গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৮

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 38


🍂🍂🍂


মিটিং শেষে কেবিনে ফিরেই চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো রুদ্র। হাতে থাকা ফোনটি বেজে উঠতেই তাতে "রুদ্রাণী" নামটি জ্বলজ্বল করতে দেখেই মুচকি হাসলো রুদ্র। বিড়বিড় করে বললো,

আমার মানসিক শান্তি।

দ্রুত রিসিভ করে কানে রাখতেই মেহেরের আর্তনাদ শুনে চমকে উঠলো রুদ্র। মেহের চিল্লিয়ে বললো,

রুদ্র! আপনি শুনতে পাচ্ছেন? প্লীজ জলদি আসুন।

~আমি আসছি মেহেরজান। তুমি একটু wait করো প্লীজ।

ফোন রেখে রুদ্র চিৎকার করে আয়মানকে ডাকতেই সে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই কেবিনে চলে এলো। রুদ্র আয়মানের কাছে দৌড়ে এসে বললো,

জলদি গাড়ি বের কর মান। হাসপাতালে যেতে হবে আমাদের।

________________________________


হাসপাতালে পৌঁছে মেহেরের সামনে যেতেই মেহের রুদ্রর হাত ধরে কাদতে কাদতে বললো,

ক্লাস শেষে গাড়ির কাছে আসছিলাম আমরা। হটাৎ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। ওর কিছু হবে না তো রুদ্র?

রুদ্র মেহেরকে জড়িয়ে ধরে বললো,

কাদে না মেহেরজান। কিছু হয়নি বউমনির। সুস্থ হয়ে যাবে সে। আমি... ডক্টর এর সাথে কথা বলে আসছি।

মেহের মাথা নেড়ে সায় দিতেই রুদ্র ডক্টর এর কেবিনে চলে যায়। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে ধপ করে মেহেরের পাশের চেয়ারে বসে। মাথার চুল দুহাতে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

~ভাইয়াকে বলেছো?

মেহের মাথা না বোধকে নেড়ে নাক টানতে টানতে বলে,

বলিনি। আমি আর দিয়া খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আপনাকেই বলেছি শুধু।

রুদ্র মুচকি হেসে মেহেরের গাল টেনে বলে,

ওরে আমার কিউট বউ রে!

মেহের ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রুদ্র ঠোঁটের হাসি চওড়া করে বলে,

কংগ্রেচুলেশনস! তুমি চাচী হতে চলেছো।

~মানে? (আয়মান)

~মানে তুই ছোট চাচা হতে চলেছিস আর আমি বড় চাচা। (রুদ্র)

~স্নেহা প্রেগনেন্ট? (দিয়া)

রুদ্র দ্রুত মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মেহের লাফ দিয়ে দাড়িয়ে বলে,

সত্যি বলছেন রুদ্র?

~সত্যি মেহেরজান।

মেহের আর দিয়া একে অপরকে জড়িয়ে ধরে লাফাতে লাফাতে বললো,

দোস্ত!!! আমরা খালা হতে চলেছি!!! ইয়াহু!!!

~খালা মানে? কিসের খালা? চাচী হবে তুমি। (আয়মান)

~চাচী কেনো হবো? স্নেহা আমার বোন। আমি খালামণি আর তুমি খালু হবে। (দিয়া)

~হোয়াট রাবিশ! (আয়মান)

~আরে রাখেন আপনার রাবিশ খবিশ। রুদ্র! কংগ্রেচুলেশনস! আপনিও খালু হচ্ছেন। (মেহের)

~মোটেও না। আমি চাচা আর তুমি চাচী হবে। (রুদ্র)

~ইহ! আপনি বললেই হলো? (মেহের)

~অবশ্যই (রুদ্র)

~তোদের ঝগড়া রাখ! আমার বউ কই?

তীব্রর কথায় সকলে তার দিকে তাকালো। রুদ্র আর আয়মান দৌড়ে গিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে বললো,

তুমি বাবা হচ্ছো ভাইয়া!!! কংগ্রেচুলেশনস!

তীব্র বিস্তর হেসে বললো,

তোদেরও কংগ্রেচুলেশনস। কিন্তু আমার বউ কই?

রুদ্র হেসে বললো,

তোমার বউ কেবিনে। ঠিক আছে উনি। ডক্টর বলেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।

~আচ্ছা তোরা আয় তবে। আমি ওর কাছে যাচ্ছি।


🍂🍂🍂


রাতে ঘরে ফিরতেই মেহের দেখলো রুদ্র চুপ করে জানালার বাইরের দিকে চেয়ে বসে আছে। মেহের গিয়ে রুদ্রর সামনে বসলো। গালে হাত ঠেকিয়ে রুদ্রর দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালো।

~আপনি কি কোনো ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত?

রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়ে আলতো হাসলো। মেহেরের কাছে আরেকটু এগিয়ে বসে তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। মেহেরের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললো,

ভালোবাসি রুদ্রাণী।

মেহের চোখ নামিয়ে নিলো। মুহূর্তেই গালে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো। রুদ্রর মেহেরের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। 

~একটা জিনিস চাইলে দিবে?

মেহের চোখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকালো। রুদ্রর চোখের চাহনী আজ বেশ অদ্ভুত লাগলো মেহেরের কাছে। মাথা নেড়ে হ্যা বুঝাতেই রুদ্র আলতো হাসলো।

~বউমনি যেমন ভাইয়াকে বাবু এনে দিচ্ছে তেমনি আমারও তোমার কাছ থেকে একটা ছোট্ট বাবু চাই। এনে দিবে? 

মেহের অবাক হয়ে রুদ্রর দিকে তাকালো। গাল, কান দিয়ে যেনো ধোয়া বের হচ্ছে। মেহেরের লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখে রুদ্র নিঃশব্দে হাসলো।

__________________________________


~ঘুম কেমন হলো দোস্ত?

দিয়ার প্রশ্নে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো মেহের।

~মানে? (মেহের)

~লাভ বাইট দেখা যাচ্ছে।

আপেলে এক কামড় দিয়ে বললো স্নেহা। মেহের শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করতে লাগলো। দিয়া বাকা হেসে বললো,

আমি আবারও শীঘ্রই আরেকবার খালা হওয়ার সুখবর পাবো মনে হচ্ছে।

~আমারও তাই মনে হচ্ছে।

দিয়া আর স্নেহার কথায় মেহের লজ্জায় গুটিয়ে গেলো। সে পারলে এখন কোনো এক কোনায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। স্নেহার আর দিয়ার কথায় লজ্জায় আটখানা হয়ে ঘরের দিকে দৌড় লাগালো মেহের।

~~~

চলবে~


(দেরি করানোর জন্য দুঃখিত। আজ রাতেই আরেকটা বোনাস পার্ট দিবো। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৭

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 37


🍂🍂🍂


রাত প্রায় বারোটা বাজে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মেহের সোফায় বসে রুদ্রর ঘরে ফেরার অপেক্ষা করছে। বিয়ের দিন স্নেহার বলা কথাগুলো যথাযথ মানতে চেষ্টা করছে সে। রুদ্রর প্রতি দূর্বল সে তবে রুদ্রর মাফিয়াগিরির জন্য তার কাছে যেতে ভয় পায় মেহের। আয়মান এর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর পরই জানতে পেরেছে শরীফ মির্জাকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিয়েছে রুদ্র। যেনো তেনো শাস্তি নয় বরং বেশ নির্মম আর ভয়ংকর শাস্তি। কাব্যর কাছ থেকে শরীফ মির্জাকে মার দেওয়ার বর্ণনা শুনে গা গুলিয়ে এসেছিল মেহেরের। এমন শাস্তি পেলে হয়তো মানুষ নিজের মৃত্যুকেই সব থেকে বেশি শান্তির মনে করে। কিন্তু রুদ্র তাকে মৃত্যু দেয়নি। বেচেঁ থাকার চেয়ে হয়তো তার কাছে মৃত্যুই বেস্ট উপায় ছিলো কিন্তু রুদ্র তাকে সেই উপায় দিলো না। সুস্থ হলে সে পাগল রূপে সারাজীবন হাসপাতালে পড়ে থাকবে এমন শাস্তিই সে ঠিক করেছে শরীফ মির্জার জন্য। মেহেরের ইচ্ছা করছিল কাব্যকে আধঘন্টা উত্তম মাধ্যম দিতে। মানুষ কিভাবে মারা গেছে, কতটা জখম পেয়েছে সব তার জানা লাগবে। জানবে তো জানবে আবার এসে ওদের সবাইকে জানাবেও। অদ্ভুত এক চরিত্র এই ছেলে। রুদ্রকে নিজের আদর্শ বলে সারাদিন লাফায়। ভবিষ্যতে নাকি সেও রুদ্রর মতো মাফিয়া হতে চায়। এ জন্য মেহের আর স্নেহার কাছে কম ধমক খায়নি সে। আজ রুদ্রর সাথে কথা বলে সে তাদের সম্পর্কের একটা পরিণতি ঠিক করে তবেই দম নিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে মেহের। দিয়ার ধমক খেয়ে কেউ আর ওদের বাসরে ডিস্টার্ব করেনি। মেহের নিজের ঘরে চলে এলেও রুদ্র এখনও আসেনি। সে এলেই আজ কথা বলবে তার সাথে মেহের। রুদ্র ঘরে ঢুকতেই নড়েচড়ে বসলো মেহের। কণ্ঠস্বরে বেশ গম্ভীরতা এনে বললো,

বিছানায় কাপড় রাখা আছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে।

রুদ্রও ভদ্র ছেলের মত দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এলো। মেহের চোখের ইশারায় রুদ্রকে তার পাশে বসতে বললো। রুদ্রও তাই করলো। মেহের লম্বা এক শ্বাস নিয়ে বললো,

আজ আপনার কাছে কিছু চাইলে দিবেন রুদ্র? মানা করবেন না প্লীজ।

রুদ্র মেহেরের দিকে তাকালো। বিয়ের এত মাসের মধ্যে মেহের কখনোই কিছু আবদার করেনি রুদ্রর কাছে। এই প্রথম তার রুদ্রাণীর মুখে সে নিজের নাম শুনলো। সে যথাসম্ভব তার বউয়ের আবদার পূরণ করার চেষ্টা করবে। তবে কি চাইবে মেহের? যদি ডিভোর্স চেয়ে বসে? ভাবতেই বুকটা কেপে উঠলো রুদ্রর। মেহেরের এমন আবদার সে কখনোই পূরণ করতে পারবে না, কখনোই না। দরকার পড়লে সে হাত পা বেঁধে মেহেরকে নিজের সাথে রেখে দিবে তাও সে ছাড়তে পারবে না। রুদ্র ঢোক গিলে তটস্থ কণ্ঠে বললো,

কি? কি চাও তুমি? আমি আগেই বলে দিচ্ছি রুদ্রাণী, তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে অসম্ভব। ডিভোর্স বাদে যা ইচ্ছা চাও তাতে সমস্যা নেই। আমি প্রাণ দিয়ে হলেও তা পূরণ করার চেষ্টা করবো তবে তোমাকে ছাড়তে পারবো না। মোটেও না, ভুলেও না।

মেহের ফিক করে হেসে দিলো রুদ্রর কথায়। ডিভোর্সের কথা তো সে স্বপ্নেও ভাবেনি কখনো আর রুদ্র এসব ভেবে ভয় পেয়ে আছে। ব্যাপারটা আসলেই বেশ হাস্যকর। রুদ্র নিষ্পলকভাবে চেয়ে রইলো মেহেরের হাসি মাখা মুখটির পানে। প্রেয়সীর হাসি রাঙা মুখ দেখার মত সুযোগ কোনো প্রেমিক পুরুষই মিস করতে চাইবে বলে তার মনে হয় না। এমন সুযোগ মিস করলে তার নিজেকে প্রেমিক পুরুষ দাবি করা উচিত না। মেহের হাসি থামিয়ে বললো,

আমি ডিভোর্স চাইছি না রুদ্র। আপনি আগে বলুন আমার কথা রাখবেন কি না।

রুদ্র নির্মল কণ্ঠে বললো,

বলো। রাখার চেষ্টা করবো।

মেহের মুচকি হেসে রুদ্রর ডান হাতটা জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রাখলো। রুদ্রর অবাক চাহনী উপেক্ষা করে বললো,

আমি চাইছি আমাদের সম্পর্ককে একটা সুযোগ দিতে। কিন্তু...

রুদ্র দেরি না করে বললো,

কিন্তু কি? জলদি বলো মেহেরজান।

মেহের রুদ্রর কাধ থেকে মাথা তুলে তাকালো। রুদ্রর হাতটা নিজের গালে ছুইয়ে বললো,

আপনার এই মাফিয়া জগৎটা আমাকে আপনার কাছে আসতে দেয় না রুদ্র। যাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এ পথে এসেছিলেন তাকে তো শাস্তি দেওয়া শেষই। আপনি প্লীজ এসব ছেড়ে দিন। এসবে লাইফের খুব রিস্ক থাকে রুদ্র। আমি খুব সাধারণ একটা জীবন চাই রুদ্র। এসব খুন খারাবি আমার ভালো লাগে না।

রুদ্র এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার প্রেয়সীর পানে। প্রেয়সীর এই নিঃসংকোচ আবদার যেনো তার মনে আজ খুশির স্রোত নিয়ে এসেছে। ঠিক এ কারণেই তো সে তার রুদ্রাণীকে এতো ভালোবাসে। খারাপ কাজ মেহেরের অপছন্দ। সে যেভাবেই হোক বুঝিয়ে ঠিক পথে তাকে ফিরিয়ে আনবে তা বেশ জানতো রুদ্র। রুদ্র প্রশান্তির হাসি হেসে বললো,

আজ থেকে ছেড়ে দিচ্ছি। আমি সত্যিই ওই জগৎ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবো। তুমি শুধু আমার সাথে থেকো।

মেহের মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। তার ঠোঁটের কোনেও দেখা মিললো হাসির রেখার।

____________________________________


ইদানিং বাড়ির মানুষের কাজে, আচরণে বেশ অবাক হচ্ছে আহিল। বাবা মা এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে, বেশ হেসে কথা বলে, আহিলের সাথেও যথেষ্ট সময় কাটায়। এমন পরিবর্তনের কারণ তার বুঝে আসছে না। কি এমন হলো যে আহিলের মা বাবার এত পরিবর্তন হলো? ভেবেছিলো আজ আহমেদ ভিলাতেই থাকবে। কিন্তু তার বাবা মা ফোন করে বাড়ি ফেরার জন্য পাগল প্রায় করে তুলছিল। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখলো তার মা বাবা সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। আহিল ভেবেই নিয়েছে যে আজ জেনেই ছাড়বে তাদের এই পরিবর্তনের কারণ। আহিলকে দেখতেই আহীলের বাবা বললো,

আহি এসে গেছে। আয় বস।

আহিল তাদের ঠিক সামনের সোফায় গিয়ে বসলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,

হটাৎ এই পরিবর্তনের কারণ কি? কখনো তো এক সাথে ঘরে দাড়াতেও দেখলাম না আপনাদের। আর ইদানিং এক সাথেই খাওয়া, ঘুরা, ইভেন আজ আড্ডাও দিচ্ছেন।

আহিলের বাবা মলিন হাসলেন। স্বামী স্ত্রীর দ্বন্দ্বে যেনো তার ছেলের দিকে তাকাতেই ভুলে গিয়েছিল তারা। মেহের, দিয়া, স্নেহা আর কাব্য তাদের না বুঝালে হয়তো কখনোই তাদের এই ভুল শুধরানো হতো না। আহিলের মা আহিলের হাত ধরে কেঁদে উঠলো,

মাফ করে দে বাবা। আমরা ভালো বাবা মা হতে পারিনি। আমাদের নিজ দ্বন্দ্বে আমরা যেনো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমরা এখন শুধু স্বামী স্ত্রীই নয়, মা বাবাও। আমাদের উপর রাগ করে থাকিস না বাবা। আমরা আর ঝগড়া করবো না। একদম স্বাভাবিক একটা পরিবার হবে আমাদের।

আহিল অবাকের পাশাপাশি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

প্লীজ কান্না করবেন না। আমি... আমি আপনাদের এমন ঝগড়া দেখে কষ্ট পেয়েছি ঠিকই তবে আপনাদের চোখে কখনো অশ্রু দেখতে চাইনি। প্লীজ কান্না থামান। 

তার মা কান্না থামালো না বরং কান্নার পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। এক পর্যায়ে আহিল জানতে পারলো এসব তার বন্ধুদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। কাব্য নাকি তাকে খুঁজতে ওদের বাসায় এসেছিল। আহিল না থাকায় সেদিন আব্দুল্লাহর কাছে থেকে আহিলের ব্যাপারে জেনেছিল সব। আহিল বাবা মাকে শান্ত করে তাদের রুমে পাঠিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো। লম্বা এক শ্বাস নিলো। আজ মনে হচ্ছে এটা তার শান্তির নীড়। আজও আহিলের চোখের কোণে জলের আভাস পেলো তবে তা দুঃখের নয় বরং খুশির। পকেট থেকে ফোন বের করেই কাব্যর নাম্বারে কল লাগালো সে।

~কোন শালায় রে? আমার এত সাধের ঘুমটা নষ্ট করতে কল দিছে।

~শালা বলদ! নম্বর দেখে কল রিসিভ করস না?

আহিলের ধমকে হুড়মুড় করে উঠে বসলো কাব্য। কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখলো এটা আহিলের নম্বর। চেঁচিয়ে বললো,

আমার কোনো বইন নাই। তুই আমারে শালা কস কেন? আর এত রাইতে কল দিলি কেন!

আহিল হেসে বললো,

তুই নিজে আমাকে আগে শালা বলেছিস। যাই হোক বাসার নিচে নাম। আমি দাড়িয়ে আছি।

~তুই আমার বাড়ির নিচে কি করস? আমি তো আহমেদ ভিলায়।

~লাথি মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিবো একদম। আমি চলে এসেছি বলে তুইও চলে এসেছিস। আমি জানি না মনে করিস!

কাব্য হাসলো। "আসছি" বলেই দ্রুত নিচে চলে এলো। কাব্যকে দেখতেই আহিল দ্রুত গিয়ে কাব্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। হটাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় দু কদম পিছিয়ে গেলো কাব্য। আহিলের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

এই কাদিস কেন? ও মাই আল্লাহ! আহিল! তুই প্রেম করিস? ব্রেক আপ হইছে? একদম ঠিক আছে। আমাদের বলিস নাই তো তাই উচিত বিচার হইছে।

আহিল ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

বেক্কল! সব সময় উল্টা পাল্টা কথা! দেখছস কোনো মেয়ের পিছে ঘুরতে কখনো?

~তাইলে কান্দস কেন?

~আমার মা বাবাকে বুঝিয়ে আমাকে একটা স্বাভাবিক পরিবার এনে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস ভাই। তোরা না বুঝালে হয়তো কখনোই এমন দিন দেখতে পেতাম না আমি।

বলেই আবার ডুকরে কেঁদে উঠলো আহিল। কাব্য আহিলের মাথায় এক থাপ্পর দিয়ে বললো,

তোর মত গরু আর একটা দেখি নাই আমি। বন্ধুরা হয়ই এই জন্য যেনো তাদের সাথে মনের সব দুঃখ কষ্ট শেয়ার করতে পারি আমরা। তাই যদি না করি তবে বন্ধু হলাম কেমনে? তুই কি আদৌ আমাদের ওপর বিশ্বাস আনতে পারিসনি আহি?

আহিল আবারো কাব্যকে জড়িয়ে ধরে বললো,

মাফ করে দে ভাই। আর কখনো কোনো কথা লুকাবো না। সব বলবো তোদের।

কাব্য হেসে বললো,

বুঝলাম। কিন্তু দোস্ত! ছাড় আমারে। পাশের বাড়ির দারোয়ান যেমনে তাকাইয়া আছে! নির্ঘাত গে ভাববো আমাদের। তুই সন্ন্যাসী হইয়া ঘুর সমস্যা নাই। আমার তো বিয়ার কইরা বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখার সখ আহ্লাদ আছে। গে মনে করলে আর কেউ মাইয়া দিবো না ভাই। ছাড় আমারে!

আহিল কাব্যকে ছেড়ে দিয়ে দারোয়ানের দিকে তাকালো। লোকটা আসলেই আড়চোখে ওদের দিকে চেয়ে আছে। কাব্য দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে দারোয়ানের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

এমনে তাকাইয়া আছো কেলা? আহো তোমারেও একটু জড়াইয়া ধইরা কষ্ট প্রকাশ করি। আহো, আহো!

কাব্যর কথা শুনে লোকটা দৌড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। দারোয়ানের দৌড় দেখে আহিল আর কাব্য হু হা করে হেসে উঠলো।

~~~

চলবে~

(আজকের পর্ব কেমন লেগেছে অবশ্যই বলবেন। গল্পটা খুব শীঘ্রই শেষ করে দিবো ভাবছি। হ্যাপি এন্ডিং দিবো নাকি স্যাড এন্ডিং তা নিয়ে আম কনফিউজড। আপনারা সাজেস্ট করেন দেখি। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৬

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 36


🍂🍂🍂


~মেহেরজান রেডী? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!

রুদ্রর কথায় তার দিকে ঘুরে দাড়ালো মেহের। রুদ্র মোহনীয় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো মেহেরের দিকে। মেহের আরেকবার আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বর দিকে চেয়ে দেখলো সব ঠিক আছে কি না। রুদ্রর সামনে গিয়ে কোমরে হাত রেখে বললো,

দাড়িয়ে আছেন কেন? জলদি চলুন! যেতে হবে তো।

রুদ্র সন্ধি ফিরে পেলো। মেহেরকে কাছে টেনে বললো,

তুমি এত সুন্দর কেনো বউ? আমি ব্যতীত অন্য কেউ তোমাকে দেখুক তা আমার ভালো লাগে না।

মেহের লজ্জায় মাথা নুয়ে দাড়িয়ে রইলো। স্নেহা এসে ডাক দিতেই দুজনে ছিটকে দূরে সরে দাড়ালো। স্নেহা বাকা হেসে বললো,

বেচারা আয়মান ভাইয়ারও তো রোমান্স এর জন্য বউ দরকার নাকি! জলদি চলো নাহলে দিয়া আবার বিয়ে করবে না বলে বেকে বসবে।

রুদ্র উদাসীন কণ্ঠে বললো,

তুমিও না বউমনি! পাঁচ মিনিট পরে আসলে কি হতো? এক চুমুও দিতে পারলাম না। ধুর!

স্নেহা আর মেহের দুজনেই অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো। একটা মানুষ এতটা ঠোঁট কাটা স্বভাবের হয় কি করে! মেহের লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে স্নেহার দিকে তাকালো। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,

আরেহ বউ! এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে? বউমনি কি শুধুই আমার ভাবি নাকি? আমার শালীও।

মেহের কপাল চাপড়ে বললো,

এখন দেরি হচ্ছে না?

~হ্যা তাইতো! তুমিও না মেহেরজান! দিলে তো দেরি করিয়ে!

মেহের আর স্নেহাকে দ্বিতীয় বারের মতো অবাক করে দিয়ে হন হন করে চলে গেলো রুদ্র।

রুদ্র আর মেহেরের বিয়ের তিনমাস চলছে। তাদের সম্পর্কটা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আজ আয়মান আর দিয়ার বিয়ে। আয়মান হটাৎ জিদ ধরে বসেছে সে যত দ্রুত সম্ভব দিয়াকে বিয়ে করবে। বিয়েতে প্রথমে দিয়া রাজি না হলেও পরে আয়মানের জোরাজুরিতে অবশেষে বিয়ে করতে রাজি হয়। 

_____________________________


~একজন চাকরের বিয়েতে এতো তামঝাম করার কি দরকার ছিল ভাবি? অযথাই টাকা নষ্ট করছো কেনো?

~রুদ্র আর আমাদের পরিবারের সকলের ইচ্ছেতেই বিয়েটা এভাবে করছি ভাবি। আয়মান মোটেও চাকর নয়। সে আমার ছোট ছেলের মতোই।

~ওই ছেলে নির্ঘাত তোমাদের ওপর কোনো জাদু করেছে ভাবি। নয়তো একটা বাহিরের ছেলের জন্য এত কিছু....

মেহের রাগান্বিত হয়ে বললো,

মুখ সামলে কথা বলুন আন্টি। কিসের এতিম সে? মামনি কে চোখে পড়ছে না আপনার? আর আমার ভাই কে চাকর বলার সাহস কি করে হলো আপনার!

জুমানা বেগম ফের কিছু বলার আগে কোনোকিছু ভাঙার আওয়াজে সেদিকে ঘুরে তাকালো মিসেস তিথি আর জুমানা বেগম। পেছনে ঘুরেই এক জোড়া চক্ষুদ্বয় দেখে রুহ কেপে উঠলো জুমানা বেগম এর। রুদ্রকে বরাবরই ভয় পায় সে। রুদ্র যেই এক চরিত্র! রেগে গেলে সামনে কে আছে তার পরোয়া সে করেই না যেনো। রুদ্র গর্জে উঠে বললো,

আপনার সাহস কি করে হলো ওকে বাইরের ছেলে বলার!

মিসেস তিথি দৌড়ে এসে রুদ্রকে ধরে বললো,

বাবা রাগ করিস না। শান্ত হ।

~কিসের শান্ত মা! এই মহিলার সাহস কি করে হলো মানকে বাহিরের ছেলে বলার। কে এই মহিলা?

মিসেস তিথি শান্ত চোখে তাকালেন। কাউকে একবার দেখলে তাকে খুব সহজেই ভুলে যাওয়ার মতো মানুষ রুদ্র না। কারো সাথে একবার সাক্ষাৎ হলে তাকে যেনো তার মেমোরি সেভ করে নেয়। আর আজ বলছে "এই মহিলা কে?"। স্নেহা, তীব্র ওরা দ্রুত পায়ে নিচে এসে দাড়ালো। রুদ্রর চেহারা দেখে কারণ না জানলেও রুদ্র রেগে আছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না। জুমানা বেগমকে দেখতেই স্নেহার চোখে মুখে যেনো রাজ্যের অন্ধকার নেমে এলো। এই মহিলাকে তার একদম অপছন্দ। এসেছে পর থেকে "বিয়ের দু বছর হতে চললো বাচ্চা নিচ্ছো না কেনো?, তুমি কি বাচ্চা দিতে অক্ষম?, এই কাজ এভাবে করছো কেন?, এভাবে চলছে কেনো?, বাড়ির বউ হিসেবে কিভাবে চলতে হয় জানো না!" এমন অনেক কথা বলেই জ্বালিয়ে মারছে। নেহাৎ সে এ বাড়ির বড় বউ নয়তো খুব কথা শুনিয়ে ছাড়তো সে। মেহেরের দিকে চেয়ে দেখলো তার চোখে মুখেও বিরক্তিভাব বিদ্যমান। রুদ্রর ভয়ে মেহেরকে জুমানা বেগম কিছু না বললেও স্নেহাকে একেকটা বলায় বেশ রেগে ছিল মেহের। এমনিও মেহের যে স্নেহার মত ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে না তাও বেশ বুঝতে পেরেছেন তিনি। জুমানা বেগম সাহস যুগিয়ে বললো,

ঠিকই তো বলছি রুদ্র। একটা চাকরের জন্য এতো কিছুর মানে হয়! এতিম তো তাই তোমাদের পটিয়ে খাচ্ছে।

রুদ্র এবার বেজায় রেগে গেলো।

~একে তো আমি!

বলেই পিস্তল নিয়ে তেড়ে জুমানা বেগমের কাছে যেতে নিতেই আয়মান এসে আটকালো রুদ্রকে। তীব্র তেড়ে যেতে নিলে তাকেও আরেক হাত দিয়ে আটকায় আয়মান। দু হাত দিয়ে দুজনকে টেনে আনার চেষ্টা করতে করতে বললো,

~স্যার! স্যার! কি করছেন কি স্যার!

~মান! ছাড় আমাকে! এই মহিলাকে আজ আমি খুন করবো।

~স্যার প্লীজ শান্ত হোন। প্লীজ স্যার!

রুদ্র শান্ত হলো না। চেঁচিয়ে বললো,

তুই জানিস না মান এই মহিলা কত বড় দুঃসাহস দেখিয়েছে। ছাড় আমাকে! ছাড় বলছি!

আয়মান ছাড়লো না। আরো শক্ত করে ধরে বললো,

আমি জানি। শুনেছি আমি। আপনি প্লীজ শান্ত হোন।

মেহের আর স্নেহার দিকে চেয়ে বললো,

ভাবিমা! ভাবি! আপনারাই বুঝান না!

মেহের মুখ ফুলিয়ে বললো,

ঠিকই করছে ভাইয়া। ওনার সাহস কি করে হলো আপনাকে এতিম বলার। আমি তো বলি রুদ্রকে ছেড়েই দিন। দু চারটে গুলি খেয়ে দেন বুঝবে উল্টো পাল্টা কথা বলার মজা।

স্নেহাও সায় জানিয়ে বললো,

একদম ঠিক বলেছে মেহের। ভাইয়া ছাড়ুন ওনাদের!

রুদ্র আর তীব্রকে দেখে ভয় পেয়ে মিসেস তিথির পিছনে লুকালেও মেহের আর স্নেহার কথায় আরো গুটিয়ে যায় জুমানা বেগম। আয়মান পারে না এবার দেয়ালে মাথা ঠুকে। কিছু মাস আগেই না বিয়ে করবে না বলে লাফাচ্ছিলো? এখন কেমন স্যার এর কাজে সাপোর্ট করছে দেখো! একেই বলে "সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে"। আয়মান ফোঁস করে দম ছেড়ে বললো,

আজ আমার বিয়ে স্যার। এই খুশিতেই মাফ করে দিন। আবার কখনো কিছু বললে তখন শাস্তি দিয়েন।

তীব্র ফুঁসে উঠে বললো,

তার আবারো এমন কিছু বলার সুযোগ দেওয়ার দরকার নেই। রুদ্র তুই এখান থেকেই গুলি কর। তোর নিশানা ভালো।

জুমানা বেগম হু হু করে কেঁদে উঠে বললো,

মাফ করে দাও বাবা। আমি আর কখনোই এমন ভুল করবো না।

আয়মান করুন চোখে মেহেরকে ইশারাতে অনুরোধ করতেই তার মুখ দেখে যেনো মেহেরের মনে মায়া হলো। এগিয়ে গিয়ে রুদ্রকে বললো,

উনি মাফ চাইছেন রুদ্র। মাফ করে দিন। আর কখনো এমন করবে না বললোই তো।

তীব্রকে স্নেহা বুঝালে দুজনে একটু শান্ত হয়। তবে রুদ্র রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে রইলো জুমানা বেগমের দিকে। আয়মান জানে রুদ্র এখন শান্ত থাকলেও কিছু একটা তো করবেই তাকে শাস্তি দিতে। আয়মানকে সে পি এ নয় বরং ভাই মানে এতে কোনো কোনো সন্দেহ নেই। আয়মান রুদ্র আর তীব্রকে নিয়ে সোফায় বসে বললো,

আপনি খুবই ভালো একজন মানুষ স্যার। আপনি দয়া করে আর রাগ করে থাকবেন না।

রুদ্র আয়মানের দিকে তাকালো। আয়মান এর চোখে জল স্পষ্ট। রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

আর কখনো যদি দেখেছি আমাকে স্যার ডাকতে! আই স্বয়ার সবার আগে তোকেই গুলি করবো আমি।

~আমাকে মা আর রেদওয়ানকে বাবা বলে ডাকবি। নয়তো তোর খাওয়া বন্ধ।

মিসেস তিথি এর কথায় আয়মান হেসে উঠলো। মনে মনে বললো,

নির্দ্বিধায় এ মানুষগুলো ভালো মনের। ভাগ্যবানদেরই শুধু এমন পরিবার নসিব হয়। আর ওই ভাগ্যবানদের তালিকায় আমিও আছি।

_______________________________


আয়মান আর দিয়ার বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে মেহের, আহিল, কাব্য আর স্নেহা। উদ্দেশ্য ওদের বাসরে ব্যাঘাত ঘটানো।

~কি করবি ভেবেছিস? (আহিল)

~জানালা দিয়ে পানি মারি চল। (কাব্য)

~হোয়াট আ লেইম আইডিয়া!

স্নেহার কথায় ফুঁসে উঠলো কাব্য। ফিসফিসিয়ে বললো,

ওই বেডি! আমার আইডিয়া মোটেও লেইম না।

~ঠিক। তোর আইডিয়া লেইম না বরং বেটা তুই নিজেই লেইম। এদিকে ঝগড়া করলে ধরে দিবো এক লাথি। (আহিল)

~মীরজাফর! তোর বাসরে যদি ডিস্টার্ব না করছি!

ওদের কথার মধ্যেই হাজির হলো তীব্র আর রুদ্র। মেহেরকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলে,

কি?

~আপনারা এখানে কি করছেন?

~যা তোমরা করতে এসেছো।

~কি! আপনারা ডিস্টার্ব করতে এসেছেন? আপনারা না আয়মান ভাইয়ার বড়?(স্নেহা)

~হ্যা কিন্তু দিয়া তো আমাদের শালী। (রুদ্র)

~আমার বাসরে বহুত ডিস্টার্ব করেছে ফাজিল গুলায়। আজকে আমার পালা। (তীব্র)

~কি করবেন? (মেহের)

~দেখাচ্ছি।

দরজায় জোরে করাঘাত করে "ভাগো!" বলেই দৌড় দিলো রুদ্র। রুদ্রর কাণ্ডে হকচকিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে তারাও সব দৌড় দিয়ে লুকালো। আয়মান দরজা খুলে দেখলো কেউই নেই। দরজা লাগাতেই ওরা সকলে বেরিয়ে এলো। মেহের ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,

না বলে এমন করতে গেলেন কেনো আপনি! এখনি তো ধরা পড়ে যেতাম।

একটা ৭ বছরের বাচ্চা ছেলে গেট এর সামনে এসে দাড়াতেই রুদ্র বাকা হাসলো। বাচ্চাটিকে বললো,

যা বলেছিলাম মনে আছে?

বাচ্চাটি দ্রুত বেগে মাথা নাড়ালো। রুদ্র ঠোঁটের হাসি বিস্তর করে বললো,

যা বলেছি করো। তবেই এত্তোওওও গুলা চকোলেট দিবো।

বাচ্চাটি ঘাড় কাত করে আচ্ছা বলতেই রুদ্র সবাইকে লুকাতে বললো। সকলেই আড়াল হতে বাচ্চাটির কার্যকলাপ দেখতে লাগলো। 

~কিরে? এই ছোট প্যাকেট আর কি ডিস্টার্ব করবে? (কাব্য)

~আমি কি জানি? চুপ চাপ দেখ! (মেহের)

হটাৎ ই বাচ্চাটা "দেখেছি তোমারে তুরাগ নদীর পাড়ে" বলে সুর নিয়ে চেচিয়ে উঠলো। গান নামক চিল্লানিতে কান চেপে ধরলো ওরা।

~এটা দেখতে পিচ্চি হলেও এ তো দেখি চলতি ফিরতি ফাটা বাঁশ রে! আল্লাহ গো! আমার কান শেষ! (আহিল)

~এইটা আবার কি গান রে? বাপের জন্মে তো শুনি নাই। (স্নেহা)

~আরেহ! এটা তো আমার প্রিয় গান!

কাব্য ওই ছেলেটির সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে নিতেই কাব্যর মুখ চেপে ধরে আহিল। ফিসফিসিয়ে বলে,

~বেটা গর্ধব! ধরা খাওয়াবি নাকি! চুপ!!!

আয়মান হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলতেই বাচ্চাটা হেসে বললো,

ভাইয়া ভালো আছো?

আয়মান ভ্রু কুচকে তাকাতেই ছেলেটি বললো,

থাক চলে যাই। টাটা।

বলেই আবারো গান গাইতে গাইতে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো। আয়মান স্তব্ধ হয়ে বাচ্চার যাওয়া দেখলো। কিছুক্ষণ পরেই আবারো রুদ্র একজন গার্ডকে পাঠালো। লোকটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে কাশতে শুরু করলো।

~এই বেটা তো কাশির অ্যাক্টিং ই পারে না! দেখি আমি যাই সর।

যেতে নিতেই কাব্যকে আহিল টেনে ধরে বলে,

একটা উষ্টা দিমু তোরে এখন! চুপচাপ দাড়া এদিকে!

কাব্য হতাশ হয়ে বললো,

দেখলি! বুঝলি না আমার মতো ট্যালেন্টেড মানুষের কদর। আপসুস!

আয়মান এবার আর দরজা খুললো না। ওরা এবার বাগান দিয়ে আয়মান এর ঘরের জানালার কাছে এসে জড়ো হলো। একটা ইট জানালায় ছুড়ে মারতেই আয়মান দ্রুত জানালা খুললো। কাউকে না দেখতে পেয়ে জানালা বন্ধ করতেই আবারো দরজায় ইট ছুড়লো রুদ্র। এবার দিয়া জানালা খুলে বললো,

আরেকবার কেউ ইটের টুকরা মারলে আমি ডিরেক্ট দশ ইঞ্চি ইট ছুঁড়ে মারবো। ফাজিলের দল! ঘুমা গিয়ে!

রুদ্র হতভম্ব হয়ে গাছ ধরে দাড়িয়ে রইলো। আড়াল থেকে একে একে সবাই বের হয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো। বেচারি দিয়া হয়তো ভেবেছে তার বন্ধুরা এমন করছে তাই ঝাড়ি দিয়েছে। যদি জানতো রুদ্র এমন করেছে তবে হয়তো শকের বশে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতো।

~~~

চলবে~

(আজকে যদি কেউ বলছে গল্প ছোট। তবে রুদ্রর পিস্তল দিয়ে মেহেরকে উড়িয়ে দিবো😒 দেন একদম শান্তিময় এক এন্ডিং। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৫

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 35


🍂🍂🍂


বাইক থেকে নেমে এক নজর হাতের অ্যানালগ ঘড়িটির টিকে তাকালো আহিল। মাত্র সাড়ে দশটা বাজে। বাড়িতে প্রবেশ না করে সে বাগানের দিকে হাঁটা দিল। ঠিক বাগানের মাঝে গিয়ে ঘাসের ওপর ধপ করে পা টান করে বসলো। একধ্যানে নিজের বাবা মা এর ঘরের ব্যালকনি এর দিকে চেয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর বাড়ির কেয়ার টেকার আবদুল্লাহ এসে দাড়ালেন আহিলের পাশে। দাদা দাদীর মৃত্যুর পর এই বাড়িতে এক তার সাথেই টুকটাক কথা হয় আহিলের। এই মানুষটাই তার যাবতীয় সব কিছুর খেয়াল রাখেন। তিনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বুঝলেও আহিল তার দিকে তাকালো না। আবদুল্লাহ বললেন,

সোজা বাগানে চলে এলেন যে? ঘরে যাবেন না আহিল বাবা?

আহিল স্বশব্দে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই ঘাসের ওপর শুয়ে পড়লো। আবদুল্লাহ এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো আহিলের চোখের দিকে। দুর থেকে ওকে দেখলে বেশ হাসি খুশি লাগলেও, কাছ থেকে না দেখলে বুঝতেই পারবে না যে তার চোখে এখন অশ্রুকনারা চিক চিক করে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। আহিল হাসি থামিয়ে চুপ করে কিছুক্ষণ হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রইলো। বাড়ির দিকে দৃষ্টি রেখেই মাথার নিচে হাত রেখে বললো,

ঘর মানেই তো শান্তির নীড়, তাই না চাচা? তবে আমার এই ঘরে ফিরে আসতে এত বিতৃষ্ণা লাগে কেনো? এটা কি আদৌ আমার শান্তির নীড় নাকি শুধু মাত্র ইট পাথরে তৈরি এক দালান?

আবদুল্লাহ জবাব দিলেন না। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলেন। নিজেদের দ্বন্দ্বে যে তাদের সন্তান একাকীত্বের মাঝে গুটিয়ে যাচ্ছে তা কি কখনোই তাদের চোখে পড়ে না? তাদের কি চিন্তা হয় না? এ বাড়ির মানুষগুলোকে সে বরাবরই পাষাণ মানুষের তালিকায় ধরে। আহিলকে দেখলেই তার মন টা কেমন হুহু করে উঠে। প্রায় সময়ই আহিল বাড়িতে ফিরে না তাতেও তার মা বাবার মধ্যে তেমন ভাবাবেগ দেখে না সে। আহিল আবার বলে,

দাদু যাওয়ার পর আর এই বাড়িতে কারো হাসি মুখ দেখেছো চাচা? আমার না মনে পড়ছে না। তুমি দেখে থাকলে একটু বলো তো!

আবদুল্লাহ এর মৌনতা দেখে আহিল আবারো হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই এক ফোঁটা অশ্রু চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। হাসির মাত্রা না কমিয়ে কণ্ঠে বিদ্রুপের সুর টেনে বললো,

চলো যাই ঘরেএএএ।

______________________________


মেহের ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসেই দেখলো রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে চেয়ে আছে। মেহের পাত্তা না দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। রুদ্র দ্রুত মেহেরের সামনে এসে কপাল কুঁচকে চেয়ে রইলো। মেহের বললো,

কি সমস্যা?

রুদ্র হতাশ কণ্ঠে বললো,

বিদেশে যাওয়ার আগে তো তোমাকে একদম নাদুস নুদুস পিচ্চি দেখে গিয়েছিলাম। হুট করে এমন পাটকাঠি হলে কি করে?

মেহের অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো রুদ্রর দিকে। বিস্ময় নিয়ে বললো,

আমি মোটেও পাটকাঠি না। আপনার পাটকাঠি মনে হচ্ছে কেন!

রুদ্র ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ঘাড় ঘুরিয়ে মেহেরের দিকে চেয়ে বললো,

ডায়েট করেছো না? আগেই তো ভালো ছিলে।

মেহের চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইলো। মানুষ টা বড্ড অদ্ভুত! সে মোটেও পাটকাঠি নয়। একদম পারফেক্ট দেখতে। আর তার কাছে পাটকাঠি মনে হচ্ছে! সিরিয়াসলি!

রুদ্র আবার বললো,

আমি এখন থেকে নিজে সামনে বসে তোমাকে খাবার খাওয়াবো। ডায়েট ফায়েট করতে হবে না। এতো শুকনা পাটকাঠি আমার ভালো লাগে না। খেয়ে গলুমলু হবা। বুঝলা?

মেহের প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠলো,

মোটেও না। বললেই হলো! কত কষ্ট করে স্লিম হয়েছি জানেন আপনি!

রুদ্র নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,

তো?

~তো মানে! দেখুন! আপনি বাইরে গিয়ে মাফিয়াগিরি করুন গিয়ে। বাড়িতে কিন্তু আমি আর মামনিই বড় মাফিয়া বুঝলেন! মোটেও জোর জবরদস্তি করতে আসবেন না।

রুদ্র হু হা করে হেসে উঠলো। বিদ্রুপের সুরে বললো,

মা নাহয় বাড়ির মাফিয়া বুঝলাম। তোমার মতো চুনোপুটিকে মাফিয়া মানবে কে শুনি?

মেহের হা হয়ে চেয়ে রইলো। মানুষটা এবার রীতিমতো তাকে অপমান করছে। এতো অপমান মানা যায়! যায় না।

~আমি এখনি মামনিকে যেয়ে বিচার দিচ্ছি যে আপনি আমাকে চুনোপুটি বলেছেন।

~মাকে গিয়ে কি বলবে? গেলে দেখবে উল্টো তোমাকে এক হাড়ি খাবার দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। এই ব্যাপারে কিন্তু বাবাও মায়ের পক্ষে।

মেহের গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। জব্দ করতে এই লোকটা বেশ ভালো পারে। নির্ঘাত বিদেশ থেকে জব্দ করার কোনো কোর্স করে এসেছে। বেত্তমিজ লোক!

হটাৎ করেই রুদ্র মেহেরের হাত ধরতেই। মেহের ছিটকে দূরে সরে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

আস্তাগফিরুল্লাহ! আপনি হাত ধরছেন কেনো? সরুন বলছি!

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

আমি তোমার বর রুদ্রাণী! আস্তাগফিরুল্লাহ এর কি আছে?

মেহের নিজ মাথায় এক চাটি মেরে জোরপূর্বক হেসে বললো,

সরি, সরি! আমি ভুলে গেছিলাম।

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

হ্যাঁ! বিয়ের ২ দিন পর কেউ কি করে ভুলে যায় যে সে বিবাহিত? তুমি আসলেই একটা চিজ।

কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো,

দেখি বুকে আসো! জড়িয়ে ধরো।

মেহেরের গাল লজ্জায় লাল রঙ ধারণ করলো। মাথা নেড়ে না বললো যার অর্থ সে আসবে না। রুদ্র বললো,

তোমাকে রুদ্রাণী না ডেকে লজ্জাবতী ডাকা উচিত ছিলো। দেখি জলদি আসো।

বলেই জড়িয়ে ধরেই বেশ খানিক সময় বসে রইলো। মেহের ছাড়াতে চাইলেও ছাড়লো না রুদ্র। কিছু সময় পর রুদ্র মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে তার মুখপানে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। মেহের একবার তার চোখের দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। রুদ্রর এই দৃষ্টিতে মেহের অসীম মায়া, ভালোবাসা, আর সম্মান দেখতে পায়। আদৌ কি এর মূল্য দিতে পারবে মেহের? যদি ব্যর্থ হয়?

~~~

চলবে~

(ভুলেও কেউ ছোট বলবেন না😒 অসুস্থ থাকায় এই কয়েকদিন গল্প দিতে দেরি হয়েছে। ইশ! আপনারা দেখি রীতিমতো রেগে বোম হয়ে আছেন। রাগ করা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক তাই রাগ না করে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন যেনো গল্প লিখতে আরো উৎসাহ পাই। তাহলে গল্পও শীঘ্রই দিবো। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৪

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 34


🍂🍂🍂


স্নিগ্ধ সকাল। পাখিরা তার নীড় ছেড়ে বেরিয়েছে আহার খোঁজার উদ্দেশ্যে। নতুন দিন, নতুন এক সূর্যোদয়, নতুন আশা নিয়ে শুরু হয় এক নতুন যাত্রার।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মেহের বিছানায় রুদ্রকে পায় না। সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে ৭ টা ১৫ বাজে। মেহের দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। নিচে বাগানের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো রুদ্র আর তীব্র ব্যায়াম করছে। রুদ্রকে দেখে মেহেরের দ্রুত পায়ে ঘরে চলে এলো। ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে বারান্দা দিয়ে ছুড়ে মেরেই ডানে বামে না চেয়ে দিলো ভো দৌড়। নিচ থেকে তীব্র সহ আরো কয়েকজনের হাসির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে কিছুতেই ঘরে থাকা যাবে না, মোটেও না, ভুলেও না। রুদ্র নাহলে ঘরে এসেই এক দফা ধমকাবে তাকে। নিচে নামতেই দেখতে পেলো মিসেস তিথি, স্নেহা আর দিয়া বসে আছে। মেহের গিয়ে তাদের পাশে বসতেই দেখলো তীব্র আর রুদ্র স্বশব্দে হাসতে হাসতে বাড়িতে প্রবেশ করছে। পাশেই আয়মান, আহিল আর কাব্য ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। এক বালতি পানি মারার পরও রুদ্র একদম শুকনো, ঝরঝরে, ফুরফুরে। এক বালতি পানি তো দূরে থাক, তার গায়ে এক ফোটা পানি পড়েছে কিনা সন্দেহ। মেহের চোখ ছোট ছোট করে রুদ্রর দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্রর পেছনে আসা মানুষটাকে দেখেই মেহের চমকালো। রেদোয়ান আহমেদ এক প্রকার কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করছেন। রুদ্রকে পানি মারতে গিয়ে সে না দেখেই শ্বশুরের ওপর পানি মেরে এসেছে জানতেই জিভ কামড়ালো মেহের। মিসেস তিথি এগিয়ে গিয়ে অবাক কণ্ঠে বললেন,

একি অবস্থা! এতো সকালে তুমি সুইমিং পুলে নামতে গেলে কেনো?

রেদোয়ান আহমেদ তার স্ত্রীর দিকে কাতর চোখে তাকালেন। বললেন,

এই মনে করেন খুশিতে, ঠেলায়।

~মানে? কি বলছো এসব!

তিথির কথায় জবাব দিলেন না রেদোয়ান। তীব্র হাসতে হাসতে বললো,

রুদ্র আর আমি ব্যায়াম করছিলাম মা। বাবা এসে বললো সে নাকি আমাদের থেকে বেশি ফিট। আমাদের সরিয়ে নিজের ফিটনেস দেখানোর জন্য দাড়াতেই কে যেনো ওপর থেকে ফুলের বদলে এক বালতি পানি ছুড়ে বাবাকে সম্বর্ধনা জানিয়েছে।

তীব্র আর রুদ্র আবারো এক সাথে হু হা করে হেসে উঠলো। এবার কাব্য ওরাও আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না।

~কিন্তু পানিটা মারলো কে?

স্নেহার প্রশ্নে মেহের আড় চোখে তাকালো। কাপা হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি পান করতেই রুদ্র বলে,

~কি জানি বউমনি? আমার তো জানা নেই। আচ্ছা! পানিটা কে মারতে পারে বলোতো মেহেরজান।

রুদ্রর কথা কর্ণপাত হতেই বিষম খেলো মেহের। কাশতে কাশতে যেনো যক্ষারোগীর পদবীটা এবার জয় করেই ছাড়বে সে। মিসেস তিথি মেহেরের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। রেদোয়ান আহমেদ মেহেরকে বললো,

পানি দেখে মারিসনি বুঝলাম। কিন্তু পানি পান তো সাবধানে করবি নাকি রে মা! 

মেহের করুন দৃষ্টিতে শশুরের দিকে তাকালো। লজ্জায় সে পারলে এখন মিলখা সিং এর মতো এক দৌড় লাগায় এখান থেকে। কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না তাই মাথা নিচু করে বললো,

সরি বাবা। আমি একটু দুষ্টুমি করতে চেয়েছিলাম। আমি খেয়াল করিনি যে তুমি ওখানে। তুমি প্লীজ রাগ করো না।

রেদোয়ান আহমেদ আলতো হাসলেন। মেহেরের মাথায় হাত রেখে বললেন,

বাড়ির সব থেকে ছোট তুই। তুই আর স্নেহা দুষ্টামি না করলে আর কে করবে?

মেহের জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। যে শয়তানের তাড়নায় সে এমন বাঁদরামি করেছে তাকে পেলে এখন বেধে রেখে ফুল ভলুমে আধ ঘন্টা কুরআন তেলাওয়াত শুনাতো। তার শয়তানি ছুটিয়ে তবেই দম নিতো সে। মিসেস তিথি বললেন,

~তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো? যাও কাপড় পাল্টে আসো আগে!

~যাচ্ছি যাচ্ছি! এতো ধমকানোর কি আছে!

~যাবে তুমি!

বউয়ের রাগী চেহারা দেখে দৌড়ে ঘরে চলে গেলেন রেদোয়ান। মেহের শাশুড়ির দিকে ঘুরে বললেন,

মামনি তুমি কি রাগ করেছো?

~পাগলী একটা! রাগ করবো কেনো? পরের বার থেকে আমরা এক সাথে প্র্যাঙ্ক প্ল্যান করবো ঠিক আছে?

~আমি সাথে আছি।

স্নেহার কথায় একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ফিক করে হেসে উঠলো মেহের আর মিসেস তিথি।

~মেহেরজান ঘরে আসো তো। ইটস আর্জেন্ট।

বলেই রুদ্র ঘরে চলে গেল। শাশুড়ি চোখ দিয়ে ইশারা করে যেতে বলতেই মেহেরও ঘরে চলে এলো।

ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলো রুদ্র ঘরে পায়চারি করছে। মেহেরকে দেখতেই দু হাত দুদিকে মেলে দিয়ে বললো,

ব্যায়াম করে খুব ক্লান্ত আমি। একটু জড়িয়ে ধরো তো মেহেরজান!

~~~

চলবে~

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩৩

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 33


🍂🍂🍂


~কি সমস্যা ফারাজ ভাই! কতবার বলেছি আমাকে অকারণে কল দিবেন না। আমার এটা অপছন্দ।

ফোনের ওপাশ থেকে দিয়ার ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর শুনেও মুচকি হাসলো ফারাজ। কারণে অকারণে দিয়াকে ডিস্টার্ব করতে তার ভীষণ আনন্দ লাগে। প্রায় সময়ই দিয়া কথা শুনায় তাতেও সে দমে যাবার পাত্র নয়। ঠোঁটের হাসি আরেকটু প্রশস্ত করে বললো,

রাগ করো না দিয়াপাখি। আমার আজকে সত্যিই তোমার সাহায্যের দরকার তাই কল করেছি।

ফারাজের 'দিয়াপাখি' ডাকায় বিরক্তিতে 'চ্' শব্দ করে বললো,

~কতদিন বলেছি এই নামে আমাকে সম্বোধন করবেন না। কি দরকার সেটা বলুন।

ফারাজ ফোঁস করে এক দম ছেড়ে বললো,

~পরশু মায়ের জন্মদিন। আমি চাইছিলাম তাকে একটা শাড়ি গিফট্ করতে। কিন্তু...

~কিন্তু কি? কথার মাঝে থামেন কেনো। আজব!

~আরে বলছি তো! এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? শাড়ির ব্যাপারে আমার মাথা সম্পূর্ণ খালি। কাল গিয়ে একবার দোকানে ঘুরে এসেছি। কিছুই বুঝিনি, উল্টো মাথা চক্কর দিচ্ছিলো। তুমি একটু চলো না আমার সাথে।

দিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,

ফারাজ ভাই! আপনার না কত্ত গুলা মেয়ে ফ্রেন্ড! তাদের সব গুলোকে দোকানে নিলে আই বেট তারা অর্ধেক দোকান খালি করে দিবে। সবাইকে না নিলেও তাদের মধ্যে একজনকে ধরে নিয়ে হাটা ধরলেই হয়।

~ওদের নিয়ে যাওয়া আর দেওয়ালে কপাল ঠুকা এক ব্যাপার।

~মানে?

~ওদের বুঝিয়ে নিয়ে যেতে গেলেও আগে ওদের বয়ফ্রেন্ড এর পারমিশন লাগবে, তারপর তাদের মা বাবার, তারপর তাদের যদি মন চায় তবেই যাবে। গেলেও কল এর মধ্যে বয়ফ্রেন্ড এর সাথেই লেগে থাকে। এর থেকে ভালো তুমিই চলো প্লীজ। আমি ফুচকা খাওয়াবো।

~সত্যি?

~যাবে তুমি?

~ফুচকা খাওয়ালে যাবো।

~আচ্ছা। তবে তুমি রেডী হও। আমি আধ ঘণ্টা পর নিতে আসছি।

~আচ্ছা।


🍂🍂🍂


শপিং মলের বাইরে আসতেই দিয়া বিদায় জানিয়ে চলে আসতে নেয়। তবে ফারাজ বাঁধা দিয়ে বলে সে নিজেই বাড়ি পৌঁছে দিবে। দিয়া কিছু একটা বলবে তার আগেই একটা গাড়ি দিয়াদের সামনে থামে। দিয়া এক লাফে ফারাজের পিছনে যেয়ে তার হাত চেপে ধরে। দিয়া হতভম্ব হয়ে ফারাজের দিকে চেয়ে থেকে আবার উকি দিয়ে গাড়িটির দিকে তাকায়। গাড়িতে আয়মানকে দেখে দিয়ার কপাল কুঁচকে আসে। তার এখনও খেয়াল নেই যে সে ফারাজের হাত জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। বিড়বিড় করে বলে,

এবার আমাকেও মারার প্ল্যান করছে নাকি? ভালোই তো!

আয়মান দিয়াদের সামনে এসে ফারাজের হাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

ভাবিমা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। কাল বৌভাত তাই আজকে ওই বাড়িতে থাকতে বলেছেন তোমাকে। কাব্য আর আহিলকেও গার্ডরা নিয়ে গেছে ইতিমধ্যে।

~আপনি চলে যান। মেহেরকে বলবেন আমি কাল আসবো। আজকে যেতে পারবো না।

~ভাবিমা নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি চাইছি না তার মন খারাপ করতে। দ্রুত গাড়িতে উঠো। আম ওয়েটিং।

বলেই গাড়ির দিকে যেতে নিয়েও দিয়ার পাশে দাড়িয়ে থাকে। দিয়া ফারাজের দিকে চেয়ে বলে,

আমি তবে মেহেরের বাসায় যাই। আপনি চলে যান।

দিয়া যেতে নিতেই ফারাজ দিয়ার হাত ধরে আটকে বলে,

এইটা তোমার জন্য।

ফারাজ এর হাতে থাকা ব্যাগ এর দিকে চেয়ে বলে,

এর কোনো প্রয়োজন নেই।

~আজকে সময় দেওয়ার জন্য মনে করে নাও এটা থ্যাংক ইউ গিফট্। তোমার পছন্দ আসলেই অনেক সুন্দর।

দিয়া একবার আয়মান এর দিকে চেয়ে দেখলো সে চোয়াল শক্ত করে তার দিকেই চেয়ে আছে। দিয়া দ্রুত ফারাজ এর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে এক হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েই গাড়ির দিকে দৌড় লাগায়। পেছনের সিটে বসতে নিলেই আয়মান ওকে টেনে এনে সামনের সিটে বসায়। দ্রুত ড্রাইভ করে সেখান থেকে চলে আসে। দিয়া চুপচাপ চোখ বন্ধ করে গাড়িতে বসে থাকে। গাড়ি থামলেই বের হতে নিলে দেখে দরজা লক করা। গাড়ির বাইরের দিকে চেয়ে দেখে তারা এখনও আহমেদ ভিলায় পৌঁছায়নি। দিয়া কিছু বলার আগেই আয়মান দু হাত ছড়িয়ে বলে,

~জড়িয়ে ধরো।

দিয়ার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। গম্ভীরতা বজায় রেখে প্রশ্ন করে,

~এখানে গাড়ি থামালেন কেনো?

~কি বললাম শুনোনি? জড়িয়ে ধরো!

~পারবো না।

'চ্' শব্দ করে নিজেই দিয়াকে টেনে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,

~ইদানিং খুব জ্বালাচ্ছ তুমি। বিয়েটা একবার হতে দাও। তখন দেখবো আর কিভাবে জ্বালাও।


🍂🍂🍂


মাথায় লম্বা এক ঘোমটা দিয়ে বসে আছে মেহের। তাকে ঘিরে বসে আছে রুদ্রর নানি আর মামীরা। রুদ্র কেমন মানুষ, তার কি পছন্দ-অপছন্দ, রুদ্র রাগ হলে তার কি করণীয় এসব তাকে রুদ্রর নানি বলছে আর মেহের ক্লাসের ভালো ছাত্রীর মতো মনোযোগ দিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে শুনছে। রুদ্রর নানি এক জোড়া বালা মেহেরের হাতে পড়িয়ে দিতে নিলেই মেহের দ্রুত মানা করে দেয়।

~এত দামী গহনা দিয়ে আমি কি করবো নানি? এর প্রয়োজন নেই।

~মানা করতে হয় না মেহের। মা দিচ্ছেন তো! নাও।

শাশুড়ির কথা শুনে করুন চোখে তাকালো মেহের। এত দামী গহনা সে কিছুতেই নিতে চাইছে না।

~কিছু মা এগুলো তো!

~শোনো পিচ্চি নাতবউ! বড়রা কিছু দিলে মানা করতে হয় না। এতে তাদের দোয়া মিশে থাকে তাই বড়রা কিছু দিলে চুপচাপ নিবে। বুঝলে?

নানীর পিচ্চি বলতেই মুখ ফুলালো মেহের। নানি, নাতি দুজনই পিচ্চি বলে ডাকে তাকে। এতো বড়ো মেয়েকে পিচ্চি ডাকার মানে হয়! নানী হাতে বালা পড়িয়ে দিতে থাকলে মেহের গাল ফুলিয়ে বলে,

আমি মোটেও পিচ্চি না। তোমরা সবাই আমাকে পিচ্চি ডাকো কেনো? স্নেহা আর আমি তো সমবয়সী।

মেহেরের কথা রুদ্রর নানী আর মামীরা হেসে উঠে। ছোট মামী মেহেরের গালে হাত রেখে বলে,

রুদ্র তো এই বাড়ির ছোট ছেলে। ওই হিসেবে তুমি এই বাড়ির ছোট বউ মানে সব থেকে ছোট। তাই তোমাকে পিচ্চি বলে।

সকলের কথা শুনে মেহের মাথা নিচু করে বসে থাকে। একে একে সকলেই মেহেরকে বিভিন্ন উপহার দেয়। মেহের প্রথমে নিতে না চাইলেও পরবর্তীতে শাশুড়ির কথায় নিতে হয়।

.

রাতে ডিনার করে ঘরে ফিরতেই রুদ্র দেখে মেহের ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। পায়চারি করছে বললে ভুল হবে। সে রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করছে। রুদ্র বিছানায় গিয়ে বসতেই মেহের প্রশ্ন করে,

আমি কোথায় ঘুমাবো?

মেহেরের প্রশ্নে রুদ্র সারা বিছানায় এক বার চোখ বুলিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে,

কেনো? এই বিছানা কি তোমার কাছে ছোট মনে হচ্ছে?

~আপনার সাথে ঘুমাবো?

~তোমার কি আরো একটা বর আছে যে তার সাথে গিয়ে ঘুমাবে?

রুদ্রর এমন ত্যাড়া কথায় মেজাজ খারাপ হয় মেহেরের। দাতে দাত চেপে বলে,

আমি মোটেও আপনার সাথে ঘুমাবো না।

~তবে অন্ধকার ঘরে এক বস্তা তেলাপোকার সাথে দিয়ে আসি? ওখানেই আজ ঘুমাও। চলো তোমাকে দিয়ে আসি।

বলেই মেহেরের হাত ধরে টান দিতে নেয়। তার আগেই মেহের দৌড় দিয়ে সোফায় গিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে বলে,

~আমি যাবো না ওই ঘরে। আমি এই ঘরেই থাকবো।

~তবে বিছানায় যাও।

মেহের মাথা নেড়ে না বুঝাতেই রুদ্র বলে,

~তাহলে চলো ঐ ঘরে রেখে আসি।

মেহের দ্রুত খাটে গিয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। রুদ্র হালকা হেসে বারান্দায় চলে যায়। গিটারের টুংটাং শব্দ কানে আসতেই মেহের কম্বলের ভেতর থেকে মাথা বের করে সারা ঘরে চোখ বুলায়। নাহ! রুদ্র ঘরে নেই। বারান্দা থেকে গিটারের আওয়াজ আসায় বুঝতে পারে যে রুদ্র বারান্দায় আছে। মেহের ধীর পায়ে গিয়ে বারান্দায় উকি দেয়। রুদ্র সেখানেই বসে গিটারে সুর তুলছে। মেহের রুদ্রর পাশে গিয়ে বসতেই রুদ্র মেহেরের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে গাইতে শুরু করে,


তুমি না ডাকলে আসব না

কাছে না এসে ভালোবাসব না

দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?

না কি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল

গল্পটা পুরনো

ডুবে ডুবে ভালোবাসি

তুমি না বাসলেও আমি বাসি

ডুবে ডুবে ভালোবাসি

তুমি না বাসলেও আমি বাসি।


মেহেরের মনে হলো গানটা রুদ্র তাকেই উদ্দেশ্য করে গাইছে। আকাশের চাঁদটা যেনো আজ মেঘেদের সাথে লুকোচুরি খেলতে ব্যস্ত। মেহের উঠে রেলিং ধরে আকাশে দৃষ্টি স্থির করলো। বসন্তের মৃদু বাতাস থেমে থেমেই গায়ে এসে লাগছে। হটাৎ রুদ্র ধীর কণ্ঠে ডাকলো,

মেহেরজান!

মেহের চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো। এই ডাকটাই তার হৃদপিণ্ডের গতি বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। এমন শীতল আবহাওয়াতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। রুদ্র আবারো সম্মোহনী কণ্ঠে ডাক দিলো,

রুদ্রাণী?

মেহের রুদ্রর দিকে ঘুরে মাথা নুয়ে দাড়িয়ে রইলো। রুদ্র আবারো বললো,

এদিকে এসো।

মেহের ধীর পায়ে রুদ্রর সামনে গিয়ে দাড়াতেই রুদ্র এক টানে মেহেরকে নিজের কোলে বসিয়ে মেহেরের অধরে অধর ছোঁয়ালো। মেহেরের হৃদপিণ্ড এবার বেরিয়ে আসার উপক্রম। এমন ছোঁয়া আর পরিস্থিতির সাথে সে বরাবরই অপরিচিত। রুদ্র মেহেরের অধর ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকালো। বেশ কিছুক্ষণ পর লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো,

যাও ঘরে যাও।

রুদ্রর কথা যেনো মেহেরের কান অব্দি গেলো না। সে তার কোলে বসেই ফ্যাল ফ্যাল করে রুদ্রর দিকে চেয়ে রইলো। রুদ্র বাকা হেসে বললো,

আবার চাই?

রুদ্রর কথায় এবার মেহেরের টনক নড়লো। মুহূর্তেই গালে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়লো। দ্রুত পায়ে রুদ্রর থেকে দূরে সরে এলো। বিড়বিড় করে বললো,

অসভ্য একটা!

বলেই দৌড়ে ঘরে চলে এলো। ঘরে এসেই কম্বল পেঁচিয়ে শুয়ে পড়লো। এই মুহূর্তে সে রুদ্রর মুখোমুখি হতে চায় না, কিছুতেই না। নয়তো দেখা গেলো আগামীকাল খবর ছেপেছে "স্বামীর চুমু দেওয়ার ফলে বিয়ের পরদিনই লজ্জায় পটল তুলেছে মেহের নামের এক রমণী"। ভুত সমাজেও তো লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবে না। তখন কি এক বাজে পরিস্থিতি হবে। ভাবা যায়!!!

~~~

চলবে~

(পরের পর্বের জন্য নাকি অনেকেই অপেক্ষা করছেন? আমি অনেক অসুস্থ থাকায় গল্প দিতে দেরি হলো। কেউ রাগ করবেন না। আর অবশ্যই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। হ্যাপি রিডিং~)

গল্প আমার_রুদ্রাণী পর্ব ৩২

 #আমার_রুদ্রাণী

#লেখিকা : শুভ্রতা আনজুম শিখা

#part: 32


🍂🍂🍂


নাস্তা সেরে ঘরে ফিরে রুদ্রকে দেখেই হেসে উঠে মেহের। তাকে পিচ্চি ডাকার অপরাধে রুদ্রকে ভয়ংকর এক শাস্তি দিবে বলে ইতিমধ্যে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে। ভার্সিটির সিনিয়র ইভান ভাইয়ার বান্ধবী মৃণয়ীকে সে দেখেছে প্রায় সময়ই তার বয়ফ্রেন্ডকে ভাইয়া বলে ক্ষেপাতে। স্নেহাও একদিন জানিয়েছিল যে ছেলেদের নাকি তার বউ/গার্লফ্রেন্ড ভাইয়া বলে ডাকলে তারা বেশ চটে যায়। তাই মেহেরকে পিচ্চি ডাকার অপরাধে সেও ঠিক করেছে সে এখন রুদ্রকে ভাইয়া বলে ক্ষেপাবে। মেহেরকে একা দাড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে দেখে রুদ্র সন্দিহান চোখে তাকায়। মেহেরের ক্ষুদ্র মস্তিকে এখন কোনো উল্টাপাল্টা বুদ্ধি বুনতে ব্যস্ত তার বুঝতে বেগ পেতে হয় না। রুদ্র সন্দিহান ভঙ্গিতেই জিজ্ঞেস করে,

কি ব্যাপার? একা একা হাসছো কেন?

মেহের জবাব দেয় না। ঠোঁটের হাসি আরেকটু বিস্তর করে। রুদ্র সোফা থেকে উঠে এসে ভ্রু কুঁচকে পুনরায় কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেহের প্রশ্ন ছুড়ে,

কি করেন ভাইয়া।

মুহূর্তেই কিছু ভাঙার তীব্র আওয়াজ কানে এলো। মেহের থমকালো। এক দফা মাটিতে সদ্য ভেঙে ছড়িয়ে পড়া কফি মগটির দিকে নজর বুলায়। আরেকবার চোখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকায়। মেহের ভেবেছিলো বউ এর মুখে ভাই ডাক শুনে হয়তো রুদ্র রাগ করবে কিন্তু না রুদ্রর মুখ ভঙ্গিই যেনো মেহেরের কানে চিৎকার করে বলছে "আরে গরু আমি রাগ করিনি। আমি এখন অবাক, প্রচন্ড অবাক, একদম মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মত অবাক"। মেহের যেনো বুঝলো রুদ্রর মনের অবস্থা। বিয়ের পরদিন সকালেই বউ এর মুখে "ভাই" সম্বোধন শুনলে অবশ্যই কোনো স্বামী ধেই ধেই করে নাচানাচি করবে না। এই মুহূর্তে রুদ্রকে ডাক দিয়ে অবাকের দুনিয়ার থেকে ফিরিয়ে আনার থেকে বেশি সুবিধাজনক মনে হলো আপাতত স্নেহাদের সাথে যেয়ে বসা। যেই ভাবা সেই কাজ। মেহের এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করেই ভো দৌড় দিল। মেহেরের দৌড়ের কারণে পায়েলের রিনঝিন শব্দে যেনো হুশ আসে রুদ্রর। এই মুহূর্তে কি ঘটলো তা বুঝতেই "মেহেরজান" বলে চিল্লিয়ে উঠলো। মেহের সেই ডাক উপেক্ষা করেই দৌড় এর গতি আরো দ্বিগুণ করে ছুট লাগালো স্নেহার ঘরের দিকে।

_______________

মেহেরের হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে ধুম করে খাটে বসতেই ভয়ে লাফিয়ে উঠে স্নেহা, তীব্র আর আয়মান। স্নেহা ভয়ে "আম্মাগো" বলে চিৎকার দিয়ে খাটে উঠে দাড়িয়ে পড়ে আর তীব্র, আয়মান ইতিমধ্যে হকচকিত হয়ে দোয়া দুরুদ পড়াও শুরু করে দিয়েছে। মেহের কিছুক্ষণ ওদের কান্ড দেখে ভেবাচেকা খেয়ে চেয়ে থাকে। পরক্ষনেই খিল খিল করে হেসে উঠে। মেহেরকে হাসতে দেখে বুকে ৩ বার ফু দিয়ে মেহেরের পাশে বসে স্নেহা। এতক্ষণে তীব্র আর আয়মানও সোজা হয়ে বসেছে। মেহেরকে এভাবে হাসতে দেখে তীব্র আয়মানকে কনুই দিয়ে গুতা মেরে বলে,

বুঝলি কিছু?

আয়মান অবুঝের মতো মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে বুঝেনি। তীব্র প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে আয়মানের দিয়ে তাকায়।

~রুদ্রর সাথে বিয়ে হতে না হতেই মেয়েটা পাগল হয়ে গেলো। ইশ! বেচারি। আগে জানলে চার বছর আগেই আমার হিটলার বাপকে সাপোর্ট দিয়ে বিয়ে ঠেকাতাম।

আয়মান নাক কুচকে তীব্রর দিকে আড়চোখে চেয়ে বলে,

আপনার আর রেদোয়ান স্যার এর যেই খোঁচাখোঁচির সম্পর্ক! আমি ডেম সিওর আপনি রাজি হলে স্যার নরমালি যেই বেগে রাজি হয়েছে তার থেকেও সুপার স্পিড এ রাজি হয়ে যেতো ভাবিমা আর রুদ্র স্যার এর বিয়ে দিতে। ইতিমধ্যে হয়তো আমি মামা আর আপনি চাচা ডাকও শুনতে পেতেন।

আয়মানের কথা শুনে তীব্র হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়ে। দারুন হতাশাসহিত কণ্ঠে বলে,

আমার সাথে থাকতে থাকতে চালাক হয়ে যাচ্ছিস আয়মান। দেখলি কি সুন্দর চম্পট জবাব দিলি! কথাটা কলিজায় গিয়ে বিধেছে। গুরুজনদের মনে কষ্ট দিতে নেই জানিস না! মাফ চাওয়া লাগবে না শুধু বল "তীব্র স্যার আপনি মহান মানুষ। আজ থেকে আমি আপনার শিষ্য আর আপনি আমার গুরু"

আয়মান হু হা করে হেসে উঠতেই তীব্র ভ্রু কুঁচকায়। হতাশার মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে বলে,

বুঝলি না রে বাছা! বিয়েটা হোক তোর তখন দেখবি নিজেই বউ এর সাথে ঝগড়ার পর ঝগড়া মিটমাট এর টিপস চাইছিস। আসিস তখন হ্যহ!

তীব্রর কথা শুনে আর জবাব দিলো না আয়মান। এই মুহূর্তে দিয়ার কথা মনে পড়ছে যেকিনা এখন তার প্রতি রাগ। স্নেহার খিল খিল হাসির শব্দে দুজনের মনোযোগ সেদিকে চলে যায়। স্নেহার হাসি দেখে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেহের। মেহের বিরক্তি নিয়ে ঝাড়ি দেওয়ার আগেই আয়মান আর তীব্র এসে স্নেহাকে তার হাসির কারণ জিজ্ঞেস করতেই সে গটগট করে সব বলে দেয়। স্নেহার হাসি যেনো থামছেই না। তার সাথে এবার তাল মিলিয়ে হেসে উঠলো আয়মান আর তীব্র। ওদের এবার রীতিমতো গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। হাসি থামলেই যেনো পাশের বাড়ির টাকলা বুড়োর মাথায় এক ঝাঁক চুল গজিয়ে যাবে। তাই একদম নো থামাথামি, ডিসিশন ফাইনাল।

_______________


রুমির দেওয়া বার্তা শুনেই করুন চোখে তাকায় মেহের। মালি চাচার মেয়ে রুমি, ক্লাস ওয়ান এ পড়ে। সুযোগ পেলেই এই বাড়িতে খেলতে চলে আসে। আহমেদ বাড়ির সবাই ওকে ভীষণ আদরও করে বটে। মেয়েটাও বেশ মিশুক, মেহেরেরও বেশ মনে ধরেছে তাকে। তার গলার স্বরটা বেশ পছন্দ হয়েছে মেহেরের। কিন্তু এই মিষ্টি স্বরেই যেনো এই মুহূর্তে তাকে ভয়ানক কোনো খবর জানালো। রুমির বার্তা শুনে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এর থেকে ভালো যদি শুনতো যে কেউ তার কিডনি খুলে নিয়ে যাচ্ছে তাতেও যেনো তার এত কষ্ট হতো না। ঘাড় ঘুরিয়ে স্নেহাদের দিকে চেয়ে দেখলো তাদের হাসির মাত্রা এবার আরো বেড়েছে। মেহের হতাশার শ্বাস ছাড়লো। বান্ধবীটা যে বিয়ের এক সাইনের মধ্যেই বান্ধবী থেকে স্টার জলসার সিরিয়ালের জা দের মত হিটলারি মেজাজের হয়ে গেলো তা যেনো টের ই পায় নি সে। পাওয়ার কথাও না কারণ সে গতরাতে ঘুমিয়ে ছিল। ভার্সিটি গেলে সব বন্ধুবান্ধব মিলে ওঝা দেখে স্নেহার মাথা থেকে হিটলার জা এর ভুত নামাবে ভেবে নিয়েই রুদ্রর ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

______________________


মাথা নিচু করে ঘরে প্রবেশ করেই মেহের বুঝতে পারলো এক জোড়া চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার ওপরই আবদ্ধ। রুদ্রর থমথমে কণ্ঠ,

এদিকে এসো।

মেহের ধীর পায়ে খাটের কাছ এগিয়ে কিছুটা দূরত্ব নিয়েই দাড়ালো। রুদ্র ধমক দিলেই যেনো দৌড়ে পালাতে পারে সেই মহা সাহস নিয়েই সে এখানে দাড়িয়ে ভেবেই লম্বা শ্বাস নেয় মেহের। একবার সোফার দিকে চেয়ে দেখলো। ইতিমধ্যে সব ভাঙ্গা টুকরো পরিষ্কার করানো শেষ। কিছুক্ষণ আগে যে একটা মগ শহীদ হয়ে ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিকের ন্যায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে ছিল তা এই মুহূর্তে আন্দাজাও করা মুশকিল। 

~তখন কি বলছিলে আমাকে?

~কি বলছিলাম?

~মনে করানো লাগবে?

বলেই শার্ট এর হাতা গুটিয়ে কাছে আসতে নিলেই মেহের দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলে,

মনে পড়েছে, মনে পড়েছে।

~কি মনে পড়েছে?

~ঐযে জিজ্ঞেস করেছিলাম।

~কি জিজ্ঞেস করেছিলে?

~কি করেন।

~এটাতো অর্ধেক বললে। 'কি করেন' এর পরে কি বলছিলে?

মেহের চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। রুদ্র আবারো বলে,

~উমমমম? ভাইয়া, রাইট?

~আস্তাগফিরুল্লাহ! আপনি আমার জামাই লাগেন। জামাই রে কেউ ভাই বলে! তওবা তওবা।

~আচ্ছা! তো একটু আগে কে ডেকে গেলো? তোমার ভুত?

~আচ্ছা সরি। আর বলবো না।

~সরি বললে তো কাজ হবে না। ইউ ডিজার্ভ আ পানিশমেন্ট।

মেহের এবার রাগী চোখে তাকায়। বিরোধিতার সুরে বলে,

আমি কোনো পানিশমেন্ট নিতে রাজি নই। আপনার পানিশমেন্ট আপনিই ই নেন। হুহ! আমি চললাম।

প্রখর সাহসী নারী ভাব নিয়ে চলে আসতে নিলেই রুদ্র শান্ত কণ্ঠে বলে,

ঠিক আছে। নিজের মন মতো রাজি হলে না তো! আমি আমার মতই জোর করে শাস্তি দেই তবে। তোমাকে সহ অন্ধকার ঘরে একঝাঁক তেলাপোকা ছেড়ে দিলে কেমন হয়? আইডিয়া টা সুন্দর না!

মেহের থমকে দাড়ায়। তেলাপোকাতে ভয় নেই তার। কিন্তু এসবে গা ঘিন ঘিন করে। রুদ্র যেই ধরনের মানুষ সে এমন কান্ড ঘটাতে পারে তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই মেহেরের। যেই বেগে চলে যাচ্ছিলো তার থেকে দ্বিগুণ বেগে আগের জায়গায় ফিরে আসে। দাতে দাত চেপে বলে,

কি শাস্তি দিবেন? বলুন আমি রাজি।

~তেমন কিছু না। জাস্ট পা টিপে দিবে। এমনিও তুমি বিয়ের আগে যা দৌড়াদৌড়ি করিয়েছো! তোমার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে পা ব্যাথা করছে এখন। তাই পা টিপে দিবে। আর হ্যাঁ আরেকটা কাজ পা টিপতে টিপতে গান ও গাইতে হবে।

মেহের বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকায়। স্বামীর পা টিপতে সমস্যা নেই, প্রয়োজন পড়লে গলাও টিপে দিতে রাজি সে। কিন্তু গান! এমন পরিস্থিতিতে কোনো গান মাথায় আসে। শাস্তির সময় গান মনে পড়বে না তাই মেহের জানায় যে সে গান গাইতে পারবে না। রুদ্র পুনরায় ধমকে উঠতেই মেহের মুখ কালো করে রুদ্র পাশে বসে পা টিপতে টিপতে গান গাইতে শুরু করে,


আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি,

আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়~

আমারো দিলের চোট বোঝে না কোনো হালায়~


মেহের গান শুনে রুদ্র থম মেরে যায়। তেজী কণ্ঠে বলে,

এটা কোন ধরনের গান! এইসব ফালতু গান পাও কোথায়!

রুদ্রর ধমক শুনে মেহের ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। এই মুহূর্তে তার মাথায় কাব্যর গাওয়া এই গানটাই এলো। তাইতো এই গান গাওয়া। এর জন্যও ধমক দেওয়া লাগে! এমনিও এমন এক পরিস্থিতির সাথে এই গান একদম পারফেক্ট বলে মনে হচ্ছে মেহেরের।

রুদ্র ফের বলে,

ভালো একটা গান গাইবে। আমাদের আজ বিয়ের প্রথমদিন। সো প্রাণপ্রিয় স্বামীকে ডেডিকেট করে গাইছো ভেবে নাও। একদম রোমান্টিক একটা গান যাইবে। ওকে?

মেহের ঘাড় কাত করে আচ্ছা বলে। দু সেকেন্ড সময় নিয়ে কোন গান গাইবে ভেবে নেয়। স্নেহার প্রায়শই গাওয়া গান মনে পড়তেই এক ঝমকালো হাসি হেসে চোখ বন্ধ করে স্নেহার মতই সুর তুলে গাইতে শুরু করে,


আমি জুয়ান একটা মাইয়া~

বুড়া বেটার কাছে আমার বাবার দিছে বিয়া,

বুইড়ার কাশিতে কাশিতে লুঙ্গি যায় খুলিয়া~


মেহেরের গান শুনেই রুদ্রর কাশি উঠে যায়। কাশতে কাশতে যেনো যক্ষ্মা রোগীর পদবী হাসিল করেই ছাড়বে তা ঠিক করে নিয়েছে রুদ্র। কোনো মতো কাশি থামিয়ে রুদ্র করুন চোখে মেহেরের দিকে তাকায়। স্বামীকে ডেডিকেট করার মতো এমন রোমান্টিক গান সে ইহজন্মে শুনেছে কিনা তা নিয়ে আপাতত সে দ্বিধায় আছে। উদাসীন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

এমন উদ্ভট গান কোথা থেকে শিখেছো মেহেরজান?

মেহের নির্লিপ্তভাবেই জবাব দেয়,

কাব্য আর স্নেহার থেকে। মাইনকা চিপা গানটা কাব্য গায়। আর...

~লুঙ্গি খোলার গান বউমনি গায়?

মেহের মাথা নেড়ে হ্যা বোঝাতেই রুদ্র কপাল চাপড়ায়। বিড়বিড় করে বলে,

ভাইয়াকে নিয়ে বউমনি এই গান গায় শুনলে বেচারা মুহূর্তেই পটল তুলবে। আহারে আমার ভাইটা রে! আরে ধুর আমার কষ্ট বেশি। আমার বউ তো বউমনির থেকেও আপডেটেড। আমার সামনেই এই গান গায়। কি কপাল আমাদের! দিয়ার বিয়ে আয়মানের সাথে হলে বেচারার কি অবস্থা হবে ভেবেই আফসোস হচ্ছে। দ্রুত ওদের বিয়ে দেওয়া লাগবে। একা কপাল চাপড়ে শান্তি নেই। ৩ ভাই নাহয় এক সাথে বসেই কপাল চাপড়াবোনে। 

~~~

চলবে~

(পাঠক/পাঠিকারা তো মেহেরের থেকেও ফাস্ট। আমি যদি বলি নেক্সট কমেন্ট না করে গঠনমূলক কমেন্ট করতে তবে তাদের কমেন্ট বি লাইক "পরের পর্ব?, পর্ব নো...কোথায়?, সুন্দর নেক্সট প্লীজ"। একটু গঠনমূলক কমেন্টস করে আমাকে জানতে সাহায্যও তো করতে পারেন নাকি যে আমার লেখা আদৌ আপনাদের পছন্দ হচ্ছে কি না। আমি ইদানিং অসুস্থ থাকায় রেগুলার গল্প দিতে পারছি না। আমি খুব দ্রুতই পরের পর্ব পোষ্ট করবো। কেউ রাগ করবেন না। হ্যাপি রিডিং~)