুল পায় না রুমু।

চলবে.....


বলেছি না ফ্লুজি আসছে?এবার ফ্লুজি আসছে বইটইয়ে।ইনশাআল্লাহ জুলাইতে আপনারা পেয়ে যাবেন।তবে গল্পের নাম চেঞ্জ হয়েছে।কেউ কি ধারণা করতে পারেন গল্পের নাম কী?👀