গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ৩৩ বাকি অংশ
#কন্ট্রোললেস
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৩৩ বাকি অংশ ]
নিজ বাড়ি থেকে ঝগড়ার শব্দে দাঁত মুখ খিঁচে বসে আছে রুমু রাশেদ কি নিয়ে ঝামেলা লেগে বিশ্রি বিশ্রি গালাগাল ছুড়ছে।দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে গালাগাল গুলো যে উজ্জ্বলের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝল রুমু।সকালের নাস্তা শেষে এগারোটায় চায়ের আড্ডায় বসেছে সকলে।আরশাদ খুশবু রুমুর পাশেই বসে তারা কেউ কিছু না বললেও কান খাড়া করে সবটা শুনছে।এত এত বিশ্রি গালাগালিতে মাথা নত করে সকলেই বসে আছে আরশাদ কয়েকটা কথার অর্থ বুঝলেও বেশিরভাগ গালাগালির অর্থ সে বুঝেনি।
"রাশেদ ভাইপারটাকে রাগিয়ে দিয়েছে কে?এদিকে তেড়ে আসছে কেন?"
রুমুর পাশে বসে স্বগোতক্তি স্বরে বলল উজ্জ্বল।রুমু চুপ রয় মান সম্মানটা যেন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
" তুই কি লজ্জায় নত হচ্ছিস?আরে প্যারা নাই তোর ভাই বলে তোর যতটা লজ্জা লাগছে রাশেদ কিন্তু আমারো ভাই আমরা একই বংশ একই রক্তের লোক।"
" তারপরেও..."
" চুপ থাক।"
রুমু কথা বাড়ায় না।চায়ের আড্ডা শেষে তারা সকলে রেডি হতে চলে যায়।আজকের দুপুরের খাবার সবাই উজ্জ্বলের রেস্টুরেন্টেই করবে।উর্মি তামিম,আরশাদ খুশবু, তাদের সাথে উজ্জ্বল রুমু তারা ছয় জনেই তৈরি হয়ে রওনা দিল রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে।বাড়ির গেট থেকে বের হতেই রুমুর মুখোমুখি হলো রাশেদ।রাশেদের রক্তিম চোখ রাগান্বিত চাহনি ভয়টা বাড়িয়ে দিল রুমুর। অতিথির সামনে আবার না কোন কাহিনী ঘটে যায়।রাশেদকে প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইল কিন্তু যে ভয়টা রুমু পেয়েছে ঠিক সেটাই হলো রাশেদ আজ হয়তো অগ্রীম প্রস্তুত ছিল আজ সে ঝামেলা করবেই।
" আড়ালে আয় কথা আছে।"
" ভাইয়া আমার কোন কথা নাই।পথ ছাড়ো।"
" রুমু তেজ দেখাবি না খবরদার।"
" তেজ দেখাচ্ছি না।"
রাশেদ পুনরায় ধমক দিল।উজ্জ্বল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও এবার আর চুপ থাকতে পারল না।রুমুকে সরিয়ে এগিয়ে গেল সে।
" কি সমস্যা তোর?ঝামেলা করতে চাইছিস?"
" ঝামেলা তো তুই করছিস আমার বোনকে বিয়ে করে ঝামেলা কে বাড়াল?"
" যাকে বিয়ে করলাম তার মাথা ব্যথা নাই,যার মেয়েকে বিয়ে করলাম তারও মাথা ব্যথা নাই তুই কোন খেতের মুলা?"
"কথা বার্তা সাবধানে বল।নষ্ট কোথাকার তোর..."
রাশেদ কথা শেষ করার আগেই তার বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল রুমু।ঘটনাটা এতটাই তাড়াতাড়ি ঘটলো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উর্মি তামিম সহ অন্যরা বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে।
" খবরদার আমার স্বামীকে নিয়ে বাজে কথা বলবে না।তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হয়।চোখের সামনে থেকে সর।"
" তোর সাহস দেখি বেড়েছে।"
" হ্যাঁ বেড়েছে অনেকটা বেড়েছে আর প্রমাণ করতে চাই না।"
রুমু দ্রুত উজ্জ্বলের হাত টেনে নিয়ে গেল।সবার সামনে একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে এখন থেকে চলে যাওয়াই উত্তম।
সারাটা দিন তারা অনেক আনন্দে কাটাল আরশাদ এই শহরে নতুন তাই উজ্জ্বল তাকে সবটা দেখাচ্ছে বোঝাচ্ছে নতুন অতিথি নিয়ে তাদের সময়টা কাটছে ভীষণ ব্যস্তময়।
.
বৃষ্টির স্যাঁতসেঁতে ভাবটা কাটিয়ে দুইদিন রোদের দেখা মিললেও সন্ধ্যায় পুনরায় ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামল চারিদিকের তপ্ত পরিবেশ মুহূর্তে শিতিল হলো গাছ পালায় ফিরে এলো স্বস্তি।রাশেদের গত দুইদিন ময়নার কাছে যাওয়া হয়নি বাড়িতে সবাই সন্দেহ করছে পরপর প্রতিটা রাতেই যদি সে নিখোঁজ থাকে সবাই নিশ্চিয়ই তাকে প্রশ্নের বানে ঘিরে ধরবে।এখন যে প্রশ্ন তুলে না তা কিন্তু নয় কিন্তু গলার জোর দেখিয়েও তো পাশ কাটানো যায়।বৃষ্টির দাপটে ছাতা উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বেশ কসরতে ছাতাটা ধরে রাখলেও হঠাৎ এক দমকা বাতাসে ছাতা একপাশ উলটে ভেঙে যায়।কয়েক সেকেন্ডে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে যায় রাশেদ তড়িঘড়ি ময়নার ঘরের সামনে এসে দরজায় টোকা দিয়ে ডাকল ময়নাকে।অতি সত্বর দরজা খুলল ময়না রাশেদকে দেখে তার দু'চোখে তারারা খেলা করছে তার চাহনিতেই বোঝা যায় সে কতটা খুশি।
" কেরে আইলো ময়না?"
বৃদ্ধার আওয়াজে দাঁত মুখ খিঁচে ফেলল রাশেদ ভেবেছিল আজ রাতটা সেদিনের মতো আনন্দে কাটাবে কিন্তু তা আর বোধহয় হবে না।পাশের রুম থেকে বৃদ্ধা এগিয়ে এলেন এবং পুনরায় বলেন,
" কিরে ময়না কে আইলো?"
" দাদি তোমার নাত জামাই।"
কথাটি বলেই লজ্জায় হাসলো ময়না।তার হাসিতে বাঁকা হাসলো রাশেদ অতি দ্রুত ঘরে প্রবেশ করে সালাম জানাল বৃদ্ধাকে।
" দাদি ভালো আছেন?"
" তোমারে না কইছি এবার আইলে বিয়ের কথা নিয়া আইবা।"
" রেগে যাচ্ছেন কেন দাদি?আমি তো ময়নারেই বিয়া করমু।"
" কবে করবা?সেই কবে থেকে হুনলাম বিয়া করবা।তোমার বউরে তালাক দাও নাই?"
" তালাক দিতে কি সময় লাগে?তিন তালাক দিলেই হইব ধৈর্য ধরেন দাদি।"
" হুনো তোমারে আর অল্প কয়ডা দিন সময় দিলাম এত মধ্যে ময়নারে বিয়া করলে করবা আর নইলে ময়নার লাইগা নতুন পোলা দেখমু।"
আজ সারাটা দিন রাশেদের মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল তার উপর বৃদ্ধার কথায় তার মেজাজটা পুনরায় তপ্ত হলো।নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৃদ্ধার গলা চেপে ধরল ময়না ভীষণ ভয় পেল।শরীর কাঁপতে কাঁপতে রাশেদকে সরাতে উদ্যাত হলো,রাশেদের পেশিবহুল শক্তপোক্ত দেহের সাথে ময়না কি পারে?মোটেও না বরং রাশেদের ঝটকায় ছিটকে পড়ল বিছানায়।দাদির জিহ্বা বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ময়না ভীষণ ভয় পেল রাশেদের পা জড়িয়ে বলে,
" কসম লাগে দাদিরে ছাইড়া দেন।"
" এই বুড়ি মরলেই আমার শান্তি।"
" রাশেদ আল্লার দোহাই দাদিরে ছাইড়া দেন।"
রাশেদ বৃদ্ধার গলা ছাড়ল রাগে থরথরে কাঁপছে তার শরীর।বৃদ্ধা মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই রাশেদ বলে,
" চুপ কর বুড়ি,ময়না আমার।ময়না কার?"
" তো...তোমার।"
" হুম।এখন চুপচাপ পাশের রুমে যাবেন কোন কথা যেন না শুনি আজ ময়না আমার কাছেই থাকবে।"
বৃদ্ধা চুপচাপ কাঁপতে কাঁপতে চলে গেল পাশের রুমে অপরদিকে রাশেদ বাঁকা হেসে জাড়িয়ে ধরল ময়নাকে।এই লালসার ছোঁয়ায় ময়না কি বাঁধা দিল?একদমি না বরং তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাসনায় আঁকড়ে ধরল রাশেদের বাহু।
.
অনেকদিন পর বৃষ্টি পেয়ে ছাদে নিজের খুশি মতো ভিজেছে উর্মি সেই সাথে রুমু তো আছেই উজ্জ্বল বাড়িতে নেই বিধায় এই কাজ করার সাহস পেল সে।সবাইকে ভিজতে দেখে খুশবুর মনেও ইচ্ছেরা ডানা ঝাপটে ফেলল সেও ভিজবে।ছাদে পা বাড়াতেই আরশাদের কড়া নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই ভেজা যাবে না এই একটা বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে বেশ কথা কাটাকাটি হলো।খুশবু ভীষণ রেগে গেল রাগ দেখিয়ে আরশাদের সাথে আর একটুও কথা বলেনি।
ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে সেই সাথে বাতাসটা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে খুশবু।আরশাদ পেছন থেকে এসেই জড়িয়ে ধরল তাকে।
" ফ্লুজি আমার জান কী করছো?"
" ছাড়েন তো।"
" এখনো রেগে আছো।"
" আমি কারো উপর রেগে থাকি না।"
আরশাদ শ্লেষ হাসল খুশবুর অনিচ্ছা শর্তেও তাকে জড়িয়ে ধরল।এভাবে পেরিয়ে গেল অনেকটা সময় কিন্তু খুশবুর রাগ কমল না আরশাদ অতিদ্রুত কোলে তুলে নিল তার ফ্লুজিকে।ভালোবাসার ছোঁয়ায় খুশবুর ঠোঁট আঁকড়ে ধরতে হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল খুশবু। আরশাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।আরশাদ কয়েক পলক তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইল তবে মোটেও পারল না লাহমায় চেপে ধরল খুশবুর বাহু তীব্র রাগ দেখিয়ে বলে,
" তুমি জানো না তোমার এড়িয়ে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারি না।এমন করছো কেন!"
" আরশাদ... "
ভয়ে ঢোক গিলল খুশবু।আরশাদ থেমে গেল আচমকাই খুশবুর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে উন্মাদ হয়ে পড়ল।খুশবু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করল না সে জানে এতে লাভ নেই বরং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে ছেলেটা।রাত বাড়ল অথচ আরশাদ কিছুতেই ছাড়ল না তার ফ্লুজিকে মেয়েটা ঘুমের ঘোরে বারবার আরশাদকে সরাতে চাইছে,
" আরশাদ ঘুমাতে দিন,কি ভাবেন আমায়?"
" ডানোর ডিব্বা।"
চলবে...
" মাই ফ্লুজি"র জন্য অনেকেই মেসেজ করেছেন ইবুকটা প্রকাশ হবে ২০ জুলাই।যারা পড়তে চান ৩৭ টাকা জমিয়ে রাখুন।বইটই ইবুক মেলা উপলক্ষ্যে ২৫% ছাড়ে মাই ফ্লুজি পেয়ে যাবেন মাত্র ৩৭ টাকায়।
No comments