গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২৮

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২৮]


" পরিক্ষা কেমন হয়েছে?"


" ভালো।"


" শুধু ভালো?"


" নাহ ভীষণ ভালো।"


রুমু ঘেমে একাকার অবস্থা।পরিক্ষার কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে হাটছে উজ্জ্বলের পাশাপাশি।চারিদিকে ভীড় সবার সাথেই অভিভাবক এসেছে বোর্ড পরিক্ষার সময় এই ভীড়টা অস্বাভাবিক কিছু না।রুমুর এক মুহূর্তের জন্য  মনে হয় পরিক্ষা তাদের না অভিভাবকদের কেননা ডানে বামে যেদিকেই তাকানো হয় শিক্ষার্থীর তুলনায় অভিভাবকের সংখ্যা বেশি।ক্লান্ত শরীর টেনে বাইকে চড়ে বসল সে।রাস্তায় তাদের জ্যামে পড়তে হয়েছিল অনেকটা সময়।এর মাঝেই রুমুর আবদার করে বলে,


" উজ্জ্বল চলেন বার্গার খাই।"


" দুপুরে বার্গার খাবি!আম্মা তোর জন্য রান্না সেরে অপেক্ষা করছে।"


" আরেহ আমার ক্ষুধা পেয়েছে বাড়ি ফিরতে অনেকটা সময় লাগবে চলেন না।"


" আচ্ছা ঠিক আছে।"


উজ্জ্বল রুমুকে নিয়ে কাছের একটি রেস্টুরেন্টে গেল।দুজনে হাত মুখ ধুয়ে খাবার অর্ডার করে বসল।উজ্জ্বলের কাছে রুমুর ফোন ছিল তাই এত ঘন্টা পর ফোন হাতে পেয়ে জহুরি চোখে কিছু একটা দেখছে।উজ্জ্বল ভ্রু কুচকে রুমুর প্রশ্নটা দেখছে আজকে রুমুর বাংলা পরিক্ষা ছিল।


" এই রুমু এমসিকিউ সব হবে তো?"


" হবে না মানে ফুল মার্ক পাবো দেখবেন।"


" আচ্ছা দেখা যাবে।তোকে কয়েকটা এমসিকিউ জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিবি দেখি কি দাগিয়ে এসেছিস।"


" আরে করেন করেন বাংলায় এ প্লাস নিশ্চিত থাকুন।"


" অপরিচিতা গল্পের কথক কে?"


" কল্যাণী।"


" কি!কল্যাণী!আমি তোকে কল্যাণী পড়িয়েছি?"


" নয়তো কী?"


" মাসি-পিসি গল্পের মূল বিষয় কী?"


" যৌতুকপ্রথা।"


" তুই আমার সাথে তামশা করছিস?এসব কি দিয়েছিস!মাসি-পিসি গল্পের মূল বিষয় নারী জীবনের অস্তিত্বের সংকট।"


" ও হ্যাঁ তাই তো।দেখলেন ভুল করে এলাম।"


"আশ্চর্য তোর মাঝে অনুশোচনা জাগছে না?ব্যাপারটা তুই সহজভাবে নিয়ে নিলি!"


" যা হওয়ার হয়েছে এত চিন্তা করে কি হবে?সবচেয়ে বড় কথা আগে ভয় ছিল ফেল করলে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিবে এখন তো আমি বিবাহিত নো টেনশন ডু ফুর্তি।"


উজ্জ্বল দাঁত খিচে তাকিয়ে রইল রুমুর পানে অপরদিকে রুমুর এসবে পাত্তা নেই।রেজাল্ট ভালো হোক বা খারাপ তাতে তার কী?যা হবার হবে।সবচেয়ে বড় কথা সে প্রশ্নগুলোর উত্তর ঠিকঠাক দিয়ে এলেও উজ্জ্বলকে রাগিয়ে দিতে ভুলভাল উত্তর জানাচ্ছে।

কিন্তু রুমু যে আরেক দিকে গন্ডোগোল পাকিয়েছে উজ্জ্বল ভাই যখন জানবে তাকে নিশ্চয়ই কাঁচা চিবিয়ে খাবে।


বাড়ি ফিরে রুমু গোসল সেরে খেতে বসল।উজ্জ্বল ইদানীং একটু বেশি ব্যস্ত থাকে রেস্টুরেন্টের কাজ চলছে কি না।টিভি দেখতে দেখতে রুমু হাড্ডি মুখে ধরে বসে আছে।হঠাৎ মাথায় থাবা পড়তে ভয় পেয়ে যায় ঘুরে তাকাতে দেখতে পেল রাগী রাগী চোখ করে দাঁড়িয়ে থাকা উজ্জ্বলকে।ছেলেটাকে দেখে রুমুর আত্মার পানি শুকিয়ে যায়।উজ্জ্বল ভাই কি তবে জেনে গেছেন ব্যাপারটা?


" তুই আমার গাওয়া গান আপলোড করলি কোন সাহসে?"


যা ভয় পেয়েছিল তাই হলো।সেদিন উজ্জ্বল যে ছাদে গান গাইলো সেই গান রুমু একটি পাবলিক গ্রুপে পোস্ট করেছে।একদিনের মধ্যেই হঠাৎ গানটা ভাইরাল হয়ে যায় সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ে।


" এত রেগে যাচ্ছেন কেন?"


" রেগে যাচ্ছি মানে!রাগের তুই দেখলি কি?তুই জানতি না আমার এসব পছন্দ না।"


" আমি কি জানতাম ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যাবে।"


"রুমু ভিডিওটা ডিলেট কর।"


" করব না।এই যে মুরগির হাড্ডির কসম ডিলেট করব না।"


উজ্জ্বল এবার দ্বিগুন রেগে গেল।তাদের ঝগড়ার মাঝে উপস্থিত হয় নার্গিস তিনি আড়ালে শুনেছেন তাদের বাক্যালাপ।নার্গিস নিজেও ছেলের গানটা শুনেছেন তাকে রুমুই দেখিয়েছেন।ছোট বেলা থেকেই উজ্জ্বলের গান গাওয়ার নেশা ছিল সেই নেশাটাকে পুনরায় উজ্জীবিত করার বাসনা জাগছে নার্গিসের মনে।মূলত উজ্জ্বলের বাবা গান পছন্দ করেন না তাই ছেলেটাকে এসব ছাড়তে হয়েছে।

রুমুর সাথে তর্কাতর্কির মাঝে নার্গিস বলেন,


" উজ্জ্বল এই ভিডিও ডিলেট হবে না তুই একদম রুমুর সাথে ঝামেলা করবি না।"


" এসবে তুমিও আছো?"


" না।রুমু তো আমাকে ভিডিওটা একটু আগে দেখাল।তোর না গান পছন্দ?তুই গেয়েছিস সবাই শুনে প্রশংসা করেছে এতে ক্ষতি কি?"


উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করে না।যেভাবে এসেছিল সেইভাবেই রাগে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়।

.

উজ্জ্বল ঘোমড়া মুখ করে বসে আছে রুমু বই হাতে নিয়ে টেবিলে বসে তবে তার পড়া হচ্ছে কম উজ্জ্বলকে দেখা হচ্ছে বেশি।দুপুরের রাগারাগির পর উজ্জ্বল রাগ দেখিয়ে কথা বলছে না অথচ ঠিকি রুমুকে পড়ার জন্য ইনিয়েবিনিয়ে বলে যাচ্ছে, ধাপে ধাপে হুমকি দিচ্ছে।


" উজ্জ্বল।"


" পড়তে বলেছি।"


" কোথা থেকে পড়ব?আম গাছ নাকি জাম গাছ?"


" ফাজলামো না করে পড়তে বস।"


" বুঝতে পারছি না,পড়তে বসবো নাকি জামাইর কোলে উঠে বসবো!"


"কোলে নিতেও জানি কোল থেকে আছাড় দিয়ে ফেলতেও জানি।"


" এত নির্দয় হচ্ছেন কেন?রাত বাজে একটা এই সময় কেউ পড়ে?কাল পরিক্ষা নাই আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাব।"


" ঘুম টুম বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিন এখন পড়ার সময় পড়ুন।"


রুমু উজ্জ্বলের কথা পাত্তা দিল না।বইটা বন্ধ করে উঠে বসল উজ্জ্বলের কোলে।পড়াচোর রুমুর আদর আদর ভাবের কথা বেশ ভালো করেই জানা আছে উজ্জ্বলের যখনি পরিক্ষা শেষ হবে তখনি রুমু আগের রূপে ফিরে আসবে তখন উজ্জ্বল কাছে ঘেঁষলেও পালাই পালাই করবে।


" উজ্জ্বল রেগে আছেন?"


" সর সামনে থেকে।"


" সরব না।"


" না সরলে ছুড়ে ফেলব।"


" এতটা নির্দয় কবে হলেন?"


" পড়তে বস তোকে পড়তে দেখলে শান্তি লাগে।"


" উহ, শান্তি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি।"


" তুই আমাকে বশে আনার চেষ্টা করছিস তাই না রুমু?এসব ছলছুতা করে লাভ নেই।উজ্জ্বল তোর কথায় গলবে না।"


রুমু ঠোঁট বাঁকাল।উজ্জ্বলের পরনে ছিল শাট মেয়েটা একে একে সব বোতাম খুলে দিল।উজ্জ্বলের লোমশ বুকে মাথা রেখে বলে,


" ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম।"


" এটা তোর ঘুমানোর জায়গা?"


" ইসস ঢং নাটক করছে।ঠিকি তো টেনে টেনে বুকে জড়ান এখন ভাবটা করছে এমন যেন... "


উজ্জ্বল রুমুকে না ধরেই উঠে দাঁড়াল।অল্পের জন্য ছিটকে পড়তে নিলে মেয়েটা দ্রুত হাতে উজ্জ্বলের গলা জড়িয়ে,কোমড়ে পা গুজে নিজেকে রক্ষা করল।রুমু কান্নার সুরে বলে,


" এবার কিন্তু খুব বেশি বেশি হচ্ছে।আমি কিন্তু চলে যাব বাপের বাড়ি।"


" বেশি বেশি এখন হবে।"


উজ্জ্বল রুমুকে ছুড়ে ফেলল বিছানায়।দ্রুত বাতি নিভিয়ে এগিয়ে এলো রুমুর কাছে।


" কন্ট্রোলে ছিলাম কেন যে এসব করিস।"


" উজ্জ্বল আ..আমি ঘুমাব।শুভ রাইত আমি কাইত।"


রুমু উজ্জ্বলকে সরিয়ে দিতে চাইলে উজ্জ্বল উলটা তাকে চেপে ধরে।ঘুট ঘুটে অন্ধকার কক্ষে কেউ কাউকে দেখার সুযোগ নেই।রুমু ঢোক গিলে উজ্জ্বলকে ইনিয়েবিনিয়ে অনেক কিছু বোঝাতে চাইলেও উজ্জ্বল বাঁধা মানে না।রুমুর গলায় মুখ ডুবিয়ে স্থির হয় সে।উজ্জ্বলের একেরপর এক ছোঁয়ায় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠে মেয়েটা শ্বাস আটকে আসার উপক্রম হলে উজ্জ্বল ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।নিজের ভুল বুঝতে পেরে রুমুর কপাল চাপড়াতে মন চাইল।একবার উজ্জ্বল কন্ট্রোল হারানো মানে সারারাত উজ্জ্বলের দখলদারিতে থাকা।

অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল উজ্জ্বলকে সরিয়ে দিতে চাইলেও আর সরাতে পারল কই?দেহের নেশায় বুদ হয়ে থাকা দুটি সত্তা তখন শীৎকার ধ্বনিতে মেতে।মাঝ রাতে থেকে থেকে কুকুর ডাকছে উজ্জ্বল উঠে বসল পরপর রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে তাকিয়ে রইল রুমুর পানে।অন্ধকারে মুখখানি দেখা না গেলেও উজ্জ্বল ঠাহর করার চেষ্টা চালাল।

উজ্জ্বলকে উঠে বসতে দেখে রুমু নিজেও উঠে ঘেঁষে বসল উজ্জ্বলের বুকে।


" রুমু।"


" হু।"


" গানের ব্যাপারটা আব্বার কানে গেলে রাগারাগি করবেন।আমি গান গাই আব্বা একদমি চাননা।"


" কিন্তু আমি চাই।"


" তুই চাইলে তো হবে না।এমনিতেই আব্বার অনেক কাজে বিরোধীতা করেছি।"


" আপনার নিজের সুখের জন্য গানটা আবার ধরুন।আমি তো বলছি না গান নিয়ে পড়ে থাকতে শুধু মাঝে সাঝে গাইবেন।আমি আপনার গানগুলো আপলোড করব জানেন আপনার গলার প্রশংসা কত হাজার হাজার মানুষ করেছে।"


" ভেবে দেখব।"


উজ্জ্বল চিন্তায় বুদ হলো।রুমু শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরল উজ্জ্বলকে।

চলবে...


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২৭

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২৭]


বলা যতটা সহজ করা ঠিক ততটাই কঠিন।জমির ব্যাপারে বাবার অনুমতি নিতে পারলেও উজ্জ্বল ঠিকঠাক ভাবে টাকা গুছিয়ে উঠতে পারেনি।ভেবেছিল একটা এনজিও থেকে লোন নেবে কিন্তু এনজিওর লোক উজ্জ্বলকে টাকা দিতে রাজি হয়নি।রাজি হবে কি করে?উজ্জ্বলের পেশা কি?এই যে টাকা নিচ্ছে সময় অনুযায়ী টাকাটা যে দিতে পারবে তার নিশ্চয়তা কী?তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র দরকার যা উজ্জ্বলের কাছে নেই।উর্মির মাধ্যমে তামিমের কাছ থেকে কিছুটা টাকা পেয়েছে রুমু তার বাবার কাছ থেকে চেকটা এনে দিয়েছে।এই চেক নিয়েও উজ্জ্বলের ছিল ঘোর নিষেধাজ্ঞা কিন্তু রুমু কি তা শুনে?ঠিকি উজ্জ্বলের বিরোধীতা করে চেকটা আনল।


রৌদ্র তাপে শরীর পুড়ে যাচ্ছে রুমু উজ্জ্বলের পাশে দাঁড়িয়ে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওই যে তাদের স্বপ্নের রেস্টুরেন্ট তৈরির কাজ চলছে।রেস্টুরেন্টা হবে সম্পূর্ণ বিদেশি স্টাইলে। রেস্টুরেন্টের দেয়াল থেকে শুরু করে ভেতরের বাইরের সবকিছুই হবে বিদেশি স্টাইলে।এই শহরে এমন রেস্টুরেন্ট আর দুটি নেই তাই উজ্জ্বলের এক বিশেষ বন্ধু তাকে অফার করল একটি রেস্টুরেন্টের ডিজাইন।উজ্জ্বল বারণ করেনি এক দেখায় তার পছন্দ হয়ে যায় এবং কাজে লেগে পড়ে।

প্রচন্ড রোদে ঘেমে উঠল উজ্জ্বল কপালের ঘাম মুছে রুমুকে বলে,


" রুমুরে জেদ দেখিয়ে সব করছি আমি পারব তো?"


" আরে চিন্তা কিসের?পারবেন মানে পারবেন বুঝলে?"


" কিন্তু টাকা হাতে এখন যা আছে সব অতিদ্রুত শেষ হয়ে যাবে।ইট বালু সিমেন্ট লোকের খরচ উফফ মাথা কাজ করছে না।এরপর তো আরো খরচ আছে।"


" এত চিন্তা কিসের?আব্বা কি বলেছে মনে নাই?টাকা নিতে এতই যখন গায়ে লাগে তখন ধার নেবেন ধারের টাকা তো শোধ দিতেই হয় তাহলে আর আপনার গায়ে লাগবে না।"


" তোর ভাই জানলে জন সম্মুখে রটিয়ে বেড়াবে শ্বশুরের টাকায় রেস্টুরেন্ট দিয়েছি।"


" আমার ভাই জানলে তো।আপনি অযথা চিন্তার সাগরে ডুবে যাবেন না।"


উজ্জ্বল হতাশার শ্বাস ছাড়ল।ভেতরে ভেতরে ভয়েরা বাসা বেঁধেছে।

সিয়াম দুই গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে এগিয়ে এলো।রুমু এবং উজ্জ্বলের হাতে দিয়ে বলে,


" উজ্জ্বল দিনকে দিন তোর চোখ মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে।এতটা চিন্তা করছিস কেন?দেখবি যা হবে ভালোই হবে।"


" তাই যেন হয়।আমি ভালোর অপেক্ষায়।"


" রুমুকে নিয়ে আজ রাতে মনে করে আসবি কিন্তু।"


রুমু ভ্রু কুচকায় সিয়ামের পানে তাকিয়ে বলে,


" রাতে কেন যাব সিয়াম ভাই?"


" আজ সুরাইয়ার জন্মদিন।"


" তাই নাকি!দেখলে ভুলেই গেলাম আমার ফ্রেন্ড অথচ আমারি মনে নেই।"


" তোর মনে থাকা কি স্বাভাবিক রুমু?তুই কতটা ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিস।যাই হোক আজ রাতে চলে আসবি।"


রুমু আরো কিছুক্ষণ উজ্জ্বলের সাথে সময় কাটাল।ফেরার পথে দুজন যখন বাইকে ছিল তখন রাস্তায় হাটতে থাকা রাশেদের সাথে চোখাচোখি হলো।দ্রুত বাইক থামাল উজ্জ্বল ছেলেটার এমন কান্ডে রুমু ঘাবড়ে গেল রাশেদকে দেখে বাইক থামাল কেন?আবার কি ঝামেলা বাঁধবে নাকি!উজ্জ্বল বাইক থামাতে রাশেদ তার দিকে ঘাড় কাত করে তাকায়  উজ্জ্বল আড় চোখে তাকিয়ে দোকানে বসে থাকা একজন মুরব্বিকে বলে,


" চাচা ভালো আছেন?"


" এই তো।তুমি ভালো আছো?"


" জি চাচা আলহামদুলিল্লাহ।চাচা সাবধানে থাইকেন দেশে নাকি রাশেদ ভাইপারের আতঙ্ক দেখা দিসে।"


" রাশেদ ভাইপার!কও কি আমি শুনলাম রাসেল ভাইপার।"


" ঠিকটাই শুনছেন চাচা তবে এটা রাসেল ভাইপারের জমজ ভাই রাশেদ ভাইপার।আমি গেলাম চাচা সাবধানে থাইকেন।"


অদূরে দাঁড়িয়ে উজ্জ্বলের কথা শুনে মুহূর্তে রেগে গেল রাশেদ।এত বড় সাহস তাকে নিয়ে বাজে কথা তুলছে!রাশেদ তেড়ে আসতে নিলে উজ্জ্বল দ্রুত বাইক স্টার্ট দেয়।খেপা ষাড়টাকে রাগিয়ে দিয়ে উজ্জ্বল বেশ মজা পেয়েছে।

.

সন্ধ্যার পর রুমু তৈরি হয়ে নিলো ।কতদিন পর দাওয়াতে যাচ্ছে মেয়েটা সাজতে আলসেমি করেনি।উজ্জ্বল তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সিয়ামদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।রাতে কেক কেটে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন শেষে উজ্জ্বলের সব বন্ধুরা মিলে চলে গেল ছাদে।রাত তখন প্রায় একটা উজ্জ্বল রুমুকে বারবার নিষেধ করেছে ছাদে না আসতে সে যেন সুরাইয়ার সাথে থাকে।রুমু প্রথমে উজ্জ্বলের আদেশ মানলেও যখন উজ্জ্বলের বন্ধুদের হাসির আওয়াজ পেল তখনি নিজেকে সামলাতে পারেনি দ্রুত পায়ে সুরাইয়াকে নিয়ে চলে গেল ছাদে।ঝকঝকে আকাশে আজ চাঁদ হাসছে সেই সাথে তারাদের সন্ধি।আকাশটা আজ বড্ড সুন্দর ছাদে কোন লাইটের প্রয়োজন নেই চাঁদের আলোয় পরিপূর্ণ ছাদটা। রুমুকে দেখেই উজ্জ্বলের মেজাজ খিঁচে গেল।এখানে তারা পাঁচজন ছেলে বন্ধু তার মাঝে রুমুর আসার কি দরকার?সুরাইয়া ভাইয়ের ভয়ে ছাদে আসেনি মেয়েটা সিড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে রইল।রুমুকে দেখেই উজ্জ্বলের মেজাজ খারাপ হয় তাকে টেনে নিয়ে গেল ছাদের এক কোণে।


" তোকে বললাম আসবি না নিচে থাকবি।আসলি কেন?"


" আহ লাগছে উজ্জ্বল ভাই হাতটা ছাড়েন।"


" আবার ভাই!কে তোর ভাই?"


" ইয়ে মানে কেউ না।"


" নিচে যা।"


" যাব না।আপনাদের সাথে আড্ডা দিব।"


" ছেলেদের সাথে আড্ডা দিবি!পাগল নাকি রে।"


" দিলে কি হয়?"


" আমরা ছেলেরা ছেলেরা আড্ডা দিব সেখানে তুই মেয়ে যাবি কেন?"


" কেন আড্ডা দিলে কি হবে?এই শুনুন আমারো কলেজে গ্রুপ ছিল সেই গ্রুপে ছেলে বন্ধু ছিল কিন্তু আপনার জন্য সব ত্যাগ করেছি।"


"আমায় উদ্ধার করেছেন এখন এখান থেকে যান।"


" যাব না।আপনারা কি কথা বলছিলেন?"


" বাজে বাজে কথা বলছিলাম।"


" বাজে কথা!কি বাজে কথা শুনি।"


" কিহ!মাথা ঠিক আছে?"


" আমিও শুনবো বাজে কথা।"


" রুমু আমার ধৈর্য কিন্তু ছাদ লাফিয়ে পালাচ্ছে।"


" বলেন না, কি বাজে কথা বলছিলেন।"


" আমরা ছেলেরা যখন একদল হয়ে যাই তখন বাজে বাজে কথা বলি বুঝলি।"


" কেমন বাজে কথা?"


" বাজে কথা মানে বাজে কথা।"


রুমু সরু চোখে তাকাল।উজ্জ্বলকে টেক্কা দিয়ে চলে গেল সিয়ামের কাছে।


" সিয়াম ভাই আপনারা নাকি বাজে কথা বলছিলেন?আমার বরটাকে কেন খারাপ বানাচ্ছেন?"


রুমুর প্রশ্নে হতভম্ব সকলে উজ্জ্বল রুমুকে টেনে নিয়ে যায় অথচ রুমু কিছুতেই যাবে না।


" সিয়াম ভাই সত্যিটা বলুন।আমার বরকে বাজে কথা কেন শেখাচ্ছেন!"


" ব..বাজে কথা!রুমু তোর মাথা ঠিক আছে?আমরা তো এমনিতেই কথা বলছিলাম।"


" তাহলে উজ্জ্বল যে বলল আপনারা বাজে কথা বলছিলেন।"


উজ্জ্বল পড়ল মহা বিপদে এই গাধীটাকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে শান্তি পেত।একদল ছেলের মাঝে রুমু বসে হাসাহাসি করবে এসব উজ্জ্বলের সইবে না,তাই তো সে রুমুকে মিথ্যা বলল।সিয়াম কথা পাল্টাতে দ্রুত বলে,


" রুমু বস একটুপর উজ্জ্বল গান গাইবে।শুনবি না?"


রুমু দ্রুত বসে পড়ল।কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বসে পড়ল উজ্জ্বল নিজেও।সুরাইয়া এসে রুমুর পাশে বসলো।তাদের আড্ডায় চলল অনেকটা সময়।চাঁদটা যখন মাথার উপর তখন রাত প্রায় দুইটা।উজ্জ্বলের বন্ধু দিপু গিটারটা আজ নিয়ে এসেছে।চাঁদের ঝকঝকে আলোয় গান ধরল উজ্জ্বল,


Tu hi haqeeqat khwaab tu

Dariya tu hi pyaas tu

Tu hi dil ki bekarari

Tu sukoon tu sukoon

Jaoon main ab jab jiss jagah

Paoon main tujhko uss jagah

Saath hoke na ho tu hai

Rubaroo rubaroo


Tu humsafar tu humkadam tu humnawah mera

Tu humsafar tu humkadam tu humnawah mera.


রুমু ফোন নিয়ে ভিডিও করল উজ্জ্বলের গাওয়া গানটা।গান শেষে মেয়েটা খুশিতে  গদগদ হয়ে সুরাইয়াকে বলে,


" এটা আমি আপলোড করব সুরু।"


" উজ্জ্বল ভাই জানলে তোকে ড্রেনে চুবিয়ে দেবে।"


" ওঁকে ভয় পাই নাকি?সুযোগ বুঝে পোস্ট করে দেব।"

.

পড়ার টেবিলে টানা তিন ঘন্টা বসে থেকে রুমুর কোমড় ধরে গেছে উজ্জ্বলের জন্য নড়তেও পারছে না।উজ্জ্বলের একটাই আদেশ দুইদিন পর পরিক্ষা টেবিল ছেড়ে উঠবি না।আজ সকাল থেকেই উজ্জ্বল রুমুকে পাহারা দিচ্ছে ফোন নিয়ে নিয়েছে তার আয়ত্তে সব মিলিয়ে মেয়েটার নাজেহাল অবস্থা।উজ্জ্বল বিছানায় শুয়ে ফোন দেখছে রুমু অতি আফসোস সুরে শুধায়,


" জানেন,আগে বলতাম পড়াশোনা থেকে বাঁচতে বিয়ে করব এখন দেখি বিয়ে করে উলটা ফেঁসে গেছি।পড়াশোনার জন্য এতটা চাপ আমার পরিবারো আমাকে দেয় নাই।"


" চুপচাপ পড়।"


" কি পড়ব?কিসব লজিক গেইট বিয়ের গেইট।আইসিটিতে এসব কি ফাও জিনিস দিয়ে ভরা।"


" লাঠির বারি খাওয়ার আগে পড়।"


" উজ্জ্বল ভাই লজিক গেইট NOR গেইট সব মিলিয়ে দেখতে বাথরুমের পাইপের মতো না?এই যে দেখেন না একটা আরেটার সাথে আঁকাবাঁকা হয়ে জুড়ে যাচ্ছে।"


" এই তোর মাথায় এসব আজে বাজে কথা আসে কি করে?"


" আরেহ দেখেন না।"


" রুমু মেজাজটা কিন্তু গরম হচ্ছে।"


রুমু চুপসে যায় ইদানীং উজ্জ্বল ভাই আদর সোহাগ বড্ড কম দিচ্ছেন।সারাদিন পড় আর পড় এই ছাড়া উজ্জ্বলের ভাইয়ের মুখে ভালোবাসার কোন বুলি ফুঁটে না।বিবাহিত জীবনে কি পড়ার ইচ্ছে জাগে?ইচ্ছে জাগে শুধু স্বামীর সোহাগ পেতে।রুমু খাতায় কিছু একটা লিখল লিখেই চেচিয়ে ডাকল উজ্জ্বলকে।


" উজ্জ্বল এই অংকটা পারি না।"


" দেখি খাতা দে।"


রুমু খাতা এগিয়ে দিল।উজ্জ্বল খাতায় একপলক তাকিয়ে রুমুর পানে আরেক পলক তাকাল।খাতায় অংক থাকার পরিবর্তে লেখা,

" উজ্জ্বল জানু দরজাটা লাগিয়ে আসো তোমার আদর পেতে ইচ্ছে করছে।"


উজ্জ্বল মিষ্টি হেসে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াল রুমু ভীষণ খুশি হলো এই তো ব্যাটাকে পটিয়ে ফেলেছি।রুমু চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠতে উজ্জ্বল তাকে হাতের খাতাটা দিয়ে ধুমধাম একেরপর এক কিল বসিয়ে দিল।রুমু হতবুদ্ধ হারিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল।তবে উজ্জ্বলের মার থামল না খাতা দিয়েই রুমুকে আরো তিন চারটা প্রহার করল।

উজ্জ্বল দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,


" আদর?আদর লাগবে আর?"


" এটা আপনি কি করলেন!"


" আদর দিলাম।পরিক্ষার সময় স্পেশাল আদর।এরপরেও যদি পড়তে হেলামি করিস তবে ডাবল আদর দিয়ে দেব।পড়তে বস।"


উজ্জ্বলের ধমকে চুপচাপ চেয়ারে বসল রুমু।

চলবে...

গল্প পড়ে চলে যান একটুও রেসপন্স করেন না।দিন দিন পচা হয়ে যাচ্ছেন🤧



গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২৬

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২৬ ] 


এই তো আর কয়েকদিন বাদে রুমুর এইচএসসি পরিক্ষা শুরুতে পড়াশোনা নিয়ে মেয়েটার খুব বেশি চিন্তা নেই কিন্তু উজ্জ্বলের আছে।উজ্জ্বল বারবার বলেছে এই বছর গ্যাপ দে আগামী বছর নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে পরিক্ষায় বসবি কিন্তু রুমু এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।সে চায় না এক বছর গ্যাপ চলে যাক ভাগ্যে যা আছে হবে।

শরীরের ক্ষত ধীরে ধীরে শুকিয়ে এসেছে রাশেদ এখনো ফনা তুলে আছে কখন সুযোগ পাবে আর কখন ঝামেলায় জড়াবে।উজ্জ্বলকে দেখা গেল তার ভিন্ন চিত্র সে চাইছে না ঝামেলা হোক।


পড়ার টেবিলে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ল রুমু নার্গিস পর্দার আড়ালে মেয়েটার অবস্থা দেখে ছুটে আসলেন,


" রুমুরে উঠ মা।"


রুমু চোখ খুলল।ঘুম ঘুম চোখে বলে,


" কী হয়েছে?"


" কী হয়েছে?ঘুমিয়ে পড়লি কেন?উজ্জ্বল দেখলে রাগারাগি করবে।"


" করুক রাগারাগি।যে ঔষুধ পেটে পড়ছে সারাক্ষণ শুধু ঘুম আর ঘুম।"


" চা করবো?"


" করো।"


নার্গিস ছুটে গেলেন রান্না ঘরে।ইদানীং রুমুর প্রতি তার আদর যত্ন বেড়েছে যদিও আগেও ছিল কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় দূরত্ব বাড়েছে।তবে উজ্জ্বলের বাবার রাগটা পড়ল না তিনি এখনো নিজের রাগে সচল।

.

গরমে দরদরিয়ে ঘামছে উজ্জ্বল হাতে চায়ের কাপ।থেকে থেকে চুমুক দিয়ে তাকাচ্ছে সৈয়দ ইসমাইলের পানে।ভরা বাজারে একটা ছোট চায়ের দোকানে বসেছে তারা।রাশেদ আজ শহরে নেই বিশেষ দরকারে সকাল সকাল শহরের বাইরে গেছে।


" চাচাজান আমাকে ডাকলেন কেন?"


" কিছু জরুরি কথা ছিল।"


" বলেন।"


" শোন তোর এবং তোদের ভালোর জন্য বলছি রাশেদের সাথে ঝামেলা করিস না।ওর মাথা ঠিক নেই কখন কি করবে... আমি এসব চিন্তায় দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছি।"


" গতকাল আমি রুমুকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলাম জিডি করে এসেছি।এভাবে তো ভয় ভীতি নিয়ে থাকা যায় না।আমি চাইলেই ওর সাথে লড়াই করতে পারি ঠিক আগের মতো দু'পক্ষের লড়াই।এতে লাভ কি হবে চাচাজান?সেই তো রক্তারক্তির খেলা।তাছাড়া আমি লড়াই করবো কেন? আমার যা চাই তা আমি পেয়েছি।"


" তোকে আমি এটাই বোঝাতে চাই।তোরা সাবধানে থাক।রাশেদ পাগলা কুকুরে পরিণত হয়েছে আর এসব করার সাহস দিচ্ছে ওর মা।ওর মায়ের ইন্ধনে ছেলেটা এত বাড় বেড়েছে।"


" তোমার জন্য আফসোস হয়।তোমার একমাত্র ছেলেটা..."


সৈয়দ ইসমাইল হতাশার শ্বাস ছাড়লেন।পকেট থেকে একটি চেক বের করে বাড়িয়ে দিলেন উজ্জ্বলের নিকট।


" এটা কি চাচাজান?"


" রুমুর নামে একটা একাউন্ট ছিল টুকটাক টাকা জমিয়েছি তার বিয়ের জন্য।আমার একমাত্র মেয়ে বিয়েতে অনেক বড়ো আয়োজন করার ইচ্ছে ছিল তবে এসব এখন কিছুই হবে না তাই বলছি যে টাকাটা তুই রাখ।এটা রুমুর টাকা রুমুর মানেই তো তোর।"


" আশ্চর্য!এই কথা বলতে আপনি আমাকে এখানে ডেকেছেন?"


" তোর বাবা যে রেগে আছে আমি জানি।তোদের সংসারব কি হচ্ছে টুকটাক আমার জানা আছে।তুই তো নিজেই বললি ব্যবসা করবি কিন্তু টাকা কোথায় পাবি?"


" সে জোগাড় হয়ে যাবে।"


"উজ্জ্বল ব্যবসা করলেই যে লাভবান হবি এত সোজা নয়। ব্যবসায় পরিশ্রম,বুদ্ধি,দক্ষতা,কুটিলতা সবটা জানতে হয়।"


" কিন্তু করবো কি তা ভেবেই.... "


" যা করবি ভেবে চিনতে কর।আর টাকাটা রাখ টাকার কথা যেন কেউ না জানে।"


" এই টাকা আমি রাখতে পারব না চাচাজান।"


" ত্যাড়ামি ছাড় টাকাটা রাখ উজ্জ্বল।"


" মাফ করবেন চাচাজান।আপনি শুধু দোয়া করবেন আমরা যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারি।


সৈয়দ ইসমাইল আশাহত হলেন।চেকটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইলেন উজ্জ্বলের পানে।উজ্জ্বল তাতে অবশ্য হাসল সে কিছুতেই এই টাকা নেবে না।

.

রুমু পড়তে পড়তে হাঁপিয়ে উঠেছে কোল থেকে বইটা ছুড়ল বিছানায়।উজ্জ্বল তার কান্ডকারখানা পর্যবেক্ষণ করে বলে,


" কিরে বই ছুড়লি কেন?"


" পড়াশোনা কঠিন উজ্জ্বল ভাই।"


" এই কে তোর ভাই?"


উজ্জ্বল ধমকে উঠল অথচ এই ধমককে পাত্তা দিল না রুমু,


" অভ্যস তো মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।"


" পড়া শেষ করা ছাড়া উঠবি না।পড়া শেষ কর তোর সাথে জরুরি কথা আছে।"


"আমারো জরুরি কথা আছে।শুনেন, উজ্জ্বল আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন?কতদিন হলো বাইরে যাই না।"


" বাইরে যাওয়া যাবে না।রাশেদ ভাইপারের আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে ঘরে থাক।"


" রাশেদ ভাইপার মানে!"


" রাসেল ভাইপারের জমজ ভাই।"


রুমু ফিক করে হেসে ফেলল।মেয়েটা হাসতে হাসতে চেয়ার উলটে পড়ার আগে উজ্জ্বল দ্রুত হাতে ধরে ফেলল।


" কথাটা মন্দ বলেননি তবে যাই হোক আমাকে আজ ঘুরতে নিয়ে যাবেন।"


" কোথায় যাবি?"


" চলেন ফুসকা খাইতে যাই।"


" তোর ভাই দেখলে কিন্তু ঝামেলা করবে।"


" আপনি কি ভয় পান?"


" একদমি না।রুমু আমি তোর জন্য ভয় পাই।রাশেদ তোর ক্ষতি করবে এই ভয়ে দম আটকে আসে।"


" ভয় পাবেন না।মনে করুন আমরা লুকিয়ে প্রেম করছি ব্যাপারটা মজা না?"


" তুই পাশে থাকলে সবটাই মজার।"

.

রাস্তার ধারে ফুসকা হাতে বসে আছে রুমু।মেয়েটা গপাগপ ফুসকা মুখে তুলছে।উজ্জ্বল পাহারাদারের ন্যায় আশেপাশে তাকিয়ে পরখ করছে।রুমু দ্রুত একটি ফুসকা পুরে দিলো উজ্জ্বলের মুখে।


" এসব মেয়েলী খাবার আমি খাই না।"


" মেয়ে তো ঠিকি খান।"


রুমুর জবাবে উজ্জ্বল বিষম খেল দাঁত কিড়মিড়িয়ে রুমুর পানে তাকাল কয়েক সেকেন্ড।


" দিন দিন তুই বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস।"


" জানি।"


" এই দুপুরের খাবার শেষে ওষুধ খেয়েছিস?"


" না খাইনি রাতে খেয়ে ফেলব।"


" তুলে একটা আছাড় মারব।টাইম টু টাইম ওষুধ না খেলে তুই সুস্থ হবি?তোর কি আর আক্কেল হবে না?"


" আমি দুপুরের ওষুধ রাতে খাব,ঔষুধ কি করে জানবে রাত নাকি দুপুর?"


উজ্জ্বল এবারো চুপসে গেল।রুমুর যুক্তির কাছে সে পেরে উঠে না।


"তোর সাথে জরুরি কথা আছে।"


" বলুন।"


" চাচাজান আজ আমাকে একটা চেক দিল।তোর বিয়ের জন্য নাকি টাকা জমিয়েছে সেই টাকা দিয়ে আমাকে বলল ব্যবসার কাজে লাগাতে।"


" আপনি কি বললেন?"


" বারণ করেছি।"


" বারণ করলেন কেন?"


" তোর বাপের টাকা আমি নেব?"


" ওটা আমার টাকা।আব্বা যেহেতু দিতে চাইল আপনি অবশ্যই আনবেন।"


" অবশ্যই আনব মানে?"


" উজ্জ্বল টাকাটা যেহেতু আমার আমি যে পথেই খরচ করি সেটা আমার সিদ্ধান্ত।আমি বলছি টাকাটা আনুন ব্যবসার কাজে লাগান।"


" আমি তোর টাকায় কেন ব্যবসা করব?প্রয়োজনে লোন নেব।"


" আপনাকে লোন কে দিবে?"


" আমি সিয়ামের সাথে কথা বলেছি একটা এনজিও থেকে লোন নেওয়ার চেষ্টা করছি।"


" বেশ যা ভালো হয় করুন।"


" আমার একটা ফ্রেন্ড বুদ্ধি দিল রেস্টুরেন্ট করাটা বেস্ট হবে।"


" হুম করুন আমিও তো তাই বললাম।"


" তোর শ্বশুরকে দেখিয়ে দেব আমি কি করতে পারি আর না পারি।"


" দেখান বারণ করেছি?কিন্তু রেস্টুরেন্টের জমিটা? "


" তোর শ্বশুরের কম জমি আছে?"


" যদি না দেয়?"


" আন্দোলন হবে।"


সারাটা বিকাল উজ্জ্বল আর রুমু একসাথে সময় কাটাল।উদ্দেশ্যেহীন পথে হাঁটল তারা আগাম জীবন নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত একে অপরকে জানাল।


রাতের খাবার শেষ করে সৈয়দ শামসুলের কক্ষে গেল উজ্জ্বল তার বুক কাঁপছে।কি করে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবে?পাশে দাঁড়িয়ে নার্গিস ভরসা দিলেন রুমু তখন দরজায় দাঁড়িয়ে।


" আব্বা একটা কথা ছিল।"


" বল।"


" বাজারের যে খালি জমিটা পড়ে আছে ওই জমিটা আমার লাগবে।"


" কি দরকার?"


" আব্বা আমি রেস্টুরেন্ট দিতে চাই।"


সৈয়দ শামসুল হেসে ফেললেন।হাত থেকে  মোবাইল সরিয়ে তাচ্ছিল্য সুরে বলেন,


" ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এই রুমে এলি নাকি? যা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমা।"


" আব্বা আপনি মজা নিচ্ছেন?"


" মজা নেওয়ার মতো কথা বললে মজা নেব না?"


" আব্বা আমাকে একটা সুযোগ দেন।জায়গাটা তো পড়েই আছে আমি কাজে লাগাই।"


" কাজে লাগাবি?তা বাকি টাকা কোথায় পাবি শুনি?আমি কিন্তু এক টাকাও দেব না।"


" টাকার জোগাড় আমি করব।আমার শুধু জমিটা চাই।"


" শুনো উজ্জ্বল আর লোক হাসাবি না।যা পারবি না তা নিয়ে তামশা করা বাদ দে।রেস্টুরেন্ট খোলা এতই সহজ?আমি তোর এসবে নেই আমি জমিও দেব না।"


" আমি তো বলিনি সহজ।আপনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমার কোন বিষয়ে সাহায্য করবেন না তখন আমি আর কি বলতে পারি?আমার জীবনের বড় সিদ্ধান্ত গুলোতে আপনি বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছেন এখনো দাঁড়াচ্ছেন।"


" উজ্জ্বল!"


সৈয়দ শামসুল ধমকে উঠলেন তবে উজ্জ্বল ভয় পেল না।সে দৃঢ় চিত্তে এখনো দাঁড়িয়ে।


" আব্বা আমি ভুল বলেছি?পড়াশোনায় বাঁধা দিয়েছেন নিজে কিছু করতে চেয়েছি তাতেও বাঁধা দিয়েছেন।রুমু নিখোঁজ হওয়ার পর যখন খুঁজতে সাহায্য চাইলাম তখনো বাঁধা দিয়েছেন।"


" তোকে..."


শামসুল উজ্জ্বলের দিকে তেড়ে আসার আগে নার্গিস এগিয়ে এলেন।স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলেন,


" ওগো রাগ করে লাভ নেই উজ্জ্বল যা করতে চাইছে করতে দাও।আমাদের একমাত্র ছেলে তার ... "


" কে আমার ছেলে?আমার ছেলে হলে ও এসব কথা বলতে পারত?"


"  রাগের মাথায় এসব না বলে উজ্জ্বলকে জমিটা দিয়ে সাহায্য করুন।"


" কাগজে কলমে লিখে দিতে হবে নাকি?আমি কাল জমি তোমার ছেলের নামে করে দেব দুইদিন পর দেখা গেল সে জমি বিক্রি করে টাকা উড়াচ্ছে তখন?"


উজ্জ্বল হেসে ফেলল,


" আব্বা আমি জমি লিখে দিতে বলিনি আমি শুধু বলেছি অনুমতি দেন আমি সেখানে রেস্টুরেন্ট করতে চাই।"


" বেশ দিলাম অনুমতি আমিও দেখতে চাই কি কি করতে পারিস।"


উজ্জ্বল বুকের মাঝে হাত ভাজ করে শামসুলের মুখোমুখি দাঁড়াল এবং শুধায়,


" পারতেই হবে আব্বা।লড়াইটা আমার আর আপনার আমি দেখিয়ে দেব সৈয়দ উজ্জ্বল আনিস কি কি করতে পারে।"


" এত বড় বড় কথা বলিস না,আমি দেখব কি করতে পারিস।"


" ইনশাআল্লাহ পারব।"


" যদি না পারিস?"


" যদি না পারি তবে আমি শামসুইল্লার পোলা না।"


চলবে...


গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২৫

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২৫] 


ঝিরঝির বৃষ্টি থেকে আকাশের হাঁক।ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা রুমু হঠাৎ থমকে গেল।শ্বাস প্রশ্বাসের আন্দোলন ব্যাপক বাড়ল।রুমু জিহ্বের সাহায্যে ঠোঁট ভেজাল উজ্জ্বলের বুকে হাত বাড়িয়ে বলল,


" এসব কি বলছেন?"


" একটা প্রশ্ন করলাম অস্থির হচ্ছিস কেন?"


" এটা কেমন প্রশ্ন?"


" প্রশ্নের ধরণ কেমন তা আমি জানি না।তোকে জিজ্ঞেস করেছি উত্তর দে।"


রুমুর চোখ ভিজে উঠল।


" আমি আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা।আমি বিয়ে করেছি আপনাকে ছাড়তে নয়।ছাড়বো কেন?কারণটা তো অন্তত দরকার,ছাড়ার মতো কোন কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না।"


"অনেকেই বলল তুই আমাকে ছেড়ে যাবি এই যে তুই নিখোঁজ যখন ফিরবি তখন নাকি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরবি।"


" তাদের আপনি কি বললেন?"


" বলেছি আমার রুমু আমাকে ছাড়বে না।এবার ঘুমা।"


উজ্জ্বল বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে রুমুর চোখ মুছে দিল।অনেকটা সময় পর ঘুমিয়ে পড়ল দু'জনে যখন ভোর হলো তখন সৈয়দ বাড়ির সকলের ঘুম ভাঙলো হট্টগোল চিৎকার চেচামেচিতে।উজ্জ্বলদের লোহার গেটে দেদারসে পদাঘাত করছে রাশেদ সেই সাথে অকথ্য ভাষায় গালাগালি।তখনো বৃষ্টি কমেনি  ঝিরঝির বৃষ্টি চলমান।সৈয়দ শামসুল রেগে গেলেন ছাতা হাতে বেরিয়ে এসে বলেন,


" রাশেদ এটা ভদ্র লোকের বাড়ি কোন জন্তু জানোয়ারের না।সাত সকালে এসব তামাশা কেন শুরু করেছিস?"


" তামাশা আমি করছি নাকি তোরা?রুমুকে আসতে বল, আসতে বল রুমুকে।"


চাচার সাথে তুইতোকারি!ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?উজ্জ্বল ঘুমঘুম চোখে সবটাই শুনল রক্ত তখনো তার টগবগিয়ে ফুটছে।উজ্জ্বল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রুমুকে যখন পাওয়া গেল তখন আর কোন রাগ জেদ নয় রাশেদের সাথে যত কথা কাটাকাটি হবে ততই জল ঘোলা হবে সব মিলিয়ে উজ্জ্বল যখন তার রাগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল তখনি রাশেদের তুইতোকারি তার রাগ বাড়াল।বড় বড় পা ফেলে উঠনে গিয়ে চিৎকার করে বলে,


" রাশেদ ঝামেলা চাই না চলে যা।"


" তোর কথা শোনার জন্য বসে আছি?রুমুকে আসতে বল।"


"রুমু আমার স্ত্রী।আমার স্ত্রী কোথায় যাবে কোথায় থাকবে সেসব সিদ্ধান্ত একমাত্র আমি নেব।রুমু এখানে আসবে না।"


" উজ্জ্বল তোকে সাবধান করলাম  খু *ন করে ফেলবো।"


" চেষ্টা করতে পারিস।"


" সাহস থাকলে গেট খোল।"


" ওকে,এবার তাহলে লড়াই হয়ে যাক।"


উজ্জ্বল যখনি গেটের কবজায় হাত রাখল তখনি সৈয়দ ইসমাইল বাইরে থেকে চেচিয়ে বলেন,


" খবরদার উজ্জ্বল এই ভুল করিস না।রাশেদের কথায় গেট খোলার কোন দরকার নেই।তোরা সবাই ঘরে যা এদিকটা আমি দেখছি।"


উজ্জ্বল কথা বাড়ায় না।সে চায় না ঝামেলা বাড়ুক এতদিনের ধকলে সে বড্ড ক্লান্ত।রুমু দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছিল সবটা, সে কেমন অপরাধবোধে নিংড়ে যাচ্ছে। অবচেতন মন বারবার ইঙ্গিত দিচ্ছে তুই যদি বিয়েটা না করতি ঝামেলা এতদূর আসত না।

.

বৃষ্টি থেমে গেছে পরিবেশটা এখন শীতল শান্ত।রুমু উজ্জ্বলের পানে তাকিয়ে বলে,


" উজ্জ্বল.. "


" হুম।"


" আপনি শুকিয়ে গেছেন।চোখটা দেবে গেছে।"


" আমার দিকে না তাকিয়ে নিজের দিকে তাকা শরীরের কি হাল হয়েছে।"


" আমি বেঁচে আছি এইতো অনেক।"


" তোর ভাই মা পাষাণ।"


" জানি।"


" মারল কেন?"


" আপনাকে ছাড়তে বলল কিন্তু আমি রাজি হইনি।"


" তুই আমাকে ছাড়লে তাদের লাভ কী?"


" কাবিনের টাকাটা..."


উজ্জ্বল চমকে গেল।এতক্ষণ সে রুমুর কাটা ছেড়া স্থানে গলায় যত্ন নিয়ে মলম লাগাচ্ছিল রুমুর কথায় থেমে গেল তার হাত।


" কাবিনের টাকা মানে?"


" আপনি আমাকে ছেড়ে দিলে যে কাবিনের টাকাটা দেওয়া হবে সেই টাকার জন্যই এতসব।"


" তোর ভাইয়ের এত বুদ্ধি!বোন নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে নাকি?"


" আমার কোন ভাই নেই।আচ্ছা আমরা কি একই মায়ের পেটের ভাই বোন?"


রুমুর গলা ধরে এলো।উজ্জ্বল পুনরায় তার কাজ চালিয়ে গেল।


" কত জায়গায় মলম লাগাবো?সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত।"


"জানেন, আমি যেদিন পালিয়ে আসলাম সেদিন আমাকে পালাতে কে সাহায্য করেছে?"


" কে আর চাচাজান?"


" না।রাশেদ ভাই।"


উজ্জ্বল দ্বিতীয়বার চমকালো।রাশেদ রুমুকে পালাতে সাহায্য করেছে!এতো বড় আশ্চর্যের ব্যাপার।


" রাশেদ তোকে পালাতে সাহায্য করলে হিমেলের সাথে বিয়ে কেন ঠিক করল?"


" হলুদের আয়োজন শেষে মাঝ রাতে আমি যখন কাঁদছিলাম তখন ভরসার হাত বাড়ায় রাশেদ ভাই।আমাকে বলল, পালিয়ে যেতে তবে কিছু শর্ত আছে।"


" কী শর্ত?"


" আমি পালিয়ে আপনার কাছে যাব।সকালে যখন জানা যাবে আমি নিখোঁজ  তার একদিন পর থানায় মামলা করা হবে আপনার নামে।"


" আরেহ বাহ!"


" সেদিন আমার উদ্দেশ্যে ছিল কিভাবে এই নরক থেকে মুক্তি পাব তাই রাশেদ ভাইয়ের কথার সাথে সামিল হই তবে আমার উদ্দেশ্য ছিল শুধু একবার বের হই আর পিছু ফিরে আসব না আর আপনাকে বিয়ে করে তবেই নিশ্চিন্ত হব।

যখন গেটে ছেড়ে বেরিয়ে যাই আর দৌড়াতে থাকি তখনি আব্বা ফোন করলেন।আব্বা নাকি দেখেছেন রাশেদ ভাই আমাকে বের হতে সাহায্য করেছেন তবে এর পেছনে কি উদ্দেশ্য আছে আব্বা জানতে চাইলেন।আমি সত্যটা জানালাম আর আমার সিদ্ধান্ত জানালাম।আব্বা শুধু একটা কথাই বললেন,উজ্জ্বলকে ঠকালে তুই নিজের কাছে ঠকে যাবি।"


" বিয়ের পরেও রাশেদের সাথে তোর যোগাযোগ ছিল।"


" হ্যাঁ ছিল।বিয়ের বেশ কয়েকদিন পর যোগাযোগ হয় আমি জানিয়েছিলাম আমাদের বিয়ের কথা রাশেদ ভাই ভীষণ রেগে যায়।যখন আমার কাছে কাবিনের টাকার কথা জানতে চায় আমি সত্যটা বলি এটাও বলি আমি উজ্জ্বলকে ছাড়ব না যত যাই হয়ে যাক।রাশেদ ভাই রেগে গেলেন আমাকে বললেন উর্মি আপার সংসারে ঝামেলা করবেন আরো কত কি হুমকি দিলেন।বিশ্বাস করেন আমি ভয় পেয়ে যাই।"


" আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না!"


" আমি সাহস নিয়ে বলতে পারিনি।রাশেদ ভাই বলল যদি আপনাকে ডিভোর্সদি আর টাকা আদায় করতে পারি তবে আমাদের উভয় জনের লাভ।"


" তো ডিভোর্স দিলি না কেন? "


রুমু হেসে ফেলল।


" আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে বিয়ে করিনি।বলেছিনা?আমি আপনাকে সৎ নিয়তে বিয়ে করতে পালিয়েছি।

ডিভোর্স দিব দিব করেও যখন আমি রাশেদ ভাইকে ঘুরালাম শেষ পর্যন্ত জানিয়ে দিয়েছিলাম আমি ডিভোর্স দিব না তখনি পাষাণের মতো কাজটা করল।"


" তোর কি মনে হয় না এসবের জন্য তুইও দায়ী?শুরুতে আমাকে জানালে এমনটা হতো?"


" আমি চেয়েছি রাশেদ ভাইকে দমিয়ে রাখতে আপনাদের উভয়পক্ষের রেষারেষি আর ভালো লাগেনা।"


" বাড়িতে নিয়ে তোকে কি করল?"


" ডিভোর্স দেওয়ার জন্য জোরাজোরি করছিল কিছুতেই রাজি হইনি মেরে বেঁধে ফেলে এসেছিল চিলেকোঠার ঘরে।এতটা সাহস করার কারণ আব্বা বাড়ি ছিলেন না তাই..."


" এরপর থেকে একা একা আধা চালাকি করবি না।"


"তারপর বলেন, আমাকে ছাড়া দিনগুলো আপনার কেমন ছিল?"


" দেখে বুঝতে পারছিস না কেমন ছিল?পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।"


উজ্জ্বল রুমুকে যত্ন নিয়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিল।সারা শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ছোপ ছোপ দাগ তার মাঝে কাটা ছেড়া।


" আমি তোকে কতটা যত্নে রাখি আর পাষাণরা এক নিমিষেই... "


উজ্জ্বল কথা শেষ করার আগে রুমু তার গায়ে থাকা ঢিলেঢালা টি-শাটটা টেনে খুলে ফেলল।উজ্জ্বল হতবাক হতভম্ব।


" রুমু তুই ঠিক আছিস?"


" নাহ।কাছে আসুন।"


" হোয়াট দ্যা...নিজের শরীরের অবস্থা দেখেছিস?এই অবস্থায় এসব... কোন প্রয়োজন নেই।"


" এখনি প্রয়োজন।"


উজ্জ্বল ধমক দেওয়ার আগে রুমু ঘুরে বসে।তৎক্ষণাৎ তার চোখে যায় রুমুর পিঠে লম্বালম্বি একটি কাটা দাগ।কাটা জায়গাটার ক্ষত স্থান লাল হয়ে আছে।


" পিঠে ভীষণ ব্যথা এই ক্ষতটা বেশি জ্বালাচ্ছে।"


" এটা কি করে হলো!"


" জানি না।"


উজ্জ্বলের বুক কেঁপে উঠল।রুমুর ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে মলম লাগাতে রুমু বলে,


"জামা খুললাম বলে কি ভেবেছেন?"


" ইয়ে মানে..কিছু না।"


" বি পজেটিভ ওকে?"


" নো।"


রুমু ঘুরে বসে উজ্জ্বলের গায়ে হাত রেখে নিগূঢ় দৃষ্টিতে তাকায় এই দৃষ্টি উজ্জ্বলকে দূর্বল করতে বাঁধ্য।উজ্জ্বল ঢোক গিলে নিজেকে এতটা কন্ট্রোললেস হলে চলবে না।সে যখন নিজের মনের সহিত যুদ্ধ করছিল তখনি রুমু তার ধৈর্যটার বাঁধ ভেঙে দিল।মেয়েটা মিশিয়ে দিল  তৃষ্ণাপীড়িত দুটো ঠোঁট, উপস্থিত যত ঝুট ঝামেলা দুটি সত্তা ভুলে গেল এক নিমিষে।উজ্জ্বল যতটা আঁকড়ে ধরতে চাইল রুমু তার থেকেও বেশি আঁকড়ে ধরল, কয়েক মিনিটে রুমু হাঁপিয়ে উঠল।


"উজ্জ্বল.."


" হু?"


" কিছু না।"


পুনরায় রুমু উজ্জ্বলের ঠোঁটে ঠোঁট মেশাল উজ্জলের ঘাড়ে হাত রেখে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করল।উজ্জ্বল খেই হারিয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতেই চাপা আর্তনাদে গোঙানি দিল।তৎক্ষনাৎ সতর্ক হলো সে।রুমুকে ছাড়তে চাইলেও রুমু তাকে ছাড়ল না।

চলবে..

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২৪

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২৪] 


" উজ্জ্বল আব্বা নিচে নেমে আয়।"


মায়ের ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল উজ্জ্বল।হাত ইশারায় নার্গিসকে যেতে বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল ছাদে।একেরপর এক বজ্রপাত আজ ভূমি কাঁপিয়ে তুলছে, বিজলির চমকে আকাশ ফেটে চৌচির।আঁধারের কোলে যখনি বিজলির আলো ছড়িয়ে পড়ে বাচ্চা বৃদ্ধ সবারি বুক কেঁপে উঠে অথচ উজ্জ্বল এসবকে পরোয়া করল না ছেলেটা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল নিগূর চুপচাপ।ভিজে একাকার অবস্থা চুল চুইয়ে চুইয়ে পানি ঝরছে।রুমু কোথায়?যেখানেই হোক পালিয়ে আসার চেষ্টা করত অন্তত একবার ফোন করত অথচ রুমু নিরুদ্দেশ কোন খোঁজ নেই।উজ্জ্বল আর মনকে বোঝাতে পারে না রুমু যে তাকে ঠকালো সবাই এটাই মেনে নিল অথচ উজ্জ্বল কখনোই তা মানবে না।উজ্জ্বলের কান্না পায় কেঁদেও ফেলে দমকা হাওয়া আর বৃষ্টির দাপটে তার কান্না দেখা গেল না।অপরদিকে বজ্রপাতে এবং ঝমঝম বৃষ্টির শব্দে শোনা গেল না তার হাউমাউ কান্নার আওয়াজ।না চাইতেও কেন মনে হচ্ছে রুমু তাকে ঠকালো?


উজ্জ্বল সারা ছাদ পাইচারি করল।বুকের ভেতরটা কেমন চিনচিন করছে।বৃষ্টি কমার নেই উলটা বাড়ছে আকাশটাও আজ ক্রমশ ধমক দিচ্ছে।


ছোট বেলায় সে বজ্রের শব্দে ভয়ে মায়ের কোলে আড়াল হতো তখন তার মানুষ হারানোর ভয় ছিল না কিন্তু এখন তার মানুষ হারানোর ভয় হয়েছে সেই ভয়ের কাছে বজ্রের শব্দ কিছুই না।


রুমুদের বাড়ির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল উজ্জ্বল।সারা পাড়ায় বিদ্যুৎ চলে গেছে অনেকক্ষণ আগেই সারাটা পাড়া অন্ধকার ভুতুড়ে।রুমুদের জানলার আলোয় একটুখানি আলোর দেখা মিলছে এটা রুমুর ভাইয়ের রুম।ছাদে তাকিয়ে উজ্জ্বলের যন্ত্রণা বাড়ে সে আম গাছের ডাল বেয়ে কতবার যে রুমুদের ছাদে গিয়ে তার সাথে দেখা করেছে তার হিসাব নেই।পুরোনো স্মৃতির ডায়রিটা খুলে উজ্জ্বলের ইচ্ছে জাগল আবার সেই ছাদে যেতে।তবে বৃষ্টির কারনে পিচ্ছিল হয়ে আছে গাছের ডাল একবার পা পিছলে পড়লে কেলেঙ্কারি কাণ্ড বাঁধবে।উজ্জ্বল এতসব সতর্ক বার্তা গায়ে মাখল না নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে গাছ বেয়ে চলে গেল রুমুদের ছাদে।


প্রবল বৃষ্টি সেই সাথে বাতাসের দাপট কমার নাম নেই উজ্জ্বল ছাদে লেপ্টে বসল। কিছুটা সময় কাটানোর পর তীব্র জোরে বজ্রপাত হতে দ্রুত গিয়ে চিলেকোঠার ঘরের সামনে দাঁড়ায়।এই বাজটা নিশ্চয়ই আশেপাশে পড়েছে প্রচন্ড শব্দে কেঁপে উঠে মৃত্তিকা, ভয় না পাওয়া উজ্জ্বল এবার একটু হলেও ভয় পেয়েছে।উজ্জ্বল চিলেকোঠার দরজার পানে তাকায় রুমুকে সাড়া বাড়ি খুঁজলেও চিলেকোঠার ঘরটায় খোঁজা হয়নি।দু'চোখের দৃষ্টি ছলকে উঠে উজ্জ্বলের, হৃৎস্পন্দনের গতি ক্রমাগত বাড়তে থাকে।এক মুহূর্ত দেরি না করে চিলেকোঠার দরজায় পরপর বেশ কয়েকবার পদাঘাত করলো।দরজার কবজায় ছোট্ট একটা তালা ছিল সেই তালাটাকে ভাঙলো ইটের সাহায্যে বেশ কয়েকবার চেষ্টায় উজ্জ্বল সফল হলো।তবে দরজা খুলে কিছুই দেখতে পেল না ।নিবিড় অন্ধকারে ভ্যাপসা গন্ধ এবারেও হতাশার শ্বাস ছাড়লো সে।


আচমকা বিজলি চমকালো।বিজলির আলো প্রবেশ করল চিলেকোঠার ঘরে। সেই আলোতে উজ্জ্বল একপলক দেখল হাত পা বাঁধা একটা মেয়েকে।বুকটা ধক করে উঠল তার শ্বাস প্রশ্বাসের আন্দোলন বাড়ল।শনশন বাতাসে গায়ে কাটা দিল মুহূর্তে।উজ্জ্বল এগিয়ে গেল অন্ধকারে টেনে ধরল মেয়েটাকে উজ্জ্বলের শীতল হাতের ছোঁয়ায় মেয়েটার দেহ ছটফট করে উঠে।দ্রুত হাতে মেয়েটার মুখ থেকে টেপ টেনে ছিঁড়ে খুলতে শুরু করে। পুনরায় বিজলিতে উজ্জ্বল দেখতে পেল রুমুর মুখ এক পলকে উজ্জ্বলের বুকটা খাঁখাঁ করে উঠল।ছেলেটা কাতর কণ্ঠে শুধায়,


" আমার রুমু।"


অনেক চেষ্টার পর রুমুর মুখ থেকে টেপ খুলতে সক্ষম হলো।ঠোঁট থেকে ঘাড় প্যাঁচিয়ে টেপ লাগানো হয়েছিল বলে টেপ খোলার সময় রুমু বেশ ব্যথা পায়।মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে ব্যথায় গোঁ গোঁ শব্দ তুলে।হাত পা সম্পূর্ণ টেপের সাহায্যে বাঁধা,নিঃসন্দেহে বলা যায় কোন পাষাণ লোকের কাজ ছাড়া আদৌ কারো পক্ষে এমন কাজ সম্ভব নয়।উজ্জ্বল হাতের টেপ গুলো টেনে খুলতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠে এত এত এত টেপ এলোমেলো ভাবে বাঁধা তার উপর প্রতিটা টেপ রুমুর চামড়ার সাথে লেগে থাকায় পশমে টান লাগলেই ব্যথা লাগছে।রাশেদের মার খেয়ে মেয়েটার সারা দেহের অনেকাংশ ছিলে গেছে তাই ব্যথা আরো বেশি লাগছে।উজ্জ্বল পাগলের ন্যায় বিলাপ করছে ধমকি ধামকি গালাগাল যা আসছে তাই বলছে।উজ্জ্বলকে বাঁধা দিয়ে 

রুমু হ্যাঁচড়প্যাঁচড় অবস্থায় ভাঙা গলায় বলে,


" ব..ব..ব্যথা।"


" রুমু একটু ধৈর্য ধর,একটু।"


রুমু কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ায় অর্থাৎ সে পারবে না।উজ্জ্বল টেপ ছেড়ে রুমুর গালে হাত রাখে তীব্র ব্যথায় কুঁকড়ে যায় সে।


" তোকে নিয়ে যাব, নিয়ে যাব আমি।"


উজ্জ্বল রুমুকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় কোলে তুলে নেয়।বৃষ্টির তেজ তখনো কমেনি।বাতাস বৃষ্টি বজ্র সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভীতিপ্রদ।ছাদের দরজাটা বন্ধ উজ্জ্বল পড়ল ব্যপক দুশ্চিন্তায় রুমুকে নিয়ে তো গাছ বেয়ে নামা যাবে না।কী করবে সে?মেজাজটা এমনিতেই খিঁচে ছিল তার উপর বাঁধা পেয়ে রাগে গর্জে উঠল উজ্জ্বল।রুমুকে পাঁজা কোলে রেখেই একেরপর এক পদাঘাত করল লোহার দরজাটাতে।রুমু উজ্জ্বলের রাগ ক্ষোভ কিছুই পরখ করল না সে শুধু উজ্জ্বলের বুকে নিজের আগলে থাকা অস্তিত্ব অনুভব করল। এ যেন পরম শান্তি শান্তি শান্তি!এই তো আমার শান্তির স্থান।

.

সৈয়দ ইসমাইল বাক্যহারা হয়ে বসে আছেন তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আনিকা।রাশেদের কতটা দুঃসাহস হলে এবার বাইরে ছাড়িয়ে ঘরের মানুষের উপর আঘাত করে।এত বড় ষড়যন্ত্র করার দুঃসাহস করার ইন্ধন নিশ্চয়ই রাবেয়া দিয়েছে।ইসমাইল উঠে দাঁড়ালেন আনিকাকে ধমক দিয়ে বলেন,


" রুমুর বিয়ের ব্যপারটা আমি জানতাম আর আমি তাদের পক্ষে ছিলাম।উজ্জ্বলকে রুমুর পাশে পেয়ে কতটা নিশ্চিন্ত হয়েছি তোর ধারণার বাইরে।আমি তোকে আমার আরেক মেয়ে ভেবেছি আর  তুই আমার মেয়েটার সংসার ভাঙতে উঠে পড়ে লাগলি!"


আনিকা কান্নায় ভেঙে পড়ল।দ্রুত ইসমাইলের পা জড়িয়ে বসল।


" আব্বা আমি নিজের সংসার বাঁচাতে...."


অনিকা থেমে গেল।ছাদ ঘরের দরজা থেকে ধুমধাম শব্দ হচ্ছে।শব্দটা কমার পরিবর্তে ক্রমশ বাড়তে থাকল।দরজাটা যেন এক্ষুনি ভেঙে যাবে।সৈয়দ ইসমাইল টর্চ লাইট নিয়ে ছুটে গেলেন ছাদে তার পেছন পেছন গেল আনিকা।প্রথমে তিনি দরজা খোলার সাহস করলেন না কিন্তু উজ্জ্বলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতে  চমকে যান যখন দেখলেন ভেজা জবুথবু উজ্জ্বল তার কোলে রুমু।


" উজ্জ্বল এত রাতে তুমি ছাদে?"


" চাচাজান কবে আসলেন?"


" আজ।রুমুকে কোথায় পেলে?মেয়েটার কি হয়েছে?আমার রুমু ঠিক আছে তো?"


" আপনি আমার বিপদে পাশে ছিলেন না চাচা,পাশে ছিলেন না।আমার কাছের আপন কেউ আমার বিপদে পাশে ছিল না।কেউ না।"


অভিযোগের সুরে কথাটি বলে প্রস্থান করল উজ্জ্বল।যাওয়ার আগে আনিকার দিকে তাকাল ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে।


নিজ বাড়িতে ফিরে উজ্জ্বল কারো সাথে কোন কথাই বলল না।রুমুর করুন পরিস্থিতি দেখে নার্গিস কান্না আটকাতে পারলেন না।মেয়েটার সারা শরীরে ছোপ ছোপ রক্তের জমাট বাঁধা দাগ।


মাঝ রাতে যে যার রুমে উজ্জ্বল বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুনছিল রাশেদের চিৎকার চেচামেচি সেই সাথে থেমে থেমে রাবেয়ার গলার আওয়াজো পাওয়া যাচ্ছে।বৃষ্টির দাপট তখন কমে এসেছে সেই সাথে বাতাসের তীব্রতা।এখন শুধু ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে।উজ্জ্বলের কানে এলো রুমুর কান্নার আওয়াজ ছেলেটা ছুটে নিজ কক্ষে ফিরল।


" রুমু কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?"


" আপনি কোথায়?"


" এই তো।"


" আমার প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে।"


রুমুকে তিনটা কাঁথা দেওয়া হয়েছে অথচ মেয়েটা থেকে থেকেই বলছে ঠান্ডা লাগছে উজ্জ্বল এগিয়ে এলো বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল রুমুকে।


" এবার ঠিক আছে?"


" আপনি যাবেন না।আমার ভয় লাগে।"


" ঘুমা।"


" না না চোখ বন্ধ করলেই ভয় লাগে।অন্ধকার দেখি,সব অন্ধকার।"


" কিন্তু আলো তোর চোখে সয় না।"


" অন্ধকারেও তো ভয় লাগে।"


উজ্জ্বল চুপ রইল।এতদিন একা অন্ধকার রুমে বন্ধ থাকায় রুমুর চোখে আলো লাগলেই অস্বস্তি লাগে অপরদিকে অন্ধকারে সে ভয় পাচ্ছে এই মুহূর্তে উজ্জ্বল কি করবে?ভেবে পায় না ছেলেটা।

উজ্জ্বল রুমুর চুলে বিলি কেটে দেয় তৎক্ষনাৎ চাপা আর্তনাদ করল রুমু।উজ্জ্বল ঘাবড়ে যায়,


" কিরে কি হয়েছে?"


" ব্যথা ব্যথা।"


" চুলেও ব্যথা?"


" চুল টেনে মেরেছিল।"


উজ্জ্বল চোখ বন্ধ করে।রাশেদকে জ্যান্ত গিলে খেলে শান্তি পেত।


"উজ্জ্বল।"


" হুম।"


" আমি কি সত্যি আমার মায়ের মেয়ে?"


" এমন কেন মনে হলো?"


" পরিস্থিতি অনেক কিছুই মনে করাতে বাধ্য করে।"


" পাঁকা পাঁকা কথা না বলে ঘুমা।"


" ঘুমাব না।অনেক ঘুমিয়েছি।"


উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করে না।দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।আগামীর দিনগুলো কেমন যাবে তার জানা নেই রাশেদের কর্মকান্ডে মার্ডার করার মতো দুঃসাহস সে করে দেখাতে পারে।রুমুর যখন চোখ লেগে এলো তখনি করাঘাতের শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল।উজ্জ্বল উঠে গিয়ে দরজা খুলল এত রাতে নার্গিসকে দেখে বলে,


" আম্মা এত রাতে উঠলেন কেন?"


" রাশেদের চিৎকার শুনছিস?হারামজাদাটা তোর চাচার কোন ক্ষতি করে দেবে।"


" সেই সাহস করবে না।"


" যে ছেলে তার আপন বোনের সাথে এতটা করতে পারে সে ছেলে নিজের বাপকেও খু ন করতে পারবে।"


" ঘুমান আম্মা।ওদিকে কান না দিলেই ভালো হবে।"


নার্গিস চলে গেলেন।উজ্জ্বল দরজা বন্ধ করে ফিরে এলো রুমুর কাছে।


" রুমু একটা প্রশ্ন করব উত্তর দিবি?"


"কি প্রশ্ন?"


" আমাকে ডিভোর্স দিবি?"

চলবে...

[ গল্প দিতে পারিনি বলে অনেকেই হয়তো রেগে আছেন।গল্প না দেওয়ার কারণ - পেইজে পোস্ট কমেন্ট মেসেজ কিছুই করা যাচ্ছিল না।এক কথায় এতদিন পেইজটা অচল ছিল।অনেকেই মেসেজ করেছেন কমেন্ট করেছেন কাউকেই রিপ্লাই করতে পারিনি।গ্রুপে আমি পোস্ট করে সমস্যার কথা জানিয়েছি যারা গ্রুপে এড ছিল তারা ব্যপারটা জানে।এখন থেকে নিয়মিত গল্প পাবেন ইনশাআল্লাহ।আমার উপর মনঃকষ্ট রাখবেন না গ্রুপে গল্প দিব ভেবেছিলাম কিন্তু সবাই গ্রুপে এড নেই সবার কাছে গল্প পৌছাবে না।তাই গ্রুপে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিলাম।যাই হোক সবাই গ্রুপে জয়েন যান গল্প ভিত্তিক আপডেট পেয়ে যাবেন।]


আরেকটা কথা,খুব শীঘ্রই ফ্লুজি আসছে...



গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২৩

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২৩ ] 


" উজ্জ্বল তোর মাথায় কি সমস্যা আছে?"


" না।"


"আমার তো মনে হচ্ছে তোর মাথায় সমস্যা আছে।"


" আমার মাথায় সমস্যা থাকলেও তোর আগাগোড়া পুরোটাতেই সমস্যা।"


" আমি তোর বউয়ের বড় আমি তোকে দুলাভাই ডাকবো?তুই আমাকে শালা ডাকবি?একটুতো রেস্পেক্ট কর।"


উজ্জ্বল যেন মজা পেল মুহূর্তে এক ঝলক হেসে থেমে গেল।


" তুই বয়সে বড় তবে বিচার বুদ্ধিতে না।তুই যদি বড় হতি তাহলে এসব ঝামেলার সমাধান চাইতি অন্যদের উস্কে দিতি না।"


" উজ্জ্বল মুখ সামলে কথা বল,ভদ্রতা শেখায়নি তোকে।"


" আমাকে কেউ ভদ্রতা শেখায়নি আর তোকে শিখিয়েও ভদ্র বানাতে পারেনি।পার্থক্যটা বুঝেছিস?"


" তুই বের'হ আমার বাড়ি থেকে।"


" বউ দিয়ে'দে চলে যাব।"


" কে বউ?কে তোর বউ?"


" নাটক করছিস কেন?"


" আমি নাটক করছি না।"


উজ্জ্বল রুদ্ধশ্বাস ছাড়ে।এসব ঝগড়া ঝামেলা আর মানা যাচ্ছে না।রাশেদ যে ভাঙবে তবু মচকাবে না তা বেশ ভালো করেই জানা আছে।


" রাশেদ তোর কাছে রিকুয়েষ্ট করছি ঝামেলা না বাড়িয়ে কমাতে চেষ্টা কর।"


" আমি ঝামেলা করেছি?নাকি তুই করেছিস?কে বলেছে আমার বোনকে বিয়ে করতে?তুই জানতি তোদের সাথে আমাদের সখত্য নেই তাহলে বিয়ে করলি কেন আমার বোনকে?"


" এমন ছ্যাত ছ্যাত করছিস কেন?তোর বোন রাজি ছিল বলেই বিয়েটা করেছি এমনি এমনি তো করিনি।"


" উজ্জ্বল তোকে পুলিশে দিতে মন চায়।"


" তো দে।মানা করেছি?"


" আব্বার কারণে এসব দাঁত খিচে আছি না হলে থানায় তোরে পার্মানেন্ট থাকার ব্যবস্থা করে দিতাম।কুত্তার বাচ্চা কোথাকার।"


"খবরদার মা বাবা তুলে গালি দিবি না।"


" হাজার বার দিব কি করবি তুই?"


উজ্জ্বল চমৎকার হাসল।এগিয়ে এলো রাশেদের মুখোমুখি, 


" ঝামেলা বাড়াতে চাই না আমার বউকে ফিরিয়ে দে।"


" আমার বোনের দায়িত্ব তুই নিয়েছিলি এখন যখন আমার বোন নিখোঁজ তখনি আমাদের দিকে আঙুল তুললি!ব্যপারটা এমনো তো হতে পারে তোর হাত থেকে বাঁচতে সে পালিয়েছে।না মানে আমি বুঝাতে চাইছি তোর মতো ছেলের সাথে অন্তত সংসার করা যায় না।"


উজ্জ্বল মুহূর্তে রেগে গেল।কালবিলম্ব না করে খুবলে ধরল রাশেদের শার্টের কলার।রাশেদ যেন আরো সুযোগ পেল উজ্জ্বলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে দিল মেঝেতে।উজ্জ্বলের বন্ধুরা এগিয়ে আসতে উজ্জ্বল হাত ইশারায় থামতে বলে।শার্টের কলার ঠিক করে রাশেদ উজ্জ্বলের একপাশে বসে বলে,


" রুমু কোথায় আছে আমি জানি।যেখানেই আছে তোর রুমু ভালো নেই বুঝলি।তোর কাছে দুটো অপশন দিলাম,তুই রুমুকে ডিভোর্স দিবি কাবিনের সব টাকা শোধ করবি।"


" মরে গেলেও ছাড়বো না।ছাড়তে বিয়ে করিনি।"


" আহ পুরো কথাটা তো শোন।যদি ডিভোর্স না দিস তাহলে তোর বাপ মা আমার মায়ের এবং আমার পা ধরে মাপ চাইবে এই এলাকার সবার সামনে।"


উজ্জ্বল গাল ভরতি থুথু ছুড়ে দিল রাশেদের মুখে।অপমানে থমথমে হয়ে গেল রাশেদের মুখ।


" আমার বাবা মা মাপ চাইবে তাও কি না তোর মতো অসভ্য বর্বরের কাছ থেকে!এই কথা শোনার আগে তোর জিহ্বাটা পুড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল।তাছাড়া তোরা কোন ফেরেশতা যে আমার বাবা মা তোদের মতো দুইটা অমানুষের কাছে মাপ চাইবে?আমার বউকে আমি খুঁজে নেব যদি না পাই তোর বউ সামলে রাখিস বলা তো যায় না হঠাৎ দেখা গেল আমার বউয়ের মতো তোর বউও মিসিং।"

.


নিস্তব্ধ কক্ষে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে উজ্জ্বল।মাথা ভরতি দুশ্চিন্তা থেকে থেকে হাত পা কেমন অসাড় হয়ে আসছে।বিছানার এক কোণে তাকিয়ে উজ্জ্বলের চোখ ভিজে উঠে।নিজের অনুভূতির কাছে নিজেরি নিয়ন্ত্রণ নেই।কন্ট্রোললেস উজ্জ্বলের যখন হাসতে মন চায় হেসে ফেলে কাঁদতে মন চাইলে কেঁদে ফেলে যখন রাগ উঠে তখন লণ্ডভণ্ড সবকিছু।রুমুর বালিশটা বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে অস্থির উজ্জ্বল।চাচা জানের নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন করেছে অথচ নাম্বারটা বন্ধ।এই ছাড়া কোন নাম্বার উজ্জ্বলের কাছে নেই।সময়টা বড্ড স্রোতের বিপরীতে যাচ্ছে একবার,

 শুধু একবার যদি সৈয়দ শামসুল সাহায্যের হাত বাড়াতো উজ্জ্বল একটা না একটা রাস্তা ঠিকি খুঁজে পেত।


নিদ্রাহীন উজ্জ্বলের সারাটা রাত কাটে দিনের আলো ফুটতে উজ্জ্বল আবার ব্যস্ত হয়ে যায় রুমুকে খুঁজতে।হিমেলের বাড়িতে গিয়েও উজ্জ্বল তল্লাশি চালায় তবে রুমুর খোঁজ নেই আশ্চর্য মেয়েটা কি নিরুদ্দেশ হয়ে গেল!

উজ্জ্বলের অসময়ের সময়টা কেটে গেল আরো দুদিন।আজ তিন দিন হলো রুমুর খোঁজ পেল না উজ্জ্বল রাশেদের পেছনে গুপ্তচর লাগিয়ে রেখেছে অথচ রাশেদের আচরণে তেমন কিছুই কারো চোখে পড়লো না।

.

সৈয়দ ইসমাইল ব্যবসায়ীক কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছে আজ।তপ্ত গরমে জন জীবন অস্থির।আনিকা লেবুর শরবত এনে গ্লাসটা রাখল টেবিলে।


" কিরে মা কেমন আছিস?"


" ভালো আব্বা।আপনি ভালো আছেন?কাজ সব ঠিকঠাক ভাবে সেরেছেন?"


" হুম, সব ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে।আমি গোসলে যাব তুই লুঙ্গি গামছা নিয়ে বাথরুমে রেখে আয়।"


শ্বশুরের ভীষণ ভক্ত আনিকা।এত বছরে মেয়েটা অন্তত বুঝে ফেলেছে এই সংসারে যদি কোন মানুষ থেকে থাকে তবে তিনি হলেন সৈয়দ শামসুল বাকি দুজন তো অমানুষের কাতারে পড়ে।রুমুর কথা ভাবতেও তার গায়ে কাটা তুলে,নিজের সংসার বাঁচাতে রুমুকে ঠেলে দিল অন্ধকার জগৎটায় অথচ এমন ননদ কজনে পায়?রুমুর মাঝে কোন হিংসা বিদ্বেষ নেই,তর্কবিতর্ক নেই। মেয়েটা আনিকাকে নিজের বড় বোনের মতোই ভালোবাসে।গত কয়েকদিনে অপরাধবোধে নিংড়ে যাচ্ছে আনিকা।আর এসব মানা যায় না উজ্জ্বলকে সব কথা জানানো উচিত কিন্তু আনিকার কাছে কোন ফোন নেই, বাইরে বের হওয়ার সুযোগো নেই সব মিলিয়ে অপরাধবোধের পাল্লাটা ক্রমশ ভার হচ্ছে।


আনিকা যখন শ্বশুরের কক্ষে প্রবেশ করল তখনি তার হাত চেপে ধরল রাবেয়া।দ্রুত দরজা ভিড়িয়ে কড়া গলায় বলেন,


" খবরদার তোমার শ্বশুরের কাছে কিচ্ছু প্রকাশ করবে না।কিচ্ছু বলবে না তাকে বুঝতেও দেবে না এসবে তুমি জড়িত।"


" আ..আমি কিচ্ছু বলব না আম্মা।কিন্তু..."


" কি কিন্তু? "


" রুমুকে কাল দুপুরে খাবার দিয়েছেন আর তো.."


" চুপ কর।এত দরদ দেখাতে হবে না আমার মেয়ে আমি বুঝবো।খুব তো গায়ের জোর দেখিয়েছিল খা** এখন গায়ের জোর বের হবে।"


এক ধমকে আনিকা চুপসে যায়।মেয়েটা কোন মতে লুঙ্গি গামছা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।


সময় গড়ায় উজ্জ্বল অপেক্ষায় থাকে সৈয়দ ইসমাইলের তিনি যে বাড়ি ফিরেছেন তাও উজ্জ্বলের জানা নেই।নিদ্রাহীন,অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া দুশ্চিন্তা সব মিলিয়ে ছেলেটার জীবনটা অন্ধকারে গোলকধাঁধাঁয় ডুবে গেছে।

রুমুদের আত্মীয় স্বজনদের উজ্জ্বলের চেনা আছে কিন্তু রুমুর খোঁজ কেউ দিতে পারলো না।উজ্জ্বলের জেদ জন্মে গেল আনিকার উপর শুধু একবার আনিকাকে একা পাওয়া যাক তারপর হাড়ে হাড়ে সব বের করবে।


রাশেদ রাবেয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে।ইদানীং থেকে থেকে বাতের ব্যাথাটা বড্ড বেশি জ্বালাতন করছে এর মাঝে মাঝ রাতে জ্বর, সব মিলিয়ে শরীরটা ভীষণ খারাপ যাচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে আজ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতেই হলো।যাওয়ার আগে অবশ্য আনিকাকে হুমকি ধামকি দিতে ভুলেননি।সৈয়দ ইসমাইল তখন ঘুমে বিভোর সন্ধ্যার পর তপ্ত আবহাওয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঝমঝম বৃষ্টি নেমেছে আকাশের বিদ্যুৎ চমকানো দেখে শিউরে উঠছে আনিকার দেহ।আকাশ গর্জনে ভূমি কাঁপিয়ে বাজ্রপাত হচ্ছে। আনিকার মনে প্রশ্ন জাগে,রুমু নিশ্চয়ই একা ভয় পাচ্ছে?আনিকার দু'চোখ ছলছল করে দরজার চাবিটাও তার কাছে নেই যদি থাকতো অন্তত কিছু একটা করা যেত।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস আনিকার কখনো হয়নি রাশেদের ভালোবাসায় সর্বদা বুদ সে কিন্তু আজ যেন নিজের বিবেক তাকে প্রশ্ন তুলছে রুমুর বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া কি ঠিক হয়েছে?শরীরের চামড়ায় জ্বলন ধরছে কি করবে না করবে সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে ভীষণ চাপে পড়ে গেল আনিকা।আচমকাই হুহু করে কেঁদে উঠে সে।মেয়েটা জানলায় কপাল ঠেকিয়ে অঝোরে কাঁদছে ভেবেছিল বৃষ্টির শব্দে রুমের বাইরে নিশ্চয়ই তার কান্না শব্দ যাবে না কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সৈয়দ ইসমাইলের কানে ঠিকি কান্নার শব্দ গেলো।তিনি ছুটে এসে আনিকার কক্ষে প্রবেশ করলেন,


" কিরে মা ভয় পাচ্ছিস?কাঁদিস না এদিকে আয় জানলা বন্ধ কর।"


" আমি একটা অন্যায় করেছি আব্বা।"


" কি অন্যায়?"


" আমি আমি..."


কান্নার দাপটে আহাজারি করতে থাকল আনিকা নিজেকে সামলে হেঁচকি তুলে বলে,


" আব্বা রাশেদের কথায় রুমুকে মিথ্যা বলে এই বাড়িতে এনেছি।আপনার ছেলে আর আম্মা মিলে মেয়েটাকে অনেক মেরেছে।মেরে বেঁধে রেখে দিয়েছে ছাদের চিলেকোঠার ঘরটায়।চারদিন হয়ে গেল দিনে এক বেলা খেতে দেয়। গতকাল থেকে খেতে দেয়নি, আব্বা মেয়েটা খুব কষ্টে আছে।আমি আমার সংসার বাঁচাতে অন্যায় করেছি আব্বা আমাকে আপনি শাস্তি দিন।"


চলবে...

গল্প কন্ট্রোললেস পর্ব ২২

 #কন্ট্রোললেস

#অনুপ্রভা_মেহেরিন

[পর্ব ২২ ] 


উজ্জ্বলের চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে রাবেয়ার পানে।তাদের সম্পর্ক এখন বদলেছে।একটা সময় ছিল চাচি আর এখন শাশুড়ী উভয় দিক বিবেচনা করলে তিনি সম্মানীয় ব্যক্তি।কিন্তু এই মুহূর্তে রাবেয়াকে সম্মান করার মন মানসিকতা নেই উজ্জ্বলের।অতিরিক্ত রাগে থরথর করে কাঁপছে সে।এই মহিলার চালবাজিতে আজ এতকিছু হচ্ছে ঘটছে।


" আপনাকে সম্মান করার মুড চলে যাচ্ছে শাশুড়ী।"


" তুই কথা না বাড়িয়ে এখান থেকে যা।"


" যাব।এখানে থাকার জন্য আসিনি।রুমু কোথায় বলুন আমি চলে যাচ্ছি।"


" আমার মেয়েকে তুই ভাগিয়ে নিয়েছিলি আমার মেয়ে কোথায় সেটা তুই জানিস।"


" এসব কাঁচা নাটক বন্ধ করুন জল বেশি দূর গড়ানোর আগে ভালোয় ভালোয় সবটা সমাধান করুন।"


" সমাধান কিসের সমাধান?তোকে এই বাড়ির জামাই হিসেবে কোনদিন মানবো না।"


" আপনি মানেন আর না মানেন তাতে আমার কী যায় আসে?আমি আমার বউকে চাই, আমি সেই সমাধান চাইছি।"


রাবেয়া উজ্জ্বলের সাথে তর্কে পারে না।বাড়িতে পুরুষ কেউ নেই রাশেদ বেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে।আনিকা থমথমে চোখে মুখে তাকিয়ে আছে উজ্জ্বলের পানে।মেয়েটা যে ভয় পাচ্ছে ঘাবড়ে আছে তা তার চোখে মুখে স্পষ্ট।উজ্জ্বল সূক্ষ্ম চোখে তাকায় আনিকার পানে,


" ভাবী আপনি কলেজে গিয়েছিলেন মিথ্যা বলে রুমুকে এনেছেন।"


" এ..এসব কি বলো উজ্জ্বল এমন কিছুই আমি করিনি।"


" মিথ্যা কেন বলছেন ভাবী?আপনার কি একটুও লজ্জা লাগছে না?"


" উজ্জ্বল অযথা ঝামেলা করবেন না।আমি এমন কিছুই করিনি।"


"অন্তত আপনাকে ভালো জানতাম এখন দেখি অমানুষদের সাথে চলে আপনিও অমানুষে পরিণত হয়েছেন।"


আনিকা দ্বিতীয়বার কিছু বলার সাহস করে না।উজ্জ্বল বুঝতে পেরেছে বাড়িতে রাশেদ নেই রাশেদ থাকলে নিশ্চয়ই বেরিয়ে এসে ঝামেলা করতো।উজ্জ্বল রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল আর সময় অপচয় না করে অতিদ্রুত প্রবেশ করল ঘরে।উজ্জ্বলের কর্মকান্ডে  রাবেয়া আনিকা দুজনেই অবাক।রাবেয়া উজ্জ্বলের পেছন পেছন ছুটছিলেন তার চিৎকার চেচামেচি কোন কিছুই পরোয়া করল না।উজ্জ্বল সারা ঘরের আনাচে-কানাচে তন্ন তন্ন করে খুঁজলো অথচ রুমুকে কোথাও পাওয়া গেল না।উজ্জ্বলের রাগ বাড়লো ছেলেটা রাগ সামলাতে না পেরে রান্না ঘরে থাকা সকল বাসন মেঝেতে আছড়ে ফেলল।


" ভাবী তিন ঘন্টা সময় দিলাম এর মাঝে সত্যিটা প্রকাশ করো যদি আমার কথার হেরফের হয় তবে এই বাড়িতে আগুন জ্বলবে আগুন।"


উজ্জ্বল বেরিয়ে পড়ল রাবেয়া পেছন থেকে উজ্জ্বলকে একেরপর এক গাল মন্দ করলেন তাতে অবশ্য উজ্জ্বলের কিছু যায় আসে না।

.

সৈয়দ শামসুল ভাতের লোকমা মুখে তুলে চোখ ঘুরালেন।উজ্জ্বলের কোন কথাই উনার কানে ঢুকছে না।ঢুকছে না নাকি ঢুকাতে চাইছেন না তা বেশ ভালো করে বুঝে উজ্জ্বল।বাবার এতটা পাষাণ মনোভাব উজ্জ্বলকে ব্যথিত করে।


" আব্বা আমার সাথে থানায় চলেন।আপনি গেলে ব্যপারটা জোরালো হবে।"


" কাঁচা কাজে থানায় যাব তাও আমি?"


" আব্বা এমন করবেন না আপনার ছেলের বিপদ আপনি বুঝতে পারছেন না?"


" হুম আমি বেশ ভালো করে বুঝতে পারছি তোর বিপদ নয় বরং বিপদ পালিয়ে গেছে।"


" বিপদ পালিয়ে গেছে মানে?"


" যার বিপদ সে নিয়ে গেছে তুই এসবে আর নিজেকে জড়াবি না।"


" আব্বা আপনি এসব কী বলছেন?"


" বুঝতে পারছিস না?"


" একদমি না।"


" তোর চাচাদের সাথে আমাদের একবার খু না খু নি র পর্যায়ে চলে গেছিল মনে আছে?"


" আব্বা এসবের সাথে চাচার সম্পর্ক ছিল না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।এসব করেছে রাশেদ আর চাচি আম্মা।"


" সে যেই করুক হয়েছে তো।শুন, আমি তোকে বলছি রুমুকে তারা নিয়ে গেছে ভালো হয়েছে তোর মাথা থেকে আপদ বিদায় হয়েছে।"


" আব্বা!আপদ মানে?রুমু আমার স্ত্রী আপনি এভাবে বলতে পারেন না।"


" আমি তোর ভালোর জন্য বলছি তা কি তুই বুঝতে পারছিস না?"


" কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা বোঝার বয়স আমার হয়েছে।"


" না হয়নি।অহেতুক ঝামেলা করবি না।রুমুকে ডিভোর্সদে এসব ঝামেলা আমি আর সহ্য করতে পারবো না।আমার খোঁজ তুই রাখিস?প্রেসার সবসময় হাই থাকে রাতে ঘুমাতে পারিনা এসব কার জন্য হচ্ছে তোর চিন্তায় হচ্ছে।"


" ডিভোর্স!কে দেবে, আমি?এতই সহজ।"


" আমি বলছি, আমি সৈয়দ শামসুল বলে রাখলাম এই মেয়ে ফিরে আসবে তবে তোর সংসার করতে না সংসার ভাঙতে আসবে।রুমু নিজেই তোকে ডিভোর্স দেবে।"


" আমি দেব না।প্রয়োজনে ওর হাত পা ভেঙে সংসার চালিয়ে যাব।আমি বলছি,আমি সৈয়দ উজ্জ্বল আনিস বলছি রুমু কখনোই ডিভোর্স দিবে না।"


ছেলেটা মনের জোর নিয়ে কথাটা বলল তবে তার কথায় তাচ্ছিল্য হাসলেন সৈয়দ শামসুল।


" ঠিক আছে যা হবার হবে।"


" তুমি এখন অন্তত আমার সাথে থানায় চলো।"


" পারবো না।"


" কিন্তু কেন?"


" তোর ব্যপার তুই বুঝবি।"


উজ্জ্বল হতাশার শ্বাস ছাড়ল।নিজেকে প্রচন্ড অসহায় লাগল তার।বিপদে কেউ পাশে না থাকলে বিপদটাকে হাজারগুন বেশি ভারী মনে হয়।উজ্জ্বলেরো এখন তাই মনে হচ্ছে।


" ঠিক আছে থানায় আমি যাব।তোমার ভাইয়ের নামেও মামলাটা কিন্তু দিব।"


"যা ইচ্ছা কর।তবে মাথায় রাখিস যদি রুমু বিগড়ে যায় আর সে তোকে পালটা  কিডন্যাপের মামলায় ফাসিয়ে দেয় তখন কী করবি?"


" রুমু এমন কিছুই করবে না।"


" করতেও পারে।নারী নির্যাতন সাথে কিডন্যাপের মামলা কতটা ভয়াবহ হবে তোর ধারণার বাইরে।যেহেতু রুমুকে তার পরিবার নিয়ে গেছে নিশ্চিয়ই তার সাথে খারাপ কিছু হবে না।এখন স্থির হও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যা করার করবি।"


" আশ্চর্য আমি বসে থাকব!আব্বা আপনার কথা শুনে আমার নিজেকে বেকুব ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না।যা করার আমি করব।"


উজ্জ্বল উঠে দাড়াল।নার্গিস এতক্ষণ সঙ্কিত চোখে মুখে তাকিয়ে ছিলেন ভয় হচ্ছিল বাবা ছেলে আবার না অতিরিক্ত ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে উজ্জ্বল এবং সৈয়দ শামসুল কেউ অতিরিক্ত পর্যায়ে গেল না।এখন শুধু একটাই ভয় উজ্জ্বল যদি থানা পুলিশ করে তবে তার নিজের ফেসে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।তাছাড়া রাশেদ ওত পেতে আছে উজ্জ্বলকে মা র বে বলে, সব মিলিয়ে নিজের ছেলের জীবনটা নিরাপদ চান তিনি।

উজ্জ্বল যখন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো তখনি তাকে আঁকড়ে ধরেন নার্গিস।


" বাপ তুই থানা পুলিশ করিস না।আমার একমাত্র ছেলে তুই। আমাদের কথা একবার চিন্তা কর।"


" আম্মা আমার বউয়ের খোঁজ নাই আমি চুপচাপ হাত পা কোলে নিয়ে বসে থাকবো?"


" আমি তা বলিনি।তোর বন্ধু বান্ধবদের দিয়ে খোঁজ নে কিন্তু তুই থানা পুলিশে যাবি না।"


" গেলে কী হবে?"


" তুই নিজেই বিপদে পড়বি।আমাকে কথা দে আল্লার ওয়াস্তে আমাকে কথা দে তুই এসব করবি না।"


নার্গিস ডুকরে কেঁদে উঠেন।উজ্জ্বল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,


" ঠিক আছে।তবে এর শেষ দেখে ছাড়বো আমি।"


সৈয়দ শামসুল আবারো হাসলেন।আজ মনে হয় তিনি উজ্জ্বলকে অবজ্ঞায় শেষ করবেন।


" শুন,এমনটা যে হবে তুইও জানতি। কি জানতি না?নিজ দায়িত্বে যখন বিয়ে করেছিস তখন ঝড়ঝাপটা সবটাই তোকে সামলাতে হবে।"


উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করে না বেরিয়ে যায় ঘর ছেড়ে।

সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো রুমুর খোঁজ উজ্জ্বল এখনো পায়নি।উজ্জ্বলের শেষ ভরসা ছিল রুমুদের বাড়ির কাজের লোক রহিমা।অথচ তিনি জানান এক সাপ্তাহ আগে রাশেদ তাকে আসতে মানা করে দিয়েছে তাদের নাকি আর কাজের লোকের প্রয়োজন নেই।রুমুর বাবা ব্যবসায়ীক কাজে ঢাকায় গেছেন সব মিলিয়ে উজ্জ্বলের পক্ষ নিয়ে লড়ার মতো কেউ নেই,কেউ রইল না।


উজ্জ্বলের সকল বুদ্ধি যখন নিষ্প্রাণ তখন সে তার দলবল নিয়ে হাজির হলো রুমুদের বাড়ি রাশেদ যেন এমনটাই চাইছিল।উজ্জ্বলের আগমনে সে তীক্ষ্ণ হাসলো।


" আরে উজ্জ্বল যে আয় আয়।"


" এই শালা তোর দুলাভাই হই।দুলাভাই ডাক।"


" কি!"


" শ্লা বুঝিস না?দুলাভাই হই তোর। তোকে মামা ডাক শোনানোর দায়িত্ব নিয়েছি অথচ তুই আমার ঘরে আগুন দিচ্ছিস।"


" উজ্জ্বল..."


" অব দুলাভাই। শ্লা!"


চলবে....